রমযানের সওগাত - ০৩ || প্রতিদিন রমযান বিষয়ক ১০টি সহীহ হাদিস





রোজাদারের ভুলবশতঃ পানাহার


وَقَالَ عَطَاءٌ إِنِ اسْتَنْثَرَ، فَدَخَلَ الْمَاءُ فِي حَلْقِهِ، لاَ بَأْسَ، إِنْ لَمْ يَمْلِكْ. وَقَالَ الْحَسَنُ إِنْ دَخَلَ حَلْقَهُ الذُّبَابُ فَلاَ شَيْءَ عَلَيْهِ. وَقَالَ الْحَسَنُ وَمُجَاهِدٌ إِنْ جَامَعَ نَاسِيًا فَلاَ شَيْءَ عَلَيْهِ

“আতা (রহঃ) বলেন, নাকে পানি দিতে গিয়ে যদি তা কণ্ঠনালীতে ঢুকে যায়, আর সে ফিরাতে সক্ষম না হয় তাহলে কোন দোষ নেই। হাসান (রহঃ) বলেন, সায়িম ব্যক্তির কণ্ঠনালীতে মাছি ঢুকে পড়লে তার কিছু করতে হবে না। হাসান এবং মুজাহিদ (রহঃ) বলেছেন, সায়িম ব্যক্তি যদি ভুলবশতঃ স্ত্রী সহবাস করে ফেলে, তবে তার কিছুই করতে হবে না।”

“আবদান (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রোযাদার ভুলক্রমে যদি আহার করে বা পান করে ফেলে, তাহলে সে যেন তার সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পুরা করে নেয়। কেননা আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন।”
   
*ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৮০৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৩৩


রোজাদারের মিসওয়াক ব্যবহার

“আমির ইবন রাবী’আ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (সাঃ) কে সাওম অবস্থায় অসংখ্যবার মিসওয়াক করতে দেখেছি। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমার উম্মতের জন্য যদি কষ্টকর মনে না করতাম তাহলে প্রতিবার উযুর সময়ই আমি তাদের মিসওয়াকের নির্দেশ দিতাম। জাবির (রাঃ) এবং যায়েদ ইবন খালিদ (রাঃ) এর সুত্রে নবী করীম (সাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে এবং তিনি সায়িম এবং যে সায়িম নয় তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য করেননি। আয়িশা (রাঃ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, মিসওয়াক করায় রয়েছে মুখের পবিত্রতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি। আতা (রহঃ) ও কাতাদা (রহঃ) বলেন, সায়িম তার মুখের থুথু গিলে ফেলতে পারে।”

“আবদান (রহঃ) ... হুমরান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ’উসমান (রাঃ) কে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে দেখেছি। তিনি তিনবার হাতের উপর পানি ঢাললেন। এরপর তিনি কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন। তারপর তিনবার চেহারা (মুখমন্ডল) ধুইলেন। এরপর ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুইলেন এবং বামহাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুইলেন। এরপর তিনি মাথা মাসেহ করলেন। তারপর ডান পা তিনবার ধুইলেন তারপর বাম পা তিনবার ধুইলেন। এরপর বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উযূ করতে দেখেছি আমার এ উযূ (ওজু/অজু/অযু)র মতই। এরপর তিনি বলেছেন, যে ব্যাক্তি আমার এ উযূর মত উযূ করে দু’রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে এবং মনে মনে কোন কিছুর চিন্তা-ভাবনায় লিপ্ত হবে না, তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।”

* ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৮১০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৩৪

রমযানে সহবাস করা

“আবদুল্লাহ্ ইবনু মুনীর (রহঃ) ... ’আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, সে তো জ্বলে গেছে। তিনি বললেনঃ তোমার কি হয়েছে? লোকটি বলল, রমযানে আমি স্ত্রী সহবাস করে ফেলেছি। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে (খেজুর ভর্তি) ঝুড়ি এল, যাকে ’আরাক (১৫ সা’ পরিমাণ) বলা হয়। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ অগ্নিদগ্ধ লোকটি কোথায়? লোকটি বলল, আমি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এগুলো সাদকা করে দাও।”

* ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৮১১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৩৫


“আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বসাছিলাম। এমন সময় এক ব্যাক্তি এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি ধ্বংস হয়ে গিয়েছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার কি হয়েছে? সে বলল, আমি সায়িম অবস্থায় আমার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আযাদ করার মত কোন ক্রীতদাস তুমি পাবে কি? সে বলল, না। তিনি বললেনঃ তুমি কি একাধারে দু’মাস সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে পারবে? সে বলল, না। এরপর তিনি বললেনঃ ষাটজন মিসকীন খাওয়াতে পারবে কি? সে বলল, না।

   

রাবী বলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেমে গেলেন, আমরাও এ অবস্থায় ছিলাম। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এক ’আরাক পেশ করা হল যাতে খেজুর ছিল। ’আরাক হল ঝুড়ি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ প্রশ্নকারী কোথায়? সে বলল, আমি। তিনি বললেনঃ এগুলো নিয়ে সাদকা করে দাও। তখন লোকটি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার চাইতেও বেশী অবাবগ্রস্থকে সাদকা করব? আল্লাহর শপথ, মদিনার উভয় লাবা অর্থাৎ উভয় প্রান্তের মধ্যে আমার পরিবারের চাইতে অভাবগ্রস্থ কেউ নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে উঠলেন এবং তাঁর দাঁত (আনইয়াব) দেখা গেল। এরপর তিনি বললেন এগুলো তোমার পরিবারকে খাওয়াও।”

* ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৮১২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৩৬


“উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, এই হতভাগা স্ত্রী সহবাস করেছে রমজানে। তিনি বললেনঃ তুমি কি একটি গোলাম আজাদ করতে পারবে? লোকটি বলল, না। তিনি বললেনঃ তুমি কি ক্রমাগত দু’মাস সিয়াম পালন করতে পারবে? লোকটি বলল, না। তিনি বললেনঃ তুমি কি ষাটজন মিসকীন খাওয়াতে পারবে? সে বলল, না।

এমতাবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এক ’আরাক অর্থাৎ এক ঝুড়ি খেজুর এল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এগুলো তোমার তরফ থেকে লোকদেরকে আহার করাও। লোকটি বলল, আমার চাইতেও বেশী অবাবগ্রস্থ কে? অথচ মদিনার উভয় লাবার অর্থাৎ হাররার মধ্যবর্তী স্থলে আমার পরিবারের চাইতে অধিক অভাবগ্রস্থ কেউ নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে তোমার পরিবারকেই খাওয়াও।”

* ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৮১৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৩৭

রোজা অবস্থায় শিঙ্গা লাগানো বা বমি করা

“ইমাম বুখারী রহঃ বলেন, ইয়াহইয়া ইবনু সালিহ রহঃ আমাকে বলেছেন ... আব হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, বমি করলে সওম ভঙ্গ হয় না। কেননা এতে কিছু বের হয়, ভিতরে প্রবেশ করে না। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে এও বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, সওম ভঙ্গ হয়ে যাবে। প্রথম উক্তিটি বেশি সহীহ। ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) এবং ’ইকরিমাহ (রহঃ) বলেন, কোন কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে সওম নষ্ট হয়; কিন্তু বের হওয়ার কারণে নয়। ইবনু ’উমার (রাঃ) সায়িম অবস্থায় শিঙ্গা লাগাতেন। অবশ্য পরবর্তী সময়ে তিনি দিনে শিঙ্গা লাগানো ছেড়ে দিয়ে রাতে লাগাতেন। আবূ মূসা (রাঃ) রাতে শিঙ্গা লাগাতেন। সা’ঈদ, যায়দ ইবনু আকরাম এবং উম্মু সালামাহ (রাঃ) সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তারা সকলেই সওম পালনকারী অবস্থায় শিঙ্গা লাগাতেন। বুকায়র (রহঃ) উম্মু ’আলকামা (রহঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, আমরা ’আয়িশাহ (রাঃ) এর সামনে শিঙ্গা লাগাতাম, তিনি আমাদের নিষেধ করতেন না। হাসান (রহঃ) হতে একাধিক রাবী সূত্রে মারফূ’ হাদীস আছে যে, শিঙ্গা প্রয়োগকারী এবং গ্রহনকারী উভয়ের সওমই নষ্ট হয়ে যাবে। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, ’আইয়াশ (রহঃ) হাসান (রহঃ) হতে আমার নিকট অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এ কি নবী (সাঃ) হতে বর্ণিত? তিনি বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি বললেন, আল্লাহই সবচেয়ে অধিক জানেন।”

“মু’আল্লা ইবনু আসাদ (রহঃ) ... ইবনু ’আব্বাস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহরিম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন এবং সায়িম অবস্থায়ও শিঙ্গা লাগিয়েছেন।”

* ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৮১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৩৮


“আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) ... সাবিত আল-বুনানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে প্রশ্ন করা হল, আপনারা কি সায়িমের শিঙ্গা লাগানো অপছন্দ করতেন? তিনি বললেন, না। তবে দূর্বল হয়ে যাবার কারণে অপছন্দ করতাম। শাবাবা (রহঃ) শু’বা, (রহঃ) থেকে (عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم‏) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে কথাটি অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন।”

* ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৮১৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৪০

সফরে রোজা না রাখা

“আলী ইবনু ’আবদুল্লাহ (রহঃ) ... ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন এক সফরে আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে বললেনঃ সওয়ারী থেকে নেমে আমার জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ সূর্য এখনো ডুবেনি। তিনি বললেনঃ সওয়ারী থেকে নামো এবং আমার জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তারপর সে সওয়ারী থেকে নেমে ছাতু গুলিয়ে আনলে তিনি তা পান করলেন এবং হাতের ইশারায় বললেনঃ যখন দেখবে রাত এদিক থেকে ঘনিয়ে আসছে তখন বুঝবে, সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারী ব্যাক্তির ইফতারের সময় হয়েছে।”

“জাবীর (রাঃ) এবং আবূ বকর ইবনু ’আইয়াশ (রাঃ) ইবনু আবূ ’আওফা (রাঃ) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, কোন এক সফরে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম।”

* ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৮১৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৪১


আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ ... নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, হামযা ইবনু ’আমর আসলামী (রাঃ) অধিক সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনে অভ্যস্থ ছিলেন। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন, আমি সফরেও কি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে পারি? তিনি বললেনঃ ইচ্ছা করলে তুমি সাওম পালন করতে পার, আবার ইচ্ছা করলে নাও করতে পার।

* ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৮১৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৪৩


“আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) অবস্থায় কোন এক রমজানে মক্কার পথে যাত্রা করলেন। কাদীদ নামক স্থানে পৌছার পর তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভঙ্গ করে ফেললে লোকেরা সকলেই সাওম ভঙ্গ করলেন। আবূ ’আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, ’উসফান ও কুদায়দ নামক দুই স্থানের মধ্যে কাদীদ একটি ঝর্ণা।”

* ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৮২০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৪৪


“মূসা ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা থেকে মক্কায় রওয়ানা হলেন। তখন তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করছিলেন। ’উসফানে পৌছার পর তিনি পানি আনার জন্য আদেশ করলেন। তারপর তিনি লোকদেরকে দেখানোর জন্য পানি হাতের উপর উচুঁ করে ধরে সাওম ভঙ্গ করলেন এবং এ অবস্থায় মক্কায় পৌছলেন। এ ছিল রমজান মাসে। তাই ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বলতেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম পালন করেছেন এবং সাওম ভঙ্গও করেছেন। যার ইচ্ছা সাওম পালন করতে পারে আর যার ইচ্ছা সাওম ভঙ্গ করতে পারে।”

* ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৮২৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৪৮

রমযানের কাযা রোযা আদায়

“ইবনু ’আব্বাস রাঃ বলেন, পৃথক পৃথক রাখলে কোন ক্ষতি নেই। কেননা আল্লাহ বলেছেন, فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ’অন্যদিনে এর সংখ্যা পূর্ণ করবে’ (আল-বাক্বারাঃ ২:১৮৪)। সা’ঈদ ইবনু মুসায়্যাব (রহঃ) বলেছেন, রমাযানের কাযা আদায় না করে যুলহাজ্জ মাসের প্রথম দশকে সওম পালন করা উচিত নয়। ইবরাহীম নাখ’ঈ (রহঃ) বলেন, অবহেলার কারণে যদি পরবর্তী রমযান এসে যায় তাহলে উভয় রমযানের সওম এক সাথে আদায় করবে। মিসকীন খাওয়াতে হবে বলে তিনি মনে করেন না। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একটি মুরসাল হাদীসে এবং ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, সে খাওয়াবে; অথচ আল্লাহ তা’আলা খাওয়ানোর কথাটি উল্লেখ করেননি। বরং তিনি বলেছেন, فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ’অন্য দিনে এর সংখ্যা পূর্ণ করবে’ (আল-বাক্বরাহঃ ২:১৮৪)”

“আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ... ’আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার উপর রমযানের যে কাযা থেকে যেত তা পরবর্তী শাবান ছাড়া আমি আদায় করতে পারতাম না। ইয়াহিয়া (রহঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যস্ততার কারণে কিংবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ব্যস্ততার কারণে।”

* ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৮২৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৫০

ঋতুবতী মহিলার নামাজ রোজা

“আবুয-যিনাদ (রহঃ) বলেন, শরী’আতের হুকুম-আহকাম অনেক সময় কিয়াসের বিপরীতও হয়ে থাকে। মুসলিমের জন্য এর অনুসরণ ছাড়া কোন উপায় নেই। এর একটি উদাহরণ হল যে, ঋতুবতী মহিলা সওমের কাযা করবে কিন্তু স্বলাতের কাযা করবে না।”

“ইবনু আবূ মারইয়াম (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এ কথা কি ঠিক নয় যে হায়য শুরু হলে মেয়েরা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে না এবং সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)ও পালন করে না। এ হল তাদের দ্বীনেরই ত্রুটি।”

* ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৮২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৫১

রোজার কাযা রেখে মৃত্যু হলে

“মুহাম্মদ ইবনু খালিদ (রহঃ) ... ’আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এর কাযা যিম্মায় রেখে যদি কোন ব্যাক্তি মারা যায় তাহলে তার অভিভাবক তার পক্ষ থেকে সাওম আদায় করবে।

ইবনু ওয়াহব (রহঃ) ’আমর (রহঃ) থেকে উক্ত হাদীসটি অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ূব (রহঃ) ইবনু আবূ জা’ফর (রহঃ) থেকেও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।”

* ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৮২৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৫২

   

“সাওমের কাযা যিম্মায় রেখে যার মৃত্যু হয়। হাসান (রহঃ) বলেন, তাঁর পক্ষ হতে ত্রিশজন লোক একদিন সওম পালন করলে হবে।”

“মুহাম্মদ ইবনু ’আবদুর রাহীম (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এক ব্যাক্তি এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মা এক মাসের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) জিম্মায় রেখে মারা গেছেন, আমি কি তার পক্ষ থেকে সাওম কাযা করতে পারি? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ, আল্লাহর ঋণ পরিশোধ করাই হল অধিক যোগ্য।”

“সুলায়মান (রহঃ) বলেন, হাকাম (রহঃ) এবং সালামা (রহঃ) বলেছেন, মুসলিম (রহঃ) এ হাদীস বর্ণনা করার সময় আমরা সকলেই একসাথে উপবিষ্ট ছিলাম তাঁরা উভয়েই বলেছেন যে, ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে মুজাহিদ (রহঃ)-কে এ হাদীস বর্ণনা করতে আমরা শুনেছি।”

“আবূ খালিদ আহমার (রহঃ) ... ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলল, আমার বোন মারা গেছে। ইয়াহইয়া (রহঃ) ও আবূ ম’আবিয়া ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলল, আমার মা মারা গেছেন। ’উবায়দুল্লাহ (রহঃ) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলল, আমার মা মারা গেছে, অথচ তার যিম্মায় মানতের সাওম রয়েছে।”

“আবূ হারীয (রহঃ) ... ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলল, আমার মা মারা গেছে, অথচ তার যিম্মায় পনের দিনের সাওম রয়ে গেছে।”

* ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৮২৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৫৩

রোজাদারের ইফতার

“ইসহাক ওয়াসিতী (রহঃ) ... ’আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন এক সফরে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। আর তিনি ছিলেন সায়িম। যখন সূর্য ডুবে গেল তখন তিনি দলের কাউকে বললেনঃ হে উমুক! উঠ। আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সন্ধ্যা হলে ভাল হতো। তিনি বললেনঃ নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সন্ধ্যা হলে ভাল হতো। তিনি বললেনঃ নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তিনি বললেনঃ নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, দিন তো আপনার এখনো রয়েছে। তিনি বললেনঃ তুমি নামো এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তারপর সে নামল এবং তাঁদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আনল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পান করলেন, তারপর বললেনঃ যখন তোমরা দেখবে, রাত একদিক থেকে ঘনিয়ে আসছে, তখন সায়িম ইফতার করবে।”

* ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৮৩১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৫৫


“আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লোকেরা যতদিন যাবৎ ওয়াক্ত হওয়ামাত্র ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের উপর থাকবে।”

* ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৮৩৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৫৭


“আবদুল্লাহ ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আসমা বিনত আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে একবার মেঘাচ্ছন্ন দিনে আমরা ইফতার করলাম, এরপর সূর্য দেখা যায়। বর্ণনাকারী হিশামকে জিজ্ঞাসা করা হল, তাদের কি কাযা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল? হিশাম (রহঃ) বললেন, কাযা ছাড়া উপায় কি? (অপর বর্ণনাকারী) মা’মার (রহঃ) বলেন, আমি হিশামকে বলতে শুনেছি, তাঁরা কাযা করেছিলেন কি না তা আমি জানি না।”

* ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৮৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৫৯

ঈদুল ফিতরের দিনে সাওম পালন

“আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... বনূ আযহারের আযাদকৃত গোলাম আবূ ’উবায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার ঈদে ’উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর সঙ্গে ছিলাম, তখন তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুই দিনে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে নিষেধ করেছেন। (ঈদুল ফিতরের দিন) যে দিন তোমরা তোমাদের সাওম ছেড়ে দাও। আরেক দিন, যেদিন তোমরা তোমাদের কুরবানীর গোশত খাও।”

“আবূ ’আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, ইবনু ’উয়ায়না (রহঃ) বলেন, যিনি ইবনু আযহারের মাওলা বলে উল্লেখ করেছেন, তিনি ঠিক বর্ণনা করেছেন; আর যিনি ’আবদুর রহমান ইবনু ’আওফ (রাঃ) এর মাওলা বলেছেন, তিনিও ঠিক বর্ণনা করেছেন।”

* ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৮৬৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৯০




******************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity. 
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url