রাহে আমল-২ || নিয়তের বিশুদ্ধতা || উদ্দেশ্যের সততা ও একনিষ্ঠতা ||






بسم الله الرحمن الرحيم

নিয়তের বিশুদ্ধতা

উদ্দেশ্যের সততা ও একনিষ্ঠতা

 عَنْ عُمَر بن الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّمَا الْأَعْمَالَ بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لِامْرِي مَّا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتْهُ إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ فَهِجْرَتُهُ إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ، وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتَهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبَهَا أَوِ امْرَأَةٍ يَتَزَوجَهَا فَهِجْرَتُهُ

“হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সা) বলেছেন : নিয়ত বা উদ্দেশ্যের উপরই সব কাজ নির্ভরশীল। মানুষ যা নিয়ত করে, তাই পায়। যেমন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসূলের উদ্দেশ্যে হিজরত করবে, তার হিজরতই হবে প্রকৃত হিজরত। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার কোন স্বার্থ অর্জন কিংবা কোন মহিলাকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে হিজরত করবে, তার হিজরত পরিগণিত হবে দুনিয়ার জন্য কিংবা সংশ্লিষ্ট নারীর জন্য কৃত হিজরত হিসাবে।” (বোখারী, মুসলিম)

মানুষের চিন্তা ও কর্মের পরিশুদ্ধি ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে এটি একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ হাদীস। রাসূল (সা)-এর এ হাদীসের মর্ম এই যে, যে কোন সৎ কাজই করা হোক না কেন, তা কী উদ্দেশ্যে ও কোন নিয়তে করা হয়েছে, তার ভিত্তিতেই তার পরিণাম ও প্রতিদান নির্ণিত হবে। যদি উদ্দেশ্য সৎ থেকে থাকে, তবে তার সওয়াব পাওয়া যাবে। নচেত সওয়াব পাওয়া যাবে না। কোন কাজ দেখতে যতই পুণ্যের কাজ মনে হোক, আখেরাতে তার প্রতিদান কেবল তখনই পাওয়া যাবে, যখন তা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে করা হবে। এই কাজের পেছনে যদি কোন দুনিয়াবী স্বার্থসিদ্ধির ইচ্ছা কার্যকর থেকে থাকে, যদি তা কোন পার্থিব স্বার্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে করা হয়ে থাকে, তবে পরকালের বাজারে তার কোন দাম থাকবে না। সেখানে ঐ কাজ অচল মুদ্রা হিসাবে গণ্য হবে। এ কথাটাকে তিনি হিজরতের উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়েছেন । হিজরত কত বড় ত্যাগ ও পুণ্যের কাজ, মানুষে নিজের ঘরবাড়ী, সহায়-সম্পদ ও জন্মভূমি চিরদিনের জন্য ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায়। কিন্তু এত বড় ত্যাগ ও পুণ্যের এই কাজটিও আদৌ পুণ্যের কাজ হিসাবেই গৃহীত হবে না এবং এ কাজের কোন সওয়াবই পাওয়া যাবে না যদি মানুষ তা আল্লাহ ও রাসূলের জন্য না করে। বরং নিছক নিজের দুনিয়াবী স্বার্থ ও সুবিধা লাভের জন্য করে। এতে বরঞ্চ সে প্রতারণা ও ধোকাবাজির দায়ে অভিযুক্ত হবে। কারণ সে নিজেকে আল্লাহর জন্য হিজরতকারী হিসাবে চিহ্নিত করে মুসলমানদের সমাজ ও রাষ্ট্রকে ধোকা দিয়ে পার্থিব সুযোগ সুবিধা যথা খাদ্য ও আশ্রয় ইত্যাদি লাভ করেছে । অথচ আসলে সে আল্লাহর উদ্দেশ্যে হিজরত করেনি।

আল্লাহ মানুষের মন ও আমল দেখবেন


نْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِي اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللَّهَ لَا يَنظُرُ إِلَى صَوَرِكُمْ وَأَمْوَالِكُمْ وَلكِنْ يَنظُرْ إِلى قُلُوبِكُمْ وَأَعْمَالِكُمْ (مسلم)

হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূল (সা) বলেছেন : আল্লাহ তোমাদের আকৃতি, চেহারা ও ধনসম্পদ দেখবেন না। তিনি দেখবেন তোমাদের মন ও আমলকে। (মুসলিম)

٣- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ - إِنَّ أَوَّلَ النَّاسِ يُقْضَى عَلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ رَجُلٌ نِ اسْتَشْهِدَ فَأْتِى بِـ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا . قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا ؟ قَالَ قَاتَلَتُ فِيْكَ حَتَّى اسْتُشْهِدْتُ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ قَاتَلْتَ لِأَنْ يقَالَ جَرِى فَقَدْ قِيلَ - ثُمَّ أَمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى الْقِي فِي النَّارِ، وَرَجُل تَعَلَّمَ الْعِلْمِ وَعَلَّمَهُ وَقَرَا  اه
القرآن فأتى به فَعَرَفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلت فِيهَا ؟ قَالَ تَعَلَّمْتُ الْعِلْمَ وَعَلَّمْتُهُ وَقَرَأْتُ فِيْكَ الْقُرْآنَ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ تَعَلَّمْتَ لِيُقَالَ هُوَ عَالِمٌ وَقَرَأْتَ الْقُرْآنَ لِيُقَالَ هُوَ قَارِي فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَبِهِ فَسُحِب عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ، وَرَجُلٌ وَسَّعَ الله عَلَيْهِ وَأَعْطَاهُ مِنْ أَصْنَافِ الْمَالِ فَأْتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ لعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبِيلِ
أَنْ يُنْفَقَ فِيهَا إِلَّا أَنْفَقْتُ فِيْهَا لَكَ، قَالَ كَذَبْتُ وَلَكِنْكَ فَعَلْتَ لِيُقَالَ هُوَ جَوادٌ فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسْحِبَ عَلَى وَجْهِهِ ثُمَّ أُلْقِيَ فِي النَّارِ. (صحيح مسلم)

কেয়ামতের দিন সর্ব প্রথম এমন এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হবে, যে শহীদ হয়েছিল। তাকে আল্লাহর আদালতে হাজির করা হবে। আল্লাহ তায়ালা তাকে দেয়া নেয়ামতগুলো স্মরণ করিয়ে দেবেন। যাবতীয় নেয়ামতের কথা তার মনে পড়বে। তখন তিনি জিজ্ঞেস করবেন, তুমি আমার নেয়ামতগুলো পেয়ে কি কাজ করছ? সে বলবে: আমি তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য (তোমার দ্বীনের বিরুদ্ধে লড়াইতে লিপ্তদের সাথে) যুদ্ধ করে প্রাণ দিয়েছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি যে বললে আমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করেছি-এ কথা ভুল বলেছ। তুমি যুদ্ধ করেছ শুধু এ জন্য যে, লোকেরা তোমাকে বীর ও সাহসী বলবে। সেটা বলাও হয়েছে এবং দুনিয়াতেই তুমি তার প্রতিদান পেয়ে গেছো। অতঃপর হুকুম দেয়া হবে যে, এই 'স্বকথিত শহীদ' কে মুখ নীচের দিকে দিয়ে টেনে নিয়ে যাও এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ কর। তৎক্ষণাত তাকে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে ।

এরপর দ্বিতীয় আরেক ব্যক্তি আসবে আল্লাহর আদালতে। সে ছিল ইসলামের বিশিষ্ট পণ্ডিত তথা আলেম, শিক্ষক ও কোরআন অধ্যায়নকারী। তাকে আল্লাহ তাঁর দেয়া নেয়ামতগুলো স্মরণ করিয়ে দেবেন। লোকটির যাবতীয় নেয়ামতের কথা মনে পড়বে। তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন এতসব নেয়ামত পেয়ে তুমি কি কাজ করেছ? সে বলবে, হে আল্লাহ, আমি তোমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই তোমার দ্বীন শিখেছি। তোমারই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তা অন্যকেও শিখিয়েছি এবং তোমারই জন্য কোরআন পড়েছি। আল্লাহ তায়ালা বলবেন 'তুমি মিথ্যে বলছ। তুমি তো কেবল এ জন্য ইসলামের জ্ঞান অর্জন করেছ যেন লোকেরা তোমাকে একজন আলেম বলে। আর কোরআন তুমি এজন্য শিখেছ, যেন জনগণ তোমাকে কোরআনের জ্ঞানী বলে। তোমার এ আশা দুনিয়াতেই মিটে গেছে এবং লোকে তোমাকে আলেম ও ক্বারী বলেছে। এরপর হুকুম দেয়া হবে যে, ওকে মুখ নীচের দিকে দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যাও এবং জাহান্নামে ফেলে দাও। তৎক্ষণাত তাকে টেনে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। 

তৃতীয় ব্যক্তি হবে দুনিয়ার সেই ধনাঢ্য ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ বিপুল প্রাচুর্য ও রকমারি অঢেল সম্পদ দান করেছেন। তাকে হাজির করার পর আল্লাহ তাকে দেয়া নেয়ামতের কথা স্মরণ করাবেন। সকল নেয়ামতের কথা তার মনে পড়বে এবং সে স্বীকার করবে যে, এ সকল নেয়ামত তাকে দেয়া হয়েছিল। এরপর তার প্রতিপালক তাকে জিজ্ঞেস করবেন, আমার নেয়ামতগুলো পেয়ে তুমি কি করেছ? সে বলবে, যে সব খাতে খরচ তুমি পছন্দ কর, সেই সব খাতে তোমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে খরচ করেছি। আল্লাহ তায়ালা বলবেন, তুমি মিথ্যে বলছ। তুমি সমস্ত সম্পদ এজন্য দান করেছিলে যেন লোকে তোমাকে দানশীল বলে। এ উপাধি তুমি দুনিয়াতেই পেয়ে গেছ। এরপর আদেশ দেয়া হবে যে, ওকে মুখ নীচের দিকে দিয়ে টেনে নিয়ে আগুনে ছুড়ে মারো। তাকে তৎক্ষণাত আগুনে ফেলে দেয়া হবে। (মুসলিম)

ব্যাখ্যা : এই তিনটি হাদীস যে বিষয়টি তুলে ধরেছে, তা হলো : আখেরাতে কোন সৎকাজের বাহ্যিক রূপ ও আকৃতি দেখে পুরস্কার বা প্রতিদান দেয়া হবে না। সেখানে শুধু সেই কাজই সওয়াবের যোগ্য বিবেচিত হবে, যা কেবল মাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হয়েছে। যত বড় নেক কাজই হোক, তা যদি এ উদ্দেশ্যে করা হয় যে, সমাজের লোকেরা তাতে খুশী হবে কিংবা জনগণের চোখে তার মর্যাদা বাড়বে, তাহলে আল্লাহ তায়ালার চোখে তার কোন মর্যাদা থাকবে না। আখেরাতের বাজারে এ ধরনের পণ্যের কোন মূল্য হবে না। আল্লাহর দাড়িপাল্লায় এ ধরনের নেক আমল অচল ও নকল পণ্য বিবেচিত হবে। এ ধরনের লোক দেখানো ঈমানও সেখানে কাজে আসবে না ।

সুতরাং আমাদেরকে এই লোক দেখানো ও খ্যাতি অর্জনের সর্বনাশা মানসিকতা থেকে সতর্ক ও হুঁশিয়ার থাকতে হবে। নচেত আমাদের অজান্তেই আমাদের যাবতীয় চেষ্টা সাধনা ও শ্রম বরবাদ হয়ে যাবে। শুধু যে বরবাদ হবে তাই নয় । কেয়ামতের ময়দানে হাজির হবার আগে এই বরবাদ হওয়ার কথা ঘুণাক্ষরেও জানা যাবে না। সেই ময়দানে মানুষ প্রতিটি আমলের প্রয়োজন অত্যন্ত তীব্রভাবে অনুভব করবে, চাই তা যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন ।




******************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity. 

Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url