আল্লাহর উপর ভরসা || (পর্ব-৩৬) || চারটি কাজ হতে দূরে থাকুন || একমাত্র আল্লাহর মুখাপেক্ষী হোন ||





আল্লাহর উপর ভরসা করুন স্বর্গীয় সুখ আপনার কাছে ধরা দিবেই



চারটি কাজ হতে দূরে থাকুন

নিম্নোক্ত চারটি কাজ মনে দুঃখ-কষ্ট আনে; সুতরাং সেই চারটি কাজ হতে থাকুন বা চারটি কাজ এড়িয়ে চলুন-

১. আল্লাহ যা বিধান দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন না এবং তাতে রাগ করবেন না।

২. তওবাহীন পাপ (যে পাপ করে পরে তওবা করা হয় না)।

“আপনি (তাদেরকে) বলে দিন। এ মুসিবত (তোমাদের পাপের কারণে) তোমাদের নিজেদের নিকট থেকেই এসেছে।” (৩-সূরা ইমরানঃ আয়াত-১৬৫)

“এটা তোমাদের নিজ হাতে কৃত পাপের কারণেই।” (৪২-সূরা আশ শূরাঃ আয়াত-৩০)

৩. আল্লাহ মানুষকে অনুগ্রহ দান করার কারণে তাদেরকে ঘৃণা করা।

“আল্লাহ নিজ জুনগ্রহ থেকে তাদেরকে যা দান করেছেন তা নিয়ে কি তারা মানুষদেরকে হিংসা করে?” (৪-সূরা আন নিসাঃ আয়াত- ৫৪)

৪. আল্লাহর জিকির থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া।

فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا

“নিশ্চয় তার জন্য রয়েছে এক সংকটময় জীবন।” (২০-সূরা ত্বাহাঃ আয়াত-১২৪)

একমাত্র আল্লাহর মুখাপেক্ষী হোন

যদি শান্তি পেতে চান তবে আপনার আল্লাহর মুখাপেক্ষী হোন। আল্লাহর বান্দা কেবলমাত্র মহান আল্লাহর অভিমুখী হয়েই শান্তি পেতে পারে। তাই একমাত্র আল্লাহর মুখাপেক্ষী হোন।আল্লঅহ কুরআনের বহু আয়াতে শান্তির কথা বলেছেন-

فَأَنزَلَ اللَّهُ سَكِينَتَهُ عَلَىٰ رَسُولِهِ وَعَلَى الْمُؤْمِنِينَ

“অতঃপর আল্লাহ তার রাসূলের উপর ও মু’মিনগণের উপর তার প্রশান্তি অবতীর্ণ করলেন।" (৪৮-সূরা আল ফাতহঃ আয়াত-২৬)

“অতঃপর তিনি তাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ করলেন। (৪৮-সূরা আল ফাতহঃ আয়াত-১৮)

প্রশান্তি বলতে বুঝায় প্রশান্ত চিত্ত ও আল্লাহর প্রতি ঈমান ও তাওাক্কুল। প্রশান্তি হলো সন্দেহমুক্ত ঈমানদারদের ভোগকৃত শান্ত বা সৌম্য অবস্থা। (অর্থাৎ প্রশান্তি হলো এক শান্ত-সৌম্য অবস্থা যা সংশয়হীন মু’মিনরা ভোগ করে।) আল্লাহর সাথে নিকট সম্বন্ধ বা আল্লাহর নৈকট্য ও রাসূলের তরীকা একনিষ্ঠভাবে পালন করা অনুসারেই এ প্রশান্তি ও শান্তি অর্জিত হয়ে থাকে বা অর্জন করা যায়।

“যারা শাশ্বত বাণীতে ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়ার জীবনে ও আখেরাতে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন।” (১৪-সূরা ইবরাহীমঃ আয়াত-২৭)

সান্ত্বনার দু’টি মহান বাণী

ইমাম আহমদ (রহঃ)-কে যখন কঠিন সময়ে শাস্তি দেয়া হচ্ছিল ও অত্যাচার করা হচ্ছিল তখন তাকে দুটি কথা বলা হয়েছিল যা তিনি বর্ণনা করেছেন।

মদ পান করার কারণে এক লোককে জেলখানায় বন্দী করা হয়েছিল। যখন সে ইমাম আহমদ (রহঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করেছিল তখন সে তাকে বলেছিল

“হে আহমদ, দৃঢ় চিত্ত হয়ে থাকুন, কেননা আপনি সত্যের (আরবী কিতাবে আছে- ‘সুন্নতের’) উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার কারণে চাবুকের বাড়ি খাবেন। আর আমি শরাব পান করার কারণে বহুবার চাবুকের বাড়ি খেয়েছি অথচ ধৈর্য ধরেছি।”

(অর্থাৎ আমি অন্যায়ের কারণে শাস্তি পেয়েও ধৈর্য ধরেছি; সুতরাং ন্যায়ের কারণে আপনি শাস্তি পেলে অবশ্যই ধৈর্য ধারণ করবেন যেন- অনুবাদক।) আর এটিই সে দুটি কথার প্রথমটি।

فَاصْبِرْ إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ وَلَا يَسْتَخِفَّنَّكَ الَّذِينَ لَا يُوقِنُونَ

“অতএব ধৈর্য ধরুন, নিশ্চয় আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। আর যারা দৃঢ় বিশ্বাস করে না, তারা যেন আপনাকে বিচলিত না করে।” (৩০-সূরা আর রূমঃ আয়াত-৬০)

“যদি তোমরা যন্ত্রণা ভোগ কর তবে তারাও তো তোমাদের মতো যন্ত্রণা ভোগ করে অথচ তারা যা আশা করতে পারে না তোমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে তা (পুরস্কার তথা জান্নাত) আশা করতে পার।” (৪-সূরা আন নিসাঃ আয়াত-১০৪)

আর দ্বিতীয় বাণীটি হলো- যখন ইমাম আহমদ (রহঃ)-কে শিকল পরিয়ে জেলখানায় আনা হচ্ছিল তখন একজন বেদুঈন তাকে দেখে বলেছিল “হে আহমদ। ধৈর্য ধরুন কেননা, এ দুর্ঘটনায় যদি আপনার মৃত্যু হয় তবে এ ঘটনার কারণেই আপনি জান্নাতে যাবেন।”

“তাদেরকে তাদের প্রভু নিজের পক্ষ থেকে একটি করুণা, সন্তুষ্টি ও তাদের জন্য অনেক জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন যেখানে (তাদের জন্য) রয়েছে চিরস্থায়ী সুখ শান্তি।” (৯-সূরা আনফালঃ আয়াত-২১)

দুঃখ-কষ্টের কিছু উপকারিতা

দুঃখ-কষ্টকে আমরা অনেকেই এড়িয়ে চলতে চাই। কিন্তু দুঃখ-কষ্টের উপকারিতা অনেক। আমরা এখানে দুঃখ-কষ্টের কিছু উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো।

কষ্টের কারণে মানুষ বিনীতভাবে তার প্রভুর প্রতি মুখাপেক্ষী হয়। কেউ একবার বলেছিলেন, “আল্লাহ কতইনা পবিত্র তিনি (বান্দাকে) কষ্ট দেয়ার মাধ্যমে দোয়া করান।” বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ তার কোনও বান্দাকে কোন এক বিষয়ে পরীক্ষা করে ফেরেশতাদেরকে বললেন, “তার কথা (দোয়া, প্রার্থনা, আবেদন) শুনার জন্য এ পরীক্ষা ছিল” অভাব-অনটন ও সংকটের কারণে মনে নম্রতা আসে (আর বিনয়-নম্রতাকে আল্লাহ পছন্দ করেন। -অনুবাদক)

كَلَّا إِنَّ الْإِنْسَانَ لَيَطْغَىٰ أَنْ رَآهُ اسْتَغْنَىٰ

“বরং মানুষ নিশ্চয় সীমালঙ্ঘন করে, কেননা, সে নিজেকে অভাবমুক্ত দেখে বা স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করে।” (৯৬-সূরা আল আলাকঃ আয়াত ৬-৭)

দুর্দশাগ্রস্ত লোকদেরকে মানুষেরা সাত্ত্বনা দেয় এবং তার বা তাদের জন্য দোয়া করে। এভাবে সংকটের সময় মু’মিনরা ভ্রাতৃত্ববোধে দুর্দশাগ্রস্ত লোকের পাশে এসে দাঁড়ায়। একটি মুসিবত বড় আরেকটি মুসিবত থেকে রক্ষা করে বিধায় মসিবতগ্রস্ত লোকের কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। অধিকন্তু (এ ছাড়া) বিপদাপদের কারণে অনেক পাপ মোচন হয়। যখন আল্লাহর কোন বান্দা এ বিষয় (কথা)গুলো বুঝতে পারবে তখন সে কৃতজ্ঞ হবে।

إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُم بِغَيْرِ حِسَابٍ

“কেবলমাত্র ধৈর্যশীলদেরকেই তাদের পুরস্কার পূর্ণমাত্রায় বেহিসাবে দেয়া হবে।” (৩৯-সূরা আয যুমারঃ আয়াত-১০)

বিদ্যার উপকারিতা

ইবনে হাযম উল্লেখ করেছেন যে, বিদ্যার (জ্ঞানের) একটি উপকারিতা এই যে, এটা মন থকে কুমন্ত্রণাসমূহ দূর করে ও জ্ঞানী বা বিদ্যানকে (আলেমকে) দুশ্চিন্তা ও সমস্যা থেকে মুক্ত করে। এটা বিশেষ করে তার জন্য সত্য যে বিদ্যাকে (ইলমকে) ভালোবাসে, যে নিয়মিত জ্ঞান চর্চা, পড়াশুনা ও গবেষণা করে এবং যে অর্জিত বিদ্যাকে বাস্তবে প্রয়োগ করে (আমল করে), তালেবে এলেম (বিদ্যা শিক্ষার্থী) এর উচিত মুখস্ত করা, পড়া, পুনরায় পড়া, (ভুলচুক) খোঁজ করা ও গবেষণা করার মাঝে তার সময়কে ভাগ করে দেয়া।

সুখ স্বর্গীয়

(ধনী-দরিদ্রের সাথে সুখের কোন সম্পর্ক নেই)

শ্রমিকরা দিন এনে দিন খায় (উদ্দেশ্য-যে দিনকার আয় সে দিনই খেয়ে শেষ করে) এমনটা দেখা অসাধারণ কিছু নয় (এমনটা প্রায়ই দেখা যায়)। তবুও তাদের অনেকেই সুখী, শান্তিপূর্ণ এবং শক্তিশালী ও প্রশান্ত আত্মার অধিকারী। এর কারণ হলো-তারা এত ব্যস্ত যে তারা গতকাল বা আগামীকাল সম্বন্ধে ভাববার সময় পায় না। তাদের জীবন যাত্রার ধরন তাদেরকে শুধুমাত্র আজকের দিনের মূল্যায়নই শিক্ষা দেয় বা আজকের দিনটির গুরুত্বই বুঝতে দেয়, এ কারণেই তারা অন্য কিছু নিয়ে ভাববার সুযোগ পায় না।

যারা অট্টালিকায় বাস করে তাদের সাথে এদের তুলনা করে দেখুন। কার্যহীনতা ও অবসর সময় তাদের সমস্যা ও জীবনের উদ্দেশ্যহীনতা নিয়ে ভাবতে প্রচুর সময় যোগায়। এভাবে তাদের অনেককেই দিন-রাত দুর্দশা ও দুশ্চিন্তা আক্রান্ত করে।


“আল্লাহর উপর ভরসা” শিরোনামের আকর্ষনীয় এই টপিকসের সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-
১ম পর্ব    ২য় পর্ব    ৩য় পর্ব    ৪র্থ পর্ব    ৫ম পর্ব    ৬ষ্ট পর্ব    ৭ম পর্ব    ৮ম পর্ব    ৯ম পর্ব    ১০ম পর্ব    ১১-তম পর্ব    ১২-তম পর্ব    ১৩-তম পর্ব    ১৪-তম পর্ব    ১৫-তম পর্ব    ১৬-তম পর্ব    ১৭-তম পর্ব    ১৮-তম পর্ব    ১৯-তম পর্ব    ২০-তম পর্ব    ২১-তম পর্ব    ২২-তম পর্ব    ২৩-তম পর্ব    ২৪-তম পর্ব    ২৫-তম পর্ব    ২৬-তম পর্ব    ২৭-তম পর্ব    ২৮-তম পর্ব    ২৯-তম পর্ব    ৩০-তম পর্ব    ৩১-তম পর্ব    ৩২-তম পর্ব    ৩৩-তম পর্ব    ৩৪-তম পর্ব    ৩৫-তম পর্ব    ৩৬-তম পর্ব    ৩৭-তম পর্ব    ৩৮-তম পর্ব 




*****************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url