ইসরাইলি সেনারা অস্ত্রের মূখে অপহৃত ফিলিস্তিনিদেরকে চরমভাবে অপদস্থ করছে | আমেরিকা ইসরাইলের যুদ্ধ অপরাধের সহযোগী

চলমান যুদ্ধে ৫ হাজার ইসরাইলি সেনা আহত হয়েছে

চলমান যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত দখলদার ইসরাইলের পাঁচ হাজার সেনা আহত হয়েছে। আহত পাঁচ হাজার সেনার মধ্যে দুই হাজারেরই অঙ্গহানি ঘটেছে। এ তথ্য জানিয়েছে ইসরাইলি দৈনিক ইয়েদিউত আহরোনোত।

ইসরাইলের বিভিন্ন সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি আরও লিখেছে, যুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে এখনও প্রতিদিন গড়ে ৬০ জন আহত সেনা ভর্তি হচ্ছে। রোগীদের বেশিরভাগই গুরুতর জখম নিয়ে সেখানে আসছে। 
গত শুক্রবার ইসরাইলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজায় স্থল অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৯৭ জন ইসরাইলি সেনা প্রাণ হারিয়েছে। তবে বিভিন্ন সূত্র বলছে, ইসরাইল তাদের হতাহত সেনাদের সঠিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করছে না। সামরিক বাহিনীর মনোবল ধরে রাখতে এবং জনরোষ ঠেকাতে তারা হতাহতের সংখ্যা অনেক কম বলে প্রচার করছে।

ইসরাইলের টিভি চ্যানেল-টুয়েলভ জানিয়েছে, ইসরাইলের সেনাবাহিনী হাসপাতালগুলোকে নির্দেশ দিয়ে রেখেছে তারা যেন সমন্বয় না করে আহতের সংখ্যা কাউকে না জানায়।

গাজা উপত্যকায় দ্রুত যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা জরুরি

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গাজা উপত্যকার মানবিক পরিস্থিতিকে "বিপর্যয়কর" বলে নিন্দা করে সেখানে জরুরিভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি এবং অবরুদ্ধ অঞ্চলে উত্তেজনা কমানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
শুক্রবার গভীর রাতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ানের সাথে টেলিফোন আলাপে গুতেরেস এই মন্তব্য করেন। এসময় দুজন গাজার চলমান পরিস্থিতি এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে তোলা প্রস্তাবে আমেরিকার ভেটো দেয়া নিয়ে আলোচনা করেন। ওই প্রস্তাবের পক্ষে নিরাপত্তা পরিষদের ১৩ সদস্য ভোট দেয়, আর আমেরিকা তাতে ভেটো দিয়েছে। ব্রিটেন এ প্রস্তাবের ওপর ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিল।

আমির আবদুল্লাহিয়ানের সাথে আলোচনায় গুতেরেস জাতিসংঘ সনদের ৯৯ ধারা কার্যকর করার কথা তুলে ধরে বলেন, গাজাসহ পুরো ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি অনেক বেশি জটিল হওয়ায় তিনি এ পদক্ষেপ নেন। তিনি বলেন, গাজায় জরুরিভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন তিনি যা এর আগে কখনো এতটা অনুভব করেননি। ১৯৮৯ সালের পর এই প্রথম জাতিসংঘ মহাসচিব ৯৯ ধারা কার্যকর করলেন।

গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধে ৯৯ কার্যকর করার আহ্বানের জন্য গুতেরেসকে ধন্যবাদ জানিয়ে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "জাতিসংঘ সনদের ৯৯ ধারার ব্যবহার আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য আপনার পক্ষ থেকে একটি সাহসী পদক্ষেপ। বিশ্ব জনমত এর পক্ষে রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ইসরাইলি সেনারা অস্ত্রের মূখে অপহৃত ফিলিস্তিনিদেরকে চরমভাবে অপদস্থ করছে


গতকাল ইসরাইলি সেনারা অস্ত্রের জোরে যেসব ফিলিস্তিনিকে এভাবে অপদস্থ করে ধরে নিয়ে গিয়েছিল তাদের কাউকে কাউকে মধ্যরাতের পর ছেড়ে দিয়েছে। তাদের একজন আজ বলেছেন: 

আমাদেরকে উত্তর গাজা থেকে অর্ধ উলঙ্গ করে ধরে নিয়ে যায় দখলদার সেনারা। আমাদের চোখ বেঁধে ট্রাকে করে তারা সাগর তীরে নিয়ে যায়। কাপড়বিহীন অবস্থায় প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যে রাত ১২টা পর্যন্ত আমাদেরকে বালুমাটিতে ফেলে রাখে। এরপর আমাদের কয়েকজনেকে ছেড়ে দেয় এবং বাকিদের আটকে রাখে। আমরা পায়ে হেঁটে আমাদের বাসাবাড়িতে ফিরে আসি। ফিরে দেখি আমাদের প্রত্যেকের বাড়ি লুট করে ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে শুক্রবার সামাজিক মাধ্যম এক্স পেইজে দেয়া এক পোস্টের মাধ্যমে জেরুজালেমের ডিপুটি মেয়র ইৎজাট কিং ইসরাইলের সন্ত্রাসী সেনাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, গাজা থেকে যুদ্ধের সময় যে শত শত মানুষকে আটক করা হয়েছে সেগুলোকে জীবিত কবর দিতে হবে।

গাজা উপত্যকা থেকে দখলদার সেনারা সম্প্রতি যেসব ফিলিস্তিনিকে আটক করে অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় রাস্তার ওপর বসিয়ে রাখার যে ছবি প্রকাশ করেছে তাদের কথা উল্লেখ করে এক্স পেইজের ওই পোস্টে কিং তার ভাষায় বলেন, “সেনাবাহিনীর উচিৎ দ্রুত এই মুসলিম নাৎসিবাদীদের নির্মূল করা।”

“আমরা বন্দি সেনাকে উদ্ধারের প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছি” ইসরাইলি বাহিনীর স্বীকারোক্তি

হামাস গতকাল দুপুরে বলেছিল, তাদের কাছ থেকে একজন ইসরাইলি পণবন্দি ছিনিয়ে নেওয়ার ইহুদিবাদী প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। সংঘর্ষে ওই ইসরাইলি পণবন্দি সেনা নিহত হয়েছে। 
ইসরাইলি বাহিনী আজ স্বীকার করেছে, তাদের পণবন্দি উদ্ধারের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। 
 হামাসের বিবৃতি প্রকাশের পর ইহুদিবাদী ইসরাইলি সেনারা এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। তারা বলেছে, হামাসের হাতে আটক পণবন্দি সেনাদের উদ্ধার করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে ইসরাইলি সেনারা। 
টাইমস অব ইসরাইল জানিয়েছে, এ ঘটনায় তারা তাদের দুই সেনার গুরুতর আহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। ইহুদিবাদী বাহিনী দাবি করেছে, এ হামলায় পণবন্দিদের আটক করে রাখা কয়েকজন হামাস যোদ্ধা নিহত হয়েছে।
ইসরাইলি বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, "শেষ পর্যন্ত পণবন্দি সেনাদের মুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে আমাদের সেনারা।"

আমেরিকা ইসরাইলের যুদ্ধ অপরাধের সহযোগী

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ওপর ইহুদবাদী ইজরাইলি সেনাদের যে বর্বর আগ্রাসন চলছে তা বন্ধের দাবিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে তোলা প্রস্তাবে আমেরিকা ভেটো দেয়ার পর দেশটির সমালোচনায় মুখর হয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলেছে, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দিয়ে আমেরিকা ইসরাইলের এই যুদ্ধ অপরাধের সহযোগী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছে। সংস্থাগুলো বলছে, আমেরিকা গাজার বেসামরিক জনগণের নজিরবিহীন ভোগান্তির বিষয়টিকে সম্পূর্ণভাবে অবজ্ঞা করেছে।

গতকাল (শুক্রবার) ওই প্রস্তাবের পক্ষে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৩টি সদস্য দেশ ভোট দেয়। কিন্তু আমেরিকা এর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে এবং ব্রিটেন ভোটদানে বিরত ছিল। প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভেটো দেয়ার পর ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শাতাইয়া তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “এটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং গাজায় গণহত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ এবং সেখানকার মানুষদেরকে উদ্বাস্তু করে দেয়ার জন্য দখলদার ইসরাইলকে ব্ল্যাংক চেক দেয়া হলো।” জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর বলেছেন, এই ভেটোর ফলাফল হবে বিপর্যয়কর।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ইহুদিবাদী ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞের প্রতি আমেরিকার সমর্থন ও যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের বিস্ফোরণের সম্ভাবনা থেকে যাবে যা নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হবে।

তুরস্ক বলেছে, জাতিসংঘে এই ভোটের মাধ্যমে আমেরিকা নিজেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একঘরে করে ফেলেছে এবং ইসরাইল ইস্যুতে মার্কিন রাজনীতির অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে। মার্কিন ভোটের পর চীন বলেছে, “একদিকে গাজার মানুষের জীবন বাঁচানোর কথা বলা আর অন্যদিকে যুদ্ধ বন্ধের বিরুদ্ধে ভেটো দেয়া- কপটতা ছাড়া কিছু নয়।”

মার্কিন ভেটোর বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে রাশিয়ার উপ প্রথম স্থায়ী প্রতিনিধি দিমিত্রি পলিয়ানস্কি বলেছেন, এর মাধ্যমে আমেরিকা গাজার হাজারো মানুষের মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছে। ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, “আবারো নিরাপত্তা পরিষদ গাজা ইস্যুতে ঐকমত্যে আসতে ব্যর্থ হলো।”

এছাড়া, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মার্কিন ভেটোর বিরুদ্ধে শক্ত কথা বলেছে।

************************************************

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url