ঘুমের সময় বিছানায় শুয়ে রাসুল (সাঃ) যেসব দুআ পাঠ করতেন || ঘুমোনোর পূর্বে যেসব দুআ পড়বে







(শাইখুল ইসলাম মুহিউদ্দীন আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবনে শারফ আন-নববী রহ. রচিত “আল আযকার” গ্রন্থ অবলম্বনে)

ঘুমের সময় বিছানায় শুয়ে যে দুআ পড়বে


আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لِّأُولِي الْأَلْبَابِ الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُوْنَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ

অর্থ: নিশ্চয় আসমান-জমিনের সৃষ্টি ও রাত-দিনের আবর্তনের মাঝে বুদ্ধিমানদের জন্য রয়েছে নিদর্শন। যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে। এবং আসমান-জমিনের সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ফিকির করে।০১

*  হজরত হুজায়ফা ও হজরত আবু জর রাদি. থেকে বর্ণিত। তারা বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বিছানায় যেতেন, তখন এ দুআ পড়তেন-

اللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَحْيَا وَأَمُوْتُ.

উচ্চারণ:  আল্লাহুম্মা বিইসমিকা আহইয়া ওয়া আমুতু। ০২

অর্থ: হে আল্লাহ, তোমার নামে জাগ্রত এবং তোমার নামে ঘুমাই হই । 

*  হজরত আলি রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ও হজরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন-

إِذَا أَوَيْتُمَا إِلَى فِرَاشِكُمَا أَوْ أَخَذْتُمَا مَضَاجِعَكُمَا، فَكَبَّرًا ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، وَسَبِّحَاثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، وَاحْمَدَا ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ.

অর্থ: তোমরা যখন ঘুমানোর জন্য বিছানায় যাবে, তখন ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৩ বার আল্লাহু আকবার বলবে। -কোন কোন বর্ণনায় ৩৪ বার সুবহানাল্লাহ বলার কথা আছে। আবার কোন বর্ণনায় ৩৪ বার আল্লাহু আকবার বলার কথা আছে।- আলি রাদি বলেন-

مَا تَرَكْتُهُ مُنْذُ سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قِيْلَ لَهُ: وَلَا لَيْلَةً صِفَيْنَ؟ قَالَ: وَلَا لَيْلَةَ صِفَيْنَ.

অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একথা শুনার পর একদিনও এ আমল ছুটেনি। হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলা হল, সিফফিন যুদ্ধের রাতেও কি পড়েছেন? তিনি উত্তর দিলেন: সিফফিন যুদ্ধের রাতেও পড়েছি ।০৩

*  হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- তোমরা ঘুমানোর পূর্বে তোমরা বিছানার চাদরের ভিতরের পরিষ্কার করে নিবে। কারণ, জানা নেই এর নীচে কোন ক্ষতিকর বস্তু আছে কিনা? এরপর এ দুআ পড়বে-

بِاسْمِكَ رَبِّ وَضَعْتُ جَنْبي وَبِكَ أَرْفَعُهُ، إِنْ أَمْسَكْتَ نَفْسِي فَارْحَمْهَا، وَإِنْ أَرْسَلْتَهَا فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِهِ عِبَادَكَ الصَّالِحِينَ.

উচ্চারণ: বিসমিকা রাব্বি ওয়া দাতু যাম্বি ওয়াবিকা আরফাউহু, ইন আমসাকতা নাফসি ফারহামহা, ওয়া ইন আরসালতাহা ফাহফাজহা বিমা তাহফাজু বিহি ইবাদাকাস সালিহিন ।

অর্থ: আপনার নামে হে পালনকর্তা! আমি আমার পার্শ এলিয়ে দিলাম, আপনার নামেই তা উঠাবো। আমার রুহ আটকে দিলে রহম করো এবং

ছেড়ে দিলে হেফাজত করো, যেভাবে আপনার নেক বান্দাদের হেফাজত করে থাকেন । ০৪

*  হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত-

أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا أَخَذَ مَضْجَعَهُ نَفَثَ فِي يَدَيْهِ وَقَرَأَ بِالْمُعَوَّذَاتِ، وَمَسَحَ بِهِمَا جَسَدَهُ.

অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমানোর পূর্বে তিনকুল পড়ে হাতে ফু দিয়ে পুরো শরীরে মুছতেন । ০৫

*  অন্য বর্ণনায় আছে-

أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا أَوَى إِلَى فِرَاشِهِ كُلَّ لَيْلَةٍ جَمَعَ كَفَّيْهِ، ثُمَّ نَفَثَ فِيهِمَا، فَقَرَأَ فِيهِمَا : ( قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ ، وَ { قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ ، وَ {قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ ) ، ثُمَّ يَمْسَحُ بِهِمَا مَا اسْتَطَاعَ مِنْ جَسَدِهِ يَبْدَأُ بِهِمَا عَلَى رَأْسِهِ وَوَجْهِهِ، وَمَا أَقْبَلَ مِنْ جَسَدِهِ، يَفْعَلُ ذَلِكَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ.

অর্থ: ঘুমানোর আগে প্রতি রাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই হাত একসাথে করে তিনকুল (সুরা এখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস) পড়ে উভয় হাতে ফু দিয়ে যথাসম্ভব পুরো শরীরে মুছে দিতেন। মাথা থেকে শুরু করে চোহারা ও শরীরের সামনের অংশ এভাবে তিনবার করতেন। ০৬

*  হজরত আবু মাসউদ আনসারি বদরি সাহাবি থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

الْآيَتَانِ مِنْ آخِرِ سُورَةِ الْبَقَرَةِ مَنْ قَرَأَهُمَا فِي لَيْلَةٍ كَفَتَاهُ.

অর্থ: সুরা বাকারার শেষে এমন দুটি আয়াত রয়েছে, যে ব্যক্তি রাতে উক্ত দুই আয়াত পাঠ করবে, উক্ত দুই আয়াত তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। অর্থাৎ যাবতীয় বিপদাপদ থেকে নিরাপদে থাকবে। ০৭

*  হজরত বারা বিন আজেব থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, যখন তুমি ঘুমানোর জন্য বিছানায় যাবে তখন নামাজের অজুর মত অজু করবে। ডান পাশে শয়ন করবে। এরপর এই দুআটি পড়বে। যদি তুমি উক্ত রাতে মৃত্যুবরণ করো, তাহলে তুমি মুসলিম অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে। দুইাটি হল-

اللهُمَّ أَسْلَمْتُ نَفْسِي إِلَيْكَ، وَفَوَّضْتُ أَمْرِي إِلَيْكَ، وَأَلْجَأْتُ ظَهْرِي إِلَيْكَ؛ رَغْبَةً وَرَهْبَةً إِلَيْكَ لَا مَلْجَأَ وَلَا مَنْجَيْ مِنْكَ إِلَّا إِلَيْكَ، آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أَنْزَلْتَ، وَبِنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আসলামতু নাফসি ইলাইকা, ওয়া ফাওয়্যাজতু আমরি ইলাইকা, ওয়া আলযা'তু জাহরি ইলাইকা; রাগবাতান ওয়া রাহবাতান ইলাইকা, লা মালযাআ ওয়া লা মানযা মিনকা ইল্লা ইলাইক। আমানতু বিকিতাবিকাল্লাজি আনজালতা ওয়া নাবিয়্যিকাল্লাজি আরসালতা।

অর্থ: হে আমি আমাকে আপনার নিকট সঁপে দিলাম, আমার যাবতীয় বিষয়াদি আপনার জিম্মায় সোপর্দ করলাম, আমার দেহ-পিঠ আপনার আশ্রয়ে রেখেদিলাম। আপনার কাছে এই সমর্পণ আপনার সন্তুষ্টির আশায় এবং বিচ্যুতি ঘটে যাওয়ার আশঙ্কায়। আপনার পাকড়াও থেকে বাঁচার জন্য আপনার কাছে ফিরে আসা ব্যতীত আর কোন আশ্রয় কিংবা গত্যন্তর নেই। ঈমান আনলাম আপনার নাজিলকৃত কিতাবের ওপর এবং প্রেরিত নবির
ওপর। ০৮

*  হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন-

وَكَلَنِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِحِفْظِ زَكَاةِ رَمَضَانَ، فَأَتَانِيْ آتٍ، فَجَعَلَ يَحْذُو مِنَ الطَّعَامِ ... وذَكَرَ الحَدِيثَ، وَقَالَ فِي آخِرَهُ: إِذَا أَوَيْتَ إِلَى فِرَاشِكَ فَاقْرَأْآيَةَ الْكُرْسِيَّ؛ لَنْ يَزَالَ عَلَيْكَ مِنَ اللهِ، حَافِظٌ، وَلَا يَقْرَبُكَ شَيْطَانٌ حَتَّى تُصْبِحَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: صَدَقَكَ وَهُوَ كَذُوبٌ، ذَاكَ شَيْطَانٌ.

অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রমজানের যাকাতের মাল হেফাজতের দায়িত্ব দিলেন। রাতে কেউ একজন এসে যাকাতের মাল জমা করতে লাগল। এই হাদিসের শেষাংশে আছে- নবিজি বলেছেন, যখন তুমি ঘুমানোর জন্য বিছানায় যাবে তখন আয়াতুল কুরসি পড়বে। এটা পড়লে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার জন্য একজন রক্ষক থাকবে। সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঐ আগন্তুক তোমার সঙ্গে সত্য বলেছে, যদিও সে মিথ্যুক। সে হল, শয়তান । ০৯

*  উম্মুল মুমিনিন হজরত হাফসা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডান হাত গালের নীচে দিয়ে শয়ন করতেন। এরপর এ দুআ তিনবার পড়তেন-

اللَّهُمَّ قِنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা কিনি আজাবাকা ইয়াওমা তাবআসু ইবাদাক ।

অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার শাস্তি থেকে আমাকে হেফাজত করুন, যে দিন আপনি আপনার বান্দাদের পুনরুত্থান ঘটাবেন। – ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান সহিহ। ১০

*  হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমানোর পূর্বে এ দুআ পড়তেন-

اللهُمَّ رَبَّ السَّمَاوَاتِ وَرَبَّ الْأَرْضِ وَرَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، رَبَّنَا وَرَبَّ كُلَّ شَيْءٍ، فَالِقَ الحَبِّ وَالنَّوَى، وَمُنْزِلَ التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيلِ وَالْفُرْقَانِ، أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرَّ كُلِّ شَيْءٍ أَنْتَ آخِذُ بِنَاصِيَتِهِ، اللّهُمَّ أَنْتَ الْأَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الْآخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُوْنَكَ شَيْءٌ، اقْضِ عَنَّا الدَّيْنَ وَأَغْنِنَا مِنَ الْفَقْرِ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বাস সামাওয়াতি ওয়া রাব্বাল আরদি ওয়া রাব্বাল আরশিল আজিম। রাব্বানা ওয়া রাব্বা কুল্লি শাইয়িন। ফালিকাল হাব্বি ওয়ান্নাওয়া, ওয়া মুনজিলাত তাওরাতি ওয়াল ইঞ্জিলি ওয়াল ফুরকান। আউজুবিকা মিন শাররি কুল্লি শাইয়িন আনতা আখিজুন বি না সিয়াতিহ। আল্লাহুম্মা আনতাল আউয়্যালু ফা লাইসা কাবলাকা শাইয়ুন, ওয়া আনতাল আখিরু ফা লাইসা বা'দাকা শাইয়ুন। ওয়া আনতাজ্জাহিরু ফা লাইসা ফাওকাকা শাইয়ুন। ওয়া আনতাল বাতিনু ফা লাইসা দুনাকা শাইয়ুন। ইকদি আন্নাদ্দাইনা ওয়া আগনিনা মিনাল ফাকরি।

অর্থ: হে আল্লাহ, আসমান-যমিনের প্রতিপালক, মহান আরশের অধিপতি । হে আমাদের ও সর্বসৃষ্টির পালনকর্তা, বীজ-দানা বিদীর্ণকারী, তওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনের অবতারক। আমি আপনার আশ্রয় কামনা করি আপনার নিয়ন্ত্রিত সকল প্রাণীর অনিষ্ট থেকে। হে আল্লাহ, আপনিই প্রথম, আপনার আগে কিছু নেই। আপনিই শেষ, আপনার পরে কিছু নেই। সকল বস্তুর উপরে আপনিই প্রকাশমান, আপনার উপর কেউ নেই। সবার কাছে আপনি গুপ্ত, আপনার থেকে গুপ্ত কেউ নেই। আমাদের ঋণ শোধের ব্যবস্থা করে দিন এবং দারিদ্র্যের মুখাপেক্ষিতা থেকে হেফাজত করুন।

সুনানে আবু দাউদের অন্য বর্ণনায় (একবচনের শব্দে) এসেছে— আমার ঋণ শোধের ব্যবস্থা করে দিন এবং দারিদ্র্যের মুখাপেক্ষিতা থেকে হেফাজত করুন।১১

*  হজরত আলি রাদি থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঘুমানোর জন্য বিছানায় যেতেন, তখন এ দুআ পড়তেন-

اللهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِوَجْهِكَ الْكَرِيمِ، وَكَلِمَاتِكَ التَّامَّةِ، مِنْ شَرِّ مَا أَنْتَ آخِذُ بِنَاصِيَتِهِ، اللهُمَّ أَنْتَ تَكْشِفُ الْمَغْرَمَ وَالْمَأْثَمَ، اَللَّهُمَّ لَا يُهْزَمُ جُنْدُكَ، وَلَايُخْلَفُ وَعْدُكَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدَّ مِنْكَ الْجُدُ، سُبْحَانَكَ وَبِحَمْدِكَ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বি ওয়াজহিকাল কারিম, ওয়া কালিমাতিকাত তাম্মাতি মিন শাররি মা আনতা আখিজুন বি নাসিতিহ। আল্লাহুম্মা আনতা তাকশিফুল মাগরামা ওয়াল মাসাম। আল্লাহুম্মা লা যুহজামু জুনদুকা ওয়া লা য়ুখলাফু ওয়া'দুকা, ওয়া লা য়ানফাউ জাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু, সুবহানাকা ওয়াবি হামদিক ।

অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার সম্মানিত সত্তা এবং পূর্ণাঙ্গ গুণাবলীর মাধ্যমে সেসব অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই, যার চাবিকাঠি আপনার হাতে। হে আল্লাহ, আপনিই অপরাধ ও ঋণ থেকে মুক্তি দেন। হে আল্লাহ, আপনার বাহিনী পরাস্ত হয় না এবং আপনার অঙ্গীকার ভঙ্গ হয় না। আর আমল ছাড়া সামর্থ্যবানের সামর্থ্য কোন কাজে আসবে না। আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করি ।১২

*  হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বিছানায় যেতেন, তখন এ দুআ পড়তেন-

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنَا وَسَقَانَا، وَكَفَانَا وَآوَانَا، فَكَمْ مِمَّنْ لَا كَافِيَ لَهُ وَلَا مُنْوِي.

উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহিল লাযি আতআমানা ওয়াসাকানা ওয়া কাফানা ওয়া আওয়ানা, ফাকাম মিম্মান লা কাফিয়া লাহু, ওয়া লা মু'বিয়া।

অর্থ: সকল প্রশংসা ঐ সত্তার যিনি আমাদের পানাহার করিয়েছেন। আমাদের বাসস্থান সহ সব কিছুর ব্যবস্থা করেছেন। অনেকেই এমন আছে, যাদের জন্য যথেষ্ট কেউ নেই এবং যাদের কোন আশ্রয়স্থল নেই। -তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান সহিহ। ১৩

*  হজরত আবুল আযহার রাদি. (যাকে আবু যুহাইর আনমারিও বলা হয়) থেকে হাসান সনদে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঘুমানোর জন্য বিছানায় যেতেন, তখন এ দুআ পড়তেন-

باسْمِ اللهِ، وَضَعْتُ جَنْبِي اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِيْ، وَاخْسَأْ شَيْطَانِيْ، وَفُكَ رِهَانِي، وَاجْعَلْنِي فِي النَّدِيِّ الْأَعْلَى.

উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি ওয়াদা’তু যানবি, আল্লাহুম্মাগফিরলি যানবি ওয়াখসা' শাইতানি ওয়া ফুক্কা রিহানি, ওয়ায আলনি ফিন্নাদিয়্যিল আলা ।

অর্থ: আল্লাহর নামে শুলাম। হে আল্লাহ, আমার গুনাহ মাফ কর। আমার শয়তানকে লাঞ্চিত কর। আমাকে মুক্তি দাও। আমাকে উঁচু মর্যাদাবান ফেরেশতাদের অন্তর্ভুক্ত কর।১৪

*  হজরত নওফেল আশযায়ি রাদি. থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন-

اقْرَأْ (قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ)، ثُمَّ نَمْ عَلَى خَاتِمَتِهَا؛ فَإِنَّهَا بَرَاءَةُ مِنَ الشِّرْكِ.

অর্থ: তুমি সুরা কাফিরুন পড়বে। এটি শেষ করেই ঘুমিয়ে যাবে। এটি শিরক থেকে মুক্তির ঘোষণা।

- মুসনাদে আবু ইলাতে হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

أَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى كَلِمَةٍ تُنَجِّيْكُمْ مِنَ الْإِشْرَاكِ بِاللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ، تَقْرَؤُوْنَ: قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ عِنْدَ مَنَامِكُمْ.

অর্থ: আমি কি তোমাদেরকে এমন কালিমা শিক্ষা দেব না, যা তোমাদেরকে শিরিক থেকে মুক্তি দিবে? তা হচ্ছে, তোমরা ঘুমানোর সময় সুরা কাফিরুন পড়ে ঘুমাবে ।১৫

*  হজরত ইরবাদ বিন সারিয়া রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-

أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقْرَأُ الْمُسَبِّحَاتِ قَبْلَ أَنْ يَرْقُدَ.

অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমানোর আগে সেসব সুরার শুরুতে (সাব্বাহা)১৬ আছে সেগুলো পড়ে ঘুমাতেন। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। ১৭

*  হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন-

كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَنَامُ حَتَّى يَقْرَأَ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَالرُّمَرَ.

অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুরা বনি ইসরাঈল ও যুমার না পড়ে ঘুমাতেন না। -ইমাম তিরমিজি রহ. হাদিসটিকে হাসান বলেছেন । ১৮

*  হজরত ইবনে উমর থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শয়ন করার জন্য বিছানায় যেতেন, তখন এ দুআ পড়তেন-

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي كَفَانِي وَآوَانِي، وَأَطْعَمَنِي وَسَقَانِي، وَالَّذِي مَنْ عَلَيَّ فَأَفْضَلَ، وَالَّذِي أَعْطَانِي فَأَجْزَلَ اَلْحَمْدُ لِلهِ عَلى كُلِّ حَالٍ، اللهُمَّ رَبَّ كُلِّ شَيْءٍ وَمَلِيْكَهُ وَإلَهَ كُلِّ شَيْءٍ، أَعُوْذُ بِكَ مِنَ النَّارِ.

উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লাহিল্লাযি কাফানি ওয়া আওয়ানি ওয়া আত‘আমানি ওয়া সাকানি, ওয়াল্লাযি মান্না আলাইয়া ফাআফযালা ওয়াল্লাযি আ'তানি ফা আযজালা। আলহামদুলিল্লাহি আলা কুল্লি হাল, রাব্বা কুল্লি শাইয়িন ওয়া মালিকাহ, ওয়া ইলাহা কুল্লি শাইয়িন । আউজুবিকা মিনান্নার ।১৯

অর্থ: সকল প্রশংসা ঐ আল্লাহর যিনি আমাকে পরিপূর্ণ দিয়েছেন। আমাকে আশ্রয় দিয়েছেন। পানাহার করিয়েছেন। যিনি আমার ওপর অনেক বেশি অনুগ্রহ করেছেন। যিনি আমাকে অনেক কিছু দিয়েছেন। সর্বাবস্থায় তাঁর প্রশংসা করি। হে আল্লাহ, আপনি সকল কিছুর প্রতিপালক ও মালিক। আপনি সবকিছুর ইলাহ। আপনার কাছে জাহান্নাম থেকে পানাহ চাই ।২০

*  হজরত আবু সাঈদ খুদরি থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি ঘুমানোর জন্য বিছানায় শয়ন করে এই দুআ তিনবার পড়ে, আল্লাহ তাআলা তার গুনাহ মাফ করে দেন যাদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমান হয়। তার গুনাহ তারকা পরিমাণ; বালুকারাশি পরিমাণ, দুনিয়ার দিবসের পরিমাণ গুনাহ হলেও আল্লাহ মাফ করে দেন। দুআটি হল-

أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ.

উচ্চারণ: আসতাগফিরুল্লাহাল্লাযি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়াল কাইয়ুমা ওয়া আতুবু ইলাইহ ।

অর্থ: আমি ঐ আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করি, যিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। তিনি চিরজীবি শাশ্বত। আমি তার কাছে তাওবা করি।২১

*  আসলাম গোত্রের এক সাহাবি থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন- আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বসা ছিলাম। তখন একজন সাহাবি এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমাকে গতরাতে দংশন করেছে। ফলে আমি সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কীসে তোমাকে দংশন করেছে? সাহাবি বললেন, বিচ্ছু। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যদি সন্ধ্যাবেলায় এ দুআ পড়তে, তাহলে ইনশাআল্লাহ তোমাকে অনিষ্ট স্পর্শ করতো না। দুআটি হল-

أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ .

উচ্চারণ: আউযুবিকালিমাতিল্লাহি তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক ।

অর্থ: আল্লাহর পরিপূর্ণ উক্তির মাধ্যমে তার সমস্ত সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় কামনা করি৷২২

*  হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত-

أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوْصَى رَجُلًا إِذَا أَخَذَ مَضْجَعَهُ أَنْ يَقْرَأُ سُوْرَةُالْحَشْرِ وَقَالَ: إِنْ مِنَّ مِنَّ شَهِيدًا أو قال: مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ.

অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন সাহাবিকে ঘুমানোর সময় সুরা হাশর পড়ে ঘুমানোর জন্য নসিহত করলেন। আর বললেন, তুমি যদি ঐ রাতে মারা যাও, তাহলে শহিদের মর্যাদা পাবে অথবা তিনি বলেছেন, তুমি জান্নাতবাসী হবে। ২৩

*  হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর থেকে বর্ণিত, তিনি এক ব্যক্তিকে বললেন, যখন তুমি ঘুমাতে যাবে, তখন এ দুআটি পড়বে-

اللَّهُمَّ خَلَقْتَ نَفْسِي، وَأَنْتَ تَوَفَّاهَا، لَكَ مَمَاتُهَا وَمَحْيَاهَا، إِنْ أَحْيَيْتَهَا فَاحْفَظْهَا، وَإِنْ أَمَتَهَا فَاغْفِرْ لَهَا، اَللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতা খালাকতা নাফসি, ওয়া আনতা তাতাওয়াফফাহা, লাকা মামাতুহা ওয়া মাহইয়াহা, ইন আহইয়াইতাহা ফাহফাজহা ওয়া ইন আমাত্তাহা ফাগরিফর লাহা। আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফিয়াহ ।

অর্থ: হে আল্লাহ আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আপনিই মৃত্যু দান করবেনা। আপনার হাতে জীবন-মরণ। আপনি নিরাপদে জীবিত রাখুন। আপনি ক্ষমাসুন্দর মৃত্যু দিন। আপনার কাছে সবকিছুর নিরাপত্তা চাই । এরপর আবদুল্লাহ বিন উমর বলেন, এই দুআটি আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি।২৪

*  হজরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত হয়েছে; যাতে পূর্বের “সকাল-সন্ধ্যার” আমলের অধ্যায়ে হজরত আবু বকর রাদি -এর ঘটনায় উল্লেখ হয়েছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এ দুআটি সকাল-সন্ধ্যা ও ঘুমের সময় পড়বে-

اللَّهُمَّ فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ، عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ، رَبَّ كُلِّ شَيْءٍ وَمَلِيْكَهُ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِي وَشَرِّ الشَّيْطَانِ وَشِرْكِهِ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ফাতিরাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি, আলিমাল গাইবি ওয়াশ শাহাদাহ। রাব্বা কুল্লি শাইয়িন ওয়া মালিকাহ, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লা আনতা। আউজুবিকা মিন শাররি নাফসি, ওয়া শাররিশ শা‍ইতানি ওয়া শিরকিহ।

অর্থ: হে আল্লাহ, আসমান-যমিনের হে আদিস্রষ্টা, দৃশ্য-অদৃশ্যের হে মহা জ্ঞাতা। সকল বস্তুর মালিক ও প্রতিপালক! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। আমি নিজের কুপ্রবৃত্তির অনিষ্ট থেকে, শয়তানের অনিষ্ট থেকে এবং শিরিক থেকে আপনার আশ্রয় চাই। ২৫

*  হজরত শাদ্দাদ বিন আউস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَأْوِي إِلى فِرَاشِهِ فَيَقْرَأُ سُوْرَةً مِنْ كِتَابِ اللَّهِ تَعَالَى حِيْنَ يَأْخُذُ مَضْجَعَهُ إِلَّا وَكَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ بِهِ مَلَكًا، لَا يَدْعُ شَيْئًا يَقْرَبُهُ يُؤْذِيْهِ يَهُبُّ مَتَى

অর্থ: কোন মুসলমান যখন ঘুমানোর সময় বিছানায় গিয়ে কুরআনের কোন সুরা তিলাওয়াত করে, আল্লাহ তাআলা তাকে হেফাজত করার জন্য একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করে দেন। কষ্টদায়ক কোন কিছুই তার নিকটবর্তী হতে দেয় না । সে যখন জাগ্রত হতে চায়, তখন জাগিয়ে দেয়। ২৬

*  হজরত জাবের রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

إنَّ الرَّجُلَ إِذَا أَوَى إِلى فِرَاشِهِ ابْتَدَرَهُ مَلَكُ وَشَيْطانُ، فَقَالَ الْمَلَكُ: اللَّهُمَّ اخْتِمُ بِخَيْرٍ، فَقَالَ الشَّيْطَانُ : اَخْتِمْ بِشَرِّ، فإنْ ذَكَرَ اللهَ تَعَالَى ثُمَّ نَامَ، بَاتَ الْمَلَكُ

অর্থ: মানুষ যখন ঘুমানোর জন্য বিছানায় যায়, তখন তার কাছে ফেরেশতা ও শয়তান আসে। ফেরেশতা এসে বলেন, 'হে আল্লাহ, তুমি তার শেষ ভালো করো'। আর শয়তান বলে, হে আল্লাহ তুমি তার শেষ পরিণতি মন্দ করো। যদি ঐ ব্যক্তি আল্লাহর জিকির করে ঘুমায়, তাহলে ফেরেশতা তাকে পাহারা দেয়।২৭

*  হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শয়ন করতেন, তখন এ দুআ পড়তেন-

اللَّهُمَّ بِاسْمِكَ رَبِّي وَضَعْتُ جَنْبِي فَاغْفِرْ لِي ذَنْبِيْ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বিসমিকা ওয়াযাইতু যাম্বি, ফাগফিরলি যাম্বি

অর্থ: হে আল্লাহ, আমি তোমার নামে ঘুমাচ্ছি, আমার গুনাহ মাফ করে দিন। ২৮
* হজরত আবু উমামা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-

مَنْ أَوَى إِلى فِرَاشِهِ طَاهِراً، وَذَكَرَ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ حَتَّىٰ يُدْرِكَهُ النُّعَاسُ لَمْ يَتَقَلَّبْ سَاعَةً مِنَ اللَّيْلِ يَسْأَلُ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ فِيْهَا خَيْراً مِنْ خَيْرِ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، إِلَّاأعْطَاهُ إيَّاهُ.

অর্থ: যে ব্যক্তি পবিত্র হয়ে বিছানায় যায়, তন্দ্রা আসা পর্যন্ত আল্লাহর জিকির করে। রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হওয়ার পর আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের যে কল্যাণ চাইবে, আল্লাহ তাকে তাই দিবেন ।২৯

(২৪৩) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিছানায় গিয়ে এ দুআ পড়তেন-

اللهُمَّ أَمْتِعْنِي بِسَمْعِي وَبَصَرِي، وَاجْعَلْهُمَا الْوَارِثَ مِنِي، وَانْصُرْنِي عَلَى عَدُوّي وَأَرِنِي مِنْهُ تَأْرِي، اَللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَمِنَ الْجُوعِ فَإِنَّهُ بِئْسَ الضَّجِيعُ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আমতি'নি বি- সাময়ি ওয়া বাসারি, ওয়াযআলহাল ওয়ারিসা মিন্নি, ওয়ান সুরনি আলা আদুউয়ি ওয়া আরিনি সা'রি। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন গালাবাতিদ্দাইনি ওয়া মিনাল জুয়ি ফা ইন্নাহু বি’সাদ দাযিউ ।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে কান এবং চোখ দিয়ে উপকৃত করুন। এ দুটিকে আমৃত্য সুস্থ ও নিরাপদ রাখুন। আমাকে আমার ওপর জুলুমকারীর বিরুদ্ধে মদদ করুন এবং তার থেকে আমার বদলা নিন। মুক্তি চাই ঋণগ্রস্থতা থেকে এবং ক্ষুধা থেকে । কেননা তা বড়ই খারাপ নিত্যসঙ্গী। ৩০

*  হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত-

مَا كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُنْذُ صَحْبَتِهِ يُنَامُ حَتَّىٰ فَارَقَ الدُّنْيَا حَتى يَتَعَوَّذُ مِنَ الْجُبْنِ وَالْكَسْلِ وَالسَّآمَةِ وَالْبُخْلِ وَسُوْءِ الْكِبَرِ وَسُوْءِ الْمَنْظَرِ فِي الْأَهْلِ وَالْمَالِ وَعَذَابِ الْقَبْرِ وَمِنَ الشَّيْطَانِ وَشِرْكِم.

অর্থ: আমি তার সঙ্গী হওয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাঁকে দেখেছি, তিনি ঘুমের আগে- কাপুরুষতা, অলসতা, কৃপণতা, অতিশয় বার্ধক্য, পরিবার ও সম্পদের মন্দ দৃশ্য, কবরের শাস্তি, শয়তান এবং তার শিরিকি কর্মকাণ্ড থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন । ৩১

*  হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি ঘুমানোর পূর্বে এই দুআ পড়তেন। এই দুআ পড়ার পর সকাল পর্যন্ত বা ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া পর্যন্ত আর কারো সাথে কথা বলতেন না। দুআটি হল-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ رُؤْيَا صَالِحِةٌ صَادِقَةٌ غَيْرَ كَاذِبَةٌ، نَافِعَةٌ غَيْرَ ضَارَّةٍ.

অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে বাস্তবসম্মত ও নেক স্বপ্নের আবেদন করছি, যা সত্য হবে; মিথ্যা হবে না। উপকারী হবে; ক্ষতিকারক হবে না । ৩২

*  হজরত আলি রাদি. থেকে বর্ণিত-

مَا كُنْتُ أَرَى أَحَدًا يَعْقِلُ يَنَامُ قَبْلَ أَنْ يَقْرَأَ الْآيَاتِ الثَّلَاثَ الْأَوَاخِرَ مِنْ سُوْرَةِ الْبَقَرَةِ.

অর্থ: তিনি বলেন, আমি প্রাপ্তবয়স্ক কাউকে দেখিনি যে সুরা বাকারার শেষ তিন আয়াত না পড়ে ঘুমিয়েছে। ৩৩

*  হজরত আলি রাদি থেকে আরো বর্ণিত আছে-

مَا أَرَى أَحَدًا يَعْقِلُ دَخَلَ فِي الْإِسْلَامِ يَنَامُ حَتَّىٰ يَقْرَأُ آيَةَ الْكُرْسِي.

অর্থ: কোন বুদ্ধিমান মুসলিম আয়াতুল কুরসি না পড়ে ঘুমায় না। 

*  হজরত ইবরাহিম নাখায়ি রহ. বলেন, সাহাবায়ে কেরাম ঘুমানোর সময় সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়তেন। -অন্য বর্ণনায় আছে, সাহাবায়ে কেরাম প্রতিরাতে তিনকুল তিনবার পড়া উত্তম মনে করতেন।

জ্ঞাতব্য যে, এ ব্যাপারে অনেক হাদিস আছে। এখানে যতটুকু উল্লেখ করা হল, তাই আমলকারীর জন্য যথেষ্ট। এরচে বেশি উল্লেখ করিনি। কারণ, পাঠক বিরক্ত হয়ে যেতে পারে। এখানে উল্লিখিত সবগুলোর ওপর আমল করা চাই। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো করবে।


তথ্যসূত্রঃ
০১. সুরা আলে ইমরান: ১৯০-৯১।
০২. সহিহ মুসলিম: ২৭১১, সহিহ বুখারি: ৬৩১২, সুনানে আবু দাউদঃ ৫০৩৯।
০৩. সহিহ বুখারি: ৬৩১৮, সহিহ মুসলিম: ২৭২৭, সুনানে আবু দাউদ: ৫০৬২, সুনানে তিরমিজি:
০৪, সহিহ বুখারি: ৬৩২০, সহিহ মুসলিম: ২৭১৪, সুনানে আবু দউদ: ৫০৫০, সুনানে তিরমিজি :
৩৩৯৮ ।
০৫. সহিহ বুখারি; ৬৩১৯, সহিহ মুসলিম: ২১৯২, সুনানে আবু দাউদ: ৩৯০২, সুনানে তিরমিজি: ৩৩৯৯, মুয়াত্তা মালেক ২/৯৪২-৮৪৩।
০৬, সহিহ বুখারি: ৫০১৭, সহিহ মুসলিম: ২১৯২ ।
০৭. সহিহ বুখারি: ৫০০৯, সহিহ মুসলিম: ৮০৮, সুনানে আবু দাউদ: ১৩৯৭ ।
০৮. সহিহ বুখারি: ৬৩১৩, সহিহ মুসলিম: ২৭১০, সুনানে আবু দাউদ: ৫০৪৬, সুনানে তিরমিজি : ৩৩৯১, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৮৭৬।
০৯. সহিহ বুখারি: ২৩১১, আমাল: ৯৫৯, নাসাঈ।
১০. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৪৫, সুনানে তিরমিজি: ৩৩৯৫, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৮৭৭, আমাল : ৭৬১-৭৬২, নাসাঈ ।
১১. সহিহ মুসলিম: ২৭১৩, সুনানে আবু দাউদ: ৫০৫১, সুনানে তিরমিজি: ৩৩৯৭, সুনানে ইবনে মাজাহ: ২৮৭৩, আমাল: ৭৯০, নাসাঈ ।
১২. সহিহ মুসলিম: ২৭১৫, সুনানে আবু দাউদ: ৫০৫৩, সুনানে তিরমিজি: ৩৩৯৬।
১৩. সহিহ মুসলিম: ২৭১৫, সুনানে আবু দাউদ: ৫০৫৩, সুনানে তিরমিজি: ৩৩৯৬, আমাল : ৭৯৯, নাসাঈ, আমাল: ৭১১, ইবনুস সুন্নি।
১৪. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৫৪, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৫৪০।
১৫. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৫৫, সুনানে তিরমিজি: ৩৪০০, সহিহ ইবনে হিব্বান : ২৩৬৩, আমাল: ৮০১-৮১৪, নাসাঈ ।
১৬. অথবা ইয়ুসাব্বিহু কিংবা সুবহানা শব্দ আছে। এমন সুরা ৭টি, যথা: সুরা বনি ইসরাঈল, হাদিদ, হাশর, সাফ, জুমুআ, তাগাবুন এবং সুরা আলা।
১৭. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৫৭, সুনানে তিরমিজি: ৩৪০২, আমাল : ৭১৩-৭১৪, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ ৪/১২৮।
১৮. সুনানে তিরমিজি: ৩৪০২, মুসনাদে আহমাদ ৬/৬৮, মুসতাদরাকে হাকেম ২/৪৩৪।
১৯. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ১৫৮, ইবনুস সুন্নি।
২০. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৫৮, আমাল: ৭২৩, ইবনুস সুন্নি, আমাল : ৭৯৮, নাসাঈ। 
২১. সুনানে তিরমিজি: ৩৩৯৪। হাদিসটি আলযোগ্য দুর্বল।
২২. সুনানে আবু দাউদ: ৩৭৯৮, মুসনাদে আহমাদ ৩/৪৪২, আমাল: ৫৯৩, নাসাঈ।
২৩. ইবনুস সুন্নি: ৭১৮, হাদিসটি খুবই দুর্বল।
২৪. সহিহ মুসলিম: ২৭১২, মুসনাদে আহমাদ ২/৭৯, আমাল : ৭২১, ইবনুস সুন্নি।
২৫. সুনানে তিরমিজি: ৩৩৮৯, সুনানে আবু দাউদ: ৫০৬৭।
২৬. সুনানে তিরমিজি: ৩৪০৭, আমাল : ৭৪৬, ইবনুস সুন্নি, আমাল: ৮১২, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ ৪/১২৫।
২৭. আমাল: ৭৫০, ইবনুস সুন্নি, আদাবুল মুফরাদ: ১২১২, বুখারি, আমল: ৮৫৩, নাসাঈ, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৫৪৮, আদ্দুআ ২২০, ২২১, ২৮৫, তাবারানি, মুসনাদে আবু ইয়ালা ৩/৩৪৬, মাওয়ারিদ: ২৩৬২।
২৮. আমাল: ৭১৪, ইবনুস সুন্নি, আমাল: ৭৭০, নাসাঈ ।
২৯. আমাল: ৭১৯, ইবনুস সুন্নি।
৩০. আমাল: ৭৩৪, ইবনুস সুন্নি।
৩১. আমাল: ৭৩৬, ইবনুস সুন্নি। হাদিসটি খুবই দুর্বল।
৩২. ইবনুস সুন্নি: ৭৪৩।
৩৩. হাদিসটি ইমাম আবু বকর সুলাইমান বিন আশআস তার "শরিয়াতুল কারি” কিতাবে দুটি সূত্রে উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে একটি সূত্র সহিহ।- আফুতুহাত ৩/১৭০।




****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url