মা’আরেফুল কোরআন - ২৮ || সূরা আল-বাকারাহ ৬৮-৭৪নং আয়াতের অর্থ ও তাফসীর ||





بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

سورة البقرة

সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ৬৮-৭৪


সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ৬৮-৭১

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

 قَالُوا ادۡعُ لَنَا رَبَّکَ یُبَیِّنۡ لَّنَا مَا هِیَ ؕ قَالَ اِنَّهٗ یَقُوۡلُ اِنَّهَا بَقَرَۃٌ لَّا فَارِضٌ وَّ لَا بِکۡرٌ ؕ عَوَانٌۢ بَیۡنَ ذٰلِکَ ؕ فَافۡعَلُوۡا مَا تُؤۡمَرُوۡنَ ﴿۶۸
قَالُوا ادۡعُ لَنَا رَبَّکَ یُبَیِّنۡ لَّنَا مَا لَوۡنُهَا ؕ قَالَ اِنَّهٗ یَقُوۡلُ اِنَّهَا بَقَرَۃٌ صَفۡرَآءُ ۙ فَاقِعٌ لَّوۡنُهَا تَسُرُّ النّٰظِرِیۡنَ ﴿۶۹
قَالُوا ادۡعُ لَنَا رَبَّکَ یُبَیِّنۡ لَّنَا مَا هِیَ ۙ اِنَّ الۡبَقَرَ تَشٰبَهَ عَلَیۡنَا ؕ وَ اِنَّاۤ اِنۡ شَآءَ اللّٰهُ لَمُهۡتَدُوۡنَ ﴿۷۰
قَالَ اِنَّهٗ یَقُوۡلُ اِنَّهَا بَقَرَۃٌ لَّا ذَلُوۡلٌ تُثِیۡرُ الۡاَرۡضَ وَ لَا تَسۡقِی الۡحَرۡثَ ۚ مُسَلَّمَۃٌ لَّا شِیَۃَ فِیۡهَا ؕ قَالُوا الۡـٰٔنَ جِئۡتَ بِالۡحَقِّ ؕ فَذَبَحُوۡهَا وَ مَا کَادُوۡا یَفۡعَلُوۡنَ ﴿۷۱

সূরা আল-বাকারাহ ৬৮-৭১নং আয়াতের অর্থ

(৬৮) তারা বলল, তুমি তোমার পালনকর্তার কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা কর, যেন গাভী, যা বৃদ্ধ নয় এবং কুমারীও নয়—বার্ধক্য ও যৌবনের মাঝামাঝি বয়সের। এখন আদিষ্ট কাজ করে ফেল। (৬৯) তারা বলল, তোমার পালনকর্তার কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা কর যে, তার রং কিরূপ হবে ? মূসা (আ) বললেন, তিনি বলেছেন যে, গাঢ় পীতবর্ণের গাভী—যা দর্শকদের আনন্দ দান করে। (৭০) তারা বলল, তোমার প্রভুর কাছে প্রার্থনা কর—তিনি বলে দিন যে, সেটা কিরূপ ? কেননা, গরু আমাদের কাছে সাদৃশ্যশীল মনে হয়। ইন্‌শাআল্লাহ্ এবার আমরা অবশ্যই পথ প্রাপ্ত হব। (৭১) মূসা (আ) বললেন, “তিনি বলেন যে, এ গাভী ভূকর্ষণ ও পানি সেচের শ্রমে অভ্যন্ত নয় হবে নিষ্কলঙ্ক, নিখুঁত। তারা বলল, এবার সঠিক তথ্য এনেছ। অতঃপর তারা সেটা জবাই করল, অথচ জবাই করবে বলে মনে হচ্ছিল না।

সূরা আল-বাকারাহ ৬৮-৭১ নং আয়াতের তফসীরের সার-সংক্ষেপ

তারা বলতে লাগলঃ আপনি স্বীয় প্রভুর কাছে আমাদের জন্যে প্রার্থনা করুন। তিনি যেন বলে দেন যে, গরুটির গুণাবলী কি হবে ? মূসা (আ) বললেন, প্রভু (আমাদের প্রার্থনার প্রত্যুত্তরে) বলেন যে, গরুটি না বৃদ্ধ হবে, না শাবক, বরং উভয় বয়সের মাঝামাঝি। সুতরাং এখন (বেশি বাদানুবাদ না করে) যা আদেশ করা হয়েছে, তা করে ফেল। তারা বলতে লাগল (আরও একটি) প্রার্থনা করুন যে, ওর রং কিরূপ হবে, তিনি (যেন তাও) বলে দেন। মূসা (আ) বললেন, (এ সম্পর্কে) আল্লাহ্ বলেন যে, গরুটি হবে পীত বর্ণের। এর রং এত গাঢ় হবে যে, দর্শকরা আনন্দে অভিভূত হয়ে পড়বে। তারা বলতে লাগলঃ (এবার) আমাদের জন্যে আরো একটা প্রার্থনা করুন যে, তিনি প্রথমবারের প্রশ্নের উত্তর আরও স্পষ্ট করে বলে দিন যে, ওর কি গুণাবলী হবে ? কেননা, গরু সম্পর্কে আমাদের মনে (কিছু) সন্দেহ আছে (যে, এটা সাধারণ গরু, না অত্যাশ্চর্য ধরনের—যাতে হত্যাকারী অনুসন্ধানের বিশেষ কোন চিহ্ন থাকবে)। ইনশাআল্লাহ আমরা অবশ্যই (এবার) ঠিক ঠিক বুঝে নেব। মূসা (আ) বললেন, আল্লাহ্ তা’আলা বলেন যে, এটা কোন অত্যাশ্চর্য গরু নয়; বরং সাধারণ গরুই হবে। তবে উৎকৃষ্ট হওয়া চাই। উল্লিখিত গুণাবলীসহ একে এমনও হতে হবে যে, একে হালচাষে জোড়া হয়নি এবং (কুয়ায় জুড়ে) শস্যক্ষেত্রে সেচের কাজও করা হয়নি (মোটকথা) যাবতীয় দোষমুক্ত সুস্থকায় এবং এতে (কোন প্রকার) খুঁত যেন না থাকে। (একথা শুনে) তারা বলতে লাগল, (হ্যাঁ) এবার আপনি পূর্ণ (এবং পরিষ্কার) কথা বলেছেন। ( অবশেষে তারা গরু খুঁজে কিনে আনল) অতঃপর তারা তাকে জবাই করল। কিন্তু (বাহ্যিক অবস্থা দৃষ্টে) জবাই করবে বলে মনে হচ্ছিল না।

হাদীসে বর্ণিত আছে, বনী-ইসরাঈল এসব বাদানুবাদে প্রবৃত্ত না হলে এতসব শর্তও আরোপিত হতো না। বরং যে কোন গরু জবাই করে দিলেই যথেষ্ট হতো।

মৃত মানুষকে জীবিত করার ঘটনা

(স্মরণ কর) যখন তোমাদের একজন অন্যজনকে হত্যা করল, অতঃপর (নিজের সাফাইয়ের উদ্দেশ্যে) অন্যের উপর দোষারোপ করতে লাগল। (তখন আল্লাহট কাজ ছিল তা প্রকাশ করে দেওয়া) যা (তোমাদের) অপরাধী ও দোষী লোকেরা গোপন করেছিল। এ কারণে (গরু জবাই করার পর) আমি নির্দেশ দিলাম যে, মৃতদেহকে গরুর কোন টুকরা ছুঁইয়ে দাও। (সেমতে ছুঁইয়ে দিতেই মৃত ব্যক্তি জীবিত হয়ে উঠল। এরপর আল্লাহ্ তা’আলা এ ঘটনাকে কিয়ামতের অস্বীকারকারীদের সামনে প্রমাণ হিসাবে উপস্থিত করে বলেন যে,) এভাবেই আল্লাহ্ (কিয়ামতের দিন) মৃতদের জীবিত করবেন। আল্লাহ্ তা’আলা স্বীয় (কুদরতের) নিদর্শনাবলী তোমাদের প্রদর্শন করেন এ আশায় যে, তোমরা চিন্তা-ভাবনাকে কাজে লাগাবে এবং এক নিদর্শনকে দেখে অপর নিদর্শনকে অস্বীকার করা থেকে বিরত থাকবে।

মৃতদেহকে গরুর টুকরা স্পর্শ করাতেই সে জীবিত হয়ে যায় এবং হত্যাকারীর নাম বলে তৎক্ষণাৎ আবার মরে যায়।

এক্ষেত্রে নিহত ব্যক্তির বর্ণনাকেই যথেষ্ট মনে করা হয়েছে। কারণ, মূসা (আ) ওহীর মাধ্যমে জানতে পেরেছিলেন যে, নিহত ব্যক্তি সত্য বলবে। নতুবা শরীয়তসম্মত সাক্ষী-প্রমাণ ছাড়া নিহত ব্যক্তির জবানবন্দীই হত্যা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট হতে পারে না।

এক্ষেত্রে এরূপ সন্দেহ করাও ঠিক নয় যে, আল্লাহ্ তা’আলা এমনিতেই মৃতকে জীবিত করতে সক্ষম ছিলেন, অথবা নিহত ব্যক্তিকে জীবিত না করেও হত্যাকারীর নাম প্রকাশ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল। এমতাবস্থায় এতসব আয়োজনের কি প্রয়োজন ছিল ? উত্তর এই যে, আল্লাহ্ তা’আলার প্রত্যেক কাজ প্রয়োজন অথবা বাধ্যতার ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয় না। বরং উপযোগিতা ও বিশেষ তাৎপর্যের ভিত্তিতে হয়ে থাকে। প্রত্যেক ঘটনার প্রকৃত তাৎপর্য একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলাই জানেন। ঘটনার উপযোগিতা জানার জন্য আমরা আদিষ্টও নই এবং প্রতিটি রহস্য আমাদের হৃদয়ঙ্গম হওয়া অপরিহার্যও নয়। এ কারণে এর পেছনে পড়ে জীবন বরবাদ করার চাইতে মেনে নেওয়া অথবা মৌনতা অবলম্বন করাই উত্তম।

সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ৭২-৭৩
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

 وَ اِذۡ قَتَلۡتُمۡ نَفۡسًا فَادّٰرَءۡتُمۡ فِیۡهَا ؕ وَ اللّٰهُ مُخۡرِجٌ مَّا کُنۡتُمۡ تَکۡتُمُوۡنَ ﴿ۚ۷۲
فَقُلۡنَا اضۡرِبُوۡهُ بِبَعۡضِهَا ؕ کَذٰلِکَ یُحۡیِ اللّٰهُ الۡمَوۡتٰی ۙ وَ یُرِیۡکُمۡ اٰیٰتِهٖ لَعَلَّکُمۡ تَعۡقِلُوۡنَ ﴿۷۳
.

সূরা আল-বাকারাহ ৭২-৭৩ নং আয়াতের অর্থ

(৭২) যখন তোমরা একজনকে হত্যা করে পরে সে সম্পর্কে একে অপরকে অভিযুক্ত করেছিলে। যা তোমরা গোপন করছিলে, তা প্রকাশ করে দেওয়া ছিল আল্লাহ্র অভিপ্রায়। (৭৩) অতঃপর আমি বললামঃ গরুর একটি খণ্ড দ্বারা মৃতকে আঘাত কর। এইভাবে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন এবং তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনসমূহ প্রদর্শন করেন যাতে তোমরা চিন্তা-ভাবনা কর।

সূরা আল-বাকারাহ ৭২-৭৩ নং আয়াতের তফসীরের সার-সংক্ষেপ

(স্মরণ কর) যখন তোমাদের একজন অন্যজনকে হত্যা করল, অতঃপর (নিজের সাফাইয়ের উদ্দেশ্যে) অন্যের উপর দোষারোপ করতে লাগল। (তখন আল্লাহট কাজ ছিল তা প্রকাশ করে দেওয়া) যা (তোমাদের) অপরাধী ও দোষী লোকেরা গোপন করেছিল। এ কারণে (গরু জবাই করার পর) আমি নির্দেশ দিলাম যে, মৃতদেহকে গরুর কোন টুকরা ছুঁইয়ে দাও। (সেমতে ছুঁইয়ে দিতেই মৃত ব্যক্তি জীবিত হয়ে উঠল। এরপর আল্লাহ্ তা’আলা এ ঘটনাকে কিয়ামতের অস্বীকারকারীদের সামনে প্রমাণ হিসাবে উপস্থিত করে বলেন যে,) এভাবেই আল্লাহ্ (কিয়ামতের দিন) মৃতদের জীবিত করবেন। আল্লাহ্ তা’আলা স্বীয় (কুদরতের) নিদর্শনাবলী তোমাদের প্রদর্শন করেন এ আশায় যে, তোমরা চিন্তা-ভাবনাকে কাজে লাগাবে এবং এক নিদর্শনকে দেখে অপর নিদর্শনকে অস্বীকার করা থেকে বিরত থাকবে।

মৃতদেহকে গরুর টুকরা স্পর্শ করাতেই সে জীবিত হয়ে যায় এবং হত্যাকারীর নাম বলে তৎক্ষণাৎ আবার মরে যায়।

এক্ষেত্রে নিহত ব্যক্তির বর্ণনাকেই যথেষ্ট মনে করা হয়েছে। কারণ, মূসা (আ) ওহীর মাধ্যমে জানতে পেরেছিলেন যে, নিহত ব্যক্তি সত্য বলবে। নতুবা শরীয়তসম্মত সাক্ষী-প্রমাণ ছাড়া নিহত ব্যক্তির জবানবন্দীই হত্যা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট হতে পারে না।

এক্ষেত্রে এরূপ সন্দেহ করাও ঠিক নয় যে, আল্লাহ্ তা’আলা এমনিতেই মৃতকে জীবিত করতে সক্ষম ছিলেন, অথবা নিহত ব্যক্তিকে জীবিত না করেও হত্যাকারীর নাম প্রকাশ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল। এমতাবস্থায় এতসব আয়োজনের কি প্রয়োজন ছিল ? উত্তর এই যে, আল্লাহ্ তা’আলার প্রত্যেক কাজ প্রয়োজন অথবা বাধ্যতার ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয় না। বরং উপযোগিতা ও বিশেষ তাৎপর্যের ভিত্তিতে হয়ে থাকে। প্রত্যেক ঘটনার প্রকৃত তাৎপর্য একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলাই জানেন। ঘটনার উপযোগিতা জানার জন্য আমরা আদিষ্টও নই এবং প্রতিটি রহস্য আমাদের হৃদয়ঙ্গম হওয়া অপরিহার্যও নয়। এ কারণে এর পেছনে পড়ে জীবন বরবাদ করার চাইতে মেনে নেওয়া অথবা মৌনতা অবলম্বন করাই উত্তম।

(বিগত ঘটনাবলীতে প্রভাবিত না হওয়ার দরুন অভিযোগের ভঙ্গিতে বলা হচ্ছেঃ) এমন ঘটনার পর (তোমাদের অন্তর একেবারে নরম ও আল্লাহর মহত্ত্বে আপ্লুত হয়ে যাওয়াই সঙ্গত ছিল। কিন্তু) তোমাদের অন্তরই কঠিন রয়ে গেছে। এখন (বলা যায় যে,) তা পাথরের মত অথবা (বলা যায় যে, কঠোরতায়) পাথর অপেক্ষাও বেশি। (পাথর থেকেও অধিক কঠিন হওয়ার কারণ এই যে.) কোন কোন পাথর তো এমনও রয়েছে যা থেকে বড় বড় নদ-নদী প্রবাহিত হয়। আবার কোন কোন পাথর বিদীর্ণ হয়ে যায়। অতঃপর তা থেকে (বেশি না হলেও অল্প) পানি নির্গত হয়। এ ছাড়া কোন পাথর আল্লাহর ভয়ে উপর থেকে নিচে গড়িয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে তোমাদের অন্তরে কোন প্রকার প্রভাবই পরিলক্ষিত হয় না। (এহেন কঠিন অন্তর থেকে যেসব মন্দ কাজকর্ম প্রকাশ পায়,) তোমাদের (সেসব) কাজকর্ম সম্পর্কে আল্লাহ্ তা’আলা বেখবর নন (তিনি সত্বরই তোমাদের সমুচিত শাস্তি দেবেন)।

জ্ঞাতব্যঃ এখানে পাথরের তিনটি ক্রিয়া বর্ণিত হয়েছেঃ (১) পাথর থেকে বেশি পানি প্রসরণ (২) কম পানির নিঃসরণ। এ দু’টি প্রভাব সবারই জানা। (৩) আল্লাহ্ ভয়ে নীচে গড়িয়ে পড়া। এ তৃতীয় ক্রিয়াটি কারও কারও অজানা থাকতে পারে। কারণ, পাথরের কোনরূপ জ্ঞান ও অনুভূতি নেই। কিন্তু জানা উচিত যে, ভয় করার জন্য জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। জন্তু-জানোয়ারের জ্ঞান নেই, কিন্তু আমরা তাদের মধ্যে ভয়-ভীতি প্রত্যক্ষ করি। তবে চেতনার প্রয়োজনও অবশ্য আছে। জড় পদার্থের মধ্যে এতটুকু চেতনাও নেই বলে কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না। কারণ চেতনা প্রাণের উপর নির্ভরশীল। খুব সম্ভব জড় পদার্থের মধ্যে এমন সূক্ষ্ম প্রাণ আছে যা আমরা অনুভব করতে পারি না। উদাহরণত বহু পণ্ডিত মস্তিষ্কের চেতনাশক্তি অনুভব করতে পারেন না। তারা একমাত্র যুক্তির ভিত্তিতেই এর প্রবক্তা। সুতরাং ধারণাপ্রসূত প্রমাণাদির চাইতে কোরআনী আয়াতের যৌক্তিকতা কোন অংশে কম নয়।

এ ছাড়া আমরা এরূপ দাবিও করি না যে, পাথর সব সময় ভয়ের দরুনই নিচে গড়িয়ে পড়ে। কারণ, আল্লাহ্ তা’আলা ’কতক পাথর’ বলেছেন। সুতরাং নিচে গড়িয়ে পড়ার অন্য আরও বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। তন্মধ্যে একটি হলো আল্লাহর ভয়। আর অন্যগুলো প্রাকৃতিক হতে পারে ।

এখানে তিন রকমের পাথরের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও সাবলীল ভঙ্গিতে এদের শ্রেণীবিন্যাস ও উদ্দেশ্য ব্যক্ত করা হয়েছে। কতক পাথরের প্রভাবান্বিত হওয়ার ক্ষমতা এত প্রবল যে, তা থেকে নদী-নালা প্রবাহিত হয়ে যায় এবং তা দ্বারা সৃষ্ট জীবের উপকার সাধিত হয়। কিন্তু ইহুদীদের অন্তর এমন নয় যে, সৃষ্ট জীবের দুঃখ-দুর্দশায় অশ্রুসজল হবে। কতক পাথরের মধ্যে প্রভাবান্বিত হওয়ার ক্ষমতা কম। ফলে সেগুলোর দ্বারা উপকারও কম হয়। এ ধরনের পাথর প্রথম ধরনের পাথরের তুলনায় কম নরম হয়। কিন্তু ইহুদীদের অন্তর এ দ্বিতীয় ধরনের পাথর থেকেও বেশি শক্ত।

কতক পাথরের মধ্যে উপরোক্ত রূপ প্রভাব না থাকলেও এতটুকু প্রভাব অবশ্যই আছে যে, আল্লাহর ভয়ে নিচে গড়িয়ে পড়ে। এ পাথর উপরোক্ত দুই প্রকার পাথরের তুলনায় অধিক দুর্বল। কিন্তু ইহুদীদের অন্তর দুর্বলতম প্রভাব থেকেও মুক্ত।

সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ৭৪

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

 ثُمَّ قَسَتۡ قُلُوۡبُکُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ ذٰلِکَ فَهِیَ کَالۡحِجَارَۃِ اَوۡ اَشَدُّ قَسۡوَۃً ؕ وَ اِنَّ مِنَ الۡحِجَارَۃِ لَمَا یَتَفَجَّرُ مِنۡهُ الۡاَنۡهٰرُ ؕ وَ اِنَّ مِنۡهَا لَمَا یَشَّقَّقُ فَیَخۡرُجُ مِنۡهُ الۡمَآءُ ؕ وَ اِنَّ مِنۡهَا لَمَا یَهۡبِطُ مِنۡ خَشۡیَۃِ اللّٰهِ ؕوَ مَا اللّٰهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعۡمَلُوۡنَ

সূরা আল-বাকারাহ ৭৪ নং আয়াতের অর্থ

(৭৪) অতঃপর এ ঘটনার পরে তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেছে। তা পাথরের মত অথবা তদপেক্ষাও কঠিন। পাথরের মধ্যে এমনও আছে; যা থেকে করনা প্রবাহিত হয়, এমনও আছে, যা বিদীর্ণ হয়, অতঃপর তা থেকে পানি নির্গত হয় এবং এমনও আছে, যা আল্লাহর ভয়ে খসে পড়তে থাকে। আল্লাহ তোমাদের কাজকর্ম সম্পর্কে বেখবর নন।

সূরা আল-বাকারাহ ৭৪ নং আয়াতের তফসীরের সার-সংক্ষেপ

(স্মরণ কর) যখন তোমাদের একজন অন্যজনকে হত্যা করল, অতঃপর (নিজের সাফাইয়ের উদ্দেশ্যে) অন্যের উপর দোষারোপ করতে লাগল। (তখন আল্লাহট কাজ ছিল তা প্রকাশ করে দেওয়া) যা (তোমাদের) অপরাধী ও দোষী লোকেরা গোপন করেছিল। এ কারণে (গরু জবাই করার পর) আমি নির্দেশ দিলাম যে, মৃতদেহকে গরুর কোন টুকরা ছুঁইয়ে দাও। (সেমতে ছুঁইয়ে দিতেই মৃত ব্যক্তি জীবিত হয়ে উঠল। এরপর আল্লাহ্ তা’আলা এ ঘটনাকে কিয়ামতের অস্বীকারকারীদের সামনে প্রমাণ হিসাবে উপস্থিত করে বলেন যে,) এভাবেই আল্লাহ্ (কিয়ামতের দিন) মৃতদের জীবিত করবেন। আল্লাহ্ তা’আলা স্বীয় (কুদরতের) নিদর্শনাবলী তোমাদের প্রদর্শন করেন এ আশায় যে, তোমরা চিন্তা-ভাবনাকে কাজে লাগাবে এবং এক নিদর্শনকে দেখে অপর নিদর্শনকে অস্বীকার করা থেকে বিরত থাকবে।

মৃতদেহকে গরুর টুকরা স্পর্শ করাতেই সে জীবিত হয়ে যায় এবং হত্যাকারীর নাম বলে তৎক্ষণাৎ আবার মরে যায়।

এক্ষেত্রে নিহত ব্যক্তির বর্ণনাকেই যথেষ্ট মনে করা হয়েছে। কারণ, মূসা (আ) ওহীর মাধ্যমে জানতে পেরেছিলেন যে, নিহত ব্যক্তি সত্য বলবে। নতুবা শরীয়তসম্মত সাক্ষী-প্রমাণ ছাড়া নিহত ব্যক্তির জবানবন্দীই হত্যা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট হতে পারে না।

এক্ষেত্রে এরূপ সন্দেহ করাও ঠিক নয় যে, আল্লাহ্ তা’আলা এমনিতেই মৃতকে জীবিত করতে সক্ষম ছিলেন, অথবা নিহত ব্যক্তিকে জীবিত না করেও হত্যাকারীর নাম প্রকাশ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল। এমতাবস্থায় এতসব আয়োজনের কি প্রয়োজন ছিল ? উত্তর এই যে, আল্লাহ্ তা’আলার প্রত্যেক কাজ প্রয়োজন অথবা বাধ্যতার ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয় না। বরং উপযোগিতা ও বিশেষ তাৎপর্যের ভিত্তিতে হয়ে থাকে। প্রত্যেক ঘটনার প্রকৃত তাৎপর্য একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলাই জানেন। ঘটনার উপযোগিতা জানার জন্য আমরা আদিষ্টও নই এবং প্রতিটি রহস্য আমাদের হৃদয়ঙ্গম হওয়া অপরিহার্যও নয়। এ কারণে এর পেছনে পড়ে জীবন বরবাদ করার চাইতে মেনে নেওয়া অথবা মৌনতা অবলম্বন করাই উত্তম।

(বিগত ঘটনাবলীতে প্রভাবিত না হওয়ার দরুন অভিযোগের ভঙ্গিতে বলা হচ্ছেঃ) এমন ঘটনার পর (তোমাদের অন্তর একেবারে নরম ও আল্লাহর মহত্ত্বে আপ্লুত হয়ে যাওয়াই সঙ্গত ছিল। কিন্তু) তোমাদের অন্তরই কঠিন রয়ে গেছে। এখন (বলা যায় যে,) তা পাথরের মত অথবা (বলা যায় যে, কঠোরতায়) পাথর অপেক্ষাও বেশি। (পাথর থেকেও অধিক কঠিন হওয়ার কারণ এই যে.) কোন কোন পাথর তো এমনও রয়েছে যা থেকে বড় বড় নদ-নদী প্রবাহিত হয়। আবার কোন কোন পাথর বিদীর্ণ হয়ে যায়। অতঃপর তা থেকে (বেশি না হলেও অল্প) পানি নির্গত হয়। এ ছাড়া কোন পাথর আল্লাহর ভয়ে উপর থেকে নিচে গড়িয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে তোমাদের অন্তরে কোন প্রকার প্রভাবই পরিলক্ষিত হয় না। (এহেন কঠিন অন্তর থেকে যেসব মন্দ কাজকর্ম প্রকাশ পায়,) তোমাদের (সেসব) কাজকর্ম সম্পর্কে আল্লাহ্ তা’আলা বেখবর নন (তিনি সত্বরই তোমাদের সমুচিত শাস্তি দেবেন)।

জ্ঞাতব্যঃ এখানে পাথরের তিনটি ক্রিয়া বর্ণিত হয়েছেঃ (১) পাথর থেকে বেশি পানি প্রসরণ (২) কম পানির নিঃসরণ। এ দু’টি প্রভাব সবারই জানা। (৩) আল্লাহ্ ভয়ে নীচে গড়িয়ে পড়া। এ তৃতীয় ক্রিয়াটি কারও কারও অজানা থাকতে পারে। কারণ, পাথরের কোনরূপ জ্ঞান ও অনুভূতি নেই। কিন্তু জানা উচিত যে, ভয় করার জন্য জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। জন্তু-জানোয়ারের জ্ঞান নেই, কিন্তু আমরা তাদের মধ্যে ভয়-ভীতি প্রত্যক্ষ করি। তবে চেতনার প্রয়োজনও অবশ্য আছে। জড় পদার্থের মধ্যে এতটুকু চেতনাও নেই বলে কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না। কারণ চেতনা প্রাণের উপর নির্ভরশীল। খুব সম্ভব জড় পদার্থের মধ্যে এমন সূক্ষ্ম প্রাণ আছে যা আমরা অনুভব করতে পারি না। উদাহরণত বহু পণ্ডিত মস্তিষ্কের চেতনাশক্তি অনুভব করতে পারেন না। তারা একমাত্র যুক্তির ভিত্তিতেই এর প্রবক্তা। সুতরাং ধারণাপ্রসূত প্রমাণাদির চাইতে কোরআনী আয়াতের যৌক্তিকতা কোন অংশে কম নয়।

এ ছাড়া আমরা এরূপ দাবিও করি না যে, পাথর সব সময় ভয়ের দরুনই নিচে গড়িয়ে পড়ে। কারণ, আল্লাহ্ তা’আলা ’কতক পাথর’ বলেছেন। সুতরাং নিচে গড়িয়ে পড়ার অন্য আরও বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। তন্মধ্যে একটি হলো আল্লাহর ভয়। আর অন্যগুলো প্রাকৃতিক হতে পারে ।

এখানে তিন রকমের পাথরের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও সাবলীল ভঙ্গিতে এদের শ্রেণীবিন্যাস ও উদ্দেশ্য ব্যক্ত করা হয়েছে। কতক পাথরের প্রভাবান্বিত হওয়ার ক্ষমতা এত প্রবল যে, তা থেকে নদী-নালা প্রবাহিত হয়ে যায় এবং তা দ্বারা সৃষ্ট জীবের উপকার সাধিত হয়। কিন্তু ইহুদীদের অন্তর এমন নয় যে, সৃষ্ট জীবের দুঃখ-দুর্দশায় অশ্রুসজল হবে। কতক পাথরের মধ্যে প্রভাবান্বিত হওয়ার ক্ষমতা কম। ফলে সেগুলোর দ্বারা উপকারও কম হয়। এ ধরনের পাথর প্রথম ধরনের পাথরের তুলনায় কম নরম হয়। কিন্তু ইহুদীদের অন্তর এ দ্বিতীয় ধরনের পাথর থেকেও বেশি শক্ত।

কতক পাথরের মধ্যে উপরোক্ত রূপ প্রভাব না থাকলেও এতটুকু প্রভাব অবশ্যই আছে যে, আল্লাহর ভয়ে নিচে গড়িয়ে পড়ে। এ পাথর উপরোক্ত দুই প্রকার পাথরের তুলনায় অধিক দুর্বল। কিন্তু ইহুদীদের অন্তর দুর্বলতম প্রভাব থেকেও মুক্ত।




**************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url