মা’আরেফুল কোরআন - ৭৭ || সূরা আল-বাকারাহ, ২১১-২১২ || পরহেযগারগণ কিয়ামতের দিন অত্যন্ত উচ্চ মর্যাদায় থাকবে







بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
سورة البقرة

সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ২১১-২১২


 سَلۡ بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ کَمۡ اٰتَیۡنٰهُمۡ مِّنۡ اٰیَۃٍۭ بَیِّنَۃٍ ؕ وَ مَنۡ یُّبَدِّلۡ نِعۡمَۃَ اللّٰهِ مِنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَتۡهُ فَاِنَّ اللّٰهَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ ﴿۲۱۱   سَلۡ بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ کَمۡ اٰتَیۡنٰهُمۡ مِّنۡ اٰیَۃٍۭ بَیِّنَۃٍ ؕ وَ مَنۡ یُّبَدِّلۡ نِعۡمَۃَ اللّٰهِ مِنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَتۡهُ فَاِنَّ اللّٰهَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ ﴿۲۱۱

সূরা আল-বাকারাহ ২১১-২১২ নং আয়াতের অর্থ

(২১১) বনী-ইসরাঈলদিগকে জিজ্ঞেস কর, তাদেরকে আমি কত স্পষ্ট নির্দেশাবলী দান করেছি। আর আল্লাহর নেয়ামত পৌঁছে যাওয়ার পর যদি কেউ সে নিয়ামতকে পরিবর্তিত করে দেয়, তবে আল্লাহর আযাব অতি কঠিন ! 
(২১২) পার্থিব জীবনের উপর কাফিরদিগকে উন্মত্ত করে দেওয়া হয়েছে। আর তারা ঈমানদারদের প্রতি লক্ষ্য করে হাসা-হাসি করে। পক্ষান্তরে যারা পরহেযগার তারা সেই কাফিরদের তুলনায় কিয়ামতের দিন অত্যন্ত উচ্চ মর্যাদায় থাকবে। আর আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা সীমাহীন রুযী দান করেন।

সূরা আল-বাকারাহ ২১১-২১২ নং আয়াতের পূর্বাপর যোগসূত্র

যোগসূত্রঃ পূর্ববর্তী আয়াতে বলা হয়েছে, প্রকাশ্য প্রমাণ উপস্থিত হওয়ার পর তার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রথম আয়াতে এরই যুক্তি প্রদর্শন করা হয়েছে-যেভাবে বনী-ইসরাঈলের অনেককেই এ ধরনের অবজ্ঞা প্রদর্শন ও বিরুদ্ধাচরণের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

সূরা আল-বাকারাহ ২১১-২১২ নং আয়াতের তাফসীর

   

তাফসীরের সার-সংক্ষেপ
আপনি বনী-ইসরাঈলের (আলেমদের) কাছে (একবার) জিজ্ঞেস করুন, আমি তাদেরকে (অর্থাৎ তাদের পূর্বপুরুষদেরকে) কত প্রকৃষ্ট দলীল (প্রমাণ) দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা তদ্দ্বারা হিদায়েতপ্রাপ্ত হওয়ার পরিবর্তে বিভ্রান্তির পথকে বেছে নিয়েছে এবং তার ফলে যথেষ্ট শাস্তিও ভোগ করেছে। উদাহরণত বলা যায়, তাদেরকে যে তওরাত দেওয়া হয়েছিল, তা গ্রহণ করা ছিল তাদের কর্তব্য। কিন্তু তারা সেটিকে অস্বীকার করেছে, ফলে তূর পাহাড়কে তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়েছে। তাদের উচিত ছিল আল্লাহর কালাম শ্রবণ করা এবং একে মাথা পেতে মেনে নেওয়া, কিন্তু তারা তার প্রতি সন্দেহ পোষণ করেছে। ফলে তাদেরকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ধ্বংস হতে হয়েছে। সাগরের পানি ফাঁক করে দিয়ে তাদেরকে ফেরাউনের হাত থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করা ছিল তাদের কর্তব্য, কিন্তু তারা বাছুরের উপাসনায় প্রবৃত্ত হয়েছে। যার ফলে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল। তাদেরকে ’মান্না’ ও ’সালওয়া’ নামক সুস্বাদু খাদ্য সরবরাহ করা হয়েছিল, এতে তাদের কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করা উচিত ছিল, কিন্তু তারা প্রদর্শন করেছে অবাধ্যতা। ফলে সেগুলো পচতে শুরু করে আর তাতে তারা সেগুলোর প্রতি ঘৃণা পোষণ করে। ফলে তা বন্ধ করে দিয়ে তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় কৃষিকর্মের ঝামেলা। তাদের মাঝে নবী-রাসূলগণের আবির্ভাব হচ্ছিল। উচিত ছিল একে সুবর্ণ সুযোগ মনে করা। কিন্তু তা না করে তারা তাদেরকে হত্যা করতে আরম্ভ করেছিল। ফলে শাস্তিস্বরূপ তাদের হাত থেকে রাজ্য ও শাসনক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়া হলো। এমনি বহু ঘটনা সূরা বাকারার প্রথম দিকেও আলোচিত হয়েছে) এবং (আমার রীতিই এমন,) যে ব্যক্তি আল্লাহর (প্রকৃষ্ট প্রমাণসমূহের মত এত বড়) নেয়ামতকে বিকৃত করে নিজেদের কাছে পৌঁছার পর হিদায়েত প্রাপ্তির পরিবর্তে অধিকতর গোমরাহ হয়ে পড়ে, আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে কঠোর শাস্তি দেন।

(দ্বিতীয় আয়াতে) অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুনিয়ার প্রতি আসক্তিকে সত্যের প্রতি অনীহার প্রকৃত কারণ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। যার নিদর্শন হলো, ধর্মভীরুদের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন। কারণ, মানুষ যখন দুনিয়ার প্রতি প্রবলভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে, তখন ধর্মকে ভুলে লাভের পথে অন্তরায় মনে করে পরিহার করে এবং অন্যান্য ধর্মপ্রাণ ব্যক্তির প্রতি উপহাস করে। তাই বনী-ইসরাঈলের কিছু সরদার এবং মুশরিকদের কিছু অজ্ঞ ব্যক্তি দরিদ্র মুসলমানদের প্রতি উপহাসের সাথে আলাপ-আলোচনা করত। তাদের সম্পর্কেই বলা হয়েছে যে, দুনিয়ার জীবন ও জীবিকা কাফিরদের নিকট সাজানো মনে হয় এবং (সে জন্যেই) তারা মুসলমানদের বিদ্রূপ করে। অথচ এই মুসলমানগণ যারা কুফরী ও শিরক হতে দূরে থাকে ঐসব কাফিরদের চেয়ে (সর্ববিষয়ে) কিয়ামতের দিন উচ্চস্তরে থাকবে। (কেননা, কাফিররা জাহান্নামে থাকবে আর মুসলমান বেহেশতে থাকবেন)। এবং (মানুষের পক্ষে শুধু) পার্থিব জীবনের উন্নতিতে অহংকারী হওয়া উচিত নয় । (কেননা) রিযিক আল্লাহ্ তা’আলা যাকে ইচ্ছা প্রচুর মাত্রায় দিয়ে থাকেন। (বস্তুত এটা ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল; কোন বিশেষ যোগ্যতার উপর নয়। সুতরাং এটা জরুরী নয় যে, যার ধন-সম্পদ বেশি আল্লাহর নিকট তার মানও বেশি হবে। আল্লাহর নিকট যে নির্ভরযোগ্য, সম্মান তারই বেশি। তাই শুধু ধন-সম্পদের ভিত্তিতে নিজেকে সম্মানিত আর অন্যকে নিকৃষ্ট মনে করা একান্তই বোকামি।

সূরা আল-বাকারাহ ২১১-২১২ নং আয়াতের বিষয় বস্তু

আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়
দুনিয়ার ধন-সম্পদ ও মান-সম্মানের উপর নির্ভর করে অহংকার করা এবং দরিদ্র লোকের প্রতি উপহাস করার পরিণতি কিয়ামতের দিন চোখের সামনে ভেসে উঠবে।

হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি কোন মু’মিন স্ত্রী বা পুরুষকে তার দারিদ্র্যের জন্য উপহাস করে, আল্লাহ্ তা’আলা তাকে কিয়ামতের দিন সমগ্র উম্মতের সামনে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মু’মিন স্ত্রী বা পুরুষের উপর এমন অপবাদ আরোপ করবে, যে দোষী নয়, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাকে একটি উঁচু অগ্নিকুণ্ডের উপর দাঁড় করাবেন; যতক্ষণ না সে তার মিথ্যার স্বীকারোক্তি করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাতে রাখা হবে।—(যিকরুল-হাদীস, কুরতুবী)





****************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url