তাফসীরে ইবনে কাসীর - ১৬ || সূরা বাকারা - ৬ || হিদায়াত ও সফলতা শুধু ঈমানদারদের জন্য || খাতামা শব্দের অর্থ || গিসাওয়াতু কী






 اُولٰٓئِکَ عَلٰی هُدًی مِّنۡ رَّبِّهِمۡ ٭ وَ اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ ﴿۵
৫। এরাই তাদের রবের পক্ষ হতে প্রাপ্ত হিদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে এবং এরাই পূর্ণ সফলকাম।

হিদায়াত ও সফলতা শুধু ঈমানদারদের জন্য

ঐ সব লোক, যাদের গুণাবলী পূর্বে বর্ণিত হয়েছে, যেমন অদৃশ্যের উপর ঈমান আনা, সালাত কায়েম করা, আল্লাহর দেয়া বস্ত্র হতে দান করা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তার উপর ঈমান আনা, তাঁর পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস রাখা, পরকালের প্রতি বিশ্বাস রেখে সেখানে উপকার দেয় এরূপ কাজ করা এবং মন্দ ও হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকা। এসব লোকই হিদায়াত প্রাপ্ত, এদেরকেই আল্লাহর নূর ও তাঁর সূক্ষ্ম অন্তর্দৃষ্টি দ্বারা ভূষিত করা হয়েছে। আর এ সমুদয় লোকের জন্যই ইহকালে ও পরকালে সফলতা রয়েছে। ইবন আব্বাস (রাঃ) 'হিদায়াতের' ভাফসীর করেছেন। নূর ও দৃঢ়তা দ্বারা এবং 'ফালাহ' এর তাফসীর করেছেন প্রয়োজন মিটে যাওয়া ও পাপ এবং দুষ্কার্য থেকে বেঁচে যাওয়া ইত্যাদি দ্বারা।


 اِنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا سَوَآءٌ عَلَیۡهِمۡ ءَاَنۡذَرۡتَهُمۡ اَمۡ لَمۡ تُنۡذِرۡهُمۡ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ ﴿۶
৬। নিশ্চয়ই যারা অবিশ্বাস করছে তাদের জন্য উভয়ই সমান; তুমি তাদেরকে ভয় প্রদর্শন কর বা না কর, তারা বিশ্বাস স্থাপন করবেনা।

যারা সত্যকে গোপন করতে অভ্যস্ত এবং তাদের ভাগ্যে এই রয়েছে যে, তারা কখনও সেই ওয়াহীকে বিশ্বাস করবেনা যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর অবতীর্ণ হয়েছে। যেমন অন্য এক স্থানে বলা হয়েছেঃ

إنَّ الَّذِينَ حَقَّتْ عَلَيْهِمْ كَلِمَتُ رَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ، وَلَوْ جَاءَهُمْ كُل ءَايَةٍ حَتَّى يَرَوُا الْعَذَابَ الْأَلِيمَ

নিঃসন্দেহে, যাদের সম্বন্ধে তোমার রবের বাক্য সাব্যস্ত হয়ে গেছে তারা কখনো ঈমান আনবেনা, যদিও তাদের নিকট সমস্ত প্রমাণ পৌঁছে যায়, যে পর্যন্ত না তারা যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। (সূরা ইউনুস, ১০ : ৯৬-৯৭) এমনিভাবে আল্লাহ তা'আলা দুষ্টমতি আহলে কিতাবদের সম্পর্কে বলেনঃ

ولين أتيتَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَبَ بِكُلِّ وَايَةٍ مَا تَبِعُوا قِبْلَتَكَ

এবং যাদেরকে গ্রন্থ প্রদত্ত হয়েছে তাদের নিকট যদি তুমি সমুদয় নিদর্শন আনয়ন কর তবুও তারা তোমার কিবলাহকে গ্রহণ করবেনা। (সূরা বাকারাহ ২: ১৪৫ )

এ আয়াত থেকে জানা গেল যে, আল্লাহ যাদের জন্য দুর্ভোগ লিখে রেখেছেন তারা তাদেরকে শান্তির পথ দেখানোর জন্য কোন পথ প্রদর্শক পাবেনা এবং আল্লাহ যাদেরকে বিপথে পরিচালিত করেন তারা কখনো সৎপথ প্রদর্শক খুঁজে পাবেনা। তিনি বলেনঃ হে মুহাম্মাদ! তুমি তাদের জন্য দুঃখ করনা, তাদেরকে দা'ওয়াত দিতে থাক। তাদের মধ্যে যারা তোমার দা'ওয়াত কবূল করবে, নিশ্চয়ই তাদের জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান। আর যারা অস্বীকার করে মুখ ফিরিয়ে নিবে তাদের জন্য তুমি বিমর্ষ হয়োনা কিংবা তাদের নিয়ে চিন্তা-ভাবনাও
করনা। কারণ-

فَإِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَعُ وَعَلَيْنَا الْحِسَابُ

তোমার কর্তব্য তো শুধু প্রচার করা; আর হিসাব-নিকাশ তো আমার কাজ। (সূরা রা'দ, ১৩ : ৮০ )

إنَّمَا أَنتَ نَذِيرٌ وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ وَكِيلُ

তুমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র, আল্লাহই সবকিছু পরিবেষ্টনকারী। (সূরা হুদ, ১১ : ১২ )

আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ 'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ ব্যাপারে খুবই আগ্রহ ছিল যে, সবাই যেন ঈমানদার হয়ে যায় এবং হিদায়াত কবুল করে নেয়। কিন্তু মহান রাব্ব বলে দিলেন যে, এ সৌভাগ্য প্রত্যেকের জন্য নয়। এ দান ভাগ করে দেয়া হয়েছে। যার ভাগ্যে এর অংশ পড়েছে আপনা আপনি তোমার কথা মেনে নিবে, আর যে হতভাগা সে কখনও মানবেনা। (তাবারী ১/২৫২)



خَتَمَ اللّٰهُ عَلٰی قُلُوۡبِهِمۡ وَ عَلٰی سَمۡعِهِمۡ ؕ وَ عَلٰۤی اَبۡصَارِهِمۡ غِشَاوَۃٌ ۫ وَّ لَهُمۡ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ ﴿۷
৭। আল্লাহ তাদের অন্তরসমূহের উপর ও তাদের কর্ণসমূহের উপর মোহরাংকিত করে দিয়েছেন এবং তাদের চক্ষুসমূহের উপর আবরণ পড়ে আছে এবং তাদের জন্য রয়েছে ভয়ানক শাস্তি ।

খাতামা শব্দের অর্থ

মুফাসির সুন্দী (রহঃ) বলেছেন যে, خَتَمٌ - অর্থ মোহর করে দেয়া। (ইন আবী হাতিম ১/৪৪) কাতাদাহ (রহঃ) বলেন ঃ শাইতান তাদের উপর বিপুলভাবে জন্মলাভ করেছে এবং তারা তারই আজ্ঞাবহ দাসে পরিণত হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত তাদের অন্তরে ও কানে আল্লাহর মোহর লেগে গেছে এবং চোখের উপর পর্দা পড়ে গেছে। সুতরাং তারা হিদায়াতকে দেখতেও পাচ্ছেনা, শুনতেও পাচ্ছেনা এবং তা বুঝতেও পারছেনা!' (ইবন আবী হাতিম ১/৪৪) মুজাহিদ (রহঃ) বলেন : 'পাপ মানুষের অন্তরে চেপে বসে এবং তাকে চারদিক থেকে ঘিরে নেয়। এটাই হচ্ছে মোহর। অন্তর ও কানের জন্য প্রচলিত অর্থে মোহর। (ইবন আবী হাতিম ১/৪৪) মুজাহিদ (রহঃ) তাঁর হাতটি দেখিয়ে বলেন : 'অন্তর হচ্ছে হাতের তালুর মত। বান্দার পাপের কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। বান্দা একটা পাপ করলে তখন তার কনিষ্ঠ আঙ্গুলটি বন্ধ হয়ে যায়। যখন দু'টি পাপ করল তখন তার দ্বিতীয় আঙ্গুলও বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে সমস্ত আঙ্গুল বন্ধ হয়ে যায়। এখন মুক্তি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেল এবং এর ভিতর কোন কিছু প্রবেশ করতে পারবেনা। এভাবেই নিরন্তর পাপের ফলে অন্তরের উপর কালো পর্দা পড়ে যায় এবং মোহর লেগে যায়। তখন আর সত্য তার মধ্যে ক্রিয়াশীল হয়না। (তাবারী ১/২৫৮)

ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেনঃ উম্মাতের ইজমা আছে যে, মহান আল্লাহ মোহর করাকেও নিজের একটি বিশেষ গুণ রূপে বর্ণনা করেছেন যে, মোহর কাফিরদের কুফরীর প্রতিদান স্বরূপ হয়ে থাকে। যেমন তিনি বলেনঃ

بَلْ طَبَعَ اللَّهُ عَلَيْهَا بِكُفْرِهِمْ

বরং তাদের অবিশ্বাস হেতু আল্লাহ ওদের অন্তরে মোহর এঁটে দিয়েছেন। (সূরা নিসা, ৪ : ১৫৫) (কুরতুবী ১/১৮৭) হাদীসেও আছে যে, আল্লাহ তা'আলা অন্তরকে পরিবর্তন করে থাকেন। প্রার্থনায় আছেঃ

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ.

“হে অন্তরের পরিবর্তন আনয়নকারী: আমাদের অন্তরকে দীনের উপর অটল রাখুন।' হুজাইফা (রাঃ) হতে ফিতনার অধ্যায়ে একটি সহীহ হাদীস বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

'অন্তরের মধ্যে ফিতনা এমনভাবে উপস্থিত হয় যেমন ছেঁড়া মাদুরের একটা খড়কুটা। যে অন্তর তা গ্রহণ করে নেয় তাতে একটা কালো দাগ পড়ে যায় এবং যে অন্তরের মধ্যে এই ফিতনা ক্রিয়াশীল হয়না তাতে একটা সাদা দাগ পড়ে যায়, আর সেই শুভ্রতা বাড়তে বাড়তে সম্পূর্ণ সাদা হয়ে গিয়ে সমস্ত অন্তরকে আলোকে উদ্ভাসিত করে দেয়। অতঃপর ফিতনা এই অন্তরের কোন ক্ষতি করতে পারেনা। পক্ষান্তরে, অন্য অন্তরে কৃষ্ণতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যায় এবং শেষে সমস্ত অন্ত রকে কালিমাময় করে দেয়। তখন তা উল্টানো কলসের মত হয়ে যায়, ভাল কথাও তার ভাল লাগেনা এবং মন্দ কথাও খারাপ লাগেনা।' (মুসলিম ১/১২৮) ইমাম ইবন জারীরের (রহঃ) ফাইসালা এই যে, সহীহ হাদীসে এসেছেঃ

'মুমিন যখন পাপ করে তখন তার অন্তরে একটা কালো দাগ হয়ে যায়। যদি সে পাপকাজ হতে ফিরে আসে ও বিরত হয় তাহলে ঐ দাগটি আপনি সরে যায় এবং তার অন্তর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। আর যদি সে পাপ করতেই থাকে তাহলে সেই পাপও ছড়িয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত তার সমস্ত অন্তরকে ছেয়ে ফেলে।' এটাই সেই মরিচা যার বর্ণনা নিম্নের আয়াতে রয়েছেঃ

كلا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِم مَّا كَانُوا يَكْسِبُونَ

না, এটা সত্য নয়, বরং তাদের কৃতকর্মের ফলেই তাদের মনের উপর মরিচা জমে গেছে। (সূরা মুতাফফিফীন, ৮৩ : ১৪) (সুনান নাসাঈ ৬/৫০৯, তিরমিযী ৯/২৫৪, ইবন মাজাহ ২/১৪১৮) ইমাম তিরমিধী (রহঃ) এ হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাহলে জানা গেল যে, পাপের প্রাচুর্য অন্তরের উপর পর্দা ফেলে দেয় এবং এর পরে আল্লাহর মোহর হয়ে যায়। একেই বলে খাম এবং তবা'। এরূপ অন্তরের মধ্যে ঈমান প্রবেশ করার ও কৃষ্ণর বের হওয়ার আর কোন পথ থাকেনা। এই মোহরের বর্ণনাই এই আলোচ্য আয়াতে করা হয়েছে।

গিসাওয়াতু কী

এটা আমাদের চোখের দেখা যে, যখন কোন জিনিসের মুখে মোহর লাগিয়ে দেয়া হয়, তখন যে পর্যন্ত মোহর ভেঙ্গে না যায় সে পর্যন্ত তার ভিতর কিছু যেতেও পারেনা এবং তা থেকে কিছু রেও হতে পারেনা। এ রকমই কাফিরদের অন্তরে ও কানে আল্লাহর মোহর লেগে গেছে, সেই মোহর সরে না যাওয়া পর্যন্ত তার ভিতরে হিদায়াত প্রবেশ করতে পারবেনা এবং তা থেকে কুফরও বেরিয়ে আসতে পারবেনা। কারণ তাদের অন্তর সীল করে দেয়া হয়েছে; শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তিকে দুর্বল করে দেয়া হয়েছে। এর তাফসীরে সুদ্দী (রহঃ) ইবন আব্বাস (রাঃ) এবং ইন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এর অর্থ হল তারা না বুঝতে পারে, আর না শুনতে পায়। আল্লাহ তা'আলা আরও বলেন যে, তাদের
দৃষ্টির উপর একটি আবরণ এটে দেয়া হয়েছে, ফলে তারা দেখতে পায়না । (তাবারী ১/২৬৬) পবিত্র কুরাআনে আছেঃ

أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا فَإِن يَشَرِ اللَّهُ تَختِمْ عَلَى قَلْبِكَ وَيَمْحُ اللهُ الْبَطِلَ وَتُحِقُ الحَقِّ بِكَلِمَتِهِ إِنَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ

তারা কি বলে যে, সে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা উদ্ভাবন করেছে? যদি তাই হত তাহলে আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমার হৃদয় মোহর করে দিতেন। আল্লাহ মিথ্যাকে মুছে দেন এবং নিজ বাণী দ্বারা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন। অন্তরে যা আছে সে বিষয়ে তিনি তো সবিশেষ অবহিত। (সূরা শূরা, ৪২ : ২৪) অন্য স্থানে আছেঃ

أَفَرَوَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَنَهُ وَأَضَلَّهُ اللَّهُ عَلَىٰ عِلْمٍ وَخَتَمَ عَلَىٰ سَمْعِهِ وَقَلْبِهِ، وَجَعَلَ عَلَى بَصَرِهِ غِشَوَةً فَمَن يَهْدِيهِ مِنْ بَعْدِ اللَّهِ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ

তুমি কি লক্ষ্য করছ তাকে, যে তার খেয়াল খুশীকে নিজের মা'বূদ বানিয়ে নিয়েছে? আল্লাহ জেনে শুনেই তাকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং তার কর্ণ ও হৃদয় মোহর করে দিয়েছেন এবং তার চক্ষুর উপর রেখেছেন আবরণ। অতএব, কে তাকে পথ নির্দেশ করবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবেনা? (সূরা জাসিয়া, ৪৫:২৩)





**************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity. 
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url