সকাল-সন্ধ্যার দুআ || সকাল-সন্ধ্যার ফজিলতপূর্ণ আমল || সকাল-সন্ধ্যায় পাঠের দুআ







(শাইখুল ইসলাম মুহিউদ্দীন আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবনে শারফ আন-নববী রহ. রচিত “আল আযকার” গ্রন্থ অবলম্বনে)


সকাল-সন্ধ্যার দুআ


সকাল-সন্ধ্যার দুআ বা সকাল-সন্ধ্যার ফজিলতপূর্ণ আমল বা সকাল-সন্ধ্যায় পাঠের দুআ নামক এই অধ্যায়টি অনেক ব্যাপক। আল আযকার কিতাবে সকাল-সন্ধ্যার দুআ’র চেয়ে বিস্তৃত কোন অধ্যায় নেই। সকাল-সন্ধ্যার দুআ অধ্যায়ে সংক্ষিপ্তাকারে কিছু আমল উল্লেখ করব। যে ব্যক্তি সবগুলো আমল করতে পারে সে তো এক মহা নেয়ামত ও আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করলো। তার জন্য রয়েছে বড় সুসংবাদ। আর যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যার ফজিলতপূর্ণ আমলের সবগুলো আমল করতে পারবে না সে অন্তত কোন একটি ছোট আমল হলেও করবে। এ অধ্যায়ের মূল হল পবিত্র কুরআনের আয়াত ও বিভিন্ন হাদিসগ্রন্থ-

ইরশাদ হয়েছে:

وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا.

অর্থ: তুমি তোমার প্রভুর সপ্রশংস তাসবিহ পাঠ করো সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে। ০১

وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِبْكَارِ.

অর্থ: সকাল-সন্ধ্যায় তোমার প্রভুর প্রশংসায় তাসবিহ পাঠ করো । ০২

وَاذْكُرْ رَّبَّكَ فِي نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَخِيفَةً وَدُوْنَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ

অর্থ: তোমার প্রভুর জিকির করো সকাল-সন্ধ্যায় বিনয় ও ভীতির সাথে মনে মনে এবং অনুচ্চস্বরে মুখে। ০৩

وَلَا تَطْرُدِ الَّذِينَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدُوةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ.

অর্থ: যারা তাদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে সকাল ও সন্ধ্যায় তাকে ডাকে তাদেরকে তুমি নিজের মজলিস থেকে বের করে দিয়ো না । ০৪

وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدُوةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ.

অর্থ: আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে আহবান করে। ০৫

في بُيُوتٍ أَذِنَ اللهُ أَنْ تُرْفَعَ وَ يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ يُسَبِّحُ لَهُ فِيْهَا بِالْغُدُوِّ وَ الْاصَالِ رِجَالٌ لَّا تُلْهِيهِمْ تِجَارَةٌ وَّلَا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ.

অর্থ: আল্লাহর ঘরগুলোকে উচ্চ মর্যাদা দিতে এবং তাঁর নাম উচ্চারণ করতে আদেশ করেছেন, তাতে সকাল ও সন্ধ্যায় তাসবিহ পাঠ করে। এমন লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বেচাকেনা আল্লাহর স্বরণ, নামাজ কায়েম ও জাকাত থেকে গাফেল করতে পারে না।

إِنَّا سَخَرْنَا الْجِبَالَ مَعَهُ يُسَبِّحْنَ بِالْعَشِيِّ وَ الْإِشْرَاقِ.

অর্থ: আমি পর্বতমালাকে নিয়োজিত করেছিলাম, যাতে তারা তার সঙ্গে সন্ধ্যাবেলা ও সূর্যোদয়কালে তাসবিহ পাঠ করে । ০৬

সাইয়েদুল ইস্তিগফার


* হজরত শাদ্দাদ বিন আউস রাদি. থেকে বর্ণিত। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এটি হল, সাইয়েদুল ইস্তিগফার (শ্রেষ্ঠ ইস্তিগফার)। যে ব্যক্তি এই ইস্তেগফার সন্ধ্যায় পড়বে, ঐ রাতে তার মৃত্যু হলে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর সকালবেলা পড়লেও ওই দিন মারা গেলে সে জান্নাতে যাবে। সাইয়েদুল ইস্তিগফার হল-

اللهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَني وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوْءُ بِذَنْبِي، فَاغْفِرْ لِي ؛ فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلَّا أَنْتَ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা, খালাকতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া'দিকা মাসতাতা'তু। আউজুবিকা মিন শাররি মা সানা'তু, আবুউ লাকা বিনি'মাতিকা আলাইয়া । ওয়া আবুউ বিজাম্বি ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আনতা । 

অর্থ: ওহে আল্লাহ, আপনি আমার রব, আপনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আমি আপনার গোলাম। আপনাকে দেয়া ওয়াদা-অঙ্গীকার পূরণে আমি সাধ্যমতো সচেষ্ট। আমি নিজের কৃতকর্মেও অনিষ্ট থেকে আপনার নিকট পানাহ চাই। আমার ওপর আপনার সমুদয় অনুগ্রহ নিয়ে আমি হাজির, আমার পাপগুলো নিয়েও আমি হাজির । আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন, আপনি ব্যতীত কেউ তো আর ক্ষমা করতে পারবে না।০৭

সবচেয়ে উত্তম দুআ


*  হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

مَنْ قَالَ حِيْنَ يُصْبِحُ وَحِيْنَ يُمْسِي : سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ. مِائَةَ مَرَّةٍ - لَمْ يَأْتِ أَحَدٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِأَفْضَلَ مِمَّا جَاءَ بِهِ ، إِلَّا أَحَدٌ قَالَ مِثْلَ مَا قَالَ، أَوْ زَادَ عَلَيْهِ.

অর্থ: যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় এই দুআ ১০০ বার পড়বে, কেয়ামতের দিন তার চেয়ে উত্তম কেউ থাকবে না। তবে হ্যাঁ, ঐ ব্যক্তি তার চেয়ে উত্তম হবে, যে এই পরিমাণ পড়েছে বা এরচে বেশি পড়েছে।

দুআটি হল-

سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ.

উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি ওয়াবি হামদিহি ।


অর্থ: আমি সংপ্রশংস আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি। সুনানে আবু দাউদের বর্ণনায় আছে-

سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيْمِ وَبِحَمْدِهِ.

উচ্চারণ: সুবাহানাল্লাহিল আজিম ওয়াবি হামদিহি ।

অর্থ: আমি সংপ্রশংস মহান আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি। ০৮

*  হজরত আবদুর রহমান বিন খুবাইব রাদি থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে-

خَرَجْنَا فِي لَيْلَةِ مَطَرٍ وَظُلْمَةٍ شَدِيدَةٍ نَطْلُبُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِيُصَلِّي لَنَا، فَأَدْرَكْنَاهُ، فَقَالَ: أَصَلَّيْتُمْ؟ . فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا، فَقَالَ: قُلْ. فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا، ثُمَّ قَالَ: قُلْ. فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا، ثُمَّ قَالَ : قُلْ فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا أَقُولُ ؟ قَالَ: قُلْ ( قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ ( وَالْمُعَوَّذَتَيْنِ حِيْنَ تُمْسِي وَحِيْنَ تُصْبِحُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، تَكْفِيكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ.

অর্থ: আমরা বৃষ্টির রজনীতে, প্রচণ্ড অন্ধকারে জামাতে নামাজের জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খোঁজে বের হলাম। আমরা তাঁকে পেলে তিনি আমাকে বললেন, তুমি বলো। আমি কিছুই বললাম না। দ্বিতীয়বার বললেন, তুমি বল। আমি কিছু বললাম না। তৃতীয়বার বললেন, তুমি বল । আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ, কী বলব? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সকাল-সন্ধ্যা তিনবার সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়। তাহলে আল্লাহ তোমাকে সবকিছু থেকে হেফাজত করবেন। – ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান ও সহিহ। ০৯

 হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালে এ দুআ পড়তেন-

اللهُمَّ بِكَ أَصْبَحْنَا وَبِكَ أَمْسَيْنَا، وَبِكَ نَحْيا وَبِكَ نَمُوْتُ، وَإِلَيْكَ النُّشُورُ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বিকা আসবাহনা, ওয়াবিকা আমসাইনা, ওয়াবিকা নাহয়া, ওয়াবিকা নামুতু ওয়া ইলাইকান নুশুর।

অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার কৃপায় সকাল পেয়েছি, আপনারই কৃপায় সন্ধ্যা পাবো। আপনার দয়ায় বেঁচে আছি, আপনার ইশারায় মারা যাবো। আর আপনার কাছেই হবে পুনরুত্থান। আর সন্ধ্যায় বলতেন-

اللَّهُمَّ بِكَ أَمْسَيْنَا، وَبِكَ نَحْيَا وَبِكَ نَمُوْتُ، وَإِلَيْكَ النُّشُوْرُ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বিকা আমসাইনা, ওয়াবিকা নাহইয়া, ওয়াবিকা নামুতু ওয়া ইলাইকান নুশুর

অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার কৃপায় সন্ধ্যা পেয়েছি, আপনারই কৃপায় সকাল পাবো। আপনার দয়ায় বেঁচে আছি, আপনার ইশারায় মারা যাবো। আর আপনার কাছেই হবে পুনরুত্থান। - ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। ১০

শেষরাতে পাঠের দুআ


*  হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে থাকাকালীন শেষরাতে এ দুআ পড়তেন-

سَمَّعَ سَامِعُ بِحَمْدِ اللهِ وَحُسْنِ بَلَائِهِ عَلَيْنَا رَبَّنَا صَاحِبْنَا، وَأَفْضِلْ عَلَيْنَا، عَائِدًا بِاللهِ مِنَ النَّارِ.

উচ্চারণ: সাম্মাআ সামিউন বিহামদিল্লাহি ওয়া হুসনি বালায়িহি আলাইনা, রাব্বানা সাহিব না, ওয়া আফজিল আলাইনা, আয়িজান বিল্লাহি মিনান্নার।

অর্থ: আমরা যে আল্লাহর প্রশংসা করছি এবং আল্লাহ আমাদেরকে বিপদমুক্ত রেখেছেন- উপস্থিতিরা যেন অন্যদের পৌঁছে দেয়। হে আল্লাহ, আমাদেরকে হেফাজত করুন, আমাদের ওপর আপনার অনুগ্রহ নিয়মিত রাখুন। আমরা জাহান্নাম থেকে আপনার আশ্রয় কামনা করি । ১১

সন্ধ্যায় রাসুল (সাঃ) যে দুআ পড়তেন


*  হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সন্ধ্যায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুআ পড়তেন-

أَمْسَيْنَا وَأَمْسَى الْمُلْكُ لِلَّهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ.

উচ্চারণ: আমসাইনা আমসাল মুলকু লিল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহু ।

অর্থ: আমরা সন্ধ্যায় উপনীত হয়েছি। পুরো সৃষ্টিজগত আল্লাহর জন্যে সন্ধ্যায় উপনীত হয়েছে। সকল প্রশংসা আল্লাহরই জন্য। আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই; তিনি একক, তাঁর কোন শরিক নেই ।

বর্ণনাকারী বলেন, এর পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিচের দুআটিও পড়তেন-

لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، رَبِّ أَسْأَلُكَ خَيْرَ مَا فِي هَذِهِ اللَّيْلَةِ وَخَيْرَ مَا بَعْدَهَا، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا فِي هَذِهِ اللَّيْلَةِ وَشَرِّ مَا بَعْدَهَا، رَبِّ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكَسَلِ، وَسُوْءِ الْكِبَرِ، رَبِّ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابٍ فِي النَّارِ، وَعَذَابِ فِي الْقَبْرِ.

উচ্চারণ: লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির । রাব্বি আসআলুকা খাইরা মা ফি হাজিহিল্লাইলাতি ওয়া খাইরা মা বা'দাহা । ওয়া আউজুবিকা মিন শাররি মা ফি হাজিহিল্লাইলাতি ওয়া শাররি মা বা’দাহা। রাব্বি আউজুবিকা মিনাল কাসালি ওয়া সুয়িল কিবারি। আউজুবিকা মিন আজাবিন ফিনারি ওয়া আজাবিন ফিল কাবরি।

অর্থ: সকল প্রশংসা তাঁরই, সকল রাজ্যের মালিক তিনি, তিনিই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। এই রজনী ও এর পরবর্তী কল্যাণের কামনা করি । এই রাতের অকল্যাণ ও পরবর্তী অকল্যাণ থেকে আশ্রয় চাই। অলসতা, অতিশয় বার্ধক্য, কবরের আজাব ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাই। আনুরূপভাবে সকালবেলায় তিনি পড়তেন-

أَصْبَحْنَا وَأَصْبَحَ الْمُلْكُ لِلَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ.

উচ্চারণ: আসবাহনা ওয়াআসবাহাল মুলকু লিল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ, লা- ইলাহা ইল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহু । ১২

সাপ বিচ্ছু থেকে মুক্ত থাকার দুআ


*  হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত-

جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ، مَا لَقِيتُ مِنْ عَقْرَبٍ لَدَغَتْنِي الْبَارِحَةَ قَالَ: أَمَّا لَوْ قُلْتَ حِيْنَ أَمْسَيْتَ : أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ لَمْ تَضُرَّكَ.

অর্থ: এক ব্যক্তি রাসুলের কাছে এসে বললো, গতরাত বিচ্ছু আমাকে দংশন করেছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যদি সন্ধ্যায় নিম্নোক্ত দুআ পড়তে, তাহলে বিচ্ছু তোমার কোন ক্ষতি করতে পারত না । দুআটি হল-

أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ لَمْ تَضُرَّكَ.

উচ্চারণ: আউযু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাকা । 

অর্থ: আল্লাহর পরিপূর্ণ উক্তির মাধ্যমে তার সমস্ত সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় কামনা করি। -ইবনুস সুন্নি তার কিতাবে তিনবার বলার কথা বর্ণনা করেছেন। ১৩

*  আবু দাউদ, তিরমিজিতে সহিহ সনদে আবু হুরায়রা রাদি থেকে বর্ণিত, আবু বকর রাদি. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে সকাল-সন্ধ্যার দুআ শিখিয়ে দিন। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি এ দুআটি সকাল-সন্ধ্যা ও শয়নকালে পড়বে ।

اللهُمَّ فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ، عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ، رَبِّ كُلَّ شَيْءٍ وَمَلِيْكَهُ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِي وَشَرِّ الشَّيْطَانِ وَشِرْكِهِ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ফাতিরাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি, আলিমাল গাইবি ওয়াশ শাহাদাহ। রাব্বা কুল্লি শাইয়িন ওয়া মালিকাহ, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লা আনতা। আউজুবিকা মিন শাররি নাফসি, ওয়া শাররিশ শাইতানি ওয়া শিরকিহ।

অর্থ: হে আল্লাহ, আসমান-যমিনের গে আদিস্রষ্টা, দৃশ্য-অদৃশ্যের হে মহা জ্ঞাতা। সকল বস্তুও মালিক ও প্রতিপালক! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। আমি নিজের কুপ্রবৃত্তির অনিষ্ট থেকে, শয়তানের অনিষ্ট থেকে এবং শিরিক থেকে আপনার আশ্রয় চাই। -তিরমিজি রহ. বলেন, উক্ত হাদিস হাসান সহিহ। ১৪

*  হজরত আবু মালেক আশআরি রাদি. থেকে বর্ণিত আছে। সাহাবায়ে কেরাম সকাল, সন্ধ্যা ও শয়নকালে কী দুআ পড়বে এই মর্মে জিজ্ঞাসা করলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপরোল্লেখিত দুআ পড়তে বলেছেন। তবে উক্ত দুআর সঙ্গে নিচের অংশটি বেশি বলেছেন-

وَأَنْ نَقْتَرِفَ سُوْءَ عَلَى أَنْفُسِنَا أَوْ تَجُرُّهُ إِلَى مُسْلِمٍ.

উচ্চারণ: ওয়া আন রাকতারিফা সুআন আলা আনফুসিনা আউ নাজুররাহু ইলা মুসলিম ।

অর্থ: পাপের মাধ্যমে নিজের ওপর কিংবা কোন মুসলিমের ওপর অবিচার করা থেকে । ১৫

সব ধরনের বিপদাপদ থেকে মুক্ত থাকার দুআ


*  হজরত উসমান বিন আফফান রাদি. থেকে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় নিম্নোক্ত দুআ তিনবার পড়বে, সে সব ধরনের বিপদাপদ থেকে মুক্ত থাকবে-

باسم اللهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيمُ.

উচ্চারণ: বিসমিল্লাহিল্লাহি লা ইয়াদুররু মাআস মিহি শাইয়ুন ফিল আরদি ওয়া ফিস সামায়ি ওয়া হুয়াস সামিউল আলিম ।

অর্থ: দিনের ঐ আল্লাহর নামে, যার নাম সঙ্গে থাকলে আসমান-যমিনের কোন কিছুই কোন ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞানী। - ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান সহিহ। আবু দাউদ শরিফে আরো আছে— তাকে হঠাৎ কোন মসিবত স্পর্শ করতে পারবে না । ১৬

*  হজরত সাওবান রাদি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সন্ধ্যাবেলায় নিম্নোক্ত দুআ পড়বে, আল্লাহ তাআলার দায়িত্ব হল, তাকে খুশি করা। দুআটি হল-

رَضِيْتُ بِاللهِ رَبًّا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا ، وَبِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَبِيًّا.

উচ্চারণ: রাজিতু বিল্লাহি রব্বা ওয়া বিল ইসলামি দীনা, ওয়াবি মুহাম্মাদিন রাসুলা ।

অর্থ: আমি আল্লাহ তাআলাকে রব হিসেবে, ইসলামকে দীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাসুল হিসেবে মেনে সন্তুষ্ট।

- ইমাম তিরমিজি রহ. বলেছেন- হাদিসটি এই সনদে হাসান সহিহ গারিব। নববি রহ. বলেন, তবে আবু দাউদ ও নাসাঈতে গ্রহণযোগ্য সনদে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে। তাই মূল হাদিসটি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত। আলহামদুলিল্লাহ ।

সুনানে আবু দাউদের অন্য বর্ণনায় (ওয়াবি মুহাম্মাদিন রাসুলা: মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাসুল হিসাবে) সুনানে তিরমিজির বর্ণনায় (নাবয়্যিা) বর্ণিত আছে। অতএব, উভয়টি একত্রে (নাবয়্যিান ওয়া রাসুলা: নবি ও রাসুল হিসাবে) পড়া উত্তম। তবে যদি কোন একটি বলে তাহলেও হাদিস অনুযায়ী আমল হয়ে যাবে। ১৭ 

জাহান্নাম থেকে মুক্তির দুআ


*  হজরত আনাস রাদি থেকে নির্ভযোগ্য সনদে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় এই দুআটি একবার পড়বে আল্লাহ তাআলা তার চার ভাগের একভাগ জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি দুইবার পড়বে আল্লাহ তাআলা তার অর্ধেক জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি তিনবার পড়বে চার ভাগের তিন ভাগ মুক্ত করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি চারবার পড়বে আল্লাহ তাআলা তাকে পুরোপুরি জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেবেন। দুআটি হল-

اللهُمَّ إِنِّي أَصْبَحْتُ أُشْهِدُكَ وَأُشْهِدُ حَمَلَةَ عَرْشِكَ، وَمَلَائِكَتَكَ وَجَمِيعَ خَلْقِكَ، أَنَّكَ أَنْتَ اللهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُكَ وَرَسُوْلُكَ .

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসবাহতু উশহিদুকা ওয়া উশহিদু হামালাতা আরশিকা ওয়া মালায়িকাতিকা ওয়া জামিআ খালকিকা। আন্নাকা আতাল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা আনতা ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুকা ওয়া রাসুলুক ।

অর্থ: হে আল্লাহ, আমার সকাল হল আপনাকে সাক্ষী রেখে, আপনার আরশ বহনকারীদের সাক্ষী রেখে, সমস্ত ফেরেশতা ও সমগ্র সৃষ্টিকে সাক্ষী রেখে, এই ব্যাপারে যে, আপনিই আল্লাহ। আপনি ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই । আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন আপনার বান্দা ও রাসুল। ১৮

দিন রাতের শুকরিয়া আদায়ের দুআ


*  হজরত আবদুল্লাহ বিন গান্নাম বায়াায রাদি থেকে নির্ভরযোগ্য সনদে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে নিচের দুআটি পড়বে, সে ঐ দিনের শুকরিয়া আদায় করে ফেলল । আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যাবেলায় এই দুআ পড়বে, সে ঐ রাতের শুকরিয়া আদায় করে ফেলল । দুআটি হল-

اللهُمَّ مَا أَصْبَحَ بي مِنْ نِعْمَةٍ فَمِنْكَ وَحْدَكَ لا شَرِيكَ لَكَ، فَلَكَ الْحَمْدُ وَلَكَ الشُّكْرُ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা মা আসবাহা বি মিন নিমাতিন ফা মিনকা ওয়াহদাকা লা শারিকা লাকা, লাকাল হামদু ওয়া লাকাশ শুক্র।

অর্থ: হে আল্লাহ, এই সকালে আমার মাঝে যত নেয়ামত বিদ্যমান, কিংবার আপনার যে কোন সৃষ্টির মাঝে, তা একমাত্র আপনার দান। আপনার কোন শরিক নেই। সুতরাং সকল প্রশংসা আপনারই, আপনার জন্যই সকল শোকর-কৃতজ্ঞতা।- বিকালে এভাবে বলবে:

اللَّهُمَّ مَا أَمْسَى بِي مِنْ نِعْمَةٍ فَمِنْكَ وَحْدَكَ لا شَرِيكَ لَكَ، فَلَكَ الْحَمْدُ وَلَكَ الشُّكْرُ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা মা আমসা বি মিন নিমাতিন ফা মিনকা ওয়াহদাকা লা শারিকা লাকা, লাকাল হামদু ওয়া লাকাশ শুক্র।

অর্থ: হে আল্লাহ, এই বিকালে আমার মাঝে যত নেয়ামত বিদ্যমান, কিংবার আপনার যে কোন সৃষ্টির মাঝে, তা একমাত্র আপনার দান। আপনার কোন শরিক নেই। সুতরাং সকল প্রশংসা আপনারই, আপনার জন্যই সকল শোকর-কৃতজ্ঞতা।১৯

* হজরত ইবনে উমর রাদি. সহিহ সনদে থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত দুআগুলো সকাল-সন্ধ্যা গুরুত্ব সহকারে পড়তেন। কখনো ছাড়তেন না। দুআগুলো হল-

اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ في دِينِي وَدُنْيَايَ وَأَهْلِي وَمَالِي، اللهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَتِيْ وَآمِنْ رَوْعَاتِي، اللَّهُمَّ احْفَظْنِيْ مِنْ بَيْنِ يَدَيَّ وَمِنْ خَلْفِي، وَعَنْ يَمِيْنِي وَعَنْ شِمَالِي، وَمِنْ فَوْقِي، وَأَعُوْذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِي.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফিয়াতা ফিদ্দুনয়া ওয়াল আখিরাহ, আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াতা ফি দীনি ওয়া দুনয়াইয়া ওয়া আহলি ওয়া মালি। আল্লাহুম্মাস তুর আওরাতি ওয়া আমিন রাওআতি। আল্লাহুম্মাহ ফাজনি মিন বাইনি ইয়াদায়্যা ওয়া মিন খালফি ওয়া আন ইয়ামিনি ওয়া আন শিমালি, ওয়া মিন ফাওকি, ওয়া আউজু বি আজমাতিকা আন উগতালা মিন তাহতি ।

অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষমা ও সুরক্ষা প্রার্থনা করি। হে আল্লাহ, ক্ষমা ও সুরক্ষা প্রার্থনা করি ঈমান-আমলের ক্ষেত্রে ভুল করা থেকে, ইহলোকের কাজে ভুলচুক করা থেকে, সন্তানাদি ও সম্পদের ব্যাপারে অন্যায় কাজ করা থেকে। হে আল্লাহ, আপনি আমার সকল বিচ্যুতি ঢেকে দাও, সকল শঙ্কা নিরাপত্তায় বদলে দাও। আমাকে আমার সামনের, পিছনের, ডানের-বাঁয়ের এবং উপরের দিকের সকল বিপদাপাদ থেকে হেফাজত করুন। আর আমাকে নিচের দিকের অতর্কিত বিপদ থেকে আশ্রয় দাও। -হাকেম আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, হাদিসটি সনদের বিবেচনায় সহিহ। ২০

রাসুল (সাঃ) শয়নকালে যে দুআ পড়তেন


*  হজরত আলি রাদি থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শয়নকালে এ দুআ পড়তেন-

اللهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِوَجْهِكَ الْكَرِيمِ، وَكَلِمَاتِكَ التَّامَّةِ، مِنْ شَرِّ مَا أَنْتَ آخِذُ بِنَاصِيَتِهِ، اللّهُمَّ أَنْتَ تَكْشِفُ الْمَغْرَمَ وَالْمَأْثَمَ، اَللَّهُمَّ لَا يُهْزَمُ جُنْدُكَ، وَلَا يُخْلَفُ وَعْدُكَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدَّ مِنْكَ الْجَدُّ، سُبْحَانَكَ وَبِحَمْدِكَ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বি ওয়াজহিকাল কারিম, ওয়াবি কালিমাতিকাত তাম্মাতি মিন শাররি মা আনতা আখিজুন বি নাসিতিহ । আল্লাহুম্মা আনতা তাকশিফুল মাগরামা ওয়াল মাসাম। আল্লাহুম্মা লা য়ুহজামু জুনদুকা ওয়া লা যুখলাফু ওয়া’দুকা, ওয়া লা য়ানফাউ জাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু, সুবহানাকা ওয়াবি হামদিক ।

অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার সম্মানিত সত্তা এবং পূর্ণাঙ্গ গুণাবলীর মাধ্যমে সেসব অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই, যার চাবিকাঠি আপনার হাতে। হে আল্লাহ, আপনিই অপরাধ ও ঋণ থেকে মুক্তি দেন। হে আল্লাহ, আপনার বাহিনী পরাস্ত হয় না এবং আপনার অঙ্গীকার ভঙ্গ হয় না। আর আমল ছাড়া সামর্থ্যবানের সামর্থ্য কোন কাজে আসবে না। আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করি । ২১

গোলাম আযাদের সওয়াব


*  হজরত আবু আইয়াশ রাদি থেকে নির্ভরযোগ্য সনদে বর্ণিত আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি সকালে নিম্নোক্ত দুআ পাঠ করবে তার জন্য ইসমাইল আলাইহিস সালামের বংশের গোলাম আযাদের সমপরিমাণ সওয়াব দেয়া হবে, তার জন্য দশটি নেকি লেখা হবে, দশটি পাপ মুছে দেয়া হবে, দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তানের অনিষ্ট থেকে নিরাপদে থাকবে। আর যদি সন্ধ্যায় দুআটি পড়ে তাহলে সকাল পর্যন্ত অনুরূপ হবে। দুআটি হল-

لا إلهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির ।

অর্থ: আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তার কোন অংশীদার নেই । সকল আধিপত্য তারই, তারই সকল প্রশংসা। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান । ২২

*  হজরত আবু মালেক আশআরি রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে । তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সকালবেলা এ দুআটি পড়বে-

أَصْبَحْنَا وَأَصْبَحَ الْمُلْكُ لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، اَللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ هَذَا الْيَوْمِ ؛ ، وَنَصْرَهُ وَنُوْرَهُ وَبَرَكَتَهُ وَهُدَاهُ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا فِيْهِ وَشَرِّ مَا بَعْدَهُ. فَتْحَهُ :

উচ্চারণ: আসবাহনা ওয়া আসবাহাল মুলকু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আল্লাহুম্মা আসআলুকা খাইরা হাজাল ইয়াউমি ফাতহাহু ওয়া নাসরাহু ওয়া নুরাহু ওয়া বারাকাতাহু ওয়া হুদাহু। ওয়া আউজুবিকা মিন শাররি মা ফিহি ওয়া শাররি মা বা'দাহু।

অর্থ: আমরা সকালে উপনীত হয়েছি এবং সমগ্র পৃথিবী ঐ আল্লাহর অধীনে সকাল লাভ করেছে, যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক। হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট এই দিনের জয়, শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্য, এই দিনের নুর, বরকত ও হেদায়াত প্রার্থনা করি। আর এই দিন ও পরবর্তী দিনের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় কামনা করি। -আর সন্ধ্যা বেলায়ও উক্ত দুআ পড়বে।২৩ 

এভাবে পড়বে:

أَمْسَيْنَا وَأَمْسَى الْمُلْكُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ هَذِهِ اللَّيْلَةِ ؛ فَتْحَها وَنَصْرَهَا وَنُوْرَهَا وَبَرَكَتَهَا وَهُدَاهَا، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا فِيْهَا وَشَرِّ مَابَعْدَهَا.

উচ্চারণ: আমসইনা ওয়া আমসাল মুলকু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আল্লাহুম্মা আসআলুকা খাইরা হাজিহিল্লাইলাতি ফাতহাহা ওয়া নাসরাহা ওয়া নুরাহা ওয়া বারাকাতাহা ওয়া হুদাহা। ওয়া আউজুবিকা মিন শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা বা'দাহা ।

অর্থ: আমরা বিকালে উপনীত হয়েছি এবং সমগ্র পৃথিবী ঐ আল্লাহর অধীনে বিকাল লাভ করেছে, যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক। হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট এই রাতের জয়, শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্য, এই রাতের নুর, বরকত ও হেদায়াত প্রার্থনা করি। আর এই রাত ও পরবর্তী রাতের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় কামনা করি।

*  হজরত আবদুর রহমান বিন আবু বাকরাহ রহ. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি তার পিতা আবু বাকরাহ রাদি. এর কাছে জিজ্ঞাস করলেন, হে আব্বাজান! আপনাকে আমি প্রতিদিন সকালবেলা এ দুআ পড়তে শুনি। আপনি সকালে এ দুআটি তিনবার পড়েন; সন্ধ্যায় তিনবার পড়েন। তখন পিতা আবু বাকরাহ রাদি. বললেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এরূপ পড়তে শুনেছি। তাই আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুকরণকে পছন্দ করি। দুআটি হল-

اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَدَنِي، اللهُمَّ عَافِنِي فِي سَمْعِي، اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَصَرِي، اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ، اَللّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، لَا إِلَهَ إِلَّا

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি, আল্লাহুম্মা আফিনি ফি সাময়ি, আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাসারি। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাকরি। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবরি, লা ইলাহা ইল্লা আনতা ।

অর্থ: হে আল্লাহ, আমার দেহে সুরক্ষা দাও, আমার কানে সুরক্ষা দাও এবং সুরক্ষা দাও আমার চোখে। হে আল্লাহ, কুফর ও দারিদ্র থেকে আপনার আশ্রয় কামনা করি। হে আল্লাহ, কবরের আযাব থেকে আপনার আশ্রয় কামনা করি। আপনি ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই । ২৪

কল্যাণ লাভের দুআ


*  হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালবেলা নিচের আয়াতটি পড়বে, সে ঐ দিনের ছুটে যাওয়া যাবতীয় কল্যাণ পেয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি বিকেলে পড়বে, সে ঐ রাতের ছুটে যাওয়া যাবতীয় কল্যাণ পেয়ে যাবে। আয়াতটি হল-

فَسُبْحَنَ اللَّهِ حِيْنَ تُمْسُونَ وَحِيْنَ تُصْبِحُوْنَ ﴿۱۷﴾ وَلَهُ الْحَمْدُ فِي السَّمَوتِ وَالْأَرْضِ وَعَشِيًّا وَ حِيْنَ تُظْهِرُوْنَ ﴿۱۸﴾ يُخْرِجُ
الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ
الْمَيِّتَ مِنَ الْحَقِّ وَيُحْيِ الْاَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَكَذَلِكَ تُخْرَجُونَ ﴿١٩

অর্থ: অতএব, তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা স্বরণ করো সন্ধ্যায় ও সকালে। নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে এবং অপরাহ্নে ও মধ্যাহ্নে তাঁরই প্রশংসা। তিনি মৃত থেকে জীবিতকে এবং জীবিত থেকে মৃতকে বহির্গত করেন এবং শুকয়ে যাওয়ার পর ভূমিকে পুনরুজ্জীবিত করেন। আর এভাবেই তোমরা পুনরুত্থিত হবে।২৫ 
-ইমাম আবু দাউদ রহ. উক্ত হাদিসকে যাঈফ বলেননি। ইমাম বুখারি রহ. “তারিখুল কাবির” নামক কিতাবে উক্ত হাদিসকে দুর্বল বলেছেন । ২৬

নিরাপত্তা লাভের দুআ


*  নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক কন্যা থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, তুমি সকালে এই দুআটি পড়বে। যে ব্যক্তি সকালে এ দুআটি পড়বে, সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে নিরাপত্তা প্রদান করা হবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় পড়বে সকার পর্যন্ত তাকে নিরাপত্তা প্রদান করা হবে। দুআটি হল-

سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ، لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ ، مَا شَاءَ اللَّهُ كَانَ وَمَا لَمْ يَشَأْ لَمْ يَكُنْ، أَعْلَمُ أَنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرُ، وَأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا.

উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি ওয়াবি হামদিহি, লা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ, মা শা আল্লাহু কানা ওয়া লাম ইয়াশা' লাম ইয়াকুন। আ'লামু আন্নাল্লাহা আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির, ওয়া আন্নাল্লাহা কাদ আহাদা বিকুল্লি শাইয়িন ইলমা ।

অর্থ: আমি আল্লাহ তাআলার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করছি, আল্লাহ ছাড়া কারো কোন শক্তি নেই। তিনি যা চান তাই হয় এবং যা চান না তা হয় না। আমার বিশ্বাস যে, আল্লাহ তাআলা সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান এবং তিনি নিজ জ্ঞান দ্বারা সবকিছুকে বেষ্টন করে আছেন । ২৭

টেনশন দূর ও ঋণ মুক্তির দুআ


*  হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদি. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, একবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করে একজন আনসারি ব্যক্তিকে বসে থাকতে দেখলেন। তাকে আবু উমামা বলে ডাকা হতো। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবু উমামা, তুমি নামাজের সময় ছাড়া মসজিদে বসে আছো যে? তিনি বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ, ঋণ ও দায়দায়িত্বের টেনশনের কারণে বসে আছি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি কি তোমাকে এমন দুআ শিখিয়ে দেবো? যে দুআ পড়লে আল্লাহ তোমার টেনশন দূর করে দেবেন ও ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা করে দেবেন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ, অবশ্যই। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি সকাল-বিকাল এ দুআ পড়বে। আবু উমামা রাদি. বলেন, আমি উক্ত আমল করেছি। ফলে আল্লাহ তাআলা আমার দুশ্চিন্তা ও টেনশন দূর করে দিয়েছেন ও ঋণ পরিশোধ করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। দুআটি হল-

سُبْحَانَ اللهِ، وَبِحَمْدِهِ، لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ ، مَا شَاءَ اللَّهُ كَانَ وَمَا لَمْ يَشَأْ لَمْ يَكُنْ، أَعْلَمُ أَنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، وَأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا. اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَقَهْرِ الرَّجَالِ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাজান, ওয়া আউজুবিকা মিনাল আযজি ওয়াল কাসাল, ওয়া আউজুবিকা মিনাল যুবনি ওয়াল বুখল, ওয়া আউজুবিকা মিন গালাবাতিদ্দাইনি ওয়া কাহরির রিজাল। 

অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার কাছে দুঃখ-দুশ্চিন্তা থেকে পানাহ চাই, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে মুক্তি চাই, ভীরুতা ও কৃপণতা থেকে মুক্তি চাই এবং ঋণগ্রস্থতা ও মানুষের বলপ্রয়োগের শিকার হওয়া থেকে পানাহ চাই । ২৮

*  হজরত আবদুল্লাহ বিন আবজা রাদি থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালে এ দুআ পড়তেন-

أَصْبَحْنَا عَلَى فِطْرَةِ الْإِسْلَامِ، وَكَلِمَةِ الْإِخْلَاصِ، وَدِينِ نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَعَلَى مِلَّةِ أَبِيْنَا إِبْرَاهِيْمَ حَنِيفًا مُسْلِمًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ.

উচ্চারণ: আসবাহনা আলা ফিতরাতিল ইসলামি ওয়া কালিমাতিল ইখলাসি, ওয়া দীনি নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা, ওয়া আলা মিল্লাতি আবিনা ইবরাহিমা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা, হানিফান ওয়া মুসলিমান ওয়া আনা মিনাল মুশরিকিন।

অর্থ: আমাদের সকাল হল স্বভাবধর্ম ইসলামের ওপর, কালিমায়ে তাইয়েবার ওপর, আমামের নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনীত ধর্মের ওপর এবং আমাদের পিতা ইবরাহিম আলাইহিস সালামের মিল্লাতের ওপর, যিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম। আর আমি মুশরিক নই ।২৯

*  হজরত আবদুল্লাহ বিন আবু আউফা রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকাল বেলা এ দুআ পড়তেন-

أصْبَحْنَا وَأَصْبَحَ الْمُلْكُ لِلهِ عَزَّ وَجَلَّ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَالكِبْرِياءُ وَالْعَظَمَةُ لِلَّهِ، وَالخَلْقُ وَالْأمْرُ وَاللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَما سَكَنَ فِيْهِمَا لِلَّهِ تَعَالَى اللَّهُمَّ اجْعَلْ أَوَّلَهَذَا النَّهَارِ صَلَاحاً، وَأَوْسَطَهُ نَجَاحاً، وَآخِرَهُ فَلَاحاً، يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ.

উচ্চারণ: আসবাহনা ওয়া আসবাহাল মুলকু লিল্লাহি আজ্জা ওয়া জাল্লা, ওয়ালহামদুলিল্লাহ, ওয়াল কিবরিয়াউ ওয়াল আজমাতু লিল্লাহ, ওয়াল খালকু ওয়াল আমরু ওয়াল্লাইলু ওয়ান্নাহারু ওয়া মা সাকানা ফিহিমা লিল্লাহি তাআলা। আল্লাহুম্মাজ আল আওয়ালা হাজান্নাহারি সালাহা, ওয়া আউসাতাহু নাযাহা ওয়া আখিরাহু ফালাহা ইয়া আরহামার রাহিমিন।

অর্থ: আমরা সকালে উপনীত হয়েছি এবং সমগ্র পৃথিবী ঐ আল্লাহর অধীনে সকাল লাভ করেছে। সকল প্রশংসা তাঁরই। সমস্ত অহঙ্কার ও মহত্ত্ব আল্লাহরই। সৃষ্টিকুল, কর্তৃত্ব, রাত-দিন এবং যা এতে শান্তি লাভ করে সবই আল্লাহর সৃষ্টি। হে আল্লাহ, এই দিনের শুরুকে করো কল্যাণময়, মধ্যাংশকে করো সাফল্য এবং শেষাংশকে করো কামিয়াব। হে সর্বাধিক দয়াময় আল্লাহ ।৩০

*  হজরত মার্কিল বিন ইয়াসার রাদি থেকে দুর্বল সনদে বর্ণিত আছে যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

مَنْ قَالَ حِيْنَ يُصْبِحُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ : أَعُوْذُ بِاللهِ السَّمِيعِ الْعَلِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ، وَقَرَأَ ثَلَاثَ آيَاتٍ مِنْ آخِرِ سُوْرَةِ الحَشْرِ، وَكُلَّ اللَّهُ بِهِ سَبْعِينَ أَلْفَ مَلَكٍ يُصَلُّونَ عَلَيْهِ حَتَّى يُمْسِي، وَإِنْ مَاتَ فِي ذَالِكَ الْيَوْمِ مَاتَ شَهِيدًا، وَمَنْ قَالَهَا حِيْنَ يُمْسِي كَانَ بِتِلْكَ الْمَنْزِلَةِ.

অর্থ: যে ব্যক্তি সকালে তিনবার-

أعوذ بالله السميع العليم من الشيطان الرجيم 

উচ্চারণঃ আউযুবিল্লাহিস সামিইল আলিমি মিনাশ শায়তানির রাজিম

অর্থঃ আল্লাহর আশ্রয় কামনা করছি বিতাড়িত শয়তান থেকে!

পড়ার পর সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পড়বে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য সন্ধা পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা নিযুক্ত করে দেন, যারা তার জন্য মাগফেরাতের দুআ করে। সে যদি ঐ দিন মারা যায় তাহলে সে শহিদি মর্যাদা লাভ করবে। অনুরূপভাবে সন্ধ্যায় পড়লেও উক্ত মর্যাদা লাভ করবে। ৩১

*  হজরত মুহাম্মাদ বিন ইবরাহিম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি তার পিতা ইবরাহিম রাদি. থেকে বর্ণনা করেন-

وَجَّهَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سُرْيَةَ، فَأَمَرَنَا أَنْ نَّقْرَأَ إِذَا أَمْسَيْنَا وَأَصْبَحْنَا: (أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا) فَقَرَأْنَا، فَغَنَمْنَا وَسَلَّمْنَا.

অর্থ: ইবরাহিম রাদি. বলেন, এক যুদ্ধের সফরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে ফিরে আমাদেরকে নিম্নোক্ত আয়াতটি সকাল- সন্ধ্যায় পড়ার নির্দেশ দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা উক্ত আয়াত পড়েছিলাম। ফলে গনিমতের মাল লাভ করেছি এবং নিরাপদে ফিরে এসেছি। আয়াতটি হল-

أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَكُمْ عَبَثًا وَ أَنَّكُمْ إِلَيْنَا لَا تُرْجَعُوْنَ.

অর্থ: তোমরা কি ধারণা করো যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার কাছে ফিরে আসবে না? ৩২

*  হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকাল-সন্ধ্যা এ দুআ করতেন-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَجْأَةِ الْخَيْرِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فَجَأَةِ الشَّرِّ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাজআতিল' খাইরি ওয়া আউযুবিকা মিন ফাজআতিশ শাররি ।

অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আকস্মিক কল্যাণ এবং আকস্মিক অকল্যাণ হতে আপনার কাছে পানাহ চাই । ৩৩

*  হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে লক্ষ্য করে বললেন, তুমি আমার উপদেশ অবশ্যই পালন করবে। তুমি সকাল-বিকাল এ দুআ পড়বে-

يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ بِكَ أَسْتَغِيْتُ فَأَصْلِحْ لِي شَأْنِيْ كُلَّهُ وَلَا تَكِلْنِيْ إِلَى نَفْسِي طَرْفَةَ

উচ্চারণ: ইয়া হাইয়ু ইয়া কাইয়ুম, বিকা আসতাগিসু ফা আসলিহ লি শানি কুল্লাহু ওয়া লা তাকিলনি ইলা নাফসি তারফাতা আইন ।

অর্থ: হে চিরঞ্জীব, হে সকল কাজের নিয়ন্ত্রক, আপনারই আশ্রয় চাই। আপনি আমার সকল কাজ সংশোধন করে দিন। ক্ষণিকের জন্যও আমার রক্ষণাবেক্ষণ আমার ওপর ছেড়ে দিয়েন না । ৩৪

*  হজরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাদি থেকে দুর্বল সনদে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বিপদাপদের অভিযোগ করলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সকালবেলা এই দুআটি পড়তে বললেন। ঐ ব্যক্তি উক্ত আমল করল, ফলে তার সকল বিপদাপদ দূর হয়ে গেল। দুআটি হল-

بِسْمِ اللَّهِ عَلَى نَفْسِي وَأَهْلِي وَمَالِيِّ.

উচ্চারণ: বিসমিল্লাহ আলা নাফসি ওয়া আহলি ওয়া মালি ।

অর্থ: আমার, পরিবার এবং সম্পদের ওপর আল্লাহর নাম নিলাম । ৩৫

*  হজরত উম্মে সালামা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালবেলা এ দুআ পড়তেন-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا، وَرِزْقًا طَيِّبًا، وَعَمَلًا مُتَقَبَّلًا.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিয়া ওয়া রিযকান ওয়াসিয়া ওয়া আমালান মুতাকাব্বালা ।

অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার কাছে উপকারী ইলম, হালাল রিজিক ও মাকবুল আমল চাই ৷৩৬

পরিপূর্ণ নেয়ামত লাভের দুআ


*  হজরত ইবনে আব্বাস রাদি থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল তিনবার এই দুআটি পড়বে, আল্লাহ তাকে পরিপূর্ণ নেয়ামত দান করবেন। দুআটি হল-

اللهُمَّ إِنِّي أَصْبَحْتُ مِنْكَ فِي نِعْمَةٍ وَعَافِيَةٍ وَسَتْرٍ، فَأَتِمَّ نِعْمَتَكَ عَلَيَّ وَعَافِيَتَكَ وَسَتْرَكَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসবাহতু মিনকা ফি নিমাতিন ওয়া আফিয়াতিন ওয়া ওয়া সাতরিন, ফা আতিম্মা নিমাতাকা আলাইয়্যা ওয়া আফিয়াতাকা ওয়া সাতরাকা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আখিরাহ।

অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার দেয়া নেয়ামত ও সুস্থতা ও দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখাবস্থায় সকাল করেছি। অতএব, দুনিয়া-আখেরাতে আমার ওপর পরিপূর্ণ নেয়ামত দান করুন। দুনিয়া ও আখেরাতে আমাকে সুস্থতা দান করুন ও আমার দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখুন।৩৭

*  হজরত যুবাইর বিন আওয়াম রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

مَا مِنْ صَبَاحٍ يُصْبِحُ الْعِبَادُ إِلا مُنَادٍ يُنَادِي: سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوْسِ.

অর্থ: প্রতিদিন সকাল বেলা একজন ঘোষক ঘোষণা করেন- আমরা মহান মালিকের পবিত্রতা ও গুণকীর্তন করি।— ইবনুস সুন্নির কিতাবে আছে-

إلا صَرَخَ صَارِخُ أَيُّهَا الخَلَائِقُ سَبِّحُوا الْمَلِكَ القُدُّوسَ.

অর্থ: একজন ঘোষক ঘোষণা করেন- হে সৃষ্টিকুল! তোমরা মহান মালিকের পবিত্রতা ও গুণকীর্তন করো । ৩৮

*  হজরত বুরাইদা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা এই দুআ পড়ল এবং ঐ দিনে/রাতে মারা গেল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। দুআটি এই-

رَبِّيَ اللهُ، تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ لَا إِلهَ إِلَّا هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، لا إلهَ إِلَّا اللهُ العَلِيُّ الْعَظِيمُ، مَا شَاءَ اللهُ كَانَ، وَمَا لَمْ يَشَأْ لَمْ يَكُنْ، أَعْلَمَ أَنَّ اللهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٍ، وَأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْماً.

উচ্চারণ: রাব্বি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি লা ইলাহা ইল্লা হু আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আজিম। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আলিয়্যুল আজিম, মা শা আল্লাহু কানা ওয়া মা লাম ইয়াশা লাম ইয়াকুন । আ'লামু আন্নাল্লাহা আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির, ওয়া আন্নাল্লাহা কাদ আহাতা বিকুল্লি শাইয়িন ইলমা ।

অর্থ: আমার রব আল্লাহ, আমি আল্লাহর ওপর ভরসা করলাম, তিনি ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই। তাঁরই ওপর আমি ভরসা করলাম, তিনি মহা আরশের অধিপতি। মহান মর্যাদাবান আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই । তিনি যা চান হয় এবং যা না চান তা হয় না। আমার বিশ্বাস যে, আল্লাহ তাআলা সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান এবং তিনি নিজ জ্ঞান দ্বারা সবকিছুকে বেষ্টন করে আছেন। ৩৯

*  হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি আবু যামযামের মতো হতে পারো না? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আবু যামযাম কে? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে হল ঐ ব্যক্তি, যে প্রতিদিন সকালে এই দুআটি পড়ত, এরপর কেউ যদি তাকে গালি দিত, তাহলে সে তাকে গালি দিত না। কেউ তার প্রতি জুলুম করলে সে জুলুম করত না। কেউ প্রহার করলে সে প্রহার করত না। দুআটি হল-

اللَّهُمَّ إِنِّي قَدْ وَهَبْتُ نَفْسِي وَعِرْضِيْ لَكَ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি কাদ ওয়াহাবতু নাফসি ওয়া ইরযি লাকা।

অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আমার আত্মা ও মান-সম্মান আপনার কাছে সোপর্দ করলাম। ৪০

*  হজরত আবুদ দারদা রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকাল-বিকাল সাতবার নিম্নোক্ত দুআ পড়বে, আল্লাহ তাআলা তার ইহ-পরকালের যাবতীয় কাজের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবেন । দুআটি হল-

حَسْبِيَ اللَّهُ، لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ، عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ.

উচ্চারণ: হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহু, আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আজিম।

অর্থ: ঐ আল্লাহ আমার জন্য যতেষ্ট, যিনি ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই । তার ওপরই আমি ভরসা করলাম, তিনি মহান আরশের অধিপতি । ৪১ 

*  হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

مَنْ قَرَأَ ( حم ( الْمُؤْمِنِ إِلَى { إِلَيْهِ الْمَصِيرُ ) ، وَآيَةَ الْكُرْسِيِّ حِينَ يُصْبِحُ، حُفِظَ بِهِمَا حَتَّى يُمْسِي، وَمَنْ قَرَأَهُمَا حِيْنَ يُمْسِيْ حُفِظَ بِهِمَا حَتَّى يُصْبِحَ.
حم

অর্থ: যে ব্যক্তি সকালে حم থেকে  إِلَيْهِ الْمَصِيرُ (তথা সুরা মুমিনের আয়াত নং ১-৩ পর্যন্ত) ও আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, সে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিরাপদে থাকবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় পড়বে সে সকাল পর্যন্ত নিরাপদে থাকবে । ৪২

এই হাদিসগুলোই আমাদের উল্লেখ করার ইচ্ছা ছিল। আমলের জন্য এগুলোই যথেষ্ট। আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে তাওফিক কামনা করছি এগুলোর ওপর আমলের জন্য এবং অন্যান্য ভালো বিষয়ের ওপর আমলের জন্য।

*  হজরত তালাক বিন হাবিব রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত, এক ব্যক্তি হজরত আবু দারদা রাদি. এর কাছে এসে বললো, হে আবু দারদা, তোমার ঘর পুড়ে গেছে। তিনি উত্তরে বললেন, না, আমার ঘর পুড়েনি। আল্লাহ তাআলা এমনটি করবেন না। কেননা আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি- যে ব্যক্তি দিনের শুরুতে এই দুআটি পড়বে, সন্ধ্যা পর্যন্ত আল্লাহ তাকে সকল মুসিবত থেকে হেফাজত করবেন। আর যে ব্যক্তি দিনের শেষ ভাগে পড়বে, আল্লাহ তাকে সকাল পর্যন্ত যাবতীয় বিপদ থেকে হেফাযত করবেন। দুআটি হল-

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلهَ إِلَّا أَنْتَ عَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، مَا شَاءَ الله كَانَ، وَمَا لَمْ يَشَأْ لَمْ يَكُنْ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيمِ، أَعْلَمُ أنَّ اللهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٍ، وَأَنَّ اللهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْماً، اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِي، وَمِنْ شَرِّ كُلِّ دَابَّةٍ أَنْتَ آخِذُ بِنَاصِيَتِهَا، إِنَّ رَبِّي عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা, আলাইকা তাওয়াক্কালতু, ওয়া আনতা রাব্বুল আরশিল আজিম। মা শা আল্লাহু কানা ওয়া মা লাম ইয়াশা লাম ইয়াকুন। লা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম। আ'লামু আন্নাল্লাহা আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির, ওয়া আন্নাল্লাহা কাদ আহাদা বিকুল্লি শাইয়িন ইলমা। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন শাররি নাফসি ওয়া মিন শাররি কুল্লি দাব্বাতিন আনতা আখিজুন বিনা সিয়াতিহা। ইন্না রাব্বি আলা সিরাতিন মুস্তাকিম ।

অর্থ: ওহে আল্লাহ, আপনি আমার রব, আপনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। আপনার ওপরই ভরসা করলাম, আপনিই মহান আরশের অধিপতি। আল্লাহ যা চান তাই হয় এবং যা চান না তা হয় না। মহান মর্যাদাবান আল্লাহ ছাড়া আর কারো কোন ক্ষমতা ও শক্তি নেই। আমার বিশ্বাস যে, আল্লাহ তাআলা সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান এবং তিনি নিজ জ্ঞান দ্বারা সবকিছুর বেষ্টনকারী। হে আল্লাহ, আমি আপনার আশ্রয় চাই নিজের কুপ্রবৃত্তির অনিষ্ট থেকে এবং সকল প্রাণীর অনিষ্ট থেকে, যাদের লাগাম আপনার হাতে। নিশ্চয় আমার রব সঠিক পথের প্রদর্শনকারী। ৪৩

অন্য বর্ণনায় আছে- এক সাহাবিকে বলা হল, সেখানে আবু দারদা রাদি. এর নাম উল্লেখ নেই। সেই বর্ণনায় আরো আছে- বার্তাবাহক আগন্তুক ব্যক্তিটি তার কাছে বারবার আসছিলো, আর বলছিলো, আপনি ঘরে যান, আপনার ঘর পুড়ে গেছে। আর সেই সাহাবি বলছিলেন, আমার ঘর পুড়েনি। কেননা আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি- ‘যে ব্যক্তি সকালে উল্লিখিত দুআ পড়বে, তার নিজের, পরিবারের ও সম্পদের কোন ক্ষতি হবে না।' আর আমি আজ সেই দুআ পড়েছি। এরপর সাহাবি বললেন, তোমরা আমার সাথে চল। তখন সাহাবি ও অন্য লোকেরা তাঁর বাড়ির দিকে রওনা দিলেন। বাড়িতে গিয়ে দেখেন, তাঁর ঘরের আশপাশে সব কিছু পুড়ে গেছে; কিন্তু তাঁর ঘরের কিছুই হয়নি।


তথ্যসূত্রঃ
০১. সুরা তা-হা: ১৩০।
০২. সুরা গাফির: ৫৫ ।
০৩. সুরা আ'রাফ: ২০৫। 
০৪. সুরা আনআম: ৫২। 
০৫. সুরা কাহাফ: ২৮। 
০৬. সুরা সোয়াদ ১৮।
০৭, সহিহ বুখারি: ৩৬০৬, সুনানে তিরমিজি: ৩৩৯০, সুনানে নাসাঈ ৮/২৭৯, আমালুল ইয়াউম: ১৯, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ ৪ / ১২২।
০৮, সহিহ বুখারি: ৬৪০৫, সহিহ বুখারি মুসলিম: ২৬৯১, সুনানে আবু দাউদ: ৫০৯১, সুনানে তিরমিজি: ৩৪৬৬, আমালুল ইয়াউম: ৫৬৮, নাসাঈ ।
০৯. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৮২, সুনানে তিরমিজি: ৩৫৭০, সুনানে কুবরা: ৭৮৬০, নাসাঈ। 
১০. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৬৭, সুনানে তিরমিজি: ৩৩৮৮, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৮৬৮, সুনানে নাসাঈ ৮/২৫০, আমালুল ইয়াউম: ৮, নাসাঈ ।
১১. সহিহ মুসলিম: ২৭১৮, সুনানে আবু দাউদ: ৫০৮৬, আমালুল ইয়াউম: ৫৩৬, নাসাঈ, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৪৪৬, আমালুল ইয়াউম: ৫১৪, ইবনুস সুন্নি ।
১২, সহিহ মুসলিম: ২৭২৩, সুনানে আবু দাউদ: ৫০৭১, সুনানে তিরমিজি: ৩৩৮৭, আমালুল ইয়াউম: ২৩, নাসাঈ ।
১৩. সহিহ মুসলিম: ২৭০৯, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৫১৮, আমালুল ইয়াউম: ৫৮৫-৫৯২, নাসাঈ, আমালুল ইয়াউম: ৪৯, ইবনুস সুন্নি।
১৪. সুনানে তিরমিজি: ৩৩৮৯, সুনানে আবু দাউদ: ৫০৬৭, আমালুল ইয়াউম: ১১, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ ২/২৯৭, আলআদাবুল মুফরাদ: ১২০২, ইমাম বুখারি ।
১৫. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৮৩।
১৬. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৮৮, সুনানে তিরমিজি: ৩৩৮৫, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৮৬৯, আমালুল ইয়াউম: ১৫, নাসাঈ।
১৭ .তিরমিজি: ৩৩৮৬, সুনানে আবু দাউদ: ৫০৭২, নাসাঈ : ০৪ আমাল।
১৮. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৬৯, সুনানে তিরমিজি: ৩৪৯৫, মুসনাদে আহমাদ ২/৩৫৪, আমালুল ইয়াউম: ৯, নাসাঈ ।
১৯. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৭৩, আমালুল ইয়াউম: ৭, নাসাঈ : ০৭, মাওয়ারিদ: ২৩৬১। উ.
২০. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৭৪, সুনানে কুবরা: ১০৪০১, নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩৮৭১, মুসতাদরাকে হাকিম: ১/৫১৭।
২১. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৫২, আমালুল ইয়াউম: ৫৬৬, নাসাঈ, আমালুল ইয়াউম: ৪০, ইবনুস সুন্নি ।
২২. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৭৭, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৮৬৮, আমালুল ইয়াউম: ২৭, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ ৪/ ৬০।
২৩. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৭৪।
২৪. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৯০, আমালুল ইয়াউম: ২২, নাসাঈ, আমালুল ইয়াউম: ৬৯, ইবনুস সুন্নি ।
২৫, সুরা রুম: ১৭-১৯।
২৬. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৭৬, আমালুল ইয়াউম: ৫৬, ইবনুস সুন্নি ।
২৭. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৭৫, আমলুল ইয়াউম: ১২, নাসাঈ, আমলুল ইয়াউম: ৪৬, ইবনুস সুন্নি।
২৮. সুনানে আবু দাউদ: ১৫৫৫।
২৯. আমালুল ইয়াউম: ৩৪, ইবনুস সুন্নি, আমালুল ইয়াউম: ০১, নাসাঈ : মুসনাদে আহমাদ ৩/৪০৬। 
৩০. আমালুল ইয়াউম: ৩৮, ইবনুস সুন্নি। হাদিসটি খুবই দুর্বল।
৩১. সুনানে তিরমিজি: ২৯২৩, আমালুল ইয়াউম: ৬৮১, ইবনুস সুন্নি, সুনানে দারিমি ২/৪৫৮। 
৩২. আমালুল ইয়াউম: ৭৭, ইবনুস সুন্নি।
৩৩. আমালুল ইয়াউম: ৩৯, ইবনুস সুন্নি। হাদিসটি খুবই দুর্বল।
৩৪. আমালুল ইয়াউম: ৪৮, ইবনুস সুন্নি, আমালুল ইয়াউম: ৫৭০, নাসাঈ, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৫৪০।
৩৫. আমালুল ইয়াউম: ৫১, ইবনুস সুন্নি।
৩৬. মুসনাদে আহমাদ ৬/২৯৪, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৯২৫, আমালুল ইয়াউম: ১১০, ইবনুস সুন্নি, আমালুল ইয়াউম: ১০২, নাসাঈ ।
৩৭. আমালুল ইয়াউম: ৫৫, ইবনুস সুন্নি। হাদিসটি খুবই দুর্বল।
৩৮. সুনানে তিরমিজি: ৩৫৬৪, আমালুল ইয়াউম: ৬২, ইবনুস সুন্নি। 
৩৯. আমালুল ইয়াউম: ৪২, ইবনুস সুন্নি।
৪০. আমালুল ইয়াউম: ৬৫, ইবনুস সুন্নি।
৪১. আমালুল ইয়াউম: ৭১, ইবনুস সুন্নি।
৪২. সুনানে তিরমিজি: ২৮৮২, আমালুল ইয়াউম: ৭১, ইবনুস সুন্নি।




****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url