তাফসীরে ইবনে কাসীর - ১২ || সূরা বাকারাহ - ২ || একক অক্ষরসমূহের আলোচনা || কুরআনের একক অক্ষরগুলি মুজিযা ||





কুরআনের বিভিন্ন সূরার শুরুতে একক অক্ষরসমূহ নিয়ে আলোচনা

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ.
আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু ।

الٓـمّٓ ۚ ﴿۱
 ১। আলীফ-লাম-মীম ।

সূরার শুরুতে একক অক্ষরসমূহের আলোচনা

الٓـمّٓ ۚএর মত مُقَطَّعَة বা খণ্ডকৃত অক্ষরগুলি যা অনেক সূরার প্রথমে এসেছে, এগুলির তাফসীরের ব্যাপারে মুফাস্সিরদের মধ্যে বেশ মতভেদ রয়েছে। কেহ কেহ বলেন যে, ওগুলির মর্মার্থ শুধুমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলাই সম্যক অবহিত। অন্য কেহ এগুলির অর্থ জানেনা। এ জন্য তারা এ অক্ষরগুলির কোন তাফসীর করেননা । ইমাম কুরতুবী (রহঃ) এ কথা আবূ বাকর (রাঃ), উমার (রাঃ), উসমান (রাঃ), আলী (রাঃ) এবং ইবন মাসউদ (রাঃ) হতে নকল করেছেন ।
মুজাহিদ (রহঃ) বলেন যে, সূরাসমূহের প্রথমে যে অক্ষরগুলি আছে যেমন الر ,طسم ,حم ,ص ,ق ইত্যাদি এ সবগুলিই حُرُوف هجا, কোন কোন আরাবী ভাষাবিদ বলেন যে, এই অক্ষরগুলি যা পৃথক পৃথকভাবে ২৮টি আছে, তন্মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করে বাকীগুলিকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। যেমন কেহ বলে থাকে : ‘আমার পুত্র  ا ,ب ,ت ,ث  লিখে, তখন ভাবার্থ এই দাঁড়ায় যে, তার পুত্র এ ধরনের ২৮টি অক্ষর লিখে। কিন্তু প্রথম কয়েকটির নাম উল্লেখ করে বাকীগুলি ছেড়ে দেয়া হয়েছে। (তাবারী ১/২০৮)

একক অক্ষর দিয়ে বিভিন্ন সূরার শুরু
পুনরুক্ত অক্ষরগুলিকে বাদ দিয়ে সূরাসমূহের প্রথমে এ প্রকারের চৌদ্দটি অক্ষর এসেছে । অক্ষরগুলি হচ্ছেঃ 

ا ل م ص ر ك ه ی ع ط س ح ق  ن

এসব একত্রিত করলে نَصَّ حَكِيمٌ فَاطِعٌ لَهُ سَرٌّ গঠিত হয়। সংখ্যা হিসাবে এ অক্ষরগুলি হয় চৌদ্দটি এবং মোট অক্ষর হল আটাশটি। সুতরাং এগুলি পূরা অর্ধেক হচ্ছে এবং এগুলি পরিত্যক্ত অক্ষরগুলি হতে বেশি মর্যাদাপূর্ণ ।
এটা সুনিশ্চিত কথা যে, আল্লাহ তা'আলার কথা কখনও বাজে ও অর্থহীন হতে পারেনা। তাঁর কথা এ থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র। কিন্তু কতকগুলো নির্বোধ বলে থাকে যে, এসব অক্ষরের কোন তাৎপর্য বা অর্থই নেই। তারা সম্পূর্ণ ভুলের উপর রয়েছে। ওগুলির কোন না কোন অর্থ অবশ্যই রয়েছে। যদি নিস্পাপ নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে তার কোন অর্থ সাব্যস্ত হয় তাহলে আমরা সেই অর্থ করব ও বুঝবো। আর যদি নাবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন অর্থ না করে থাকেন তাহলে আমরাও কোন অর্থ করবনা, বরং বিশ্বাস করব যে, তা আল্লাহর নিকট থেকে এসেছে।

وَلَقَدْ آتَيْنَاكَ سَبْعًا مِنَ الْمَثَانِي

আমরা ওতে বিশ্বাস করি, সমস্তই আমাদের রবের নিকট হতে সমাগত। (সূরা আলে ইমরান, ৩ : ৭)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সম্পর্কে কোন ব্যাখ্যা দান করেননি এবং আলেমদের মধ্যে এ ব্যাপারে অত্যধিক মতভেদ রয়েছে। যদি কারও কোন কথার দলীল জানা থাকে তাহলে ভাল কথা, সে তা মেনে নিবে। নতুবা মঙ্গল এই যে, এগুলি আল্লাহ তা'আলার কথা তা বিশ্বাস করবে এবং এও বিশ্বাস করবে যে, এগুলির অর্থ অবশ্যই আছে, যা একমাত্র আল্লাহই জানেন, আমাদের নিকট তা প্রকাশ পায়নি।

কুরআনের একক অক্ষরগুলি মুজিযা

এবার আর একটি হিকমাত বর্ণনা করা হয়েছে। তা এই যে, এগুলি উল্লেখ করায় কুরআন মাজীদের একটি মুজিযা বা অলৌকিকত্ব প্রকাশ পেয়েছে, যা আনয়ন করতে সমস্ত সৃষ্টজীব অপারগ হয়েছে। অক্ষরগুলি দৈনন্দিন ব্যবহৃত অক্ষর দ্বারা বিন্যস্ত হলেও তা সৃষ্টজীবের কথা হতে সম্পূর্ণ পৃথক । মুবার্রাদ (রহঃ) এবং মুহাক্কিক আলেমগণের একটি দল ফার্রা (রহঃ) ও কাতরাব (রহঃ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে।
যামাখ্শারী (রহঃ) তাফসীরী কাশ্শাফের মধ্যে এ কথার সমর্থনে অনেক কিছু বলেছেন । শায়খ ইমাম আল্লামা আবূ আব্বাস ইবন তাইমিয়াহ (রহঃ) এবং হাফিয মুজতাহিদ আবুল আজ্জাজ মিজ্জীও (রহঃ) ইমাম ইবন তাইমিয়ার বরাতে হিকমাতটি বর্ণনা করেছেন। যামাখশারী (রহঃ) বলেন যে, সমস্ত অক্ষর একত্রিতভাবে না আসার এটাই কারণ। তবে হ্যাঁ, ঐ অক্ষরগুলিকে বার বার আনার কারণ হচ্ছে মুশরিকদের বার বার অপারগ ও লা-জবাব করে দেয়া, তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করা। যেমনভাবে কুরআনুল হাকীমের মধ্যে অধিকাংশ কাহিনী ও ঘটনা কয়েকবার বর্ণনা করা হয়েছে এবং বার বার স্পষ্ট ভাষায় কুরআনের অনুরূপ কিতাব আনার ব্যাপারে তাদের অপারগতার বর্ণনা দেয়া হয়েছে ।

কোন স্থানে শুধুমাত্র একটি অক্ষর এসেছে। যেমন   ق  ,ن ,ص  কোন কোন স্থানে এসেছে দু'টি অক্ষর, যেমনঃ حم  কোন জায়গায় তিনটি অক্ষর এসেছে, যেমনঃ  الم ,  কোন কোন স্থানে চারটি অক্ষর এসেছে, যেমনঃ المص  এনা ও well এবং কোন কোন জায়গায় এসেছে পাঁচটি অক্ষর যেমন عسق এবং كهيعص কেননা আরাবদের শব্দগুলি সমস্তই এরকমই এক অক্ষর বিশিষ্ট, দুই অক্ষর বিশিষ্ট, তিন অক্ষর বিশিষ্ট, চার অক্ষর বিশিষ্ট এবং পাঁচ অক্ষর বিশিষ্ট। তাদের পাঁচ অক্ষরের বেশি শব্দ নেই ।
যখন এ কথাই সাব্যস্ত হল যে, এ অক্ষরগুলি কুরআন মাজীদের মধ্যে মুজিযা বা অলৌকিক স্বরূপ আনা হয়েছে তখন যে সূরাগুলির প্রথমে এ অক্ষরগুলি এসেছে সেখানে কুরআনেরও আলোচনা হওয়া এবং এর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের বর্ণনা হওয়া উচিত । হয়েছেও তাই। উনিত্রিশটি সূরায় এগুলি এসেছে। যেমনঃ  الم (২:১) المر  (১৩:১) المص ) (৭:১) كهسعص ( ১৯:১ ) حم (৪২: ১) এখানেও এ অক্ষরগুলির পরে বর্ণনা আছে যে, এই কুরআন আল্লাহর কালাম হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। অন্য স্থানে আল্লাহ সুবহানাহু বলেন :

الم. اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ. نَزَّلَ عَلَيْكَ الْكِتَبَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ

আলিফ, লাম, মীম। আল্লাহ ছাড়া কোনই ইলাহ (উপাস্য) নেই, তিনি চিরঞ্জীব ও নিত্য বিরাজমান। তিনি সত্যসহ তোমার প্রতি গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন, যা পূর্ববর্তী বিষয়ের সত্যতা প্রতিপাদনকারী। (সূরা আলে ইমরান, ৩ : ১-৩) এখানেও এ অক্ষরগুলির পরে কুরআনুল হাকীমের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করা হয়েছে। অন্য জায়গায় তিনি বলেনঃ

المص, كِتَبُ أُنزِلَ إِلَيْكَ فَلَا يَكُن فِي صَدْرِكَ حَرَجٌ

আলিফ লাম-মিম-সাদ। ‘এ একটি কিতাব যা তোমার উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে, সুতরাং তোমার অন্তরে যেন মোটেই সংকীর্ণতা না আসে। (সূরা আ'রাফ, ৭ : ১-২) অন্যত্র আছেঃ
الرَّ كِتَبُ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِبِإِذْنِ رَبِّهِمْ

আলিফ লাম রা । এই কিতাব, ইহা আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যাতে তুমি মানব জাতিকে তাদের রবের নির্দেশক্রমে বের করে আনতে পার অন্ধকার হতে আলোর দিকে। (সূরা ইবরাহীম, ১৪ : ১-২) আবার ইরশাদ হচ্ছেঃ

المَ. تَنزِيلُ الْكِتَابِ لَا رَيْبَ فِيهِ مِن رَّبِّ الْعَلَمِينَ

আলিফ লাম মীম । এই কিতাব জগতসমূহের রবের নিকট হতে অবতীর্ণ, এতে কোন সন্দেহ নেই। (সূরা সাজদাহ, ৩২ : ১-২) আল্লাহ তা'আলা আরও বলেনঃ

حم. تَنزِيلٌ مِّنَ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

হা মীম। ইহা দয়াময়, পরম দয়ালুর নিকট হতে অবতীর্ণ। (সূরা হা-মীম সাজদাহ, ৪১ : ১-২) আরও এক জায়গায় তিনি বলেনঃ

حم. عَسَقَ كَذَلِكَ يُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكَ اللَّهُ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
হা, মীম। আইন, সীন, কাফ। পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহ এভাবেই তোমার পূর্ববর্তীদের মতই তোমার প্রতি প্রত্যাদেশ করেন। (সূরা শূরা, ৪২ : ১- ৩) এরকমই অন্যান্য সূরার সূচনাংশের প্রতি চিন্তা করলে জানা যাবে যে, এসব অক্ষরের পরে পবিত্র কালামের শ্রেষ্ঠত্ব ও মহান মর্যাদার বর্ণনা রয়েছে, যদ্বারা এ কথা ভালভাবে জানা যায় যে, এ অক্ষরগুলি মানুষের প্রতিদ্বন্দ্বিতার অপারগতা প্রমাণ করার জন্যই আনা হয়েছে।





*******************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url