মাসলা মাসায়েল-১০ || বেনামাজী স্ত্রীর প্রতি করণীয় || বেনামাজী স্ত্রীকে নামাজের দাওয়াত দেওয়ার আদর্শ পদ্ধতি ||






বেনামাজী স্ত্রীর প্রতি করণীয়


বেনামাজী স্ত্রীকে নামাজের দাওয়াত দেওয়ার আদর্শ পদ্ধতি

প্রশ্নঃ  আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার স্ত্রীকে অনেকবার অনেকভাবে বলার পরও সে নামাজে আগ্রহী হয় না। বিভিন্নভাবে তাকে নামাজ পড়ার জন্য বকাঝকা, রাগারাগী করা হয়েছে। তাকে নামাজে আনার জন্য আর কী কী উপায় প্রয়োগ করা যেতে পারে? আগে সে নামাজ পড়তো।


উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


স্বামীর দায়িত্ব হল, স্ত্রীকে কল্যাণের প্রতি আহ্বান করা এবং অকল্যাণ হতে সতর্ক করা। কেননা, আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,

الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ

পুরুষ নারীর কর্তা। কারণ, আল্লাহ তাদের একজনকে অপর জনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এজন্য যে, পুরুষ তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে। (সূরা নিসা ৩৪)

রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَهُوَ مسؤولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ

আর প্রত্যেক পুরুষ তার পরিবারের একজন দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। (সহীহ বুখারী ২৫৫৪)

প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, সুতরাং স্বামী হিসেবে আপনার করণীয় হল, আপনার স্ত্রীকে হেকমত ও বুদ্ধিমত্তার সাথে নামাযের দাওয়াত অব্যাহতভাবে দিতে থাকবেন। আর আপনার হেকমত হবে নিম্নরূপ যেমন;


এক. আপনার কথা থেকে মনে হচ্ছে, আপনার স্ত্রীর ক্ষেত্রে শাসনের চাইতে ভালবাসাপূর্ণ আচরণই কার্যকর হবে বেশি। তাছাড়া অতিরিক্ত বকাঝকা অনেক সময় হীতে বিপরীত হয়। তাই আচার-আচরণে মার্জিত থাকুন। বেশি রাগারাগি না করে তার রূপ-সৌন্দর্য বা রান্না ইত্যাদির প্রশংসা করুন। তার অন্তরে এই আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলুন যে, আপনি তাকে অনেক ভালোবাসেন। এটা আপনার প্রতি তার ভালবাসাকে আরো তাঁতিয়ে তুলবে এবং আপনি হয়ে ওঠবেন তার কাছে ‘শ্রেষ্ঠ স্বামী’।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

واسْتَوْصُوا بالنِّساءِ خَيْرًا؛ فإنَّهُنَّ خُلِقْنَ مِن ضِلَعٍ، وإنَّ أعْوَجَ شَيءٍ في الضِّلَعِ أعْلاهُ، فإنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهُ كَسَرْتَهُ، وإنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أعْوَجَ، فاسْتَوْصُوا بالنِّساءِ خَيْرًا

তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। কেননা, তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরের হাড় থেকে এবং সবচেয়ে বাঁকা হচ্ছে পাঁজরের ওপরের হাড়। যদি তুমি তা সোজা করতে যাও, তাহলে ভেঙে যাবে। আর যদি তুমি তা যেভাবে আছে সে ভাবে রেখে দাও তাহলে বাঁকাই থাকবে। কাজেই নারীদের সাথে কল্যাণমূলক কাজ করার উপদেশ গ্রহণ কর। (বুখারী ৫১৮৫)

দুই. আপনার উক্ত রোমান্টিকতার ভেতর দিয়েই সমানতালে আপনি তাকে নামায আদায়ের দাওয়াত দিতে থাকুন। খেয়াল রাখতে হবে, আপনার দাওয়াত যেন এতটা দীর্ঘ না হয় যে, এতে আপনাদের রোমান্টিকতায় ছেদ পড়ে কিংবা আপনার স্ত্রীর কাছে তা আপনার ‘শাসনের আচরণ’ মনে হয়। আর দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে আদর্শ পদ্ধতি হতে পারে সংক্ষেপে নিম্নরূপ:


~ তাকে স্মরণ করিয়ে দিন যে, নামায একটি ফরয ইবাদত এবং ঈমানের পর নামায ইসলামের সবচেয়ে মহান রুকন।

~ তাকে নামাযের কিছু ফযিলত অবহিত করুন; যেমন- আল্লাহ্‌ বান্দার উপর যা কিছু ফরয করেছেন তার মধ্যে নামায সর্বোত্তম। বান্দার কাছ থেকে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব নেয়া হবে। একটিমাত্র সেজদার মাধ্যমে বান্দার এক ধাপ মর্যাদা সমুন্নত হয় এবং একটি পাপ মোচন হয়…ইত্যাদি নামাযের ফযিলতের ব্যাপারে আরও যা কিছু বর্ণিত হয়েছে। এর মাধ্যমে আশা করি, তার অন্তর খুলে যাবে এবং নামায তার চক্ষুশীতলে পরিণত হবে।

~ মাঝে মাঝে তাকে আল্লাহ্‌র সাক্ষাত, মৃত্যু ও কবরের কথা স্মরণ করিয়ে দিন। নামায বর্জনকারীর যে, খারাপ মৃত্যু হয় ও কবরে আযাব হয় তাকে সেটা স্মরণ করিয়ে দিন।

~ তাকে মাঝে মাঝে স্মরণ করিয়ে দিন, নির্ধারিত সময় এর চেয়ে দেরীতে নামায আদায় করা কবিরা গুনাহ্‌। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন,

فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّينَ الَّذِينَ هُمْ عَن صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ

সেসব নামাযীদের জন্য ধ্বংস যারা তাদের নামায সম্বন্ধে বে-খবর। (সূরা মাউন, আয়াত ৪,৫)

~ তাকে নামায সংক্রান্ত, নামায বর্জনকারী ও অবহেলাকারীর শাস্তি সংক্রান্ত কিছু পুস্তিকা উপহার দিন।


~ উপর্যুপরি সে নামায ত্যাগ করতে থাকলে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার মৃদু হুমকি দিতে পারেন। আর এই হুমকিটা দিবেন আপনাদের রোমান্টিকতার মুহূর্তগুলোতে। লক্ষ্য রাখতে হবে, এই অভিমান যেন খুব বেশি জোরালো না হয়।

তিন. প্রিয় দীনী ভাই, উক্ত মেহনত আপনাকে চালিয়ে যেতে হবে প্রতিনিয়ত। পাশাপাশি তার হেদায়তের জন্যও দোয়া করতে হবে নিয়মিত। তথাপি যদি সে ফিরে না আসে এবং যদি আপনি মনে করেন, আপনার চেষ্টা, সদাচারণ, ধৈর্যধারণ, দোয়াসহ ইত্যকার সব দায়িত্ব পালনে আপনার কোন ত্রুটি ছিল না। এরপরেও ইতিবাচক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তাহলেও আমরা বলবো, প্রকৃত দীনদার ও চৌকস স্বামীর ব্যর্থতার দৃষ্টান্ত সমাজে বিরল। বরং স্বামীর পরশে স্ত্রীর জীবন বদলে যাওয়ার ঘটনাই আমরা সমাজে বেশি দেখতে পাই। সুতরাং এপর্যায়ে আপনি ভারসাম্য বজায় রেখে তাকে শাসন করুন। পারিবারিকভাবে কাউন্সিলিং করুন। এরপরেও যদি সে নিজেকে সংশোধন করতে প্রস্তুত না হয় তাহলে আপনি চাইলে একজন যোগ্য আলেমের সঙ্গে পরামর্শ করে তাকে তালাক দিতে পারেন কিংবা চাইলে আল্লাহর রহমতের আশা করে ধৈর্য্য ধারণ করে উপরোক্ত চেষ্টাগুলো অব্যাহত রাখতে পারেন।
আমরা দোয়া করি, আল্লাহ আপনাকে হেকমত ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে চলার তাওফীক দান করুন।

والله اعلم بالصواب




উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী
সিনিয়র মুহাদ্দিস, মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর
খতীব, বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, মিরপুর





****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url