মা’আরেফুল কোরআন - ৬০ || সূরা আল-বাকারাহ, ১৬৮-১৬৯ || দেব-দেবীর নামে পশু জবাই







بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
سورة البقرة

সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ১৬৮-৬৯

 
یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ کُلُوۡا مِمَّا فِی الۡاَرۡضِ حَلٰلًا طَیِّبًا ۫ۖ وَّ لَا تَتَّبِعُوۡا خُطُوٰتِ الشَّیۡطٰنِ ؕ اِنَّهٗ لَکُمۡ عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ ﴿۱۶۸  اِنَّمَا یَاۡمُرُکُمۡ بِالسُّوۡٓءِ وَ الۡفَحۡشَآءِ وَ اَنۡ تَقُوۡلُوۡا عَلَی اللّٰهِ مَا لَا تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۱۶۹

সূরা আল-বাকারাহ ১৬৮-১৬৯ নং আয়াতের অর্থ

(১৬৮) হে মানবমণ্ডলী, পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তুসামগ্রী ভক্ষণ কর। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না; সে নিঃসন্দেহে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। 
(১৬৯) সে তো এ নির্দেশই তোমাদিগকে দেবে যে, তোমরা অন্যায় ও অশ্লীল কাজ করতে থাক এবং আল্লাহর প্রতি এমন সব বিষয়ে মিথ্যারোপ কর, যা তোমরা জান না।

সূরা আল-বাকারাহ ১৬৮-১৬৯ নং আয়াতের তাফসীর

   

তাফসীরের সার-সংক্ষেপ
(কোন কোন মুশরিক দেব-দেবীর নামে গৃহপালিত পশু ছেড়ে দিয়ে এবং তাতে কল্যাণ সাধিত হবে বলে বিশ্বাস করে সেগুলোর প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা পোষণ করত। তারা নিজেদের এহেন কাজকে আল্লাহর নির্দেশ, তাঁর সন্তুষ্টির কারণ এবং সমস্ত দেব-দেবীর সুপারিশক্রমে আল্লাহ্ তা’আলার নৈকট্য লাভ হবে বলে বিশ্বাস করত। এ প্রসঙ্গেই এখানে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন গোটা মানব জাতিকে সম্বোধন করে বলছেন) হে মানবমণ্ডলী। যা কিছু পৃথিবীতে রয়েছে সেগুলোর মধ্যে (শরীয়তের বিধান মতে) হালাল ও পবিত্র বস্তু-সামগ্রী ভক্ষণ কর (এবং ব্যবহার কর। তোমাদের প্রতি এ অনুমতি রয়েছে)। আর (এসব হালাল বস্তু-সামগ্রীর মধ্যে কোন্‌টি থেকে এই মনে করে বিরত থাকা যে, তাতে আল্লাহ্ সন্তুষ্ট হবেন, তাও শয়তানী ধারণা। কাজেই তোমরা) শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলো না। প্রকৃতপক্ষে সে (অর্থাৎ শয়তান) তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সে তোমাদেরকে এমনি সমস্ত কু-ধারণা, অলীক কল্পনা ও মূর্খতার মাধ্যমে অন্তহীন ক্ষতির আবর্তে বন্দী করে রাখে। আর শত্রু হওয়ার কারণে) সে তোমাদিগকে সে সমস্ত বিষয়ই শিক্ষা দেবে, যা (শরীয়তের দৃষ্টিতে) মন্দ ও অপবিত্র। তদুপরি এমন শিক্ষাও দেবে যে, আল্লাহ্ ওপর এমন বিষয়েও মিথ্যা আরোপ কর, যার সনদ পর্যন্ত তোমাদের জানা নেই। (যেমন, মনে করে নেওয়া যে, আমাদের প্রতি উল্লিখিত ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম রয়েছে)।

সূরা আল-বাকারাহ ১৬৮-১৬৯ নং আয়াতের আনুষঙ্গিক বিষয়

শব্দ বিশ্লেষণ
حَلَالًا طَيِّبًا শব্দের প্রকৃত অর্থ হলো গিঁট খোলা। যেসব বস্তু সামগ্রীকে মানুষের জন্য হালাল বা বৈধ করে দেওয়া হয়েছে, তাতে যেমন একটা গিটই খুলে দেওয়া হয়েছে এবং সেগুলোর উপর থেকে বাধ্যবাধকতা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। হযরত সাহল ইবনে আবদুল্লাহ (রা) বলেন, মুক্তি বা পরিত্রাণ লাভ তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। (১) হালাল খাওয়া, (২) ফরয আদায় করা এবং (৩) রাসূলে করীম (সা)-এর সুন্নতসমূহের আনুগত্য ও অনুসরণ করা। طَيِّبًا শব্দের অর্থ পবিত্র। শরীয়তের দৃষ্টিতে হালাল এবং মানসিক দিক দিয়ে আকর্ষণীয় সমস্ত বস্তু-সামগ্রীও এরই অন্তর্ভুক্ত। 

خُطُوَاتٌ

(খুতুওয়াত) خُطْوََةٌ (খুওয়াতুন)-এর বহুবচন। خُطْوََةٌ বলা হয় পায়ের দুই ধাপের মধ্যবর্তী ব্যবধানকে। সুতরাং خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ -এর অর্থ হচ্ছে শয়তানী কাজকর্ম। 

سُّوءِ - السُّوءِ وَالْفَحْشَاءِ

বলা হয় এমন বস্তু বা বিষয়কে যা দেখে রুচিজ্ঞানসম্পন্ন যে কোন বুদ্ধিমান লোক দুঃখ বোধ করে। فَحْشَاءِ অর্থ অশ্লীল ও নির্লজ্জ কাজ। আবার অনেকে বলেন যে, এ ক্ষেত্রে سُّوءِ এবং فَحْشَاءِ -এর মর্ম যথাক্রমে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ পাপ । অর্থাৎ—অসাধারণ গোনাহ এবং কবীরা গোনাহ্ । إِنَّمَا يَأْمُرُكُمْ -এখানে শয়তানের নির্দেশ দান অর্থ হচ্ছে মনের মাঝে ওয়াসওয়াসা বা সন্দেহের উদ্ভব করা। যেমন, হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রা) বর্ণিত এক হাদীসে রয়েছে যে, রসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন- আদম সন্তানদের অন্তরে একাধারে শয়তানী প্রভাব এবং ফেরেশতার প্রভাব বিদ্যমান থাকে। শয়তানী ওয়াসয়াসার প্রভাবে অসৎ কাজের কল্যাণ এবং উপকারিতাগুলো সামনে এসে উপস্থিত হয় এবং তাতে সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার পথগুলো উন্মুক্ত হয়। পক্ষান্তরে ফেরেশতাদের ইলহামের প্রভাবে সৎ ও নেক কাজের জন্য আল্লাহ্ তা’আলা যে কল্যাণ ও পুরষ্কার দানের ওয়াদা করেছেন, সেগুলোর প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয় এবং সত্য ও সঠিক পথে চলত গিয়ে অন্তরে শান্তি লাভ হয় ।

দেব-দেবীর নামে পশু জবাই

মাস’আলা-১
দেব-দেবীর নামে ষাঁড় বা অন্য কোন জীবজন্তু, মোরগ-মুরগী, ভেড়া-বকরী ছাড়া কিংবা কোন বুযুর্গ ব্যক্তি অথবা আল্লাহ্ ব্যতীত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা যে হারাম তাই পরবর্তী চার আয়াতের পর وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللَّهِ -এর আওতায় বর্ণনা করা হবে।  বর্তমান يَاأَيُّهَا النَّاسُ আয়াতে এ ধরনের জীব-জন্তুর হারাম হওয়ার বিষয়টিকে নিষিদ্ধ করা উদ্দেশ্য নয়, যেমন অনেকেরই সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। বরং এখানে এ ধরনের কার্যকলাপ হারাম হওয়ার বিষয়ে বর্ণনা করাই উদ্দেশ্য যে, আল্লাহ্ ব্যতীত অপর কারও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে কোন প্রাণী মুক্ত করা এবং এ কাজকে নৈকট্য ও বরকতের বিষয় বলে ধারণা করা আর এ সমস্ত জীবজন্তুকে নিজের জন্য হারাম বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া এবং এগুলোকে চিরস্থায়ী মনে করা প্রভৃতি কাজ নাজায়েয এবং এমন কাজ করা পাপ।

সুতরাং আয়াতের সারমর্ম দাঁড়ায় এই যে, যেমন জীব-জন্তুকে আল্লাহ তা’আলা হালাল করেছেন, সেগুলোকে দেব-দেবীর নাম করে হারাম সাব্যস্ত করো না। বরং সেগুলোকে যথারীতি ভক্ষণ কর। অবশ্য অজ্ঞানতার দরুন যদি এমন কোন কাজ সংঘটিত হয়ে গিয়ে থাকে, তবে নিয়ত সংশোধনের সাথে সাথে ঈমানও নবায়ন করবে এবং তওবা করে নিয়ে এই অবৈধতাকে নষ্ট করে দেবে। এভাবে এ সমস্ত জীব-জন্তুকে পবিত্র কিছু মনে করে হারাম সাব্যস্ত করাও পাপ, কিন্তু এগুলোকে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের নামে উৎসর্গ করার দরুন বিধানগতভাবে যেহেতু নাপাক বলে গণ্য হয়ে যায়, তাই সেগুলোর হারাম হওয়াও প্রমাণিত হয়ে যায়।

মাস’আলা-২
এতে একথাও প্রতীয়মান হয় যে, কোন ব্যক্তি যদি অজ্ঞতা কিংবা অসতর্কতার দরুন কোন জীবকে আল্লাহ্ ছাড়া অপর কোন কিছুর নামে মুক্ত করে দেয়, তাহলে এই হারাম ধারণা বর্জন করে এহেন কাজ থেকে তওবা করে নেবে। তাহলেই সে জীবের মাংস হালাল হয়ে যাবে।





*****************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url