মা’আরেফুল কোরআন - ৪৯ || কেবলামুখী হওয়ার কুরআনিক মাসআলা || কেবলামুখী হওয়ার কুরআনিক মাসআলা






بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
سورة البقرة

সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ১৪৪


   


সূরা আল-বাকারাহ ১৪৪ নং আয়াতের অর্থ

 قَدۡ نَرٰی تَقَلُّبَ وَجۡهِکَ فِی السَّمَآءِ ۚ فَلَنُوَلِّیَنَّکَ قِبۡلَۃً تَرۡضٰهَا ۪ فَوَلِّ وَجۡهَکَ شَطۡرَ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ ؕ وَ حَیۡثُ مَا کُنۡتُمۡ فَوَلُّوۡا وُجُوۡهَکُمۡ شَطۡرَهٗ ؕ وَ اِنَّ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ لَیَعۡلَمُوۡنَ اَنَّهُ الۡحَقُّ مِنۡ رَّبِّهِمۡ ؕ وَ مَا اللّٰهُ بِغَافِلٍ عَمَّا یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۱۴۴


(১৪৪) নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বারবার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই আমি আপনাকে সেই কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব, যাকে আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি মসজিদুল-হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকে মুখ কর। যারা আহলে-কিতাব, তারা অবশ্যই জানে যে, এটাই ঠিক পালনকর্তার পক্ষ থেকে। আল্লাহ বেখবর নন সেই সমস্ত কর্ম সম্পর্কে যা তারা করে।

সূরা আল-বাকারাহ ১৪৪ নং আয়াতের তাফসীর

তফসীরের সার-সংক্ষেপ
(আপনি মনে মনে কা’বাকে কেবলা করার বাসনা পোষণ করেন এবং ওহীর আশায় বারবার আকাশের দিকে চোখ তুলে দেখেন যে, বোধ হয় ফেরেশতা নির্দেশ নিয়ে আসছে। অতএব) নিশ্চয় আমি আপনাকে বারবার আকাশের দিকে তাকাতে দেখছি--(আপনার মনস্তুষ্টি আমার লক্ষ্য) এ কারণে আমি (ওয়াদা করছি যে,) আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দিব, যাকে আপনি পছন্দ করেন। নিন, আমি সাথে সাথেই নির্দেশ দিয়ে দিছি যে,) এখন থেকে নামাযের মধ্যে আপন চেহারা মসজিদে হারামের দিকে করুন (এ নির্দেশ একমাত্র আপনার জন্যই নয়; বরং আপনি এবং আপনার সম্প্রদায়ও তা-ই করবেন।) যেখানেই যে থাক (মদীনায় অথবা অন্যত্র, এমনকি স্বয়ং বায়তুল মোকাদ্দাসে থাকলেও) স্বীয় মুখমণ্ডল সে (মসজিদে হারামের) দিকেই কর। (এ কেবলা নির্ধারণ সম্পর্কে) আহলে কিতাবও (সাধারণ আসমানী গ্রন্থের ভবিষ্যদ্বাণীর প্রেক্ষিতে) অবশ্যই জানতো যে, (শেষ যমানার পয়গম্বরের কেবলা এরূপ হবে এবং) এ নির্দেশ সম্পূর্ণ ঠিক (এবং) তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকেই (আগত। কিন্তু হঠকারিতাবশত তারা তা স্বীকার করে না)। আল্লাহ তা’আলা তাদের কর্মতৎপরতা সম্পর্কে বে-খবর নন।

   

সূরা আল-বাকারাহ ১৪৪ নং আয়াতের আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়

আলোচ্য আয়াতের প্রথম বাক্যে কা’বার প্রতি রসূলুল্লাহ (সা)-এর আকর্ষণের কথা ব্যক্ত হয়েছে। এ আকর্ষণের বিভিন্ন কারণ বর্ণিত হয়েছে। এসব কারণের মধ্যে কোন বিরোধ নেই--সবই সম্ভবপর। উদাহরণত মহানবী (সা) ওহী অবতরণ ও নবূয়ত-প্রাপ্তির পূর্বে স্বীয় স্বভাবগত ঝোঁকে দীনে ইবরাহিমীর অনুসরণ করতেন। ওহী অবতরণের পর কোরআন ও তাঁর শরীয়তকে দীনে-ইবরাহিমীর অনুরূপ বলেই আখ্যা দিয়েছে। হযরত ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আ)-এর কেবলাও কা’বাই ছিল।

আরও কারণ ছিল এই যে, আরব গোত্রগুলো মৌখিকভাবে হলেও দীনে ইবরাহিমী স্বীকার করত এবং নিজেদেরকে তার অনুসারী বলে দাবি করত। ফলে কা’বা মুসলমানদের কেবলা হয়ে গেলে তারা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারত। সাবেক কেবলা বায়তুল মোকাদ্দাস দ্বারা আহলে কিতাবদের আকৃষ্ট করা উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু ষোল-সতের মাসের অভিজ্ঞতার পর সে উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যায়। কারণ, মদীনার ইহুদীরা এর কারণে ইসলামের নিকটবর্তী হওয়ার পরিবর্তে দূরে সরে যাচ্ছিল।

মোটকথা, কা’বা মুসলমানদের কেবলা সাব্যস্ত হোক--এটাই ছিল মহানবী (সা)-এর আন্তরিক বাসনা। তবে আল্লাহর নৈকট্যশীল পয়গম্বরগণ কোন দরখাস্ত ও বাসনা পেশ করার অনুমতি আছে বলে না জানা পর্যন্ত আল্লাহর দরবারে কোন দরখাস্ত ও বাসনা পেশ করেন না। এতে বোঝা যায় যে, মহানবী (সা) এ দোয়া করার অনুমতি পূর্বাহ্ণেই পেয়েছিলেন । এজন্য তিনি কেবলা পরিবর্তনের দোয়া করেছিলেন এবং তা কবূল হবে বলে আশাবাদীও ছিলেন। এ কারণেই তিনি বারবার আকাশের দিকে চেয়ে দেখতেন যে, ফেরেশতা নির্দেশ নিয়ে আসছে কিনা! আলোচ্য আয়াতে এ দৃশ্যটি বর্ণনা করার পর প্রথমে দোয়া কবূল করার ওয়াদা করা হয়-- فَلَنُوَلِّيَنَّكَ অর্থাৎ ’আমি আপনার চেহারা মোবারক সে-দিকেই ফিরিয়ে দিব’ যেদিকে আপনি পছন্দ করেন। অতঃপর তৎক্ষণাৎ সেদিকে মুখ করার আদেশ নাযিল করা হয়, যথা فَوَلِّ وَجْهَكَ এর বর্ণনা পদ্ধতিটি বিশেষ আনন্দদায়ক। এতে প্রথমে ওয়াদার আনন্দ ও পরে ওয়াদা পূরণের আনন্দ একই সাথে উপভোগ করা যায়। (---কুরতুবী, জাসসাস মাযহারী)

কেবলামুখী হওয়ার মাসআলা

পূর্বে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের কাছে সব দিকই সমান। পূর্ব-পশ্চিম আল্লাহরই মালিকানাধীন। কিন্তু উম্মতের স্বার্থে সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য একটি দিককে কেবলা হিসাবে নির্দিষ্ট করে সবার মাঝে ধর্মীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তবে এ দিকটি বায়তুল মোকাদ্দাসও হতে পারত। কিন্তু মহানবী (সা)-এর আন্তরিক বাসনার কারণে কা'বাকে কেবলা সাব্যস্ত করে আলোচ্য আয়াতে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখানে......... অর্থাৎ—'কা'বার দিকে অথবা বায়তুল্লাহর দিকে মুখ কর' বলার পরিবর্তে........... (অর্থাৎ—মসজিদে হারামের দিকে) বলা হয়েছে। এতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা স্পষ্ট হয়ে গেছে।

   

প্রথমত, যদিও আসল কেবলা বায়তুল্লাহ তথ্য কা'বা কিন্তু কা'বার দিকে মুখ করা সেখান পর্যন্তই সম্ভব, যেখান থেকে তা দৃষ্টিগোচর হয়। যারা সেখান থেকে দূরে এবং কা'বা তাদের দৃষ্টির অগোচরে থাকে, তাদের উপরও হুবহু কা'বার দিকে মুখ করার কড়াকড়ি আরোপ করা হলে, তা পালন করা খুবই কঠিন হতো। বিশেষ যন্ত্রপাতি ও অঙ্কের মাধ্যমেও নির্ভুল দিক নির্ণয় করা দূরবর্তী অঞ্চলসমূহে অনিশ্চিত হয়ে পড়তো। অথচ শরীয়ত সহজ-সরল ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। এ কারণে বায়তুল্লাহ অথবা কা'বা শব্দের পরিবর্তে মসজিদুল হারাম শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। বায়তুল্লাহ অপেক্ষা মসজিদুল-হারাম অনেক বেশি স্থান জুড়ে বিস্তৃত। এ বিস্তৃত স্থানের দিকে মুখ করা দূর-দূরান্তের মানুষের জন্যও সহজ।

 সংক্ষিপ্ত শব্দ الى -এর পরিবর্তে شطر শব্দটি ব্যবহার করায় কেবলার দিকে মুখ করার ব্যাপারটি আরও সহজ হয়ে গেছে। شطر দু’ অর্থে ব্যবহৃত হয় বস্তুর অর্ধাংশ ও বস্তুর দিক। আলোচ্য আয়াতে এর অর্থ হচ্ছে বস্তুর দিক। এতে বোঝা যায় যে, দূরবর্তী দেশসমূহে বা অঞ্চলে বিশেষভাবে মসজিদে হারামের দিকে মুখ করাও জরুরী নয়; বরং মসজিদে হারাম যেদিকে অবস্থিত, সে দিকের প্রতি মুখ করাই যথেষ্ট। -(বাহরে মুহীত)

প্রাচ্য দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশের জন্য মসজিদে হারামের দিক হলো পশ্চিম; যেদিকে সূর্য অস্ত যায়, সেই দিক। অতএব, সূর্যাস্তের দিকে মুখ করলেই কেবলার দিকে মুখ করার ফরয পালিত হবে। তবে শীত-গ্রীষ্মের পরিবর্তনে সূর্যাস্তের দিকও পরিবর্তিত হতে থাকে। এ কারণে ফিকহবিদগণ শীত ও গ্রীষ্ম ঋতুর অস্তস্থলের মাঝামাঝি দিককে অস্তস্থলের কেবলার দিক সাব্যস্ত করেছেন। অঙ্কশাস্ত্রের নিয়মানুযায়ী গ্রীষ্মের অস্তস্থল ও শীতের অস্তস্থলের মধ্যবর্তী ৪৮ ডিগ্রী পর্যন্ত কেবলার দিক ঠিকই থাকবে এবং নামায জায়েয হবে। অঙ্কশাস্ত্রের প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ’শরহে-চিগ্‌মিনী’র চতুর্থ অধ্যায় ৬৬ পৃষ্ঠায় উভয় অস্তদিকের দূরত্ব ৪৮ ডিগ্রী বলা হয়েছে।


কেবলার দিক জানার জন্য শরীয়ত মতে মানমন্দিরের যন্ত্রপাতি ও অঙ্কশাস্ত্র প্রয়োগ করা অপরিহার্য নয়

কিছুসংখ্যক লোক উপমহাদেশের অনেক মসজিদের কেবলার দিকে দু’চার ডিগ্রী পার্থক্য দেখে বলে দিয়েছে যে, এসব মসজিদে নামায জায়েয হয় না। এটা নিছক মূর্খতা এবং অহেতুকভাবে মুসলমানদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস বৈ কিছু নয় ।

ইসলামী শরীয়ত কিয়ামত পর্যন্ত ভবিষ্যত বংশধর এবং সমগ্র বিশ্বের জন্য সমভাবে কার্যকরী। এ কারণে শরীয়তের বিধি-বিধানকে প্রত্যেক পর্যায়েই সহজ রাখা হয়েছে যাতে প্রত্যেক শহর-গ্রাম, পাহাড়-ময়দান ও উপত্যকায় বসবাসকারী মুসলমান এসব বিধানকে দেখে-শুনে বাস্তবায়ন করতে পারে এবং যাতে কোন পর্যায়েই গণিত, অংক অথবা দিকদর্শন যন্ত্রের প্রয়োজন না পড়ে। ৪৮ ডিগ্রী পর্যন্ত বিস্তৃত পশ্চিম দিক প্রাচ্যবাসীদের কেবলা। এতে পাঁচ-দশ ডিগ্রী পার্থক্য হয়ে গেলেও তাতে নামাযের কোন ক্ষতি হয় না। রসূলুল্লাহ (সা)-এর এক হাদীস দ্বারা বিষয়টি আরও সুস্পষ্ট হয়ে যায়। বলা হয়েছেঃ ما بين الْمَشْرِق وَالْمَغْرِب قبلة অর্থাৎ পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝামাঝি কেবলা। তিনি মদীনাবাসীদের উদ্দেশ্যে একথা বলেছিলেন। কারণ, তাদের কেবলা পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝামাঝি দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। এ হাদীস যেন شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ এর ব্যাখ্যা করে দিয়েছে যে, মসজিদে হারামের দিকে মুখ করাই যথেষ্ট। তবে মসজিদ নির্মাণের সময় যতটুকু সম্ভব কা’বার দিকের সঠিকতার প্রতি লক্ষ্য রাখার চেষ্টা করা উত্তম। সাহাবী, তাবেয়ী ও পূর্ববর্তী মনীষিগণের কেবলা নির্ণয়ের ব্যাপারে সরল ও সোজা পন্থা ছিল এই যে, তাঁরা সাহাবীগণের নির্মিত কোন মসজিদ থাকলে তা দেখে তার আশপাশের মসজিদসমূহের কেবলা ঠিক করতেন। এমনিভাবে সারা বিশ্বের মুসলমানদের কেবলা ঠিক করা হয়েছে। এ কারণে দূরবর্তী দেশসমূহে কেবলার দিক জানার বিশুদ্ধ পন্থা হলো প্রাচীন মসজিদসমূহের অনুসরণ করা। কারণ, অধিকাংশ দেশে সাহাবী ও তাবেয়ীগণ মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেছেন এবং কেবলার দিক নির্ণয় করেছেন। অতঃপর এগুলো দেখে মুসলমানরা অন্যান্য জনপদে নিজ নিজ মসজিদ নির্মাণ করেছেন।

অতএব মুসলমানদের এসব মসজিদই কেবলার দিক জানার জন্য যথেষ্ট। এ কাজে অহেতুক দার্শনিক প্রশ্নাদি উত্থাপন করা প্রশংসনীয় নয়, বরং নিন্দনীয় ও উদ্বেগের কারণ। অনেক সময় এ দুশ্চিন্তায় পড়ে মানুষ সাহাবী, তাবেয়ীন ও সাধারণ মুসলমানদের প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করতে আরম্ভ করে যে, তাঁদের নামায দুরস্ত হয়নি। অথচ এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্তি ও চরম ধৃষ্টতা বৈ কিছু নয়। হিজরী অষ্টম শতাব্দীর খ্যাতনামা আলিম ইবনে রাহাব হাম্বলী এ কারণেই কেবলার দিক সম্পর্কে মানমন্দিরের যন্ত্রপাতি ব্যবহার ও সূক্ষ্ম গাণিতিক তর্কে প্রবৃত্ত হতে নিষেধ করেছেন। তাঁর ভাষ্য—

وأما علم التسيير فإذا تعلم منه ما يحتاج إليه للاستهداء ومعرفة القبلة والطرق كان جائزا عند الجمهور وما زاد عليـه فـلاحاجة إليه وهو يشغل عـمـا هـواهـم مـنـه وربما أدى التدقيق فيه إلى إساءة الظن بمحاريب المسلمين في امـصـار هـم كـمـا وقع في ذلك كثير من أهل هذا العلم قديما وحديثا . وذلك يفضي الى اعتقاد الصحابة والتابعين في صلواتهم في كثير من الامـصـار وهـو بـاطـل وقـد أنكر الامـام أحـمـد الاستدلال بالجدي وقال إنما ورد ما بين المشرق والمغرب قبلة

অধিকাংশ ফিকহবিদের মতে সৌরবিদ্যা এতটুকু শিক্ষা করা জায়েয, যদ্দ্বারা কেবলা ও রাস্তার পরিচয় লাভ করা যায়। এর বেশি শিক্ষা করার প্রয়োজন নেই। কারণ, এর বেশি শিক্ষা অন্যান্য অধিকতর জরুরী বিষয়াদি থেকে উদাসীন করে দিতে পারে। সৌরবিদ্যার গভীর তথ্যানুসন্ধান অনেক সময় মুসলিম দেশসমূহের মসজিদের ব্যাপারে খারাপ ধারণা সৃষ্টি করে। এ বিদ্যার্জনে নিয়োজিত ব্যক্তিরা প্রায়ই এ ধরনের সন্দেহের সম্মুখীন হয়। এতে এরূপ বিশ্বাসও অন্তরে দানা বাঁধতে থাকে যে, সাহাবী ও তাবেয়ীগণের নামায দুরস্ত হয়নি। এটা একেবারেই ভ্রান্ত কথা। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র) তারকার সাহায্যে কেবলা নির্ণয় করতেও নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, “হাদীস অনুযায়ী পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যবর্তী সম্পূর্ণ দিকই (মদীনার) কেবলা।”

যেসব জনবসতিহীন এলাকায় প্রাচীন মসজিদ নেই, সেখানে এবং নতুন দেশে কেবলা নির্ণয়ের ব্যাপারে শরীয়তসম্মত যে পন্থা সাহাবী ও তাবেয়ীগণের কাছ থেকে বর্ণিত রয়েছে তা এই যে, চন্দ্র, সূর্য ও ধ্রুবতারা প্রভৃতির দ্বারা অনুসন্ধান করে কেবলার দিক নির্ণয় করতে হবে। এতে সামান্য বিচ্যুতি থাকলেও তা উপেক্ষা করতে হবে। কারণ ‘বাদায়ে’ গ্রন্থের বর্ণনা অনুযায়ী দূরবর্তী দেশসমূহে অনুমান-ভিত্তিক দিকই কেবলর সমতুল্য। এর উপর ভিত্তি করেই দূরবর্তী বিধি-বিধান কার্যকর হবে। উদাহরণত শরীয়ত নিদ্রাকে গুহ্যদ্বার দিয়ে বায়ু নির্গত হওয়ার পর্যায়ভুক্ত করেছে। ফলে এখন ওযু ভঙ্গের বিধান নিদ্রার সাথেও সম্পৃক্ত হয়েছে—বায়ু নির্গত হোক বা না হোক। অথবা শরীয়ত সফর কষ্টের পর্যায়ভুক্ত করেছে। এখন সফর হলেই রোযা রাখার ব্যাপারে স্বাধীনতার নির্দেশ দেওয়া হবে–কষ্ট হোক বা না হোক। এমনিভাবে দূরবর্তী দেশসমূহে প্রসিদ্ধ নির্দেশাদির মাধ্যমে অনুমান করে কেবলার যেদিক নির্ণয় করা হবে, তা-ই শরীয়তে কা’বার সমতুল্য হবে। আল্লামা বাহরুল উলুম ‘রাসায়েলুল-আরকান’ গ্রন্থে বিষয়টি এভাবে বর্ণনা করেছেনঃ

والشرط وقوع المسامتة على حسب ما يرى المصلى ونـحـن غـيـر مـامـوريـن بـالمـسـامـنـة علـى مايـحـكـم بـه الآلات الرصدية ولهذا افتوا ان الانحراف المفسد أن يتجاوز المشارق والمغارب

কেবলামুখী হওয়ার ব্যাপারে শর্ত ও কর্তব্য বিষয় এতটুকুই যে, মুসল্লীর মত ও অনুমান অনুযায়ী কা’বার সামনা-সামনি হতে হবে। মানমন্দিরের যন্ত্রপাতির মাধ্যমে যে দিক নির্ণয় করা হয়, তা অর্জন করতে আমরা আদিষ্ট নই। এ কারণে ফিকহবিদগণের ফতোয়া এই যে, বিচ্যুতির কারণে নামায নষ্ট হয়, তা হলো পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে বিচ্যুত হওয়া।





****************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity. 
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url