গাজা এখনও হামাসের হাতে | আটক সেনাদের মুক্ত করতে গিয়ে ইসরাইলি সেনা হতাহত | ইসরাইলকে ধুয়ে দিল রাশিয়া

আটক সেনাদের মুক্ত করতে গিয়ে ইসরাইলি সেনা হতাহত

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হাতে আটক একজন ইসরাইলি সেনাকে মুক্ত করার ব্যর্থ অভিযান চালাতে গিয়ে কয়েকজন ইহুদিবাদী সেনা হতাহত হয়েছে। এ সময় দখলদার বাহিনীর বোমাবর্ষণে আটক ঐ  ইসরাইলি সেনাও নিহত হয়েছে।

হামাসের সামরিক বাহিনী ইজ্জাদ্দিন আল-কাসসাম ব্রিগেড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গতকাল (শুক্রবার) সকালে তাদের হাতে আটক একজন ইসরাইলি সেনার সন্ধান পায় ইহুদিবাদী সেনারা। ইসরাইলি সেনাদের একটি কমান্ডো দল তাদের আটক সহকর্মীকে তুলে নেয়ার চেষ্টা চালায়। হামাস যোদ্ধারা এ সময় পাল্টা হামলা চালালে কয়েকজন শত্রু  সেনা হতাহত হয়। তারা আটক বন্দিকে উদ্ধার করার চেষ্টা বাদ দিয়ে পালাতে উদ্যত হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, এ সময় যথারীতি ইসরাইলি যুদ্ধবিমান হস্তক্ষেপ করে এবং ইহুদিবাদী সেনাদের পালাতে সাহায্য করার জন্য আকাশ থেকে ব্যাপকভাবে বোমাবর্ষণ করে।  এই সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে সার বারুচ নামক ২৫ বছর বয়সি ওই ইসরাইলি বন্দি সেনা নিহত হয়।

ইহুদিবাদী সেনাদের বিমান হামলায় নিহত পণবন্দি ইসরাইলি সেনার ভিডিও প্রকাশ করেছে হামাস। আগে ধারন করা ভিডিওতে বারুচকে বলতে শোনা যায়: "আমার নাম সা'র বারুচ। কিব্বুজ বেরি এলাকায় আমার বাড়ি। আমি ৭ অক্টোবর আটক হয়েছি এবং [ভিডিও রেকর্ডের দিন পর্যন্ত] ৪০ দিন ধরে আটক রয়েছি। আমি আমার বাড়ি ফিরে যেতে চাই।" কিন্তু ইহুদিবাদী সেনাদেরই হামলার কারণে সে আর জীবিত অবস্থায় বাড়ি ফিরে যেতে পারল না। তেল আবিবকে এখন ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে এই সেনার লাশ ফেরত নিতে হবে। এরপর ভিডিওতে ওই ইসরাইলি সেনার রক্তমাখা পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রী এবং সবশেষে তার লাশ দেখানো হয়।

ওদিকে, হামাসের বিবৃতি প্রকাশের পর ইহুদিবাদী ইসরাইলি সেনারা এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। তারা বলেছে, হামাসের হাতে আটক পণবন্দি সেনাদের উদ্ধার করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে ইসরাইলি সেনারা। এ ঘটনায় তারা তাদের দুই সেনার গুরুতর আহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। ইহুদিবাদী বাহিনী দাবি করেছে, এ হামলায় পণবন্দিদের আটক করে রাখা কয়েকজন হামাস যোদ্ধা নিহত হয়েছে।

ইসরাইলি বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, শেষ পর্যন্ত পণবন্দি সেনাদের মুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে আমাদের সেনারা। হামাসের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা ভিডিওর বর্ণনায় এসেছে, ইসরাইলি সেনারা অ্যাম্বুলেন্সে করে মানবিক তৎপরতা চালানোর ভান করে ইসরাইলি পণবন্দিকে মুক্ত করতে এসেছিল।

গাজা এখনও হামাসের হাতে: ইহুদিবাদী গণমাধ্যম

ইহুদিবাদী ইসরাইলি গণমাধ্যমগুলো স্বীকার করেছে ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস দুর্বল হয় নি। গাজার ক্ষমতা এখনও তাদেরই হাতে।

ইহুদিবাদী গণমাধ্যমগুলো এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইসরাইলি সেনারা এখন পর্যন্ত হামাসের কোনো ক্ষতি করতে পারে নি। হামাস এখনও গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ হারায় নি বলে ইসরাইলি মিডিয়া স্বীকার করেছে।
ইহুদিবাদী যুদ্ধমন্ত্রী গালান্ত সম্প্রতি দাবি করেছিল হামাসের পতন ঘটতে যাচ্ছে। ওই দাবির প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অলিভার লিভি ইহুদিবাদী চ্যানেল 'কান'-এ বলেছেন: হামাসের মূল শক্তি এখনও দুর্বল হয় নি।

ইহুদিবাদী মিডিয়াও স্বীকার করেছে: আল-আকসা তুফান অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধারা এখন পর্যন্ত ইহুদিবাদী বসতিগুলোতে যথারীতি রকেট এবং মর্টার হামলা চালিয়েই যাচ্ছে।

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ বাহিনী গত ৭ অক্টোবর স্থল, আকাশ এবং সমুদ্রপথে ইসরাইলি ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করে নজিরবিহীন অভিযান চালায়। আল-আকসা তুফান নামের ওই অভিযানে বহু ইসরাইলি সেনা হতাহত হয় এবং শত শত ইসরাইলিকে যুদ্ধবন্দী হিসেবে গাজা উপত্যকায় নিয়ে যায়।

প্রেসিডেন্ট রায়িসি ও পুতিনের ৫ ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক


ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টদের মধ্যে মস্কোয় ৫ ঘন্টাব্যাপী আলোচনা হয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান মস্কোর ওই বৈঠকের কথা উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর ব্যক্তিগত পৃষ্ঠায় একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন: দুই নেতার মধ্যে আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ফিলিস্তিন ইস্যু।

ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়েদ ইব্রাহিম রায়িসি ভ্লাদিমির পুতিনের আমন্ত্রণে এক দিনের সফরে গতকাল (বৃহস্পতিবার) মস্কো সফরে যান।বার্তা সংস্থা ইরনা ওই খবর দিয়েছে। আমির আবদুল্লাহিয়ান বলেন: রাশিয়া ও ইরানের প্রেসিডেন্টের আলোচনার মধ্যে গাজা ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় ছিল। যেমন: অবিলম্বে গাজা এবং পশ্চিম তীরে যুদ্ধ ও গণহত্যা বন্ধ করা। গাজার বাসিন্দাদের জোরপূর্বক অভিবাসন বন্ধ করা। গাজায় ব্যাপক মানবিক ত্রাণ সাহায্য পাঠানোর সুবিধার্থে অবিলম্বে রাফাহ ক্রসিং খুলে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দিয়েছেন উভয় নেতা।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে জোর দিয়ে বলেছেন: রাশিয়া ওই ইস্যুগুলোর ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার কথা ভাবছে। আমির আবদুল্লাহিয়ান প্রেসিডেন্ট রায়িসি এবং পুতিনের মধ্যকার আলোচনার অন্যান্য বিষয় সম্পর্কেও সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন। তিনি লিখেছেন: দু'দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়গুলোও দুই প্রেসিডেন্টের আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে।

প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসি অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বিরুদ্ধে চলমান ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞকে 'গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ' বলে উল্লেখ করেন। সেইসাথে অবিলম্বে ওই গণহত্যা ও নির্বিচার বোমাবর্ষণ বন্ধ করে এর একটি সমাধানসূত্র বের করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

পুতিন সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্য সফর করেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেছেন। আরব দেশগুলো সফর করার পরদিনই পুতিনের সঙ্গে মস্কোয় সাক্ষাৎ করলেন প্রেসিডেন্ট রায়িসি। মধ্যপ্রাচ্য সফরে পুতিন গাজা ও ইউক্রেন পরিস্থিতির পাশাপাশি ওপেকের পক্ষ থেকে তেলের দাম বৃদ্ধির প্রচেষ্টা নিয়েও আলোচনা করেছেন। প্রেসিডেন্ট রায়িসির সঙ্গে আলোচনাকালে পুতিন বলেন: আমরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যু বিশেষ করে ফিলিস্তিন ইস্যুতে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করছি। ইরানের সঙ্গে ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়নের শুল্কমুক্ত বাণিজ্য বিনিময়ের উপায় নিয়েও রাশিয়া কাজ করছে বলে প্রেসিডেন্ট পুতিন ইরানি প্রেসিডেন্টকে জানান।

উল্লেখ্য যে ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। সম্প্রতি দেশ দু'টি  একতরফা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা যৌথভাবে মোকাবেলা করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

এক বাড়িতেই ৩০ ফিলিস্তিনি শহীদ, গাজায় এ পর্যন্ত ১৭,১৭৭ জন শহীদ

গাজা সিটিতে এক বাড়িতে দখলদার ইসরাইলের জঙ্গি বিমানের হামলায় ৩০ জন ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন। এছাড়া গাজার হালাব স্কুলেও জঙ্গি বিমান থেকে বোমা ফেলা হয়েছে।

সেখানেও বহু ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী গাজায় এ পর্যন্ত ১৭ হাজার ১৭৭ জন ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু।

গাজায় প্রতিরোধ বাহিনীর আক্রমণে ইসরাইলের অসংখ্য সামরিক যান ধ্বংস

এদিকে, গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে হামাস ও ইসলামি জিহাদের যোদ্ধাদের সংঘর্ষ চলছে। গাজা শহরের দক্ষিণের আল-সুজাইয়া এলাকায় ইসলামি জিহাদের সামরিক শাখা আল-কুদস ব্রিগেডস দখলদার বাহিনীর ওপর ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। তাদের হামলায় তিনটি সাজোয়া যান ধ্বংস হয়েছে। এসব সামরিক গাড়ি ধ্বংসে ব্যবহার করা হয়েছে আরপিজি-২৯।

এছাড়া, হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জাদ্দিন আল কাস্সাম ব্রিগেড আজ গাজা সিটির দক্ষিণে ইসরাইলের যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে আঘাত হেনেছে। স্বল্প পাল্লার একটি ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে সেখানে আঘাত হানা হয়েছে। এর ফলে দখলদারদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কাস্সাম ব্রিগেড অন্যান্য স্থানেও হানাদার বাহিনীর অবস্থানে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে।

কাস্সাম ব্রিগেডস জানিয়েছে, গত ৭২ ঘণ্টায় তাদের হামলায় শুধুমাত্র গাজা সিটিতে দখলদার ইসরাইলের ৭৯ টি ট্যাংক, সাঁজোয়া যান ও বুলডোজার ধ্বংস অথবা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে ইসরাইলকে ধুয়ে দিল রাশিয়া

ইহুদিবাদী ইসরাইল যদি সত্যিই গাজা উপত্যকায় হামাসের টানেল পানি দিয়ে ভরে দেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে তাহলে তা হবে সরাসরি যুদ্ধাপরাধ। জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার প্রথম উপ স্থায়ী প্রতিনিধি দিমিত্রি পলিয়ানস্কি গতকাল (শুক্রবার) জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে একথা বলেছেন। গাজায় ইহুদিবাদী বর্বর সেনাদের নারকীয় তাণ্ডব শুরুর পর চীন, রাশিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত চলতি ডিসেম্বরের শুরুতে এই জরুরী বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছিল।

বৈঠকে রাশিয়ার এ কূটনীতিক বলেন, “সম্প্রতি ইসরাইলের পক্ষ থেকে এই জঘন্য দুঃখজনক তথ্য প্রকাশ হয়েছে যে, তারা গাজার টানেলগুলোতে পানি ভরে দেয়া পরিকল্পনা করছে। এ পর্যন্ত যেসব তথ্য প্রকাশ হয়েছে তাতে একথা পরিষ্কার হয়েছে যে, ইসরাইলি সেনারা গাজার টানেলগুলোতে পানি ভরার জন্য পাম্প সেট করেছে এবং এ ব্যাপারে বাস্তব পদক্ষেপ নেয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা করছে। ইসরাইল যদি এটি করে তাহলে তা হবে নির্বিচার এবং সমুদ্রের পানি প্রবেশের ফলে গাজা উপত্যকা বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে উঠবে।”

এর আগে অক্টোবরের মাঝামাঝি তথ্য-প্রমাণ ছড়িয়ে পড়ে যে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদেরকে মিশরের দিকে তাড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করছে ইসরাইল।

পলিয়ানস্কি বলেন, ৭ অক্টোবর হামাসের অভিযানের বিপরীতে ইসরাইল যে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাকে কোনভাবেই ন্যায্য বলা যাবে না। তিনি বলেন, মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে অন্য পক্ষের কাছ থেকে মানবাধিকার আশা করা যায় না।

রাশিয়ার এ কূটনীতিক সংশয় প্রকাশ করে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইসরাইলি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো কিছুই করতে পারবে না কারণ এই সংস্থাটি তার পশ্চিমা প্রভুর বিরুদ্ধে কোন কাজ করে না। ফলে আইসিসি ইসরাইলকে সম্ভবত ক্ষমা করে দেবে কারণ ইরাক, আফগানিস্তান এবং লিবিয়ায় পশ্চিমারা যে বর্বরতা চালিয়েছে সে ব্যাপারেও আইসিসি অন্ধ ছিল।

>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url