মা’আরেফুল কোরআন - ৭১ || সূরা আল-বাকারাহ, ১৮৮ || বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামী বিধান এবং সম্পদে হালাল-হারামের বিধান







بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
سورة البقرة

সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ১৮৮


 وَ لَا تَاۡکُلُوۡۤا اَمۡوَالَکُمۡ بَیۡنَکُمۡ بِالۡبَاطِلِ وَ تُدۡلُوۡا بِهَاۤ اِلَی الۡحُکَّامِ لِتَاۡکُلُوۡا فَرِیۡقًا مِّنۡ اَمۡوَالِ النَّاسِ بِالۡاِثۡمِ وَ اَنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۱۸۸

সূরা আল-বাকারাহ ১৮৮ নং আয়াতের অর্থ

(১৮৮) তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না এবং জনগণের সম্পদের কিয়দংশ জেনেশুনে পাপ পন্থায় আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে শাসন কর্তৃপক্ষের হাতেও তুলে দিও না ৷

সূরা আল-বাকারাহ ১৮৮ নং আয়াতের পূর্বাপর যোগসূত্র

   

যোগসূত্রঃ পূর্ববর্তী আয়াতসমূহে রোযার বিধি-বিধান বর্ণিত হয়েছিল, যার মধ্যে হালাল বস্তু-সামগ্রীর ব্যবহারও একটা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে হারাম করে দেওয়া হয়েছে। এরপর প্রাসঙ্গিকভাবেই হারাম সম্পদ অর্জন এবং ভোগ করার নিষিদ্ধতা বর্ণিত হচ্ছে। কেননা, ইবাদতে সওম বা রোযার আসল উদ্দেশ্যই হচ্ছে এই যে, এতে মানুষ একটা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে হালাল বস্তু-সামগ্রীর ব্যবহারের ব্যাপারে সবর ইখতিয়ার করার অনুশীলন করার ফলে হারাম বস্তু বর্জনের ব্যাপারে স্বাভাবিকভাবেই একটা অভ্যাস গড়ে উঠবে এবং সর্বপ্রকার হারাম বস্তু থেকে আত্মরক্ষার ব্যাপারে নৈতিক বল অর্জন করতে সক্ষম হবে। একই সঙ্গে রোযা রাখার পর ইফতারের জন্য হালাল পথে অর্জিত সামগ্রী সংগ্রহ করা জরুরী। কেননা, কেউ যদি সারা দিন রোযা রেখে সন্ধ্যায় হারাম পথে অর্জিত বস্তুর দ্বারা ইফতার করে, তবে আল্লাহর নিকট তার এ রোযা গ্রহণযোগ্য হবে না।

সূরা আল-বাকারাহ ১৮৮ নং আয়াতের তাফসীর

তাফসীরের সার-সংক্ষেপ
আর নিজেদের মধ্যে একে অন্যের মাল অন্যায়ভাবে ভোগ করো না এবং তাদের বিপক্ষে শাসন কর্তৃপক্ষের নিকট এ উদ্দেশ্যে (মিথ্যা নালিশ) করো না যে, (এর দ্বারা) জনগণের সম্পদের একাংশ অন্যায় পন্থায় (অর্থাৎ জুলুমের আশ্রয়ে) গ্রাস করবে, যখন তোমরা (তোমাদের মিথ্যাচার এবং জুলুম সম্পর্কে) নিজেরাই জান । 

আলোচ্য আয়াতে হারাম পন্থায় সম্পদ অর্জন এবং ভোগ করার নিষিদ্ধতা বর্ণিত হয়েছে। যেমন, ইতিপূর্বে সূরা বাকারারই ১৬৮-তম আয়াতে হালাল পন্থায় সম্পদ অর্জন এবং ভোগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পূর্ববর্তী সে আয়াতে বলা হয়েছিলঃ

يَاأَيُّهَا النَّاسُ كُلُوا مِمَّا فِي الْأَرْضِ حَلَالًا طَيِّبًا وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ

অর্থাৎ “হে মানবমণ্ডলী! জমিনের মধ্যে যা কিছু রয়েছে, তা থেকে তোমরা হালাল ও পবিত্র বস্তুসমূহ খাও, আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। কেননা, সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন।” অনুরূপ সূরা নাহলে ইরশাদ হয়েছেঃ

فَكُلُوا مِمَّا رَزَقَكُمُ اللَّهُ حَلَالًا طَيِّبًا وَاشْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ

অর্থাৎ “তোমাদেরকে আল্লাহ্ তা’আলা যে পবিত্র ও হালাল রুযী দান করেছেন, তা থেকে খাও এবং আল্লাহর নেয়ামতসমূহের শুকরিয়া আদায় কর, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদতকারী হয়ে থাক।"

সম্পদ অর্জনের পন্থা

সম্পদ অর্জনের ক্ষেত্রে ভাল-মন্দ পন্থা এবং ভাল-মন্দের মাপকাঠিঃ জীবনযাত্রা পরিচালনার ক্ষেত্রে ধন-সম্পদের প্রয়োজনীয়তা এবং অপরিহার্যতা সম্পর্কে যেমন দুনিয়ার সকল মানুষই একমত, তেমনি সম্পদ অর্জনের ক্ষেত্রেও ভাল ও মন্দ তথা বৈধ-অবৈধ—দু’টি ব্যবস্থার ব্যাপারেও দুনিয়ার সবাই একমত। চুরি, ডাকাতি, ধোঁকা, ফেরেব প্রভৃতিকে দুনিয়ার সবাই মন্দ বলে মনে করে। তবে পন্থাগুলোর মধ্যে বৈধ ও অবৈধের কোন মানদণ্ড সাধারণ মানুষের কাছে নেই। বস্তুত তা থাকতেও পারে না। কেননা, যে বিষয়টির সম্পর্ক সমগ্র দুনিয়ার মানুষের সাথে এবং যে নীতিমালার অনুসরণ করে সমগ্র দুনিয়ার মানুষ সমভাবে পরিচালিত ও পথপ্রাপ্ত হতে পারে, সেরূপ একটা নিখুঁত এবং সকলের জন্য সমভাবে গ্রহণযোগ্য নীতিমালা একমাত্র বিশ্ব-জাহানের পালনকর্তা আল্লাহর তরফ থেকেই নির্ধারিত হতে পারে, যা ওহীর মাধ্যমে মানবজাতির পথপ্রদর্শনের উদ্দেশ্যে প্রেরিত হয়েছে। যদি মানুষকে এই নীতিমালা নির্ধারণের অধিকার দেওয়া হতো, তবে সংশ্লিষ্ট লোকেরা নিজেদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, রাষ্ট্রীয় এবং শ্রেণী-স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সকল যুগের সকল দেশের মানব সমাজের জন্য সমভাবে কল্যাণকর একটা নীতিমালা প্রণয়ন করতে কোন অবস্থাতেই সমর্থ হতো না।

অপরপক্ষে কোন আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে যদি এ ব্যাপারে কোন একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ব্যবস্থা করা হতো, তবুও শ্রেণী ও গোষ্ঠী-স্বার্থ নিরপেক্ষ হয়ে যে একটা সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব হতো না, বহু অভিজ্ঞতা এ সত্যই প্রমাণ করে। সুতরাং এসব উদ্যোগ-আয়োজনের ফলও যে যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং হানাহানি ছাড়া আর কিছুই হতো না, একথাও নিঃসন্দেহে বলা চলে।

বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামী বিধান

একমাত্র ইসলামী বিধানই বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেঃ শরীয়তে-ইসলাম হালাল ও হারাম এবং জায়েয ও না-জায়েয-এর যে নীতিমালা তৈরি করেছে তা সরাসরি আল্লাহর তরফ থেকে নাযিলকৃত ওহী অথবা ওহীর জ্ঞানের উপর ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছে। বস্তুত এটা এমনই এক সার্বজনীন আইন, যা দেশ-কাল ও গোত্র-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সকলের নিকটই সমভাবে গ্রহণযোগ্য এবং শাস্তি ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য রক্ষাকবচ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। কেননা, আল্লাহ্ প্রদত্ত এ আইনের বিধানেই যৌথ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে যৌথ মালিকানায় সকলের জন্য সম-অধিকারের আওতায় রাখা হয়েছে। যেমন—বায়ু, পানি, জমিনের ঘাস, আগুনের উষ্ণতা, অনাবাদী বনভূমি, পাহাড়-পর্বত এবং বনভূমির উৎপন্ন দ্রব্যাদি প্রভৃতিতে সকল মানুষেরই সম-অধিকার রয়েছে। কারো পক্ষে এসব বস্তুর মালিকানা স্বত্বের দখলী জায়েয নয়।

অপরদিকে যেসব বিষয়ের মধ্যে যৌথ মালিকানা বা সকলের সম-অধিকার স্বীকৃত হলে ফলস্বরূপ সমাজে নানারকম বিরোধ-বিপত্তির সৃষ্টি হয়ে শান্তি বিনষ্ট হওয়ার কারণ ঘটতে পারে, সেগুলোর মধ্যে ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠার বিধান প্রদান করা হয়েছে। বিশেষ কোন ভূমিখণ্ড কিংবা তার উৎপন্ন দ্রব্যের মালিকানা প্রতিষ্ঠার আইন থেকে শুরু করে মালিকানা হস্তান্তর প্রভৃতি প্রতিটি ক্ষেত্রেই লক্ষ্য রাখা হয়েছে, যেন কোন মানুষই যথার্থ শ্রম নিয়োগের সুযোগ এবং শ্রম নিয়োগের পর জীবনযাত্রার মৌলিক প্রয়োজনাদি থেকে বঞ্চিত না থাকে। অন্যদিকে কারো পক্ষেই যেন অন্যের অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে কিংবা অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে একটা বিশেষ শ্রেণীর হাতে সম্পদ কুক্ষিগত করারও সুযোগ না থাকে।

সম্পদের হস্তান্তর মৃতের উত্তরাধিকার বণ্টনের খোদায়ী আইনের মাধ্যমেই হোক অথবা ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে উভয়ের সন্তুষ্টির ভিত্তিতেই হোক, শ্রমের বিনিময়ে হোক অথবা অন্য কোন বিনিময়ের মাধ্যমেই হোক, সর্বক্ষেত্রেই বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেন লেন-দেনের মধ্যে কোন প্রকার ধোঁকা-ফেরেব বা ফটকাবাজির সুযোগ বিদ্যমান না থাকে। বিশেষত এমন কোন দুর্বোধ্যতা বা কথার মারপ্যাচও যেন না থাকে, যদ্দ্বারা পরে ঝগড়া-বিবাদের সৃষ্টি হতে পারে।

তদুপরি লক্ষ্য রাখা হয়েছে, লেন-দেনের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষ যে সম্মতি দিচ্ছে তা যেন প্রকৃত সম্মতি হয়। কোন মানুষের উপর চাপ প্রয়োগ করে যেন সম্মতি আদায় করা না হয়। ইসলামী শরীয়তে সে সমস্ত বৈষয়িক লেন-দেনকে অবৈধ ও বাতিল বলে গণ্য করা হয়, যেগুলোতে মূলত উল্লিখিত কারণসমূহের যে কোন একটি অন্তরায় দেখতে পাওয়া যায়। কোথাও থাকে ধোঁকা-প্রতারণা, কোথাও থাকে অজ্ঞাত কর্ম, বিষয় বা বস্তুর বিনিময়, কোথাও অপরের অধিকার আত্মসাৎ করা হয়, কোথাও অন্যের ক্ষতি করে নিজস্ব স্বার্থ উদ্ধার করা হয়, আবার কোথাও বা থাকে সাধারণের স্বার্থে অবৈধ হস্তক্ষেপ। বস্তুত সুদ, জুয়া প্রভৃতিকে হারাম সাব্যস্ত করার পিছনেও কারণ হলো এই যে, এতে জনসাধারণের অধিকার ক্ষুণ্ন হয়ে থাকে। এর ফলে কতিপয় ব্যক্তি ফুলে-ফেঁপে উঠলেও সমগ্র সমাজ দারিদ্র্য কবলিত হয়ে পড়ে। কাজেই এহেন কর্ম উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমেও হালাল নয়। তার কারণ, এটা কারও ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়; বরং গোটা সমাজের বিরুদ্ধে এক জটিল অপরাধ। উল্লিখিত আয়াতটি এ সমস্ত অবৈধ দিকের প্রতিই ব্যাপক ইঙ্গিত করেছে। ইরশাদ হয়েছেঃ

وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ

অর্থাৎ তোমরা একে অপরের সম্পদ অবৈধ পন্থায় ভক্ষণ করো না। এতে একটি লক্ষণীয় বিষয় এই যে, কোরআনের ভাষায় أَمْوَالَكُمْ বলা হয়েছে। এর প্রকৃত অর্থ হলো নিজ সম্পদ। এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, তোমরা যখন অন্যের সম্পদ অবৈধভাবে তসরুফ কর, তখন চিন্তা কর যে, অন্যেরও নিজ সম্পদের প্রতি তেমনি ভালবাসা রয়েছে যেমন তোমাদের নিজেদের ধন-সম্পদের জন্য তোমাদের রয়েছে। তারা যদি তোমাদের সম্পদে এমনি অবৈধ হস্তক্ষেপ করে, তাহলে তোমাদের যেমন কষ্ট হবে, তেমনিভাবে তাদের বেলায়ও একই রকম অনুভব কর যেন এটাও তোমাদেরই সম্পদ।

এছাড়া এদিকেও ইঙ্গিত হতে পারে যে, একজন যখন অন্যজনের সম্পদ কোন রকম অবৈধ তসরুফ করে, তখন তার স্বাভাবিক পরিণতি এই দাঁড়ায় যে, এই প্রথাই যদি প্রচলিত হয়ে যায় তবে অন্যজনও তার সম্পদ এমনিভাবে তসরুফ আরম্ভ করবে। এই প্রেক্ষিতে কারও সম্পদে অবৈধভাবে হস্তক্ষেপ করা বা তাতে কোন রকম তসরুফ করা প্রকৃতপক্ষে নিজ সম্পদে অবৈধ তসরুফের পথই উন্মুক্ত করে দেওয়ার শামিল। লক্ষ্য করার বিষয়, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিতে ভেজাল মেশানোর প্রথা যদি প্রচলিত হয়ে যায়; একজন যদি ঘিয়ের সাথে তেল কিংবা চর্বি মিশিয়ে অতিরিক্ত লাভ করে, তখন তার যখন দুধ কেনার প্রয়োজন পড়বে তখন দুধওয়ালাও তাতে পানি মেশাবে। মসলার প্রয়োজন হলে, তাতেও ভেজাল হবে। ঔষধের দরকার হলে তাতেও একই ব্যাপার ঘটবে। সুতরাং একজন ভেজাল মিশিয়ে সে অতিরিক্ত পয়সা আয় করে, অন্যজনও আবার তার পকেট থেকে একই পন্থায় তা বের করে নিয়ে যায়। এমনিভাবে দ্বিতীয়জনের পয়সা তৃতীয়জন এবং তৃতীয়জনের পয়সা চতুর্থ জন বের করে নেয়। এসব বোকার দল পয়সার প্রাচুর্য দেখে আনন্দিত হয় সত্য, কিন্তু তার পরিণতির দিকে মোটেই লক্ষ্য করে না যে, শেষ পর্যন্ত তার কাছে রইল কি ? কাজেই যে কেউ অন্যের সম্পদ ভুল এবং অবৈধ পন্থায় হস্তগত করে সে মূলত নিজের সম্পদে অবৈধ তসরুফের দরজাই খুলে দেয়।

এক্ষেত্রে লক্ষণীয় দ্বিতীয় বিষয়টি এই যে, আল্লাহর এই কালামে সাধারণ ও ব্যাপক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ’ভ্রান্ত ও অবৈধ পন্থায় কারও সম্পদ ভক্ষণ করো না।’ এতে কারও সম্পদ কেড়ে নেওয়া এবং চুরি-ডাকাতির মাধ্যমে নেওয়াও অন্তর্ভুক্ত; যাতে অন্যের উপর অত্যাচার-উৎপীড়নের মাধ্যমে সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়া হয়। সুদ, জুয়া, ঘুষ প্রভৃতি এবং যাবতীয় অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্যে লেন-দেন এরই আওতাভুক্ত, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয নয়; যদিও তাতে উভয় পক্ষের সম্মতি থাকে। মিথ্যা কথা বলে কিংবা কসম খেয়ে কোন মাল হস্তগত করে নেওয়া অথবা এমন রোযগার, যা শরীয়তে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তা পরিশ্রমের বিনিময়ে হলেও হারাম বলেই গণ্য হবে। কোরআনের বাণীতে যদিও সরাসরিভাবে ’খাবার’ বা ’ভক্ষণ’ করার কথা উল্লেখ রয়েছে, কিন্তু এক্ষেত্রে এর মর্ম শুধু খাওয়াই নয়, বরং যে কোনভাবে ভোগ বা ব্যবহার করা বোঝায়—তা পানাহার, পরিধান কিংবা অন্য যে কোন প্রকারেই হোক না কেন। প্রচলিত পরিভাষায়ও এসব ব্যবহারকে ‘খাওয়াই’ বলা হয়। যেমন, অমুক লোক অমুক মালটি খেয়ে ফেলেছে। বাস্তব ক্ষেত্রে সে মালটি খাওয়ার যোগ্য নাও হতে পারে।

সূরা আল-বাকারাহ ১৮৮ নং আয়াতের শানে নুযুল

শানে নুযুলঃ এ আয়াত একটি বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষিতে নাযিল হয়েছে। ঘটনাটি এই যে, দু’জন সাহাবীর মধ্যে এক টুকরা জমি নিয়ে বিবাদ হয়, পরে বিষয়টি মীমাংসার জন্য রাসূলে করীম (সাঃ)-এর দরবারে পেশ করা হয়। বাদীর কোন সাক্ষী ছিল না। সুতরাং হুযূর (সাঃ) শরীয়তের নির্ধারিত রীতি অনুযায়ী বিবাদীর প্রতি শপথ গ্রহণের নির্দেশ দেন। তাতে বিবাদী শপথ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হলে মহানবী (সাঃ) উপদেশ হিসাবে তাঁকে إِنَّ الَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيلًا আয়াতটি পাঠ করে শোনান। এতে মিথ্যা কসম খেয়ে কোন সম্পদ অর্জন করার বিষয়ে অভিশাপের উল্লেখ রয়েছে। বিবাদী সাহাবী এ আয়াত শোনার পর কসম থেকে বিরত হয়ে যান এবং জমিনটি বাদীকেই দিয়ে দেন।-(রূহুল-মা’আনী)

এ ঘটনার ভিত্তিতেই আলোচ্য আয়াতটি অবতীর্ণ হয়, যাতে না-জায়েয পন্থায় কারও ধন-সম্পদ খাওয়া-পরা অথবা লাভ করাকে হারাম সাব্যস্ত করা হয়েছে। তদুপরি এর শেষাংশে বিশেষভাবে মিথ্যা মামলা-মোকদ্দমা তৈরি করা, মিথ্যা কসম খাওয়া এবং মিথ্যা সাক্ষ্য নিজে দেওয়ানোর ব্যাপারেও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছেঃ

وَتُدْلُوا بِهَا إِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوا فَرِيقًا مِنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالْإِثْمِ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ

অর্থাৎ শাসকদের নিকট ধন-সম্পদের বিষয়ে এমন কোন মামলা-মোকদ্দমা রুজু করো না, যাতে করে মানুষের সম্পদের কোন অংশ পাপ পন্থায় ভক্ষণ করে নিতে পার অথচ তোমরা একথা জান যে, তাতে তোমাদের কোন অধিকার নেই।

তোমরা মিথ্যা মোকদ্দমা তৈরি করো না وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ (অথচ তোমরা জান)। এতে বোঝা যাচ্ছে—যদি কোন লোক ভুলক্রমে কোন বস্তু বা ধন-সম্পদকে নিজের মনে করে তা লাভ করার জন্য আদালতে মামলা দায়ের করে দেয়, তবে সে লোক উক্ত ভর্ৎসনার অন্তর্ভুক্ত হবে না। এমনি ধরনের একটি ঘটনা সম্পর্কে মহানবী (সা) ইরশাদ করেছেনঃ

إنما أنا بشر وانـتـم تـخـتـصـمـون إلي ولعل بعضكم أن يكون ألحن بـحـجـتـه مـن بعض - فأقضي له على نحو ما اسمع منه- فمن قضيت له بشئ من حق أخيه فلا يأخذنه فـانمـا اقـطـع له قطعة من النار 

–‘আমি একজন মানুষ, আর তোমরা আমার নিকট নিজেদের মামলা-মোকদ্দমা নিয়ে আস। এক্ষেত্রে এমনও হতে পারে যে, কেউ হয়তো নিজের বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত করে উত্থাপন করে, অথচ আমি তাতেই নিশ্চিন্ত হয়ে তার পক্ষে মীমাংসা করে দেই। তাহলে মনে রেখো (প্রকৃত বিষয়টি তো ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তি অবশ্যই জানবে) যদি এটা আসলেই তার প্রাপ্য না হয়, তাহলে তার পক্ষে তা গ্রহণ করা উচিত নয়। কারণ, এমতাবস্থায় আমি (মীমাংসার মাধ্যমে) যা তাকে দিয়ে দেব, তা হবে জাহান্নামের একটা অংশ।’

উল্লিখিত বক্তব্যে মহানবী (সা) বলেছেন যে, ইমাম বা কাযী (বিচারক) অথবা মুসলমানদের নেতা যদি কোন রকম ভুলবশত এমন কোন মীমাংসা করে দেন, যার দরুন একজনের হক অন্যজন অবৈধভাবে পেয়ে যায়, সেক্ষেত্রে এই আদালতী বিচারের কারণে তার জন্য সে জিনিস হালাল হয়ে যাবে না। পক্ষান্তরে যার জন্য সেটি হালাল তার জন্য হারামও হয়ে যাবে না। সারকথা, আদালতী সিদ্ধান্ত কোন বস্তুকে হালাল বা হারাম সাব্যস্ত করে না। কোন লোক যদি প্রতারণা, ধোঁকাবাজি, মিথ্যা সাক্ষ্য কিংবা মিথ্যা কসমের মাধ্যমে কোন মাল বা ধন-সম্পদ আদালতের আশ্রয়ে হস্তগত করে, তবে তার দায়-দায়িত্ব তারই থেকে যাবে। এমতাবস্থায় আখেরাতের হিসাব-কিতাব এবং সব কিছু যিনি জানেন, সব কিছুর যিনি খবর রাখেন, সে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের আদালতের কথা চিন্তা করে সে মাল ন্যায্য হকদারকে দেওয়াই বাঞ্ছনীয় ।

যেসব ব্যাপারে বাঁধন-বিচ্ছিন্নতার প্রশ্ন রয়েছে এবং যেসব বিষয়ে কাযী বা বিচারকের শরীয়তসম্মত অধিকার রয়েছে, সে সমস্ত ব্যাপারে যদি তাঁরা মিথ্যা কসম কিংবা মিথ্যা সাক্ষীর ভিত্তিতেই কোন ফয়সালা করে দেন, তবে শরীয়তের দৃষ্টিতেও সে বাঁধন বা বিচ্ছিন্নতা বৈধ বলে গণ্য হবে এবং হালাল-হারামের বিধি-বিধানও তাতে প্রযোজ্য হয়ে যাবে। অবশ্য মিথ্যা বলার এবং সাক্ষ্যদানের দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাঁধে থেকে যাবে।

সম্পদের হালাল-হারাম

হালাল সম্পদের বরকত এবং হারামের অপকারিতাঃ হারাম থেকে বেঁচে থাকা এবং হালাল বর্জন করার জন্য কোরআনে করীম বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন শিরোনামে তাকীদ করেছে। এক আয়াতে এ ইঙ্গিতও করা হয়েছে যে, মানুষের কর্ম ও চরিত্রে হালাল খাওয়ার একটা বিরাট প্রভাব রয়েছে। কারো পানাহার যদি হালাল না হয়, তবে তার পক্ষে সচ্চরিত্রতা এবং সৎকর্ম সম্পাদন একান্তই দুরূহ হয়ে দাঁড়ায়। ইরশাদ হয়েছেঃ

يَاأَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ

-“হে রাসূলগণ! তোমরা হালাল ও পবিত্র বস্তু-সামগ্রী খাও এবং সৎকাজ কর। আমি তোমাদের কাজ-কর্মের প্রকৃত তাৎপর্য সম্পর্কে সম্যক অবগত।"

এ আয়াতে হালাল খাবারের সাথে সৎকাজ করার নির্দেশ দান করে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, সৎকর্ম সম্পাদন করা তখনই সম্ভব হতে পারে, যখন মানুষের আহার্য ও পানীয়-বস্তুসামগ্রী হালাল হবে। মহানবী (সা) এক হাদীসে একথাও পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন যে, এ আয়াতে যদিও নবী-রাসূলগণকে সম্বোধন করা হয়েছে, কিন্তু এ নির্দেশ শুধু তাঁদের জন্যই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সমস্ত মুসলমানই এ নির্দেশের আওতাভুক্ত। আলোচ্য হাদীসের শেষাংশে তিনি একথাও বলেছেন যে, যারা হারাম মাল খায়, তাদের দোয়া কবূল হয় না। অনেকেই ইবাদত-বন্দেগীতে যথেষ্ট পরিশ্রম করে এবং তারপর আল্লাহর দরবারে দোয়া করার জন্য হাত প্রসারিত করে, আর—’হে পরওয়ারদেগার, হে পরওয়ারদেগার’ বলে ডাকে, কিন্তু যখন তাদের খানাপিনা হারাম, তাদের লেবাস-পরিচ্ছদ হারাম, তখন কেমন করে তাদের সে দোয়া কবূল হতে পারে ? সেজন্যই মহানবী (সা)-এর শিক্ষার একটা বিরাট অংশ উম্মতকে হারাম থেকে বাঁচানো এবং হালাল ব্যবহারের প্রতি উৎসাহিত করার কাজে উৎসর্গিত ছিল।

এক হাদীসে বলা হয়েছে—“যে লোক হালাল খেয়েছে, সুন্নাহ্ মোতাবেক আমল করেছে এবং মানুষকে কষ্ট দান থেকে বিরত রয়েছে, সে জান্নাতে যাবে।" উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম নিবেদন করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ্। ইদানিং এটা তো আপনার উম্মতের সাধারণ অবস্থা। অধিকাংশ মুসলমানই তো এভাবে জীবন যাপন করে থাকেন।” হুযূর (সা) বললেন—হ্যাঁ, তাই । পরবর্তী প্রত্যেক যুগেই এ ধরনের লোক থাকবে, যারা এ সমস্ত বিধি-বিধানের অনুবর্তী হবে। (তিরমিযী)

অপর এক হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, মহানবী (সা) একবার সাহাবায়ে কেরামকে বললেন, চারটি চরিত্র এমন রয়েছে, যদি সেগুলো তোমাদের মধ্যে বর্তমান থাকে, তবে দুনিয়াতে অন্য কোন কিছু যদি তোমরা নাও পাও, তবুও তোমাদের জন্য যথেষ্ট। সে চারটি অভ্যাস হলো এই—(১) আমানতের হেফাজত করা, (২) সত্য কথা বলা, (৩) সদাচার, (৪) পানাহারের ব্যাপারে হারাম-হালালের প্রতি লক্ষ্য রাখা।

হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা) একবার মহানবী (সা)-এর দরবারে নিবেদন করলেন, ’আমার জন্য দোয়া করে দিন, আমি যাতে মকবুলুদ্দোয়া (যার দোয়া কবূল হয়) হয়ে যেতে পারি । আমি যে দোয়াই করব, তা-ই যেন কবূল হয়ে যায়।’ হুযূর (সা) বললেন, ’সা’দ! নিজের খাবারকে হালাল ও পবিত্র করে নাও, তাহলেই ‘মুস্তাজাবুদ্দা’ওয়াত’ হয়ে যাবে। আর সে সত্তার কসম করে বলছি, যাঁর হাতে মুহাম্মদের প্রাণ–বান্দা যখন নিজের পেটে হারাম লোকমা ঢোকায়, তখন চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার কোন আমল কবুল হয় না। আর যার শরীরের মাংস হারাম মাল দ্বারা গঠিত হয়, সে মাংসের জন্য তো জাহান্নামের আগুনই যোগ্য স্থান।”

হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মসউদ (রা) বলেন, রসূলে করীম (সা) বলেছেন, সে সত্তার কসম, যার কব্জায় মুহাম্মদের জান, কোন বান্দা ততক্ষণ পর্যন্ত মুসলমান হয় না, যতক্ষণ না তার অন্তর ও জিহবা মুসলমান হয় এবং যতক্ষণ না তার প্রতিবেশী তার কষ্টদানের ব্যাপারে হেফাযতে থাকে। আর যখন কোন বান্দা হারাম মাল খায় এবং সদকা-খয়রাত করে, তা কবূল হয় না। যদি তা থেকে ব্যয় করে, তবে তাতে বরকত হয় না। যদি তা নিজের উত্তরাধিকারী ওয়ারিশানের জন্য রেখে যায়, তবে তা জাহান্নামে যাওয়ার পক্ষে তার জন্য পাথেয় হয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মন্দ বস্তুর দ্বারা মন্দ আমলকে বিধৌত করেন না। অবশ্য সৎকর্মের দ্বারা অসৎ কর্মকে ধুয়ে দেন।”

হাশরের ময়দানে মানুষকে যে চারটি প্রশ্ন করা হবে

হাশরের ময়দানে প্রতিটি মানুষকে চারটি প্রশ্ন করা হবেঃ হযরত মু’আয ইবনে জাবাল (রা) বলেন যে, রসূলে করীম (সা) ইরশাদ করেছেনঃ

ما تزال قدما عبد يوم القيامة حتى يسأل عن أربع عن عمره فيما أفناه وعن شبابه فيما أبلاه وعن ماله من أين اكتسبه وفيما أنفقه وعن علمه ماذا عمل فيه

-“কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে কোন মানুষই নিজের জায়গা থেকে সরতে পারবে না, যতক্ষণ না তার কাছ থেকে চারটি প্রশ্নের উত্তর নিয়ে নেওয়া হবেঃ (১) সে নিজের জীবনকে কি কাজে নিঃশেষ করেছে ? (২) নিজের যৌবনকে কোন কাজে বরবাদ করেছে ? (৩) নিজের ধন-সম্পদ কোথা থেকে অর্জন করেছে এবং কোথায় ব্যয় করেছে ? (৪) নিজের ইলমের উপর ক’টা আমল করেছে।

হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর (রা) বলেন, একবার রাসূলে করীম (সা) এক ভাষণে ইরশাদ করেছেন, হে মুহাজেরিন দল, পাঁচটি অভ্যাসের ব্যাপারে আমি আল্লাহ্ তা’আলার নিকট পানাহ্ চাই, সেগুলো যেন তোমাদের মধ্যেও সৃষ্টি না হয়ে যায়। তার একটি হলো অশ্লীলতা। কোন জাতি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে যখন অশ্লীলতা বিস্তার লাভ করে, তখন তাদের মধ্যে প্লেগ ও মহামারীর মত এমন নতুন নতুন ব্যাধি চাপিয়ে দেওয়া হয়, যা তাদের বাপ-দাদারা কখনও শোনেনি। দ্বিতীয়ত, যখন কোন জাতির মধ্যে মাপ-জোঁকে কারচুপি করার রোগ সৃষ্টি হয়, তখন তাদের মধ্যে দুর্ভিক্ষ, মূল্যবৃদ্ধি, কষ্ট-পরিশ্রম এবং কর্তৃপক্ষের অত্যাচার উৎপীড়ন চাপিয়ে দেওয়া হয়। তৃতীয়ত, যখন কোন জাতি যাকাত প্রদানে বিরত থাকে, তখন বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দেওয়া হয়। চতুর্থত, যখন কোন জাতি আল্লাহ্ ও রাসূল (সা)-এর সাথে কৃত প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ্ তাদের উপর অজ্ঞাত শত্রু চাপিয়ে দেন। সে তাদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ছিনিয়ে নেয়। আর পঞ্চমত, কোন জাতির শাসকবর্গ যখন আল্লাহর কিতাবের আইন অনুযায়ী বিচার-মীমাংসা পরিত্যাগ করে এবং আল্লাহ্ তা’আলা কর্তৃক নাযিলকৃত হুকুম-আহ্কাম তাদের মনঃপূত হয় না, তখন আল্লাহ্ তা’আলা তাদের মধ্যে পারস্পরিক বিবাদ-বিসম্বাদ সৃষ্টি করে দেন।-(ইবনে-মাজাহ্, বায়হাকী, হাকেম)





******************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url