আল্লাহর উপর ভরসা (পর্ব-০৫) || সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করুন || মহান আল্লাহ কতইনা উত্তম কর্মবিধায়ক || সালাতে মনোনিবেশ করুন ||






সালাতে মনোনিবেশ করুন দেখবেন মহান আল্লাহ কতইনা উত্তম কর্মবিধায়ক


এই পর্বের পাঠ্য বিষয়সমূহঃ

সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করুন

জীবনের আনন্দ খুবই ক্ষণস্থায়ী এবং প্রায়ই তার পরে দুঃখ নেমে আসে। জীবনের অর্থই হলো দায়িত্ব, সতত পরিবর্তনশীল যাত্রা ও দুঃখ-কষ্টের অবিরাম নির্মম প্রচণ্ড আক্রমণ ।

আপনি এমন একজন পিতা, স্ত্রী বা বন্ধু পাবেন না যিনি সমস্যামুক্ত। আল্লাহ তা'আলা চেয়েছেন যে, এ পৃথিবীর দুটি করে বিপরীত জিনিস দিয়ে ভরপুর থাক। যেমন- ভালো-মন্দ, পাপ-পুণ্য, সুখ-দুঃখ। অতঃপর ভালোত্ব, সততা-সরলতা ও সুখ স্বর্গের (জান্নাতের) জন্য; মন্দকাজ, দুর্নীতি ও পাপকাজ এবং দুঃখ-দুর্দশা নরকের (জাহান্নামের) জন্য।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

الدُّنْيَا مَلْعُونَةٌ مَلْعُونٌ مَا فِيهَا إِلَّا ذِكْرُ اللَّهِ وَمَا وَالَاهُ وَعَالِماً و مُتَعَلِّماً

“আল্লাহর জিকির ও জিকিরের ফলে যা আসে (যেমন ভালো কাজ, আল্লাহ যা ভালোবাসেন) তা এবং আলেম ও তালেবে এলম ছাড়া গোটা দুনিয়া ও দুনিয়াতে যা কিছু আছে সবই অভিশপ্ত।"

এক নিখুঁত, আদর্শ, দুশ্চিন্তা ও কষ্টহীন কল্পিত ইহজীবনের (কল্পিত ইহকালীন স্বৰ্গরাজ্যের) আশায় বৃথা ও কষ্ট কল্পনায় সর্বদা বিভোর না থেকে আপনার যা আছে তাই নিয়েই জীবন-যাপন করুন। জীবনকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করুন এবং তদানুপাতে সকল পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে (মানিয়ে) নিন। (সকল পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার অর্থ সকল মতাদর্শ মেনে নেয়া ও তদানুসারে কাজ করা নয়; বরং, নিজে শান্তির ধর্ম মেনে চলা ও অন্যকে তদানুসারে চলতে বলা, যদি তারা না মানে তবে অহেতুক মর্মযাতনাবোধ না করা। -অনুবাদক) নিন। এ দুনিয়াতে আপনি নিষ্কলঙ্ক সঙ্গী ও নিখুঁত পরিস্থিতি বলে কোন জিনিস পাবেন না; কেননা, নিষ্কলঙ্কতা ও নিখুঁত অবস্থা এমন দুটি গুণের নাম যা এ জীবনে পরদেশী।

নিজেদেরকে সংশোধন করা, সহজটাকে গ্রহণ করা, কঠিনটাকে বর্জন করা এবং প্রায়ই অন্যের ভুল-ভ্রান্তিকে উপেক্ষা করা আমাদের জন্য জরুরি।

দুর্দশাগ্রস্তদের কথা ভেবে সান্ত্বনা লাভ করুন
আপনার ডানে-বামে-চারপাশে তাকান। আপনি কি দুর্দশাগ্রস্ত ও হতভাগাদের দেখতে পান না? প্রতিটি ঘরেই শোক আছে, বিরহ আছে, কষ্ট আছে। প্রতিটি গাল বেয়েই চোখের পানি ঝরছে। কতই না মুসিবত আর কতই না ধৈর্যশীল লোকজন। আপনি একাই শুধু সমস্যাগ্রস্ত নন। অন্যের সাথে তুলনা করে দেখলে আপনার সমস্যা নেহায়েত কম বলেই মনে হবে।

কত রুগ্ন ব্যক্তিই তো রোগ শয্যায় শুয়ে অবর্ণনীয় যন্ত্রণা ভোগ করছে। কত লোক বন্দি হওয়ার কারণে বছরের পর বছর সূর্যের আলোর মুখ দেখেনি, তারা জেলখানার চৌহদি ছাড়া আর কোন কিছুই চেনে না! কত নারী-পুরুষ তাদের সন্তানদেরকে ভরা যৌবনে বা অকালে হারিয়েছে! কত লোকই না সমস্যাগ্ৰস্ত, অভাবগ্রস্ত ও নিপীড়িত!

যারা আপনার চেয়ে শোচনীয় অবস্থায় আছে, তাদের কথা মনে করে সান্ত্বনা লাভ করুন। জেনে রাখুন যে, এ দুনিয়া ঈমানদারদের জন্য জেলখানার মতোই একটি দুঃখ ও বিষন্নতার ঘর। সকালবেলা প্রাসাদগুলো মানুষে ভরা থাকে, আর মুহুর্তেই দুর্বিপাকে পড়ে সেগুলো বিরান হয়ে যায়! কখনো জীবন কয়েকদিনের বা ক্ষণিকের মধ্যেই দারিদ্র্য, মৃত্যু, বিচ্ছেদ ও অসুস্থতাও ঘটতে পারে।

“আর তোমরা তাদের আবাসস্থলেই বসবাস করতে, যারা নিজের উপর অত্যাচার করেছিল এবং আমি তাদের সাথে কী আচরণ করেছিলাম তা তোমাদের নিকট সুস্পষ্ট ছিল। আর আমি তোমাদের জন্য অনেক দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছি।” (১৪-সূরা ইবরাহীম: আয়াত-৪৫)

অভিজ্ঞ উট যেমন একটি মাত্র পাথরের উপর হাটু গেড়ে বসতে পারে। প্রয়োজন হলে আপনাকেও এর মতো প্রতিকূল পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে।

(বাইন মাছ যেমন কাদার মধ্যে থাকে, কিন্তু তার গায়ে কাদা জড়িয়ে যায় না, আপনিও তেমনি মন্দ পরিবেশে থেকেও মন্দে জড়াবেন না। সেই সাথে অন্যেরা ভালো হয় না বিধায় দুঃখবোধ করে নিজেকেও ধ্বংস করে দিবেন না। এ প্রসঙ্গে দেখুন- (২৬-সূরা আশ শোয়ারা: আয়াত-৩) -অনুবাদক।)

আপনাকে অবশ্যই আপনার সমস্যাবলিকে আপনার চারপাশের লোকদের সমস্যাবলির সাথে ও আপনার পূর্ববতী লোকদের সাথে তুলনা করেও দেখতে হবে। আপনার বুঝা উচিত যে, তাদের তুলনায় আপনি অনেক ভালো অবস্থাতেই আছেন এবং এটাও বুঝা উচিত যে, আপনি শুধু ছোটখাট কিছু সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। সুতরাং আল্লাহ তায়ালার দয়ার জন্য তার প্রশংসা করুন। আপনার জন্য তিনি যা রেখে দিয়েছেন, তার জন্য তাকে ধন্যবাদ দিন, তার প্রতি কৃতজ্ঞ হোন, তাঁর শুকরিয়া আদায় করুন। তিনি যা ছিনিয়ে নিয়েছেন তার জন্যে তার নিকট পুরস্কার চান এবং দুর্দশাগ্রস্তদের কথা ভেবে সান্ত্বনা খোজ করুন।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাঝে আপনার জন্য ধৈর্যের পরম উপমা রয়েছে। উটের নাড়িভুড়ি তার মাথায় চাপানো হয়েছিল; তার পা থেকে রক্ত ঝরেছিল; তায়েফবাসী তাকে পাথর নিক্ষেপ করে রক্তাক্ত করেছিল; তার চেহারা ফেটে গিয়েছিল; তাকে গিরিপথে বন্দী করা হয়েছিল, সেখানে তিনি গাছের পাতা খেতেও বাধ্য হয়েছিলেন; মক্কা থেকে তাকে বিতাড়িত করা হয়েছিল; যুদ্ধে তার সামনের দাত ভেঙে গিয়েছিল; তার নিষ্পাপ স্ত্রীকে অপবাদ দেয়া হয়েছিল; তাঁর সত্তর জন সাহাবীকে হত্যা করা হয়েছিল; তিনি তাঁর ছেলের ও অধিকাংশ মেয়েদের মৃত্যুর শোক পেয়েছিলেন; ক্ষুধার জ্বালা নিবারণ করার জন্য তিনি তার পেটে পাথর বেঁধে ছিলেন এবং তাকে কবি, জাদুকর, গণক, পাগল হওয়ার অপবাদও দেয়া হয়েছিল। আর এসবকিছু একই সময়ে ঘটেছিল। এতসব ঘটনার পরও তিনি অটল ধৈর্যধারণ করেছিলেন। এতসব সাংঘাতিক অগ্নিপরীক্ষা ও দুঃখ-কষ্টের মাঝেও মহান আল্লাহ তাকে রক্ষা করেছিলেন।

নবী যাকারিয়া (আঃ)-কে হত্যা করা হয়েছিল, নবী মূসা (আঃ)-কে ভীষণ জ্বালাতন করা হয়েছিল; নবী ইব্রাহীম (আঃ)-কে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল এবং সকল হক্ব ইমামগণও একইভাবে অত্যাচারিত হয়েছিলেন। উমর (রাঃ), উসমান (রাঃ) ও আলী (রাঃ) গুপ্তঘাতক কর্তৃক নিহত হয়েছিলেন। অতীতের অনেক আলেমকে বন্দি ও অত্যাচার করা হয়েছিল।

أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ مَسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا

“নাকি তোমরা একথা ভেবে বসে আছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে অথচ এখনও তোমাদের পূর্ববতীদের মতো তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হয়নি? তারা অভাবগ্রস্ত, রোগগ্রস্ত ও শিহরিত হয়েছিলেন।” (২-সূরা বাকারা: আয়াত-২১৪)

সালাতে মনোনিবেশ করুন


يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর।” (২-সূরা বাকারা: আয়াত-১৫৩)

আপনি যদি আতঙ্কগ্রস্ত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন, তবে এক্ষুণি সালাতে দাঁড়িয়ে যান। দেখবেন, আপনি শান্তি ও সান্ত্বনা পাচ্ছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি একনিষ্ঠভাবে ও জাগ্রত হৃদয়ে সালাত আদায় করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত সালাত আপনার উপর এই প্রভাব ফেলবে।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোন কষ্টে পতিত হয়েছিলেন, তখনই তিনি বলতেনঃ “হে বিলাল! সালাতের আজান দিয়ে আমাদেরকে শান্তি দাও।” সালাত তার আনন্দ ও খুশির উপায় ছিল। সালাত তার চোখের মণি ছিল।

আমি অনেক ধাৰ্মিক লোকের জীবনী পড়ে দেখেছি, তারা দুঃখ-কষ্টে পড়লেই সর্বদা সালাতে মনোযোগ দিতেন এবং যতক্ষণ তাদের মনোবল, ইচ্ছাশক্তি ও দৃঢ়প্রত্যয় ফিরে না আসত, ততক্ষণ তারা সালাত পড়তে থাকতেন।

সালাতুল খাওফ (ভয়কালীন সালাত, যা যুদ্ধের সময় পড়া হতো) অনুমোদন করা হয় যখন অঙ্গচ্ছেদ হয়, মাথার খুলি উড়ে যায় এবং দেহ থেকে আত্মা চলে যায় তখন পড়ার জন্য। এ সময়ে একমাত্র একাগ্রচিত্তে সালাত আদায়ের মাধ্যমেই মনোবল ও দৃঢ় প্রত্যয় ফিরে পাওয়া যেত।

মানসিক রোগে আক্রান্ত এ জাতিকে অবশ্যই মসজিদে ফিরে গিয়ে সিজদা করতে এবং আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি কামনা করতে হবে। আমরা যদি এ কাজ না করি, তবে অশ্রু আমাদের চোখকে ভাসিয়ে রাখবে ও দুঃখ-বেদনা আমাদের স্নায়ুকে ধ্বংস করে দিবে।

প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত একনিষ্ঠভাবে আদায় করে আমরা মহাকল্যাণ অর্জন করতে পারি। আমাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে পারি এবং আমাদের প্রতিপালকের দরবারে আমাদের মর্তবা (মর্যাদা) বৃদ্ধি করতে পারি। সালাত আমাদের অসুস্থতার জন্য এক শক্তিশালী মহা ঔষধও বটে। কেননা, সালাত আমাদের অন্তরে ঈমান সঞ্চারিত করে। যারা মসজিদ ও সালাত থেকে দূরে থাকে, তাদের জন্য রয়েছে অসুখ (দুঃখ), দুর্ভাগ্য ও বিষাদময় জীবন। “তাদের জন্য ধ্বংস অনিবার্য এবং আল্লাহ তায়ালা তাদের আমলকে বাতিল করে দিবেন।” (৪৭-সূরা মুহাম্মদ বা কেতাল: আয়াত-৮)

মহান আল্লাহ কতইনা উত্তম কর্মবিধায়ক

حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ

“আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, আর তিনি কতইনা উত্তম কর্মবিধায়ক!” (৩-সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১৭৩)

আল্লাহর নিকট আপনার কাজকে সোপর্দ করে, তার উপর তাওাক্কুল করে, তার ওয়াদাকে বিশ্বাস করে, তার হুকুমের প্রতি সন্তুষ্টি হয়ে, তার প্রতি সুধারণা পোষণ করে এবং তার সাহায্যের জন্য ধৈর্যসহকারে অপেক্ষা করে আপনি ঈমানের কিছু মহাফল লাভ করতে পারবেন এবং ঈমানদারের অধিকতর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করতে পারবেন। যখন আপনি আপনার চরিত্রে এ গুণসমূহকে সংযুক্ত করে নিবেন, তখন আপনি আগামী দিনগুলোতে কোন দুশ্চিন্তা না করে বরং শান্তিতে জীবন-যাপন করতে পারবেন। ফলে আপনি নিজের প্রতি যত্ন, সাহায্য, রক্ষণাবেক্ষণ ও বিজয় লাভ করবেন।

ইব্রাহীম (আঃ)-কে যখন আগুনে ফেলা হয়েছিল, তখন তিনি বলেছিলেন, “আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, আর তিনি কতইনা উত্তম অভিভাবক।” ফলে আল্লাহ তায়ালা আগুনকে ইব্রাহীমের (আঃ)-এর জন্য শীতল, নিরাপদ ও শান্তিদায়ক বানিয়ে দিয়েছিলেন।

নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সঙ্গীদেরকে যখন আক্রমণের হুমকি দেয়া হয়েছিল, তখন তারা বলেছিলেন, “আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, আর তিনি কতই না উত্তম অভিভাবক।” (৩-সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১৭৩)

“ফলে তারা আল্লাহর নিয়ামত ও অনুগ্রহসহ ফিরে এসেছিলেন। কোন অনিষ্টই তাদেরকে স্পর্শ করেনি এবং তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুসরণ করেছিল। আর আল্লাহ তো মহা অনুগ্রহশীল।” (৩-সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১৭৪)

কোন লোকই দুর্ভাগ্যের স্রোতের বিরুদ্ধে একাকী লড়াই করতে পারে না, দুর্বিপাক যখন আঘাত হানে, তখন সে এর আঘাতকে একাকী প্রতিহতও করতে পারে না। কারণ, মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে। যাহোক, সঙ্কটের সময়ে ঈমানদার ব্যক্তি যখন তার প্রভুর উপর ভরসা (তাওাক্কুল) ও ঈমান (বিশ্বাস) রাখে তখন সে জানে যে, সব সঙ্কট নিরসন সম্ভব।

“আর যদি তোমরা সত্যিকার মু’মিন হয়ে থাকে, তবে আল্লাহর উপর ভরসা রাখ।” (৫-সূরা মায়িদা: আয়াত-২৫)

আপনারা যারা নিজেদের কল্যাণ করতে চান, তারা নিজেদের বিপর্যয় ও দুর্বিপাক থেকে রক্ষা করার জন্য সর্বশক্তিমান ও সর্বাপেক্ষা উত্তম অভিভাবক আল্লাহর উপর নির্ভর করুন এবং আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট। আর তিনি কতই না উত্তম অভিভাবক!-এ নীতিবাক্য অনুসারে জীবন যাপন করুন।

আপনি যদি ঋণগ্রস্ত থাকেন বা আপনি যদি কোন পার্থিব সঙ্কটে পতিত হন তবে ডাক দিয়ে বলুন, “আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনি কতই না উত্তম অভিভাবক!!

আপনি যদি শক্রর কবলে পড়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন বা অত্যাচারীর অত্যাচারে ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন তবে উচ্চস্বরে বলুন, “আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, আর তিনি কতই না উত্তম অভিভাবক!”

وَكَفَىٰ بِرَبِّكَ هَادِيًا وَنَصِيرًا

“আর তোমার প্রভুই পথ প্রদর্শক ও সাহায্যকারী হিসেবে যথেষ্ট।” (২৫-সূরা আল ফুরকান : আয়াত-৩১)

আবদ্ধ ঘর ছেড়ে পৃথিবীতে ভ্রমণ করুন

হে মুহাম্মদ! বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর।” (৬-সূরা আল আনআম: আয়াত-১১)

এখানে উল্লেখযোগ্য একটি কাজ আছে। কেননা এটা আপনাকে আনন্দ দান ও আপনার মাথার উপরের কালো মেঘ দূর করা; উভয় কাজই করে। এ কাজটি হল পৃথিবী ভ্রমণ করা ও সৃষ্টির উন্মুক্ত রহস্যাবলি অবলোকন করে দেখা এবং এর সকল বিস্ময়াবলীকে উপলব্ধি করা। আপনার ভ্রমণকালে আপনি চমৎকার ও সুন্দর সবুজ মাঠের বাগ-বাগিচা দেখতে পাবেন। আপনার ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ুন ও আপনার চারপাশে যা আছে তা নিয়ে একটু ভেবে দেখুন। পাহাড়-পর্বতে আরোহন করুন, মাঠের পর মাঠ পাড়ি দিন, এ গাছ থেকে ঐ গাছে চড়ুন এবং সুমিষ্ট, বিশুদ্ধ ঝর্ণার পানি পান করুন। তাহলেই আপনি আপনার আত্মাকে পরমানন্দে গান গেয়ে গেয়ে আকাশে উড়ন্ত চলা পাখির মতোই স্বাধীন পাবেন। আপনার গৃহ ত্যাগ করুন, আপনার চোখের কালো চশমা খুলে ফেলুন। আর তারপর আল্লাহর জিকির ও তসবীহ পাঠ করে করে (আল্লাহর স্মরণ ও পবিত্রতা বর্ণনা করে করে), তার প্রশস্ত জমিনে ভ্রমণ করুন। মারাত্মক ধ্বংসাত্মক অলসতায় সময় বৃথা নষ্ট করে নিজেকে আপন গৃহে বন্দি করে রেখে নিজেকে ধ্বংস করা ছাড়া আর কিছু নয়। আপনার ঘরটাই পৃথিবীতে একমাত্র স্থান নয় আর আপনিও এ পৃথিবীর একমাত্র বাসিন্দা নন। তবে কেন আপনি দুর্দশা ও নির্জনতার কাছে আত্মসমর্পণ করবেন?

انْفِرُوا خِفَافًا وَثِقَالًا

“(স্বাস্থ্যবান, যুবক ও সম্পদশালী হওয়ার কারণে) হাল্কা হলেও এবং (অসুস্থ, বৃদ্ধ ও দরিদ্র হওয়ার কারণে) ভারী হলেও তোমরা বেরিয়ে পড়।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-৪১)

আসুন, একটি পাহাড়ী ঝর্ণার পাশে বসে বা পাখিরা যখন গান করে তখন তাদের আসরের পাশে বসে কুরআন তিলাওয়াত করুন।

বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করা এমন এক কাজ যা চিকিৎসকগণ বিশেষ করে সেসব রোগীদের জন্য প্রেসক্রিপশন করেন-যারা নিজেদের ঘরের সংকীর্ণতার কারণে নিজেদেরকে সংকুচিত মনে করে।

“যারা আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সৃষ্টি নিয়ে গভীর চিন্তা-গবেষণা করে, (আর বলে) হে আমাদের প্রতিপালক আপনি এ বিশ্বজগতকে বৃথা সৃষ্টি করেননি। আমরা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি।" (৩-সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১৯১)

ধৈর্যের কঠিন পথকে অবলম্বন করুন

দুঃখ-কষ্ট-অভাব-অনটনের সময় দৃঢ় মনোবল নিয়ে স্বাভাবিক থাকতে পারেন এমন লোকের সংখ্যা নিতান্তই কম।

একথা আমাদেরকে অবশ্যই বিবেচনা করে দেখতে হবে যে, যদি আমি বা আপনি ধৈর্য না ধরি তবে আমাদের অন্য কী করার আছে? একথা স্পষ্ট যে, আমাদের ধৈর্য ধরা ছাড়া অন্য কিছুই করার নেই। আপনার কাছে কি অন্য কোন সমাধান আছে? ধৈর্যের চেয়েও ভালো কোন পথের কথা কি আপনার জানা আছে? দুঃখ-কষ্ট ও সমস্যার এক মহাসাগর পাড়ি দিতে হয়। জেনে রাখুন, এক সঙ্কট থেকে মুক্তি পাওয়া মাত্রই আপনাকে আরেক সঙ্কটের মোকাবেলা করতে হবে। এই সার্বক্ষণিক সংঘর্ষের মধ্যে আপনাকে অবশ্যই ধৈর্য ও আল্লাহতে দৃঢ় বিশ্বাস রেখে এগুতে হবে।

এটাই মহামানবদের পথ; দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে তারা সঙ্কটের মুকাবিলা করে সকল দুঃখ-কষ্ট ও সঙ্কটকে তারা ধরাশায়ী করে সফলতাকে অর্জন করেছেন।

অতএব, ধৈর্যশীল হোন ও জেনে রাখুন, আপনার ধৈর্য যেন একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই হয়। তার মতো ধৈর্য ধরুন, যে আসন্ন শান্তির বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী, যে জানে যে, এক শুভ পরিণতি আসবে। যে তার প্রভুর নিকট পুরস্কার চায়- এ আশায় যে, সমস্যা কবলিত হয়ে তার পাপের প্রায়শ্চিত হবে।

ধৈর্য ধরুন, সমস্যা যাই হোক না কেন আর সামনের পথ যতই অন্ধকার মনে হোক না কেন তাতে কিছু আসে যায় না। কেননা, ধৈর্যের সাথে অবশ্যই বিজয় আসবে আর দুঃখ-কষ্ট ও ক্লান্তির পরেই নেমে আসবে অনাবিল শান্তি।

অতীতের কতিপয় সফল ব্যক্তির জীবনী পাঠ করে আমি তাদের প্রদর্শিত ধৈর্যের সীমা দেখে, পর্বতসম বিশাল সমস্যার বোঝা বহন করার ক্ষমতা দেখে হতভম্ব হয়ে গেছি, এ বিশাল পর্বতসম সমস্যার বোঝা বহন করে তারা শুধু অধিকতর শক্তিশালী মানব হিসেবেই পুনঃ প্রকাশিত হয়েছেন। কনকনে ঠাণ্ডা বৃষ্টির দংশনের মতোই সংকট তাদের মাথার উপরে পতিত হয়েছে তবুও তারা পাহাড়ের মতোই দৃঢ় ছিলেন। তারপর অল্প সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেই তারা তাদের ধৈর্যের কারণে সফলতার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।


“আল্লাহর উপর ভরসা” শিরোনামের আকর্ষনীয় এই টপিকসের সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-
১ম পর্ব    ২য় পর্ব    ৩য় পর্ব    ৪র্থ পর্ব    ৫ম পর্ব    ৬ষ্ট পর্ব    ৭ম পর্ব    ৮ম পর্ব    ৯ম পর্ব    ১০ম পর্ব    ১১-তম পর্ব    ১২-তম পর্ব    ১৩-তম পর্ব    ১৪-তম পর্ব    ১৫-তম পর্ব    ১৬-তম পর্ব    ১৭-তম পর্ব    ১৮-তম পর্ব    ১৯-তম পর্ব    ২০-তম পর্ব    ২১-তম পর্ব    ২২-তম পর্ব    ২৩-তম পর্ব    ২৪-তম পর্ব    ২৫-তম পর্ব    ২৬-তম পর্ব    ২৭-তম পর্ব    ২৮-তম পর্ব    ২৯-তম পর্ব    ৩০-তম পর্ব    ৩১-তম পর্ব    ৩২-তম পর্ব    ৩৩-তম পর্ব    ৩৪-তম পর্ব    ৩৫-তম পর্ব    ৩৬-তম পর্ব    ৩৭-তম পর্ব    ৩৮-তম পর্ব 




****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url