যেসব অনুষ্ঠানাদি ইসলাম স্বীকৃত নয় তার একটি হচ্ছে শবীনা ও কুরআনখানী || পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কুরআন খতম






শবীনা ও কুরআনখানী


বহু মুসলমান কর্তৃক বরকত ও সাওয়াবের আশায় এক রাত্রি ব্যাপী কুরআন খতমের মজলিস অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কুরআন খতমের এই আনুষ্ঠানিকতার নাম শবীনা বা কুরআনখানী। হাফেয অথবা হুজুররা দেখে দেখেই কুরআন খতম করে থাকেন। কোনো কোনো মজলিসে এক এক হাফেয বা মৌলবী সাহেবকে কুরআন মাজীদের অংশ ভাগ করে তা পাঠ করার দায়িত্ব দেয়া হয়। কেউ কেউ কিছু অংশ পড়ে কিছু অংশ বাদ দিয়ে নিজের ভাগ শেষ করে থাকেন।

মাইকযোগে সারা রাত ঝড়ের গতিতে শবীনা বা কুরআনখানী চলে। কয়জন আল্লাহর বান্দাই বা তা যথোচিত মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করে? অতিরিক্ত শব্দে বহু মানুষের কাছে কুরআন অবহেলিত হয়। অনেকের অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দাড়ায়। ছাত্র-ছাত্রীদের লেখা-পড়ায় ব্যাঘাত ঘটে, রোগ-পীড়িত মানুষের মনে আঘাত লাগে, আরাম ও ঘুম জরুরি এমন মানুষের মনে বিরক্তি সৃষ্টি করে, অমুসলিমদের মনে সৃষ্টি করে বিতৃষ্ণা। সত্যই তো যে বাণী বুঝাই যায় না, সে বাণীর প্রতি কর্ণপাত করবে কয়জন? শবীনা বা কুরআনখানী এই আয়োজনে সাওয়াব তো হয়ই না বরং অনেক ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআন অবমাননার মত মারাত্মক গুনাহের সম্ভাবনা থাকে।

খতম শেষে হাত তুলে জামাআতী দুআ হয়। খাওয়া-দাওয়ার ধুমও থাকে বেশ জোরালো। এতে যা খরচ হয়, তা একেবারেই কম নয়। কিন্তু শবীনা বা কুরআনখানী তো করা হয় কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়। তবে হয়তো বা খতমদাতা জানেই না যে, সত্যপক্ষে শবীনা বা কুরআনখানীতে আল্লাহর কোন সন্তুষ্টি নেই। যেহেতু এ কাজ তাঁর শরীয়ত অনুযায়ী হয় না তাই। ভাড়াটিয়া হাফেয হুজুরদের এ কুরআনখানীতে কোনো সাওয়াবও নেই; না তাঁদের, না খতমদাতার। কারণ, তাঁরা পড়েন কিছু রোজগারের জন্য। আর খতমদাতার সওয়াব হয় না, যেহেতু শবীনা বা কুরআনখানী একটি মারাত্মক বিদআত । (মাজমূউল ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৩০৪) যে হাফেয বা হুজুরদেরকে নিয়ে শবীনা বা কুরআনখানী খতম পড়ানো হয়, কিন্তু তাঁরা তো কোনোদিন ঐরকম খতম পড়ান না। যাঁরা মিলাদ পড়ে অর্থ উপার্জন করে বেড়ান, কিন্তু তাঁরা তো কোনোদিন খরচ করে মিলাদ পড়ান না? নাকি শিষ্যের ঘরের চালে কাক বসে শিষ্যের পাপের কারণে। আর গুরুর ঘরের চালে কাক বসে কাকের পাপ ক্ষয় করার জন্য, বুদ্ধিমান মানুষরা বুঝে না কেন?

অনেকে ফাতেহাখানীকুরআনখানী প্রভৃতি করে তার সাওয়াব তাঁদের জন্য (যেমন আম্বিয়াদের নামে) বখশিয়ে দেয়া- যাঁরা সাওয়াবের মুখাপেক্ষী নন । সুতরাং এমন কাজ বিদআত ও নিষ্ফল ব্যতীত কিছু নয়?

পক্ষান্তরে অন্যান্য আমল বা পদ্ধতি দ্বারা ঈসালে সাওয়াব করলে তা বেসরকারি ডাকে ইরসাল হবে যা সঠিক ঠিকানায় পৌঁছবে না। সুতরাং মাইয়্যেতের পক্ষ থেকে তওবা করা, নামায পড়া, নিজের অথবা ভাড়াটে চাহারম, নিয়মিত বাৎসরিক দুআ মজলিস ইত্যাদি কোনো মতেই ঈসাল বা 'কবুল' হবে না । (আহকামুল জানাইয, মু'জামুল বিদা' ১৩৫ পৃঃ) ভাড়াটিয়া কারীর কুরআনখানী, ফাতেহাখানী, কুলখানী, শবিনাখানী, চালসে চাহারম, মিলাদ পাঠ ইত্যাদি যা ঈসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে করা হয় তা সমস্ত বিদআত । এসব মৃতের কোনো কাজে আসে না। উপরন্তু মৃত ব্যক্তিরা যদি নাস্তিক বা কাফের অথবা মুশরিক হয়, তাহলে তার আত্মার কল্যাণ উদ্দেশ্যে এমন দুআ মজলিস করা বা দুআ করাই হারাম। (সূরা তাওবাহ : আয়াত-১১৩)

মুফতী মুহাম্মদ শফী' সাহেব মাআরিফুল কুরআনে বলেন, “ঈসালে সাওয়াব উপলক্ষে খতমে কুরআনের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা সর্বসম্মতভাবে না-জায়েয ।

আল্লামা শামী ‘দুররে মুখতারের শরাহ' এবং ‘শিফাউল আলীল' নামক গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে এবং অকাট্য দলীলাদিসহ এ কথা প্রমাণ করেছেন যে, কুরআন শিক্ষাদান বা অনুরূপ অন্যান্য কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণের যে অনুমতি পরবর্তীকালের ফকীহগণ দিয়েছেন, তার কারণ এমন এক ধর্মীয় প্রয়োজন যে, তাতে বিচ্যুতি দেখা দিলে গোটা শরীয়তের বিধান-ব্যবস্থার মূল্যে আঘাত আসবে। কাজেই এ অনুমতি এ সব বিশেষ প্রয়োজনের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ রাখা একান্তই অবশ্যক। এ জন্যে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মৃত্যের ঈসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরআন খতম করানো বা অন্য কোনো দোয়া-কালাম বা অযিফা পড়ানো হারাম। কারণ এর উপর কোনো ধর্মীয় মৌলিক প্রয়োজন নির্ভরশীল নয়। এখন যেহেতু পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কুরআন পড়া হারাম, সুতরাং যে পড়বে এবং যে পড়াবে, তারা উভয়ই গুনাহগার হবে।

বস্তুতঃ যে পড়েছে সেই যখন কোনো সাওয়াব পাচ্ছে না, তখন মৃত আত্মার প্রতি সে কি পৌঁছাবে? কবরের পাশে কুরআন পড়ানো বা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কুরআন খতম করানোর রীতি সাহাবী, তাবেয়ীন এবং প্রথম যুগের উম্মতগণের দ্বারা কোথাও বর্ণিত বা প্রমাণিত নেই। সুতরাং এগুলো নিঃসন্দেহে বেদ'আত ।

(তফসীর মাআরিফুল কুরআন, বাংলা অনূদিত সউদী আরব ছাপা ৩৫ পৃঃ)




****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url