ইসরাইলের কারাগারে বন্দী ফিলিস্তিনিদের জ্যান্ত কবর দেয়ার আহবান জানালেন জেরুজালেমের ডেপুটি মেয়র ইৎজাক কিং


বন্দী ফিলিস্তিনিদের জ্যান্ত কবর দেয়ার আহবান জানালেন জেরুজালেমের মেয়র

ফিলিস্তিনের অধিকৃত জেরুজালেম শহরের ডেপুটি মেয়র ইৎজাক কিং ইসরাইলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দীদের জীবিত কবর দেয়ার আহবান জানিয়েছেন।

গতকাল (শুক্রবার) সামাজিক মাধ্যম এক্স পেইজে দেয়া এক পোস্টের মাধ্যমে তিনি এই ঘৃণ্য ও বর্বর আহ্বান জানান। তিনি ইসরাইলের সন্ত্রাসী সেনাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, গাজা থেকে যুদ্ধের সময় যে শত শত মানুষকে আটক করা হয়েছে সেগুলোকে জীবিত কবর দিতে হবে।
গাজা উপত্যকা থেকে দখলদার সেনারা সম্প্রতি যেসব ফিলিস্তিনিকে আটক করে অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় রাস্তার ওপর বসিয়ে রাখার যে ছবি প্রকাশ করেছে তাদের কথা উল্লেখ করে এক্স পেইজের ওই পোস্টে কিং তার ভাষায় বলেন, “সেনাবাহিনীর উচিৎ দ্রুত এই মুসলিম নাৎসিবাদীদের নির্মূল করা।”

কিং আরো বলেন, "যদি এটা আমার ওপর ছেড়ে দেয়া হতো তাহলে আমি ডি-নাইন বুলডোজার পাঠিয়ে ময়লার ঢিবির পিছনে রেখে দিতাম এবং যতক্ষণ তারা বেঁচে থাকে ততক্ষণ এই শত শত পিঁপড়াকে ঢেকে রাখার নির্দেশ দিতাম।" তবে এক্স-এর নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য কিংয়ের এই পোস্ট মুছে ফেলা হয়েছে।

গাজার এখনও হামাসের দখলেঃ ইহুদিবাদী গণমাধ্যম

ইহুদিবাদী ইসরাইলি গণমাধ্যমগুলো স্বীকার করেছে ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস দুর্বল হয় নি। গাজার ক্ষমতা এখনও তাদেরই হাতে।

ইহুদিবাদী গণমাধ্যমগুলো এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইসরাইলি সেনারা এখন পর্যন্ত হামাসের কোনো ক্ষতি করতে পারে নি। হামাস এখনও গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ হারায় নি বলে ইসরাইলি মিডিয়া স্বীকার করেছে।
ইহুদিবাদী যুদ্ধমন্ত্রী গালান্ত সম্প্রতি দাবি করেছিল হামাসের পতন ঘটতে যাচ্ছে। ওই দাবির প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অলিভার লিভি ইহুদিবাদী চ্যানেল 'কান'-এ বলেছেন: হামাসের মূল শক্তি এখনও দুর্বল হয় নি।

ইহুদিবাদী মিডিয়াও স্বীকার করেছে: আল-আকসা তুফান অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধারা এখন পর্যন্ত ইহুদিবাদী বসতিগুলোতে যথারীতি রকেট এবং মর্টার হামলা চালিয়েই যাচ্ছে।

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ বাহিনী গত ৭ অক্টোবর স্থল, আকাশ এবং সমুদ্রপথে ইসরাইলি ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করে নজিরবিহীন অভিযান চালায়। আল-আকসা তুফান নামের ওই অভিযানে বহু ইসরাইলি সেনা হতাহত হয় এবং শত শত ইসরাইলিকে যুদ্ধবন্দী হিসেবে গাজা উপত্যকায় নিয়ে যায়।

ইহুদিবাদী সেনাদের বোমাবর্ষণ অব্যাহত চলছে ইসরাইলি সেনা নিধন



অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে নারী ও শিশুসহ বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে ইহুদিবাদী ইসরাইলি সেনাদের বর্বরোচিত বিমান হামলা এবং কামান ও ট্যাংকের গোলাবর্ষণ চলছে। এতে আজও শত শত ফিলিস্তিনি হতাহত হয়েছেন।

এদিকে দখলদার সেনাদের পাশবিক হামলার জবাবে হামাস ও ইসলামি জিহাদসহ সবগুলো ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের তুমুল প্রতিরোধ অব্যাহত রয়েছে। গাজার কোনো অংশের ওপরই পূর্ণ ও স্থায়ী দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি ইসরাইলি সেনারা। আজও তেল আবিবে রকেট হামলা চালিয়েছে প্রতিরোধ সংগঠনগুলো।

আজ গাজায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হামলায় আরো দুই সেনার নিহত হওয়ার খবর স্বীকার করেছে ইহুদিবাদী সেনা কর্তৃপক্ষ। তাদের হিসেবে এই নিয়ে গাজায় এ পর্যন্ত নিহত ইসরাইলি সেনার সংখ্যা ৯১ জনে উন্নীত হয়েছে; যদিও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ ফ্রন্টগুলো বলছে, প্রকৃত নিহত ইসরাইলি সেনার সংখ্যা আরো অনেক বেশি।

ইসরাইলের সাবেক সেনাপ্রধানের ছেলের শেষকৃত্য সম্পন্ন

ইসরাইলের সাবেক সেনাপ্রধান ও যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার সদস্য গাদি আইজেনকোটের ছোট ছেলে গাল মেইর আইজেনকোটের শেষকৃত্য আজ ইসরাইলের মধ্যাঞ্চলীয় শহর হেরজলিভা শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল গাজা উপত্যকায় হামাস যোদ্ধাদের হামলায় গাল মেইরের ভবলীলা সাঙ্গ হয়। নেতানিয়াহু, তার মন্ত্রিসভার সদস্যরা এবং ইহুদিবাদী প্রেসিডেন্ট হার্জগ শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিল। 

হামাসের সামরিক বাহিনী ইজ্জাদ্দিন কাসসাম ব্রিগেড আজ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গতকাল তাদের যোদ্ধারা গাজা উপত্যকার উত্তরে একটি টানেলের মুখে বোমা পেতে রেখেছিলেন। ইসরাইলি সেনারা টানেল মুখে গিয়ে এটির ঢাকনা উত্তোলন করার সঙ্গে সঙ্গে বোমাটি বিস্ফোরিত হয়। এর ফলে ঘটনাস্থলেই সাবেক ইসরাইলি সেনাপ্রধান গাদি আইজেনকোটের ছেলে নিহত হয়। ওই ঘটনায় আরো বেশ কয়েকজন ইহুদিবাদী সেনা হতাহত হয়েছে।

ফিলিস্তিনি কবি রেফাত আলারির শহীদ হয়েছেন

গাজার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক ও জনপ্রিয় কবি রেফাত আলারির

ফিলিস্তিনের তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় কবি ও শিক্ষাবিদ রেফাত আলারির গতরাতে ইসরাইলি বিমান হামলায় শহীদ হয়েছেন। তিনি ফিলিস্তিনবাসীর দুঃখ-কষ্ট ও স্বপ্নের কথা ইংরেজিতে লিখে বিশ্ববাসীকে জানাতেন।

রেফাতের বন্ধু গাজার কবি মোসাব আবু তোহা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমার হৃদয় ভেঙে গেছে, আমার বন্ধু ও সহকর্মী রেফাত আলারির ও তাঁর পরিবারকে কিছুক্ষণ আগে হত্যা করা হয়েছে।’

ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস জানিয়েছে, গতকাল সন্ধ্যায় গাজার উত্তরাঞ্চলে হামলা চালায় ইসরাইল। এতে রেফাত আলারির, তার ভাই-বোন এবং চার সন্তান শহীদ হন।   

গত অক্টোবর মাসে গাজায় স্থল অভিযান শুরু করে ইসরাইল। এর কয়েক দিন পর আলারির গাজার উত্তরাঞ্চল ছেড়ে যাবেন না বলে জানান। সে সময় গাজার উত্তরাঞ্চল ছিল হামলার কেন্দ্রস্থল।

আলারির গাজার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ‘উই আর নট নম্বরস’ (আমরা সংখ্যা নই) প্রকল্পের সহপ্রতিষ্ঠাতাদের একজন ছিলেন। 

গত মাসে কবি আলারির এক্সে ‘ইফ আই মাস্ট ডাই’ (যদি আমাকে মরতে হয়) নামে একটি কবিতা প্রকাশ করেন। সে সময় এক্সে কয়েক হাজারবার এটি শেয়ার হয়। কবিতার শেষটা ছিল এ রকম: ‘যদি আমাকে মরতে হয়, তবু আশা থাকুক, তবু গল্প থাকুক।’

তার প্রতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়েছে দ্য লিটারারি হাব ওয়েবসাইট এবং ফিলিস্তিনি কবি-সাহিত্যিকরা।

ইরাক ও সিরিয়ায় আমেরিকার ঘাঁটিতে হামলা

ইরাকের পশ্চিমাঞ্চলীয় আল-আনবার প্রদেশে অবস্থিত আমেরিকার আইন আল-আসাদ বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় মার্কিন মদদে ইসরাইল আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় ইরাকের প্রতিরোধ সংগঠন এই হামলা চালায়।

ইসলামিক রেজিস্টেন্স অব ইরাক আজ (শুক্রবার) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, "গাজায় ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইলি শত্রুদের যুদ্ধাপরাধের প্রতিক্রিয়ায় আজ 'আইন আল-আসাদ' ঘাঁটিতে কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত হানা হয়।"

এর আগে প্রকাশিত বিবৃতিতে প্রতিরোধ সংগঠনটি বলেছে, সিরিয়ার কনোকো তেলক্ষেত্রে অবস্থিত আমেরিকার ঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সরাসরি আঘাত করেছে ইরাকের প্রতিরোধ যোদ্ধারা।

বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসের কাছে বিস্ফোরণ

বার্তা সংস্থা রয়র্টাস জানিয়েছে, আজ (শুক্রবার) স্থানীয় সময় ভোররাত ৪টার দিকে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের অত্যন্ত সুরক্ষিত গ্রিন জোনে মার্কিন দূতাবাসের কাছে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। সেগুলো ঠিক কোথায় আঘাত হেনেছে এবং কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না, পরিষ্কার হয়নি।

সামাজিক মাধ্যমে আসা ভিডিওর বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, রকেট হামলার সময় লোকজনকে সতর্ক করতে গ্রিন জোনের ভেতরে সাইরেন বেজে ওঠে। ঘটনার বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের করা অনুরোধে মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র তাৎক্ষণিভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।

৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরাইলের অভ্যন্তরে নজিরবিহীন অভিযান পরিচালনা করে। ওই হামলার দিন থেকেই গাজা উপত্যকায়য় ভয়াবহ আক্রমণ শুরু করে ইসরাইল। তাদের হামলায় গত দুই মাসে গাজায় ১৭ হাজারেও বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছে।

বর্বরোচিত এই হামলায় দখলদার ইসরাইলকে সামরিকসহ সব ধরনের সমর্থন দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর প্রতিক্রিয়ায় অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে এ পর্যন্ত ইরাক ও প্রতিবেশী সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক বাহিনীর অবস্থাগুলোতে ৭০টিরও বেশি হামলা হয়েছে। ইরাক ও সিরিয়ার প্রতিরোধ সংগঠনগুলো এসব হামলার দায় স্বীকার করেছে।

ইরাকে মোতায়েন মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা আরো কঠোর হবে

ইরাকের মার্কিন বিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলন হারাকাত হিজবুল্লাহ আন-নুজাবা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, উত্তর ইরাকে এই সংগঠনের ঘাঁটিতে হামলা চালানোর জন্য আমেরিকাকে চড়া মূল্য দিতে হবে। ওই হামলায় আন-নুজাবার পাঁচ যোদ্ধা নিহত হন।

ইরাক সরকারের অধীনে থাকা পপ্যুলার মোবিলাইজেশন ইউনিট বা পিএমইউ’র অঙ্গ সংগঠন হিসেবে আন-নুজাবা ইরাকে মোতায়েন মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।

সংগঠনটির শীর্ষ নেতা শেখ আকরাম আল-কা’বি গতকাল (সোমবার) এক বিবৃতিতে বলেছেন, এখন থেকে ইরাকে মার্কিন ঘাঁটি ও মার্কিন স্বার্থে আরো কঠোর আঘাত হানা হবে। তিনি বলেন, ইরাক থেকে সকল মার্কিন সেনা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত প্রতিরোধ সংগঠনগুলো মার্কিন স্বার্থে আঘাত হানা অব্যাহত রাখবে।

এর আগে রোববার ইরাকে মোতায়েন মার্কিন সন্ত্রাসী সেনাবাহিনী জানিয়েছিল, তারা ইরাক ও সিরিয়ার মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলায় জড়িত একটি আস্তানায় হামলা চালিয়েছে।  ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় কিরকুক প্রদেশে চালানো ওই হামলায় আন-নুজাবার পাঁচ সদস্য নিহত হন।

ইরাকের প্রতিরোধ আন্দোলন রোববার জানায়, তারা পশ্চিম ইরাকের আইনাল আসাদ বিমান ঘাঁটি এবং সিরিয়ার আল-খাজরা গ্রামে মোতায়েন মার্কিন সেনাদের ওপর হামলার কাজে ড্রোন ব্যবহার করেছে।

মার্কিন সমর্থন নিয়ে অবরুদ্ধ গাজার উপত্যকার ওপর ইসরাইলি সেনারা ভয়াবহ আগ্রাসন শুরু করার পর থেকে গত প্রায় দু’মাসে ইরাক ও সিরিয়ায় মোতায়েন মার্কিন সেনা অবস্থানে অসংখ্য হামলা চালিয়েছে প্রতিরোধ সংগঠনগুলো।

ইসরাইলকে গাজা আগ্রাসন বন্ধ করতে চাপ দিতে মার্কিন সরকারকে বাধ্য করার জন্য ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন সেনা ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালাচ্ছে প্রতিরোধ সংগঠনগুলো। সেইসঙ্গে ইয়েমেনের হুথি আনসারুল্লাহ আন্দোলন এবং লেবাননের হিজবুল্লাহও গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে।

>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url