মা’আরেফুল কোরআন-১৫ || সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ২৮-২৯ || বাকারাহ ২৮-২৯ আয়াতের অর্থ ও তাফসীর ||






بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

سورة البقرة

সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ২৮-২৯


بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
کَیۡفَ تَکۡفُرُوۡنَ بِاللّٰهِ وَ کُنۡتُمۡ اَمۡوَاتًا فَاَحۡیَاکُمۡ ۚ ثُمَّ یُمِیۡتُکُمۡ ثُمَّ یُحۡیِیۡکُمۡ ثُمَّ اِلَیۡهِ تُرۡجَعُوۡنَ ﴿۲۸
 هُوَ الَّذِیۡ خَلَقَ لَکُمۡ مَّا فِی الۡاَرۡضِ جَمِیۡعًا ٭ ثُمَّ اسۡتَوٰۤی اِلَی السَّمَآءِ فَسَوّٰىهُنَّ سَبۡعَ سَمٰوٰتٍ ؕ وَ هُوَ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمٌ ﴿۲۹

সূরা আল-বাকারাহ ২৮-২৯নং আয়াতের অর্থ

(২৮) কেমন করে তোমরা আল্লাহ্র ব্যাপারে কুফরী অবলম্বন করছ ? অথচ তোমরা ছিলে নিষ্প্রাণ। অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে প্রাণ দান করেছেন আবার মৃত্যুদান করবেন। পুনরায় তোমাদেরকে জীবন দান করবেন। অতঃপর তাঁরই প্রতি প্রত্যাবর্তন করবে। (২৯) তিনিই সে সত্তা যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য—যা কিছু যমীনে রয়েছে সে সমস্ত। তারপর তিনি মনোসংযোগ করেছেন আকাশের প্রতি। বস্তুত তিনি তৈরী করেছেন সাত আসমান। আর আল্লাহ্ সববিষয়ে অবহিত।

সূরা আল-বাকারাহ ২৮-২৯নং আয়াতের তফসীরের সার-সংক্ষেপ

(আচ্ছা!) তোমরা কেমন করে আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার, (অর্থাৎ- তাঁর দয়া ও অনুগ্রহরাজির কথা ভুলে অন্যকে পূজ্য বলে মেনে নাও,) অথচ (একমাত্র তিনিই যে উপাসনা ও আরাধনার অধিকারী এ সম্পর্কে অজস্র জাজ্বল্যমান ও অকাট্য প্রমাণ রয়েছে। যথা- বীর্যে প্রাণ সঞ্চারের পূর্বে) তোমরা ছিলে নিষ্প্রাণ, অতঃপর তিনি তোমাদেরকে প্রাণ দান করলেন। পরে তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন। অতঃপর (কিয়ামতের দিন) তোমাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করবেন । অবশেষে (হিসাব-নিকাশের জন্য হাশর প্রান্তরে) তাঁরই সম্মুখে তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে। সে মহান সত্তাই ভূমণ্ডলে যা কিছু রয়েছে সে সব তোমাদের কল্যাণার্থে সৃষ্টি করেছেন। (এ কল্যাণ ব্যাপক। পানাহার সম্পর্কেও হতে পারে বা বেশভূষা সম্পর্কেও হতে পারে, অথবা বিয়ে-শাদী অথবা আত্মার পরিপুষ্টি ও সজীবতা সঞ্চার সম্পর্কেও হতে পারে। এর দ্বারা একথাও বোঝা গেল যে, মানুষের উপকারে আসতে পারে না, জগতে এমন কোন বস্তুই নেই। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, প্রত্যেক বস্তুর সব ধরনের ব্যবহারই ঠিক ও ধর্মসম্মত। মারাত্মক কোন বিষও মানুষের কোন উপকারে আসে না, এমন নয়। কিন্তু বিজ্ঞানীদের মতে তা খেয়ে ফেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ।) অতঃপর তিনি আসমানের (সৃষ্টি ও পরিপূর্ণতা বিধানের) প্রতি মনোনিবেশ করেন এবং (নিখুঁত ও সুবিন্যস্তভাবে) সাত (স্তরে) আসমান তৈরি করেন। আর তিনি তো সব বিষয়েই অবহিত।

আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়

সূরা আল-বাকারাহ ২৮-২৯ আয়াতসমূহের পূর্বাপর সম্পর্ক

পূর্ববর্তী আয়াতসমূহে আল্লাহ্ তা'আলার অস্তিত্ব, একত্ব এবং হুযুরের রিসালাত সম্পর্কে প্রকৃষ্ট প্রমাণাদি এবং সত্যবিমুখ বিরুদ্ধবাদীদের ভ্রান্ত ধারণার অপনোদন সংক্রান্ত আলোচনা ছিল। আলোচ্য আয়াত দ্বারা আল্লাহ্ তা'আলার করুণা ও অনুগ্রহসমূহ বর্ণনার পর বিস্ময় প্রকাশ করে বলা হয়েছে যে, আল্লাহর অগণিত দয়া ও সুখ-সম্পদে পরিবেষ্টিত থাকা সত্ত্বেও কেউ তাঁর বিরুদ্ধাচরণ ও অবাধ্যতা প্রদর্শনে কিভাবে লিপ্ত থাকতে পারে। এতে বিশেষ জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে, এসব প্রমাণাদি সম্পর্কে নির্দিষ্টভাবে চিন্তা করার জন্য প্রয়োজনীয় কষ্টটুকু স্বীকার করতে তারা যদি প্রস্তুত না থাকে, তবে অন্তত দাতার দানের স্বীকৃতি এবং তার প্রতি যথাযোগ্য ভক্তি-শ্রদ্ধা ও আনুগত্য প্রদর্শন করা তো প্রত্যেক সভ্য ও রুচিজ্ঞানসম্পন্ন মানুষের স্বাভাবিক ও অবশ্যকর্তব্য।

প্রথম আয়াতে সেসব বিশেষ বিশেষ অনুগ্রহাদির বর্ণনা রয়েছে, যা মানুষের মূল সত্তার সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং যা প্রত্যেক মানুষের অভ্যন্তরে উপস্থিত। যথা প্রথমাবস্থায় সে ছিল নিষ্প্রাণ অনুকণা, পরে তাতে আল্লাহ্ পাক প্রাণ সঞ্চার করেছেন।

দ্বিতীয় আয়াতে সেসব সাধারণ অনুগ্রহের বিবরণ রয়েছে, যদ্ধারা সমগ্র মানবজাতি ও গোটা সৃষ্টি যথাযথভাবে উপকৃত হয় এবং যা মানুষের বেঁচে থাকা ও টিকে থাকার জন্য একান্ত আবশ্যক। এসবের মধ্যে প্রথমে ভূমি ও তার উৎপন্ন ফসলের আলোচনা রয়েছে, যার সাথে মানুষের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। অতঃপর যে আসমানসমূহের সাথে ভূমির সঞ্জীবতা ও উৎপাদন ক্ষমতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত, সেগুলোর আলোচনা করা হয়েছে।

کَیۡفَ تَکۡفُرُوۡنَ بِاللّٰ (তোমরা আল্লাহ্র অস্তিত্বকে কেমন করে অস্বীকার করতে পার ?)রা যদিও সরাসরি আল্লাহ্র অস্তিত্বে অবিশ্বাসী নয়, কিন্তু আল্লাহ্র রাসূলের প্রতি অবিশ্বাস পোষণকে পরোক্ষভাবে আল্লাহর প্রতিই অবিশ্বাস বলে মনে করে তাদেরকে এরূপ সম্বোধন করা হয়েছে।

کُنۡتُمۡ اَمۡوَاتًا فَاَحۡیَاکُمۡ এখানে اَمۡوَاتًا শব্দটি مينـ এর বহুবচন। মৃত ও নিষ্প্রাণ বস্তুকে مينـ  বলা হয়। আয়াতের মর্ম এই যে, মানুষ তার সৃষ্টির মূল উৎস সম্পর্কে নিবিষ্ট মনে চিন্তা করলে বুঝতে পারবে যে, সৃষ্টির সূচনা ঐ নিষ্প্রাণ অণুকণাসমূহ থেকেই হয়েছে, যা আংশিকভাবে জড়বস্তুর আকৃতিতে, আংশিকভাবে প্রবহমান বস্তুর আকৃতিতে এবং আংশিকভাবে খাদ্যের আকৃতিতে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে। মহান আল্লাহ্ সেসব ইতস্তত বিক্ষিপ্ত নিষ্প্রাণ অণুকণাসমূহকে বিভিন্ন স্থান থেকে একত্র করেছেন। অবশেষে সেগুলোতে প্রাণ সংযোগ করে জীবন্ত মানুষে রূপান্তর করেছেন। এ হলো মানব সৃষ্টির সূচনাপর্বের কথা।

ثُمَّ یُمِیۡتُکُمۡ ثُمَّ یُحۡیِیۡکُمۡ (অনন্তর তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন আবার পুনরুজ্জীবিত করবেন।) অর্থাৎ—যিনি তোমাদের ইতস্তত বিক্ষিপ্ত অণুকণাগুলো সমন্বিত করে তাতে প্রাণ সঞ্চার করেছেন, তিনিই এ মরজগতে তোমাদের আয়ুর নির্ধারিত কাল পেরিয়ে গেলে তোমাদের জীবনশিখা নিভিয়ে দেবেন এবং এক নির্ধারিত সময়ের পর কিয়ামতের দিন তোমাদের শরীরের নিষ্প্রাণ বিক্ষিপ্ত কণাগুলোকে আবার সমন্বিত করে তোমাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করবেন।
প্রথম মৃত্যু হলো তোমাদের সৃষ্টিধারায় সূচনাপর্বের; নিষ্প্রাণ ও জড় অবস্থা যা থেকে আল্লাহ্ পাক তোমাদেরকে জীবন দান করেছেন। আর দ্বিতীয় মৃত্যু হলো মরজগতে মানুষের আয়ু শেষ হয়ে যাওয়াকালীন মৃত্যু। বস্তুত তৃতীয়বার জীবন লাভ হবে কিয়ামতের দিন ।

প্রথম মৃত্যু ও প্রথমবার জীবন লাভের মাঝে যেহেতু কোন দূরত্ব ছিল না, সেজন্য ف বর্ণ যোগ করে فَاَحۡیَاکُمۡ বলা হয়েছে। আর ইহলৌকিক জীবন ও মৃত্যুর মাঝে অনুরূপভাবে এ মৃত্যু ও কিয়ামত দিবসের পুনরুজ্জীবনের মাঝে যেহেতু বেশ দূরত্ব রয়েছে, সুতরাং সেখানে ছুম্মা (ثُمَّ) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে যার অর্থ সুদূর ভবিষ্যত। ثُمَّ اِلَیۡهِ تُرۡجَعُوۡنَ (অতঃপর তোমাদেরকে সে মহান সত্তার সমীপে ফিরিয়ে নেয়া হবে।) এর অর্থ হলো হিসাব নিকাশ ও কিয়ামতের সময় ।

এ আয়াতে আল্লাহ্ পাক তাঁর সেসব দয়া ও অনুগ্রহের বর্ণনা দিয়েছেন, মানুষের নিজস্ব সত্তার সাথে যার সম্পর্ক এবং যা যাবতীয় করুণা ও দয়ার মূল ভিত্তি। আর তা হলো মানুষের জীবন। ইহকালে ও পরকালে, ভূমণ্ডলে ও নভোমণ্ডলে আল্লাহ্ পাকের যেসব দয়া ও অনুগ্রহ রয়েছে, তা সবকিছুই এ জীবনের উপর নির্ভরশীল। জীবন না থাকলে আল্লাহ্র কোন অনুগ্রহের দ্বারাই উপকৃত হওয়া যায় না। কাজেই জীবন যে আল্লাহ্ পাকের দয়া তা একান্ত সহজবোধ্য ব্যাপার। কিন্তু এ আয়াতে মৃত্যুকেও আল্লাহ্ পাকের অনুগ্রহের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কারণ, এই পার্থিব মৃত্যু সে অনন্ত জীবনেরই প্রবেশদ্বার, যার পরে আর মৃত্যু নেই। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মৃত্যুও আল্লাহ্ পাকের অনুগ্রহবিশেষ।

মাসআলা: আলোচ্য আয়াত থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, যে ব্যক্তি রসুলে পাক (সা)-এর রিসালতের প্রতি এবং কোরআন যে আল্লাহর বাণী সে সম্পর্কে অবিশ্বাসী, সে দৃশ্যত আল্লাহ্র অস্তিত্বে ও মহত্ত্বে অবিশ্বাসী না হলেও আল্লাহ্ পাকের দরবারে সে আবিশ্বাসীদেরই তালিকাভুক্ত।

মৃত্যু ও পুনরুজ্জীবনের মধ্যবর্তী সময়

আলোচ্য আয়াতে ইহলৌকিক জীবন ও মৃত্যুর পরবর্তী এমন এক জীবনের বর্ণনা রয়েছে, যার সূচনা হবে কিয়ামতের দিন থেকে। কিন্তু যে কবরদেশের প্রশ্নোত্তর এবং পুরস্কার ও শান্তির কথা কোরআন পাকের বিভিন্ন আয়াত এবং বিশুদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এখানে তার কোন উল্লেখ নেই। মানুষ ইহকালে যে জীবন লাভ করে এবং পরকালে যে জীবন লাভ করবে, কবরের জীবন অনুরূপ কোন জীবন নয়, বরং তা কল্পনাময় স্বাপ্নিক জীবনের মতই এক মধ্যবর্তী অবস্থা। একে ইহলোকিক জীবনের পরিসমাপ্তি এবং পারলৌকিক জীবনের প্রারম্ভও বলা যেতে পারে। সুতরাং এটি এমন কোন স্বতন্ত্র জীবন নয়, পৃথকভাবে যার আলোচনা করার প্রয়োজন থাকতে পারে ।
هُوَ الَّذِیۡ خَلَقَ لَکُمۡ مَّا فِی الۡاَرۡضِ جَمِیۡعًا (তিনিই সেই মহান আল্লাহ্ যিনি তোমাদের উপকারাথ পৃথিবীর যাবতীয় বস্তু সৃষ্টি করেছেন।) এখানে এমন এক সাধারণ ও ব্যাপক অনুগ্রহের বর্ণনা দেয়া হয়েছে, যা শুধু মানুষের জন্য সীমাবদ্ধ নয়, বরং সমগ্র প্রাণিজগত সমভাবে এর দ্বারা উপকৃত। এ জগতে মানুষ যত অনুগ্রহই লাভ করেছে বা করতে পারে সংক্ষেপে তা এই একটি শব্দের মাধ্যমে ব্যক্ত করা হয়েছে। কেননা, মানুষের আহার-বিহার, পোশাক-পরিচ্ছদ, ওষুধ-পত্র, বসবাস ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় উপকরণ এ মাটি থেকেই উৎপন্ন ও সংগৃহীত হয়ে থাকে।

জগতের প্রত্যেক বস্তুই মানবের উপকারার্থ সৃষ্ট 

বিশ্বের সব কিছুই যে মানুষের কল্যাণের উদ্দেশ্যে সৃষ্ট, আলোচ্য আয়াতে এ তথ্যের প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে। এর দ্বারা বোঝা যায় যে, পৃথিবীতে এমন কোন বন্ধু নেই, যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানুষের উপকার সাধন করে না—চাই সে উপকার ইহলৌকিক হোক বা পরকাল সম্পর্কিত উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণ সংক্রান্ত হোক। অনেক জিনিস সরাসরি মানুষের আহার ও ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয় বলে সেগুলোর উপকার সহজেই অনুধাবনযোগ্য। আবার এমনও অগণিত বস্তু রয়েছে, যার অবদান উপকারিতা মানুষ অলক্ষ্যে ভোগ করে যাচ্ছে, অথচ তা অনুভব করতে পারছে না। এমনকি বিষাক্ত দ্রব্যাদি, বিষধর জীবজন্তু প্রভৃতি যেসব বস্তু দৃশ্যত মানুষের পক্ষে ক্ষতিকর বলে মনে করা হয়, গভীরভাবে চিন্তা করলে বোঝা যায়, সেগুলোও কোন-না কোন দিক দিয়ে মানুষের জন্য কল্যাণকরও বটে। যেসব জন্তু একদিকে মানুষের জন্য হারাম, অপরদিকে তদ্দারা তারা উপকৃতও হয়ে চলেছে।

প্রখ্যাত সাধক আরিফ বিল্লাহ্ ইবনে আতা এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে এরশাদ করেন যে, আল্লাহ্ পাক সারা বিশ্বকে এ উদ্দেশ্যেই সৃষ্টি করেছেন যেন জগতের যাবতীয় বস্তু তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত থাকে; আর তোমরা যেন সর্বতোভাবে আল্লাহর আরাধনায় নিয়োজিত থাক। তবেই সে সব বস্তু তোমাদের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তোমরা তা নিঃসন্দেহে লাভ করবে। সুতরাং বুদ্ধিমানের কাজ হবে সে সব বন্ধুর অন্বেষণে ও সাধন চিন্তায় নিয়োজিত থেকে সে মহান সত্তাকে ভুলে না বসা, যিনি এগুলোর একক স্রষ্টা।

বস্তুজগতে দ্রব্যাদির ব্যবহার মূলগতভাবে বৈধ, না নিষিদ্ধ : কোন কোন মনীষী এ আয়াত দ্বারা প্রমাণ করতে প্রয়াস পেয়েছেন যে, শরীয়ত যেসব বন্ধুর ব্যবহার নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেছে, সেগুলো ছাড়া মানুষের জন্য যাবতীয় দ্রব্যের ব্যবহার মূলগতভাবে বৈধ ও শরীয়ত-সিদ্ধ। কেননা, এ উদ্দেশ্যেই সেগুলোকে সৃষ্টি করা হয়েছে। সুতরাং কোন বস্তুর ব্যবহার কোরআন ও সুন্নাহর মাধ্যমে হারাম বলে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তা হালাল বলেই বিবেচিত হবে।

অপরপক্ষে কোন কোন বিশেষজ্ঞের মতে বস্তুজগতের সৃষ্টি যে মানুষের উপকারার্থ হয়েছে, তা থেকে প্রমাণিত হয় না যে, সেগুলোর ব্যবহারও তাদের জন্য হালাল (বৈধ)। জগতের যাবতীয় বস্তু মূলগতভাবে হারাম বা নিষিদ্ধ। সুতরাং কোরআন ও সুন্নাহর মাধ্যমে কোন বন্ধুর ব্যবহার বৈধ বলে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তা নিষিদ্ধ বা হারাম বলেই বিবেচিত হবে।

কোন কোন বিশেষজ্ঞ এ সম্পর্কে কোন মতামত প্রকাশে বিরত থাকেন। আল্লামা ইবনে হাইয়্যান (র) তফসীরে বাহরে মুহীতে বর্ণনা করেছেন যে, উল্লিখিত কোন মতের পক্ষেই এ আয়াত প্রমাণ হিসাবে পেশ করা চলে না। কারণ, خَلَقَ لَکُمۡ বাক্যে (لۡامۡ) 'লাম' বর্ণটি 'কারণ' অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ, এসব বন্ধু তোমাদের কারণে সৃষ্টি করা হয়েছে। সুতরাং আলোচ্য আয়াতকে কোন বিষয়ের সিদ্ধতা বা নিষিদ্ধতার দলীলরূপে দাঁড় করানো যায় না। বরং কোরআন ও সুন্নাহর মাধ্যমে যেসব বিষয় সম্পর্কে স্বতন্ত্রভাবে হালাল ও হারামের নির্দেশাবলী বর্ণনা করা হয়েছে, সেগুলোরই অনুসরণ করা আবশ্যক ।
উল্লিখিত আয়াতে ثُمَّ শব্দের দ্বারা পূর্বে পৃথিবী ও পরে আকাশ সৃষ্টি করা হয়েছে বলে বর্ণনা করা হয়েছে এবং এটাই সঠিক। সূরা আল্লাযি'আতে বর্ণিত وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَلِكَ دَحَاهاَ (অতঃপর তিনি ভূমণ্ডল বিস্তীর্ণ করেছেন) আয়াত থেকে পৃথিবীর সৃষ্টি আকাশের পরে হয়েছে বলে বোঝা যায় না। বরং এর অর্থ ভূমণ্ডলের বিন্যাস ও পরিপূর্ণতা সাধন এবং তা থেকে নানাবিধ দ্রব্য-সামগ্রীর উৎপাদন সংক্রান্ত বিস্তারিত কাজ নভোমণ্ডল সৃষ্টির পরেই সম্পন্ন হয়েছে। অবশ্য মূল পৃথিবীর সৃষ্টি আকাশ সৃষ্টির পূর্বেই সাধিত হয়েছিল।

আলোচ্য আয়াতে আকাশের সংখ্যা সাত বলে প্রমাণিত। এতে বোঝা যায় যে, জ্যোতির্বিদগণের মতানুসারে আকাশের সংখ্যা ৯ হওয়ার তথ্য সম্পূর্ণ ভুল, অমূলক ও নিছক কল্পনাপ্রসূত ।






*******************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.

Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url