মা’আরেফুল কোরআন - ৫১ || সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ১৪৮-১৫০ || কেবলা পরিবর্তনের তাৎপর্য || দীনী ব্যাপারে বিতর্ক নয়







بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
سورة البقرة

সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ১৪৮-১৫০


 وَ لِکُلٍّ وِّجۡهَۃٌ هُوَ مُوَلِّیۡهَا فَاسۡتَبِقُوا الۡخَیۡرٰتِ ؕ؃ اَیۡنَ مَا تَکُوۡنُوۡا یَاۡتِ بِکُمُ اللّٰهُ جَمِیۡعًا ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ ﴿۱۴۸  وَ مِنۡ حَیۡثُ خَرَجۡتَ فَوَلِّ وَجۡهَکَ شَطۡرَ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ ؕ وَ اِنَّهٗ لَلۡحَقُّ مِنۡ رَّبِّکَ ؕ وَ مَا اللّٰهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعۡمَلُوۡنَ ﴿۱۴۹  وَ مِنۡ حَیۡثُ خَرَجۡتَ فَوَلِّ وَجۡهَکَ شَطۡرَ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ ؕ وَ حَیۡثُ مَا کُنۡتُمۡ فَوَلُّوۡا وُجُوۡهَکُمۡ شَطۡرَهٗ ۙ لِئَلَّا یَکُوۡنَ لِلنَّاسِ عَلَیۡکُمۡ حُجَّۃٌ ٭ۙ اِلَّا الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡا مِنۡهُمۡ ٭ فَلَا تَخۡشَوۡهُمۡ وَ اخۡشَوۡنِیۡ ٭ وَ لِاُتِمَّ نِعۡمَتِیۡ عَلَیۡکُمۡ وَ لَعَلَّکُمۡ تَهۡتَدُوۡنَ ﴿۱۵۰

সূরা আল-বাকারাহ ১৪৮-১৫০ নং আয়াতের অর্থ

(১৪৮) আর সবার জন্যই রয়েছে কেবলা একেক দিকে, যে দিকে সে মুখ করে (ইবাদত করবে)। কাজেই সৎ কাজে প্রতিযোগিতামূলকভাবে এগিয়ে যাও। যেখানেই তোমরা থাকবে, আল্লাহ্, অবশ্যই তোমাদেরকে সমবেত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব বিষয়ে ক্ষমাশীল। (১৪৯) আর যে স্থান থেকে তুমি বের হও, নিজের মুখ মসজিদে হারামের দিকে ফেরাও, নিঃসন্দেহে এটাই হলো তোমার পালনকর্তার পক্ষ থেকে নির্ধারিত বাস্তব সত্য। বস্তুত তোমার পালনকর্তা তোমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অনবহিত নন। (১৫০) আর তোমরা যেখান থেকেই বেরিয়ে আস এবং যেখানেই অবস্থান কর, সে দিকেই মুখ ফেরাও, যাতে করে মানুষের জন্য তোমাদের সাথে ঝগড়া করার অবকাশ না থাকে। অবশ্য যারা অবিবেচক তাদের কথা আলাদা। কাজেই তাদের আপত্তিতে ভীত হয়ো না; আমাকেই ভয় কর। যাতে আমি তোমাদের জন্য আমার অনুগ্রহসমূহ পূর্ণ করে দেই এবং 'তাতে যেন তোমরা সরল পথ প্রাপ্ত হও ।

   

সূরা আল-বাকারাহ ১৪৮-১৫০ নং আয়াতের তাফসীর

তফসীরের সার-সংক্ষেপ
আর (কেবলা পরিবর্তনের দ্বিতীয় তাৎপর্য হলো এই যে, আল্লাহ্ তা’আলার রীতি অনুসারে) প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীদের জন্যই একেকটি কেবলা নির্ধারিত রয়েছে, (ইবাদত করার সময় ) তারা সেদিকেই মুখ করে থাকে। (শরীয়তে মুহাম্মদীও যেহেতু একটি স্বতন্ত্র দীন, কাজেই এর জন্যও একটি কেবলা নির্ধারণ করে দেওয়া হলো। এ তাৎপর্যটি যখন সবাই জানতে পারল) কাজেই (হে মুসলমানগণ, এখন এসব বিতর্ক পরিহার করে) তোমরা সৎকাজের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলকভাবে এগিয়ে যাবার চেষ্টা কর। (কারণ, একদিন তোমাদেরকে নিজেদের মালিকের সম্মুখীন হতে হবে। কাজেই) তোমরা যেখানেই থাক না কেন, আল্লাহ্ তোমাদের সবাইকে (নিজের সামনে) অবশ্যই হাযির করবেন। (তখন সৎকাজের প্রতিদান এবং মন্দ কাজের জন্য শাস্তি ভোগ করতে হবে।) বস্তুত আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন নিশ্চয়ই যাবতীয় বিষয়ে ক্ষমতাশীল। আর (এ তাৎপর্যের তাকীদও এই যে, যেভাবে মুকীম অবস্থায় কা’বার দিকে মুখ করা হয়, তেমনিভাবে মদীনা কিংবা অন্য যে কোনখান থেকে যদি আপনি সফরে গমন করেন, (তখনও নামায পড়ার সময়) নিজের চেহারা মসজিদে হারামের দিকে রাখবেন। (সারকথা, মুকীম অবস্থায় হোক কিংবা সফরকালে হোক, সর্বাবস্থায় এটাই হলো কেবলা।) আর (কেবলার ব্যাপারে) এই সাধারণ নির্দেশই হলো সম্পূর্ণ ও সঠিক এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত। আর আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে এতটুকুও অনবহিত নন।

কেবলা পরিবর্তনের তাৎপর্য

আর (আবারও বলা হচ্ছে যে,) আপনি যেখানে সফরে বেরুবেন, (নামায পড়তে গিয়ে) মসজিদুল হারামের দিকে মুখ করবেন (আর এ হুকুম মুকীম অবস্থায় অবশ্যই পালনীয়)। এছাড়া তোমরা (যারা মুসলমান, সবাই শুনে নাও) যেখানেই থাক না কেন, (নামায পড়তে গিয়ে) নিজেদের চেহারা এই মসজিদুল হারামের দিকেই রাখবে। (এই হুকুমটি এজন্যই নির্দিষ্ট করা হচ্ছে,) যাতে (বিরোধী) লোকদের পক্ষে তোমাদের বিরুদ্ধে এমন (কোন) কথা বলার সাহস থাকে মুহাম্মদ (সা)- যদি শেষ যমানার সেই প্রতিশ্রুত নবী হতেন, তবে তাঁর লক্ষণগুলোর মধ্যে তো একথাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যে, তাঁর আসল কেবলা হবে কা’বাগৃহ, অথচ তিনি বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামায পড়েন। এই হলো কেবলা পরিবর্তনের তৃতীয় তাৎপর্য। তবে হ্যাঁ, এদের মধ্যে যারা (একান্তই) অবিবেচক, অর্বাচীন (তারা এখনও এমন কূট-যুক্তির অবতারণা করবে যে, তিনি যদি নবীই হবেন, তাহলে সমস্ত নবীর বিরুদ্ধে--মসজিদুল হারামের দিকে মুখ করে নামায পড়েন কেমন করে। কিন্তু এহেন অবান্তর আপত্তিতে যেহেতু দীনের কিছুই আসে যায় না, সেহেতু) তাদের কথা আলাদা। সুতরাং তাদের ব্যাপারে এতটুকুও আশংকা করো না--(এবং তাদের জওয়াব দেওয়ার পেছনেও পড়ো না)। একমাত্র আমাকেই ভয় করতে থাক (যাতে আমার বিধি-বিধানের কোন রকম বিরোধিতা না হয়। কারণ, এ ধরনের বিরোধিতা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর)। আর (আমি উল্লিখিত বিধি-বিধান অনুযায়ী আমল করার তওফীকও দিয়েছি) যাতে তোমাদের উপর আমার যে অনুগ্রহ ও করুণারাজি এসেছে, (তোমাদিগকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে) তা পরিপূর্ণ করে দিতে পারি। এবং যাতে তোমরা (পৃথিবীতে ইসলামের) সরল ও সত্যপথের অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত থাকতে পার (যার উপর নিয়ামতের পরিপূর্ণতা নির্ভরশীল) ।

কেবলা পরিবর্তনের আয়াতের মর্ম

আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়
আলোচ্য আয়াতে কেবলা পরিবর্তনের বিষয়টি বলতে গিয়ে-- فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ বাক্যটি তিনবার এবং وَحَيْثُ مَا كُنْتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ বাক্যটি দু’বার করে আবৃত্তি করা হয়েছে। এর একটা সাধারণ কারণ এই যে, কেবলা পরিবর্তনের নির্দেশটি বিরোধীদের জন্য তো এক হৈ-চৈয়ের ব্যাপার ছিলই, স্বয়ং মুসলমানদের জন্যও তাদের ইবাদতের ক্ষেত্রে ছিল একটা বৈপ্লবিক ঘটনা। কাজেই এই নির্দেশটি যদি যথার্থ তাকীদ ও গুরুত্ব সহকারে ব্যক্ত করা না হতো, তাহলে মনের প্রশান্তি অর্জন হয়ত যথেষ্ট সহজ হতো না। আর সেজন্যই নির্দেশটিকে বারবার আবৃত্তি করা হয়েছে। তদুপরি এতে এরূপ ইঙ্গিতও রয়েছে যে, কেবলার এই যে পরিবর্তন এটাই সর্বশেষ পরিবর্তন। এরপর পুনঃপরিবর্তনের আর কোন সম্ভাবনাই নেই।

বয়ানুল-কোরআনের তফসীরে, সংক্ষেপে নির্দেশটি বারবার উল্লেখের যে কারণ বর্ণিত হয়েছে, কুরতুবীতেও প্রায় একই যুক্তির কথা বলে পুনরুল্লেখের যৌক্তিকতা প্রমাণ করা হয়েছে । যথা--প্রথমবারের নির্দেশঃ

فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُ مَا كُنْتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ 

"অতঃপর তুমি তোমার মুখমণ্ডল মসজিদুল হারামের দিকে ফেরাও এবং যেখানেই তুমি থাক না কেন, এরপর থেকে তুমি তোমার চেহারা সেদিকেই ফেরাবে"--এ নির্দেশটি মুকীম অবস্থায় থাকার সময়ের। অর্থাৎ যখন আপনি আপনার স্থায়ী বাসস্থানে অবস্থান করেন, তখন নামাযে মসজিদুল হারামের দিকে মুখ করে দাঁড়াবেন। এরপর সমগ্র উম্মতকে লক্ষ্য করে বলা হচ্ছে যে, حَيْثُ مَا كُنْتُمْ নিজের দেশে বা শহরে যেখানেই থাক না কেন, নামাযে বায়তুল্লাহর দিকেই মুখ ফেরাবে, এ নির্দেশ শুধু মসজিদে নববীতে নামায পড়ার বেলাতেই নয় বরং যে কোন স্থানের লোকেরা নিজ নিজ শহরে যখন নামায পড়বে, তখন তারা মসজিদুল হারামকেই কেবল বানিয়ে নামায পড়বে।

এ নির্দেশ দ্বিতীয়বার পুনরুল্লেখ করার পূর্বে وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ অর্থাৎ “যেখানেই তুমি বের হয়ে যাও না কেন” কথাটা যোগ করে বোঝানো হয়েছে যে, নিজ নিজ বাসস্থানে মুকীম থাকা অবস্থায় যেমন তোমরা মসজিদুল হারামের দিকে মুখ করে নামায পড়বে, তেমনি কোথাও সফরে বের হলেও নামাযের সময় মসজিদুল হারামের দিকে মুখ করেই দাঁড়াবে।

সফরের মধ্যেও কখনো কখনো বিভিন্ন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। সফর ছোট হয়, লম্বাও হয়। অনেক সময় কিছুটা চলার পর যাত্রা বিরতি করতে হয়, আবার সেখান থেকে নতুন করে সফর শুরু হয়। এরূপ অবস্থাতেও কেবলার ব্যাপারে কোন পরিবর্তন হবে না। সফর যে ধরনের এবং যে দিকেই হোক না কেন, নামাযে দাঁড়াবার সময় তোমাদেরকে ঘুরে-ফিরে মসজিদুল হারামের দিকেই মুখ ফেরাতে হবে।

তৃতীয়বারের পুনরুল্লেখের যৌক্তিকতা বর্ণনায় এও বলা হয়েছে যে, বিরোধীরা যাতে কথা বলতে না পারে যে, তওরাত এবং ইঞ্জিলে তো বলা হয়েছিল যে, তওরাত এবং ইঞ্জিলে উল্লিখিত নির্দেশসমূহের মধ্যে আখেরী যমানার প্রতিশ্রুত নবীর কেবলা মসজিদুল হারাম হওয়ার কথা, কিন্তু এ রসূল (সা) কা’বার পরিবর্তে বায়তুল মোকাদ্দাসকে কেবলা করে নামায পড়ছেন কেন?

وَلِكُلٍّ وِجْهَةٌ هُوَ مُوَلِّيهَا  শব্দটিতে وِجْهَةٌ শব্দটির আভিধানিক অর্থ এমন বস্তু যার দিকে মুখ করা হয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, এর অর্থ কেবলা। এক্ষেত্রে হযরত উবাই ইবনে কা’ব وِجْهَةٌ-এর স্থলে قِبْلَةٌ ও পড়েছেন বলে বর্ণিত রয়েছে।

তফসীরের ইমামগণের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত মোতাবেক আয়াতের অর্থ দাঁড়ায় এই প্রত্যেক জাতিরই ইবাদতের সময় মুখ করার জন্য একটা নির্ধারিত কেবলা চলে আসছে। সে কেবলা আল্লাহর তরফ হতে নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে অথবা তারা নিজেরাই তা নির্ধারণ করে নিয়েছে। মোটকথা, ইবাদতের ক্ষেত্রে প্রত্যেক জাতিই কোন না কোন দিকে মুখ করে দাঁড়ায়। এমতাবস্থায় আখেরী নবীর উম্মতগণের জন্য যদি কোন একটা বিশেষ দিককে কেবলা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়ে থাকে, তবে তাতে আশ্চর্যান্বিত হওয়ার কি আছে?

দীনী ব্যাপারে বিতর্ক নয়

فَاسْتَبِقُوا الْخَيْرَاتِ - এ আয়াতের পূর্বে বলা হয়েছে যে, প্রত্যেক জাতির নিজস্ব কেবলা চলে আসছে। সুতরাং একের পক্ষে অন্যের কেবলা মান্য না করাই স্বাভাবিক। সে হিসেবে নিজেদের কেবলার যথার্থতা নিয়ে বিরুদ্ধবাদীদের সাথে বিতর্কে অবতীর্ণ হওয়া অর্থহীন। উপরোক্ত বাক্যটির মূল বক্তব্য বিষয় হচ্ছে যে, যখন বোঝা যাচ্ছে যে, এ বিতর্কে তাদের কোন উপকার হবে না, তারা তাদের ঐতিহ্যগত কেবলার ব্যাপারে অন্যের যুক্তি মানবে না, তখন এ অর্থহীন বিতর্কে কালক্ষেপণ না করে তোমাদের আসল কাজে আত্মনিয়োগ করাই কর্তব্য। সে কাজ হচ্ছে সৎকাজে সাধনা নিয়োজিত করে একে অপর থেকে আগে চলে যাওয়ার চেষ্টা করা। যেহেতু অর্থহীন বিতর্কে সময় নষ্ট করা এবং সৎকর্মে প্রতিযোগিতামূলকভাবে অগ্রসর হওয়ার ব্যাপারে আলসেমি প্রদর্শন করা সাধারণত আখিরাতের চিন্তায় গাফলতির কারণে হয়, সে জন্য আখিরাত সম্পর্কে যাদের চিন্তা রয়েছে, তারা কখনও অর্থহীন বিতর্কে জড়িত হয়ে সময় নষ্ট করে না। তারা সব সময় নিজ নিজ কর্তব্য করে যাওয়ার চিন্তায় বিভোর থাকে। এ জন্যই পরবর্তী আয়াতে আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলা হয়েছেঃ

أَيْنَ مَا تَكُونُوا يَأْتِ بِكُمُ اللَّهُ جَمِيعًا - যার মর্মার্থ হচ্ছে, বিতর্কে জয়-পরাজয় এবং সাধারণ লোকের নানা প্রশ্ন থেকে আত্মরক্ষার চিন্তা ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার ব্যাপার। খুব শীঘ্রই এমন দিন আসছে, যখন আল্লাহ্ তা’আলা সমগ্র দুনিয়ার সকল জাতির মানুষকেই একত্র করে স্ব-স্ব আমলের হিসাব গ্রহণ করবেন। সুতরাং বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে যতটুকু সময় পাওয়া যায়, তা সে কঠিন দিনের চিন্তায় ব্যয় করা।

নেক কাজে অনর্থক বিলম্ব করা উচিৎ নয়

فَاسْتَبِقُوا —শব্দ দ্বারা এও বোঝা যায় যে, কোন সৎকাজের সুযোগ পাওয়ার পর তা সমাধা করার ব্যাপারে বিলম্ব করা উচিত নয়। কেননা অনেক সময় ইচ্ছাকৃত বিলম্বের ফলে সে কাজ সমাধা করার তওফীক ছিনিয়ে নেওয়া হয়। নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, সাদকা, খয়রাত প্রভৃতি সর্ববিধ সৎ কাজে একই অবস্থা হতে পারে। বিষয়টি সূরা আনফালের এক আয়াতে আরো স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছেঃ

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَجِيبُوا لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمْ لِمَا يُحْيِيكُمْ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يَحُولُ بَيْنَ الْمَرْءِ وَقَلْبِهِ অর্থাৎ--“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্ এবং তাঁর রসূলের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তা বাস্তবায়ন করতে সচেষ্ট হও, যখন তাঁরা তোমাদেরকে নবজীবনদায়িনী বিষয়ের প্রতি আহ্বান জানান। মনে রেখো, অনেক সময় আল্লাহ্ তা’আলা মানুষ এবং তার অন্তরের মধ্যে আড়ালও সৃষ্টি করে থাকেন।”

প্রত্যেক নামাযই কি সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পড়া উত্তম

সৎ কাজ দ্রুত সম্পাদন করার উপরোক্ত নির্দেশের ভিত্তিতে কোন কোন ফিক্হবিদ দলীল গ্রহণ করেছেন যে, প্রত্যেক নামায় সময় হওয়ার সাথে সাথে পড়ে নেওয়া উত্তম। আয়াতের সমর্থনে তাঁরা প্রথম ওয়াক্তে নামায পড়ার ফযীলত সম্বলিত হাদীসও উদ্ধৃত করেন। ইমাম শাফেয়ী (র)-এর অভিমত তা-ই। ইমাম আবূ হানীফা এবং ইমাম মালেক (র) এ ব্যাপারে অন্যান্য হাদীসের ভিত্তিতে কিছুটা ভিন্নমত ব্যক্ত করেছেন। তাঁদের মতে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম যেসব নামায কিছুটা দেরি করে পড়েছেন বা পড়তে বলেছেন, সেগুলো তাঁর অনুসরণে একটু দেরি করে পড়াই উত্তম। অবশিষ্টগুলো প্রথম ওয়াক্তে পড়া ভাল। যেমন সহীহ্ বুখারীতে হযরত আনাস (রা) বর্ণিত রেওয়ায়েতে এশার নামায একটু দেরি করে পড়ার ফযীলত উল্লিখিত হয়েছে। হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন যে, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এশার নামায কিছুটা দেরি করে পড়া পছন্দ করতেন।--(কুরতুবী)

অনুরূপ বুখারী ও তিরমিযী শরীফে হযরত আবূ যর (রা) বর্ণিত এক রেওয়ায়েতে উল্লিখিত হয়েছে যে, এক সফরে হযরত বিলাল (রা) প্রথম ওয়াক্তেই যোহরের আযান দিতে চাইলে হুযূর (সা) তাঁকে এই বলে বারণ করলেন যে, ’দুপুরের গরম জাহান্নামের উত্তাপের একটা নমুনা। সুতরাং একটু ঠাণ্ডা হওয়ার পর আযান দাও।’ এতে বোঝা যায় যে, গরমের দিনে যোহরের নামায তিনি একটু দেরি করে পড়া পছন্দ করতেন। উপরোক্ত বর্ণনাসমূহের ভিত্তিতে ইমাম আবূ হানীফা এবং ইমাম মালেক (র)-এর অভিমত হচ্ছে যে, উল্লিখিত দুই ওয়াক্তে হুযূর (সা) অনুসৃত মুস্তাহাব ওয়াক্ত হওয়ার পর আর দেরি করা উচিত নয়। অন্যান্য ওয়াক্ত যেমন মাগরিবের সময়ে প্রথম ওয়াক্তেই নামায পড়ে নেওয়া উত্তম।

মোটকথা, এ আয়াত দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে, নামাযের ওয়াক্ত হয়ে যাওয়ার পর শরীয়তের দৃষ্টিতে অথবা প্রকৃতিগত কোন বাধার সৃষ্টি না হলে নামায পড়তে দেরি করা উচিত নয়, প্রথম ওয়াক্তে পড়ে নেওয়াই উত্তম। যেসব নামায কিছুটা দেরি করে পড়তে হুযূর (সা) নির্দেশ দিয়েছেন বা নিজে আমল করেছেন কিংবা কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অসুবিধার কারণে দেরি করতে হয়, শুধুমাত্র সেগুলোতে কিছুটা দেরি করা যেতে পারে।






******************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url