মা’আরেফুল কোরআন - ৮২ || সূরা আল-বাকারাহ, ২১৯ || শরাব ও জুয়ার নিষিদ্ধতা এবং শরাব ও জুয়ার অপকারিতা বিষয়ক আলোচনা
یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنِ الۡخَمۡرِ وَ الۡمَیۡسِرِؕ قُلۡ فِیۡهِمَاۤ اِثۡمٌ کَبِیۡرٌ وَّ مَنَافِعُ لِلنَّاسِ ۫ وَ اِثۡمُهُمَاۤ اَکۡبَرُ مِنۡ نَّفۡعِهِمَا ؕ ﴿۲۱۹
সূরা আল-বাকারাহ ২১৯ নং আয়াতের অর্থ
(২১৯) তারা আপনাকে মদ জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দিন, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মস্ত বড় গোনাহ্। আর মানুষের জন্য উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়।
সূরা আল-বাকারাহ ২১৯ নং আয়াতের তাফসীর
তাফসীরের সার-সংক্ষেপ
পঞ্চদশ আদেশঃ
শরাব ও জুয়া সম্পর্কে
মানুষ আপনার কাছে শরাব ও জুয়া সম্পর্কে জানতে চায়। আপনি তাদেরকে বলে দিন এ দু’টি (বস্তুর ব্যবহার)-এর মধ্যে মহাপাপের বিষয় (সৃষ্টি হয়) এবং এতে মানুষের (কিছু) উপকারিতাও রয়েছে তবে পাপের বিষয়গুলো সেই উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বেশি (কাজেই উভয়টিই পরিত্যাজ্য)।
সূরা আল-বাকারাহ ২১৯ নং আয়াতের বিষয় বস্তু
আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়
সাহাবীগণের প্রশ্নসমূহ এবং সেসব প্রশ্নের উত্তর যে পদ্ধতিতে বর্ণনা করা হয়েছে তন্মধ্যে এ আয়াতও অন্তর্ভুক্ত। এতে শরাব ও জুয়া সম্পর্কে সাহাবীগণের প্রশ্ন এবং আল্লাহর তরফ থেকে তার উত্তর দেওয়া হয়েছে। এ দু’টি বিষয়ই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতএব, বিস্তারিতভাবে এ দু’টির তাৎপর্য ও বিধানগুলোর মধ্যে লক্ষ্য করা প্রয়োজন।
শরাব হারাম হওয়া এবং এতদসংক্রান্ত বিধান
ইসলামের প্রথম যুগে জাহিলিয়ত আমলের সাধারণ রীতিনীতির মত মদ্যপানও স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। অতঃপর রাসূলে করীম (সা) যখন হিজরত করে মদীনায় আগমন করেন, তখনও মদীনাবাসীদের মধ্যে মদ্যপান ও জুয়ার প্রথা প্রচলিত ছিল। সাধারণ মানুষ এ দু’টি বস্তুর শুধু বাহ্যিক উপকারিতার প্রতি লক্ষ্য করেই এতে মত্ত ছিল। কিন্তু এগুলোর অন্তর্নিহিত অকল্যাণ সম্পর্কে তাদের কোন ধারণাই ছিল না। তবে আল্লাহর নিয়ম হচ্ছে এই যে, প্রতিটি জাতি ও প্রতিটি অঞ্চলে কিছু বুদ্ধিমান ব্যক্তিও থাকেন, যারা বিবেক-বুদ্ধিকে অভ্যাসের ঊর্ধ্বে স্থান দেন। যদি কোন অভ্যাস বুদ্ধির বা যুক্তির পরিপন্থী হয়, তবে সে অভ্যাসের ধারে-কাছেও তাঁরা যান না। এ ব্যাপারে নবী করীম (সা)-এর স্থান ছিল সবচেয়ে ঊর্ধ্বে। কেননা যেসব বস্তু কোন কালে হারাম হবে, এমন সব বস্তু হতেও তাঁর অন্তরে পূর্ব থেকেই একটা সহজাত ঘৃণা ছিল। সাহাবীগণের মধ্যেও এমন কিছু সংখ্যক লোক ছিলেন, যাঁরা হালাল থাকা কালেও মদ্যপান তো দূরের কথা, স্পর্শও করেন নি।
মদীনায় পৌঁছার পর কতিপয় সাহাবী এমন বিষয়ের অকল্যাণগুলো অনুভব করলেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে হযরত ফারুকে-আযম, হযরত মু’আয ইবনে জাবাল এবং কিছু সংখ্যক আনসার রাসূলে করীম (সা)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বললেনঃ মদ ও জুয়া মানুষের বুদ্ধি-বিবেচনাকে পর্যন্ত বিলুপ্ত করে ফেলে এবং ধন-সম্পদও ধ্বংস করে দেয়; এ সম্পর্কে আপনার নির্দেশ কি ? এ প্রশ্নের উত্তরেই আলোচ্য আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। এ হচ্ছে প্রথম আয়াত, যা মুসলমানদেরকে মদ ও জুয়া হতে দূরে রাখার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে। আয়াতটিতে বলা হয়েছে যে, মদ ও জুয়াতে যদিও বাহ্যিক দৃষ্টিতে কিছু উপকারিতা পরিলক্ষিত হয়, কিন্তু এ দু’টির মাধ্যমেই অনেক বড় বড় পাপের পথ উন্মুক্ত হয়, যা এর উপকারিতার তুলনায় অনেক বড় ও ক্ষতিকর। পাপ অর্থে এখানে সে সব বিষয়ও বোঝানো হয়েছে, যা পাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন মদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় দোষ হচ্ছে এই যে, এতে মানুষের সবচাইতে বড় গুণ, বুদ্ধি-বিবেচনা বিলুপ্ত হয়ে যায়। কারণ বুদ্ধি এমন একটি গুণ, যা মানুষের মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। পক্ষান্তরে যখন তা থাকে না, তখন প্রতিটি মন্দ কাজের পথই সুগম হয়ে যায় ।
এ আয়াতে পরিষ্কার ভাষায় মদকে হারাম করা হয়নি, কিন্তু এর অনিষ্ট ও অকল্যাণের দিকগুলোকে তুলে ধরে বলা হয়েছে যে, মদ্যপানের দরুন মানুষ অনেক মন্দ কাজে লিপ্ত হয়ে যেতে পারে। বলতে গেলে আয়াতটিতে মদ্যপান ত্যাগ করার জন্য এক প্রকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর কোন কোন সাহাবী এ পরামর্শ গ্রহণ করে তৎক্ষণাৎ মদ্যপান ত্যাগ করেছেন। আবার কেউ কেউ মনে করেছেন, এ আয়াতে মদকে তো হারাম করা হয়নি, বরং এটা ধর্মের পক্ষে ক্ষতিকর কাজে ধাবিত করে বলে একে গোনাহের কারণ বলে স্থির করা হয়েছে। যাতে ফেতনায় পড়তে না হয়, সেজন্য পূর্ব থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
মদ্যপান সংক্রান্ত আয়াত নাযিল হওয়ার ঘটনা
মদের ব্যাপারে পরবর্তী আয়াতটি নাযিল হওয়ার ঘটনাটি নিম্নরূপঃ একদিন হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা) সাহাবীগণের মধ্য হতে তাঁর কয়েকজন বন্ধুকে নিমন্ত্রণ করে আহারের পর প্রথা অনুযায়ী মদ্যপানের ব্যবস্থা করলেন এবং সবাই মদ্যপান করলেন। এমতাবস্থায় মাগরিবের নামাযের সময় হলে সবাই নামাযে দাঁড়ালেন এবং একজনকে ইমামতি করতে আগে বাড়িয়ে দিলেন। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় যখন তিনি قُلْ يَاأَيُّهَا الْكَافِرُونَ সূরাটি ভুল পড়তে লাগলেন, তখনই মদ্যপান হতে বিরত রাখার জন্যে দ্বিতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলো। ইরশাদ হলোঃ
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَى
অর্থাৎ- ‘হে ঈমানদারগণ! নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা নামাযের কাছেও যেও না।’ এতে নামাযের সময় মদ্যপানকে হারাম করা হয়েছে। তবে অন্যান্য সময় তা পান করার অনুমতি তখনও পর্যন্ত বহাল। পরবর্তীতে বহু সংখ্যক সাহাবী এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পরই মদ্যপান সম্পূর্ণ বর্জন করেছিলেন। ভেবেছিলেন, যে বস্তু মানুষকে নামায থেকে বিরত রাখে, তাতে কোন কল্যাণই থাকতে পারে না। যখন নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামায পড়তে নিষেধ করা হয়েছে, তখন এমন বস্তুর ধারে কাছে যাওয়া উচিত নয়, যা মানুষকে নামায থেকে বঞ্চিত করে। যেহেতু নামাযের সময় ব্যতীত অন্যান্য সময়ের জন্য মদ্যপানকে পরিষ্কারভাবে নিষেধ করা হয়নি, সেহেতু কেউ কেউ নামাযের সময় ব্যতীত অন্যান্য সময়ে মদ্যপান করতে থাকেন। ইতিমধ্যে আরো একটি ঘটনা সংঘটিত হয়ে যায়। হযরত আতবান ইবনে মালেক (রা) কয়েকজন সাহাবীকে নিমন্ত্রণ করেন, যাঁদের মধ্যে সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা)-ও উপস্থিত ছিলেন। খাওয়া-দাওয়ার পর মদ্যপান করার প্রতিযোগিতা আরম্ভ হয়ে গেল। আরবদের প্রথা অনুযায়ী নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কবিতা প্রতিযোগিতা এবং নিজেদের বংশ ও পূর্বপুরুষদের অহংকারমূলক বর্ণনা আরম্ভ হয়। সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা) একটি কবিতা আবৃত্তি করলেন, যাতে আনসারদের দোষারোপ করে নিজেদের প্রশংসা কীর্তন করা হয়। ফলে একজন আনসার যুবক রাগান্বিত হয়ে উটের গণ্ডদেশের একটি হাড় সাদ-এর মাথায় ছুঁড়ে মারেন। এতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। পরে সা’দ (রা) রাসূল (সা)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে উক্ত আনসার যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তখন হুযূর (সা) দোয়া করলেনঃ
اللهم بين لنا في الخمر بيانا شافيا .
অর্থাৎ- “হে আল্লাহ্ ! শরাব সম্পর্কে আমাদেরকে একটি পরিষ্কার বর্ণনা ও বিধান দান কর।” তখনই সূরা মায়েদার উদ্ধৃত মদ ও মদ্যপানের বিধান সম্পর্কিত বিস্তারিত আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। এতে মদকে সম্পূর্ণরূপে হারাম করা হয়েছে।
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ أَنْتُمْ مُنْتَهُونَ
অর্থাৎ- “হে ঈমানদারগণ! নিশ্চিত জেনো, মদ, জুয়া, মূর্তি এবং ভাগ্য নির্ধারণের জন্য তীর নিক্ষেপ এসবগুলোই নিকৃষ্ট শয়তানী কাজ। কাজেই এসব থেকে সম্পূর্ণভাবে সরে থাক, যাতে তোমরা মুক্তি লাভ ও কল্যাণ পেতে পার। শয়তান মদ ও জুয়ার দ্বারা তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক শত্রুতা-তিক্ততা সৃষ্টি হয়ে থাকে আর আল্লাহর স্মরণ এবং নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখাই হলো শয়তানের একান্ত কাম্য, তবুও কি তোমরা তা থেকে বিরত থাকবে না ?"
মদের অবৈধতা সম্পর্কে পর্যায়ক্রমিক নির্দেশঃ আল্লাহর নির্দেশাবলীর তাৎপর্য তিনিই জানেন। তবে শরীয়তের নির্দেশসমূহের প্রতি গভীরভাবে লক্ষ্য করলে বোঝা যায় যে, ইসলামী শরীয়ত কোন বিষয়ে কোন হুকুম প্রদান করতে গিয়ে মানবীয় আবেগ-অনুভূতিসমূহের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রেখেছে, যাতে মানুষ সেগুলোর অনুসরণ করতে গিয়ে বিশেষ কষ্টের সম্মুখীন না হয়। যেমন কোরআন নিজেই ঘোষণা করেছেঃ لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا “আল্লাহ্ তা’আলা কোন মানুষকেই এমন আদেশ দেন না, যা তার শক্তি ও ক্ষমতার ঊর্ধ্বে।” এই দয়া ও রহস্যের চাহিদা ছিল ইসলামী শরীয়তেও মদ্যপানকে হারাম করার ব্যাপারে পর্যায়ক্রমিক ব্যবস্থা গ্রহণ।
মদ্য পানকে পর্যায়ক্রমিকভাবে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে কোরআনের সংক্ষিপ্ত কার্যক্রম হচ্ছে এই যে, মদ্যপান সম্পর্কে চারটি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। তন্মধ্যে আলোচ্য এ আয়াতটিই সর্বপ্রথম নির্দেশ। এতে মদ্যপানের দরুন যেসব পাপ ও ফাসাদ সৃষ্টি হয়, তার বর্ণনা দিয়েই ক্ষান্ত করা হয়েছে। মদ্যপান হারাম করা হয়নি, বরং এ আয়াতটিকে এই মর্মে একটা পরামর্শ বলা যেতে পারে যে, এটা বর্জনীয় বস্তু। কিন্তু বর্জন করার কোন নির্দেশ এতে দেওয়া হয়নি।
মদ্যপান সংক্রান্ত দ্বিতীয় আয়াত
দ্বিতীয় আয়াত সূরা নিসা’য় বলা হয়েছেঃ لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَى– এতে বিশেষভাবে নামাযের সময় মদ্যপানকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য সময়ের জন্য অনুমতি রয়ে গেছে। তৃতীয় ও চতুর্থ আয়াত রয়েছে সূরা মায়েদায়, যা উপরে বর্ণনা করা হয়েছে। এতে পরিষ্কার ও কঠোরভাবে মদ্যপান নিষিদ্ধ ও হারাম করে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয় শরীয়তের এমন পর্যায়ক্রমিক ব্যবস্থা গ্রহণের কারণ ছিল এই যে, আজীবনের অভ্যাস ত্যাগ করা, বিশেষত নেশাজনিত অভ্যাস হঠাৎ ত্যাগ করা মানুষের পক্ষে অত্যন্ত কষ্টকর হতো।
আলেমগণ বলেছেনঃ فطام العادة أشد من فطام الرضاعة অর্থাৎ ‘যেভাবে শিশুদেরকে মাতৃস্তনের দুধ ছাড়ানো কঠিন ও কষ্টকর, তেমনি মানুষের কোন অভ্যাসগত কাজ ত্যাগ করা এর চাইতেও কষ্টকর।” এজন্য ইসলাম একান্ত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিত্বে প্রথম শরাবের মন্দ দিকগুলো মানবমনে বদ্ধমূল করেছে। অতঃপর নামাযের সময়ে একে নিষিদ্ধ করেছে এবং সবশেষে বিশেষ বিশেষ সময়ের পরিবর্তে কঠোরভাবে সর্বকালের জন্যই একে নিষিদ্ধ ও হারাম ঘোষণা করেছে।
তবে শরাব হারাম করার ব্যাপারে প্রথমত ধীরমন্থর গতিতে এগিয়ে যাওয়াটাই ছিল বৈজ্ঞানিক পন্থা। তেমনিভাবে কঠোরভাবে হারাম ঘোষণা করার পর এর নিষিদ্ধতার আইন-কানুন শক্তভাবে জারি করাও বিজ্ঞতারই পরিচায়ক। এ জন্য রাসূল (সা) শরাব সম্পর্কে কঠোর শাস্তির ভয় প্রদর্শন করেছেন। ইরশাদ হয়েছেঃ “সর্বপ্রকার অপকর্ম এবং অশ্লীলতার জন্মদাতা হচ্ছে শরাব । এটি পান করে মানুষ নিকৃষ্টতর পাপে লিপ্ত হয়ে যেতে পারে।"
মদের সাথে সম্পর্ক রাখা ১০ শ্রেণীর ব্যক্তির উপর লানত
নাসায়ী শরীফে উদ্ধৃত এক হাদীসে বলা হয়েছে যে, “শরাব ও ঈমান একত্র হতে পারে না।" তিরমিযীতে হযরত আনাস (রা) হুযূর (সা)-এর নিকট হতে বর্ণনা করেছেন যে, হুযূর (সা) মদের সাথে সম্পর্ক রাখে- এমন দশ শ্রেণীর ব্যক্তির উপর লা’নত করেছেন।
(১) যে লোক নির্যাস বের করে, (২) প্রস্তুতকারক, (৩) পানকারী, (৪) যে পান করায়, (৫) আমদানীকারক, (৬) যার জন্য আমদানী করা হয়, (৭) বিক্রেতা, (৮) ক্রেতা, (৯) সরবরাহকারী, (১০) এর লভ্যাংশ ভোগকারী।
অতঃপর শুধু মৌলিক শিক্ষা ও প্রচারের উপরই ক্ষান্ত হননি, বরং যথাযথ আইনের মাধ্যমেও ঘোষণা করা হয়েছে যে, যার নিকট কোন প্রকার মদ থেকে থাকে, তা অমুক স্থানে উপস্থিত কর।
সাহাবীগণের মধ্যে আদেশ পালনের অনুপম আগ্রহ
আদেশ পাওয়ামাত্র অনুগত সাহাবীগণ নিজ নিজ ঘরে ব্যবহারের জন্য রক্ষিত মদ তৎক্ষণাৎ ফেলে দিলেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) বর্ণনা করেছেন যে, যখন রাসূলে করীম (সা)-এর প্রেরিত এক ব্যক্তি মদীনার অলি-গলিতে প্রচার করতে লাগলেন যে, মদ্যপান হারাম করা হয়েছে, তখন যার হাতে শরাবের যে পাত্র ছিল, তা তিনি সেখানেই ফেলে দিয়েছিলেন। যার কাছে মদের কলস বা মটকা ছিল, তা ঘর থেকে তৎক্ষণাৎ বের করে ভেঙে ফেলেছেন। হযরত আনাস (রা) তখন এক মজলিসে মদ্যপানের সাকীর কাজ সম্পাদন করছিলেন। আবূ তালহা, আবূ ওবায়দা ইবনুল জাররাহ্, উবাই ইবনে কা’ব, সোহাইল (রা) প্রমুখ নেতৃস্থানীয় সাহাবী সে মজলিসে উপস্থিত ছিলেন। প্রচারকের ঘোষণা কানে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে সবাই সমস্বরে বলে উঠলেন-এবার সমস্ত শরাব ফেলে দাও। এর পেয়ালা, মটকা, হাঁড়ি ভেঙে ফেল। অন্য বর্ণনায় আছে—হারাম ঘোষণার সময় যার হাতে শরাবের পেয়ালা ছিল এবং তা ঠোঁট স্পর্শ করেছিল, তাও তৎক্ষণাৎ সে অবস্থাতেই দূরে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। সেদিন মদীনায় এ পরিমাণ শরাব নিক্ষিপ্ত হয়েছিল যে, বৃষ্টির পানির মত শরাব প্রবাহিত হয়ে যাচ্ছিল এবং দীর্ঘদিন পর্যন্ত মদীনার অলি-গলির অবস্থা ছিল যে, যখনই বৃষ্টি হতো তখন শরাবের গন্ধ ও রং মাটির উপর ফুটে উঠত।
যখন আদেশ হলো যে, যার কাছে যে রকম মদ রয়েছে, তা অমুক স্থানে একত্র কর। তখন মাত্র সেসব মদই বাজারে ছিল, যা ব্যবসার জন্য রাখা হয়েছিল। এ আদেশ পালনকল্পে সাহাবীগণ বিনাদ্বিধায় নির্ধারিত স্থানে সব মদ একত্র করেছিলেন।
হুযূর (সা) স্বয়ং সেখানে উপস্থিত হয়ে স্বহস্তে শরাবের অনেক পাত্র ভেঙে ফেললেন এবং অবশিষ্টগুলো সাহাবীগণের দ্বারা ভাঙিয়ে দিলেন। জনৈক সাহাবী মদের ব্যবসা করতেন এবং সিরিয়া থেকে মদ আমদানী করতেন। ঘটনাচক্রে তখন তিনি মদ আনার উদ্দেশ্যে সিরিয়া গিয়েছিলেন। যখন তিনি ব্যবসায়ের এ পণ্য নিয়ে প্রত্যাবর্তন করলেন এবং মদীনায় প্রবেশ করার পূর্বেই যখন মদ হারাম হওয়ার সংবাদ তাঁর কানে পৌঁছলো তখন সেই সাহাবীও তাঁর সমুদয় মাল, যা অনেক মুনাফার আশায় আনা হয়েছিল, এক পাহাড়ের পাদদেশে রেখে এসে হুযূরে আকরাম (সা)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে এসব সম্পদের ব্যাপারে কি করতে হবে তৎসম্পর্কে নির্দেশ প্রার্থনা করলেন। মহানবী (সা) হুকুম করলেন, মটকাগুলো ভেঙে সমস্ত শরাব ভাসিয়ে দাও। অতঃপর বিনা আপত্তিতে তিনি তাঁর সমস্ত পুঁজির বিনিময়ে সংগৃহীত এ পণ্যসম্ভার স্বহস্তে মাটিতে ঢেলে দিলেন। এটাও ইসলামের মু’জেযা এবং সাহাবীগণের বিস্ময়কর আনুগত্যের নিদর্শন, যা এ ঘটনায় প্রমাণিত হলো। যে জিনিসের অভ্যাস হয়ে যায় সবাই জানে যে, তা ত্যাগ করা বড় কঠিন হয়ে পড়ে। মদ্যপানে তাঁরা এমন অভ্যস্ত ছিলেন যে, অল্পদিন তা থেকে বিরত থাকাও স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল না। কিন্তু নবী করীম (সা)-এর একটি মাত্র নির্দেশই তাঁদের অভ্যাসে এমন অপূর্ব বিপ্লব সৃষ্টি করল যে, তারপর থেকে তাঁরা শরাবের প্রতি ততটুকুই ঘৃণা পোষণ করতে লাগলেন, যতটুকু পূর্বে তাঁরা এর প্রতি আসক্ত ছিলেন।
ইসলামী রাজনীতি এবং সাধারণ রাজনীতির পার্থক্য
আলোচ্য আয়াতে ও ঘটনাসমূহের মধ্যে শরাব হারাম হওয়ার আদেশের প্রতি মুসলমানদের আনুগত্যের একটা নমুনা দেখা গেল। একে ইসলামের মু’জেযা বা নবী করীম (সা)-এর শিক্ষার বৈশিষ্ট্য অথবা ইসলামী রাজনীতির অপরিহার্য পরিণতিও বলা যেতে পারে। বস্তুত নেশার অভ্যাস ত্যাগ করা যে অত্যন্ত কঠিন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তদুপরি আরব দেশের কথা তো স্বতন্ত্র, সেখানে এর প্রচলন এত বেশি ছিল যে, মদ ছাড়া কয়েক ঘণ্টা কাটানোও তাঁদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব ছিল। এমতাবস্থায় তা কি পরশ পাথর ছিল যে, মাত্র একটি ঘোষণার শব্দ কানে পৌঁছামাত্র তাঁদের স্বভাবে এ আমূল পরিবর্তন সাধিত হলো ! সে একটি মাত্র ঘোষণাই তাঁদের অভ্যাসে এমন পরিবর্তন সৃষ্টি করেছিল যে, কয়েক মিনিট পূর্বে যে জিনিস এত প্রিয় এবং এত লোভনীয় ছিল, অল্প কয়েক মিনিট পরে তাই অত্যন্ত ঘৃণ্য ও পরিত্যাজ্য বলে পরিগণিত হয়ে গেল ! অপরদিকে বর্তমান যুগের তথাকথিত উন্নতমানের রাজনীতির একটি উদাহরণ সামনে রেখে দেখা যাক। আজ থেকে কয়েক বছর পূর্বে আমেরিকার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এবং সমাজ সংস্কারকগণ মদ্যপানের সংখ্যাতীত মারাত্মক ক্ষতিকর দিকগুলো অনুধাবন করে দেশে মদ্যপানকে আইন করে বন্ধ করতে চেয়েছিলেন। আর এজন্য জনমত গঠনের সর্বাপেক্ষা নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসাবে অভিহিত প্রচারের সে আধুনিকতম যন্ত্রগুলোও ব্যবহার করা হয়েছিল। সবগুলো প্রচার-মাধ্যমই মদ্যপানের বিরুদ্ধে প্রচারে সোচ্চার হয়ে উঠেছিল। শত শত সংবাদপত্রে নিবন্ধ প্রকাশিত হলো, পুস্তক-পুস্তিকা রচিত হলো, লক্ষ লক্ষ পুস্তক ছেপে প্রচার ও বিতরণ করা হলো। তাছাড়া আমেরিকার সংসদেও এজন্য আইন পাস করা হলো। কিন্তু এতদসত্ত্বেও আমেরিকার যে অবস্থা, মানুষের সামনে এবং সেখানকার সরকারী প্রতিবেদনের মাধ্যমে পৃথিবীর সামনে এসেছে তা হলো এই যে, এই আধুনিক উন্নত ও শিক্ষিত জাতি সেই আইনগত নিষেধাজ্ঞার সময়টিতে সাধারণ সময়ের চাইতেও অধিক মাত্রায় মদ্যপান করেছে। এমনকি অবশেষে সরকার এ আইন বাতিল করে দিতে বাধ্য হয়েছে।
তদানীন্তন আরবের মুসলমান এবং আধুনিক আমেরিকার উন্নত জাতির মধ্যকার পার্থক্য অত্যন্ত স্পষ্ট, যা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। তবে এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এই যে, বিরাট পার্থক্যের প্রকৃত কারণ ও রহস্য কি ?
একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে যে, ইসলামী শরীয়ত মানুষের সংশোধনের জন্য শুধু আইনকেই পর্যাপ্ত মনে করেনি, বরং আইনের পূর্বে তাদের মন-মস্তিষ্ককে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে, ইবাদত-আরাধনা এবং পরকালের চিন্তা নামক পরশমনির পরশে মনোজগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে, যার ফলে রাসূল (সা) এর একটি মাত্র আহবানেই তারা স্বীয় জানমাল, শান-শওকত সবকিছু বিসর্জন দিতে প্রস্তুত হয়েছিল। মক্কী জীবনে এই মানুষ তৈরির কাজই বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চলতে থাকে। এভাবে আত্মত্যাগীদের একটা বিরাট দল তৈরি হয়ে গেল; তারপর প্রণয়ন করা হলো আইন। পক্ষান্তরে মানুষের মনের পরিবর্তনের জন্য আমেরিকার সরকার অসংখ্য উপায় অবলম্বন করেছে। তাদের নিকট সব কিছুই ছিল, কিন্তু ছিল না পরকালের চিন্তা। অপরদিকে মুসলমানদের প্রতিটি শিরা-উপশিরাও ছিল পরকালের চিন্তায় পরিপূর্ণ। আজও যদি সমস্যাকাতর দুনিয়ার মানুষ সে পরশমনি ব্যবহার করে দেখেন, তবে অবশ্যই তাঁরা দেখতে পাবেন যে, অতি সহজেই সারা বিশ্বে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে।
মদ্যপানের অপকারিতা ও উপকারিতার তুলনা
এ আয়াতে মদ ও জুয়া উভয় বস্তু সম্পর্কেই কোরআন বলেছে যে, এতে কিছু উপকারিতাও রয়েছে, তবে বেশ কিছু অপকারিতাও বর্তমান- কিন্তু এর উপকারিতার তুলনায় অপকারিতার মাত্রা অনেক বেশি। তাই একটু খতিয়ে দেখা প্রয়োজন, এর উপকারিতা ও অপকারিতাগুলো কি কি? অতঃপর দেখতে হবে, উপকারিতার তুলনায় অপকারিতা বেশি হওয়ার কারণ কি? সবশেষে ফিকাহর কয়েকটি মূলনীতি বর্ণনা করা হবে, যেগুলো এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়।
প্রথমে শরাব সম্পর্কে আলোচনা করা যাকঃ এর উপকারিতার কথা বলতে গেলে শরাব পানে আনন্দ লাভ হয়, সাময়িকভাবে শক্তিও কিছুটা বৃদ্ধি পায় এবং শরীরে কিছুটা লাবণ্যও সৃষ্টি হয়, কিন্তু এ নগণ্য উপকারিতার তুলনায় এর ক্ষতির দিকটা এত বিস্তৃত ও গভীর যে, অন্য কোন বস্তুতেই সচরাচর এতটা ক্ষতি দেখা যায় না। শরাবের প্রতিক্রিয়ায় ধীরে ধীরে মানুষের হজমশক্তি বিনষ্ট হয়ে যায়, খাদ্যস্পৃহা কমে যায়, চেহারা বিকৃত হয়ে পড়ে, স্নায়ু দুর্বল হয়ে আসে। সামগ্রিকভাবে শারীরিক সক্ষমতার উপর মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। একজন জার্মান ডাক্তার বলেছেন- যারা মদ্যপানে অভ্যস্ত তারা চল্লিশ বছর বয়সে ষাট বছরের বৃদ্ধ মানুষের মত অকর্মণ্য হয়ে পড়ে এবং তাদের শরীরের গঠন এত হালকা হয়ে যায় যে, ষাট বছরের বৃদ্ধেরও তেমনটি হয় না। শারীরিক শক্তি ও সামর্থ্যের দিক দিয়ে অল্প বয়সে বৃদ্ধের মত বেকার হয়ে পড়ে। তাছাড়া শরাব লিভার এবং কিডনীকে সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট করে ফেলে। যক্ষ্মা রোগটি মদ্যপানেরই একটা বিশেষ পরিণতি। ইউরোপের শহরাঞ্চলে যক্ষ্মার আধিক্যের কারণও অতিমাত্রায় মদ্যপান। সেখানকার কোন কোন ডাক্তার বলেছেন, ইউরোপে অধিক মৃত্যুর কারণই হচ্ছে যক্ষ্মা। যখন থেকে ইউরোপে মদ্যপানের আধিক্য দেখা দিয়েছে, তখন থেকে সেখানে যক্ষ্মারও প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
এগুলো হচ্ছে মানবদেহে সাধারণ প্রতিক্রিয়া। বস্তুত মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধির উপর এর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সবাই অবগত। সবাই জানেন যে, মানুষ যতক্ষণ নেশাগ্রস্ত থাকে, ততক্ষণ তার জ্ঞানবুদ্ধি কোন কাজই করতে পারে না। কিন্তু অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের অভিমত হচ্ছে এই যে, নেশার অভ্যাস মানুষের বোধশক্তিকেও দুর্বল করে দেয়, যার প্রভাব চৈতন্য ফিরে পাবার পরেও ক্রিয়াশীল থাকে। অনেক সময় এতে মানুষ পাগলও হয়ে যায়। চিকিৎসাবিদগণের সবাই এতে একমত যে, শরাব কখনও শরীরের অংশে পরিণত হয় না, এতে শরীরে রক্তও সৃষ্টি হয় না; রক্তের মধ্যে একটা সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হয় মাত্র। ফলে সাময়িকভাবে শক্তির সামান্য আধিক্য অনুভূত হয়। কিন্তু হঠাৎ রক্তের এ উত্তেজনা অনেক সময় মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
যে সব শিরা ও ধমনীর মাধ্যমে সারা শরীরে রক্ত প্রবাহিত হয়ে থাকে, মদ্যপানের দরুন সেগুলো শক্ত ও কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে দ্রুতগতিতে বার্ধক্য এগিয়ে আসতে থাকে। শরাবের দ্বারা মানুষের গলদেশ এবং শ্বাসনালীরও প্রচুর ক্ষতি সাধিত হয়। ফলে স্বর মোটা হয়ে যায় এবং স্থায়ী কফ হয়ে থাকে, তারই ফলে শেষ পর্যন্ত যক্ষ্মা রোগের সৃষ্টি হয়। শরাবের প্রতিক্রিয়া উত্তরাধিকারসূত্রে সন্তানদের উপরও পড়ে। মদ্যপায়ীদের সন্তান দুর্বল হয় এবং অনেকে তাতে বংশহীনও হয়ে পড়ে।
একথাও স্মরণযোগ্য মদ্যপানের প্রাথমিক অবস্থায় মানুষ নিজের মধ্যে চঞ্চলতা ও স্ফূর্তি এবং কিছুটা শক্তি অনুভব করে থাকে। ফলে তারা ডাক্তার-হাকীমদের মতামতকে পাত্তা দিতে চায় না। কিন্তু তাদের জানা উচিত যে, শরাব এমন একটি বিষাক্ত দ্রব্য, যার বিষক্রিয়া পর্যায়ক্রমিকভাবে দৃশ্যমান হতে থাকে এবং কিছু দিনের মধ্যেই তার মারাত্মক প্রতিক্রিয়াগুলো প্রকাশ পায়।
শরাবের আর একটি ক্ষতিকর দিক হচ্ছে এই যে, এটা ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টির কারণ হয়ে থাকে এবং শত্রুতা ও বিরোধ মানুষের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করে। ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে এই অনিষ্টকারিতাই সবচাইতে গুরুতর। সুতরাং কোরআন সূরা মায়েদার এক আয়াতে বলছেঃ
إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ
অর্থাৎ- "শয়তান শরাব ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক বিদ্বেষ ও শত্রুতা সৃষ্টি করতে চায়।”
শরাবের আর একটি ক্ষতিকর দিক হচ্ছে এই যে, মদ্যপান করে যখন মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়ে, তখন সে নিজের গোপন কথাও প্রকাশ করে দেয়, যার পরিণাম অনেক সময় অত্যন্ত মারাত্মক ও ভয়াবহ আকারে দেখা দেয়, বিশেষ করে সে ব্যক্তি যদি কোন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত হয়ে থাকে, তবে তার দ্বারা বেফাঁসভাবে কোন গোপন তথ্য প্রকাশিত হওয়ার ফলে সারা দেশেই পরিবর্তন ও বিপ্লব সৃষ্টি হয়ে যেতে পারে। দেশের রাজনীতি ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের কৌশলগত গোপন তথ্য শত্রুর হাতে চলে যেতে পারে। বিচক্ষণ গুপ্তচরেরা এ ধরনের সুযোগ গ্রহণ করে থাকে।
শরাবের আর একটি ক্ষতিকর দিক হচ্ছে, সে মানুষকে পুতুলে পরিণত করে দেয়, যাকে দেখলে বাচ্চারা পর্যন্ত উপহাস করতে থাকে। কেননা তার কাজ ও চালচলন সবই তখন অস্বাভাবিক হয়ে যায়। শরাবের আরও একটি মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে এই যে, এটি খেয়ানতের মতো।
শরাব মানুষকে সকল মন্দ থেকে মন্দকর কাজে ধাবিত করে। ব্যভিচার ও নর-হত্যার অধিকাংশই এর পরিণাম। আর এজন্য অধিকাংশ শরাবখানাই ব্যভিচার, যিনা ও হত্যাকাণ্ডের আখড়ায় পরিণত হয়। এসব হচ্ছে মানুষের শারীরিক ক্ষতি, আর রূহানী ক্ষতি তো সুপরিজ্ঞাত যে, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামায পড়া চলে না। অন্য কোন ইবাদত অথবা আল্লাহর কোন যিকির করাও সম্ভব হয় না। সে জন্যই কোরআন করীমে ইরশাদ হয়েছেঃ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ অর্থাৎ শরাব তোমাদিগকে আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে বিরত রাখে।
এখন রইল আর্থিক ক্ষতির দিকটা। যদি কোন এলাকায় একটি শরাবখানা খোলা হয়, তবে তা সমস্ত এলাকার টাকা-পয়সা লুটে নেয়—একথা সর্বজনবিদিত। এ ব্যয়ের পরিমাণ ও পর্যায় বহু রকমের। একজন বিশিষ্ট পরিসংখ্যানবিদের সংগৃহীত তথ্যানুযায়ী শুধু একটি শহরে শরাবের মোট ব্যয় সামগ্রিক জীবনযাত্রার অন্যান্য সকল ব্যয়ের সমান।
এই হলো শরাবের ধর্মীয়, পার্থিব, শারীরিক এবং আধ্যাত্মিক ক্ষতির একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা, যা রসূল (সা) একটি বাক্যের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেনঃ أم الفواحش وأم الخبائث অর্থাৎ- “শরাব সকল মন্দ ও অশ্লীলতার জননী।” এ প্রসঙ্গে জনৈক জার্মান ডাক্তারের মন্তব্য প্রবাদ বাক্যের মতই প্রসিদ্ধ। তিনি বলেছেন, যদি অর্ধেক শরাবখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তবে আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, অর্ধেক হাসপাতাল ও অর্ধেক জেলখানা আপনা থেকেই অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাবে। -(তফসীরে আল-মানারঃ মুফতী আবদুহু - পৃ. ২২৬, জিঃ ২)
আল্লামা তানতাবী (র) স্বীয় গ্রন্থ আল-জাওহারে এ প্রসঙ্গে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেছেন। তারই কয়েকটি এখানে উদ্ধৃত করা যাচ্ছেঃ ফ্রান্সের জনৈক বিশিষ্ট পণ্ডিত হেনরী তাঁর গ্রন্থ ’খাওয়াতির ও সাওয়ানিহ্ ফিল ইসলাম’-এ লিখেছেন, “প্রাচ্যবাসীকে সমূলে উৎখাত করার জন্য সবচেয়ে মারাত্মক অস্ত্র এবং মুসলমানকে খতম করার জন্য নির্মিত দু’ধারী তলোয়ার ছিল এই ‘শরাব’। আমরা আলজিরিয়ার বিরুদ্ধে এ অস্ত্র ব্যবহার করেছি। কিন্তু ইসলামী শরীয়ত আমাদের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং আমাদের ব্যবহৃত অস্ত্রে মুসলমানরা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়নি; ফলে তাদের বংশ বেড়েই চলেছে। এরাও যদি আমাদের সেই উপঢৌকন গ্রহণ করে নিত, যেভাবে তাদের একটি বিশ্বাসঘাতক গোষ্ঠী তা গ্রহণ করে নিয়েছে, তাহলে তারাও আমাদের কাছে পদানত ও অপদস্থ হয়ে পড়ত। আজ যাদের ঘরে আমাদের সরবরাহকৃত শরাবের প্রবাহ বইছে, তারা আমাদের কাছে এতই নিকৃষ্ট ও পদদলিত হয়ে গেছে যে, তারা মাথাটি পর্যন্ত তুলতে পারছে না।’
জনৈক বৃটিশ আইনজ্ঞ ব্যান্টাম লেখেন, “ইসলামী শরীয়তের অসংখ্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে এও একটি বেশিষ্ট্য যে, এতে মদ্যপান নিষিদ্ধ। আমরা দেখেছি, আফ্রিকার লোকেরা যখন এর ব্যবহার শুরু করে, তখন থেকেই তাদের বংশে ’উন্মাদনা’ সংক্রমিত হতে শুরু করেছে। আর ইউরোপের যেসব লোক এই পদার্থটিতে চুমুক দিতে শুরু করেছে, তাদের জ্ঞান-বুদ্ধিরও বিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে। কাজেই আফ্রিকার লোকদের জন্য যেমন এর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন, তেমনি ইউরোপের লোকদের জন্য এ কারণে কঠিন শাস্তির বিধান করা দরকার।”
সারকথা, যে কোন সৎ লোক যখনই শীতল মস্তিষ্কে এ ব্যাপারে চিন্তা করেছেন, তখনই স্বতঃস্ফূর্তভাবে চিৎকার করে উঠেছেন। “এটি অপবিত্র বস্তু, এ যে শয়তানী কাজ, এ যে হলাহল—ধ্বংসের উপকরণ ! এই ’উন্মুল খাবায়েস’ বা সকল অকল্যাণের মাতার ধারে-কাছেও যেয়ো না ; ফিরে এসো–فَهَلْ أَنْتُمْ مُنْتَهُونَ.
মদ্যপানের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত কোরআনের চারটি আয়াত উপরে বর্ণনা করা হয়েছে। সূরা নাহলের আরো এক জায়গায় নেশাকর দ্রব্যাদির আলোচনা অন্য ভঙ্গিতে করা হয়েছে। সে বিষয়টিও এখানেই আলোচনা করা বাঞ্ছনীয় হবে বলে মনে হয়; যাতে শরাব ও অন্যান্য যাবতীয় নেশাকর দ্রব্য সম্পর্কে কোরআনী বর্ণনাগুলো মোটামুটিভাবে সামনে এসে যায়। সে আয়াতটি হচ্ছে এইঃ
وَمِنْ ثَمَرَاتِ النَّخِيلِ وَالْأَعْنَابِ تَتَّخِذُونَ مِنْهُ سَكَرًا وَرِزْقًا حَسَنًا إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَةً لِقَوْمٍ يَعْقِلُونَ
অর্থাৎ- “আর খেজুর ও আঙ্গুর দ্বারা তোমরা নেশাকর দ্রব্য এবং উত্তম আহার্য প্রস্তুত করে থাক ; নিশ্চয়ই এতে বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের জন্য বড় প্রমাণ রয়েছে।”
তফসীর ও ব্যাখ্যাঃ পূর্ববর্তী আয়াতসমূহে আল্লাহ্ তা’আলার ঐ সমস্ত নেয়ামতের উল্লেখ করা হয়েছে, যা মানুষের খাদ্যরূপে দান করে আল্লাহ তা’আলা তাঁর অত্যাশ্চর্য সৃষ্টি মহিমার পরিচয় দিয়েছেন। এতে প্রথমে দুধের কথা বলা হয়েছে। যাকে আল্লাহ্ তা’আলা জন্তুর পেটের মধ্যে রক্ত ও মলমূত্রের সংমিশ্রণ থেকে পৃথক করে মানুষের জন্য পরিচ্ছন্ন খাদ্য হিসাবে দান করেছেন। ফলে মানুষকে কোন কিছুই করতে হয় না। এজন্য এখানে نسقيكم শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যে, আমি তোমাদিগকে দুধ পান করিয়ে থাকি। অতঃপর বলা হয়েছে যে, খেজুর ও আঙ্গুরের দ্বারা মানুষ কিছু খাদ্যবস্তু তৈরি করে থাকে যাতে তাদের উপকার হয়। এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, খেজুর ও আঙ্গুর দ্বারা নিজেদের জন্য লাভজনক খাদ্য প্রস্তুতে মানুষের শিল্পজ্ঞানের কিছুটা হাত রয়েছে। আর এই দক্ষতার ফলে দু’রকমের খাদ্য তৈরি হয়েছে। একটি হলো নেশাজাত দ্রব্য, যাকে মদ বা শরাব বলা হয়; দ্বিতীয়টি হলো উৎকৃষ্ট খাদ্য অর্থাৎ খেজুর ও আঙ্গুরকে তাজা অবস্থায় আহার করা অথবা শুকিয়ে ব্যবহার করা। উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর পূর্ণ কুদরতের মাধ্যমে মানুষকে খেজুর ও আঙ্গুর দান করেছেন এবং তার দ্বারা নিজেদের খাদ্যদ্রব্য তৈরির কিছুটা অধিকারও তিনি মানুষকে প্রদান করেছেন। এখন তাদের অভিপ্রায় ও ইচ্ছা, তারা কি প্রস্তুত করবে; নেশাজাত দ্রব্য তৈরি করে নিজেদের বুদ্ধিকে বিকল করবে, না উৎকৃষ্ট খাদ্য প্রস্তুত করে শক্তি অর্জন করবে ?
এ তফসীরের পরিপ্রেক্ষিতে এ আয়াত দ্বারা নেশাজাত দ্রব্যকে হালাল বলার দলীল দেওয়া যাবে না। এখানে উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ্ তা’আলার দানসমূহ এবং তার ব্যবহারের বিভিন্ন দিক ও পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা, যা যে কোন অবস্থাতেই আল্লাহর নিয়ামত। যথাঃ সমস্ত আহার্য এবং মানুষের জন্য উপকারী বস্তুকে অনেকে না-জায়েয পথে ব্যবহার করে। কিন্তু কারো ভুলের জন্য আল্লাহর নিয়ামত তার বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলতে পারে না। অতঃপর এখানে এ বিষয়টির বিস্তারিত আলোচনা নিষ্প্রয়োজন-কোন্ পথে ব্যবহার হালাল এবং কোন্ পথে ব্যবহার হারাম। তবু আল্লাহ্ তা’আলা এভাবে সামান্য ইঙ্গিত প্রদান করেছেন যে, নেশার বিপরীত ‘উৎকৃষ্ট খাদ্য’ বলা হয়েছে যাতে বোঝা যায় যে, নেশা ভাল বিষয় নয়। অধিকাংশ মুফাসসির নেশাযুক্ত বস্তুকেও ’সুকর’ (سكر) বলেছেন। (রূহুল-মা’আনী, কুরতুবী, জাসসাস)
গোটা মুসলিম উম্মতের মতে এ আয়াতটি মক্কায় অবতীর্ণ। মদ্যপান হারাম হওয়ার নির্দেশ সম্বলিত আয়াত পরবর্তী সময়ে মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার সময় যদিও শরাব হালাল ছিল এবং মুসলমানগণ স্বাভাবিকভাবেই তা পান করতেন, কিন্তু তখনও এ আয়াতে এদিকে ইশারা করা হয়েছিল যে, এটি পান করা ভাল নয়। তারপর অত্যন্ত কঠোরতার সাথে শরাবকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। (জাসসাস ও কুরতুবী)
জুয়ার অবৈধতা
ميسر একটি ধাতু। এর আভিধানিক অর্থ বণ্টন করা। ياسر বলা হয় বণ্টনকারীকে। জাহিলিয়ত আমলে নানারকম জুয়ার প্রচলন ছিল। তন্মধ্যে এক প্রকার জুয়া ছিল এই যে, উট জবাই করে তার অংশ বণ্টন করতে গিয়ে জুয়ার আশ্রয় নেওয়া হতো। কেউ একাধিক অংশ পেত, আবার কেউ বঞ্চিত হতো। বঞ্চিত ব্যক্তিকে উটের পূর্ণ মূল্য দিতে হতো, আর মাংস দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করা হতো; নিজেরা ব্যবহার করতো না।
এ বিশেষ ধরনের জুয়ায় যেহেতু দরিদ্রের উপকার ছিল এবং খেলোয়াড়দের দানশীলতা প্রকাশ পেত, তাই এ খেলাতে গর্ববোধ করা হতো। আর যারা খেলায় অংশগ্রহণ না করত, তাদেরকে কৃপণ ও হতভাগা বলে মনে করা হতো। বণ্টনের সাথে সম্পর্কের কারণেই এরূপ জুয়াকে ’মায়সার’ বলা হতো। সমস্ত সাহাবী ও তাবেয়ী এ ব্যাপারে একমত যে, সব রকমের জুয়াই ’মায়সার’ শব্দের অন্তর্ভুক্ত এবং হারাম। ইবনে কাসীর তাঁর তফসীরে এবং জাসসাস ’আহ্কামুল-কোরআন’-এ লিখেছেন যে, মুফাসসিরে কোরআন হযরত ইবনে আব্বাস, ইবনে ওমর, কাতাদাহ, মুয়াবিয়া ইবনে সালেহ, আতা ও তাউস (রা) বলেছেনঃ
الميسر القمار حتى لعب الصبيان بالكعب والجوز .
অর্থাৎ সব রকমের জুয়াই ‘মায়সার’। এমনকি কাঠের গুটি এবং আখরোট দ্বারা বাচ্চাদের এ ধরনের খেলাও। ইবনে আব্বাস (রা) বলেছেনঃ المخاطرة من القمار “লটারীও জুয়ারই অন্তর্ভুক্ত।" জাসসাস ও ইবনে সিরীন বলেছেনঃ যে কাজে লটারীর ব্যবস্থা রয়েছে, তাও মায়সারের অন্তর্ভুক্ত।–(রূহুল-বয়ান)
مخاطرة - ’মুখাতিরা’ বলা হয় এমন লেনদেনকে, যার মাধ্যমে কেউ কেউ প্রচুর সম্পদ পেয়ে যায় এবং অনেকে কিছুই পায় না। আজকাল প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের লটারীর সাথে এর তুলনা করা যেতে পারে।
আজকাল নানা প্রকারের লটারী দেখা যায়। এসবই জুয়ার অন্তর্ভুক্ত ও হারাম। মোটকথা, মায়সার ও কেমারের সঠিক সংজ্ঞা এই যে, যে ব্যাপারে কোন মালের মালিকানায় এমন সব শর্ত নির্ভর করে, যাতে মালিক হওয়া-না-হওয়া উভয় সম্ভাবনাই সমান থাকে। আর এরই ফলে পূর্ণ লাভ কিংবা লোকসান উভয় দিকই বজায় থাকবে। (শামী, পৃ. ৩৫৫, ৫ম খণ্ড)
উদাহরণত এতে যায়েদ অথবা ওমরের যে কোন একজনকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। এ সবের যত প্রকার ও শ্রেণী অতীতে ছিল, বর্তমানে প্রচলিত রয়েছে এবং ভবিষ্যতে সৃষ্টি হতে পারে, তার সবগুলোকে মায়সার, কেমার এবং জুয়া বলা যেতে পারে। বর্তমান প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের শব্দ-প্রতিযোগিতা এবং ব্যবসায়ী স্বার্থে লটারীর যতগুলো পদ্ধতি রয়েছে, এ সবই কেমার ও মায়সার-এর অন্তর্ভুক্ত।
তবে যদি শুধু একদিক থেকে পুরস্কার নির্ধারণ করা হয়, যেমন যে ব্যক্তি অমুক কাজ করবে, তাকে পুরস্কার দেওয়া হবে, আর এতে যদি কোন চাঁদা নেওয়া না হয়, তবে তাতে কোন দোষ নেই। কেননা এটা লাভ ও লোকসানের মাঝে পরিক্রমশীল নয়, বরং লাভ হওয়া ও লাভ না হওয়ার মধ্যেই সীমিত।
এ জন্য সহীহ্ হাদীসে দাবা ও ছক্কা-পাঞ্জা জাতীয় খেলাকেও হারাম বলা হয়েছে। কেননা, এসবেও অনেক ক্ষেত্রেই টাকা-পয়সার বাজি ধরা হয়ে থাকে। তাস খেলায় যদি টাকা-পয়সার হার-জিত শর্ত থাকে, তবে তাও হারাম।
মুসলিম শরীফে বারীদা (রা)-এর উদ্ধৃতিতে বর্ণিত হয়েছে যে, রসূলে আকরাম (সা) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ছক্কা-পাঞ্জা খেলে সে যেন শূকরের মাংস ও রক্তে স্বীয় হস্ত রঞ্জিত করে। হযরত আলী (রা) বলেছেন—ছক্কা-পাঞ্জাও জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) বলেছেন—দাবা ছক্কা-পাঞ্জা খেলা থেকেও খারাপ।-(ইবনে কাসীর)
ইসলামের প্রাথমিক যুগে শরাবের ন্যায় জুয়াও হালাল ছিল। মক্কায় যখন সূরা রোমের غُلِبَتِ الرُّومُ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় এবং কোরআন ঘোষণা করে যে, এখন রোম যদিও তাদের প্রতিপক্ষ কিসরার কাছে পরাজিত হয়েছে, তারা কয়েক বছরের মধ্যেই বিজয় লাভ করবে। তখন মক্কার মুশরিকরা তা অবিশ্বাস করে। সে সময় হযরত আবূ বকর (রা) মুশরিকদের সাথে বাজি ধরলেন যে, যদি কয়েক বছরের মধ্যে রোমবাসী জয়লাভ করে, তবে তোমাদেরকে এই পরিমাণ এই মাল পরিশোধ করে দিতে হবে। এ বাজি মুশরিকরা গ্রহণ করল। ঠিক কয়েক বছরের মধ্যে রোমবাসী জয়লাভ করল। শর্তানুযায়ী হযরত আবূ বকর (রা) তাদের নিকট থেকে মাল আদায় করে রাসূল (সা)-এর দরবারে উপস্থিত হলেন। হুযূর (সা) ঘটনা শুনে খুশি হলেন, কিন্তু মালগুলো সদকা করে দিতে আদেশ দিলেন।
কেননা, যে বস্তু আগত দিনে হারাম হবে, আল্লাহ তা’আলা সেগুলো হালাল থাকা কালেও স্বীয় রাসূল (সা)-কে তা থেকে রক্ষা করেছেন। এজন্যই তিনি শরাব ও জুয়া থেকে সর্বদা বেঁচে রয়েছেন এবং কিছুসংখ্যক বিশিষ্ট সাহাবীও তা থেকে সর্বদা নিরাপদে রয়েছেন। এক রেওয়ায়েতে আছে যে, হযরত জিবরাঈল (আ) রাসূল (সা)-কে সংবাদ দিয়েছিলেন যে, হযরত জাফর (রা)-এর চারটি অভ্যাস আল্লাহর নিকট অতি প্রিয়। হুযূর (সা) জাফর (রা)-কে জিজ্ঞেস করলেন—তোমার চারটি অভ্যাস কি কি ? তিনি উত্তর দিলেন—আজ পর্যন্ত আমার এ চারটি অভ্যাস কাউকেই বলিনি। আল্লাহ্ যখন আপনাকে জানিয়েই দিলেন, তখন বলতেই হয়। তা হচ্ছে এই—আমি দেখেছি যে, শরাব মানুষের বুদ্ধি বিলুপ্ত করে দেয়, তাই আমি কোন দিনও শরাব পান করিনি। মূর্তির মধ্যে মানুষের ভাল-মন্দ কোনটাই করার ক্ষমতা নেই বলে জাহিলিয়ত আমলেও আমি কোনদিন মূর্তি পূজা করিনি। আমার স্ত্রী ও মেয়েদের ব্যাপারে আমার মধ্যে সম্ভ্রমবোধ অত্যন্ত সক্রিয় রয়েছে, তাই আমি কোন দিনও যেনা করিনি। আমি দেখেছি যে, মিথ্যা বলা অত্যন্ত মন্দ কাজ, তাই আমি কোনদিনও মিথ্যা কথা বলিনি।-(রূহুল-বয়ান)
জুয়ার সামগ্রিক ক্ষতি
জুয়া সম্পর্কে কোরআন মজীদ শরাব বিষয়ে প্রদত্ত আদেশেরই অনুরূপ বিধান প্রদান করেছে যে, এতে কিছুটা উপকারও আছে, কিন্তু উপকার লাভের চাইতে এর ক্ষতি অনেক বেশি : এর লাভ সম্পর্কে সকলেই অবগত আছেন। যদি খেলায় জয়লাভ করে, তবে একজন দরিদ্র লোক একদিনেই ধনী হয়ে যেতে পারে। কিন্তু এর আর্থিক, সামাজিক এবং আত্মিক ক্ষতি সম্পর্কে অনেক কম মানুষই অবগত। এর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা এখানে দেওয়া হচ্ছে। জুয়া খেলা একজনের লাভ এবং অপরজনের ক্ষতির উপর পরিক্রমশীল। জয়লাভকারীর কেবল লাভই লাভ; আর পরাজিত ব্যক্তির ক্ষতিই ক্ষতি। কেননা, এ খেলায় একজনের মাল অন্যজনের হাতে চলে যায়। এজন্য জুয়া সামগ্রিকভাবে জাতির ধ্বংস এবং মানব চরিত্রের অধঃপতন ঘটায়। যে ব্যক্তি এতে লাভবান হয়, সে পরোপকারের ব্রত থেকে দূরে সরে রক্তপিপাসুতে পরিণত হয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে অপর ব্যক্তির মৃত্যুর পথ এগিয়ে আসে, অথচ প্রথম ব্যক্তি আয়েশ বোধ করতে থাকে এবং নিজের পূর্ণ সামর্থ্য এতে ব্যয় করে। ক্রয়-বিক্রয় এবং ব্যবসা-বাণিজ্য এর বিপরীত। কেননা, এতে উভয় পক্ষের লাভ-লোকসানের সম্ভাবনা থাকে। ব্যবসা দ্বারা মাল হস্তান্তরে ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং উভয় পক্ষই এতে লাভবান হয়ে থাকে।
জুয়ার একটি বড় ক্ষতি হচ্ছে এই যে, জুয়াড়ী প্রকৃত উপার্জন থেকে বঞ্চিত থাকে। কেননা, তার একমাত্র চিন্তা থাকে যে, বসে বসে একটি বাজির মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যেই অন্যের মাল হস্তগত করবে যাতে কোন পরিশ্রমের প্রয়োজনই নেই। কোন কোন মনীষী সর্বপ্রকার জুয়াকেই ‘মায়সার’ বলেছেন। কারণস্বরূপ বলেছেন যে, এতে অতি সহজে অন্যের মাল হস্তগত হয়। জুয়া খেলা যদি দু’-চারজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, তবে তাতেও আলোচ্য ক্ষতি পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু বর্তমান যুগ, যাকে অনভিজ্ঞ দূরদর্শিতাবিহীন মানুষ উন্নতির যুগ বলে অভিহিত করে থাকে, নতুন নতুন ও রকমারি প্রকার শরাব বের করে নতুন নতুন নাম দিচ্ছে, স্বাদেরও নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করে নানা পদ্ধতিতে তার প্রচলন ঘটাচ্ছে। অনুরূপভাবে জুয়ারও নানা প্রকার পন্থা বের করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেক দিক রয়েছে যা সামগ্রিক। এসব নতুন পদ্ধতিতে সম্মিলিতভাবে গোটা জাতির কাছ থেকে কিছু কিছু করে টাকা নেওয়া হয় এবং ক্ষতিটা সকলের মধ্যে বণ্টন করা হয়। ফলে তা দেখার মত কিছু হয় না। আর যে ব্যক্তি এ অর্থ পায়, তা সকলের দৃষ্টিতে ধরা পড়ে। ফলে অনেকেই তার ব্যক্তিগত লাভ লক্ষ্য করে জাতির সমষ্টিগত ক্ষতির প্রতি ভ্রূক্ষেপও করে না। এ জন্য অনেকেই এ নতুন প্রকারের জুয়া জায়েয বলে মনে করে। অথচ এতেও সেসব ক্ষতিই নিহিত, যা সীমিত জুয়ার মধ্যে বিদ্যমান। একদিক দিয়ে জুয়ার এই নতুন পদ্ধতি প্রাচীন পদ্ধতির জুয়া থেকে অধিক ক্ষতিকর এবং এর প্রতিক্রিয়া সুদূরপ্রসারী ও সমগ্র জাতির পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, এর ফলে জাতির সাধারণ মানুষের সম্পদ দিন দিন কমতে থাকে আর কয়েকজন পুঁজিপতির মাল বাড়তে থাকে। এতে সমগ্র জাতির সম্পদ কয়েক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়ার পথ খুলে যায়।
পক্ষান্তরে ইসলামী জীবন ব্যবস্থার বিধান হচ্ছে এই যে, যেসব ব্যবস্থায় সমগ্র জাতির সম্পদ মুষ্টিমেয় ব্যক্তির হাতে জমা হওয়ার পথ খোলে, সে সবগুলো পন্থাই হারাম। এ প্রসঙ্গে কোরআন ঘোষণা করেছেঃ كَيْ لَا يَكُونَ دُولَةً بَيْنَ الْأَغْنِيَاءِ مِنْكُمْ অর্থাৎ সম্পদ বণ্টন করার যে নিয়ম কোরআন নির্ধারণ করেছে, তার উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, ধন-দৌলত যেন কয়েকজন পুঁজিপতির হাতে পুঞ্জীভূত না হয়ে পড়ে।
তাছাড়া জুয়ার আরো একটা ক্ষতিকর দিক হচ্ছে এই যে, জুয়াও শরাবের মত পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ ও ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করে। পরাজিত ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবেই জয়ী ব্যক্তির প্রতি ঘৃণা পোষণ করে এবং শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং জুয়া সমাজ ও সভ্যতার জন্য অত্যন্ত মারাত্মক বিষয়। কাজেই, কোরআন শরীফ বিশেষভাবে এ ক্ষতির কথা উল্লেখ করেছেঃ
إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ
অর্থাৎ- ‘শয়তান শরাব ও জুয়ার দ্বারা তোমাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, শত্রুতা ও ঘৃণার সৃষ্টি করতে এবং তোমাদেরকে আল্লাহর যিকির ও নামায থেকে বিরত রাখতে চায়।’
এমনিভাবে জুয়ার আর একটি অনিবার্য ক্ষতিকর দিক হচ্ছে, মানুষ শরাবের ন্যায় জুয়ায় নিমগ্ন হয়ে পড়ে এবং আল্লাহর যিকির ও নামায থেকে বেখবর হয়ে পড়ে। আর এজন্যই কোরআন শরাব ও জুয়ার কথা একই স্থানে একই ধারায় বর্ণনা করা হয়েছে যে, অতি গোপনভাবে জুয়ায়ও একটি নেশা হয়, যা মানুষকে ভাল-মন্দ চিন্তা থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। আলোচ্য আয়াতেও এ দু’টি বস্তুকে একত্রে বর্ণনা করে এ ক্ষতির কথাই বলা হয়েছে যে, এটা পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও ঝগড়া-বিবাদের কারণ এবং আল্লাহ্ যিকির ও নামাযে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
জুয়ার আর একটি নীতিগত ক্ষতিকর দিক হচ্ছে এই যে, এ অবৈধ পথে অন্যের মাল-সম্পদ আত্মসাৎ করার একটি পন্থা। এতে কোন উপযুক্ত বিনিময় ব্যতীত অন্য ভাইয়ের সম্পদ আত্মসাৎ করা হয়। এসব পন্থাকেও কোরআনে করীম এভাবে নিষিদ্ধ করে দিয়েছেঃ
وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ
অর্থাৎ- "মানুষের ধন-সম্পদ অবৈধ পন্থায় ভোগ করো না।” জুয়ার আর একটি ক্ষতিকর দিক হচ্ছে এই যে, হঠাৎ ক্ষণিকের মধ্যে গোটা একটা পরিবার ধ্বংসের পথে ধাবিত হয়। লক্ষপতি ফকীর হয়ে যায় এবং গোটা পরিবার বিপদের সম্মুখীন হয়। পরোক্ষভাবে এতে সমগ্র জাতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেননা, যারা সেই হেরে যাওয়া ব্যক্তির আর্থিক সচ্ছলতা দেখে তার সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে তাকে ঋণ-কর্জ দিত, এখন দেউলিয়া হওয়াতে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হবে এবং ঋণ আদায় করতে অক্ষম হবে, সুতরাং সকলের উপরই এর প্রতিক্রিয়া হবে।
জুয়ার আরো একটি ক্ষতিকর দিক হচ্ছে এই যে, এটা মানুষের কর্মক্ষমতাকে শিথিল করে দেয় এবং মানুষ কাল্পনিক উপার্জনের পথ বেছে নেয়। আর সর্বদা এ চিন্তায় ব্যস্ত থাকে যে, অন্যের উপার্জিত সম্পদে কিভাবে স্বীয় অধিকার প্রতিষ্ঠা করে নেবে।
এ সংক্ষিপ্ত তালিকা অনুযায়ী দেখা যায় যে, জুয়া সমগ্র জাতিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। কোরআন ঘোষণা করেছেঃ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِنْ نَفْعِهِمَا –অর্থাৎ শরাব ও জুয়ার ক্ষতি উপকার থেকেও অধিক।
ফিকাহ শাস্ত্রের কয়েকটি নিয়ম ও কায়দা
এ আয়াতে শরাব ও জুয়ার কিছু আপাত উপকারের কথা স্বীকার করেও তা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বোঝা গেল যে, কোন বস্তু কিংবা কোন কাজে দুনিয়ার সাময়িক উপকার বা লাভ থাকলেই শরীয়ত একে হারাম করতে পারে না, এমন কথা নয়। কেননা, যে খাদ্য বা ঔষধে উপকারের চাইতে ক্ষতি বেশি, তাকে কোন অবস্থাতেই প্রকৃত উপকারী বলে স্বীকার করা যায় না। অন্যথায় পৃথিবীর সবচাইতে খারাপ বস্তুতেও কিছু না কিছু উপকার নিহিত থাকা মোটেও বিচিত্র নয়। প্রাণ সংহারক বিষ, সাপ-বিচ্ছু বা হিংস্র জন্তুর মধ্যেও কিছু-না-কিছু উপকারিতার দিক অবশ্যই খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু সামগ্রিকভাবে এগুলোকে ক্ষতিকর বলা হয় এবং এসব থেকে দূরে থাকার উপদেশ দেওয়া হয়। অনুরূপভাবে অভ্যন্তরীণ দিক দিয়ে যেসব বস্তুতে উপকারের তুলনায় ক্ষতি বেশি, শরীয়ত সেগুলোকেও হারাম সাব্যস্ত করেছে। চুরি-ডাকাতি, যিনা-প্রতারণা এমন কি ব্যাপার আছে, যাতে উপকার কিছুই নেই? কেননা, কিছু-না-কিছু উপকার না থাকলে কোন বুদ্ধিমান মানুষই এর ধারে কাছেও যেতো না। বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, এসব কাজে তারাই বেশি লিপ্ত, যারা অপেক্ষাকৃত বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ বলে বিবেচিত। তাতেই বোঝা যায় যে, প্রতিটি অন্যায় কাজেও কিছু-না-কিছু উপকার অবশ্যই আছে। তবে যেহেতু এ সবের উপকারের চাইতে ক্ষতি মারাত্মক, এজন্য কোন সুবুদ্ধিসম্পন্ন লোক এসবকে উপকারী বা হালাল বলবে না। ইসলামী শরীয়ত শরাব ও জুয়াকে এই ভিত্তিতেই হারাম বলে ঘোষণা করেছে। কেননা, এগুলোর মধ্যে উপকারের চাইতে দীন-দুনিয়ার ক্ষতিই বেশি।
ফিকাহর আর একটি আইন
এ আয়াতের দ্বারা এও বোঝা গেল যে, উপকার হাসিল করার চাইতে ক্ষতি রোধ করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া বিধেয়। অর্থাৎ কোন একটি কাজে কিছু উপকারও হয় আবার ক্ষতিও হয়, এক্ষেত্রে ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য লাভ ত্যাগ করতে হবে। এমন উপকার সর্বাবস্থায় পরিত্যাজ্য, যা ক্ষতি বহন করে।
********************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url