একজন মহিলা এবং সাহল বিন হানিফ (রাঃ) এর কাহিনী





আবু যার (রাঃ) -এর মেহেমানদারীতে আলী (রাঃ)

সাহাবী আবু যার (রাঃ) কর্তৃক রাসূল (সাঃ) -কে স্বীকৃতি দেয়ার ক্ষেত্রে আলী (রাঃ) এর ভূমিকা অতুলনীয়। আবু যার (রাঃ) পূর্ব থেকেই জাহেলী যুগের অবস্থা অপছন্দ করতেন, মূর্তি পূজাকে অস্বীকার করতেন এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করত তাকে অপছন্দ করতেন। আর আবু যার (রাঃ) ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তিন বছর যাবত কোনো কিবলা নির্ধারণ করা ছাড়াই আল্লাহর জন্য সালাত আদায় করেছেন। তখন তিনি বলতেন, তিনি একনিষ্ঠ দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত। অতঃপর যখন নবী (সাঃ) -এর ব্যাপারে শুনলেন, তখন মক্কায় আগমন করলেন; কিন্তু নবী (সাঃ) সম্পর্কে কাউকে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করলেন না। এমনকি রাত হয়ে গেল এবং ঘুমিয়ে গেলেন। তখন আলী (রাঃ) তাকে দেখলেন এবং তিনি বুঝতে পারলেন যে, এই লোক একজন অপরিচিত লোক । আলী (রাঃ) তোকে মেহমান বানালেন, কিন্তু তিনিও কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করলেন না ।

   

অতঃপর পরের দিন সকালে মসজিদে হারামে অবস্থান করতে লাগলেন। এমনকি বিকাল হয়ে গেল। তখন আলী (রাঃ) তাকে আবার দেখতে পেলেন। দ্বিতীয় রাত্রেও তিনি আবু যার (রাঃ) -কে আবার দেখেতে পেলেন এবং সেই রাত্রেও একই ঘটনা ঘটল। অতঃপর আলী (রাঃ) মেহমান বানালেন। তৃতীয় রাত্রেও একই ঘটনা ঘটলো। এবং সেদিন তিনি আবু যার (রাঃ) -কে তার মক্কায় আগমনের কথা জিজ্ঞাসা করলেন। যখন আবু যার (রাঃ) রাতে আলী (রাঃ) -এর প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাসী হলো, তখন আবু যার (রাঃ) বললেন, তিনি রাসুল (সাঃ) -এর সাথে সাক্ষাৎ করতে চান । তখন আলী (রাঃ) বললেন, নিশ্চয়ই তিনি সত্য, তিনি আল্লাহর রাসূল। শোন! যখন আমি সকাল করব তখন তুমি আমার অনুসরণ করিও। যদি আমি রাস্তায় কোন কিছুর ভয়ের আশংকা করি তখন আমি পানি পান করার জন্য দাঁড়িয়ে যাব। অতঃপর যখন আমি সামনে চলতে থাকব তখন আমার পিছনে পিছনে আসিও। এরপর যখন সকাল হলো তখন আলী (রাঃ) তাঁর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করে দিলেন এবং আবু যার (রাঃ) তার অনুসরণ করলেন। এক পর্যায়ে রাসূল (সাঃ) এর সাক্ষাৎ লাভ করলেন। অত:পর তাঁর (নবী-এর) কথা শুনলেন এবং ইসলাম গ্রহণ করলেন। অতঃপর নবী (সাঃ) তাকে বললেন, তুমি তোমার জাতির কাছে ফিরে যাও এবং তাদেরকে আমার বিষয়গুলো
জানিয়ে দাও। 

তথ্যসূত্রঃ
সহীহুস সীরাতুন নাবুবিয়্যাহ লি ইব্রাহীম আল আলী, পৃঃ ৭৩

হিজরতের রাতে

হিজরতের রাতে নবী (সাঃ) আলী (রাঃ) -কে বললেন, এই সবুজ রংয়ের চাদরটি গায়ে জড়িয়ে নিয়ে তুমি আমার বিছানায় শুয়ে যাও । আলী তাই করলেন । আর অপরদিকে কুরাইশরা রাত্রী যাপন করছিল বিভিন্ন বাগ-বিতণ্ডার মধ্য দিয়ে। কে বিছানাওয়ালার উপর আক্রমণ চালাবে। পরিশেষে তারা এ বিষয়ে এক সিদ্ধান্তে পৌঁছল। অতঃপর যখন সকাল হলো তখন তারা সেখানে গিয়ে যে লোক থাকার কথা ছিল তাকে পেল না, বরং আলী (রাঃ) -কে পেল। তখন তারা তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, মুহাম্মদ কোথায়? তখন আলী (রাঃ) বললেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই । তখন কুরাইশরা সহজেই বুঝতে পারল যে, মুহাম্মদ (সাঃ) পালিয়ে গেছেন। তখন তারা আলী এর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং তাকে অনেক প্রহার করল। 

অতঃপর তারা তাকে মসজিদে ধরে নিয়ে গেল এবং এক ঘণ্টা আটক করে রাখল। এরপর ছেড়ে দিল। কিন্তু এসব কষ্ট আলী (রাঃ) -কে আরো উৎফুল্ল করে দিল এজন্য যে, রাসূল (সাঃ) তাদের কাছ থেকে চলে যেতে পেরেছেন । তাদের ষড়যন্ত্রে আলী একটুও দুর্বল হননি এবং শত কষ্ট দেয়ার পরও তিনি রাসূল (সাঃ) -এর গন্তব্যস্থলের কথা বলে দেননি ।

   

যেদিন হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) হিজরত করলেন, হযরত আলী (রাঃ) সেদিন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করেন এবং রাত্রী গভীর হলে সফর শুরু করেন । অবশেষে হযরত আলী (রাঃ) মদিনায় পৌঁছলেন । আর দীর্ঘ পথ চলার কারণে তার দুটি পা ফুলে গিয়েছিল । যখন নবী (সাঃ) তাকে দেখলেন, তখন তার প্রতি খুবই সদয় ও বিনয়ী হলেন । (আল কামেল, ২/১০৬)

একজন মহিলা এবং সাহল বিন হানিফ (রাঃ) এর কাহিনী

আলী (রাঃ) কুবায় অবস্থানকালে এমন একজন মহিলার সাক্ষাৎ পান যার স্বামী ছিল না। তিনি দেখেন একজন লোক প্রতি রাত্রে সে মহিলার ঘরে এসে দরজায় করাঘাত করে এবং ঘর থেকে বের হয়ে আসে। সে লোক সাথে করে কি যেন নিয়ে আসে এবং তা ঐ মহিলাকে দেয়, আর মহিলা তা গ্রহণ করে। আলী (রাঃ) বলেন, আমি গোপনীয়ভাবে এই ঘটনার রহস্য জানতে চাইলাম। তারপর ঐ মহিলাকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর বান্দী! ঐ লোকটিকে যে প্রতি রাত্রে তোমার দরজায় করাঘাত করে। আর তুমি দরজা খুলে দাও। অতঃপর সে তোমাকে কি জানি দেয়, আর তুমি তা গ্রহণ কর। অথচ তুমি একজন মুসলিম মহিলা, তদুপরি তোমার স্বামী নেই। তখন মহিলাটি বলল, এ হচ্ছে সাহল বিন হানিফ বিন ওহাব । সে জানে, আমি এমন একজন মহিলা যার কেউ নেই। তাই যখন সন্ধ্যা হয় তখন সে তার সম্প্রদায়ের মূর্তিগুলোর কাছে যায় এবং সেগুলোকে ভেঙ্গে ফেলে । অতঃপর সেগুলো নিয়ে আমার কাছে আসে আর বলে এগুলো তুমি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার কর। আলী (রাঃ) মহিলার এরূপ বর্ণনা শুনে সাহল বিন হানিফের কাহিনীতে খুবই প্রভাবান্বিত হন। এমনকি সাহল বিন হানিফ (রাঃ) আলী (রাঃ) এর কাছেই ইরাকে মৃত্যুবরণ করেন ।


ফাতেমা (রাঃ) -কে বিবাহের প্রস্তাব

আলী ইবনে আবু তালেব বলেন, ফাতেমার ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) -এর কাছে প্রস্তাব দেয়া হয়। অতঃপর আমার একজন দাসী আমাকে বলল, আপনি কি জানেন ফাতেমা এর ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) -এর কাছে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আমি বললাম, না। তখন দাসীটি বলল, অবশ্যই প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। দাসীটি আরো বলল, রাসূল (সাঃ) -এর কাছে এ বিষয় নিয়ে যেতে কিসে আপনাকে বাধা প্রদান করছে? গেলেই তো আপনার সাথে ফাতেমা (রাঃ) -এর বিয়ে দেয়া হবে । আলী (রাঃ) বললেন, আমি বললাম, আমার কি আছে যে, আমার সাথে বিয়ে দিবে? তখন দাসীটি বলল, আপনি যেয়েই দেখেন না ।

   

রাসূল (সাঃ) -কে বলেন, এরপর অবশ্যই রাসূল (সাঃ) আপনার সাথে বিয়ে দিবেন । আলী (রাঃ) বলেন, আমি প্রস্তাব নিয়ে রাসূল (সাঃ) -এর কাছে গেলাম। কিন্তু যখন তার সামনে বসলাম, তখন লজ্জায় জড়োসড়ো হয়ে গেলাম । আল্লাহর কসম! এমতাবস্থায় আমি আমার কথাটি বলতে পারছিলাম না। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, কেন এসেছ? কোনো প্রয়োজন আছে কি? তখন আলী (রাঃ) চুপ থাকলেন । তখন বললেন, তুমি ফাতেমার ব্যাপারে প্রস্তাব নিয়ে এসেছ? তখন আলী (রাঃ) বললেন, জি হ্যাঁ । তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, তোমার কাছে এমন কিছু আছে কি যার দ্বারা তুমি মোহরানা দিবে? আলী বললেন, আল্লাহর কসম! হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! কিছুই নেই। রাসূল (সাঃ) বললেন, বদরের যুদ্ধে প্রাপ্ত তোমার সেই বর্মটি কোথায়? আলী বললেন, ঐ সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয়ই এটা তো একটা সামান্য জিনিস মাত্র, যার মূল্য চারশত দিরহাম মাত্র । আর তা তো আমার কাছেই আছে । তখন রাসূল (সাঃ) ঐ অর্থের বিনিময়ে বিক্রিত অর্থের মাধ্যমে আলী (রাঃ) -এর সাথে ফাতেমা (রাঃ) -এর বিয়ে পরিয়ে দেন।





*****************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language


.

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url