আল আকসার ইতিকথা-৫ | মুসার (আঃ) যুগে মসজিদে আকসা | হযরত মূসা ও হারুন (আঃ) এর কবর

আল আকসা মসজিদের ইতিকথা শীর্ষক এই প্রবন্ধগুলো এ এন এম সিরাজুল ইসলামের লেখা “আল আকসা মসজিদের ইতিকথা” গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। সুন্দর তথ্যবহুল এই গ্রন্থটি বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত।

হযরত মুসার (আঃ) যুগে মসজিদে আকসা


হযরত ইয়াকুব (আঃ)-এর শেষ বয়সে বনু ইসরাইল হযরত ইউসূফ (আঃ) এর আহ্বানে মিসর প্রবেশ করে। উল্লেখ্য যে, ইউসুফ (আঃ) হযরত ইয়াকুবের সন্তান ও আল্লাহর নবী ছিলেন। পরবর্তীতে বনু ইসরাইল মিসরে ফেরাউনের দ্বারা নির্যাতিত হয়। হযরত মূসা (আঃ)-এর যুগে তাঁর সাহায্যে বনু ইসরাইল মিসর ত্যাগ করেন। ফলে, পুনরায় তাদের জেরুজালেমের পবিত্র স্থানে ফিরে আসার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। কিন্তু জেরুজালেমের জালেম অধিবাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা তারা হারিয়ে ফেলে। তাদের এই জিহাদ-বিমুখিতার জন্য আল্লাহ সিনাই মরু প্রান্তরের তীহ ময়দানে তাদেরকে ৪০ বছর মরু জিন্দেগী যাপনের শাস্তি দান করেন। কিন্তু তারা জেরুজালেমে পুনরায় ফিরে যাওয়ার জন্য আগ্রহী হওয়া সত্ত্বেও ভীরুতা ও কাপুরুষতার জন্য তা সফল হচ্ছিল না ।

জেরুজালেম জয় করতে অস্বীকৃতি জানায় বনি ইসরাইল


কুরআন বনি ইসরাইলের ঐ ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা উল্লেখ করেছে। ঘটনা হচ্ছে এই যে, ফেরাউন মিসরে বনি ইসরাইলের উপর অকথ্য নির্যাতন শুরু করে। সে তাদের ছেলে সন্তানদেরকে হত্যা করে মেয়ে সন্তানদেরকে জীবিত রাখে। পরে মূসা (আঃ)-এর নেতৃত্বে মজলুম জনতার উদ্দেশ্যে সাগর শুকিয়ে পারাপারের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু ফেরাউন ও তার দলবলকে সাগরের পানিতে ডুবিয়ে মারেন। বনু ইসরাইল সাগর পেরিয়ে সিনাই মরু প্রান্তরে উপস্থিত হয়। সিনাই প্রান্তরে পূর্ব থেকেই এক মূর্তিপূজারী জাতির বাস ছিল। বনু ইসরাইল তাদের কাছে আল্লাহর বিভিন্ন প্রতিকৃতি বা মূর্তি এবং সেগুলোতে পশু উৎসর্গসহ সেজদা করা দেখে মূসা (আঃ)-এর কাছে এসে আবেদন করে, হে মূসা! তাদের মত আমাদের জন্যও মাবুদ বানিয়ে দাও। এতে মূসা ভীষণ রাগ করেন এবং তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা বোকা জাতি । সিনাই প্রান্তরের অধিবাসীরা যা করছে তা সম্পূর্ণ বাতিল ও ধবংসাত্মক কাজ। তোমরা কি চাও, যে আল্লাহ তোমাদেরকে গোটা বিশ্বের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন তার পরিবর্তে আমি তোমাদের জন্য হাতের তৈরি অন্য মাবুদ পেশ করি? মূসা (আঃ) তাদের এই অন্যায় আবদার এভাবে প্রত্যাখান করেন।

তিনি তাদেরকে নিয়ে জেরুজালেমে বাইতুল মাকদিস অভিমুখে রওনা দেন। কিন্তু বাইতুল মাকদিসের জালেম শাসক ও অধিবাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই ছাড়া সহজভাবে সেখানে প্রবেশ করা সম্ভব নয়। তখন মূসা (আঃ) বনি ইসরাইলকে লক্ষ্য করে বলেন, তোমরা কি আল্লাহর নিয়ামাত স্বীকার কর? আল্লাহ তোমাদের মধ্যে নবী পাঠিয়েছেন এবং তোমাদেরকে বাদশাহ বানিয়েছেন। তোমাদেরকে এমন কিছু দিয়েছেন যা আর কাউকে দেয়া হয় নি। তোমরা বাইতুল মাকদিসে প্রবেশ কর এবং এ ব্যাপারে পিছটান দেবে না। অন্যথায় তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তারা জওয়াব দিল, হে মূসা! বাইতুল মাকদিসে এক জালেম শক্তিধর জাতি বাস করে। তারা সেখান থেকে বেরিয়ে না গেলে আমরা সেখানে যাব না। 'তখন আল্লাহর প্রতি ভয় পোষণকারী ও নিয়ামাত প্রাপ্ত দু'ব্যক্তি বললো, তোমরা শহরের প্রবেশ পথ দিয়ে প্রবেশ কর। তোমরা অবশ্যই বিজয় লাভ করবে। তোমরা আল্লাহর উপর নির্ভর কর, যদি তোমরা মুমিন হও।'

বনু ইসরাইল উত্তরে বলে, হে মূসা! তারা যতক্ষণ পর্যন্ত শহরে আছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা সেখানে ঢুকবো না। তুমি এবং তোমার রব যাও ও সেখানে গিয়ে যুদ্ধ করে তাদেরকে পরাজিত করে দিয়ে আস। আমরা এখানেই বসে আছি।

এর উত্তরে মূসা (আঃ) বলেন, হে রব! আমি আমার ও আমার ভাই হারুন ছাড়া আর কারুর উপর নিয়ন্ত্রণকারী নই। আমার ও আমার কওমের মধ্যে তুমি ব্যবধান সৃষ্টি করে দাও। আল্লাহ এই দোয়ার জওয়াবে বলেন, তাদের জন্য বাইতুল মাকদিস চল্লিশ বছর পর্যন্ত হারাম করা হল এবং তারা যমীনে ঘুরাফিরা করতে থাকবে। তুমি জালেম কাওমের আচরণে নিরাশ হয়ো না।

বনু ইসরাইল সিনাই মরুভূমির কঠিন পানিশূন্য তীহ প্রান্তরে পড়ে রইল। পানির পিপাসায় অস্থির হয়ে মূসা (আঃ)-এর কাছে পানি প্রার্থনা করল। মূসা (আঃ) আল্লাহর কাছে পানির আবেদন জানাল। আল্লাহ তাঁকে নিজ লাঠি দ্বারা একটি পাথরে আঘাত করার নির্দেশ দেন। ফলে, ১২ গোত্রে বিভক্ত বনি ইসরাইলের জন্য ১২টি ঝর্নাধারা ফুটে উঠল। তারা সেই পানি থেকে সবাই প্রয়োজন পূরণ করতে লাগল ।

এরপর তাদের খাদ্য সমস্যা দেখা দিল। তারা মূসা (আঃ)-এর কাছে খাবার চেয়ে বসল। ফলে, মূসা (আঃ) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেন এবং বনি ইসরাইলের জন্য 'মান্না ও সালওয়া' নামক খাদ্য পাঠিয়ে দেন ।

কিন্তু বনি ইসরাইল তাতে বিরক্ত হয়ে ওঠে এবং মূসা (আঃ)-এর কাছে ফরিয়াদ করে। হে মূসা! আমরা, একই প্রকার খাওয়ার উপর বিরক্ত হয়ে পড়েছি। তুমি তোমার রবের কাছে প্রার্থনা কর, যেন তিনি আমাদেরকে যমীনের উৎপাদিত সব্জি-তরকারী, সিম, ডাল ও পেঁয়াজ দান করেন।

এতে মূসা (আঃ) রাগ হন এবং প্রশ্ন করেন, তোমরা কি নিকৃষ্ট জিনিসের জন্য উৎকৃষ্ট জিনিসের পরিবর্তন কামনা কর? যদি তাই চাও, তাহলে তোমরা শহরে ছড়িয়ে পড় এবং সেখানে তোমরা যা চাবে, তাই পাবে ।

এদিকে মূসা (আঃ) আল্লাহর সাথে নির্ধারিত কর্মসূচী মোতাবেক ৩০ দিনের জন্য তূর পাহাড়ে চলে যান। তিনি নিজ কাওমকে ৩০ দিনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেন। কিন্তু আরো ১০ দিন থেকে মেয়াদ পূর্ণ করায় এবং ফিরতে দেরী হওয়ায় তাদের কাছে সামেরী নামক এক লোক এসে প্রস্তাব করে, মূসা আটকা পড়েছে এবং তোমাদের কাছে আর ফিরে আসবে না। তাই তোমাদের উচিত, একটি উপাস্য গ্রহণ করা। বনি ইসরাইল প্রস্তাবটি চিন্তা করে দেখল, প্রস্তাবটি ছিল তাদের মনের মত । ইতিপূর্বেও তারা মূসা (আঃ)-এর কাছে অনুরূপ উপাস্য তৈরির দাবী জানিয়েছিল। কিন্তু মূসা (আঃ) তা অস্বীকার করেছিলেন। যাই হোক, সামেরী সোনার তৈরী একটি গো-বাছুর নিয়ে আসল এবং গো- বাছুরটি আওয়াজ দিতে পারত। বনু ইসরাইল গো-বাছুরের পূজা আরম্ভ করল। সামেরী বলল, এটা তোমাদের এবং মূসার উপাস্য ।

হযরত মূসার স্থলাভিষিক্ত হযরত হারুন তাদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলা হয়েছে। তোমাদের রব হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ-রাহমান। তোমরা আমার অনুসরণ ও আনুগত্য কর। তারা জবাবে বলেন, আমরা মূসা (আঃ) ফিরে না আসা পর্যন্ত এইভাবে মূর্তিপূজা করতে থাকবো ।

হযরত মূসা ফিরে আসেন এবং নিজ সম্প্রদায়ের উপর অত্যন্ত রাগ করেন। তিনি বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ শুনে সেদিকে অগ্রসর হয়ে দেখেন যে, তাঁর কাওমের লোকেরা গো-মূর্তির নাচ-গান করেছে। তিনি রাগ করে বলেন, তোমরা আমার অনুপস্থিতিতে অত্যন্ত খারাপ কাজ করেছো! তারপর তিনি হাত থেকে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত তাওরাত ফেলে দেন এবং প্রশ্ন করেন, হে আমার জাতি! আল্লাহ কি তোমাদের সাথে উত্তম ওয়াদা করেননি? তোমাদের কাছে কি সময় দীর্ঘায়িত হয়েছিল কিংবা তোমরা চাও যে, তোমাদের উপর তোমাদের রবের গযব নেমে আসুক। যে জন্য তোমরা আমার মেয়াদের অবসরে বিপরীত কাজ শুরু করে দিয়েছিলে?

মূসা (আঃ) হারুনকে প্রশ্ন করেন, তুমি যখন তাদেরকে গোমরাহীর কাজে লিপ্ত দেখলে, তখন কেন আমার অনুসরণ করলে না এবং কেন আমার নাফরমানী করলে? হারুন (আঃ) বলেন, হে ভাই! কাওম আমাকে দুর্বল মনে করে আমাকে মেরে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছিল। তাই আমার বিষয়ে এমন কিছু করবেন না, যার কারণে দুশমনরা হাসতে পারে এবং আমাকে যালেমদের অন্তর্ভুক্ত করবেন না। তখন মূসা (আঃ) পুনরায় প্রশ্ন করেন, তুমি তাদের উক্ত কুফরীর বিরুদ্ধে কেন লড়াই করলে না? তুমি জান যে, আমি মওজুদ থাকলে অবশ্যই লড়াই করতাম? হারুন (আঃ) বলেন, হে আমার ভাই! আমার দাড়ি কিংবা মাথা ধরে টান দেবেন না। আমার আশংকা হয়েছিল আপনি এই ধারণাই করবেন যে, আমি আপনার কথা স্মরণ না রেখে কাওমের সাথে আপনার দূরত্ব সৃষ্টি করেছি। তারপর মূসা (আঃ) বলেন, হে রব! আমাকে ও আমার ভাইকে মাফ করুন এবং আমাদেরকে আপনার রহমতের ছায়াতলে আশ্রয় দিন। আপনি পরম দয়ালু ও মেহেরবান ।

তারপর মূসা (আঃ) সামেরীকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার ঘটনা ও চক্রান্তটা কি? সামেরী জওয়াবে বলল, আমি যা দেখেছি, অন্যরা তা দেখেনি। আমি জিবরীলকে দেখেছি এবং জিবরীলের পায়ের স্থান থেকে এক মুষ্টি মাটি নিয়ে তা গো-বাছুরের প্রতিকৃতির ভেতর ঢুকিয়ে দিয়েছি। এই চক্রান্ত করার জন্য আমার মন আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল ।

মূসা (আঃ) বলেন, তোমার তৈরি ঐ মূর্তিকে জ্বালিয়ে এর ছাই আমি সাগরে নিক্ষেপ করবো। মূসা (আঃ) মূর্তিটি ধ্বংস করে দিলেন এবং নিজ কাওমকে বললেন, তোমাদের মাবুদ হচ্ছেন সেই মহান আল্লাহ, যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, তিনি সকল কিছু সম্পর্কে ওয়াকিফহাল ।
এতে, বনি ইসরাইল লজ্জিত হয় এবং মূসা (আঃ) তাদেরকে লক্ষ্য করে প্রস্তাব করেন, হে কাওম! তোমরা গো-বাছুরের প্রতিকৃতিকে মাবুদ বানিয়ে নিজেদের উপর যুলুম করেছ। তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর এবং নিজেদেরকে হত্যা কর। তোমাদের স্রষ্টার কাছে এটাই তোমাদের জন্য উত্তম।

বনি ইসরাইল আল্লাহর কাছে তওবা করার সিদ্ধান্ত নিল এবং মূসা (আঃ)-কে তা জানাল। তখন মূসা (আঃ) বনি ইসরাইলের ৭০ জন আলেম নির্বাচিত করেন এবং তাদেরকে নিয়ে আল্লাহর কাছে বনি ইসরাইলের পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনার উদ্দেশ্যে তূর পাহাড়ের নিকটবর্তী হন। মূসা (আঃ) আল্লাহর কাছে গো-বাছুরের প্রতিকৃতি পূজার অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন ।

তিনি বনি ইসরাইলের কাছে ফিরে এসে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার কথা জানান। কিন্তু তারা গোঁ ধরে বসে এবং বলে, হে মূসা! আমরা আল্লাহকে প্রকাশ্য না দেখা পর্যন্ত তোমাকে বিশ্বাস করতে পারি না।' তাদের এই অপরাধের জন্য আকাশ থেকে এক বজ্রপাতের মাধ্যমে তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়। তখন মূসা (আঃ) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, হে রব! তুমি ইচ্ছা করলে, তাদেরকে আমার আগমনের আগেও ধ্বংস করে দিতে পারতে। তুমি কি আমাদেরকে আমাদের মূর্খ লোকদের অপকর্মের জন্য ধ্বংস করে দেবে? এটা হচ্ছে তোমার পরীক্ষা, এই পরীক্ষার মাধ্যমে তুমি যাকে ইচ্ছা হেদায়াত দান কিংবা গোমরাহ করে থাক। তুমি আমাদের প্রভু! আমাদেরকে মাফ কর ও রহমত দান কর। তুমি সর্বোত্তম ক্ষমাকারী।

আল্লাহ বলেন, আমি যাকে ইচ্ছা আযাব দিই এবং সবকিছুর উপর আমার রহমত ছেয়ে আছে। কিন্তু মূসা (আঃ) দোয়া অব্যাহত রাখেন যে পর্যন্ত না আল্লাহ ঐ মৃতলোকদেরকে পুনরায় জীবিত করেন। আল্লাহ তাদেরকে পুনরায় জীবন দান করেন ।

মূসা ও হারুন (আঃ) এর বিরুদ্ধে বনি ইসরাইলের বিদ্রোহ


কিন্তু কি পরিহাস! বনি ইসরাইল তাদের মুক্তিদাতা মূসা ও হারুন (আঃ) এর বিরুদ্ধে কাওরাহ বিন বাসহারের নেতৃত্বে বিদ্রোহের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কাওরাহ বনি ইসরাইলের নেতৃস্থানীয় আড়াইশ' লোকের এক সভায় হযরত মূসা ও হারুনের বিরুদ্ধে বক্তব্য পেশ করে। বনি ইসরাইলের অধিকাংশ লোক এই সামষ্টিক বিদ্রোহের আহ্বানে সাড়া দেয়। সবাই মূসা ও হারুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে এবং বলে, তোমরা ২ ব্যক্তি বনি ইসরাইলের ধ্বংসকারী। আল্লাহ মূসা ও হারুনের অনুসারী সত্যপন্থীদেরকে সাহায্য করেন এবং ১৪ হাজার বিদ্রোহীকে এক মহামারীর মাধ্যমে ধ্বংস করে দেন। তাওরাতে বর্ণিত আছে যে, বিশ বছর বয়স্ক অধিকাংশ যুবক মারা গেছে। তীহ প্রান্তরের অবশিষ্ট লোকদের জন্য ৪০ বছর সশ্রম দণ্ড ঘোষণা করে বলা হয়, তাদেরকে এই ময়দানে ৪০ বছর কাটাতে হবে। 

জেরুজালেমের কাছে হযরত মূসা ও হারুন (আঃ) এর কবর


তীহ ময়দানে হযরত মূসা ও হারুন (আ.) ইন্তিকাল করেন। তাঁরা দুইজনও জেরুজালেমে প্রবেশের ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। যখন তাঁদের দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে যে, এই কাপুরুষ জনগোষ্ঠীকে নিয়ে জিহাদের মাধ্যমে জেরুজালেম জয় করা সম্ভব নয় তখন তাঁরা জেরুজালেমের অতি নিকটে, পাথর নিক্ষেপের দূরত্বের মধ্যে নিজেদের লাশ দাফনের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। আল্লাহ তাঁদের সেই দোয়া কবুল করেন এবং তাঁদের আগ্রহ মোতাবেক তাঁদেরকে জেরুজালেমের কাছে দাফন করা হয়। বুখারী শরীফে কিতাবুল আম্বিয়া অধ্যায়ে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা) জেরুজালেমে হযরত মূসার কবরের স্থান চিহ্নিত করার আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, আমি হযরত মূসার (আঃ) কবর দেখতে পাচ্ছি। এই আমলে মসজিদে আকসায় পৌঁছার ব্যাপারে বনি ইসরাইলের জিহাদ বিমুখতা ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোন কিছু নেই।

ইউশা বিন নূন (আঃ) এর যুগে মসজিদে আকসা


হযরত মূসা ও হারুনের (আঃ) পরবর্তী নবী হলেন ইউশা বিন নূন । সূরা কাহাফে যে যুবকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তিনি হচ্ছেন, হযরত ইউশা' (আঃ)। সহীহ হাদীসের মাধ্যমেও তা প্রতিষ্ঠিত। 

হযরত ইউশা' (আঃ) বাইতুল মাকদিস জয় করেন


হযরত ইউশা' (আঃ) তীহ ময়দানের অবশিষ্ট বনি ইসরাইলকে জেরুজালেম যাওয়ার নির্দেশ দেন এবং বলেন, সেটি হচ্ছে, ঈমানদারদের স্থান, কাফির-মুশরিকের স্থান নয়। তিনি বনি ইসরাইলের পরবর্তী বংশধরকে নিয়ে জেরুজালেম পৌঁছেন। তিনি তাঁর বাহিনী নিয়ে বাইতুল মাকদিস অবরোধ করেন এবং সূর্যাস্তের মুহূর্তে বিজয় সন্নিকট হওয়ায় আল্লাহর কাছে বিজয় না হওয়া পর্যন্ত সূর্যকে আটকিয়ে রাখার দোয়া করেন।

আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেন।২৪ তিনি নিজ বাহিনী নিয়ে বাইতুল মাকদিসে বিজয়ীর বেশে প্রবেশ করেন এবং সাখরার স্থানে ‘গম্বুজে মূসা' নির্মাণ করেন। তাঁরা সেই গম্বুজের দিকে মুখ করে নামায পড়তেন। তারপর তাঁরা তার পরিবর্তে সাখরার দিকে মুখ করে নামায পড়া শুরু করেন। শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) পর্যন্ত তা সবার কিবলা ছিল। রাসূলুল্লাহর (সাঃ) আমলে ১৭ মাস পর্যন্ত মুসলমানগণ মদীনায় বাইতুল মাকদিসের দিকে মুখ করে নামায আদায় করেন। তারপর আল্লাহর ইচ্ছায় কা'বা শরীফের দিকে কিবলাহ পরিবর্তন হয়ে যায়।

ইউশা বিন নূন পরবর্তী যুগ হযরত ইউশা' বিন নূনের পরে জেরুজালেমে বনি ইসরাইলের উপর তিন ধরনের শাসনকার্য পরিচালিত হয়। ১ম ধরনের শাসনপদ্ধতি হচ্ছে বিচারক গোষ্ঠীর শাসন। বনি ইসরাইলের ১২ বংশের বিচারপতিরা মিলে সুদীর্ঘ চারশ' বছর পর্যন্ত জেরুজালেম শাসন করে। ২য় ধরনের শাসন পদ্ধতি হচ্ছে, বাদশাহী পদ্ধতি । বিচারপতিদের শাসন পদ্ধতি দুর্বল হওয়ার পর বাদশাহগণ জেরুজালেমে বনি ইসরাইলের শাসনভার পরিচালনা করেন। 

বাদশা তালুতের নেতৃত্বে পুনরায় বাইতুল মাকদিস বিজয়


বিচারপতিদের দুর্বলতার সুযোগে বহিরাগত দুশমনরা জেরুজালেম দখল করে নেয়। অর্থাৎ খৃস্টপূর্ব প্রায় এক হাজার বছর পূর্বে, আমালিকা সম্প্রদায়ের লোকেরা বনি ইসরাইলের উপর আক্রমণ করে এবং তারা বনি ইসরাইলের কাছ থেকে ফিলিস্তিনের অধিকাংশ এলাকা কেড়ে নেয়। ঐ সময় হযরত শামউইল নবী (আঃ) বনি ইসরাইলে শাসনভার পরিচালনা করেন। তিনি খুব বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। এজন্য বনি ইসরাইল সরদারগণ নবীর কাছে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য একজন বাদশাহর আবেদন করেন। নবীর আবেদন ক্রমে আল্লাহ তাদের জন্য তালুত নামক একজন বাদশাহর আবির্ভাবের কথা ঘোষণা করেন। কিন্তু নৈতিক দিক থেকে অধঃপতিত ও স্বার্থপরতার শিকার বনি ইসরাইল তাঁকে বাদশাহ হিসেবে মেনে নিতে ইতস্তত করতে থাকে। তারা বলে আমরাই তালুতের চাইতে বাদশাহ হওয়ার বেশি অধিকারী। শেষ পর্যন্ত তাদের যে অংশ ঈমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হল, তারা তালুতের সাথে যুদ্ধ করে জালুতকে (জুলিয়েট) পরাজিত করে এবং বাইতুল মাকদিস জয় করেন। 

ঘটনাবশতঃ যুবক দাউদ (আঃ) এ সময় তালুতের বাহিনীতে ছিলেন। তিনি যুদ্ধে ফিলিস্তিনী বাহিনীর প্রধান জালুতকে হত্যা করে ইসরাইলীদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন। এই ঘটনা কুরআন মজীদের সূরা বাকারার ২৪৬ আয়াত থেকে ২৫১ আয়াতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

তখন থেকে ইসরাইলীদের মধ্যে বাদশাহী পদ্ধতি শুরু হয়। তালুত তাদের বাদশাহ নিযুক্ত হন। শামুয়েল গ্রন্থে উল্লেখ আছে, তালুত হযরত দাউদের কাছে নিজ কন্যা বিয়ে দেন এবং তালুতের পরে তিনি ইসরাইলীদের ২য় বাদশাহ নিযুক্ত হন । দাউদ (আঃ) জেরুজালেম শহর দখল করেন।

২৪. তাফসীর ইবনে কাসীর, ১ম খণ্ড, ৩৮ পৃষ্ঠা।


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url