রাহে আমল-৬ || মোনাফেকীর ভয়াবহ পরিণাম || হিসাব সহজ করার দোয়া || রাসুলের শাফায়াত পাওয়ার শর্ত ||






بسم الله الرحمن الرحيم

মোনাফেকীর ভয়াবহ পরিণাম

قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَلْقَى الْعَبْدَ فَيَقُولُ أَي فَلَا أَلَمْ أَكْرِمُكَ وَأَسَوِدُكَ وَأَزَوجِكَ وَأَسَخِرْلَكَ الْخَيْلَ وَالْإِبِلَ وَأَدْرَكَ تَرْأَسٌ وَتَرْبَع ؟ فَيَقُولُ بَلَى، قَالَ فَيَقُولُ أَفَظَنَنْتُ أَنَّكَ مُلَاقِي ؟ فَيَقُولُ لَا، فَيَقُولُ فَإِنِّي قَدْ أَنْسَاكَ كَمَا نَسِيْتَنِي، ثُمَّ يَلْقَى الثَّانِي فَذَكَرَ مِثْلَهُ ثُمَّ يَلْقَى الثَّالِثَ فَيَقُولُ لَهُ مِثْلَ ذلِكَ، فَيَقُولُ يَارَبِّ أَمَنْتُ بِكَ وَبِكِتَابِكَ وَبِرَسُلِكَ وَصَلَّيْتَ وَصَمْت وَتَصَدَّقْتُ وَيَثْنِي بِخَيْرِ مَّا اسْتَطَاعَ فَيَقُولُ ههنا إذا ، ثم يقال الآن نَبْعَثْ شَاهِدًا عَلَيْكَ فَيَتَفَكَّرُ فِي نَفْسِهِ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْهَدُ عَلَيَّ، فَيُخْتَمُ عَلَى فِيْهِ، وَيُقَالُ لِفَخِذِهِ انْطِقِي فَتَنْطِقُ فَخِذَهُ وَلَحْمُهُ وَعِظَمة بِعَمَلِهِ وَذَلِكَ لِيُعْذِرَ مِنْ نَّفْسِهِ، فَذَلِكَ الْمُنَافِقُ
وذلِكَ الَّذِي سَخِطَ اللَّهُ عَلَيْهِ. (مسلم، أبو هريرة رض)

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন : কেয়ামতের দিন এক বান্দা আল্লাহর সামনে হাজির হবে। আল্লাহ তায়ালা তাকে বলবেন হে অমুক, আমি কি তোমাকে সম্মান ও মর্যাদা দান করিনি! আমি কি তোমাকে স্ত্রী দেইনি? তোমার কর্তৃত্বে কি উট ও ঘোড়া দেইনি? আমি কি তোমাকে অবকাশ দেইনি যে, শাসন চালাবে ও জনগণের কাছ থেকে কর-খাজনা আদায় করবে? সে এই সব নিয়ামত স্বীকার করবে। পুনরায় আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করবেন। তুমি কি বিশ্বাস করতে যে, একদিন তোমাকে আমার সামনে উপস্থিতি হতে হবে। সে বলবে না। তখন আল্লাহ তাকে বলবেন : দুনিয়াতে তুমি যেমন আমাকে ভুলে ছিলে, তেমনি আজ আমি তোমাকে ভুলে থাকবো ।

এরপর অনুরূপ আরো একজন (কেয়ামত অস্বীকারকারী) আল্লাহর দরবারে আসবে। তাকেও অনুরূপ জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তারপর তৃতীয় আর একজন আসবে। আল্লাহ পূর্বোক্ত দুজনকে (কাফের) যেরূপ জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন, তদ্রূপ তাকেও করবেন। তৃতীয় ব্যক্তি বলবে : হে আমার প্রতিপালক, আমি তোমার ওপর, তোমার কিতাবের ওপর এবং তোমার রাসূলগণের ওপর ঈমান এনেছিলাম । আমি নামায পড়তাম, রোযা রাখতাম এবং তোমার পথে সম্পদ ব্যয় করতাম। রাসূল (সা) বলেন, এভাবে সে যথাসাধ্য উৎসাহ উদ্যমের সাথে নিজের আরো বহু ভালো কাজের উল্লেখ করবে। তখন আল্লাহ বলবেন যথেষ্ট হয়েছে। এবার আসো। আমি এক্ষুণি তোমার বিরুদ্ধে সাক্ষী ডাকছি। সে মনে মনে ভাববে আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়, এমন কে আছে? অতঃপর তার মুখকে সিল মেরে বন্ধ করে দেয়া হবে। (কেননা ঐ মুখ দিয়ে সে দুনিয়াতে যেমন রাসূল (সা) ও মুমিনদের সামনে চরম নির্লজ্জতা ও ধৃষ্টতার সাথে নিজের মিথ্যা পরহেজগারী ও সততার ঢোল পিটাতো। তেমনি কেয়ামতের দিন আল্লাহর সামনেও মিথ্যা বলতে কুণ্ঠিত হবে না।) অতঃপর তার উরু, গোশত ও হাড্ডিগুলোকে তার কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। এসব জিনিস তার প্রতিটি কাজের প্রকৃতস্বরূপ বর্ণনা করবে ও তার ধোকাবাজীর মুখোশ খুলে দেবে। এভাবে আল্লাহ তার মিথ্যা বুলি আওড়ানোর দরজা বন্ধ করে দেবেন। রাসূল (সা) বলেন : এ হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে দুনিয়াতে মোনাফেকী করে বেড়াতো এবং আল্লাহর ক্রোধভাজন ছিল। (মুসলিম, আবু হুরায়রা (রা) বর্ণিত।

হিসাব সহজ করার দোয়া

٣٣- عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِي بَعْضِ صَلَاتِهِ اللهُمْ حَاسِبْنِي حِسَابًا يَسِيرًا قُلْتُ يَا نَبِيَّ اللَّهِ مَا الْحِسَابُ الْيَسِير؟ قَالَ أَنْ يُنْظَرَ فِي كِتَابِهِ فَيْتَجَاوَزَعَنْهُ إِنَّهُ مَنْ نُّوْقِشَ الْحِسَابَ يَا عَائِشَةٌ - هَلَكَ. (مسند أحمد)

হযরত আয়েশা বর্ণনা করেন যে, আমি রাসূল (সা)কে কোন কোন নামাযে এভাবে দোয়া করতে শুনেছি: “হে আল্লাহ, আমার কাছ থেকে সহজ হিসাব নিও । আমি জিজ্ঞেস করলাম! হে আল্লাহর নবী। সহজ হিসাব নেয়ার অর্থ কি? রাসূল (সা) বললেন, সহজ হিসাব এই যে, আল্লাহ তার বান্দার আমলনামার ওপর নযর' বুলাবেন এবং তার মন্দ কাজগুলোকে ক্ষমা করবেন। হে আয়েশা, যার প্রতিটা কাজের খুটিনাটি ও সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম হিসাব নেয়া হবে, তার ভালাই হবে না। (মুসনাদে আহমাদ)

পবিত্র কোরআনে ও বিভিন্ন হাদীসে সুস্পষ্টভাবে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে যে, যারা আল্লাহর পথে চলে, বাতিল শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে এবং সংগ্রাম করতে করতে তাদের আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন তাদের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দেবেন এবং সৎকাজের মূল্যায়ন করে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।

কেয়ামত মুমিনের জন্য হালকা হবে

عن أبي سعيد الخدري (رض) أَنَّهُ أَتَى رَسُولَ وصَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ أَخْبِرْنِي مَنْ يقوي ، القِيَامِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الَّذِي قَالَ اللهُ عَزَّوَجَلَّ يَوْمَ يَقومُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَلَمِينَ فَقَالَ يُخَفَّفُ عَلَى الْمُؤْمِنِ حَتَّى يَكُونَ عَلَيْهِ كَالصَّلَوةِ الْكُتُوبَةِ، (مشكوة)

আবু সাঈদ খুদরী (রা) বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর দরবারে উপস্থিত হলাম এবং জিজ্ঞেস করলাম, কেয়ামত সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, "ঐ দিনের কথা চিন্তা কর যেদিন মানুষ হিসাব কিতাবের জন্য বিশ্ব প্রতিপালকের সামনে দণ্ডায়মান হবে"। সেই কেয়ামতের দিন কোন্ ব্যক্তি দণ্ডায়মান থাকতে পারবে? (যখন একদিন হাজার বছরের সমান হবে) রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন (সেদিনের দুঃসহ কষ্ট অপরাধী ও খোদাদ্রোহীদের জন্য। তাদের কাছে একদিন হাজার বছরের মত মনে হবে। কেননা বিপদাপন্ন মানুষের দিন দীর্ঘ অনুভূত হয়। কোনভাবেই তা শেষ হতে চায় না।) মুমিনদের জন্য সেদিন হবে হালকা। শুধু হালকাই নয়, ফরজ নামাযের মত আনন্দ ও খুশীর ব্যাপার। (মেশকাত)

মুমিনের কল্পনাতীত পুরস্কার

٣٥- قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اللهُ تعالى أَعْدَدْتُ لِعِبَادِي الصَّالِحِين مالا عين رأت ولا أذن سَمِعَتْ وَلَا خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ اقْرَءُوا إِن شئتم فلا تعلم
نَفْسٌ مَا أَخْفِى لَهُمْ مِنْ قُرَّة أعين . (بخاري، مسلم)

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমি আমার সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও পুণ্যবান বান্দাদের জন্য এমন সব নেয়ামত প্রস্তুত করে রেখেছি, যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শোনেনি এবং কোন মানুষের হৃদয় কল্পনাও করতে পারেনি। মনে চাইলে তোমরা এ আয়াতটি পড়তে পার কেউ জানে না, পুণ্যবান বান্দাদের জন্য কত আনন্দ লুকিয়ে রাখা হয়েছে, যা পরকালে পাওয়া যাবে। (বোখারী, মুসলিম)

বেহেশতের একটুখানি জায়গাও মূল্যবান

 قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَوْضِعُ سَوْطٍ فِي الْجَنَّةِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا۔ (بخاري، مسلم)

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : জান্নাতে একটা ছড়ি রাখবার মত জায়গাও সমগ্র পৃথিবী ও পৃথিবীর যাবতীয় সহায় সম্পদের চেয়ে উত্তম।(বোখারী, মুসলিম)

“ছড়ি রাখার মত জায়গা” দ্বারা সেই অতি ক্ষুদ্র জায়গা বুঝানো হয়েছে, যেখানে মানুষ কোন রকমে নিজের বিছানা বিছিয়ে পড়ে থাকে। অর্থাৎ আল্লাহর দ্বীন অনুসারে চলতে গিয়ে কারো দুনিয়া যদি নষ্ট হয়ে যায়। সমস্ত সহায় সম্পদ খোয়া যায় এবং তার পরিবর্তে জান্নাতের অতি সামান্য একটু জায়গাও পেয়ে যায়। তবে তাও তার জন্য একটা বিরাট প্রাপ্তি। ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার জিনিস কুরবানী দেয়ার প্রতিদান স্বরূপ আল্লাহ তাকে এমন জিনিস দিলেন, যা চিরস্থায়ী ও অক্ষয়।

দুনিয়া ও আখেরাতের সুখ-দুখের তুলনা

 قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُؤْتَى بِأَنْعَمِ أَهْلِ الدُّنْيَا مِنْ أَهْلِ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُصْبَعْ فِي النَّارِ صَبْغَةً ثُمَّ يُقَالُ يَا ابْنَ أَدَمَ هَلْ رَأَيْتَ خَيْرًا وَبِكَ نَعِيمٌ قَطُّ؟ فَيَقُولُ لاَ وَاللهِ يَارَبٌ وَيُؤْتَى بِأَشَدِ النَّاسِ بُوْسًا فِي الدُّنْيَا مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيُصْبَغ صَبْغَةٌ فِى الْجَنَّةِ فَيُقَالُ لَهُ يَا ابْنَ آدَمَ هَلْ رَأَيْتَ يَوْسًا قَطَّ ؟ هَلْ مَرَّبِكَ شِدَّة قط ؟ فَيَقول لا والله
يَارَبِّ مَا مُربي بؤس وَلَا رَأَيْتُ شِدَّةً قَط - (مسلم)

রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, কেয়ামতের দিন দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী এমন এক ব্যক্তিকে ডাকা হবে, যার দোযখে যাওয়া অবধারিত হয়ে গেছে । তাকে দোযখে ফেলে দেয়া হবে। যখন আগুন তার সমস্ত শরীরকে দগ্ধ করবে, তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি কি কখনো সচ্ছলতা ও প্রাচুর্য দেখেছ ? তুমি কি সুখ সাচ্ছন্দ ও আরাম আয়েশ উপভোগ করেছ ? সে বলবে, হে আমার প্রভু, তোমার কসম, কখনো নয়। এরপর এমন একজনকে ডাকা হবে যে, জান্নাতের অধিবাসী হবে। কিন্তু পৃথিবীতে সে ছিল চরম অসচ্ছলতা ও শোচনীয়তম অভাব অনটনের শিকার। সে যখন জান্নাতের সুখ ও আরাম আয়েশে বিভোর হবে, তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি কি কখনো দারিদ্র্য ও অভাব অনটন দেখেছ? তোমার ওপর কি কখনো দুঃখ-কষ্টের দিন অতিবাহিত হয়েছে ? সে বলবে না, হে আমার প্রতিপালক, আমি কখনো অভাব অনটনের মুখ দেখিনি। কখনো পরমুখাপেক্ষী হইনি এবং আমি কষ্টের কোন যুগ কখনো দেখিনি। (মুসলিম)

জান্নাত ও জাহান্নামের আসল পার্থক্য

 قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَفَّتِ النَّارُ بِالشَّهَوَاتِ وَحَفَّتِ الْجَنَّةُ بِالْكَارِه. (بخاري، مسلم)

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন প্রবৃত্তির লালসা জাহান্নামকে এবং অনাকাংখিত দুঃখ-কষ্ট জান্নাতকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে। (বোখারী, মুসলিম)

অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিজের প্রবৃত্তির পূজা করবে এবং দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী সুখ ও আনন্দ লাভের চেষ্টায় মত্ত হবে, তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আর যে ব্যক্তি জান্নাতের অভিলাষী হবে, সে দ্বীনের খাতিরে কাঁটা ছড়ানো পথ অবলম্বন করতেও দ্বিধা করবে না এবং আল্লাহর জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে পরাজিত করে তাকে যে কোন কঠিন পরিশ্রম ও অবাঞ্ছিত কষ্টকর পন্থা অবলম্বনে বাধ্য করবে। এই কষ্টকর ঘাটি অতিক্রম না করে চির সুখের আবাস জান্নাতে পৌঁছার কোনই সুযোগ নেই । 

জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে সচেতনতা

 قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا رَأَيْتُ مِثْلَ
النَّارِ نَامَ هَارِبُهَا وَمِثْلُ الْجَنَّةِ نَامَ طَالِبُهَا . (ترمذي)

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : আমি জাহান্নামের মত এমন ভয়ংকর আর কোন জিনিস দেখিনি, যা থেকে অব্যাহতি লাভের জন্য পলায়ণপর মানুষ ঘুমিয়ে থাকে। আর জান্নাতের মত এত ভালো জিনিস আর দেখিনি। যার অভিলাষ পোষণকারী ঘুমিয়ে থাকে। (তিরমিযী)

এর তাৎপর্য এই যে, কোন ভয়ংকর জিনিস দেখার পর মানুষের চোখে ঘুম থাকে না। সে ঐ জিনিসের কাছ থেকে দূরে পালায়। যতক্ষণ তা থেকে রক্ষা পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত না হয় ততক্ষণ সে ঘুমায় না ।

অনুরূপ কেউ যদি কোন ভালো জিনিসের অভিলাষী হয়, তবে তা অর্জন না করা পর্যন্ত সে ঘুমায়ও না, বিশ্রামও নেয় না। দুনিয়ার একটা সাধারণ ভালো ও মন্দ জিনিসের ব্যাপারে যখন মানুষের অবস্থা এরূপ, তখন সবচেয়ে উৎকৃষ্ট জিনিস জান্নাতের অভিলাষী কিভাবে ঘুমায়। আর সবচেয়ে খারাপ জিনিস জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষার চিন্তা করে না কেন? যে ব্যক্তি কোন জিনিসের আশংকা করে, সে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে না। আর কোন ভালো জিনিস অর্জনের তীব্র আকাংখা যার থাকে, সে তা অর্জন না করে বিশ্রাম নিতে পারে না ।

বিদয়াতকারী হাউযে কাউসারের পানি পাবে না

إن ٤٠- قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ . فَرَطْكُمْ عَلَى الْحَوْضِ مَنْ مَرَّ عَلَيَّ شَرِبَ، وَمَنْ شَرِبَ لـ رِفهُمْ وَيَعْرِفُونَنِي ثُم يَطْمَا أَبَدًا، لَيَردَنَّ عَلَى أَقْوَامٌ أَعْرِفُهُمْ وَيَعْرِفُون يُحَالَ بَيْنِي وَبَيْنَهُمْ فَأَقُولُ إِنَّهُمْ مِنِّي، فَيْقَالَ إِنَّكَ لَا تَدْرِي مَا أَحْدَثُوا بَعْدَكَ فَأَقُولُ سُحْقًا سُحْقًا لِمَنْ غَيَّرَ
بعدي. (بخاري، مسلم، سهل بن سعد)

রাসূলুল্লাহ (সা) (স্বীয় উম্মতকে সম্বোধন করে) বলেছেন আমি তোমাদের সবার আগে হাউযে কাউসারে পৌঁছে তোমাদেরকে অভ্যর্থনা জানাবো এবং তোমাদেরকে পানি পান করানোর ব্যবস্থা করবো। যে ব্যক্তি আমার কাছে আসবে, সে পানি পান করবে। আর যে ব্যক্তি সেই পানি পান করবে, তার আর কখনো পিপাসা লাগবে না। তবে এমন কিছু লোকও আমার কাছে আসবে, যাদেরকে আমি চিনবো এবং তারাও আমাদেরকে চিনবে। কিন্তু তাদেরকে আমার কাছে আসতে দেয়া হবে না। তখন আমি বলবো, ওরা আমার লোক। (ওদেরকে আমার কাছে আসতে দাও ।) জবাবে আমাকে বলা হবে; আপনি জানেন না। আপনার ইন্তিকালের পর তারা ইসলামে কত নতুন জিনিস (বিদয়াত) ঢুকিয়েছে। একথা শুনে আমি বলবো দূর হয়ে যাক, দূর হয়ে যাক, যারা আমার পর ইসলামের কাঠামোতে পরিবর্তন সাধন করেছে। (বোখারী, মুসলিম, সাহল ইবনে সাদ থেকে বর্ণিত

এ হাদীসের ভিতরে চমকপ্রদ সুসংবাদও আছে। আবার ভয়াবহ দুঃসংবাদও। সুসংবাদ এই যে, যারা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর আনিত দ্বীনকে কোন কমবেশী না করে হুবহু গ্রহণ করেছে ও তদনুসারে কাজ করেছে, তাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সা) হাউযে কাউসারে অভ্যর্থনা জানাবেন। আর যারা জেনে বুঝে ইসলামের ভেতরে ইসলামের অংশ আখ্যায়িত করে এমন সব নতুন জিনিস ঢুকাবে, যা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক, তারা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কাছে পৌঁছতে পারবে না এবং হাউযে কাউসারের পানি পান করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।

রাসুলের শাফায়াত পাওয়ার শর্ত

٤١- عن أبي هريرةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ خَالِصَا مِنْ قَلْبِهِ أَوْ نَفْسِهِ. (بخاري)

হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : কেয়ামতের দিন আমার শাফায়াত বা সুপারিশ লাভের সৌভাগ্য সেই ব্যক্তি সর্বাধিক অর্জন করবে যে অন্তরের পরিপূর্ণ নিষ্ঠা ও একাগ্রতা সহকারে বলবে : “আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই।” (বোখারী)

রাসূল (সা)-এর এ উক্তি শাব্দিক দিক দিয়ে খুবই ছোট হলেও মর্মগত দিক দিয়ে খুবই ব্যাপক। অর্থাৎ যে ব্যক্তি তাওহীদকে গ্রহন করেনি, ইসলামকে কবুল করেনি এবং শেরকের নোংরামীতে পড়েই রয়েছে। সে রাসূলুল্লাহর (সা) শাফায়াত লাভ করবে না। অনুরূপভাবে, যে ব্যক্তি মুখ দিয়ে তো কলেমা পড়লো এবং দৃশ্যত ইসলামে প্রবেশ করলো, কিন্তু মন থেকে তাকে সঠিক বলে বিশ্বাস করলো না। সেও রাসূলুল্লাহর (সা) শাফায়াত থেকে বঞ্চিত থাকবে। রাসূল (সা) শুধু তাদের জন্য শাফায়াত করবেন, যারা অন্তরের অন্তস্থল থেকে ঈমান আনবে এবং তাওহীদের সত্যতা ও অকাট্যতায় অবিচল প্রত্যয় পোষণ করবে। যেমন অন্য এক হাদীসে এ "তার অন্তর দৃঢ় প্রত্যয়শীল থাকবে" কথাটা এসেছে। এই সাথে এ কথাও স্পষ্ট হওয়া দরকার যে, বিশ্বাস মানুষকে কাজে উদ্বুদ্ধ করে। নিজের শিশু সন্তান কৃয়ায় পড়ে গেছে এই খবর কোন ব্যক্তি যখনই পায় এবং এই খবরে যখনই তার পূর্ণ বিশ্বাস জন্যে, তখনই সে প্রবল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে সন্তানের প্রাণ বাঁচানোর জন্য ছুটে যায়। একনিষ্ঠ ঈমানের অবস্থাও তদ্রূপ। এ ঈমান মানুষের ভেতর পরকালীন মুক্তির ভাবনা জাগায় এবং কাজে উদ্বুদ্ধ করে।

কেয়ামতের দিন আত্মীয়তার বন্ধন নিষ্ফল

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا مَعْشَرَ قُرَيْشٍ اِشْتَرُوا أَنفُسَكُمْ لَا أُغْنِي عَنْكُمْ مِنَ اللهِ شَيْئًا، وَيَا بَنِي عَبْدِ مَنَافِ عَنْكُمْ مِنَ اللهِ شَيْئًا يَا عَبَّاسَ بْنَ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ لا أغني مِنَ اللهِ شَيْئًا، وَيَاصَفِيّة عمة رَسُولِ اللهِ اللهِ شَيْئًا، وَيَا فَاطِمَةٌ بِنتَ مُحَمَّدٍ عَنْكِ مِنَ سَلِيْنِي مَا شِئْتِ مِنْ مَّالِي لَا أُغْنِي عَنْكَ مِنَ اللَّهِ ،
شيئًا. (بخاري، مسلم)
وَأَنْذِرْ عَشِيرَةَ كَ الْأَقْرَبِينَ

হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। (যখন সূরা শুয়ারার আয়াত “তোমার নিকটতম আত্মীয়গণকে সতর্ক কর” নাযিল হলো, তখন) কোরাইশ জনগণকে সমবেত করে রাসূল (সা) বললেন “হে কোরাইশ, নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করার চিন্তা কর। আমি তোমাদের কাছ থেকে আল্লাহর আযাব এতটুকুও হঠাতে পারবো না। হে আব্দ মানাফের বংশধর, আমি তোমাদের ওপর থেকে আল্লাহর আযাব একটুও হঠাতে পারবো না। হে আবদুল মুত্তালিবের ছেলে আব্বাস, (রাসূলের আপন চাচা) আমি আল্লাহর আযাবকে তোমাদের ওপর থেকে একটুও হঠাতে পারবো না। হে সুফিয়া (রা) (রাসূলের আপন ফুফু) আমি তোমাকে আল্লাহর আযাব থেকে একটুও রক্ষা করতে পারবো না। হে আমার মেয়ে ফাতেমা, তুমি আমার অর্থ-সম্পদ থেকে যত চাও দিতে পারি। কিন্তু আল্লাহর আযাব থেকে তোমাকে রেহাই দিতে পারবো না। (কাজেই নিজেকে রক্ষা করার ভাবনা নিজেই কর। কেননা পরকালে প্রত্যেকের নিজের ঈমান, আমল ছাড়া আর কিছুই কাজে আসবে না।) 

রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাতের ভয়াবহ পরিণাম

 عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ، قَامَ فِيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ، فَذَكَرَ الْغُلُولَ فَعَظَمَهُ وَعَظَمَ مَّ قَالَ لَا الْفِينَ أَحَدَكُمْ يَجِئْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى رَقَبَتِهِ بَعِيرُ لَهُ رُغَاء يَقُولُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَعْثْنِي فَأَقُولُ لَا أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا، قَدْ أَبْلَغْتُكَ لَا الْفِينَ أَحَدَكُمْ يَجِئْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى رَقَبَتِهِ فَرَسٌ لَّهُ حَمْحَمَةٌ يَقُولُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَغِثْنِي فَأَقُولُ لَا أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا قَدْ أبلغتك ، لا ألفِينَ أَحَدَكُمْ يَجِئْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى رَقَبَتِهِ شَاءٌ لَهَا تُغَاء يَقُولُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَمِثْنِي فَأَقُولُ لَا أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا قَدْ أَبْلَغْتُكَ لَا الْفِينَ أَحَدَكُمْ يَجِئُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى رَقَبَتِهِ نَفْسٌ لَّهَا صِبَاحٌ فَيَقُولُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَغِثْنِي فَأَقُولُ لَا أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا قَدْ أَبْلَغْتُكَ لَا أُلْفِينَ أَحَدَكُمْ يَجِنِّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى رَقَبَتِهِ رِقَاعٌ تَخْفَقُ فيقول يارسول الله أغثني فأقول لا أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا قد أبلغتكَ لا أُلفِينَ أَحَدَكُمْ يَجِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى رَقَبَتِهِ صَامِتٌ فَيَقُولُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَعْثْنِي فَأَقُولُ لا أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا قَد أَبْلَغْتكَ. (بخاري، مسلم، بألفاظ مسلم)

হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন: একদিন রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন। সেই ভাষণে তিনি গনিমতের মালের (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) চুরি সংক্রান্ত বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পেশ করলেন। তারপর বললেন : আমি তোমাদের কাউকে কেয়ামতের দিন এমন অবস্থায় দেখতে চাই না যে, তার ঘাড়ের ওপর একটা উট উচ্চস্বরে চিৎকার করছে। আর সে বলছে হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে সাহায্য করুন। (অর্থাৎ আমার গুনাহর এই শোচনীয় পরিণতি থেকে আমাকে রক্ষা করুন।) তখন আমি বলবো, 'আমি তোমাকে একটুও সাহায্য করতে পারবো না। আমি তো তোমাকে দুনিয়ায় থাকতেই এ কথা জানিয়ে দিয়েছি। আমি তোমাদের কাউকে কেয়ামতের দিন এমন অবস্থায় দেখতে চাই না যে, তার ঘাড়ের ওপর একটা ঘোড়া চিহি চিহি করছে। আর সে বলছে : হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে সাহায্য করুন। আমি বলবো আমি তোমাকে কোনই সাহায্য করতে পারবো না। আমি তো তোমাকে দুনিয়ায় থাকতেই প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে এসেছি। আমি তোমাদের কাউকে কেয়ামতের দিন এমন অবস্থায় দেখতে চাই না যে, তার ঘাড়ের ওপর একটা ছাগল ভ্যা ভ্যা করছে। আর সে বলছে, হে রাসূলুল্লাহ, আমাকে সাহায্য করুন। আমি তাকে জবাব দেবো যে, আমি তোমার জন্য এখানে কিছুই করতে পারবো না। আমি তো তোমাকে দুনিয়ায় থাকতেই সমস্ত বিধি জানিয়ে দিয়েছি। আমি তোমাদের কাউকে কেয়ামতের দিন এমন অবস্থায় দেখতে চাই না যে তার ঘাড়ের ওপর একজন মানুষ চড়াও হয়ে বসে চিৎকার করছে। আর সে বলছে, হে রাসূলুল্লাহ, আমাকে সাহায্য করুন। আমি বলবো। আমি তোমাকে এখন কোন সাহায্য করতে পারবো না। আমি তো তোমাকে দুনিয়ায় থাকতেই প্রয়োজনীয় নির্দেশ পৌঁছে দিয়েছি। আমি তোমাদের কাউকে কেয়ামতের দিন এমন অবস্থায় দেখতে চাই না যে, তার ঘাড়ের ওপর কাপড়ের টুকরো উড়ছে। আর সে বলছে : হে রাসূলুল্লাহ, আমাকে সাহায্য করুন। আমি তখন বলবো যে, আমি তোমার জন্য এখন কিছুই করতে পারবো না। আমি তোমাকে দুনিয়ায় থাকতেই সাবধান করে এসেছি। আমি তোমাদের কাউকে কেয়ামতের দিন এ অবস্থায় দেখতে চাই না যে, তার ঘাড়ের ওপর সোনারূপা চাপানো রয়েছে এবং সে বলছে : হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে সাহায্য করুন। আমি তার জবাবে বলবো, আমি তোমার গুনাহর পরিণতিকে একটুও হঠাতে পারবো না। আমি তোমাকে দুনিয়ায় থাকতেই এ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় নির্দেশ পৌছিয়ে দিয়ে এসেছি। (বোখারী, মুসলিম)

পশুর কথা বলা ও কাপড়ের টুকরো উড়তে থাকা ইত্যাদির অর্থ হলো, গনিমতের মাল চুরির সংক্রান্ত এ সব অপকর্ম ও অপরাধ কেয়ামতের দিন লুকানো সম্ভব হবে না। প্রত্যেকটি পাপ চিৎকার করে করে বলতে থাকবে যে, সে অপরাধী । আর এটা শুধু গনিমতের মাল চুরির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং প্রত্যেক বড় বড় গুনাহর অবস্থা এ রকমই। আল্লাহ তায়ালা অমন ভয়ংকর পরিণতি থেকে প্রত্যেক মুসলমানকে রক্ষা করুন এবং খারাপ সময় আসার আগে তওবা করার তৌফিক দিন ।



******************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity. 

Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url