মা’আরেফুল কোরআন - ৫০ || সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ১৪৫-১৪৭ || আহলে-কিতাবদের কেবলা না মানার বিষয়ে সতর্কতা






بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
سورة البقرة

সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ১৪৫



 وَ لَئِنۡ اَتَیۡتَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ بِکُلِّ اٰیَۃٍ مَّا تَبِعُوۡا قِبۡلَتَکَ ۚ وَ مَاۤ اَنۡتَ بِتَابِعٍ قِبۡلَتَهُمۡ ۚ وَ مَا بَعۡضُهُمۡ بِتَابِعٍ قِبۡلَۃَ بَعۡضٍ ؕ وَ لَئِنِ اتَّبَعۡتَ اَهۡوَآءَهُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَکَ مِنَ الۡعِلۡمِ ۙ اِنَّکَ اِذًا لَّمِنَ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿۱۴۵

সূরা আল-বাকারাহ ১৪৫ নং আয়াতের অর্থ


   

(১৪৫) যদি আপনি আহলে-কিতাবদের কাছে সমুদয় নিদর্শন উপস্থাপন করেন, তবুও তারা আপনার কেবলা মেনে নেবে না এবং আপনিও তাদের কেবলা মানেন না। তারাও "একে অন্যের কেবলা মানে না। যদি আপনি তাদের বাসনা অনুসরণ করেন সে জ্ঞানলাভের পর, যা আপনার কাছে পৌঁছেছে, তবে নিশ্চয় আপনি অবিচারকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।

সূরা আল-বাকারাহ ১৪৫ নং আয়াতের তাফসীর

তফসীরের সার-সংক্ষেপ
(সবকিছূ বোঝা সত্ত্বেও তাদের হঠকারিতা এই পর্যায়ের যে) যদি আপনি (এসব) আহলে কিতাবের সামনে (সারা দুনিয়ার সমুদয়) নিদর্শন (একত্রিত করে) উপস্থাপন করেন তবুও তারা (কখনও) আপনার কেবলাকে গ্রহণ করবে না। (তাদের বন্ধুত্বের আশা করা এজন্যও উচিত নয় যে, আপনার এ কেবলাও আর রহিত হবে না, সুতরাং) আপনিও তাদের কেবলা কবূল করতে পারেন না। (কাজেই ঐক্য বিধানের আর কোন উপায় অবশিষ্ট রইল না। আহলে কিতাবরা যেমন আপনার সাথে হঠকারিতা করে, তেমনি তাদের পরস্পরের মধ্যেও কোন মিল নেই। কেননা,) তাদের কোন দলই অন্যদলের কেবলা কবুল করে না। (উদাহরণত ইহুদীরা বায়তুল মোকাদ্দাসকে কেবলা করে রেখেছিল এবং খৃষ্টানরা পূর্বদিককে কেবলা করে রেখেছিল।) আর (আপনি তাদের রহিত ও শরীয়তে নিষিদ্ধ কেবলাকে কিছুতেই গ্রহণ করতে পারেন না। কারণ, যদিও তা এক সময় খোদায়ী নির্দেশ ছিল, কিন্তু মনসুখ বা রহিত হয়ে যাবার দরুন তার উপর তাদের বর্তমান আমল একান্তই বিদ্বেষপ্রসূত। কাজেই আল্লাহ্ না করুন), আপনি যদি তাদের (এহেন খামখেয়ালীপূর্ণ) কামনা-বাসনাগুলোর অনুসরণ করেন, (তাও আপনার নিকট প্রকৃষ্ট) জ্ঞান (সংক্রান্ত ওহী) আগমনের পর, তা’হলে নিশ্চিতই আপনি জালিমে পরিগণিত হয়ে যাবেন। (বস্তুত তারা হলো হুকুম অমান্যকারী। আর আপনি যেহেতু নিরপেক্ষ, কাজেই আপনার পক্ষে তেমনটি হওয়া অসম্ভব। সুতরাং আপনার পক্ষে তাদের মতামত অবলম্বন করে নেওয়া কেবলার বিষয়বস্তু ও যার অন্তর্গত সম্পূর্ণ অসম্ভব)।

সূরা আল-বাকারাহ ১৪৫ নং আয়াতের  জ্ঞাতব্য বিষয়

وَمَا أَنْتَ بِتَابِعٍ قِبْلَتَهُمْ - আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে যে, খানায়ে কা’বা কিয়ামত পর্যন্ত আপনার কেবলা থাকবে। এতে ইহুদী-নাসারাদের সে মতবাদের খণ্ডন করাই ছিল উদ্দেশ্য যে, মুসলমানদের কেবলার কোন স্থিতি নেই, ইতিপূর্বে তাদের কেবলা ছিল খানায়ে কা’বা, পরিবর্তিত হয়ে বায়তুল মোকাদ্দাস হলো, আবার তাও বদলে গিয়ে পুনরায় খানায়ে-কা’বা হলো। আবারও হয়তো বায়তুল মোকাদ্দাসকেই কেবলা বানিয়ে নেবে।--(বাহরে মুহীত)

   

وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَاءَهُمْ এখানে অসম্ভবকে সম্ভব ধরে নিয়ে হুযূর (সা)-কে সম্বোধন করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বিষয়টির দ্বারা উম্মতে মুহাম্মদীকে অবহিত করাই উদ্দেশ্য যে, উল্লিখিত নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ এতই কঠিন ব্যাপার যে, স্বয়ং রসূলে করীম (সা)-ও যদি এমনটি করেন (অবশ্য তা অসম্ভব ), তবে তিনিও সীমালংঘনকারী বলে সাব্যস্ত হবেন।

সূরা আল-বাকারাহ ১৪৬-৪৭ নং আয়াত


 اَلَّذِیۡنَ اٰتَیۡنٰهُمُ الۡکِتٰبَ یَعۡرِفُوۡنَهٗ کَمَا یَعۡرِفُوۡنَ اَبۡنَآءَهُمۡ ؕ وَ اِنَّ فَرِیۡقًا مِّنۡهُمۡ لَیَکۡتُمُوۡنَ الۡحَقَّ وَ هُمۡ یَعۡلَمُوۡنَ ﴿۱۴۶  اَلۡحَقُّ مِنۡ رَّبِّکَ فَلَا تَکُوۡنَنَّ مِنَ الۡمُمۡتَرِیۡنَ ﴿۱۴۷

সূরা আল-বাকারাহ ১৪৬-৪৭ নং আয়াতের অর্থ

(১৪৬) আমি যাদেরকে কিতাব দান করেছি, তারা তাকে চেনে, যেমন করে চেনে নিজেদের পুত্রদেরকে। আর নিশ্চয়ই তাদের একটি সম্প্রদায় জেনেশুনে সত্যকে গোপন করে। (১৪৭) বাস্তব সত্য সেটাই, যা তোমার পালনকর্তা বলেন। কাজেই তুমি সন্দিহান হয়ো না।

সূরা আল-বাকারাহ ১৪৬-৪৭ নং আয়াতের তাফসীর

তফসীরের সার-সংক্ষেপ
(পূর্ববর্তী আয়াতে আহলে-কিতাব সম্প্রদায় কর্তৃক মুসলমানদের কেবলাকে সত্য জানা এবং মুখে তা অস্বীকার করার কথা আলোচিত হয়েছে। এ আয়াতে তেমনিভাবে কেবলার প্রবর্তক অর্থাৎ মহানবী (সা)-কে মনে মনে সত্য জানা এবং মুখে মুখে অস্বীকার করার বিষয় আলোচিত হচ্ছে।

যাদেরকে আমি (তওরাত ও ইঞ্জিল প্রভৃতি) কিতাব দান করেছি, তারা তওরাত ও ইঞ্জিলে বর্ণিত সুসংবাদসমূহের ভিত্তিতে রসূলুল্লাহ (সা)-কে রসূল হিসাবে] এমন সন্দেহাতীতভাবে চেনে, যেমন নিজেদের সন্তান-সন্ততিকে (তাদের আকার-অবয়বের দ্বারা) চিনতে পারে। [নিজের সন্তান-সন্ততিকে দেখে যেমন কখনো সন্দেহ হয় না যে, সে কে, তেমনিভাবে রসূল (সা)-এর ব্যাপারেও তাদের কোন সন্দেহ সংশয় নেই। বরং অনেকে তো ঈমান গ্রহণও করে নিয়েছে।] আবার তাদের মধ্যে অনেকে (রয়েছে, যারা) বিষয়টি বিস্তারিত জানা সত্ত্বেও গোপন করে। (অথচ) এটা যে বাস্তবিক আল্লাহর পক্ষ থেকে, তা প্রমাণিত হয়ে গেছে। সুতরাং (প্রতিটি মানুষকে আল্লাহর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, এমন একটি বাস্তব ব্যাপারে) কখনও কোন প্রকার সন্দেহে পতিত হয়ো না।

সূরা আল-বাকারাহ ১৪৬-৪৭ নং আয়াতের জ্ঞাতব্য বিষয়

 এ আয়াতে রসূলে করীম (সা)-কে রসূল হিসাবে চেনার উদাহরণ সন্তানদের চেনার সাথে দেওয়া হয়েছে অর্থাৎ এরা যেমন কোন রকম সন্দেহ-সংশয়হীনভাবে নিজেদের সন্তানদেরকে জানে, তেমনিভাবে তওরাত ও ইঞ্জিলে বর্ণিত রসূলে করীম (সা)-এর সুসংবাদ, প্রকৃষ্ট লক্ষণ ও নিদর্শনাবলীর মাধ্যমে তাঁকেও সন্দেহাতীতভাবেই চেনে। কিন্তু তাদের যে অস্বীকৃতি, তা একান্তভাবেই হঠকারিতা ও বিদ্বেষপ্রসূত।

এখানে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, পরিপূর্ণভাবে চেনার উদাহরণ পিতা-মাতাকে চেনার সাথে না দিয়ে সন্তান-সন্ততিকে চেনার সাথে দেওয়া হয়েছে। অথচ মানুষ স্বভাবত পিতা-মাতাকেও অত্যন্ত ভাল করেই জানে। এহেন উদাহরণ দেওয়ার কারণ হলো এই যে, পিতা-মাতার নিকট সন্তানাদির পরিচয় সন্তানের নিকট পিতা-মাতার পরিচয় অপেক্ষা বহুগুণ বেশি হয়ে থাকে। কারণ, পিতা জন্মলগ্ন থেকে সন্তান-সন্ততিকে স্বহস্তে লালন-পালন করে। তাদের শরীরের এমন কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেই, যা পিতা-মাতার দৃষ্টির অন্তরালে থাকতে পারে। পক্ষান্তরে পিতা-মাতার গোপন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সন্তানরা কখনও দেখে না।

এ বর্ণনার দ্বারা এ কথাও প্রতীয়মান হয়ে যায় যে, এখানে সন্তানকে শুধু সন্তান হিসাবে চেনাই উদ্দেশ্য নয়। কারণ, তার পৈতৃক সম্পর্ক ক্ষেত্র বিশেষে সন্দেহজনকও হতে পারে। স্ত্রীর খেয়ানতের দরুন সন্তান তার নিজের নাও হতে পারে। বরং এখানে আকার-অবয়বের পরিচয় জানা হলো উদ্দেশ্য। পুত্র-কন্যা প্রকৃতপক্ষে নিজের হোক বা নাই হোক, কিন্তু মানুষ সন্তান হিসাবে যাকে প্রতিপালন করে, তার থাকার-অবয়ব চেনার ব্যাপারে কখনও সন্দেহ হয় না।






***************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url