মোবাইল ফোন ব্যবহারের ইসলামিক রীতিনীতি || মোবাইল ফোন ও বর্তমান সমাজ







বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

মোবাইল ফোন ও বর্তমান সমাজ: আমাদের করণীয়


মোবাইল ফোন আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের এক অনন্য উপহার যা মানুষের জীবনকে করেছে আরো গতিময়। যে কাজের জন্য আগে এক সপ্তাহ সময় লাগতো সেই কাজ এখন মোবাইলের মাধ্যমে মহূর্তের মধ্যে হয়ে যাচ্ছে। বলতে গেলে, পৃথিবীকে এখন আমাদের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে- মোবাইল ফোন। তাই মোবাইল ফোন আমাদের বন্ধু। আমাদের জীবন চলার সহায়ক। কিন্তু একথা সত্য যে, মোবাইল ফোন আমাদের বন্ধু হলেও এর কিছু অপব্যবহারের ফলে এটি আজ কারো কারো জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে তরুণ-তরুণী ও ছাত্র-ছাত্রীরা এর করুণ শিকার। তাদের জন্য মোবাইল ফোনকে অনেক ক্ষেত্রে অভিশাপই বলা যায়। কেননা আধুনিক এই ক্ষুদ্র যন্ত্রটি তাদের সমস্ত সময়কে গ্রাস করে নিয়েছে। ঘরে, বাইরে, ক্লাসে ও হলে সব জায়গায় তাদের ফোন আর ফোন। মোবাইল ফোনের কল্যাণে (?) তারা অনেকেই যথাসময়ে ক্লাসে উপস্থিত হতে পারে না। পারে না ঠিকমত ঘুমোতেও। কোম্পানির অফার পেয়ে রাত জেগে জেগে তারা প্রিয়জনদের (?) সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে। ফলে একদিকে যেমন তাদের নৈতিক অবক্ষয় ও চারিত্রিক অধঃপতন ঘটছে, ঠিক তেমনি দৈনন্দিন জরুরি কাজেও ব্যাঘাত ঘটছে চরমভাবে!!

   

প্রত্যেক পিতা-মাতা অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে স্বীয় সন্তানের ভালো লেখাপড়া আশা করেন। তারা স্বপ্ন দেখেন, তাদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া শিখে অনেক বড় হবে, মানুষের মতো মানুষ হবে। এজন্য সিমাহীন কষ্ট ও নিদারুণ ত্যাগ স্বীকার করেন তারা। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্নকে ভেঙ্গেচুরে নিঃশেষ করে দেয়- মোবাইল ফোন।

মোবাইল ফোন একজন শিক্ষার্থীকে শিক্ষার উজ্জ্বল আলো থেকে বঞ্চিত করে মূর্খতার ঘোর অন্ধকারে নিয়ে যায়। নিভিয়ে দেয় তার আশার প্রদীপ। ধ্বংস করে দেয় তার মূল্যবান জীবন। উইপোকা যেমন ধীরে ধীরে কাঠ খেয়ে ফেলে তেমনি মোবাইল ফোন একটি মেধাবী শিক্ষার্থীকে কুড়ে কুড়ে খায়। ফলে একসময় মোবাইল পাগল শিক্ষার্থীটি হয়ে যায় একটি জীবন্ত লাশ!

আজকাল উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের হাতে-হাতে মোবাইল ফোন দেখা যায়। কার চাইতে কে কত দামী ও উন্নত সেট ব্যবহার করতে পারে- এ নিয়ে অঘোষিত প্রতিযোগিতা চলছে নিয়মিত! নিত্য নতুন ডিজাইন ও কোয়ালিটির পিছনে যুবক-যুবতী ভাই-বোনেরা কত টাকা যে নষ্ট করছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই!!


মোবাইল ফোনের ভয়াবহ ক্ষতি: ছাত্র ও যুব সমাজকে বাঁচাতে করণীয়


মোবাইল ফোনের এই ভয়াবহ ক্ষতি থেকে ছাত্র, যুবক ও তরুণ সমাজকে বাঁচানোর জন্য আমাদের অনেক কিছু করণীয় আছে। বিশেষ করে সরকার ও অভিভাবক শ্রেণীর দায়-দায়িত্ব অনেক বেশি। প্রতিটি সচেতন অভিভাবককে সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে, আমার স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা পড়ুয়া প্রিয় সন্তানটির মোবাইল ফোন ব্যবহারের আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা, প্রয়োজন থাকলে সে মোবাইল ফোনের অপব্যবহার করছে কিনা? সেই সাথে মনে রাখতে হবে, শয়তান সর্বদা মানুষের পিছনে লেগে আছে। তাই মানুষ ভালো'র পরিবর্তে খারাপের দিকেই সহজে ধাবিত হয়। তাছাড়া কম বুদ্ধির কারণে হোক বা সঙ্গ দোষের কারণে হোক, কিশোর ও তরুণ বয়সে মানুষের নৈতিক অবক্ষয় বেশি হয়ে থাকে । প্রিয় পাঠক-পাঠিকা! বিশ্বাস করুন, মোবাইল কোম্পানি ও মোবাইল সেট নির্মাতাদের কথা আজ আমার ভাবতেও কষ্ট হয়! কেন কষ্ট হয়, তা আপনাদেরও অজানা নয়। আমার মনে হয়, আমার মতো অবস্থা প্রতিটি সচেতন মানুষেরই হয়। মোবাইল কোম্পানি ও সেট নির্মাতাদের অবস্থা দেখে অনুধাবন করা যায়, তারা যেন আজ অশ্লীলতা ছড়ানোর ভূমিকায় পাল্লা দিয়ে লেগেছে। তাদের নির্লজ্জ অর্থলিপ্সার কাছে সমাজের নৈতিক চরিত্রকে বলি দেওয়া হচ্ছে। তাই আজ সঙ্গত কারণেই অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলেছে। ধর্ষণ, সন্ত্রাস, হাইজ্যাক ইত্যাদি আজ নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। সংবাদপত্রের পাতায় এসব খবর নিয়মিতই আমাদের দেখতে হয়।


এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য সকলকে আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি অভিভাবককে সচেতন হতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেককে আল্লাহ তাআলার হুকুম ও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতকে পরিপূর্ণরূপে গ্রহণ করতে হবে। ক্যামেরা ও ভিডিও সেট আমদানী সরকারীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। সেই সাথে গভীর রাতে মোবাইল ফোন কোম্পানিসমূহ হ্রাসকৃত কলরেটের যেসব অফার দিয়ে থাকে তাও আইন করে বন্ধ করতে হবে। কারণ এ সময় অনেক ছাত্র-ছাত্রী ও তরুণ-তরুণী সন্ধ্যা ও রাতের পড়ালেখায় মনোযোগ না দিয়ে রাত জেগে অপ্রয়োজনীয় ও অনৈতিক ফোনালাপেই ব্যস্ত থাকে। এতে পড়ালেখা ও স্বাভাবিক কাজকর্মে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। তাছাড়া রাত ১২টা থেকে সকাল ৭ টা বা ৯টা পর্যন্ত সময়টা কথা বলার জন্য এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ সময় নয় যে, এ সময় কলরেট হ্রাস করা খুবই উপকারী মনে হতে পারে। বরং সময়টা হচ্ছে শান্তিতে ঘুমানো এবং ইবাদত-বন্দেগি ও কোরআন তিলাওয়াত করার উপযুক্ত সময়। মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর এসময়ে কলরেট হ্রাস করার উদ্দেশ্য কি তাহলে আমাদের আরামের ঘুম নষ্ট করা এবং ইবাদত-বন্দেগি থেকে বিরত রাখা? অবস্থাদৃষ্টে তো তাই মনে হয়! সে যা-ই হোক মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো যাতে এ সময়ে কলরেটের সুযোগ না দিয়ে অন্য সময় দেয় সেদিকেও সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। তাছাড়া মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো গ্রাহক যাতে পর্ণো সাইটে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোকে সরকার কর্তৃক বাধ্য করতে হবে। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি ও মাদরাসার কর্তৃপক্ষবৃন্দ ছাত্র-ছাত্রীদের বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে তাদেরকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে না দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে সহজে পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে, সে ব্যবস্থা চালু করতে পারেন। অভিভাবকগণও নিজ নিজ সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া তাদেরকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দিবেন না। একান্ত প্রয়োজনে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দিলেও সবসময় খেয়াল রাখবেন, আপনার প্রিয় সন্তান পড়ালেখা নষ্ট করে মোবাইল ফোনের অপব্যবহার করছে কিনা? এক কথায় বলতে গেলে বলতে হয়, আজকে যোগাযোগের চরম উৎকর্ষতা ও ব্যস্ততার দিনে মোবাইল ফোনের ব্যবহারকে যেমন বাদ দেওয়া যাবে না, তেমনি এর যত্রতত্র ব্যবহার হচ্ছে কিনা সেদিকটিও খেয়াল রাখতে হবে। আমরা প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে যদি এ ব্যাপারে সতর্ক থাকি, তাহলে হয়তো মোবাইলের অনেক ক্ষতি থেকে ব্যক্তি, সমাজ ও দেশকে বাঁচানো সম্ভব হবে। আল্লাহ পাক আমাদের তাওফিক দিন । আমীন 


* মুফীজুল ইসলাম আব্দুল আযীয এর লেখা “মোবাইল ফোন ব্যবহারঃ বৈধতার সীমা কতটুকু?” গ্রন্থ অবলম্বনে






*********************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url