বাইতুল মুক্কাদ্দাস বিজয়ের দিন সূর্যকে থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল || সূর্য স্থির হয়ে যাওয়ার আশ্চর্য ঘটনা

সূর্যকে থামিয়ে দেওয়ার ঘটনা

চন্দ্র ও সূর্যের গতিশীলতা সম্পর্কে আল্লাহর বিধি বিধান লঙ্ঘিত হওয়ার নয়। কিন্তু তা সত্বেও আল্লাহ পাকের আদেশে পৃথিবীর ইতিহাসে একবার সূর্যের চলার গতি থেমে গিয়েছিল। অর্থাৎ সূর্য স্থির হয়ে পরেছিল যতক্ষণ না বাইতুল মুক্কাদ্দাসের বিজয় অর্জিত হয়েছিল। সূর্য স্থির হয়ে যাওয়ার সেই আশ্চর্য ঘটনা সম্পর্কে আজ আমরা আলোচনা করবো।


সময় পরিমাপের ভিত্তি সম্পর্কে আল্লাহর বিধান

সময়ের গতিশীলতা ও প্রচলিত পরিমাপের ধারণার ভিত্তি পৃথিবী, চন্দ্র ও সূর্যের গতিশীলতা। কোরআন এই ভিত্তিকে সমর্থন করে। আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই সূর্যকে তেজস্কর ও চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় করেছেন এবং তাদের গতিপথ (তিথি) নির্ধারণ করেছেন, যেন তোমরা বছর, মাস, দিন, ঘন্টা ইত্যাদি গণনা ও সময়ের হিসাব করতে পারো।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত ৫)

আল্লাহর এই বিধি লঙ্ঘিত হওয়ার নয়।

ইরশাদ হয়েছে, ‘সূর্যের জন্য সম্ভব নয় চন্দ্রের নাগাল পাওয়া, রাতের পক্ষে সম্ভব নয় দিনকে অতিক্রম করা। সবাই নিজ নিজ কক্ষপথে সন্তরণ করে।’ (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৪০)

সূর্যকে থামিয়ে দেওয়ার ঘটনা কিভাবে ঘটেছিল?

কিন্তু মহান আল্লাহ কখনো কখনো সময়ের গতি থামিয়ে দিয়ে তাঁর ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ করেছেন এবং তা করেছেন দুইভাবে। এক. সময় গণনার মাধ্যম সূর্যকে থামিয়ে দিয়ে, দুই. সময়ের প্রভাব খর্ব করে।

সময় গণনার মাধ্যম সূর্যকে থামিয়ে দিয়ে সময়ের গতি থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল ইউশা ইবনে নুন (আঃ)-এর সময়। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেন, ‘... তারা অভিযান পরিচালনা করল, তারা আসরের সময় বা তার নিকটবর্তী সময়ের জনপদের নিকটবর্তী হলো। তিনি (ইউশা ইবনে নুন) সূর্যের উদ্দেশ্যে বললেন, নিশ্চয়ই তুমি আদিষ্ট এবং আমি আদিষ্ট। হে আল্লাহ! আপনি একে (সূর্য) আমাদের ওপর স্থির রাখুন। তাকে স্থির রাখা হলো যতক্ষণ না আল্লাহ তাদের বিজয় দান করেছিলেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩১২৪)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘মানুষের ওপর সূর্যকে কখনো স্থির রাখা হয়নি, তবে ইউশা (আঃ)-এর জন্য রাখা হয়। যে রাতে তিনি বায়তুল মোকাদ্দাসে সফর করেন।’ (ইবনুল কায়্যিম জাওজি, ফাদায়িলুল কুদস, পৃষ্ঠা. ১১৩)

বাইতুল মুক্কাদ্দাস বিজয়ের দিন সূর্য থেমে গিয়েছিল কেন?

পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথমবারের মত সূর্যকে থামিয়ে দিলেন মহান আল্লাহ..... 

মূসা (আঃ) যখন তার কওমকে জেরুজালেম বিজয় অভিযান পরিচালনা করার আদেশ দিলেন তখন শুধুমাত্র দুইজন ব্যক্তি এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে রাজি হয়েছিলেন ইউশা বিন নূন (আঃ) ও কালিব। তাদের কথা পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ এভাবে বলেছেন-

"তাদের মধ্যের এমন দুইজন যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং মহান আল্লাহ তাদের উপর দয়া করেছেন তারা বলল, তোমরা এই শহরে প্রবেশ করো! যদি তোমরা এই শহরে প্রবেশ করো তোমরাই বিজয়ী হবে। আর  তোমরা যদি মুমিন হয়ে থাকো তাহলে ভরসা করো একমাত্র আল্লাহর উপর।”

মুসা (আঃ) এর কওম বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়ের অভিযানের বের না হওয়ায় আল্লাহ পাক তাদেরকে চল্লিশ বছরের জন্য শাস্তি নির্ধারণ করেছিলেন। উক্ত চল্লিশ বছর মুসা (আঃ) এর কওমের লোকেরা অত্যাচারী শাসকের দ্বারা চরম জুলুমের স্বীকার হয়েছিল।

 মূসা (আঃ) এর মৃত্যুর পর বানু ইসরাইলের দায়িত্ব পান উক্ত দুইজনের একজন ইউশা বিন নূন (আঃ)। চল্লিশ বছরের আল্লাহর আযাব শেষ হলে তিনি তাদেরকে নিয়ে জেরুযালেম বিজয় করার জন্য রওয়ানা দেন। যুদ্ধ শুরু হয়। প্রবল যুদ্ধের এক পর্যায়ে শুক্রবারের দিন বিকেল বেলা তারা যুদ্ধ জয়ের অতি নিকটে পৌছে যায়। কিন্তু তাদের দ্বীনের বিধান ছিলো শনিবারের পবিত্র দিনে যুদ্ধ বিগ্রহ বন্ধ থাকবে। তথা শুক্রবার দিনের সূর্য ডুবে গেলে শনিবার শুরু হয়ে যাবে এবং তারা এই যুদ্ধ আর চালিয়ে যেতে পারবেনা। ফলে বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয় অনিশ্চিত হয়ে পরবে এবং যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে যাবে। তখন ইউশা বিন নূন মহান আল্লাহর নিকট দুয়া করলেন এবং সূর্যকে লক্ষ্য করে বললেন-
 
إنك مأمورة وأنا مأمور، اللهم احبسها علينا

হে সূর্য তুমি আল্লাহর আদেশে আদিষ্ট আর আমিও আল্লাহর আদেশে আদিষ্ট। হে আল্লাহ আপনি এই সূর্যকে আমাদের জন্য থামিয়ে দিন। (বুখারী, হা/৩১২৪)

অতপর মহান আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথমবারের মত সূর্যকে থামিয়ে দিলেন। শুধুমাত্র জেরুযালেম বিজয় সম্পন্ন করার জন্য আল্লাহ সূর্যকে থামিয়ে দিলেন। আল্লাহু আকবার!

রাসূল (সাঃ) বলেন, 

إِنَّ الشَّمْسَ لَمْ تُحْبَسْ عَلَى بَشَرٍ إِلَّا لِيُوشَعَ 

নিশ্চয় মহান আল্লাহ পৃথিবীর একমাত্র ব্যক্তি ইউশা বিন নূনের জন্য সূর্যকে থামিয়ে দিয়েছিলেন। যাতে তারা বায়তুল মাক্বদ্দাস বিজয় করতে পারে। (মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৩১৫)

শিক্ষাঃ
১. জেরুজালেম কখনোই শক্তি দিয়ে বিজয় করা যায়নি। একমাত্র আল্লাহ ভরসা ও ঈমানী শক্তি দিয়েই বিজয় করা সম্ভব। ২. আল্লাহ ভরসা ও ঈমানি শক্তি থাকলে এমন অলৌকিক কিছুর মাধ্যমেই আল্লাহ সেই বিজয়কে তরান্বিত করে দিবেন।

সময়ের সব ধরনের নিয়ন্ত্রণ আল্লাহর হাতে। তিনি তাঁর প্রজ্ঞার আলোকে সময়কে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আবদ্ধ করেছেন।


যেদিন এই শৃঙ্খলা ভেঙে যাবে এবং সময়ের গতি থেমে যাবে, সেদিন প্রতিশ্রুত কিয়ামত সংঘটিত হবে। আল্লাহ বলেন, ‘যখন চোখ স্থির হয়ে যাবে, চাঁদ জ্যোতিহীন হবে এবং সূর্য ও চন্দ্রকে একত্র করা হবে, সেদিন মানুষ বলবে, পালানোর জায়গা কোথায়?’ (সুরা : কিয়ামা, আয়াত : ৭-১০)


>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url