মা’আরেফুল কোরআন - ৫৯ || সূরা আল-বাকারাহ, ১৬৬-১৬৭ || আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে জবাই করা পশু হারাম







بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
سورة البقرة

সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ১৬৬-১৬৭


 اِذۡ تَبَرَّاَ الَّذِیۡنَ اتُّبِعُوۡا مِنَ الَّذِیۡنَ اتَّبَعُوۡا وَ رَاَوُا الۡعَذَابَ وَ تَقَطَّعَتۡ بِهِمُ الۡاَسۡبَابُ ﴿۱۶۶  وَ قَالَ الَّذِیۡنَ اتَّبَعُوۡا لَوۡ اَنَّ لَنَا کَرَّۃً فَنَتَبَرَّاَ مِنۡهُمۡ کَمَا تَبَرَّءُوۡا مِنَّا ؕ کَذٰلِکَ یُرِیۡهِمُ اللّٰهُ اَعۡمَالَهُمۡ حَسَرٰتٍ عَلَیۡهِمۡ ؕ وَ مَا هُمۡ بِخٰرِجِیۡنَ مِنَ النَّارِ ﴿۱۶۷


সূরা আল-বাকারাহ ১৬৬-১৬৭ নং আয়াতের অর্থ

(১৬৬) অনুসৃতরা যখন অনুসরণকারীদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে যাবে এবং যখন আযাব প্রত্যক্ষ করবে আর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে তাদের পারস্পরিক সমস্ত সম্পর্ক।
(১৬৭) এবং অনুসারীরা বলবে, কতইনা ভাল হতো, যদি আমাদিগকে পৃথিবীতে ফিরে যাবার সুযোগ দেওয়া হত। তাহলে আমরাও তাদের প্রতি তেমনি অসন্তুষ্ট হয়ে যেতাম, যেমন তারা অসন্তুষ্ট হয়েছে আমাদের প্রতি। এভাবেই আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকে দেখাবেন তাদের কৃতকর্ম তাদেরকে অনুতপ্ত করার জন্য। অথচ, তারা কস্মিনকালেও আগুন থেকে বের হতে পারবে না ।

   

সূরা আল-বাকারাহ ১৬৬-১৬৭ নং আয়াতের পূর্বাপর যোগসূত্র

যোগসূত্র
উপরে আখিরাতের আযাবকে অতি কঠিন বলা হয়েছে। আর এখানে সেই কঠোরতার প্রকৃতি বর্ণনা করা হচ্ছে।

সূরা আল-বাকারাহ ১৬৬-১৬৭ নং আয়াতের তাফসীর

তাফসীরের সার-সংক্ষেপ
(আযাবের সেই কঠোরতা তখন অনুভূত হবে) যখন (মুশরিকদের) সে সমস্ত (প্রভাবশালী) লোকেরা সাধারণ লোকদের থেকে পৃথক হয়ে যাবে, যাদের কথামত সাধারণ লোকেরা চলত এবং (সাধারণ-অসাধারণ নির্বিশেষে) যখন সবাই আযাবের অবস্থা প্রত্যক্ষ করে নেবে আর তাদের মধ্যে পারস্পরিক যে সম্পর্ক ছিল, তাও ছিন্ন হয়ে যাবে (যেমনটি পৃথিবীতেও দেখা যায় যে, কোন অপরাধে সবাই সমানভাবে জড়িত থাকা সত্ত্বেও মামলার বিচার ক্ষেত্রে সবাই পৃথক পৃথকভাবে আত্মরক্ষা করতে চায়। এমনকি একে অপরের সাথে পরিচিত বলেও অস্বীকার করে বসে)। আর (যখন এ সমস্ত অনুগামী লোকেরা নেতৃবর্গের এহেন বিশ্বাসঘাতকতা প্রত্যক্ষ করবে, তখন তারা ভীষণভাবে উত্তেজিত হয়ে উঠবে। কিন্তু তাতে আর কিছু না হলেও তারা উত্তেজিত হয়ে) বলতে আরম্ভ করবে, (কোনক্রমে) আমাদের (সবাইকে একটিবার) যদি পৃথিবীতে ফিরে যাবার সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে আমরাও তাদের থেকে (অন্তত এটুকু প্রতিশোধ তো অবশ্যই নিয়ে ছাড়ব যে, তারা যদি আবার আমাদেরকে তাদের আনুগত্যের প্রতি উৎসাহিত করে, তবে আমরাও পরিষ্কার কাটা উত্তর দিয়ে) তাদের থেকে পৃথক হয়ে যাব, যেমন করে তারা (এখন) আমাদের থেকে পরিষ্কারভাবে পৃথক হয়ে গেছে। (আর বলে দেব যে, তুমিই তো সে লোক, যে যথাসময়ে আমাদের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছিলে। কাজেই এখন আমাদের এখানে আর কোন্ মতলবে ?)

(আল্লাহ্ বলেন, এসব চিন্তা-ভাবনা আর প্রস্তাবনায় কি হবে!) আল্লাহ্ তা’আলা এমনি করে তাদের অসৎ কর্মগুলোকে অপার আকাঙ্খার (আকারে) দেখিয়ে দেবেন এবং তাদের (নেতৃবর্গ ও অনুসারী) কারোই দোযখের আগুন থেকে পরিত্রাণ ভাগ্যে জুটবে না (কারণ শিরকের শাস্তিই হলো অনন্তকাল দোযখ ভোগ)।


(কোন কোন মুশরিক দেব-দেবীর নামে গৃহপালিত পশু ছেড়ে দিয়ে এবং তাতে কল্যাণ সাধিত হবে বলে বিশ্বাস করে সেগুলোর প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা পোষণ করত। তারা নিজেদের এহেন কাজকে আল্লাহর নির্দেশ, তাঁর সন্তুষ্টির কারণ এবং সমস্ত দেব-দেবীর সুপারিশক্রমে আল্লাহ্ তা’আলার নৈকট্য লাভ হবে বলে বিশ্বাস করত। এ প্রসঙ্গেই এখানে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন গোটা মানব জাতিকে সম্বোধন করে বলছেন) হে মানবমণ্ডলী। যা কিছু পৃথিবীতে রয়েছে সেগুলোর মধ্যে (শরীয়তের বিধান মতে) হালাল ও পবিত্র বস্তু-সামগ্রী ভক্ষণ কর (এবং ব্যবহার কর। তোমাদের প্রতি এ অনুমতি রয়েছে)। আর (এসব হালাল বস্তু-সামগ্রীর মধ্যে কোন্‌টি থেকে এই মনে করে বিরত থাকা যে, তাতে আল্লাহ্ সন্তুষ্ট হবেন, তাও শয়তানী ধারণা। কাজেই তোমরা) শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলো না। প্রকৃতপক্ষে সে (অর্থাৎ শয়তান) তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সে তোমাদেরকে এমনি সমস্ত কু-ধারণা, অলীক কল্পনা ও মূর্খতার মাধ্যমে অন্তহীন ক্ষতির আবর্তে বন্দী করে রাখে। আর শত্রু হওয়ার কারণে) সে তোমাদিগকে সে সমস্ত বিষয়ই শিক্ষা দেবে, যা (শরীয়তের দৃষ্টিতে) মন্দ ও অপবিত্র। তদুপরি এমন শিক্ষাও দেবে যে, আল্লাহ্ ওপর এমন বিষয়েও মিথ্যা আরোপ কর, যার সনদ পর্যন্ত তোমাদের জানা নেই। (যেমন, মনে করে নেওয়া যে, আমাদের প্রতি উল্লিখিত ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম রয়েছে)।

আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে জবাই করা পশু

মাস’আলা-১
দেব-দেবীর নামে ষাঁড় বা অন্য কোন জীবজন্তু, মোরগ-মুরগী, ভেড়া-বকরী ছাড়া কিংবা কোন বুযুর্গ ব্যক্তি অথবা আল্লাহ্ ব্যতীত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা যে হারাম তাই পরবর্তী চার আয়াতের পর وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللَّهِ -এর আওতায় বর্ণনা করা হবে।  বর্তমান يَاأَيُّهَا النَّاسُ আয়াতে এ ধরনের জীব-জন্তুর হারাম হওয়ার বিষয়টিকে নিষিদ্ধ করা উদ্দেশ্য নয়, যেমন অনেকেরই সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। বরং এখানে এ ধরনের কার্যকলাপ হারাম হওয়ার বিষয়ে বর্ণনা করাই উদ্দেশ্য যে, আল্লাহ্ ব্যতীত অপর কারও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে কোন প্রাণী মুক্ত করা এবং এ কাজকে নৈকট্য ও বরকতের বিষয় বলে ধারণা করা আর এ সমস্ত জীবজন্তুকে নিজের জন্য হারাম বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া এবং এগুলোকে চিরস্থায়ী মনে করা প্রভৃতি কাজ নাজায়েয এবং এমন কাজ করা পাপ।

সুতরাং আয়াতের সারমর্ম দাঁড়ায় এই যে, যেমন জীব-জন্তুকে আল্লাহ তা’আলা হালাল করেছেন, সেগুলোকে দেব-দেবীর নাম করে হারাম সাব্যস্ত করো না। বরং সেগুলোকে যথারীতি ভক্ষণ কর। অবশ্য অজ্ঞানতার দরুন যদি এমন কোন কাজ সংঘটিত হয়ে গিয়ে থাকে, তবে নিয়ত সংশোধনের সাথে সাথে ঈমানও নবায়ন করবে এবং তওবা করে নিয়ে এই অবৈধতাকে নষ্ট করে দেবে। এভাবে এ সমস্ত জীব-জন্তুকে পবিত্র কিছু মনে করে হারাম সাব্যস্ত করাও পাপ, কিন্তু এগুলোকে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের নামে উৎসর্গ করার দরুন বিধানগতভাবে যেহেতু নাপাক বলে গণ্য হয়ে যায়, তাই সেগুলোর হারাম হওয়াও প্রমাণিত হয়ে যায়।

মাস’আলা-২
এতে একথাও প্রতীয়মান হয় যে, কোন ব্যক্তি যদি অজ্ঞতা কিংবা অসতর্কতার দরুন কোন জীবকে আল্লাহ্ ছাড়া অপর কোন কিছুর নামে মুক্ত করে দেয়, তাহলে এই হারাম ধারণা বর্জন করে এহেন কাজ থেকে তওবা করে নেবে। তাহলেই সে জীবের মাংস হালাল হয়ে যাবে।






****************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url