মা’আরেফুল কোরআন - ৩২ || সূরা আল-বাকারাহ ৯৬- ১০১নং আয়াতের অর্থ ও তাফসীর ||






بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

سورة البقرة

সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ৯৬-১০১


সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ৯৬

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

 وَ لَتَجِدَنَّهُمۡ اَحۡرَصَ النَّاسِ عَلٰی حَیٰوۃٍ ۚۛ وَ مِنَ الَّذِیۡنَ اَشۡرَکُوۡا ۚۛ یَوَدُّ اَحَدُهُمۡ لَوۡ یُعَمَّرُ اَلۡفَ سَنَۃٍ ۚ وَ مَا هُوَ بِمُزَحۡزِحِهٖ مِنَ الۡعَذَابِ اَنۡ یُّعَمَّرَ ؕ وَ اللّٰهُ بَصِیۡرٌۢ بِمَا یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۹۶

সূরা আল-বাকারাহ ৯৬নং আয়াতের অর্থ

(৯৬) আপনি তাদেরকে জীবনের প্রতি সবার চাইতে এমন কি, মুশরিকদের চাইতেও অধিক লোভী দেখবেন। তাদের প্রত্যেকে কামনা করে, যেন হাজার বছর আয়ু পায়। অথচ এরূপ আয়ু প্রাপ্তি তাদেরকে শান্তি থেকে রক্ষা করতে পারবে না। আল্লাহ্ দেখেন, যা কিছু তারা করে।

সূরা আল-বাকারাহ ৯৬ নং আয়াতের তফসীরের সার-সংক্ষেপ

(তারা মৃত্যু কি কামনা করবে? বরং) আপনি তাদেরকে (পার্থিব ) জীবনের প্রতি (অপরাপর) লোকদের চাইতে এমন কি আশ্চর্যের বিষয় এই যে, মুশরিকদের চাইতেও বেশী লোভী দেখবেন। (তাদের অবস্থা এই যে,) তাদের একেকজন এরূপ কামনায় মগ্ন যে, তার বয়স যদি হাজার বছর হতো! অথচ (যদি ধরে নেওয়া যায় যে, তার বয়স এতটুকু হয়েই গেল, তবে) এরূপ আয়ু প্রাপ্তি তাকে শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারবে না। তাদের (মন্দ) কাজকর্ম আল্লাহর দৃষ্টির সামনেই রয়েছে (কাজেই তারা অবশ্যই শাস্তি পাবে।)

আরবের মুশরিকরা পরকালে বিশ্বাসী ছিল না। তাদের মতে বিলাস-বসন ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য সবই ছিল পার্থিব। এ কারণে তারা দীর্ঘায়ু কামনা করলে তা মোটেই আশ্চর্যের বিষয় ছিল না। কিন্তু ইহুদীরা শুধু পরকালে বিশ্বাসীই ছিল না। বরং তাদের ধারণামতে পরকালের যাবতীয় আরাম-আয়েস ও নেয়ামতরাজি তাদেরই প্রাপ্ত ছিল। এরপরও তাদের পৃথিবীতে দীর্ঘায়ু কামনা করা বিস্ময়কর ব্যাপার নয় কি ?

সুতরাং পরকালের বিশ্বাস সত্ত্বেও তাদের দীর্ঘায়ু কামনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, পারলৌকিক নেয়ামত সম্পর্কিত তাদের দাবী সম্পূর্ণ অন্তঃসারশূন্য। প্রকৃত ব্যাপার তাদেরও ভালভাবে জানা রয়েছে যে, সেখানে পৌঁছলে জাহান্নামই হবে তাদের আবাসস্থল। তাই যতদিন বাঁচা যায়, ততদিনই মঙ্গল ।


সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ৯৭-৯৮

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

قُلۡ مَنۡ کَانَ عَدُوًّا لِّجِبۡرِیۡلَ فَاِنَّهٗ نَزَّلَهٗ عَلٰی قَلۡبِکَ بِاِذۡنِ اللّٰهِ مُصَدِّقًا لِّمَا بَیۡنَ یَدَیۡهِ وَ هُدًی وَّ بُشۡرٰی لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۹۷
مَنۡ کَانَ عَدُوًّا لِّلّٰهِ وَ مَلٰٓئِکَتِهٖ وَ رُسُلِهٖ وَ جِبۡرِیۡلَ وَ مِیۡکٰىلَ فَاِنَّ اللّٰهَ عَدُوٌّ لِّلۡکٰفِرِیۡنَ ﴿۹۸

সূরা আল-বাকারাহ ৯৭-৯৮নং আয়াতের অর্থ

(৯৭) আপনি বলে দিন, যে কেউ জিবরাঈলের শত্রু হয় যেহেতু তিনি আল্লাহর আদেশে এ কালাম আপনার অন্তরে নাযিল করেছেন, যা সত্যায়নকারী তাদের সম্মুখস্থ কালামের (যা ইতিপূর্বে নাযিল হয়েছিল) এবং মু'মিনদের জন্য পথপ্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা। (৯৮) যে ব্যক্তি আল্লাহ্, তাঁর ফেরেশতা ও রসূলগণ এবং জিবরাঈল ও মিকাঈলের শত্রু হয়, নিশ্চিতই আল্লাহ্ সেসব কাফেরের শত্রু ।

সূরা আল-বাকারাহ ৯৭-৯৮ নং আয়াতের তফসীরের সার-সংক্ষেপ

[জিবরাঈল (আ) ওহী নিয়ে আগমন করেন– একথা রসূলুল্লাহ্ (সা)-এর মুখে শুনে কতক ইহুদী বলতে থাকে, ইনি তো আমাদের শত্রু; আমাদের সম্প্রদায়ের উপর প্রলয়ঙ্করি ঘটনাবলী এবং প্রাণান্তকর নির্দেশাবলী তাঁর মাধ্যমেই অবতীর্ণ হয়েছে। পক্ষান্তরে মিকাঈল (আ) অত্যন্ত গুণী ফেরেশতা। তিনি বৃষ্টি ও রহমতের সাথে জড়িত। তিনি ওহী নিয়ে এলে আমরা তা মেনে নিতাম। এসব বক্তব্যের খণ্ডনে আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, হে মুহাম্মদ!] 

আপনি বলে দিন, যদি কেউ জিবরাঈলের প্রতি শত্রুতা রাখে, সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কোরআন মানা-না-মানার সাথে এর কি সম্পর্ক ? কারণ, তিনি তো দূত ছাড়া আর কিছু নন। যেহেতু তিনি আল্লাহর আদেশে এ কালামে পাক আপনার অন্তর পর্যন্ত পৌছিয়ে দিয়েছেন, সুতরাং তার বৈশিষ্ট্য না দেখে স্বয়ং কোরআনকে দেখা দরকার। কোরআন (এর অবস্থা এই যে,) সে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহের সত্যায়ন করে (প্রয়োজনীয় বিষয়াদির প্রতি) পথ প্রদর্শন করে এবং মু’মিনদের সুসংবাদ দেয় (আসমানী কিতাবসমূহের অবস্থা তা-ই হয়ে থাকে)। সুতরাং কোরআন সর্বাবস্থায় খোদায়ী গ্রন্থ এবং অনুসরণযোগ্য। জিবরাঈলের সাথে শত্রুতার দোহাই দিয়ে একে অমান্য করা নিরেট বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়। এখন জিবরাঈলের সাথে শত্রুতা সম্পর্কে কথা এই যে, স্বয়ং আল্লাহ্র সাথে অথবা অন্য ফেরেশতাদের সাথে অথবা পয়গম্বরদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা অথবা স্বয়ং মিকাঈলের সাথে, যার সাথে বন্ধুত্ব দাবি করা হয়- সবই আল্লাহ্ তা’আলার কাছে সমপর্যায়ের। এসব শত্রুতার পরিণতি এই যে, যে কেউ আল্লাহ্ তা’আলা ও তাঁর ফেরেশতা ও রসূলগণের এবং জিবরাঈল ও মিকাঈলের শত্রু হয় (তবে এসব শত্রুতার শাস্তি এই যে,) নিশ্চয়ই আল্লাহ এমন কাফেরদের শত্রু।


সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ৯৯

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

وَ لَقَدۡ اَنۡزَلۡنَاۤ اِلَیۡکَ اٰیٰتٍۭ بَیِّنٰتٍ ۚ وَ مَا یَکۡفُرُ بِهَاۤ اِلَّا الۡفٰسِقُوۡنَ ﴿۹۹

সূরা আল-বাকারাহ ৯৯নং আয়াতের অর্থ

(৯৯) আমি আপনার প্রতি উজ্জ্বল নিদর্শনসমূহ অবতীর্ণ করেছি। অবাধ্যরা ব্যতীত কেউ এগুলো অস্বীকার করে না।

সূরা আল-বাকারাহ ৯৯ নং আয়াতের তফসীরের সার-সংক্ষেপ

[কতক ইহুদী হুযূর (সা)]-কে বলেছিল, আমরাও জানি এমন কোন উজ্জ্বল নিদর্শন আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়নি। এর উত্তরে বলা হয়েছে, একটি উজ্জ্বল নিদর্শনই তাদের সম্বল। অথচ আমি আপনার প্রতি বহু উজ্জ্বল নিদর্শন অবতারণ করেছি। (সেগুলো তারাও খুব চিনে। তাদের অস্বীকার অজ্ঞতার কারণে নয়; আদেশ লঙ্ঘনের চিরাচরিত বদাভ্যাসের কারণে। আর স্বতঃসিদ্ধ রীতি এই যে, আদেশ লঙ্ঘনে অভ্যস্তরা ব্যতীত কেউ এমন নিদর্শনাবলী অস্বীকার করে না।


সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ১০০

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

 اَوَ کُلَّمَا عٰهَدُوۡا عَهۡدًا نَّبَذَهٗ فَرِیۡقٌ مِّنۡهُمۡ ؕ بَلۡ اَکۡثَرُهُمۡ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ ﴿۱۰۰

সূরা আল-বাকারাহ ১০০নং আয়াতের অর্থ

(১০০) কি আশ্চর্য, যখন তারা কোন অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়, তখন তাদের একদল তা ছুঁড়ে ফেলে বরং অধিকাংশই বিশ্বাস করে না।

সূরা আল-বাকারাহ ১০০ নং আয়াতের তফসীরের সার-সংক্ষেপ

[রসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রতি ঈমান আনার ব্যাপারে তওরাতে ইহুদীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নেওয়া হয়েছিল। কতক ইহুদীকে সে অঙ্গীকার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলে তারা অঙ্গীকার করেনি বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেয়। সে সম্পর্কে বলা হচ্ছে, তারা কি এ অঙ্গীকার করার কথা অস্বীকার করে ? তাদের অবস্থা এই যে, তারা স্বীকৃত অঙ্গীকারগুলোও কোনদিন পূর্ণ করেনি, বরং] যখন তারা (ধর্ম সম্পর্কে) কোন অঙ্গীকার করেছে তখন (অবশ্যই) তাদের কোন-না-কোন দল তা উপেক্ষা ভরে ছুঁড়ে ফেলেছে। বরং তাদের অধিকাংশই এমন, যারা (গোড়া থেকেই এ অঙ্গীকারকে) বিশ্বাস করে না।

এখানে বিশেষভাবে ’একদল’ বলার কারণ এই যে, তাদের কেউ কেউ উপরোক্ত অঙ্গীকার পূর্ণও করতো। এমনকি, শেষ পর্যন্ত তারা রসূলুল্লাহ (সা)-এর প্রতি ঈমানও এনেছিল ।


সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ১০১

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

وَ لَمَّا جَآءَهُمۡ رَسُوۡلٌ مِّنۡ عِنۡدِ اللّٰهِ مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَهُمۡ نَبَذَ فَرِیۡقٌ مِّنَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ ٭ۙ کِتٰبَ اللّٰهِ وَرَآءَ ظُهُوۡرِهِمۡ کَاَنَّهُمۡ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ﴿۱۰۱

সূরা আল-বাকারাহ ১০১নং আয়াতের অর্থ

(১০১) যখন তাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রসূল আগমন করলেন যিনি ঐ কিতাবের সত্যায়ন করেন, যা তাদের কাছে রয়েছে, তখন আহলে কিতাবদের একদল আল্লাহর গ্রন্থকে পশ্চাতে নিক্ষেপ করল- যেন তারা জানেই না ।

সূরা আল-বাকারাহ ১০১ নং আয়াতের তফসীরের সার-সংক্ষেপ

[এ আয়াতে রসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রতি ঈমান না আনার ব্যাপারে একটি বিশেষ অঙ্গীকার ভঙ্গের বিষয় বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছেঃ] যখন তাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন মহান পয়গম্বর আসলেন, যিনি (রসূল হওয়ার সাথে সাথে) ঐ কিতাবেরও সত্যায়ন করেন, যা তাদের কাছে রয়েছে (অর্থাৎ তওরাত) তাতে হযরত রসূলে করীম (সা)-এর নবুয়তের সংবাদ ছিল। এমতাবস্থায় হযরত রসূলে করীম (সা)-এর প্রতি ঈমান আনা তওরাতের নির্দেশ পালনেরই নামান্তর ছিল। তওরাতকে তারাও আল্লাহর গ্রন্থ মনে করত। কিন্তু এতদসত্ত্বেও এ আহলে কিতাবদের একদল স্বয়ং আল্লাহর গ্রন্থকেই (এমনভাবে) পিঠের পশ্চাতে নিক্ষেপ করলো, যেন তারা (সে গ্রন্থের বিষয়বস্তু অথবা আল্লাহর গ্রন্থ হওয়া সম্পর্কে কিছু) জানেই না।




**************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url