রমজানের বিশেষ প্রবন্ধঃ আমরা যেন হেলায় নষ্ট না করি মাহে রমজানের অর্জন







হেলায় নষ্ট না করি মাহে রমজানের অর্জন

আজ রমজানুল মোবারকের দিনগুলো দ্রুত শেষ হয়ে আসছে। রমজান শেষ হতে হাতে গোনা অল্প কয়েকট দিন বাকি আছে। আল্লাহ পাকের দেওয়া উম্মতে মুহাম্মদীর উপর সবচেয়ে নেয়ামত আমরা পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। এই নেয়ামত থেকে আমাদের অর্জন কতটুকু, সামনের দিনগুলোতে এই রমজানের অর্জন ও শিক্ষাকে কিভাবে কাজে লাগাবো এ পরিপ্রেক্ষিতে দু-চারটি কথা আপনাদের খেদমতে নিবেদন করছি।

জুমাতুল বিদার হাকিকত

   

প্রথম কথা এই যে, রমজানের শেষ জুমাকে পাক- ভারত উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে জুমাতুল বিদা বা বিদায়ী জুমা বলা হয়। জনসমাজে জুমাতুল বিদা সম্পর্কে বিভিন্ন ফাজায়িলের কথাও প্রচলিত আছে।

প্রথমেই এ বিষয়টি স্পষ্ট করা প্রয়োজন যে, এই নাম অর্থাৎ 'জুমাতুল বিদা' আমি উপমহাদেশের বাইরে অন্য কোথাও শুনিনি। আরব দেশসমূহ বা অন্য কোথাও এভাবে এ দিনকে কোনো নামকরণ করা হয় না ।

দ্বিতীয়ত এ দিন সম্পর্কে লোকমুখে যেসব বর্ণনা প্রচলিত আছে, যেমন এ দিনকে বিশেষ ইবাদতের দিন হিসেবে গণ্য করা, বিশেষ পদ্ধতিতে ইবাদত করা, কোনো দোয়াকে এ দিনের স্বতন্ত্র দোয়া মনে করা—এসব একটিও সঠিক নয় ।

নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না কোথাও ‘জুমাতুল বিদা’ শব্দ ব্যবহার করেছেন, না এ দিনের জন্য বিশেষ কোনো ইবাদত নির্ধারণ করেছেন। সাহাবায়ে কেরাম রাযি.-ও এ দিনের জন্য বিশেষ কোনো ইবাদত নির্ধারণ করেননি। তারা পরবর্তী উম্মতের উদ্দেশে এ বার্তা পৌঁছিয়ে দেননি যে, ভাই, এ দিন এই ইবাদত করতে হবে, এই পদ্ধতিতে জুমাতুল বিদার নামাজ পড়তে হবে, অমুক দোয়া করতে হবে, অমুক সুরা পড়তে হবে; যেমনটি লোকমুখে প্রচলিত আছে। অর্থাৎ এসব বিষয় কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়।

অবশ্য এই দৃষ্টিতে এ দিনের গুরুত্ব অবশ্যই অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি যে, এটি মহিমান্বিত মাস রমজানের একটি দিন; রমজানের দিনগুলোর মধ্যেও জুমার দিন, আবার এমন জুমার দিন যে, এরপর এ বছরের রমজানে আর কোনো জুমা আসবে না। এরপর আর এ বছর এ ধরনের বরকতপূর্ণ রমজানের বরকতপূর্ণ জুমার দিন নসিব হবে না। এসব বিবেচনায় অবশ্যই এটি বরকতপূর্ণ একটি দিন। এ দৃষ্টিভঙ্গিতে কোনো ব্যক্তি যদি এ দিনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে এবং আল্লাহ তাআলার ইবাদত করে; কৃত গুনাহের জন্য ইসতেগফার ও ক্ষমাপ্রার্থনা করে, ভবিষ্যতের কল্যাণকর জীবনের জন্য দোয়া করে, তাহলে তা বৈধ। কিন্তু বিশেষ কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করা যাবে না।

রমজানের শেষ সময়ে করণীয়

দ্বিতীয় বিষয় এই যে, রমজান প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। মাত্র কয়েকটা দিন বাকি আছে। এ সময় দুটি কাজ করণীয়।

প্রথম কাজ হচ্ছে আল্লাহর শোকর আদায় করা। এর শোকর করা যে, আল্লাহ তাআলা আপন ফজল ও করমে আমাদের রমজান নসিব করেছেন, রমজানের রোজা রাখার, রাতে তারাবির নামাজ আদায়ের তাওফিক দান করেছেন। আমাদের রোজা রাখা ও তারাবি আদায় আল্লাহ তাআলার তাওফিকেই, তার ফজল ও করমেই সম্পন্ন হয়েছে। অন্যথায় আল্লাহ মাফ করুন, কত মুসলিম পরিবার এমন আছে, যাদের এই খবরও নেই যে, রমজান কবে এসেছে, কবে গেছে। গাফলতের মাঝেই কেটে গেছে তাদের রমজান। না রোজার তাওফিক হয়েছে, তা তারাবির; না দোয়ার তাওফিক হয়েছে, না তিলাওয়াতের। আল্লাহ হেফাজত করুন। আল্লাহ আমাদেরকে এ শ্রেণির লোকদের অন্তর্ভুক্ত না করুন।

সুতরাং এ বিষয়ে আল্লাহর শোকর করা কর্তব্য যে, আল্লাহ আমাদের সেসব লোকদের অন্তর্ভুক্ত না করে এমন লোকদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন, যাদের ঘরে বাস্তবেই রমজান এসেছে।

কোনো ইবাদতকে তুচ্ছজ্ঞান করতে নেই

অনেকে নিজের ইবাদতকে তুচ্ছরূপে তুলে ধরতে বিভিন্ন কথা বলে থাকে । অনেক সময় এ ক্ষেত্রে সীমা ছাড়িয়ে ফেলে এবং পরিণামে এমন কথা বলে বসে, যা আল্লাহ প্রদত্ত তাওফিকের সুস্পষ্ট না-কদরি ও না-শোকরি।

‘আরে ভাই, আমরা আর কী রোজা রাখব! এ তো রোজা না, কিছুক্ষণ উপবাস থাকা মাত্র। রোজাই হয়নি! আমরা আর কী নামাজ পড়েছি! নামাজ তো নয়, কিছুক্ষণ ওঠা-বসা, ঠোকর মারা!’

   

এগুলো শোকরের কথা নয়, কৃতজ্ঞতার ভাষা নয়। আল্লাহ তাআলা যে আপন দয়া ও অনুগ্রহে তার দরবারে হাজিরির ও কপাল স্পর্শ করার তাওফিক দান করেছেন, সেজন্য প্রথমে শোকর তো আদায় করুন। আলহামদুলিল্লাহ! আপনার কপাল তো স্পর্শ করেছে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবার! তুচ্ছ কোনো দরবার নয়! ইকবাল মরহুমের ভাষায়-

یہ ایک سجدہ جسے تو گراں سمجھتا ہے ہزاروں سجدہ سے دیتا ہے آدمی کو نجات

স্রষ্টার তরে এই একটি সিজদা, যাকে তুমি ভাবছ তুচ্ছ-অতি তুচ্ছ, এত মুক্তি দেয় ইনসান ও ইনসানিয়াতকে হাজারো প্রণামের দাসত্ব হতে।

কবুল হোক না হোক, তারপরও ইবাদত করতে পারা আল্লাহর একটি নিয়ামত। এ সিজদার সম্পর্ক তো আপনার স্রষ্টার সঙ্গে, এ বিনয় তো আপনার রবের শানে। সুতরাং ইবাদতের তাওফিক তুচ্ছ কোনো বিষয় নয়। আল্লাহর এই নিয়ামতের, দয়া ও অনুগ্রহের শোকর আদায় করুন। অকৃতজ্ঞতাপূর্ণ মন্তব্য-উক্তি পরিহার করুন। আল্লাহ রোজা রাখার, তারাবি পড়ার, কুরআন তিলাওয়াত ও তাসবিহ জিকিরের তাওফিক দিয়েছেন বলে শোকর-বাক্য উচ্চারণ করুন।

শোকরের পাশাপাশি চাই ইসতেগফার

হ্যাঁ, এটি পূর্ণ বাস্তবতা যে, আমাদের কোনো ইবাদতই এমন নয়, যা পূর্ণ আদবের সঙ্গে, ভাব-গাম্ভীর্যের সঙ্গে, খুশু-খুজু ও বিনয়-নম্রতার সঙ্গে যেভাবে আদায় করা উচিত ছিল, সেভাবে আদায় হয়েছে। আল্লাহ তাআলার তাওফিক শামিলে হাল ছিল বলে ইবাদতের তাওফিক হয়েছে। কিন্তু আমাদের ত্রুটি ও ভুলও ছিল। সুতরাং প্রথম কর্তব্য শোকরের পর দ্বিতীয় কর্তব্য হচ্ছে ইসতেগফার।

একদিকে আল্লাহ পাকের তাওফিক দানের ওপর শোকর, অপরদিকে নিজের অলসতা, ত্রুটি ও ভুলের জন্য ইসতেগফার। আল্লাহর দরবারে দু- হাত প্রসারিত করে করজোরে নিবেদন করু

“হে আল্লাহ, আপন দয়া ও অনুগ্রহে আপনিই মাহে রমজান দান করেছেন, রোজা রাখার তাওফিক আপনিই দিয়েছেন, নামাজ পড়ার তাওফিক আপনিই দিয়েছেন, তিলাওয়াতের তাওফিকও আপনারই দান। হে আল্লাহ, এই সব নিয়ামতের জন্য আপনার শোকর আদায় করছি। কিন্তু এসব ইবাদতের কোনটিই আমরা হক আদায় করে করতে পারিনি। নামাজ যেরূপ খুশু-খুজুর সঙ্গে আদায় করা উচিত ছিল, আদায় করতে পারিনি। রোজার আদব বজায় রাখতে পারিনি। কুরআন তিলাওয়াতের হক আদায় করতে পারিনি। হে আল্লাহ, আমাদের এসব ত্রুটির কারণে আমরা আপনার দরবারে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি, ইসতেগফার করছি; আমাদের ভুল-ত্রুটি মার্জনা করুন।” 

আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সুন্নাত হলো, বান্দা যখন কোনো নেক আমল করার পর ইসতেগফার করে, কায়মনোবাক্যে উচ্চারণ করে- হে আল্লাহ, আমি আবদিয়াত ও দাসত্বের দাবি আদায় করতে পারিনি; তখন আল্লাহ তার সমস্ত ত্রুটি-বিচ্যুতি মার্জনা করেন এবং আপন দয়া ও অনুগ্রহে তার সকল ইবাদত কবুল করে নেন।

দেখুন, আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে মুমিন বান্দাদের গুণ-বৈশিষ্ট্য আলোচনা করতে গিয়ে ইরশাদ করেছেন-

كَانُوا قَلِيْلًا مِنَ الَّيْلِ مَا يَهْجَعُوْنَ

তারা রাতের অল্প সময়ই ঘুমাত। [সুরা যারিয়াত: ১৭]

তারা রাতে কম ঘুমায়। রাতের অধিকাংশ সময় আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান থাকে, আল্লাহকে ডাকে, আল্লাহর জিকির করে। তাদের পার্শ্বদেশ পৃথক থাকে শয্যা হতে, রাতের সিংহভাগ কাটে স্রষ্টার সকাশে; জায়নামাজে সিজদার চিহ্ন এঁকে।

এর পরের আয়াতেই আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

وَ بِالْأَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُونَ

এবং তারা সাহরির সময় ইসতেগফার করত। [সুরা যারিয়াত: ১৮]

সারা রাত আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান থাকার পর, ইবাদতে নিমগ্ন থাকার পর যখন সুবহে সাদিকের সময় ঘনিয়ে আসে, তখন তারা আল্লাহর দরবারে ইসতেগফার করে।

এ আয়াত নাজিল হওয়ার পর হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রাযি. নবীজিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, 'আল্লাহর রাসুল, সে তো সারা রাত ইবাদত করেছে, সে কেন ইসতেগফার করবে?!

ইসতেগফার তো করা হয় কোনো গুনাহ করা হলে। এই ইবাদতগুজার বান্দা কোন গুনাহ হতে তাওবা-ইসতেগফার করবে?

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন, 'রাতভর সে যে ইবাদত করেছে, তাতে যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে গেছে, তার জন্য ইসতেগফার করবে।

কুরআন ও সুন্নাহর মাধ্যমে এভাবেই আমাদেরকে মৌলিক একটি আদব শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। আর এতে কল্যাণও আমাদের। আদবটি হলো, যখনই আল্লাহ পাক কোনো ইবাদত করার তাওফিক দান করেন, তারপরই দুটি কাজ করো। এক. ইবাদতের তাওফিক হওয়ায় আল্লাহর শোকর করো। দুই. নিজের ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য ইসতেগফার করো ।

এভাবে প্রতিটি ইবাদতের পর শোকর ও ইসতেগফার করে নিলে আশা করা যায়, আল্লাহ আপন দয়া ও অনুগ্রহে আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে দিয়ে ইবাদতসমূহ কবুল করে নেবেন ।

বাকি মুহূর্তগুলোও কাজে লাগান

আপনাদের উদ্দেশে দ্বিতীয় নিবেদন এই যে, রমজানুল মোবারকের বরকতপূর্ণ সময় শেষ হওয়ার পথে। কয়েকদিন মাত্র বাকি আছে। এই বাকি সময়টুকুর গুরুত্ব যথাযথভাবে উপলব্ধি করা উচিত। এ মহামূল্যবান সময়কে গনিমত মনে করা উচিত। পেছনের সাতাশ আটাশ দিন যেভাবেই কাটিয়ে থাকি, কিছু ইবাদতের তাওফিক হয়তো হয়েছে, হয়তো গাফলতিও হয়েছে, কিন্তু আল্লাহ পাকের মাগফিরাত ও ক্ষমার দরজা এখনও খোলা আছে। আল্লাহ তাআলা তাওফিক দিলে সামান্য সময়েও মানুষের জীবনের গতিপথ বদলে যেতে পারে। তাই পেছনের গাফলতির কথা ভুলে যান, সামনের এই মহামূল্যবান মুহূর্তগুলো কাজে লাগান ।

আল্লাহর দরজা এখনও খোলা। আল্লাহ তো কুরআনে বলেছেন-

يَأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا

হে মুমিনগণ, আল্লাহর কাছে আন্তরিক তাওবা করো । [সুরা তাহরীম : ৮] 

আল্লাহু আকবার! অনুগ্রহের কী চমৎকার প্রকাশভঙ্গি! আল্লাহ যেন বলছেন, তাওবার দরজা সর্বদা খোলা। চব্বিশ ঘণ্টা খোলা। তোমার জীবনে অন্তিম মুহূর্ত আসার পূর্ব পর্যন্ত খোলা। সুতরাং যখনই কোনো সতর্কবাণী শোনো, ফিরে এসো আমার দিকে।

باز آ باز آ چه هستی باز آ گر کافرو بت پرستی باز آ این درگاه ما در گاه نا امید نیست صد بار تو به شکستی باز آ

এ পয়গাম আল্লাহর পক্ষ থেকে! ফিরে এসো, বান্দা! ফিরে এসো। যা কিছু হোক, যত কিছু হোক, ফিরে এসো আমার কাছে। যদি কাফিরও হও, করে থাক কুফরি, কিংবা হও পৌত্তলিক, করে থাক মূর্তিপূজা; তারপরও ফিরে এসো আমার কাছে। তাওবা করে নাও। আমার এই দরবার নিরাশ হয়ে ফিরে যাওয়ার দরবার নয়। শতবার তাওবা করেছ, শতবারই ভেঙেছ, তবুও ফিরে এসো!

এ তো এক হাদিসের মর্মকথা, যাতে রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

مَا أَصَرَّ مَنِ اسْتَغْفَرَ، وَإِنْ عَادَ فِي الْيَوْمِ سَبْعِينَ مَرَّةٍ

যে ব্যক্তি আল্লাহর দরবারে তাওবা করতে থাকে, নিজের গুনাহর জন্য ক্ষমা চাইতে থাকে, আল্লাহ তাকে গুনাহর কাজে লিপ্ত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করবেন না; যদিও সে দিনে সত্তরবার তাওবা থেকে ফিরে আসে।

বান্দা যদি কায়মনোবাক্যে হাত তুলে বলে, হে আল্লাহ! আমি কমজোর, আমি দুর্বল; শয়তান ও নফসের প্ররোচনায় গুনাহ করে ফেলেছি। হে আল্লাহ, আপনি দয়া করে মায়া করে ক্ষমা করে দিন। আমি ভবিষ্যতের জন্য ওয়াদা করছি, আর গুনাহর পথে ফিরে যাব না।

এভাবে তাওবা করতে পারলে আল্লাহ তার দোয়া প্রত্যাখ্যান করবেন না; বরং তাকে ক্ষমা করে দেবেন।

“শতবার তাওবা ভঙ্গ করেছ; তবুও ফিরে এসো'—এমন করুণাপূর্ণ আহ্বান আর কোনো দরবারে আছে?! এ তো কেবল রহমানের দরবারেরই আহ্বান!

আল্লাহর দরবার হতে নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। দয়াময় আল্লাহ তো গুনাহগার বান্দাদের ডেকে বলছেন-

(قُلْ يَعِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَّحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ
يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ)

বলে দাও, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজ সত্তার ওপর সীমালঙ্ঘন করেছে, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত পাপ ক্ষমা করেন। নিশ্চয়ই তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [সুরা যুমার: ৫৩]

ইমাম তিরমিজি, সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ৩৫৫৯ ও ইমাম আবু দাউদ, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১৫১৪।

অসীম করুণার আধার আল্লাহ তাআলা তো ইরশাদ করেছেন-

مَا يَفْعَلُ اللهُ بِعَذَا بِكُمْ إِنْ شَكَرْتُمْ وَأَمَنْتُمْ

তোমরা যদি কৃতজ্ঞ হয়ে যাও এবং (সত্যিকারভাবে) ঈমান আনো, তবে আল্লাহ তোমাদেরকে শাস্তি দিয়ে কী করবেন?! [সুরা নিসা: ১৪৭]

যে মহান সত্তা ডেকে ডেকে বলছেন তার দরবার হতে নিরাশ না হতে, বান্দা যদি তার রহমত হতে নিরাশ হয়ে যায়, তাহলে কত বড় অবাধ্যতা হবে! কত বড় অকৃতজ্ঞতার বিষয় হবে!
ফজিলতের মুহূর্তগুলো যেন হেলায় নষ্ট না হয়।

সুতরাং বাকি সময়গুলো আল্লাহর ইবাদতের মাঝে কাটানোর চেষ্টা করা উচিত। আজকের রাত রমজানের উনত্রিশতম রাত। হতে পারে এটি শবে কদরের রাত। হতে পারে এটিই এ বছরের রমজানের শেষ রাত। এ রাত আল্লাহর দরবারে হাজিরির রাত। এ রাত দরবারে ইলাহিতে অনুনয়-বিনয় করার রাত। এ রাত শোকর আদায়ের রাত। এ রাত ইসতেগফার ও ক্ষমাপ্রার্থনার রাত। এ গুরুত্বপূর্ণ রাতকে অর্থহীন-অন্যায় কাজ ও ব্যস্ততার মাঝে কাটানো থেকে যথাসম্ভব বেঁচে থাকুন ।

   

বর্তমান সময়ে তো এই ফিতনার বিস্তার ঘটেছে যে, মানুষ রমজান মাসের এই শেষ রাতগুলোকে ঈদের প্রস্তুতিতে ব্যয় করে। বাজারে, দোকান-পাটে কাটায়। বাজারে তো গুনাহও হয়। রমজানের বরকতপূর্ণ রাত মানুষ কাটিয়ে দেয় গান-বাজনা শুনে! রমজানের মোবারক রজনী মানুষ কাটিয়ে দেয় বাজারে তর্ক-বিতর্ক আর পণ্যের মূল্য নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ করে !

ভাই, এ তো এমন নির্বুদ্ধিতা যে, আল্লাহ তাআলা আসমান থেকে স্বর্ণের বারিধারা বর্ষণ করছেন আর আমরা তা এই বলে ফিরিয়ে দিচ্ছি যে, আমার এর প্রয়োজন নেই। আমি পথে পড়ে থাকা ওই কংকরগুলো কুড়িয়ে নেব, ওগুলো সংগ্রহে সময় ব্যয় করব; ওগুলোর জন্যই তর্ক-বিবাদ, মারামারি করব।

নিঃসন্দেহে ঈদের দিন উত্তম পোশাক পরিধান করা সুন্নাত। আল্লাহর রাসুল ঈদের দিন উত্তম পোশাক পরিধান করতে বলেছেন। কিন্তু উত্তম পোশাকের উদ্দেশ্য কী? আপন সামর্থ্য অনুযায়ী যে পোশাক সর্বোত্তম, তা- ই পরিধান করো- এই হলো বিধান। উদ্দেশ্য এই নয় যে, ধার-কর্জ করে, ঘুষের টাকা দিয়ে, হারাম পন্থায় পয়সা উপার্জন করে তা দিয়ে উত্তম পোশাক কিনতে হবে। আপন স্ত্রী-সন্তানদের হারাম উপার্জনের পোশাকে সজ্জিত করতে হবে।

মাসআলা ছিল সুন্নাতের। ঈদের দিন আল্লাহপ্রদত্ত নিয়ামতের শোকরিয়াস্বরূপ আপন সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করা হলো সুন্নাত। কিন্তু এ উদ্দেশ্যে ধার-কর্জ করা, এ উদ্দেশ্যে মানুষের কাছে হাত পাতা, ঘুষ খাওয়া, ধোঁকা দিয়ে অন্যের অর্থ আত্মসাৎ করা; তারপর সে পয়সা দিয়ে সুন্নাত আদায়ে সচেষ্ট হওয়া—এর কোনো বৈধতা নেই । তদ্রূপ এ উদ্দেশ্যে ফজিলতের মুহূর্তগুলোকে অর্থহীন তর্ক-বিতর্কে ব্যয় করা, বাজারে সময় কাটানো নির্বুদ্ধিতা ছাড়া কিছুই নয়।

নিজের সামান্য উপার্জনে তুষ্ট থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী উত্তম পোশাকের ব্যবস্থা যদি করা হয়, তাতে আল্লাহ এত বরকত দেবেন, শোকরিয়ার বিনিময়ে এমন এমন পুরস্কার দান করবেন, যা শানদার অতি মূল্যবান পোশাকে পাওয়া যাবে না। হালাল অল্প হলেও তাতে আল্লাহ অনেক বরকত দান করেন। হারাম যত বেশিই হোক, তাতে কোনো বরকত নেই । হারামে কেবল অকল্যাণ আর অভিশাপ। হারামের কারণেই আসে অকল্যাণ, আসে রোগ-ব্যাধি, আসে দুর্যোগ-দুর্বিপাক। মানুষ বোঝে না এগুলোর নেপথ্য কারণ ।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই সব নসিহতের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। শোকর ও ইসতেগফার, তাওবা ও দোয়ার ইহতেমাম করার তাওফিক দান করুন। জীবনের বাকি অংশটুকু তার সন্তুষ্টি অনুযায়ী কাটানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।




****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url