আল্লাহর উপর ভরসা (পর্ব-২৯) || আল্লাহর নিকট আশ্রয় চান || রাজা খসরু ও বৃদ্ধা রমণীর গল্প || ভিতরের ও বাহিরের যত্ন নিন ||






ভিতরের ও বাহিরের যত্ন নিন

যার আত্মা পবিত্র সে পরিষ্কার পোশাকাদি পরিধান করে। কোন কোন জ্ঞানী লোক এমনকি একথাও বলেছেন যে

“যখন কারো পোশাক ময়লা হয়ে যায় তখন তার আত্মাও পোশাককে অনুসরণ করে (অর্থাৎ পোশাকের মতো ময়লা হয়ে যায়)।”

অনেক লোকের বিরক্তির মূল কারণ হলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না থাকা, অগোছালো থাকা ও নিয়মনিষ্ঠ না থাকা; আর অন্যদের বিরক্তির কারণ হলো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, ময়লা পোশাকাদি ও নোংরা সুরৎ। এ বিশ্ব জগৎ নিয়মভিত্তিক পরিচালিত। আসলে আমাদের ধর্মের গভীরতা ও প্রজ্ঞা সত্যিকারভাবে বুঝতে হলে আমাদের এ কথা বুঝা উচিত যে, ছোট বড় উভয় বিষয়েই আমাদের জীবনকে নিয়মতান্ত্রিক করার জন্য এ ধর্ম এসেছে। আল্লাহর সব কিছুই (অর্থাৎ সকল বিধানই) একটি মাত্রা অনুপাতে আছে।

মুসলিম শরীফে নিম্নোক্ত হাদীসটি আছে—

إِنَّ اللهَ جَمِيلٌ يُحِبُّ الْجَمَالَ

“নিশ্চয় আল্লাহ্ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্যকে ভালোবাসেন।”

ইমাম বুখারী তার সহীহ কিতাবে নিম্নোক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন-

“সপ্তাহে একদিন গোসল করা, মাথা ও শরীর ধোয়া প্রত্যেক মুসলমানের উপর বাধ্যতামূলক।”

সর্বাপেক্ষা কম যতটা আশা করা যায় এটা (সপ্তাহে একদিন গোসল করা) হলো তা। আমাদের কিছু কিছু ধাৰ্মিক পূর্বসূরী প্রতিদিন একবার গোসল করতেন, যেমনটা উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) সম্বন্ধে আমাদের নিকট খবর পৌঁছেছে- “এতো গোসলের সুশীতল পানি ও (প্রাণবন্তকারী) পানীয়”। (৩৮-সূরা ছোয়াদঃ আয়াত-৪২)

দাড়ি রাখা, মোছ ছাঁটা, নখ কাটা, দাঁত মাজা, আতর মাখা, কাপড় ধোয়া ও সাধারণত বাহ্যিক আকৃতির যত্ন করা পুরুষের জন্য বাধ্যতামূলক কাজ। এসব স্বাস্থ্যকর কাজ করলে আরাম ও ভালো বোধ করা যায়। সাদা পোশাক পরার পরামর্শও দেয়া হয়েছে। কেননা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

“সাদা পোশাক পরিধান কর ও মৃতের কাফন হিসেবে সাদা কাপড় ব্যবহার কর।”

আপনার উচিত ছোট একখানা নোটবুকে আপনার কাজ-কর্মকে পড়ার, ইবাদত করার, ব্যায়াম করার ও ইত্যাদির সময় নির্ধারণ করে সুবিন্যস্ত করে রাখা।

“প্রত্যেক বিষয়ের নির্দিষ্ট সময় (আল্লাহ নিকট) লিখিত আছে।” (১৩-সূরা রাআদঃ আয়াত-৩৮)

“আমার নিকট প্রত্যেক বস্তুর ভাণ্ডার আছে এবং আমি তা নির্দিষ্ট পরিমাণ ছাড়া নাযিল করি না।" (১৫-সূরা হিজরঃ আয়াত-২১)

কংগ্রেসের লাইব্রেরিতে এক বিশাল বিজ্ঞাপন ঝুলছে ও তাতে লিখা আছে- “এ বিশ্বজগৎ নিয়মভিত্তিক পরিচালিত।” একথা সত্য। কেননা, ঐশী ধর্ম সকল কাজ কর্মে নিয়ম-শৃঙ্খলা ও ভারসাম্যতার দাবি করে।

আল্লাহ আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, এ বিশ্বজগতের কাজকর্ম খেল-তামাশার উপর ভিত্তি করে পরিচালিত নয় বরং পূর্ব নির্ধারিত বিধান, পরিমাপ ও শৃঙ্খলার উপর ভিত্তি করে পরিচালিত।

“চন্দ্র-সূর্য হিসাব মতে চলে”। (৫৫-সূরা আর রাহমানঃ আয়াত-৫)

“সূর্যের সাধ্য নেই চন্দ্রের নাগাল পায়, আর রাতও দিনকে অতিক্রম করতে পারবে না। আর প্রত্যেকেই (যার যার নির্দিষ্ট) কক্ষপথে পরিভ্রমণ করছে।” (৩৬-সূরা ইয়াসিনঃ আয়াত-৪০)

“আর চন্দ্রের জন্য আমি বহু ঘাটি নির্ধারণ করে দিয়েছি (এগুলো অতিক্রম করতে করতে) অবশেষে তা শুষ্ক, বক্র, পুরাতন খেজুর ডালের মতো হয়ে যায়।” (৩৬-সূরা ইয়াসীন আয়াত-৩৯)

“এবং আমি রাত ও দিনকে দুটি নিদর্শন বানিয়েছি। পরে আমি রাতের চিহ্নকে অন্ধকারময় করেছি এবং দিনের চিহ্নকে উজ্জ্বল করছি। যাতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ তালাশ করতে পার ও বছরের সংখ্যা ও হিসাব জেনে নিতে পার। আর আমি প্রতিটি বিষয়কে বিশদভাবে বর্ণনা করেছি।” (১৭-সূরা বনী ইসরাঈলঃ আয়াত-১২)

“হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এসব কিছু অযথা সৃষ্টি করেনি; সকল মহিমা, গৌরব, প্রশংসা ও ধন্যবাদ তোমারই প্রাপ্য।” (৩-সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত-১৯১)

আসমান-জমিন ও এতদুভয়ের মাঝে যা কিছু আছে তা আমি খেল তামাশা করে সৃষ্টি করিনি। যদি আমি খেল-তামাশা গ্রহণ করতে চাইতাম। তবে তা আমি আমার পক্ষ থেকেই গ্রহণ করতাম, কিন্তু আমি তা করিনি।” (২১-সূরা আল আম্বিয়াঃ আয়াত-১৬, ১৭)

“এবং (হে মুহাম্মদ!) আপনি বলে দিন, তোমরা ভালো কাজ কর।” (৯-সূরা তাওবাঃ আয়াত-১০৫)

যখন কোন মানসিকভাবে অসুস্থ রোগীকে গ্রিসের হাকীমদের নিকট চিকিৎসার জন্য আনা হতো তখন তারা এ রোগীকে খামার ও বাগান করতে বাধ্য করত। অল্প কিছু সময় কাটতে না কাটতেই এ রোগী সুস্থ হয়ে যেত। হস্তশিল্পী ব্যবসায়ীরা অন্যদের তুলনায় বেশ সুখী। ধীর ও শান্ত। আপনি যদি শ্রমিকদেরকে লক্ষ্য করেন তবে আপনি তাদের শরীরে শক্তি ও মনের শান্তি দেখতে পাবেন। এতদুভয়ই সন্তুষ্টির ফলে আসে। আর সন্তুষ্টি আসে নড়াচাড়া ব্যায়াম ও কাজের মাধ্যমে।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ

“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট অক্ষমতা ও অলসতা থেকে মুক্তি চাই।”


আল্লাহর নিকট আশ্রয় চান

আল্লাহ : একমাত্র মহান ও মহিমান্বিত নাম । এর শব্দের মূল থেকে আমরা বিশেষ অর্থ শিখতে পারি। কেউ কেউ বলেন الله শব্দ اله ধাতু থেকে এসেছে। এর অর্থ হলো যাকে মানুষের অন্তর ভালোবাসে, যাতে তারা শান্তি পায়, সুখী হয় যার অভিমুখী হয় ও যাকে উপাস্য বা প্ৰভু হিসেবে মান্য করে। অবশ্য তিনি ছাড়া অন্যের নিকট শান্তি পাওয়াও অসম্ভব। এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তার কন্যা) ফাতেমা (রাঃ)-কে দুর্দশাগ্রস্ত লোকের (জন্য পঠিতব্য) দোয়া শিখিয়ে দিয়েছিলেন। (আর তা হলো)

اللَّهُ اللَّهُ رَبِّى لاَ أُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا

অর্থাৎ “আল্লাহ আল্লাহই আমার প্রতিপালক, আমি তার সাথে কোন কিছুকে শরীক সাব্যস্ত করি না।”

“বল আল্লাহই (এটি অবতীর্ণ করেছেন) অতপর তাদেরকে তাদের নিরর্থক কথাবার্তার খেলায় ছেড়ে দাও।” (৬-সূরা আল আন’আমঃ আয়াত-৯১)

“তিনি তার বান্দাদের উপর পরাক্রমশালী”। (৬-সূরা আল আন’আমঃ আয়াত-১৮)

“আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি পরম করুনাময় ও দয়ালু।” (৪২-সূরা আশ শুরাঃ আয়াত-১৯)

“তারা আল্লাহকে যথোচিত সম্মান প্রদর্শন করেনি। অথচ কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবীটা তার হাতের মুঠোয় থাকবে এবং আকাশসমূহ তার ডান হাতে গোটানো অবস্থায় থাকবে। তারা (তার সাথে) যা কিছু শরীক সাব্যস্ত করে তিনি তা থেকে পবিত্র ও তার উর্ধ্বে।” (৩৯-সূরা আয যুমারঃ আয়াত-৫৭)

“লিখিত দফতর যেভাবে গুটানো হয় সেদিন আমি আকাশকে সেভাবে গুটিয়ে ফেলব।” (২১-সূরা আল আম্বিয়াঃ আয়াত-১০৪)

“নিশ্চয় আল্লাহ আকাশসমূহকে ও পৃথিবীকে আঁকড়িয়ে (ধরে) রেখেছেন যাতে সেগুলো টলে না যায়।” (৩৫-সূরা ফাতিরঃ আয়াত-৪১)


আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ ঈমান রাখা

যে সকল বিষয় ঈমানদারদের সুখ বয়ে আনে তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আল্লাহর মুখাপেক্ষী হওয়া, তার উপর নির্ভর করা, তার প্রতি বিশ্বাস রাখা ও তার রক্ষণাবেক্ষণে সন্তুষ্ট থাকা।

“তার মতো কোন কিছুর কথা কি তুমি জান?” (১৯-সূরা মারইয়ামঃ আয়াত-৬৫)

“নিশ্চয় আল্লাহই আমার অভিভাবক যিনি কুরআন অবতীর্ণ করেছেন এবং তিনি সৎকর্মশীলদের অভিভাবকত্ব করেন।” (৭-সূরা আল আরাফঃ আয়াত-১৯৬)

“জেনে রাখ! নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই এবং তারা হতাশও হবেন না।” (১০-সূরা ইউনুসঃ আয়াত-৬২)

আল্লাহর বন্ধু তারাই যারা (মু’মিন, মুসলিম) আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করে এবং আল্লাহকে অত্যন্ত ভয় করে, সকল প্রকার পাপ ও মন্দ কাজ যা আল্লাহ করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকে এবং আল্লাহকে

অত্যন্ত ভালোবাসে এবং আল্লাহ যে সব ভালোকাজ করতে আদেশ করেছেন তা সম্পাদন করে।


তিনটি বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ

টেনশন ও মানসিক রোগ সংক্রান্ত বই পুস্তক গভীর মনোযোগের সাথে পাঠ করার পর আমি যে বিষয়টি দেখতে পেলাম তা হচ্ছে- মুসলিম বিজ্ঞজনরা (আলেমরা) আরোগ্যকামীর জন্য তিনটি বিষয়ে একমত। (আর তা হলো)

১. আল্লাহর ইবাদত করার মাধ্যমে, তার আনুগত্য করার মাধ্যমে এবং সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় তার মুখাপেক্ষী থাকার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখা উচিত। আর এটাই ঈমান, প্রধানতম, সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোচ্চ বিচার্য বিষয়।

فَاعْبُدْهُ وَاصْطَبِرْ لِعِبَادَتِهِ هَلْ تَعْلَمُ لَهُ سَمِيًّا

“অতএব তার ইবাদত কর এবং তার ইবাদতে ধৈর্যশীল থাক। তার মতো কোন কিছুর কথা কি তুমি জান?” (১৯-সূরা মারইয়ামঃ আয়াত-৬৫)

অবশ্যই তাঁর মতো, তার সমকক্ষ ও তার সমতুল্য কেউই নেই এবং তার কোন শরীক নেই।

لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ

“তাঁর মতো কিছুই নেই বরং তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্ৰষ্টা।” (৪২-সূরা আশ শূরাঃ আয়াত-১১)

২. অতীতের দুঃখজনক ঘটনাবলিকে অবশ্যই ভুলে যেতে হবে। অতীতের দুঃখদায়ক ঘটনাসমূহকে মনে করলে শুধু বেদনাই পাওয়া যায়- তা শুধু বেদনাই বৃদ্ধি করে। এগুলোকে অবশ্যই ভুলে যেতে হবে এবং স্মৃতির পাতা থেকে মুছে ফেলতে হবে। এভাবে প্রতিটি নতুন দিনের জন্য একটি করে নতুন জীবন শুরু করতে হবে।

৩. ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা অবশ্যই পরিহার করতে হবে। যা কিছু এখনও ঘটেনি তা গায়েবের বিষয়। সুতরাং এটা ঘটার আগ পর্যন্ত এটাকে একাকী রেখে দিন (অর্থাৎ এ নিয়ে আগাম দুশ্চিন্তা করবেন না)। বিশেষ করে ভবিষ্যৎবাণী, দুশ্চিন্তা ও আশঙ্কা দ্বারা আগাম দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়াকে পরিহার করুন বা এড়িয়ে চলুন। আজকের সীমার মধ্যেই জীবন যাপন করা উচিত। (এ সম্বন্ধে প্রথম দিকে বিস্তৃত ব্যাখ্যামূলক আলোচনা করা হয়েছে। -অনুবাদক)

আলী (রাঃ) বলেছেন- “(এ দুনিয়ার) দীর্ঘকালীন প্রত্যাশা করা থেকে সাবধান। নিশ্চয় এটা মানুষকে তার আসল লক্ষ্যকে (পরকালকে) ভুলিয়ে দেয়।”

“এবং তারা ভেবেছিল যে, তাদেরকে আমার নিকট ফিরিয়ে আনা হবে না।” (২৮-সূরা আল কাছাছঃ আয়াত-৩৯)

কুসংস্কার ও গুজবে বিশ্বাস করা থেকে সাবধান। “তারা মনে করে প্রতিটি শব্দই (হৈচৈ বা চিৎকারই) বুঝি তাদের বিরুদ্ধে (করা হচ্ছে)”। (৬৩-সূরা আল মুনাফিকূনঃ আয়াত-৪)

আমি এমন কিছু লোকের কথা জানি যারা বহু বছর যাবৎ এমন বিপর্যয় ও দুর্যোগের ভবিষ্যৎবাণীর বাস্তবায়নের অপেক্ষা করে আসছে যা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। তারা তাদের নিজেদের অন্তরে এবং অন্যদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করছে। আল্লাহ কতই না মহান! আল্লাহ কতই না পবিত্র (তিনি যা বলেছেন তা কতইনা সত্য!) এ ধরনের (ভীতি সম্বলিত) জীবন যাপন করা দুঃখজন ও শোচনীয়। এ ধরনের লোকের উদাহরণ হলো চীনের নির্যাতিত কারাবন্দীরা। কারারক্ষী তাদের একটি নলকূপের নিচে রাখে। সে নলকুপ থেকে প্রতি মিনিটে মাত্র এক ফোটা করে পানি পড়ে। তৃষ্ণাতুর বন্দী মরিয়া হয়ে প্রতিটি বিন্দু পানির অপেক্ষা করতে করতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আল্লাহ নিম্নোক্ত আয়াতসমূহে দোজখীদের অবস্থা বর্ণনা করেছেন-

“তাদের জন্য মৃত্যুর ফয়সালাও করা হবে না এবং তাদের থেকে দোজখের আযাবও হাল্কা করা হবে না।” (৩৫-সূরা ফাতিরঃ আয়াত-৩৬)

“অতপর সেখানে মরবেও না (অতএব শাস্তি হতে নিস্তার পাবে না) এবং বাঁচবেও না (অর্থাৎ শাস্তিহীন জীবন যাপন ও করবে না)”। (৮৭-সূরা আল আ’লাঃ আয়াত-১৩)

“যখন তোমাদের চামড়া জ্বলে যাবে তখনই আমি তাদেরকে নতুন চামড়া সৃষ্টি করে দিব, যাতে করে তারা ভালোভাবে শাস্তি ভোগ করতে পারে।” (৪-সূরা আন নিসাঃ আয়াত-৫৬)


সীমালঙ্ঘনকারীর অন্যায় আচরণ

إِلَى الدَيَّانِ يَوْمِ الحَشر نَمْضِي ٭ وَعِنْدَ اللَّهِ تُجْتَمَعُ الْخَصُومُ

“হাশরের দিন আমরা মহা বিচারকের নিকট চলে যাব, আর সকল বিবাদীকে আল্লাহর সামনে হাজির করা হবে।”

ঈমানদারের পক্ষে ন্যায় বিচারের জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে সেদিন (বিচারের জন্য) অপেক্ষা করতে থাকবে যেদিন নাকি (স্বয়ং) আল্লাহ প্রথম ও শেষ সৃষ্টিকে (অর্থাৎ সকল সৃষ্টিকে) একত্রিত করবেন। সে দিন স্বয়ং আল্লাহ বিচারক হবেন আর সাক্ষী হবেন ফেরেশতারা।

“এবং আমি কিয়ামতের দিন ন্যায় বিচারের দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করব, অতএব কারো প্রতি জুলুম করা হবে না এবং সরিষা দানা পরিমাণ (ওজনের আমলও) যদি থাকে আমি তাও (দাঁড়িপাল্লায় ওজন দিতে) নিয়ে আসব।” (২১-সূরা আল আম্বিয়াঃ আয়াত-৪৭)


রাজা খসরু ও বৃদ্ধা রমণীর গল্প

বুজুরজামহার নামে পারস্যের এক বিজ্ঞ ব্যক্তি রাজা খসরু ও এক বৃদ্ধা রমণীর গল্প বলেছেন। বৃদ্ধার সম্পদ বলতে ছিল একটি মুরগির বাচ্চা ও একটি কুঁড়ে ঘর। কুঁড়ে ঘরখানা রাজপ্রাসাদের পাশে ছোট এক টুকরো জমির উপর ছিল। একদিন বৃদ্ধাকে (বিশেষ কাজে) পাশের গ্রামে যেতে হলো। যাবার আগে সে প্রার্থনা করেছিল, ‘হে আমার প্রভু! আমি আমার মুরগি ছানাটিকে আপনার নিকট সোপর্দ করছি (আপনি এটাকে হেফাজত করুন)’। বৃদ্ধ যখন তার বাড়িতে ছিল না তখন রাজা খসরু তার রাজপ্রাসাদের বাগান বাড়ানোর জন্য বৃদ্ধার সম্পত্তিকে জবর দখল করে নিল।

খসরুর সেনাবাহিনী বৃদ্ধার মুরগি ছানাটিকে জবাই করে ফেলল আর কুঁড়ে ঘরটিকে ধ্বংস করে দিল। বৃদ্ধা ফিরে এসে যখন এই হৃদয়বিদারক কীর্তি দেখল তখন সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, “হে আমার প্রভু! আমি তো অনুপস্থিত ছিলাম। কিন্তু তুমি কোথায় ছিলে?” তখন সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ তার পক্ষ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণের প্রস্তাব কবুল করলেন। খসরুর ছেলে একটি ছুড়ি দিয়ে তার পিতাকে হত্যা করে ফেলল। (ইমাম ইবনুল

জাওজী (রহঃ) তাঁর আততাবসিরাহ (التبصرة) নামক কিতাবে এরূপ একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন যে, বৃদ্ধার অভিশাপের পর আল্লাহ রাজপ্রাসাদকে চুরমার করে দিয়েছিলেন। -অনুবাদক)

“আল্লাহ কি তার বান্দার জন্য যথেষ্ট নন? (অবশ্যই যথেষ্ট) অথচ তারা তোমাকে আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদের ভয় দেখায়। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য কোন পথ প্রদর্শক নেই।” (৩৯-সূরা আয যুমারঃ আয়াত-৩৬)

কতইনা ভালো হতো! আমরা যদি আদম (আঃ)-এর দু’পুত্রের সে একজনের মতো হতাম যে তার ভাইকে বলেছিল- “তোমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হাত বাড়াবো না। নিশ্চয় আমি সমগ্র বিশ্ব জগতের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি।” (৫-সূরা মায়িদাঃ আয়াত-২৮)

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

كُن عبدَ اللهِ المقتولَ ولا تكن عبدَ اللهِ القاتلَ
অর্থাৎ, “আল্লাহর নিহত বান্দা হইও কিন্তু আল্লাহর হত্যাকারী বান্দা হইও না।”

মুসলমানের একটি ব্রত ও একটি (স্বর্গীয়) বাণী আছে যা প্রতিশোধ, হিংসা-বিদ্বেষ ও ঘৃণার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।


একটি খুঁত আরেকটি চমৎকার গুণের কারণ হতে পারে

لَا تَحْسَبُوهُ شَرًّا لَّكُم بَلْ هُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ

“এটাকে তোমাদের জন্য ক্ষতিকর মনে করিও না, বরং এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর।” (২৪-সূরা আন নূরঃ আয়াত-১১)

এমন অনেক লোক আছেন যাদেরকে তাদের মাহাত্ম্যের কারণে বর্তমানে স্মরণ করা হয়। এসব মনীষীদেরকে তাদের চলার পথে বহু বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে। তাদের অধ্যবসায় বা ধৈর্য ছিল নাছোর বান্দার মতো। তাদের কোনও এক বিষয়ে দুর্বলতা ছিল যা অন্য গুণ দ্বারা পূরণ হওয়ার দরকার ছিল (এবং তা হয়েছিলও বটে)। আতা, সাঈদ ইবনে যুবাইর, কাতাদা, বুখারী, তিরমিয়ী ও আবু হানীফা (রহঃ) এদের মতো ইসলামের অনেক বড় বড় আলেমগণ প্রকৃতপক্ষে আযাদকৃত গোলাম ছিলেন।

অনেক ইসলামী পণ্ডিত যাদের জ্ঞানের বিশালতা মহাসাগরসমূহের মতো ছিল তারা অন্ধ ছিলেন। তাদের মধ্যে থেকে মাত্র কয়েকজনের নাম উল্লেখ করছি। যেমন- ইবনে আব্বাস (রাঃ), কাতাদা, ইবনে উম্মে মাকতুম (রাঃ), আল আ’মাশ ও ইয়াজীদ ইবনে হারূন।

আধুনিক আলেমদের মধ্যে শাইখ মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহীম আলে শাইখ, শাইখ আব্দুল্লাহ ইবনে হুমাইদ এবং শাইখ আব্দুল্লাহ ইবনে বায এরা সবাই অন্ধ। অনেক বড় বড় আলেমগণ কোন না কোনভাবে প্রতিবন্ধী ছিলেন, কেউ কেউ ছিলেন অন্ধ, কেউ কেউ ছিলেন বধির, আবার অনেকে ছিলেন অঙ্গহীন। এসব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তারা পরবর্তী প্রজন্মকে প্রভাবিত করেছিলেন এবং তারা মানব জাতির জন্য অবদান রাখতে পেরেছিলেন।

“তিনি তোমাদেরকে আলো দান করবেন যার সাহায্যে তোমরা (সোজা পথে) হাটবে।” (৫৭-সূরা আল হাদীদঃ আয়াত-২৮)

একটি নামকরা বা বিখ্যাত ইউনিভার্সিটির ডিপ্লোমা ডিগ্রিই সব কিছুই নয়। কোন ইউনিভার্সিটি থেকে ডিগ্রি অর্জন করতে পারেননি বলে হতাশ হবেন না। এমনকি কোনরূপ ডিগ্রি অর্জন না করেই আপনি প্রতিষ্ঠিত হতে পারবেন এবং মানব জাতির জন্য বিশাল অবদান রাখতে পারবেন। অনেক বিখ্যাত ও প্রসিদ্ধ লোক আছেন যাদের কোন ডিগ্রি নেই। তারা তাদের জীবন চলার পথ করে নিয়েছেন এবং লৌহ দৃঢ় মনোবল ও শক্ত প্রতিজ্ঞার মাধ্যমে তারা দুর্লঙ্ঘনীয় বাধা-বিপত্তি লঙ্ঘন বা অতিক্রম করেছেন।

বর্তমান কালের আলেমদের কথা বলতে গেলে বলতে হয় যে, ডিগ্রি ছাড়া অনেক অনেক বিশিষ্ট ও বিখ্যাত ব্যক্তি রয়েছেন। শাইখ ইবনে বায, মালিক ইবনে নাবি, আল আক্কাদ, আত তানত্বাভী, আবি যাহরাহ, আবুল আ'লা মওদূদী, আন্নাদাভী এদের সবারই প্রসঙ্গ উদাহরণস্বরূপ মনে পড়ে; এরা ছাড়াও আরো অনেকে এমন রয়েছেন।

অপর পক্ষে ইসলামী বিশ্বে হাজার হাজার PHD ডিগ্রিধারী পণ্ডিত রয়েছেন যারা অজ্ঞাতই রয়েছেন এবং সমাজে যাদের কোন প্রভাব ও নেই।

“(হে মুহাম্মদ!) আপনি কি তাদের কাউকে খুঁজে পান বা তাদের ফিসফিসানি শুনতে পান?” (১৯-সূরা মারইয়ামঃ আয়াত-৯৮)

যে ব্যক্তি যে কোন পরিস্থিতিতে সন্তুষ্ট থাকে আপনি যদি তার মতো হয়ে থাকেন তবে আপনার এক বিশাল ধন-ভাণ্ডার আছে।

একটি সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

وَارْضَ بِما قَسَمَ الله لَكَ تَكُنْ أَغْنَى النّاسِ

“আল্লাহ তোমার ভাগে যা বণ্টন করে দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট থাক, তাহলেই তুমি সবচেয়ে ধনী মানুষ হবে।”

আপনার পরিবার, আয়-রোজগার ও কাজের প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন। আপনি যদি এসবের প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন তবে আপনি সুখ-শান্তি পাবেন। অন্য একটি সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

الْغِنَى غِنَى النَّفْسِ

“আত্মার ধনাঢ্যতাই (প্রকৃত) ধনাঢ্যতা”

“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে আল্লাহ্‌! তার অন্তরে তার সম্পদ বা ধনাঢ্যতা সৃষ্টি করে দিন।”

এক লোক বলেছেন যে, একবার তিনি এয়ারপোর্টে এক টেক্সীতে উঠে ড্রাইভারকে বললেন যে তাকে শহরে নিয়ে যেতে। তিনি বলেন- “আমি লক্ষ্য করলাম যে, ড্রাইভারটি সুখী ও খোশ মেজাজী ছিল। সে সর্বদা আল্লাহর প্রশংসা করছিল, তার শোকরিয়া আদায় করছিল ও তার জিকির করছিল। আমি তাকে তার পরিবার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন যে, তাকে দু পরিবারের খোরাক যোগাতে হয়। অথচ তার মাসিক বেতন হলো ৮০০ (আটশত) রিয়ালের মতো যা এক নগণ্য অঙ্ক । তিনি ও তার পরিবারকে একটি ভাঙা দালানে বাস করতে হয়। তবুও তার মনে শান্তি ছিল। কেননা, আল্লাহ তার জন্য যা বরাদ্দ করেছেন তার জন্য তিনি কৃতজ্ঞ।”

আমি এক ধনকুবেরকে চিনতাম যার শত শত মিলিয়ন রিয়াল ছিল ও অনেকগুলো প্রাসাদ ছিল । তিনি তার আত্মীয়তার সম্পর্কে শোচনীয় ছিলেন। সর্বদা রাগে টগবগ করতেন ও হতাশায় বুদ হয়ে থাকতেন। তিনি তার পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে (দূরে কোথাও) মারা যান। আল্লাহ তাকে যা দিয়েছিলেন তাতে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না বিধায় তিনি এসব দুর্ভোগ পোহাতে ছিলেন।

“অতপর সে আশা করে যে আমি তাকে আরো দিই। কক্ষনো নয়; নিশ্চয়ই সে আয়াতসমূহের উদ্ধত বিরুদ্ধাচারী বা বিরোধিতাকারী।” (৭৪-সূরা আল মুদদাছছিরঃ আয়াত-১৫, ১৬)

শত শত বছর আগে আরবের মানুষ মরুভূমিতে নিরালায় শান্তি খুঁজে পেত। শান্তি খুঁজে পেত মরু ভূমিতে ও মানবীয় কাজ কারবার থেকে বহুদূরে। একজন (আরব) কবি বলেছেন-

عَوى الذِئبُ فَاِستَأنَستُ بِالذِئبِ إِذا عَوى

وَصَوَّتَ إِنسانٌ فَكِدتُ أَطيرُ

“নেকড়ে বাঘ ডাকে আর আমার সে ডাক ভালো লাগে, কিন্তু মানুষ আওয়ায করে, সে আওয়ায শুনে (ঘৃণায়) আমি পালাবার উপক্রম করি।”

তৎকালীন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস সুফিয়ান সাওরী (রহঃ) বলেছেন- “আমার মনে চায় কোন এক অজ্ঞাত উপত্যকায় থাকি যেন কেউ আমাকে চিনতে না পারে।”

একটি হাদীসে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “অচিরেই মুসলমানের উত্তম সম্পদ হবে ছাগল-ভেড়া যা নিয়ে সে ফেতনার ভয়ে তার দ্বীন (ধর্ম) রক্ষাকল্পে বৃষ্টি বহুল এলাকায় ও পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় পালিয়ে বেড়াবে”। মুসলমানদের নিজেদের মাঝে ফেতনা ফাসাদের সময় একজন মুসলমানের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ প্রস্তাব (কাজ) হলো তাদের থেকে দূরে থাকা। যখন উমর (রাঃ)-কে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছিল তখন ইবনে উমর (রাঃ), উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) ও মুহাম্মদ ইবনে মুসলিমাহ আসন্ন ফিতনা থেকে দূরে ছিলেন।

আমি এমন কিছু লোককে চিনি যারা অভাব, দুর্দশা ও হতাশাগ্রস্ত। তাদের প্রত্যেকের পতনের কারণ হলো তারা আল্লাহ থেকে অনেক দূরে। আপনি দেখবেন যে, তাদের একজন ধনী, সুখী ও সুস্থ। কিন্তু পরে সে তার প্রভুর আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। সে সালাত আদায় করতে অবহেলা করতে শুরু করল ও পরে সে বড় বড় পাপ কাজ করতে লাগল। অতএব সর্বশক্তিমান আল্লাহ তার স্বাস্থ্য ও সম্পদ ছিনিয়ে নিলেন এবং তার বদলে দিলেন সংকট, অভাব, দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনা। সে দুর্দশা থেকে দুর্দশায় পড়ল ও নিম্নপর্যায় থেকে আরো নিম্নপর্যায়ে চলে গেল।

“আর যে ব্যক্তিই আমার জিকির থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তার জন্য রয়েছে সংকটময় জীবন।” (২০-সূরা ত্বাহাঃ আয়াত-১২৪)

“তা এ কারণে যে, আল্লাহ কোন জাতিকে যে নেয়ামত দান করেছেন তা ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি পরিবর্তন করবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করে। (৮-সূরা আনফালঃ আয়াত-৫৩)

وَمَا أَصَابَكُم مِّن مُّصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَن كَثِيرٍ

“এবং তোমাদের উপর যে সব বিপদ আসে তা তোমাদের নিজ হাতে কৃতকর্মের ফলেই আসে এবং তিনি অনেক কিছুই ক্ষমা করে দেন।” (৪২-সূরা আশ শুরাঃ আয়াত-৩০)

“আর তারা যদি সত্য পথে প্রতিষ্ঠিত থাকতো তবে আমি প্রচুর বৃষ্টি দান করে তাদের সমৃদ্ধ করতাম।” (৭২-সূরা আল জ্বীনঃ আয়াত-১৬)

আমার যদি যাদু করার ক্ষমতা থাকতো তবে আমি আপনার সমস্যা ও দুঃখ দূর করে দিতাম। যা হোক আমার সে ক্ষমতা না থাকার কারণে আপনার জন্য এমন একটি চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রেশক্রিপশন দেয়াই আমার জন্য যথেষ্ট হবে যে প্রেসক্রিপশান মুসলিম আলেমগণ দিয়েছেন। তা হলো কোন শরীক সাব্যস্ত না করে আল্লাহর ইবাদত করা, আপনার রিযিকের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা, সংযমী থাকা ও এ দুনিয়ার জন্য আপনার আশা আকাঙ্ক্ষাকে কমানো।

বিখ্যাত আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী উইলিয়াম জেমসের নিম্নোক্ত কথাগুলো আমার মনোযোগ আকর্ষণ করে-

“আমরা মানব জাতি আমাদের যা নেই তার চিন্তায় বিভোর হয়ে থাকি এবং আমাদের যা আছে তার জন্য আমরা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই না। আমরা সর্বদা আমাদের জীবনের দুঃখজনক দিক নিয়ে ভাবি কিন্তু আমরা আমাদের জীবনের আলোকিত দিকটির দিকে তাকিয়ে দেখি না। আমাদের জীবনে আমরা যা হারিয়েছি তার জন্য আমরা অনুতাপ করি কিন্তু আমাদের জীবনে যা আছে তা নিয়ে আমরা সুখী নই।”

“তোমরা যদি (আমার) শুকরিয়া আদায় কর তবে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে আরো অধিক (নিয়ামত) দান করব।” (১৪-সূরা ইবরাহীমঃ আয়াত-৭)

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করেছেন-

أَعُوذُ بِكَ مِنْ نَفْسٍ لاَ تَشْبَعُ

“এবং আমি আল্লাহর নিকট এমন আত্মা থেকে পানাহ চাই যা তৃপ্ত হয় না।”

যখন কারো প্রধান চিন্তা হয় পরকাল তখন আল্লাহ তার সব কিছু ভালো করে দেন এবং তার অন্তরে ধনাঢ্যতা দান করেন এবং দুনিয়া অপদস্থ হয়ে তার নিকট আগমন করে। আর যার প্রধান চিন্তা হয় দুনিয়া আল্লাহ তার কাজকর্মকে এলোমেলো করে দেন এবং তার চোখের সামনে অভাবকে প্রকট করে দেন। আর তার ভাগ্যে যা লিখিত আছে তা ছাড়া দুনিয়া থেকে অতিরিক্ত কিছু তার নিকট আসবে না।

আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, “কে আসমানসমূহ ও পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছে এবং সূর্য ও চন্দ্রকে বশীভূত করেছে? তারা অবশ্যই উত্তর দিবে, ‘আল্লাহ’ তবে তারা কোথায় ফিরে যাচ্ছে?” (২৯-সূরা আল আনকাবূতঃ আয়াত-৬১)


“আল্লাহর উপর ভরসা” শিরোনামের আকর্ষনীয় এই টপিকসের সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-
১ম পর্ব    ২য় পর্ব    ৩য় পর্ব    ৪র্থ পর্ব    ৫ম পর্ব    ৬ষ্ট পর্ব    ৭ম পর্ব    ৮ম পর্ব    ৯ম পর্ব    ১০ম পর্ব    ১১-তম পর্ব    ১২-তম পর্ব    ১৩-তম পর্ব    ১৪-তম পর্ব    ১৫-তম পর্ব    ১৬-তম পর্ব    ১৭-তম পর্ব    ১৮-তম পর্ব    ১৯-তম পর্ব    ২০-তম পর্ব    ২১-তম পর্ব    ২২-তম পর্ব    ২৩-তম পর্ব    ২৪-তম পর্ব    ২৫-তম পর্ব    ২৬-তম পর্ব    ২৭-তম পর্ব    ২৮-তম পর্ব    ২৯-তম পর্ব    ৩০-তম পর্ব    ৩১-তম পর্ব    ৩২-তম পর্ব    ৩৩-তম পর্ব    ৩৪-তম পর্ব    ৩৫-তম পর্ব    ৩৬-তম পর্ব    ৩৭-তম পর্ব    ৩৮-তম পর্ব 



****************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url