আল্লাহর উপর ভরসা (পর্ব-১৮) || অধিকাংশ গুজবই ভিত্তিহীন || ভদ্রতা সংঘর্ষ এড়ায় || জীবন দুঃখ করার জন্য নয় ||





যতক্ষণ আল্লাহর প্রতি আপনার বিশ্বাস অটুট থাকবে ততক্ষণ আপনি হতাশ হতে পারেন না


এই পর্বের আলোচ্য বিষয়সমূহঃ
  • একবেলার আহার এবং এক টুকরো কাপড় থাকলে আপনি বঞ্চিত নন

  • অধিকাংশ গুজবই ভিত্তিহীন

    স্বদেশী আদিবাসীর দমন করার জন্য প্রসিদ্ধ জেনারেল জর্জ ক্রাক তার বিখ্যাত সাময়িকীর ৭৭ পৃষ্ঠায় লিখেছেন– “আদিবাসীদের প্রায় সকল দুর্দশা ও উদ্বিগ্নতা তাদের কল্পনাপ্রসূত-বাস্তব নয়।"

    يَحْسَبُونَ كُلَّ صَيْحَةٍ عَلَيْهِمْ

    প্রতিটি বিকট শব্দ বা চিৎকারকেই তারা তাদের বিরুদ্ধে মনে করে।” (৬৩-সূরা আল মুনাফিকূন: আয়াত-৪)

    “যদি তারা তোমাদের সাথে অভিযানে বের হতো তবে তারা শুধু বিশৃঙ্খলাই বৃদ্ধি করত এবং ফেতনা করার জন্য তোমাদের মাঝে ছুটাছুটি করত।" (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-৪৭)

    কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রফেসর হক্স বলেছেন- “কোনো নির্দিষ্ট সমস্যার হয়তো সমাধান আছে নয়ত নেই। যদি কোনো নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধান থাকে তবে তা খুঁজে বের করুন। নচেৎ তা নিয়ে নিজেকে কষ্ট দিবেন না।”

    একটি সহীহ হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

    “আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে এমন কোনো রোগ পাঠাননি যে, তিনি এর ঔষুধ পাঠাননি। যে এটা জানল সে তো এটা জানলই আর যে এটা জানল না সে তো এটা জানলই না।”

    (এমনকি সর্বাপেক্ষা প্রসিদ্ধ চিকিৎসক কোনো কোনো রোগের চিকিৎসা জানেন না এখনো এ অবস্থা বিদ্যমান।)

    ভদ্রতা সংঘর্ষ এড়ায়

    একজন জাপানী শিক্ষক তার ছাত্রকে বলেছেন- “নমনীয়তা উইলো গাছের মতো আর বিরোধহীনতা ওক গাছের মতো।”

    নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি হাদীসে বলেছেন- “মু’মিন ব্যক্তি (সবুজ) কোমল শস্যের (চারা গাছের) মতো, বায়ু একে ডানে বামে দোলায় (এটা এতই কোমল)।”

    জ্ঞানী ও বিজ্ঞ ব্যক্তি পানির মতো; কেননা, পানি পাথরের সাথে সংঘর্ষ করে না, বরং পানি পাথরের ডান, বাম, উপর ও নিচ দিয়ে চলে যায়।

    অন্য একটি হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

    “মু’মিন ব্যক্তি হলো উটের মতো; এটাকে লাগাম পরিয়ে পাথরে বসিয়ে রাখলে এটা তাই করবে অর্থাৎ পাথরেই হাঁটু গেড়ে বসে থাকবে।”

    অতীত আর কখনো ফিরে আসবে না

    لِّكَيْلَا تَأْسَوْا عَلَىٰ مَا فَاتَكُمْ

    “যা তোমরা পাওনি তা নিয়ে তোমরা যাতে দুঃখ না কর।” (৫৭-সূরা আল হাদীদ: আয়াত-২৩)

    আদম (আঃ) মূসা (আঃ)-কে বলেছেন- “আল্লাহ (তায়ালা) আমাকে সৃষ্টি করার ৪০ (চল্লিশ) বছর পূর্বে আমার তকদীরে বা ভাগ্যে যা নির্দিষ্ট করে রেখেছিলেন তার জন্য তুমি কি আমাকে দোষারোপ কর?”

    এ কথাটি সম্বন্ধে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “আদম (আঃ) মূসা (আঃ)-কে তর্কে হারিয়ে দিলেন, আদম (আঃ) মূসা (আঃ)-কে তর্কে হারিয়ে দিলেন, আদম (আঃ) মূসা (আঃ)-কে তর্কে হারিয়ে দিলেন।”

    তোমার নিজের মাঝে সুখের সন্ধান কর, তোমার চারিধারে বা বাহিরে নয়। উর্বর ইংরেজ কবি মিল্টন বলেছেন-

    “Verily, the mind on its own is capable of transforming paradise into hell and hell into paradise!”.

    “মন নিজেই স্বর্গ থেকে নরকে এবং নরক থেকে স্বর্গে রূপান্তরিত হতে পারে।”

    আরব কবি মুতানাব্বি বলেছেন- “বুদ্ধিমান ব্যক্তি ধনী অবস্থায় তার প্রতিভার কারণে ভোগে; অথচ, যখন নাকি মূর্খ ব্যক্তি দরিদ্র অবস্থায় সুখী।”

    জীবন দুঃখ করার জন্য নয়

    সেন্ট হেলেনাতে নেপোলিয়ন বিস্ময়ে বলেছিলেন- “আমার গোটা জীবনে আমি ছয়টি সুখী দিনের কথাও জানি না।”

    খলিফা হিশাম ইবনে আব্দুল মালেক বলেছেন- “আমি আমার জীবনের সুখী দিনগুলোকে স্মরণ করে তা গণনা করতে চেয়েছিলাম আর ওগুলোতে সর্বমোট তেরটি (সুখের দিন) পেয়েছিলাম।”

    এবং তার পিতা প্রায়ই আফসোস করে বলতেন- “আমি যদি কখনো খলিফা না হতাম!”

    বিখ্যাত ওয়ায়েজ ইবনে সাম্মাক একদা বাদশা হারুনুর রশীদের সাথে সাক্ষাৎ করতে যান। তখন বাদশা পিপাসার্ত হয়ে পানি চাইলেন। ইবনে সাম্মাক বললেন, “হে আমীরুল মু’মিনীন। আপনাকে যদি পানি না দেয়া হয় তবে কি আপনি আপনার অর্ধেক রাজত্বের বিনিময়ে পানি কিনে নিবেন?” বাদশা বললেন, “হ্যাঁ” তিনি যখন পানি পান করলেন তখন ইবনে সাম্মাক বললেন, “যদি কোনো অসুখের কারণে আপনি এ পানিটুকু (প্রশ্রাবের মাধ্যমে) দেহ থেকে বের করে দিতে না পারেন তবে কি আপনি আপনার দেহ থেকে পানিটুকু বের করে দিতে সক্ষম হওয়ার জন্য আপনার রাজত্বের অর্ধেক সম্পদ (চিকিৎসককে) মূল্য বাবদ দিবেন না?” তিনি বললেন, “হ্যাঁ” তখন ইবনে সাম্মাক বললেন, যে রাজত্বের মূল্য পানি পানের সমানও নয় তবেতো সে রাজত্বে কোনো লাভও নেই।”

    সমগ্র পৃথিবী এবং এতে যা কিছু আছে তার কোনো মূল্য, ওজন ও অর্থই নেই যদি তা ঈমানহীন হয়।

    আল্লামা ইকবাল বলেছেন- “যখন ঈমান হারায় তখন শান্তিও হারায়। আর যে ব্যক্তি ধাৰ্মিক জীবনযাপন করে না তার দুনিয়ার জীবনের কোনও মূল্য নেই। আর যে লোক দ্বীনহীন বা ধর্মহীন জীবনে সন্তুষ্ট হলো সেতো ধ্বংসকে তার জীবনের সঙ্গী বানিয়ে নিল ।”

    ইমারসন স্বনির্ভরতার উপর তার প্রবন্ধ নিম্নোক্ত কথা কয়টির মাধ্যমে সমাপ্ত করেন—

    “রাজনৈতিক বিজয়, বেতন বৃদ্ধি, রোগারোগ্য বা সুখের দিন ফিরে পাওয়া–এসব কিছুই দিগন্তে আপনার জন্য আবছা হয়ে আছে। এগুলোকে বিশ্বাস করবেন না; কেননা, আপনি যেমনটি আশা করেন তেমনটি (কখনো) হবেন না এবং এ কারণে যে, আপনি নিজে ছাড়া আপনাকে অন্য কেউ শান্তি এনে দিতে পারবে না।”

    ارْجِعِي إِلَىٰ رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً فَادْخُلِي فِي عِبَادِي وَادْخُلِي جَنَّتِي

    “সন্তুষ্টচিত্তে ও সন্তোষভাজন হয়ে তোমার প্রভুর নিকট ফিরে আস! অতপর আমার (সম্মানিত) বান্দাদের পরিমণ্ডলে প্রবেশ কর।” (৮৯-সূরা আল ফাজর: আয়াত-২৮-২৯)

    একজন প্রসিদ্ধ দার্শনিক ও নাট্যকার বলেছেন- “আমাদের দেহ থেকে টিউমার আপসারণ ও রোগ-ব্যাধি দূর করার চেয়েও বেশি প্রয়োজন হলো আমাদের চিন্তা-চেতনা থেকে মন্দ ধারণা দূর করা।”

    দৈহিক রোগের তুলনায় কুরআনে চিন্তা-ভাবনা ও বিশ্বাসের বা ঈমানের রোগ সম্বন্ধে বেশি সতর্কবাণী আছে।

    ফরাসী দার্শনিক মন্টেইন বলেছেন- “যা ঘটছে তার সম্বন্ধে কোনো লোকের মতামত বা ধারণা দ্বারা সে যতটা প্রভাবিত হয়—সে ঘটনার দ্বারা সে ততটা প্রভাবিত হয় না।” (ঘটনার চেয়ে ঘটনা সম্বন্ধে ধারণার দ্বারাই মানুষ বেশি প্রভাবিত হয়।)

    নিম্নোক্ত হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করেছেন-

    “হে আল্লাহ! আপনার ফয়সালার প্রতি আমাকে সন্তুষ্ট করে দিন, যাতে করে আমি বুঝতে পারি যে, আমার যা কিছু ঘটেছে তা না ঘটার মতো ছিল না এবং যা কিছু ঘটেনি তা ঘটার মতো ছিল না।”

    কথা কয়টি একটু ভেবে দেখুন

    বিষন্ন হবেন না; কেননা, বিষন্নতা আপনাকে অতীত নিয়ে আক্ষেপ করতে, ভবিষ্যৎ নিয়ে ভুল বুঝাবুঝি বা সন্দেহ করতে এবং আপনার বর্তমানকে নষ্ট করে দিতে বাধ্য করবে।

    দুঃখিত হবেন না; কেননা, এটি হৃদয়কে সংকুচিত করে, মুখমণ্ডলকে কুচকিয়ে দেয়, মনোবলকে দুর্বল করে দেয় এবং আশা ভরসাকে দূর করে দেয়।

    মনঃক্ষুন্ন হবেন না; কেননা, আপনার মনঃক্ষুন্নতা আপনার শক্রকে আনন্দিত করে, আপনার বন্ধুদেরকে ক্রুদ্ধ করে এবং হিংসুকদেরকে স্ফূর্তি করায়। মনঃক্ষুন্ন হবেন না; কেননা, মনঃক্ষুন্ন হয়ে আপনি স্বর্গীয় বিধান বা তকদীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন এবং আপনার ভাগ্যলিপির বিরুদ্ধে বিরক্তি প্রকাশ করছেন।

    ভগ্নহৃদয় বা মনমরা হবেন না; কেননা, মনমরা ভাব যা হারিয়ে গেছে বা চলে গেছে তা আপনাকে এনে দিতে পারবে না, এটা মৃতকে পুনর্জীবন দান করতে পারবে না, ভাগ্যকে পরিবর্তন করতে পারবে না অথবা কোনো উপকারই করতে পারবে না।

    ব্যথিত বা ভাঙামন হবেন না; কেননা, মৰ্মবেদনা প্রায়ই শয়তানের (ধোকা) থেকে (উৎপন্ন) হয় এবং তা এক ধরনের হতাশা।

    “(হে মুহাম্মাদ!), আমি কি তোমার জন্য তোমার মনকে প্রশস্ত করে দেইনি? এবং যা তোমার পিঠকে ভেঙে দিয়েছে আমি তোমা থেকে তোমার সে ভার অপসারণ করেছি এবং আমি তোমার স্মরণ বা খ্যাতিকে সমুচ্চ করেছি। অতএব, কষ্টের পরেই আরাম আছে। নিশ্চয় কষ্টের পরেই স্বস্তি আছে। অতএব, যখনই অবসর পাও তখনই (আল্লাহর) ইবাদত করিও এবং তোমার প্রভুর দিকে প্রার্থনার জন্য মনোনিবেশ করিও।” (৯৪-সূরা আল ইনশিরাহ: আয়াত-১-৮)

    আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস থাকা পর্যন্ত হতাশ হবেন না

    সর্বশক্তিমান আল্লার প্রতি ঈমান সুখ-শান্তির দিকে নিয়ে যায়, পক্ষান্তরে অবিশ্বাস বা কুফুরি বিভ্রান্তি ও দুঃখ-দুর্দশার পথে পরিচালিত করে। আমি বিশেষ ধরনের অনেক মেধাবী লোক-সম্বন্ধে পড়াশোনা করেছি; এদের কিছু লোককে প্রতিভাবানও বলা চলে; এরা প্রতিভাবান হওয়া সত্ত্বেও এদের অন্তর হেদায়েতের আলোবর্জিত এবং সত্যিকার অর্থে এরা শরীয়ত সম্বন্ধে মন্দ কথাই বলেছে। দুটি উদাহরণ মনে পড়ল-

    আবুল আলা আল মুয়ারররি শরীয়ত সম্বন্ধে বলেছে, “পরস্পর বিরোধী, যার সম্বন্ধে আমরা চুপ থাকা ছাড়া কিছুই করতে পারি না।” দ্বিতীয়টি হলো ইবনে সীনার উক্তি, “যা কিছু প্রকৃতির উপর প্রভাব ফেলে তা হলো কার্যকর মেধা।”

    এভাবে আমি বুঝতে পারলাম যে, আল্লাহর প্রতি যতটুকু ঈমান থাকবে ততটুকুই সুখী হওয়া যাবে।

    অতি আধুনিককালের কিছু কথার অর্থ উপরের দুটি কথার অর্থের মতই, এগুলো প্রাচীনকালের ফেরআউনের কথার উত্তরসূরী-

    “ফেরআউন বলেছিল, হে পরিষদবর্গ! আমি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন ইলাহ আছে বলে আমার জানা নেই।" (২৮-সূরা আল কাছাছ: আয়াত-৩৮)

    “ফেরআউন বলেছিল : আমি তোমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রভু।” (৭৯-সূরা আল হাশর : আয়াত-২৪)

    ‘How Man Thinks’ গ্রন্থের গ্রন্থকার জেমস এলেন বলেছেন, “মানব জাতি বুঝতে পারবে যে, বস্তু ও মানুষ সম্বন্ধে তাদের ধারণা সতত পরিবর্তনশীল এবং বস্তু ও মানুষও পরিবর্তনশীল। ধরুন কেহ তার ধারণা পাল্টাল আর আমরা জেনে আশ্চর্য হব যে, কত শীঘ্রই তার পার্থিব জীবন পরিবর্তিত হয়ে যায়। অতএব যে পবিত্র বস্তু আমাদের উদ্দেশ্যকে গঠন করে তা, আমরা নিজেরাই। ভুল ধারণা ও তার কুফল সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেছেন-

    “বরং তোমরা ধারণা করেছিলে যে, রাসূল ও মু’মিনগণ কখনো তাদের পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে আসতে পারবে না এবং এটা তোমাদের মনে সুন্দর লেগেছিল। তোমরা মন্দ ধারণা করেছিলে এবং তোমরা ধ্বংসশীল জাতি হয়ে গিয়েছিল।” (৪৮-সূরা আল ফাতহ: আয়াত-১২)

    “তারা জাহেলদের মতো আল্লাহ সম্বন্ধে ভুল ধারণা করেছিল; তারা বলত, কাজে আমাদের কি কোনো ভূমিকা আছে? (হে মুহাম্মাদ!) বলুন, নিশ্চয় সকল কাজই আল্লাহ অধিকারে।” (৩-সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১৫৪)

    জেমস এলেন আরো বলেছেন- “মানুষ যা করে তা তার ব্যক্তিগত চিন্তার প্রত্যক্ষ ফল এবং তার চিন্তার মধ্য দিয়ে তার লক্ষ্য অর্জন ও জয় করে নিতে সক্ষম। সে যদি একথা অস্বীকার করে তবে সে দুর্বল ও দুর্দশাগ্রস্ত থেকে যাবে।”

    সর্বশক্তিমান আল্লাহ সত্যিকার দৃঢ় প্রত্যয় ও সঠিক চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে বলেছেন-

    “যদি তারা অভিযানে বের হবার ইচ্ছা করত তবে তারা এর জন্য প্রস্তুতি নিত; কিন্তু আল্লাহ তাদের প্রেরণকে অপছন্দ করেছেন, তাই তিনি তাদেরকে পিছনে (বসিয়ে) রেখেছেন।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-৪৬)

    “তাদের মাঝে কোনো কল্যাণ আছে বলে যদি আল্লাহ জানতেন তবে তিনি তাদেরকে শ্রবণ করাতেন।” (৮-সূরা আনফাল: আয়াত-২৩)

    “তাদের অন্তরে যা ছিল আল্লাহ তা জেনে নিয়েছেন এবং তিনি তাদেরকে পুরস্কার হিসেবে আসন্ন বিজয়ের সংবাদ প্রদান করেন।” (৪৮-সূরা আল ফাতহ: আয়াত-১৮)


    তুচ্ছ জিনিসের জন্য দুঃখ করবেন না

    একবার এক ধাৰ্মিক ব্যক্তিকে এক সিংহের খাঁচায় নিক্ষেপ করা হয়েছিল আর তখন আল্লাহ তাকে এর থাবা থেকে রক্ষা করেছিলেন। পরবর্তীতে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, “সে সময়ে তুমি কী ভাবতে ছিলে?” তিনি বলেছিলেন, “আমি সিংহের লালা নিয়ে ভাবছিলাম-এটা কি (ফকীহদের মতানুসারে) পাক না নাপাক (অর্থাৎ আমার মৃত্যুর সময় আমি পাক না নাপাক অবস্থায় থাকব- এ নিয়ে ভাবছিলাম)।

    আল্লাহ তায়ালা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী (রাঃ) তাদের উদ্দেশ্য অনুসারে তাদের গুণাগুণ বর্ণনা করেছেন-

    “তোমাদের মাঝে কেউ কেউ দুনিয়া কামনা করে আর তোমাদের মাঝে এমনও কিছু লোক আছে যারা আখিরাত চায়।” (সূরা-৩ আলে ইমরান: আয়াত-১৫২)

    ইবনুল কাইয়েম (রহঃ) বলেছেন- “মানুষের উদ্দেশ্য অনুপাতেই মানুষের মূল্য।”

    একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি বলেছেন- “আমাকে কোনো লোকের উদেশ্য সম্বন্ধে অবহিত করলে আমি বলে দিতে পারব সে কোন ধরনের লোক৷”

    সাগরে একটি জাহাজ ডুবে একজন আবেদ লোক পানিতে পড়ে গিয়েছিল। সে অজু করতে শুরু করে দিয়েছিল-এক সময়ে একটি করে অঙ্গ ধৌত করছিল। সে তীরে পৌছতে পেরেছিল এবং বেঁচে গিয়েছিল। তাকে অজু প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- কেন সে অজু করেছিল? আর সে উত্তর দিল, “আমি এজন্য অজু করেছিলাম-যাতে আমি পবিত্র অবস্থায় মৃত্যুবরণ করতে পারি।”

    ইমাম আহমদ (রহঃ) যখন মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর ছিলেন তখন অন্যেরা তাকে অজু করাচ্ছিল আর তিনি তাদেরকে তার দাড়ি দেখিয়ে এক বিন্দু পরিমাণ স্থানও যাতে অধৌত না থাকে সে কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিলেন।

    “অতএব আল্লাহ তাদেরকে পার্থিব পুরস্কার এবং চমৎকার পারলৌকিক পুরস্কার দান করলেন।” (৩-সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১৪৮)

    যখন আপনার সাথে প্রকাশ্য শক্রতা প্রদর্শন করা হয় তখন মনঃক্ষুন্ন হবেন না; কেননা, আপনি যদি ক্ষমা করে দেন ও ভুলে যান তবে এ দুনিয়ায় মাহাত্ম্য ও পরকালে সম্মান অর্জন করবেন।

    فَمَنْ عَفَا وَأَصْلَحَ فَأَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ

    “কিন্তু যে ব্যক্তি ক্ষমা করে দিল ও আপস করে নিল, আল্লাহর পক্ষ হতে তার জন্য পুরস্কার রয়েছে।” (৪১-সূরা আশ শুরা আয়াত ৪০)

    হিংসার আগুন সম্বন্ধে শেক্সপিয়ার বলেছেন “Don't light the oven too much for your enemy in order not to burn yourself by the flame.”

    “অগ্নিশিখায় তুমি নিজেই যাতে পুড়ে না যাও এজন্য শক্রর জন্য চুলার আগুন খুব বেশি প্রজ্জ্বলিত করিও না।”

    প্রাথমিক ইসলামী যুগের একজন পণ্ডিত সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে উমার'-কে এক লোক বলেছেন, “তুমি একজন খারাপ লোক,” তিনি তৎক্ষণাৎ উত্তর দিলেন, “তুমি ছাড়া আমাকে কেউ জানে না।”

    এক লোক আবু বকর (রাঃ)-কে মৌখিক আক্রমণ করে বলে- “আল্লাহর কসম, আমি আপনাকে এমন গালিগালাজ করব যা আপনার সাথে আপনার কবরে প্রবেশ করবে। তিনি শান্তভাবে উত্তর দিলেন, “না, বরং তোমার গালি তোমার সাথে তোমার কবরেই প্রবেশ করবে।”

    কেহ আমর ইবনুল আসকে (রাঃ) বলেছিলেন- “আমি আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিব।” আমর (রাঃ) উত্তর দিলেন, “এখন তুমি অন্য সবার স্থলাভিষিক্ত হলে এবং একাজই তোমার উদ্বিগ্নতার (দুর্দশার) কারণ হবে।”

    একদা জেনারেল এইসেনহাউয়ার বিস্ময়ের সাথে বলেছিলেন- “আমরা যাদেরকে ভালোবাসি না তাদের নিয়ে চিন্তা করে আমরা যাতে এক মিনিটও নষ্ট না করি।”

    মশা গাছকে বলেছিল- “শক্ত হয়ে থাক; কেননা, আমি তোমাকে ছেড়ে উড়ে যেতে চাই। গাছ উত্তর দিয়েছিল, “আল্লাহর শপথ, আমি আমার উপর তোমার অবতরণ করা টের পাইনা! তবে কেন তোমার উড়ে যাওয়া টের পাব?"

    হাতেম তাই বলেছেন- “ভদ্র ব্যক্তি যদি কিছু সম্পদ জমা করে তবে আমি তার দোষ ক্ষমার চোখে দেখব। আর অসভ্যের গালিকে আমি ভদ্রতার সাথে এড়িয়ে যাব।”

    وَإِذَا مَرُّوا بِاللَّغْوِ مَرُّوا كِرَامًا

    এবং তারা নিরর্থক কার্যকলাপের সম্মুখীন হলে ভদ্রভাবে ও বিনয়ীভাবে তা এড়িয়ে চলে।” (২৫-সূরা আল ফুরকান: আয়াত-৭২)

    “এবং মূর্খরা যখন তাদেরকে (মন্দভাবে) সম্বোধন করে, তখন তারা ভদ্রতার সাথে উত্তর দেয়।” (২৫-সূরা আল ফুরকান: আয়াত ৬৩)

    কনফুসিয়াস বলেছেন- “ক্রুদ্ধ ব্যক্তি সর্বদা বিষে পরিপূর্ণ।”

    এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তিনবার উপদেশ দান করার জন্য অনুরোধ করেছিল, প্রতিবারই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তর দিয়েছিলেন, “রাগ করিও না বা ক্রুদ্ধ হয়ো না।”

    নিম্নোক্ত হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই রাগ বা ক্রোধ সম্বন্ধে বলেছেনঃ “ক্রোধ হলো দোজখের একটি জ্বলন্ত অঙ্গার।”

    শয়তান মানুষকে তিন অবস্থায় পরাজিত করে : প্রবৃত্তির তাড়নায়, ক্রোধ ও অমনোযোগ অবস্থায়।

    পৃথিবীটা এমনই, তাই আমি বিরক্ত হব না

    একজন বিজ্ঞতম রোম সম্রাট মার্কাস অরেলিয়াস’ একদিন বলেছেন- “আজ আমি এমন কিছু লোকের সাথে সাক্ষাৎ করব যারা বেশি কথা বলে, স্বার্থপর, বিরক্তি উৎপাদক তথা জঘন্য এবং যারা শুধুমাত্র নিজেদেরকেই ভালোবাসে। তবুও আমি বিরক্ত বা বিক্ষিত হব না; কেননা, বাকি জগতটাকে আমি অন্যরকম মনে করি না।”

    অন্যদেরকে সাহায্য করার মাধ্যমে আনন্দ খুঁজুন

    এরিস্টটল বলেছেন- “আদর্শ ব্যক্তি তিনিই যিনি অন্যদের সেবা করতে আনন্দ পান এবং অন্যেরা তার সেবা করলে তিনি লজ্জিত হন; কেননা, দয়া প্রদর্শন মাহাত্ম্যের লক্ষণ, পক্ষান্তরে দয়া গ্রহণ ব্যর্থতার লক্ষণ।” নিম্নোক্ত হাদীসটি এ বিষয়ে অধিকতর অর্থসহ ও যথাযথ-

    اليدُ العُليا خَيْرٌ مِنَ اليَدِ السُّفْلى

    “নিচের হাতের চেয়ে উপরের হাত উত্তম।”

    উপরের হাত বলতে দানকারী (হাত) বুঝায় আর নিচের হাত বলতে দান গ্রহণকারী (হাত) বুঝায়।

    একবেলার আহার এবং এক টুকরো কাপড় থাকলে আপনি বঞ্চিত নন

    যতক্ষণ আপনার এক টুকরো রুটি, এক গ্লাস পানি ও লজ্জাস্থান আবৃত করার মত কাপড় থাকে ততক্ষণ নিজেকে বঞ্চিত মনে করবেন না
    একজন নাবিক সমুদ্রে পথ হারিয়ে ফেলেছিল এবং এভাবে একুশ দিন পথহারা ছিল। এ ঘটনায় সবচেয়ে বড় কি শিক্ষা সে পেয়েছে এ সম্বন্ধে একজন তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তর দিলেন, “এ ঘটনা থেকে সর্বাপেক্ষা বড় যে শিক্ষা আমি পেয়েছি তা হলো- পরিষ্কার পানি ও পর্যাপ্ত খাবার থাকলে কখনো অভিযোগ করা উচিত নয়।”

    জোনাথন সুয়িফ্‌ট বলেছেন, “পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম কয়েকজন চিকিৎসক হলেন “যথাযথ খাদ্য-চিকিৎসক” “বিশ্রাম চিকিৎসক” এবং “সুখ চিকিৎসক”।”

    জোনাথন সুয়িফটের মন্তব্যের কারণ হলো যে, স্থূলতা এমন এক তিরস্কারযোগ্য রোগ যা মানুষের মেধাকে ধ্বংস করে দেয়। পক্ষান্তরে, বিশ্রাম, সংযম ও সুখ হলো মন-মানসিকতা, আত্মা ও হৃদয়ের জন্য সন্তোষজনক পুষ্টিদায়ক উপাদান।

    ড. স্যামুয়েল জনসন বলেছেন- “প্রত্যেক পরিস্থিতির উজ্জ্বল দিকটি দেখার অভ্যাস বিশাল আয়ের চেয়েও বেশি মূল্যবান।”

    أَوَلَا يَرَوْنَ أَنَّهُمْ يُفْتَنُونَ فِي كُلِّ عَامٍ مَّرَّةً أَوْ مَرَّتَيْنِ ثُمَّ لَا يَتُوبُونَ وَلَا هُمْ يَذَّكَّرُونَ

    “তারা কি দেখে না যে, তাদের প্রতি বছর একবার বা দু’বার (বিভিন্ন বালা-মুসিবত, বিপদ-আপদ, দুঃখ-দুর্দশা, রোগ-শোক, দুর্ভিক্ষ, অভাব-অনটন ইত্যাদি দ্বারা) পরীক্ষা করা হয়ঃ তবু তারা তওবা করে না এবং (এ থেকে) শিক্ষা গ্রহণ করে না।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-১২৬)

    আমাদের একজন ধাৰ্মিক পূর্বসূরী কোনো একজনকে লক্ষ্য করে বলেছেন- “আমি তোমার উপর কল্যাণের চিহ্ন দেখতে পাচ্ছি; কৃতজ্ঞ হয়ে তোমার কল্যাণকে তালা দিয়ে রাখ ও সেগুলোকে নিরাপদে রাখ।”

    “তখনকার কথা স্মরণ কর যখন তোমার প্রভু ঘোষণা করেছিল, যদি তোমরা (ঈমান গ্রহণ করেও একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করে) কৃতজ্ঞ হও, তবে আমি অবশ্যই অবশ্যই তোমাদের অধিক দান করব; আর যদি তোমরা (কুফুরি করে) অকৃতজ্ঞ হও তবে (জেনে রাখ) আমার শাস্তি সাংঘাতিক।” (১৪-সূরা ইবরাহীম: আয়াত-৭)

    “এবং আল্লাহ এক জনপদের দৃষ্টান্ত পেশ করলেন-যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, সবখান থেকে এখানে প্রচুর রিযিক আসত। অতঃপর (এ জনপদের অধিবাসীরা) আল্লাহর নেয়ামতের কুফুরি করল। তাই আল্লাহ একে (অর্থাৎ এ জনপদের অধিবাসীদেরকে) তারা যা করত তার বদলাস্বরূপ চরম ক্ষুধা ও ভয়ের স্বাদ গ্রহণ করালেন।” (১৬-সূরা আন নাহল: আয়াত-১১২)


    “আল্লাহর উপর ভরসা” শিরোনামের আকর্ষনীয় এই টপিকসের সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-
    ১ম পর্ব    ২য় পর্ব    ৩য় পর্ব    ৪র্থ পর্ব    ৫ম পর্ব    ৬ষ্ট পর্ব    ৭ম পর্ব    ৮ম পর্ব    ৯ম পর্ব    ১০ম পর্ব    ১১-তম পর্ব    ১২-তম পর্ব    ১৩-তম পর্ব    ১৪-তম পর্ব    ১৫-তম পর্ব    ১৬-তম পর্ব    ১৭-তম পর্ব    ১৮-তম পর্ব    ১৯-তম পর্ব    ২০-তম পর্ব    ২১-তম পর্ব    ২২-তম পর্ব    ২৩-তম পর্ব    ২৪-তম পর্ব    ২৫-তম পর্ব    ২৬-তম পর্ব    ২৭-তম পর্ব    ২৮-তম পর্ব    ২৯-তম পর্ব    ৩০-তম পর্ব    ৩১-তম পর্ব    ৩২-তম পর্ব    ৩৩-তম পর্ব    ৩৪-তম পর্ব    ৩৫-তম পর্ব    ৩৬-তম পর্ব    ৩৭-তম পর্ব    ৩৮-তম পর্ব 




    ********************************************
    সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url