দ্বীনি বিষয়ে জিজ্ঞাসা ও জবাব || ইসলামিক প্রশ্ন ও উত্তর (পর্ব - ০২)







পাঠ্যসূচিঃ
  • যারাহ পরিমাণ ঈমান
  • সিজদার মধ্যে মোনাজাত
  • সিজদার মধ্যে মাতৃভাষায় দুআ
  • মৃত মানুষের পাশে কুরআন পড়া
  • সন্তানের আনকমন নাম রাখা
  • স্বর্ণ রৌপ্যের যাকাত
  • অগ্রীম বা বাকিতে যাকাত
  • তারাবীহ নামাযের সময়সীমা
  • স্ত্রীর পরিবর্তে স্বামীর যাকাত আদায়
  • রোযা অবস্থায় বমি হলে

যারাহ পরিমাণ ঈমান


প্রশ্ন-০৮: যারাহ পরিমাণ ঈমানের পরিমাপটা কী?

উত্তর: এটা আসলে ন্যূনতম বোঝাতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একেবারে সামান্য পরিমাণ ঈমান, তাওহীদের বিশ্বাস যদি কারো থাকে, আল্লাহ তাকে মুক্তি দেবেন । এটা আল্লাহ তাআলা বুঝবেন যে, শিরকমুক্ত তাওহীদের বিশ্বাস ন্যূনতম কত ছিল ।


সিজদার মধ্যে মোনাজাত


প্রশ্ন-০৯: নামাযের সিজদার মধ্যে যে মোনাজাতটা আছে- এটা বিস্তারিত জানতে চাই ।

উত্তর: এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, বিশেষ করে এই রমাযানে আমরা আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দুআ করব। রাসূল (সাঃ) এর শেষ অসিয়ত, রবিউল আউয়াল মাসের সম্ভবত ১২ তারিখ সোমবার দিন সকাল বেলায় তাঁর সাহাবিগণ ফজরের সালাত আদায় করছেন, রাসূল (সাঃ) ঘরেই আছেন, অসুস্থতার কারণে কাঁধে ভর দিয়ে দরজার কাছে দাঁড়ালেন । পর্দা সরানো হল। সাহাবায়ে কেরাম আনন্দে উল্লসিত হলেন, রাসূল (সাঃ) হয়ত সুস্থ হয়েছেন, তিনি নামাযে দাঁড়াবেন, ইমামতি করবেন । তিনি ইশারা করতেন যে তোমরা থাকো। তারপর বললেন, রুকুতে তোমরা রবের তাযীম প্রকাশ করবে, যখন সিজদা করবে, তখন বেশি বেশি দুআ করবে এবং সিজদার দুআ কবুল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। কাজেই আমরা সিজদায় সব দুআই করব। সবকিছু চাইব। দুনিয়া আখেরাতের সকল বিষয় চাইব। তবে চওয়ার ভাষাটা হবে আল্লাহ তাআলার কাছে আবেদনের ভাষা। মানুষে মানুষে কথার ভাষা নয়। রাসূল (সাঃ) এর শেখানো সুন্নাত দুআগুলো মুখস্ত করলে ভালো হয় ।


সিজদার মধ্যে মাতৃভাষায় দুআ

প্রশ্ন-১০: নামাযের সিজদার মধ্যে মাতৃভাষায় দুআ করা জায়েয কি না?

উত্তর: এটা আমাদের দেশের জন্য বেশ জটিল প্রশ্ন। কারণ আমাদের দেশে ফিকহের যে কিতাবগুলো পড়ানো হয় সেখানে লেখা হয়েছে যে মাতৃভাষায় দুআ করা মাকরুহ । কেউ কেউ বলেছেন মাকরুহ মানে মাকরুহে তানযীহি - অনুচিত। কেউ বলেছেন মাকরুহে তাহরীমি । এটা হল হানাফি মাযহাবের ফকীহগণের মত । তবে মিশর, সৌদি, সিরিয়া, তুরস্কের হানাফি ফকীহগণ বলেন, অনারব ভাষায়- মাতৃভাষায় সালাতের সিজদার মধ্যে দুআ করায় দোষ হতে পারে না । কারণ দুআ তো বান্দা আল্লাহ তাআলার কাছে নিজের মাতৃভাষাতেই করবেন। তবে আমরা কুরআনের আয়াতের দুআ অথবা হাদীসের দুআ দ্বারা দুআ করার চেষ্টা করব । এরপরেও যদি কেউ একান্ত না পারেন তবে নফল সালাতে, তাহাজ্জুদের সালাতে মাতৃভাষায় দুআ করতে পারেন। বিশেষ করে কুরআন হাদীসের দুআর অর্থগুলো মনের আবেগে বলতে পারেন ।


মৃত মানুষের পাশে কুরআন পড়া


প্রশ্ন-১১: মৃত মানুষের পাশে বসে কুরআন তিলাওয়াত করা বৈধ কি না?

উত্তর: আপনার কাছে আমার প্রশ্ন হল, মৃত মানুষের পাশে কুরআন পড়ার কোনো সুবিধা আছে কি না! বিষয়টা কি এমন যে আজীবন কুরআন শুনতে পায়নি, অনেক ব্যস্ত ছিল দুনিয়ায়, এখন মরার পরে অখণ্ড অবসর; তাই আমি কুরআন পড়ছি আপনার পাশে, আপনি মরে গিয়ে শুনছেন! আল্লাহ তাআলা কি মরা মানুষের শোনার জন্য কুরআন নাযিল করেছেন? এটা আমার প্রশ্ন। আসলে জীবিত মানুষের মৃত আত্মকে জীবন্ত করার জন্য আল্লাহ কুরআন দিয়েছেন-

أَوَمَنْ كَانَ مَيْتًا فَأَحْيَيْنَاهُ وَجَعَلْنَا لَهُ نُورًا يَمْشِي بِهِ فِي النَّاسِ

তার অন্তর মৃত ছিল, কুরআনের নূরে সে আলোকিত হবে। কাজেই মৃত মানুষের পাশে কুরআন পড়া, এটা ইসলামের মূল চেতনার পরিপন্থী। দ্বিতীয়ত মৃত মানুষের পাশে কুরআন পড়লে কোনো সোয়াব বা বরকত হয়, এটা কুরআন- হাদীসে কোথাও নেই । তৃতীয়ত রাসূল (সাঃ) এবং সাহাবিদের জীবনে অগণিত মানুষ মারা গিয়েছেন, কেউ মৃত মানুষের পাশে কুরআন পড়ান নি। তবে মৃতপথযাত্রী, এখনো জীবিত আছেন, মৃত্যুবরণ করবেন এমন মানুষের কাছে সূরা ইয়াছিন পড়ার কথা একটা হাদীসে এসেছে। হাদীসটা সনদগতভাবে দুর্বল । কিন্তু মরার পরে তার পাশে কুরআন পড়া, এটা কুরআনকে এক ধরনের অবজ্ঞা করা। এটা থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত ।


সন্তানের আনকমন নাম রাখা


প্রশ্ন-১২: আমরা অনেকেই সন্তানের নাম রাখার সময় খুব আনকমন নাম রাখার চেষ্টা করি । আনকমন নাম রাখার ভেতর কি কোনো ফযীলত আছে?

উত্তর :  রাসূল (সাঃ) বলেছেন-

أحب الأسماء إلى الله تعالى عبد الله، وعبد الرحمن

আব্দুল্লাহ, আব্দুর রাহমান, এই দুটো আল্লাহ তাআলার প্রিয়তম নাম। তাই এই জাতীয় নাম রাখা উচিত ।


স্বর্ণ রৌপ্যের যাকাত


প্রশ্ন-১৩: আমি জানি যে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য থাকলে যাকাত ফরয হয় । আমার প্রশ্ন হল, ধরুন আমার সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ আছে, এরপর আরো দেড় তোলা স্বর্ণ হল- এখন সাড়ে সাত তোলার উপর বাড়তি যে স্বর্ণ আছে এই অংশটুকুর কি যাকাত দিতে হবে? নাকি সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণসহ সবটুকুর যাকাত দিতে হবে ?


উত্তর: আসলে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ হওয়া এটা হল নিসাব বা সীমা। অর্থাৎ এর কম স্বর্ণ থাকলে আপনাকে যাকাত দিতে হবে না। কিন্তু এই পরিমাণ হলে পুরোটারই যাকাত দিতে হবে । অর্থাৎ আপনার আট থাকলে আট ভরি সোনারই যাকাত দিতে হবে । এমন নয় যে সাড়ে সাত বাদ দিয়ে শুধু অর্ধভরির যাকাত দেবেন । আপনার সাড়ে সাতভরি বা তার বেশি স্বর্ণ আছে, তার মানে আপনি সম্পদশালী, পুরো সম্পদের যাকাত আপনাকে দিতে হবে ।


অগ্রীম বা বাকিতে যাকাত


প্রশ্ন-১৪: আমার নয় ভরি স্বর্ণ আছে, কিন্তু যাকাত আদায় করার মতো নগদ টাকা নেই । আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী এক বছরে অল্প অল্প করে যাকাত আদায় করব । এটা আমার জন্য বৈধ হবে কি না জানতে চাই ।

উত্তর: যাকাত অগ্রিম দেয়া যায় আবার বাকিতেও দেয়া যায়। এখন আমার যাকাত ফরয হয়েছে কিন্তু দেয়ার মতো নগদ টাকা নেই, আমি কিছুদিন পরে দিলে আদায় হয়ে যাবে। এই দেরির জন্য ইনশাআল্লাহ কোনো গোনাহ হবে না। তবে যত দ্রুত সম্ভব আল্লাহর ঋণটা পরিশোধ করা উচিত।


তারাবীহ নামাযের সময়সীমা


প্রশ্ন-১৫: তারাবীহ নামাযের সময়সীমা কতটুকু? ইশার পর থেকে বারোটার ভেতরে শেষ করতে হবে নাকি বারোটার পরেও পড়া যাবে?

উত্তর: তারাবীহর সময়সীমা হল, ইশার পর থেকে ফজরের আগ পর্যন্ত । বরং যতো দেরি করে পড়া হবে ছওয়াব ততো বেশি হবে। উমার রা. এর যুগে মানুষ যখন প্রথম রাতে তারাবীহ পড়ত, তিনি বলতেন, শেষরাত্রে না ঘুমিয়ে তারাবীহ শেষরাত্রে পড়লে ছওয়াবটা বেশি হবে। কাজেই আপনি ফজরের আযানের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত তারাবীহ পড়তে পারেন ।


স্ত্রীর পরিবর্তে স্বামীর যাকাত আদায়


প্রশ্ন-১৬: আমার ত্রিশভরি স্বর্ণ আছে। আমি তো উপার্জন করি না, এই স্বর্ণের যাকাত কি আমার স্বামী আদায় করবেন? যদি উনি না দেন তাহলে কি আমার গোনাহ হবে?

উত্তর: স্বর্ণের মালিক আপনি। ইসলামি শরীআতে স্ত্রীর সম্পত্তিতে স্বামীর কোনো অধিকার নেই, কোনো দায়ও নেই। তাই আপনার স্বামী আপনার কাছ থেকে এক টাকাও যেমন চাইতে পারবে না ঠিক তেমনি স্বামী যাকাত না দিলে আপনাকেই দিতে হবে। স্বামী যদি দেন তো ভালো । নয়তো আপনাকে আপনার স্বর্ণের যাকাত দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে ।


রোযা অবস্থায় বমি হলে


প্রশ্ন-১৭: রোযা অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি হলে রোযার ক্ষতি হবে কি না?

উত্তর: অনিচ্ছাকৃত বমি হলে রোযার কোনো ক্ষতি হবে না। এমনকি মুখ ভরে বমি হলে বা রিপিটেড বমি হলেও রোযার ক্ষতি হবে না । তবে আল্লাহ না করুন, কেউ বমি খেয়ে ফেললে রোযার ক্ষতি হবে ।

তথ্যসূত্রঃ
৫. সূরা আনআম, আয়াত- ১২২
৬. মুসলিম-২১৩২; তিরমিযি- ২৮৩৩; আবু দাউদ-৪৯৪৯; তাবারানি, আল মু'জামুল কাবীর-৯৪৯



***************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url