রাহে আমল-৫ কোরআনের বিষয়সমূহ || তাকদীরের অর্থ || পৃথিবীর সাক্ষ্য || আল্লাহর সামনে উপস্থিতি ||






بسم الله الرحمن الرحيم

কোরআনের বিষয়সমূহ

قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَزِّل الْقُرْآنُ عَلَى خَمْسَةِ أَوْجَةٍ حَلَالٍ وَحَرَامٍ وَمَحْكُم وَمُتَشَابِه وأَمْثَالٍ فَأَحِلُّوا الْحَلَال وَحَرِّمُوا الْحَرَام وَاعْمَلُوا بِالْمُحْكَمِ وَأَمِنُوا بِالْمُتَشَابِهِ وَاعْتَبِرُوا
بِالْأَمْثَالِ (مشكوة)

হালাল, হারাম, মুহকাম, মুতাশাবিহ ও উদাহরণ। তোমরা হালালকে হালাল মানো। হারামকে হারাম মানো। মুহকামের (যে অংশে আকীদা, এবাদাত, আমল আখলাক, আইন কানুন ইত্যাদির শিক্ষা দেয়া হয়েছে) ওপর আমল কর। মুতাশাবিহের (যে অংশে অদৃশ্য বিষয় তথা বেহেশত, দোযখ, আরশ ইত্যাদির বিবরণ রয়েছে) ওপর বিশ্বাস রাখো। (অর্থাৎ অদৃশ্য বিষয়গুলো নিয়ে কোন প্রশ্ন বা বিতর্ক না তুলে হুবহু যা বলা হয়েছে তাই মেনে নাও) এবং উদাহরণ (অতীতের ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিগুলোর শিক্ষামূলক কাহিনী) থেকে শিক্ষা গ্রহণ কর। (মেশকাত)

قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللَّهَ فَرَضَ فَرَائِضَ فَلَا تُضَيْعُوهَا وَحَرَّمَ حُرِّمَاتٍ فَلَا تَنْتَهِكُوْهَا وَحَدَ
حدودًا فَلَا تَعْتَدُوهَا وَسَكَتَ عَنْ أَشْيَاءَ مِنْ غَيْرِنِسيَانٍ
فَلَا تَبْحَدُّوا عَنْهَا. (مشكوة، جابر رض)

হযরত জাবের (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : আল্লাহ তায়ালা কিছু কাজ ফরজ করেছেন। সেগুলোকে তোমরা নষ্ট করো না। কিছু কাজ হারাম করেছেন, সেগুলোকে লংঘন করো না। কিছু সীমা নির্ধারণ করেছেন, সেগুলো অতিক্রম করো না। কিছু জিনিস সম্পর্কে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে নীরবতা অবলম্বন করেছেন, তোমরা সেগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করো না। (মেশকাত)

٢٣ - عَنْ زِيَادِ بْنِ لَبِيْدٍ قَالَ ذَكَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْئًا فَقَالَ ذَلِكَ عِنْدَ أَوَانِ ذَهَابِ الْعِلْمِ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ وَكَيْفَ يَذْهَبُ الْعِلْمُ وَنَحْنُ نَقْرَهُ الْقُرْآنَ وَنَقْرِتُهُ أَبْنَاءَنَا وَ يُقْرِنَّهُ أَبْنَاؤُنَا أَبْنَاءَهُمْ؟ فَقَالَ ثَكِلَتْكَ أَمَكَ زِيَادُ كُنْتُ لَأَرَاكَ مِنْ أَفْقَهِ رَجُلِ بِالدِّينَةِ أَوَلَيْسَ هذِهِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى يَقْرَءُونَ التَّوْرَاةَ وَالْإِنْجِيلَ لَا
يَعْمَلُونَ بِشَيْءٍ مِمَّا فِيهِمَا. (ابن ماجة)

হযরত যিয়াদ বিন লাবীদ (রা) বলেন একবার রাসূলুল্লাহ (সা) একটা ভয়ংকর জিনিসের উল্লেখ করে বললেন। এমন অবস্থা ঘটবে তখন, যখন ইসলামের জ্ঞান নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। আমি বললাম, হে রাসূলুল্লাহ (সা), ইসলামের জ্ঞান কিভাবে নিশ্চিহ্ন হবে? আমরা তো কোরআন নিজেরাও পড়ছি। আমাদের সন্তানদেরকেও শেখাচ্ছি এবং আমাদের সন্তানরাও তাদের সন্তানদেরকে শেখাতে থাকবে। রাসূল (সা) বললেন : ওহে যিয়াদ, আমি তো তোমাকে মদিনার সবচেয়ে বুদ্ধিমান লোক মনে করতাম। তুমি কি দেখতে পাও না, ইহুদী ও খৃষ্টানরা তাওরাত ও ইনজীল কত তেলাওয়াত (আবৃত্তি) করে। কিন্তু তার শিক্ষা অনুযায়ী একটুও কাজ করে না? (ইবনে মাজা)

তাকদীরের প্রতি ঈমান আনার তাৎপর্য

আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরণা লাভ


عن علي قال قال رسولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا مِنْ أَحَدٍ إِلَّا وَقَدْ كُتِبَ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ وَمَقْعَدَهُ مِنَ الْجَنَّةِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ أَفَلَا نَتَّكِلُ عَلَى
خُلِقَ كِتَابِنَا وَنَدَعُ الْعَمَلَ؟ قَالَ اَعْمَلُوا فكل ميسر مل لَهُ، أَمَّا مَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ السَّعَادَةِ فَسَبَبٍ السَّعَادَةِ، وَأَمَّا مَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الشَّقَاوَةِ فَسَيْيَسَّر لِعَمَلِ الشَّفَاوَةِ ثُمَّ قَرَأَ فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسْرَى وَأَمَّا مَنْ بَخِلَ وَاسْتَغْنى وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَى فَسَنْيَسِرُهُ لِلْعُسْرى .
(بخاري ومسلم)

প্রত্যেকের দোযখ ও বেহেশত নির্ধারিত হয়ে আছে। লোকেরা বললো, হে রাসূলুল্লাহ্, তাহলে আমরা আমাদের নিজ নিজ নির্ধারিত ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে কাজ কর্ম ছেড়ে দেই না কেন? রাসূল (সা) বললেন : না। কাজ করে যাও। কেননা যাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। তার জন্য সেই কাজই সহজ করে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি সৌভাগ্যশালী, তাকে সৌভাগ্যজনক ও বেহেশতে যাওয়ার উপযোগী কাজ করার সামর্থ দান করা হয়। আর যে ব্যক্তি হতভাগা ও জাহান্নামী, তাকে জাহান্নামে যাওয়ার উপযোগী কাজ করার সামর্থ দেয়া হয়। অতপর রাসূলুল্লাহ (সা) সূরা 'ওয়াল্লাইল'-এর এই আয়াত ক'টি পড়লেন : “যে ব্যক্তি সম্পদ ব্যয় করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং সর্বোত্তম বাণীর স্বীকৃতি দেয় (অর্থাৎ ইসলাম গ্রহণ করে) তাকে আমি উত্তম জীবন যাপনের (অর্থাৎ জান্নাতবাসের উপযোগী জীবন যাপনের) ক্ষমতা দেব। আর যে ব্যক্তি সম্পদ ব্যয়ে কার্পণ্য করে, (আল্লাহ সম্পর্কে) বেপরোয়া হয় এবং উত্তম জীবন যাপনকে প্রত্যাখ্যান করে, তাকে আমি কষ্টদায়ক জীবন যাপনের (অর্থাৎ জাহান্নামের উপযোগী জীবন যাপনের) ক্ষমতা যোগাবো। (বোখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ মানুষ কোন্ কোন্ কাজের দরুন দোযখের উপযুক্ত এবং কোন্ কোন্ কাজের দ্বারা জান্নাতের উপযুক্ত হবে, সেটা আল্লাহ তায়ালা আগে থেকেই নির্ধারিত করে রেখেছেন। এই পূর্ব নির্ধারিত ব্যবস্থার নামই তাকদীর বা অদৃষ্ট। এই তাকদীর বা অদৃষ্ট কোরআনেও বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং হাদীসেও রাসূলুল্লাহ (সা) সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিয়েছেন। এরপর মানুষ জাহান্নামের পথে চলা পছন্দ করবে, না জান্নাতের পথে, সে ব্যাপারে সে সম্পূর্ণ স্বাধীন। দুটোর মধ্য থেকে যে কোন একটা অবলম্বন করা তারই দায়িত্ব। কারণ আল্লাহ তায়ালা তাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা দিয়েছেন এবং জীবন চলার পথ নির্ধারণে তাকে স্বাধীন ছেড়ে দিয়েছেন। এই স্বাধীনতাই তাকে দোযখের শাস্তি ভোগ করাবে। অথবা এর বদৌলতেই সে জান্নাতের অধিকারী হবে। কিন্তু অনেকের বুদ্ধি এতই বক্র ও ভোঁতা যে, নিজের দায়দায়িত্ব আল্লাহর ঘাড়ে চাপিয়ে নিজেকে অক্ষম মনে করে এবং ভাবে যে, সে যা কিছুই করছে, আল্লাহ তাকে দিয়ে তা জোরপূর্বক করাচ্ছেন। সুতরাং তার আর কোন দায়দায়িত্ব নেই। 

তাকদীরের অর্থ

ن أبى خزامة عن أبيه قال قلت يا رسول الله ! ارَأَيْتَ رَبِّي تَسْتَرْقِيْهَا وَدَوَاءٍ نَتَدَاوِي بِهِ تَقَاةَ نَتَّقِيهَا هَلْ يَرُدُّ مِنْ قَدَرِ اللَّهِ شَيْئًا قَالَ هِيَ مِنْ

হযরত আবু খুযামা (রা) তার বাবার কাছ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি (আবু খুযামার বাবা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)কে জিজ্ঞেস করলাম যে, হে রাসূলুল্লাহ। আমরা আমাদের রোগব্যাধির চিকিৎসার জন্য যে দোয়া তাবিজ ও ঔষধ ব্যবহার করি এবং বিপদ-মুসিবত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থাদি গ্রহণ করি, এগুলো কি আল্লাহর তাকদীরকে (নির্ধারিত ব্যবস্থা) ঠেকাতে পারে? তিনি জবাব দিলেন যে, এ সব ব্যবস্থাও তো আল্লাহর তাকদীরেরই অন্তর্ভুক্ত। (তিরমিযী)

রাসূলূল্লাহর (সা) জবাবের সারমর্ম এই যে, যে মহান আল্লাহ আমাদের জন্য এই সব রোগব্যাধি নির্ধারিত করেছেন। সেই আল্লাহই এও স্থির করেছেন যে, এসব রোগব্যাধি অমুক ঔষধ বা চেষ্টা তদবীর দ্বারা দূর করা যায়। আল্লাহ তায়ালা রোগেরও স্রষ্টা এবং তা দূর করার ঔষধেরও স্রষ্টা। সবকিছুই আল্লাহর নির্ধারিত নিয়ম-নীতি ও বিধিবিধানের আওতাধীন।

তাকদীর আগে থেকেই নির্ধারিত

خَلْفَ النبي
عَنِ ابْنِ عَبَّاس (رض) قَالَ كُنتُ . صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا فَقَالَ يَا غُلَامُ إِنِّي أَعَلِمَكَ كَلِمَاتٍ، اِحْفَظ اللهَ يَحْفَظْكَ، اِحْفَظِ اللَّهَ تَجِدْهُ تِجَاهَدَكَ، إِذَا سَأَلْتَ فَاسْيْلِ اللَّهَ وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَاعْلَمْ أَنَّ الْأُمَّةَ لَوِ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَنْفَعُوكَ بِشَيْءٍ لَّمْ يَنْفَعُوكَ بِشَيْ إلَّا قَدْ كَتَبَهُ اللهُ لَكَ وَلَوِ اجْتَمَعُوا عَلَى أَنْ يَضُرُّوكَ بِشَيْ لَّمْ يَضُرُّوكَ إِلَّا بِشَيْ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَيْكَ. (مشكوة)

হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। একদিন যখন আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর পেছনে বাহক জন্তুর পিঠে বসে ছিলাম। তখন তিনি বললেন হে বালক, আমি তোমাকে কয়েকটা কথা বলছি। (মনোযোগ দিয়ে শোন) তুমি আল্লাহকে স্মরণ রাখ, তাহলে আল্লাহ তোমাকে স্মরণ রাখবেন। তুমি আল্লাহকে স্মরণ রাখ, তাহলে আল্লাহকে তোমার সামনেই পাবে। যখন কিছু চাইবে, তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে। যখন কোন বিপদে সাহায্য চাইতে হয়, তখন আল্লাহর সাহায্য চাও। আর জেনে রাখ, সমগ্র মানব জাতিও যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে তোমার কোন উপকার করতে চায়, তবে ততটুকুই উপকার করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তোমার ভাগ্য লিপিতে লিখে রেখেছেন। (অর্থাৎ কারো কাছে দেয়ার মত যখন কিছু নেই, তখন কোথা থেকে দেবে? সব কিছু তো আল্লাহর। তিনি যতটুকু কাউকে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন, ততটুকুই সে পায় তা সে যার মাধ্যমেই পাক।) আর যদি সমগ্র মানবজাতি একত্র হয়ে তোমার কোন ক্ষতি করতে চায়, তবে তারাও ততটুকুই ক্ষতি করতে পারে, যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য নির্ধারিত করে রেখেছেন। (সুতরাং তোমার একমাত্র আল্লাহর ওপরই নির্ভরশীল হওয়া উচিত এবং একমাত্র আল্লাহকেই নিজের সাহায্যকারী মেনে নেয়া উচিত।) (মেশকাত)

“যদি এমন হতো” বলা অনুচিত

قَالَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُؤْمِنُ الْقَوِي خَيْرُ أَحَبُّ إِلَى اللهِ مِنَ الْمُؤْمِنِ الضَّعِيف، وَفِي ، خَيْرٌ، اِحْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ وَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَلَا نَجِزْ، وَإِنْ أَصَابَكَ شَيْ فَلَا تَقُلْ لَوْإِنِّي فَعَلْتُ كَانَ كَذَا وَكَذَا وَلَكِنَّ قُلْ قَدر الله، مَا شَاءَ فَعَلَ، فَإِنَّ لَوْ تَفْتَحُ عَمَل

হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : দুর্বল মুমিনের চেয়ে শক্তিশালী ও সবল মুমিন আল্লাহর কাছে বেশী প্রিয় ও উত্তম। তবে উভয়ের ভেতরেই কল্যাণ আছে। তুমি (আখেরাতের জন্য) উপকারী বস্তুর প্রত্যাশী হও। নিজের সমস্যা-সংকটে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও এবং সাহস হারিও না। আর তোমার ওপর কোন বিপদ-মুসিবত এলে এভাবে চিন্তা করো না যে, যদি অমুক কাজটি করতাম তাহলে এমন হতো। বরং এভাবে চিন্তা কর যে, আল্লাহ এ রকমই নির্ধারণ করেছেন এবং যা চেয়েছেন তাই করেছেন। কেননা “যদি” শব্দটা শয়তানের অপতৎপরতার দরজা খুলে দেয়। (মেশকাত)

ব্যাখ্যা : এই হাদীসের প্রথমাংশের মর্ম এই যে, যে ব্যক্তির দৈহিক ও মেধাগত ক্ষমতা বেশী, সে যদি আল্লাহর পথে সকল শক্তি নিয়োগ ও ব্যয় করে, তাহলে তার হাতে ইসলামের কাজ অনেক বেশী হবে। পক্ষান্তরে যার স্বাস্থ্য খারাপ। কিংবা যার চিন্তাগত ও মেধাগত ক্ষমতা কম। সে আল্লাহর পথে সকল শক্তি ব্যয় করলেও প্রথমোক্ত ব্যক্তির মত অত বেশী কাজ সে করতে পারবে না, তা সহজেই বোধগম্য। তাই দ্বিতীয় ব্যক্তির চাইতে তার পুরস্কার বেশীই প্রাপ্য হওয়ার কথা। অবশ্য দু'জনই যেহেতু একই পথ- আল্লাহর পথের পথিক। তাই এই দুর্বল মুমিনকে অল্প কাজ করার জন্য পুরস্কার বা প্রতিদান থেকে বঞ্চিত করা হবে না। আসলে শক্তিশালী মুমিনকে এই বলে উদ্দীপিত করা হচ্ছে যে, তোমাকে যে শক্তি দেয়া হয়েছে, তার কদর কর, এই শক্তি কাজে লাগিয়ে যত অগ্রগতি অর্জন করতে পার, অর্জন কর। কেননা দুর্বলতা এসে যাওয়ার পর মানুষ কিছু করতে চাইলেও করতে পারে না। হাদীসের শেষাংশের মর্মার্থ এই যে, মুমিন নিজের মেধা, ক্ষমতা ও দক্ষতার ওপর নির্ভর করে না। বরং সর্বাবস্থায় শুধু আল্লাহর ওপর নির্ভর করে। তার ওপর যখন মুসিবত আসে, তখন তার মন এভাবে চিন্তা করে যে, এই মুসিবত আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এসেছে। এটা তো আমার প্রশিক্ষণেরই একটি অংশ। এতে করে তার বিপদ-মুসিবত, তার তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর ওপর নির্ভরশীরতা বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আখেরাতের প্রতি ঈমান আনার তাৎপর্য

কেয়ামতের আযাব থেকে মুক্তি


قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَيْفَ أَنْعَمْ وَصَاحِب الصور قد التقمَة وَأصْغَى سَمْعَهُ وَقَنى جبهته يَنتَظِرُ مَتَّى يُؤْمَرُ بِالنَّفْخِ فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ فَمَاذَا تَأْمُرُنَا ؟ قَالَ قَوْلُوا حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ (ترمذي)

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন: আমি কিভাবে নিশ্চিন্ত থাকতে ও আরাম আয়েশের জীবন যাপন করতে পারি যখন শিংগা মুখে নিয়ে কান লাগিয়ে কপাল ঝুঁকিয়ে ইসরাফীল (আ) অপেক্ষায় আছেন, কখন ফুঁক দেয়ার আদেশ দেয়া হবে? (শিংগা হলো বিউগল। যা দ্বারা সেনাবাহিনীকে শত্রুর সংবাদ জানিয়ে সতর্ক করা হয়। কিংবা তাদেরকে সমবেত হবার জন্য তা বাজানো হয়। কেয়ামতের বিউগলের প্রকৃতস্বরূপ একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।) লোকেরা বললো: হে রাসূল! এমতাবস্থায় আপনি আমাদেরকে কি নির্দেশ দিচ্ছেন। তিনি বললেন তোমরা পড় “আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি সর্বোত্তম অভিভাবক ও কার্যনির্বাহী।” (হাসবুনাল্লাহ ওয়া নিমাল ওয়াকীল), (তিরমিযী, আবু সাঈদ খুদরী রা)

রাসূলুল্লাহ (সা) এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তাঁর যে অস্থিরতা, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা ফুটে উঠেছে, তা বুঝতে পেরে সাহাবায়ে কেরাম স্বভাবতই আরো বেশী বিচলিত ও পেরেশান হলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন যে, আপনার অবস্থা যখন এই, তখন আমাদের কি উপায় হবে? আমাদেরকে বলে দিন, আমরা কি করলে সেদিন মুক্তি পাব ও সফল হবো। তিনি বললেন, আল্লাহর ওপর ভরসা রাখ। তাঁর অভিভাবকত্বে জীবন যাপন কর ও তাঁর আনুগত্য কর। যারা তাঁকে যথেষ্ট মনে করে ও তার ওপর নির্ভর করে তারাই সফল হবে।

قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَنْظُرُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ كَأَنَّهُ رَأَى عَيْنِ فَلْيَقْرَأْ إِذَا الشَّمْسُ كَورَتْ وَإِذَا السَّمَاء انْفَطَرَتْ وَإِذَا السَّمَاء

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন যে ব্যক্তি কেয়ামতকে চাক্ষুস ঘটনার আকারে দেখতে অভিলাষী, সে যেন তাকভীর, ইনফিতার ও ইনশিকাক-এই তিনটে সূরা পড়ে। এই তিনটে সূরায় কেয়ামতের এমন নিখুঁত ছবি আঁকা হয়েছে যে, তা মনমগঞ্জে প্রবল আলোড়নের সৃষ্টি করে। (তিরমিযী, ইবনে উমার রা.)

পৃথিবীর সাক্ষ্য

قرأ رسول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هذه الآية يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ أَخْبَارَهَا قَالَ أَتَدْرُونَ مَا أَخْبَارَهَا ؟ قَالُوا اللَّهُ وَرَسُولَهُ أَعْلَمُ، قَالَ فَإِنَّ أَخْبَارَهَا أَنْ تَشْهَدَ عَلَى كُلِّ عَبْدٍ وَأَمَةٍ بِمَا عَمِلَ عَلَى ظَهْرِهَا أَنْ تَقُولَ عَمِلَ عَلَى كَذَا وَكَذَا يَوْمَ كَذَا وَكَذَا، قَالَ فَهَذِهِ أَخْبَارُهَا.
(ترمذي، أبو هريرة)

হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) আয়াত পড়লেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে জিজ্ঞেস করলেন : জান, সমস্ত অবস্থা জানানোর অর্থ কি? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, পৃথিবী কেয়ামতের দিন সাক্ষ্য দেবে যে, অমুক নারী বা পুরুষ অমুক দিন অমুক সময়ে তার পিঠের ওপর অমুক ভালো বা মন্দ কাজ করেছে। এই হলো এ আয়াতের মর্ম। মানুষের কৃত কর্মকে আয়াতে 'অবস্থা' বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। (তিরমিযী)

আল্লাহর সামনে উপস্থিতি

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما منكم من أَحَدٍ إِلَّا سَيُكَلِّمْهُ رَبُّهُ لَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ تَرْجَمَانٌ ولَا حَاجِبْ يَحْجُبُهُ فَيَنْظُرُ أَيْمَنَ مِنْهُ فَلَا يَرَى إِلَّا مَا قَدَّمَ مِنْ عَمَلِهِ وَيَنْظُرُ أَقَامَ مِنْهُ فَلَا يَرَى إِلَّا مَا قَدَّمَ وَيَنْظُرُ بَيْنَ يَدَيْهِ فَلَا يَرَى إِلَّا النَّارَ تِلْقَاءَ وَجْهِهِ فَاتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ . (متفق عليه، عدي رض)

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: তোমাদের মধ্য থেকে প্রত্যেক ব্যক্তির সংগে আল্লাহ সরাসরি কথা বলবেন। (হিসাব নেবেন) সেখানে তার জন্য কোন সুপারিশকারীও থাকবে না। কোন পর্দাও থাকবে না। যার আড়ালে সে লুকাতে পারবে। সে ডান দিকে তাকাবে (কোন সুপারিশকারী ও সাহায্যকারী আছে কিনা খুঁজে দেখার জন্য)। কিন্তু সেখানে নিজের কৃতকর্ম ছাড়া আর কিছু দেখবে না। তারপর বাম দিকে তাকাবে, সেখানেও নিজের কৃতকর্ম ছাড়া আর কিছু দেখবে না। তারপর সামনের দিকে তাকাবে, সেদিকে কেবল (সর্ব প্রকারের ভয়ংকর আযাবের দৃশ্য সমেত) দোযখ দেখবে। সুতরাং ওহে লোক সকল, দোযখ থেকে বাচার চেষ্টা কর, একটা খেজুরের অর্ধেক দান করে হলেও। (বোখারী ও মুসলিম, আদী (রা) বর্ণিত।

এ সময় রাসূলুল্লাহ (সা) সাহাবায়ে কেরামকে আল্লাহর পথে দান করার বিষয়টি শিক্ষা দিচ্ছিলেন। তাই শুধু এই বিষয়েরই উপদেশ দিলেন। তিনি বললেন, কারো কাছে যদি একটা খেজুর থাকে এবং সে তারই অর্ধেক দেয়, তবে আল্লাহর চোখে তাও মূল্যবান। আল্লাহ সম্পদ কম না বেশী তা দেখেন না। তিনি দেখেন যে ব্যক্তি সম্পদ দান করছে তার আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা কতখানি ।




******************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity. 

Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url