মা’আরেফুল কোরআন - ৭৩ || সূরা আল-বাকারাহ, ১৯২-১৯৫ || জিহাদের মাধ্যমে জীবন কাটানো এবং জিহাদে অর্থ ব্যয়







بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
سورة البقرة

সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ১৯২-১৯৫


 فَاِنِ انۡتَهَوۡا فَاِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۱۹۲  وَ قٰتِلُوۡهُمۡ حَتّٰی لَا تَکُوۡنَ فِتۡنَۃٌ وَّ یَکُوۡنَ الدِّیۡنُ لِلّٰهِ ؕ فَاِنِ انۡتَهَوۡا فَلَا عُدۡوَانَ اِلَّا عَلَی الظّٰلِمِیۡنَ ﴿۱۹۳   اَلشَّهۡرُ الۡحَرَامُ بِالشَّهۡرِ الۡحَرَامِ وَ الۡحُرُمٰتُ قِصَاصٌ ؕ فَمَنِ اعۡتَدٰی عَلَیۡکُمۡ فَاعۡتَدُوۡا عَلَیۡهِ بِمِثۡلِ مَا اعۡتَدٰی عَلَیۡکُمۡ ۪ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰهَ مَعَ الۡمُتَّقِیۡنَ ﴿۱۹۴   وَ اَنۡفِقُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ وَ لَا تُلۡقُوۡا بِاَیۡدِیۡکُمۡ اِلَی التَّهۡلُکَۃِ ۚۖۛ وَ اَحۡسِنُوۡا ۚۛ اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الۡمُحۡسِنِیۡنَ ﴿۱۹۵

সূরা আল-বাকারাহ ১৯২-১৯৫ নং আয়াতের অর্থ

(১৯২) আর তারা যদি বিরত থাকে, তাহলে আল্লাহ্ অত্যন্ত দয়ালু। 
(১৯৩) আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর যদি তারা নিবৃত্ত হয়ে যায়, তাহলে কারো প্রতি কোন জবরদস্তি নেই, কিন্তু যারা জালিম (তাদের ব্যাপার আলাদা)। 
(১৯৪) সম্মানিত মাসই সম্মানিত মাসের বদলা। আর সম্মান রক্ষা করারও বদলা রয়েছে। বস্তুত যারা তোমাদের উপর জবরদস্তি করেছে, তোমরা তাদের উপর জবরদস্তি কর, যেমন জবরদস্তি তারা করেছে তোমাদের উপর। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, যারা পরহেযগার, আল্লাহ্ তাদের সাথে রয়েছেন। 
(১৯৫) আর ব্যয় কর আল্লাহ্র পথে, তবে নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন ।

সূরা আল-বাকারাহ ১৯২-১৯৫ নং আয়াতের তাফসীর

   

তাফসীরের সার-সংক্ষেপ
অতঃপর (যুদ্ধ শুরু করার পরেও) যদি তারা (অর্থাৎ মক্কার মুশরিকরা নিজেদের কুফরী থেকে) বিরত হয়ে যায় (এবং ইসলাম গ্রহণ করে নেয়), তবে (তাদের এই ইসলাম গ্রহণকে অমর্যাদার চোখে দেখা যাবে না। বরং) আল্লাহ্ (তাদের অতীত কুফরীর অপরাধ) ক্ষমা করে দিবেন (এবং ক্ষমা ছাড়াও অশেষ নেয়ামত প্রদান করে, তাদের প্রতি) অনুগ্রহও করবেন। আর যদি তারা ইসলাম গ্রহণ না করে, তবে যদিও অপরাপর কাফিরদের ক্ষেত্রে ইসলামী আইন এই যে, তারা স্বধর্মে বহাল থাকা সত্ত্বেও যদি ইসলামী রাষ্ট্রের আনুগত্য স্বীকার এবং জিযিয়া (যুদ্ধকর) প্রদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়, তবে তাদের হত্যা করা জায়েয নয়; বরং তাদের অধিকার সংরক্ষণ করা ইসলামী রাষ্ট্রের উপর অপরিহার্য হয়ে পড়ে। কিন্তু এই বিশেষ ধরনের কাফিররা যেহেতু আরবের অধিবাসী, সেহেতু তাদের জন্য জিযিয়া প্রদানের কোন আইন নেই। বরং । তাদের জন্যে কেবল দু’টি পথই বিদ্যমান (ক) ইসলাম গ্রহণ অথবা (খ) হত্যা। সুতরাং হে মুসলমানগণ, তোমরা তাদের সঙ্গে ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ কর, যতক্ষণ না বিশ্বাসের বিভ্রান্তি (অর্থাৎ শিরক তাদের মধ্য থেকে) তিরোহিত হয়ে যায়। আর (তাদের) দীন (একান্তভাবেই) আল্লাহর হয়ে যায়। (কারণ, কারও দীন ও ধর্মমত বা জীবন বিধান একান্তভাবে আল্লাহর জন্য হয়ে যাওয়ার অর্থই ইসলাম গ্রহণ করা)। আর যদি তারা (কুফরী থেকে) ফিরে যায়, তবে (তারা পরকালে ক্ষমা ও রহমতের অধিকারী তো হবেই, তৎসঙ্গে পৃথিবীতে তাদের ব্যাপারে তোমাদেরকে এই আইন বলে দেওয়া হচ্ছে যে, যারা অন্যায়ভাবে আল্লাহর দান ভুলে কুফরী ও শিরক করতে থাকে, তারা ব্যতীত তাদের কেউ শাস্তি ও দুরবস্থার কবলে নিপতিত হবে না এবং এ সমস্ত লোক যখন ইসলাম গ্রহণ করলো, তখন আর তাদের অন্যায় থাকলো না। অতএব, তার উপর তখন আর মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি বর্তাবে না। হে মুসলমানগণ। মক্কার কাফিররা যদি তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তবে হারাম মাসে অর্থাৎ যিলকদ মাসে যুদ্ধ করতে হবে বলে তোমরা যে আশঙ্কা করছ সে সম্পর্কেও নিশ্চিন্ত থাক। কারণ,) হারাম মাসে কেবল সে ক্ষেত্রেই তোমাদের জন্য যুদ্ধ নিষিদ্ধ, যে ক্ষেত্রে কাফিররা তোমাদের বিপক্ষে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকে। (কারণ, মূলত হারাম মাসে যুদ্ধ নিষিদ্ধ হওয়া তো শোধ-প্রতিশোধের ব্যাপার। অতএব, যারা তোমাদের সঙ্গে এই নিষিদ্ধতা মেনে চলে, তোমরাও তাদের বিপক্ষে এই নিষেধাজ্ঞা মেনে চল। আর যদি তারা তোমাদের সঙ্গে এই নিষিদ্ধতা মেনে না চলে, তোমাদের বিপক্ষে সীমাতিক্রম করে, তবে তোমরাও তাদের প্রতি অতটুকুই সীমাতিক্রম কর, যতটুকু তারা করেছে। আর এসব নির্দেশাবলী পালনে আল্লাহকে ভয় কর, যাতে কোন ক্ষেত্রে আইনের আওতা-বহির্ভূত কোন কিছু না ঘটে যায়। অনন্তর দৃঢ় বিশ্বাস রাখ যে,) আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর দান ও রহমতসহ ঐসব আল্লাভীরুদের সঙ্গে থাকেন, যারা কোন ক্ষেত্রেই আইনের সীমা অতিক্রম করে না।

জিহাদে অর্থ ব্যয়

একাদশ নির্দেশঃ জিহাদে অর্থ ব্যয়ঃ আর তোমরা আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদে জীবন উৎসর্গ করার সঙ্গে সঙ্গে) অর্থ ব্যয় কর এবং নিজের হাতে নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না । (কারণ, যদি এসব ক্ষেত্রে জান-মাল উৎসর্গ করতে কাপুরুষতা ও কৃপণতা প্রদর্শন করতে আরম্ভ কর, তবে তার ফলে তোমাদের প্রতি যারা অনুগত তারা দুর্বল এবং তোমাদের শত্রুরা সামগ্রিকভাবে শক্তিশালী হয়ে যাবে, যার পরিণতি তোমাদেরকে অনিবার্য ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করবে)। আর (যে) কাজই (কর) তা সুষ্ঠু সুন্দরভাবে সম্পন্ন) করবে, (যেমন যুদ্ধের ক্ষেত্রে যদি খরচ করতে হয়, তবে অন্তর খুলে হৃষ্টচিত্তে সৎ নিয়তে খরচ কর। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তা’আলা উৎকৃষ্টভাবে কার্য সম্পাদনকারীদেরকে ভালবাসেন।


সপ্তম হিজরী সনে যখন রাসূলুল্লাহ্ (সা) হুদায়বিয়ার সন্ধি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বিগত বছরের ওমরাহর কাযা আদায় করার নিয়তে সাহাবীগণ (রা)-সহ মক্কা অভিমুখে যাত্রা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তখন হযরত (সা)-এর সাহাবীগণ জানতেন যে, সেসব কাফিরদের কাছে চুক্তি ও সন্ধির কোনই মর্যাদা নেই। এমনও হতে পারে, তারা সন্ধির প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হবে। তখন সে ক্ষেত্রে সাহাবীগণের মনে এই আশংকার উদ্ভব হয় যে, এতে করে হরম-শরীফেও যুদ্ধ সংঘটিত হয়ে যেতে পারে, যা ইসলামী শরীয়তে নিষিদ্ধ। উপরের আয়াতে সাহাবীগণের এ আশংকার জবাব দান প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, মক্কার হরম শরীফের প্রতি সম্মান প্রদর্শন মুসলমানদের অবশ্যই অপরিহার্য কর্তব্য। কিন্তু যদি কাফিররা হরম-শরীফের এলাকায় মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হয়, তবে তার মোকাবিলায় মুসলমানদের পক্ষেও যুদ্ধ করা জায়েয।

সাহাবীগণের মনে দ্বিতীয় সন্দেহ এই ছিল যে, এটা যিলকদ মাস এবং সে চার মাসেরই অন্তর্ভুক্ত যেগুলোকে ’আশহুরে-হারাম’ বা সম্মানিত মাস বলা হয়। এই মাসসমূহে কোথাও কারও সঙ্গে যুদ্ধ করা জায়েয নয়। এমতাবস্থায় যদি মক্কার মুশরিকরা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে, তবে আমরা এই মাসে তার প্রতিরোধকল্পে কিভাবে যুদ্ধ করবো। তাঁদের এই দ্বিধা দূর করার জন্যই আয়াতটি নাযিল করা হয়েছে অর্থাৎ মক্কার হরম-শরীফের সম্মানার্থে শত্রুর হামলা প্রতিরোধকল্পে যুদ্ধ করা যেমন শরীয়তসিদ্ধ, তেমনিভাবে হারাম মাসে (সম্মানিত মাসেও) যদি কাফিররা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হয়, তবে তার প্রতিরোধকল্পে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাও জায়েয।

সম্মানিত মাস চারটি

মাস’আলাঃ আশহুরে হারাম বা সম্মানিত মাস চারটি- (১) যিলকদ, (২) যিলহজ্জ (৩) মহররম ও (৪) রজব। তন্মধ্যে যিলকদ, যিলহজ্জ ও মহররম আনুক্রমিক ও পরস্পর সংলগ্ন মাস। রজব মাস বিচ্ছিন্ন একটি আলাদা মাস। ইসলাম-পূর্ব যুগে এ চার মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহকে হারাম মনে করা হতো। মক্কার মুশরিকরাও এ বিধি মেনে চলতো। ইসলামের প্রাথমিক যুগে হিজরী সপ্তম সন পর্যন্ত এ রীতি-নীতিই বলবৎ ছিল। সেজন্যই সাহাবায়ে কেরামের মনে এই সংশয় সৃষ্টি হয়েছিল। এরপর যুদ্ধ নিষিদ্ধ হওয়ার এই নির্দেশ ’মনসূখ’ (বাতিল) করে ওলামায়ে কেরামের সর্বসম্মত ইজমা’ মতে যুদ্ধের সাধারণ অনুমতি প্রদান করা হয়। কিন্তু এখনও এ চার মাসে প্রথমে আক্রমণ না করাই উত্তম। এই মাসগুলোতে কেবল শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্যই প্রতিরোধমূলক যুদ্ধ করা উচিত। এ হিসাবে একথা বলা একান্তই যথার্থ যে, এ চার মাসের সম্মান এখনও পূর্বের মতই বলবৎ রয়েছে। মক্কার হরম-শরীফে প্রয়োজনবোধে যুদ্ধের অনুমতি দেওয়ায় তার সম্মান ব্যাহত হয়নি; বরং এতে একটা ব্যতিক্রমী অবস্থার উপর আমল করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে মাত্র।

জিহাদে অর্থ ব্যয়ঃ وَأَنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ (এবং তোমরা আল্লাহর পথে খরচ কর)-এই আয়াতে স্বীয় অর্থ সম্পদ থেকে প্রয়োজনমত ব্যয় করা মুসলমানদের প্রতি ফরয হয়েছে, এই আয়াত থেকে ফিকহশাস্ত্রবিদ আলেমগণ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, মুসলমানদের উপর ফরয যাকাত ব্যতীত আরও এমন কিছু দায়-দায়িত্ব ও খরচের খাত রয়েছে, যেগুলো ফরয। কিন্তু সেগুলো স্থায়ী কোন খাত নয় বা সেগুলোর জন্য কোন নির্ধারিত নেসাব বা পরিমাণ নেই, বরং যখন যতটুকু প্রয়োজন তখন ততটুকুই খরচ করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয । আর যদি প্রয়োজন না হয় তবে কিছুই খরচ করা ফরম নয়। জিহাদে অর্থ ব্যয়ও এই পর্যায়ভুক্ত।

وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ (এবং স্বহস্তে নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না)। আয়াতাংশের শাব্দিক অর্থ অত্যন্ত দ্ব্যর্থহীন ও স্পষ্ট। এতে স্বেচ্ছায় নিজেকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করতে বারণ করা হয়েছে। এখন কথা হলো যে, “ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করা" বলতে এক্ষেত্রে কি বোঝানো হয়েছে? এ প্রসঙ্গে কোরআন মজীদের ব্যাখ্যাতাগণের অভিমত বিভিন্ন প্রকার । ইমাম জাসসাস্ ও ইমাম রাযী (র) বলেছেন, আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণিত বিভিন্ন উক্তির মাঝে কোন বিরোধ নেই। প্রতিটি উক্তিই গৃহীত হতে পারে। হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী (রা) বলেন, এই আয়াত আমাদের সম্পর্কেই নাযিল হয়েছে। আমরা এর ব্যাখ্যা উত্তমরূপে জানি। কথা হলো এই যে, আল্লাহ্ তা’আলা ইসলামকে যখন বিজয়ী ও সুপ্রতিষ্ঠিত করলেন, তখন আমাদের মধ্যে আলোচনা হলো যে, এখন আর জিহাদের কি প্রয়োজন ? এখন আমরা আপন আপন গৃহে অবস্থান করে বিষয়-সম্পত্তির দেখাশোনা করি। এ প্রসঙ্গেই এই আয়াতটি নাযিল হলো, যাতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, ’ধ্বংসে’র দ্বারা এখানে জিহাদ পরিত্যাগ করাকেই বোঝানো হয়েছে। এর দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, জিহাদ পরিত্যাগ করা মুসলমানদের জন্য ধ্বংসেরই কারণ। সেজন্যই হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী (রা) সারা জীবনই জিহাদ করে গেছেন। শেষ পর্যন্ত ইস্তাম্বুলে শহীদ হয়ে সেখানেই সমাহিত হয়েছেন।

হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রা), হুযায়ফা (রা), কাতাদাহ্ (রা) এবং মুজাহিদ ও যাহ্হাক (র) প্রমুখ তফসীরশাস্ত্রের ইমামগণের কাছ থেকেও এরূপই বর্ণিত হয়েছে।

হযরত বারা’ ইবনে আযেব (রা) বলেছেন—পাপের কারণে আল্লাহর রহমত ও মাগফেরাত থেকে নিরাশ হওয়াও নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়ার নামান্তর। এজন্যই মাগফেরাত সম্পর্কে নিরাশ হওয়া হারাম।

কোন কোন অপরিপক্ব তফসীরকার বলেছেন, বিবি-বাচ্চার হক বিনষ্ট করে আল্লাহর রাস্তায় মাত্রাতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করাও নিজের হাতে নিজের ধ্বংস ডেকে আনার নামান্তর। এরূপ ব্যাখ্যা অবশ্য জায়েয নয়।

কোন কোন মহাত্মা বলেছেন-এমন সময় যুদ্ধাভিযানে যাওয়াকে নিজের হাতে নিজের ধ্বংস ডেকে আনা বলা যেতে পারে, যখন স্পষ্ট বোঝা যায় যে, শত্রুর কোন ক্ষতি সাধন করা সম্ভব হবে না, বরং নিজেরাই ধ্বংসের মধ্যে নিপতিত হবো। এরূপ ক্ষেত্রে এই আয়াতের মর্ম অনুযায়ী যুদ্ধাভিযান না-জায়েয।

ইমাম জাসসাস (র)-এর ভাষ্য অনুযায়ী উপরিউক্ত সমস্ত নির্দেশই এই আয়াত থেকে গ্রহণ করা যেতে পারে।

وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ -এই বাক্যে প্রতিটি কাজই সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য উৎসাহ দান করা হয়েছে। সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে কাজ করাকে কোরআন ‘ইহসান’ (احسان) শব্দ দ্বারা প্রকাশ করেছে। এ ইহসান দু’রকম (১) ইবাদতে ইহসান ও (২) দৈনন্দিন কাজকর্মে এবং পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ইহসান। ইবাদতের ইহসান সম্পর্কে স্বয়ং রসূলুল্লাহ (সা) ’হাদীসে-জিবরাঈল’-এ ব্যখ্যা দিয়েছেন যে, এমনভাবে ইবাদত কর, যেন তুমি আল্লাহ্‌কে স্বচক্ষে দেখছ। আর যদি সে পর্যায় পৌঁছতে না পার, তবে এ বিশ্বাস রাখা অপরিহার্য যে, স্বয়ং আল্লাহ্ তোমাকে দেখছেন।

এছাড়া দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং পারিবারিক ও সামাজিক ব্যাপারে (মু’আমিলাত ও মু’আশারাতে) ইহসানের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে হযরত মা’আয ইবনে জাবাল (রা) বর্ণিত মসনদে আহমদের এক হাদীসে হযরত রসূলে করীম (সা) বলেছেনঃ “তোমরা নিজেদের জন্য যা কিছু পছন্দ কর, অন্য লোকদের জন্যও তাই পছন্দ কর। আর যা তোমরা নিজেদের জন্য না-পছন্দ কর, অন্যের জন্যও তা না-পছন্দ করবে।”-(মাযহারী)





*****************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url