নামাযের ফযীলত বা নামাযের গুরুত্ব || আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় ইবাদত নামায ||



ইমাম আবু হামেদ মুহাম্মদ আল-গাযযালী (রহঃ) ছিলেন একজন যুগস্রেষ্ট সাধক ও আলেম। ইসলামের খেদমতে তাঁর বয়ান এবং তাঁর লেখা কিতাবগুলোর মাঝে এমন একটি যাদুকরী প্রভাব লক্ষ্য করা যায় যা অন্য কারো লেখায় বা বয়ানে এতটা প্রভাব সৃষ্টি করে না। তাঁর লেখা কিতাবগুলো পড়ে অতি সহজেই প্রতিটি পাঠকের হৃদয় বিগলিত হয়ে উঠে। “নামাযের গুরুত্ব ও ফযীলত” শীর্ষক এই প্রবন্ধখানা ইমাম গাযযালীর লেখা “মুকাশাফাতুল কুলূব” বা “আত্মার আলোকমণি” কিতাবের অনুস্মরণে লেখা হয়েছে।


নামাযের গুরুত্ব ও ফযীলত


আল্লাহ্ তা'আলা বলেন :  

اِنَّ الصَّلوةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابٌ مَوْقُوت

“নিশ্চয় মুমিনদের উপর নির্ধারিত সময়ে নামায আদায় করা ফরয।” (নিসা : ১০৩ )


রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : “পাঁচ ওয়াক্ত নামায আল্লাহ্ তা'আলা বান্দার উপর ফরয করেছেন, যে ব্যক্তি সেগুলোর হক আদায় করবে এবং হাল্‌কা মনে করে বরবাদ করবে না, তার জন্য আল্লাহর নিকট প্রতিশ্রুতি রয়েছে যে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর যে তা না করবে, তার জন্য আল্লাহর নিকট কোন প্ৰতিশ্ৰুতি নাই। ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দিতে পারেন আর ইচ্ছা করলে তাকে বেহেশতেও প্রবেশ করাতে পারেন।"

নামাযের হেফাযতকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে

ইবনে মাজাহ্ শরীফে বর্ণিত, আল্লাহ্ তা'আলা বলেন :

افْتَرَضَتْ عَلَى أُمِّتِكَ خَمْسَ صَلَواتِ وعهدت عِندِى عهداانَّ مَن حَافَظَ عَلَيْهِنَّ لِوَقْتِهِنَّ الخَلتُهُ الْجَنَّةَ وَمَن لَّمْ يُحَافِظُ عَلَيهِنَّ فَلَا عَهْدَ لَهُ عِنْدِي

“আমি তোমার উম্মতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছি এবং আমি এই অঙ্গীকার নিয়েছি, যে ব্যক্তি নির্ধারিত সময়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়বে, আমি তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাবো। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি নামাযের হেফাযত করবে না, তার নিরাপত্তা সম্পর্কে আমার কোন দায়িত্ব নাই।'


হাদীস শরীফে আরও বর্ণিত হয়েছে, 'যে ব্যক্তি নামাযের ফরযিয়ত ও অপরিহার্যতা সম্পর্কে পরিপক্ক একীন সহকারে তা আদায় করবে, সে বেহেশত লাভ করবে।

নামায মানুষের পাপসমূহ ধুয়ে পরিস্কার করে দেয়

রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : 'পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের উদাহরণ হচ্ছে এরূপ যে, তোমাদের কারও বাড়ীর সম্মুখে যদি একটি স্বচ্ছ নহর থাকে এবং তাতে প্রচুর পানিও থাকে, সেখানে দৈনিক পাঁচবার যদি সে গোসল করে, তবে কি তার শরীরে সামান্যতম ময়লাও অবশিষ্ট থাকবে? সাহাবায়ে কেরাম বললেনঃ না, সামান্যতম ময়লাও অবশিষ্ট থাকবে না। হুযুর বললেন : পাঁচ ওয়াক্ত নামাযও ঠিক তদ্রূপ ; অর্থাৎ পানির দ্বারা যেমন শরীরের ময়লা দূর হয়ে যায়, নামাযের দ্বারাও ঠিক তেমনি মানুষ পাপের ময়লা হতে স্বচ্ছ-পবিত্র হয়ে যায়।

হাদীস শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে : 'নামাজ এক ওয়াক্ত থেকে অপর ওয়াক্তের মধ্যবর্তী সময়ে কৃত পাপসমুহের জন্য কাফ্ফারা স্বরূপ হয়; যদি কবীরা গুনাহ্ হতে বেঁচে থাকা হয়। 

যেমন আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেছেন: 

إنَّ الحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ

“নিশ্চয় নেক আমল দূর করে দেয় পাপসমূহকে।" (হুদ : ১১৪ ) 

উপরোক্ত আয়াতে يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ শব্দের মর্ম হলো, নেক আমল অশুভ কাজের পঙ্কিলতা এমনভাবে দূর করে দেয়, যেন ইতিপূর্বে তা মোটেই ছিল না।

বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য হাদীসগ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, এক ব্যক্তি জনৈকা স্ত্রীলোককে চুম্বন করেছিল, অতঃপর সে এসে হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ বিষয়ে সংবাদ দিল, তখন আল্লাহ্ তা'আলা এই আয়াত নাযিল করেন:

واقِدِ الصَّلوةَ طَرَفَ النَّهَارِ  َو زُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ.


(নামায কায়েম কর দিনের দুই অংশে এবং রাত্রের কিছু অংশে। নিশ্চয় নেক আমল দূর করে দেয় পাপসমূহকে') তখন সে ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ্। এই আয়াতের বিষয়বস্তু কি আমার জন্য বিশেষভাবে? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন না, এ বিষয় আমার উম্মতের সকলের জন্যই ব্যাপক।

হদ্দের শরয়ী দণ্ডের শাস্তি মওকুফ

হযরত আবূ উমামাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাজির হয়ে আরজ করলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ্। আমি হদ্দের শরয়ী দণ্ডের উপযুক্ত) কাজ করেছি, সুতরাং আমার উপর শাস্তি প্রয়োগ করুন। একথা সে একবার কি দুইবার বলেছে। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করলেন না। এমন সময় নামাযের ওয়াক্ত হয়ে গেল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শেষ করে জিজ্ঞাসা করলেন, লোকটি কোথায়? সে দাঁড়িয়ে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি হাজির। হযর বললেনঃ তুমি কি পূর্ণাঙ্গ উযু করে আমাদের সাথে নামায আদায় কর নাই? লোকটি বললো : হাঁ, আদায় করেছি। হুযূর বললেনঃ 'তোমার কৃত গুনাহ্ মাফ হয়ে গেছে ; মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় তুমি যেরূপ নিষ্পাপ ছিলে, এখন তুমি সেরূপ নিষ্পাপ'। অতঃপর এই আয়াতখানি নাযিল হয়ঃ 'নামায কায়েম কর দিনের দুই অংশে এবং রাতের কিছু অংশে। নেক আমল গুনাহসমূহ মাফ করিয়ে দেয়।'

মুমীন ও মোনাফেকের পার্থক্য সৃষ্টিকারী নামায

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: 'আমাদের এবং মুনাফেকদের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে যায় ফজর ও ইশার জামাতে উপস্থিতির দ্বারা; তারা এ দুই ওয়াক্তের জামাতে উপস্থিত হয় না। তিনি আরও ইরশাদ করেনঃ 'নামায দ্বীনের খুঁটি বা শিকড়, যে ব্যক্তি নামায পরিত্যাগ করলো, সে দ্বীনকে ধ্বংস করলো।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, সর্বোত্তম কাজ কোনটি? তিনি উত্তর করলেনঃ ঠিক সময়ে নামায পড়া।


হাদীস শরীফে আরও বর্ণিত হয়েছে: 'যে ব্যক্তি পরিপূর্ণ পবিত্রতা ও উযূ সহকারে সঠিক সময়ে পাবন্দির সাথে নামায আদায় করবে, কেয়ামতের দিন সেই নামায তার জন্য জ্যোতিঃ, প্রমাণ ও মুক্তিস্বরূপ হবে। আর যে ব্যক্তি নামাযের হেফাযত করবে না, কেয়ামতের দিন তার হাশর ফেরাউন ও হামানের সাথে হবে।'

আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় ইবাদত নামায

হুযুর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেনঃ 'নামায জান্নাতের চাবিকাঠি।” তিনি আরও বলেন: 'তওহীদ বা আল্লাহর একত্বের পর সর্বাপেক্ষা প্রিয় ইবাদত হলো নামায। নামাযের চেয়ে আরও অধিক শ্রেষ্ঠ কোন ইবাদত যদি হতো, তবে ফেরেশতাগণও তাতে শরীক হতেন। অথচ, ফেরেশ্তাগণের অনেকেই রুকু অবস্থায়, অনেকেই সেজদাবস্থায়, অনেকেই দাঁড়ানো অবস্থায় এবং অনেকেই বসা অবস্থায় ইবাদতরত রয়েছেন।

নামাযীর জন্য পাঁচটি পুরস্কার

কোন কোন আলেম বলেছেন, হাদীসে বর্ণিত হয়েছে :

منْ حَافَظَ عَلَى الصَّلَاةِ اكْرَمَهُ اللَّهُ بِخَمْسِ خِصَالٍ يَرْفَعُ عَنْهُ ضَيقَ الْعَيْشِ وَعَذَابَ الْقَبْرِ وَيُعْطِيهِ اللهُ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ .ويمر على الصراط كالبرق ويدخُلُ الْجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ .

“যে ব্যক্তি যাবতীয় শর্তসহ যথারীতি নামায আদায় করবে, আল্লাহ্ তা'আলা তাকে পাঁচটি পুরস্কারে ভূষিত করবেন। যথা :- এক, রিযিকের অভাব দূর করে দিবেন। দুই, কবরের আযাব থেকে মুক্ত রাখবেন। তিন, আমলনামা ডান হাতে দিবেন। চার, বিদ্যুৎগতিতে পুলসিরাত পার হয়ে যাবে। পাঁচ, বিনা হিসাবে বেহেশতে প্রবেশ করবে।'

ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগকারী কুফরীতে লিপ্ত

রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:


ليس بين العبد وبينَ الْكُفْرِ إِلَّا تَرْلُ الصَّلوةِ

'বান্দা ও কুফরীর মধ্যে (যোগসেতু) হলো নামায ত্যাগ করা।' (অর্থাৎ নামায ত্যাগ করলে বান্দার কুফরীতে পতিত হতে বিলম্ব থাকে না)

অপর এক হাদীসে ইরশাদ হয়েছে: আমাদের ও তাদের (মুনাফিকদের মধ্যে যে অঙ্গীকার রয়েছে, তা হলো নামায। সুতরাং যে নামায ত্যাগ করবে, সে (প্রকাশ্যে) কাফের হয়ে যাবে।

হাদীস শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে:

مَنْ تَرَكَ الصَّلوةَ مُتَعَمِّداً فَقَدْ كَفَرَ جِهَارًا

“যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করলো, সে প্রকাশ্যে কুফরী করলো।'

হযরত উবাদাহ্ ইবনে ছামেত (রাযিঃ) বলেন : 'আমার প্রাণপ্রিয় দোস্ত হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা আমাকে সাতটি নছীহত করেছেন। তন্মধ্যে চারটি এই-

এক. আল্লাহর সাথে কাউকে বা কোন কিছুকে শরীক করো না, এমনকি যদি তোমাকে কেটে টুকরা টুকরাও করে ফেলা হয় বা আগুনে নিক্ষেপ করা হয় বা শুলিতে চড়ানো হয়। 

দুই, স্বেচ্ছায় কখনও নামায ত্যাগ করো না। কারণ, এরূপ ব্যক্তি দ্বীন ও মিল্লাতের গণ্ডিবহির্ভূত হয়ে যায়। 

তিন, আল্লাহর না-ফরমানী ও পাপাচারে লিপ্ত হয়ো না। কেননা, পাপকর্ম আল্লাহ্ তা'আলার রোষ ও অসন্তুষ্টির কারণ হয়। 

চার, মদ্যপান করো না। কারণ, মদ্যপান সর্ববিধ গুনাহের শিকড়।

তিরমিযী শরীফে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ যাবতীয় আমলের মধ্যে একমাত্র নামায ব্যতীত অন্য কোন আমল ত্যাগ করাকে কুফরী বলে মনে করতেন না ।'

হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেন: 'কুফর ও ঈমানের মধ্যে পার্থক্য হয় নামাযের দ্বারা; সুতরাং যে নামায ত্যাগ করলো, সে শিরক করলো।

যার নামায নাই তার দ্বীন নাই

অপর এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, “যে নামায ত্যাগ করলো, ইসলামে তার কোন অংশ নাই। আর যার উযূ সঠিক নয়, তার নামাযও দুরুস্ত নয়।”


ত্ববরানী শরীফে বর্ণিত হয়েছে, যার আমানতদারী নাই, তার পূর্ণ ঈমান নাই। আর যার নামায নাই, তার দ্বীন বলতে কিছু নাই। বস্তুতঃ দ্বীনের জন্য নামাযের গুরুত্ব এমন, যেমন শরীরের জন্য মাথার গুরুত্ব।

হযরত আবুদ্দারদা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : 'রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নছীহত করেছেন : আল্লাহর সাথে শরীক করো না, এমনকি যদি তোমাকে কেটে খণ্ড-বিখণ্ড করে দেওয়া হয় বা আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বা শূলিতে চড়ানো হয়। ফরয নামায কখনও ত্যাগ করো না; যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করবে, তার বিষয়ে আমার কোন দায়িত্ব থাকবে না। মদ্যপান করো না, কারণ, তা সকল পাপাচারের মূল।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তার চক্ষুর দৃষ্টিশক্তি যখন হ্রাস পেয়েছিল, তখন কেউ তাকে বলেছিল, আপনি কয়েকদিনের জন্য নামায থেকে বিরত থাকলে আমরা আপনার চিকিৎসা করে সেরে নিতাম। হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বললেন : 'যে নামায ত্যাগ করবে, কেয়ামতের দিন সে আল্লাহর সঙ্গে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, তিনি তার উপর খুবই রাগান্বিত থাকবেন।”

স্বেচ্ছায় নামায ত্যাগ করা কুফর

হুযূর আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় নামায ত্যাগ করলো, সে কুফর করলো।' অর্থাৎ ঈমানের বাঁধ খুলে যাওয়ার কারণে বা স্তম্ভ ধ্বসে যাওয়ার কারণে কুফরের অতি নিকটবর্তী হয়ে গেল।”

হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেনঃ 'যে ব্যক্তি ইচ্ছাপূর্বক নামায ত্যাগ করে, তার থেকে আল্লাহর রাসূলের নিরাপত্তা উঠে যায়।'

উত্তমরূপে উযু করে নামাযের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হওয়ার ফজিলত

হযরত আবু হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) বলেনঃ 'যে ব্যক্তি উত্তমরূপে উযু করে নামাযের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত তার অন্তরে নামাযের ইচ্ছা বিদ্যমান থাকে, প্রতি কদমে তার আমলনামায় একটি নেকী লেখা হয় এবং পরবর্তী কলমে একটি গুনাহ্ মোচন করা হয়। ইকামতের আওয়ায শোনার পর নামাযের দিকে অগ্রসর না হয়ে পশ্চাদপদ হওয়া তোমাদের মোটেই উচিত নয়। তোমাদের মধ্যে যার গৃহ অধিক দূরত্বে আল্লাহর কাছে তার পুরস্কারও অধিক। কারণ মসজিদ পর্যন্ত পৌঁছতে তার পদচারণার সংখ্যা বেশী।


হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ ‘গোপন একাকীত্বে আল্লাহকে সেজদা করার চাইতে অধিক নৈকট্য দানকারী আর কোন ইবাদত নাই।”

তিনি আরও ইরশাদ করেন: যে কোন মুসলমান আল্লাহকে যখন সেজদা করে, আল্লাহ্ তা'আলা তখন তার একটি দরজা বুলন্দ করেন এবং একটি গুনাহ্ মাফ করেন। '

নামায হবে শাফাআত লাভের কারণ

বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আরজ করেছে, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি আল্লাহর কাছে দো'আ করুন, যাতে আমি হাশরের ময়দানে আপনার শাফাআত লাভ করতে পারি এবং জান্নাতে আপনার সঙ্গে থাকতে পারি। আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বললেন: ‘এ ব্যাপারে তুমি আমাকে বেশী বেশী সেজদার (নামাযের) মাধ্যমে সহযোগিতা করতে থাক।'

এক রেওয়ায়াতে বর্ণিত হয়েছে, বান্দা আল্লাহ্ তা'আলার অধিকতর নিকটতম হয় তখন, যখন সে সেজদায় থাকে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:

وَاسْجُدْ وَاقْتَرِب 

“আপনি সেজদা করুন এবং আমার নৈকট্য লাভ করুন।" (আলাক : ১৯)

আল্লাহ্ তা'আলা বলেন :

سيماهم في وُجُوهِهِمْ مِنْ أَثَرِ السُّجُودِ

“তাদের আলামত হচ্ছে, তাদের মুখমণ্ডলে সেজদার চিহ্ন থাকবে।" (ফাতহ : ২৯)

এক ব্যাখ্যা অনুযায়ী উক্ত চিহ্ন দ্বারা নামাযে খুশু-খুযুর নুরকে বুঝানো হয়েছে। কারণ, আন্তরিক খুশু-খুযুর প্রতিক্রিয়া বাহ্যিক অবয়বেও প্রকাশ পায়। অপর এক ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, উক্ত আয়াতে সেজদার সময় মাটিতে কপাল লাগানোর বিষয় বুঝানো হয়েছে। আরও এক ব্যাখ্যা অনুযায়ী উক্ত আয়াতে সেই নূর ও ঔজ্জ্বল্যকে বুঝানো হয়েছে যা কেয়ামতের দিন নামাযী ব্যক্তির চেহারায় তার উযূর কারণে প্রকাশ পাবে।

ইবলীস শয়তানের কান্না

হুযুর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: 'পবিত্র কুরআনে সেজদার আয়াত তেলাওয়াত করার পর আদম-সন্তান যখন সেজদা আদায় করে, তখন ইবলীস শয়তান অদূরে বসে কাঁদতে থাকে আর বলতে থাকেঃ হায় আফসুস! আদম সন্তানকে সেজদার হুকুম করা হয়েছে এবং তৎক্ষণাৎ সে তা পালন করেছে। আর আমাকে সেজদার হুকুম করা হয়েছিল, কিন্তু আমি তা পালন করতে অস্বীকার করেছি। তাই পরিণামে এখন আমার জন্য দোযখ ছাড়া আর কিছু নাই। হযরত আলী ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন: 'ইবলীস প্রতিদিন এক হাজার বার সেজদা করতো, ফলে তার উপাধি হয়েছিল 'সাজ্জাদ' অর্থাৎ অধিক সেজদাকারী।'

বর্ণিত আছে, হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয (রহঃ) সরাসরি মাটির উপর সেজদা করতেন।


ইউসূফ ইবনে আবাত (রহঃ) বলেন : “ওহে যুবকেরা! সুস্থ-সবল থাকতে অতি শীঘ্র কিছু করে নাও। বর্তমানে কেবল এক ব্যক্তিই এমন রয়েছেন, যাকে আমি ঈর্ষা করি ; তিনি পূর্ণাঙ্গরূপে রুকু-সিজদাহ্ করেন। এখন দুরত্বের কারণে তাঁর সাথে আমার মোলাকাত হয় না।”

হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রহঃ) বলেনঃ এ জগতের কোন বস্তু বা বিষয়ের জন্য আমার আদৌ কোন আফসুস হয় না; কিন্তু কখনও যদি আমার একটি সেজদা কম হয়ে যায়, তখন আফসুসের কোন সীমা থাকে না।

হযরত উকবা ইবনে মুসলিম (রহঃ) বলেন : 'আল্লাহর সাক্ষাৎ কামনা করার গুণটি আল্লাহ্ তা'আলার কাছে খুবই প্রিয়। বান্দা আল্লাহর সর্বাধিক কাছাকাছি হয় তখন, যখন সে সেজদায় থাকে।”

হযরত আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) বলেন : 'সেজদার সময় বান্দা আল্লাহর নিকটতম সান্নিধ্যে পৌঁছে যায়। সুতরাং এ সময়টিতে অন্তর ভরে খুব দো'আ করে নেওয়া চাই।'

(১) ওহী অথবা অন্য কোনরূপে হুযুর জ্ঞাত হয়েছিলেন যে, তার অপরাধ কি ছিল। তাই, সে সম্পর্কে তিনি কিছু জিজ্ঞাসা করেন নাই। তার সে অপরাধ অকুতভাবে হদ্দের যোগ্য ছিল না। যদিও সে মনে করেছিল তা হন্দের যোগ্য। তাই, নামাযের দ্বারা তা মাফ হয়ে গেল।




****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url