দ্বীনি জিজ্ঞাসা ও জবাব || ইসলামিক প্রশ্ন ও উত্তর (পর্ব - ০৮)
উত্তর: মেয়েদের বিভিন্ন অসুস্থতা আছে । যেমন সন্তান প্রসবের পর অনেকেই মনে করে চল্লিশ দিন বসে থাকা বোধ হয় ফরয। এটা ঠিক নয়। সাত দিন না, আপনি সুস্থ হলেই নামায পড়তে হবে। যখন নিশ্চিত হবেন আপনি সুস্থ হয়েছেন, পরিচ্ছন্ন হয়েছেন, আপনি গোসল করে পবিত্র হয়ে সালাত আদায় করবেন । সালাত ফরয হয়ে গেছে আপনার উপর । সংসারের অন্যান্য কাজও একইভাবে আপনার দায়িত্বে এসে গেছে ।
বিতর সালাত বসে আদায়
প্রশ্ন-৭২: আমার আম্মু খুব অসুস্থ। তিনি দাঁড়িয়ে ফরয সালাত আদায়। বিতর সালাত কি তিনি বসে আদায় পারবেন ?
উত্তর: সক্ষম মানুষ, যারা সালাতে অন্তত দুই-তিন মিনিট দাঁড়াতে পারেন, তাদের জন্য দাঁড়িয়ে ফরয সালাত আদায় করা ফরয। বিতর অধিকাংশ ফকীহের মতে ওয়াজিব, কারো মতে ওয়াজিব পর্যায়ের সুন্নাত । এজন্য বিতরও ফরযের বিধানে পড়বে, এটা অনেকের মত । কাজেই বিতর আপনার আম্মা দাঁড়িয়ে পড়বেন এটাই সঠিক । তবে বাকি অন্যান্য সালাত তিনি বসে পড়তে পারেন, কোনো সমস্যা নেই । তবে যদি ওযর হয়, বেশি কষ্ট হয়, তাহলে বসে পড়তে পারেন ।
সন্তানদেরকে সম্পত্তি লিখে দেওয়া
প্রশ্ন-৭৩: জীবিত অবস্থায় মন মতো আমার সম্পত্তি আমার সন্তানদের জন্য লিখে দিয়ে যেতে পারব কি না?
উত্তর: আল্লাহ কুরআন কারীমে ইনসাফের কথা বলেছেন। ইনসাফ মানে সবকিছু নিরপেক্ষ । আপনার সন্তানদের ভেতর ইনসাফ করা ফরয । এটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত । রাসূল সা. বলেছেন:
اعْدِلُوا بَيْنَ أَوْلَادِكُمُ
হে মানুষেরা, তোমরা তোমাদের সন্তানদের ভেতরে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করো (সুনান আবু দাউদ-৩৫৪৪; সুনান নাসায়ি-৩৬৮৭)। আপনি যদি জীবিত অবস্থায় সব সম্পদ অথবা কিছু সম্পদ সন্তানদের দেন, ছেলেমেয়ে সবাইকে সমান দিতে হবে। যদি কম-বেশি করেন, আপনি মহাপাপী হবেন । সন্তানরা সম্পত্তি ভোগ করবে আর আপনি আপনার জুলুমের জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে শাস্তি পাবেন । আর যদি আপনি বণ্টননামা লিখে দেন, তাহলে শরীআহ মোতাবেক তারা বণ্টন করবে । ছেলেমেয়ে যে যার অংশ পাবে । আপনি শুধু তাদের সাজেশন দিতে পারেন। সকল সম্পত্তি যদি জুলুম করে বণ্টন করেন, আপনি প্রচণ্ড গোনাহগার হবেন । এবং জুলুমের গোনাহ মদ খাওয়া, ব্যভিচার করা- এগুলোর চেয়ে অনেক কঠিক গোনাহ । এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক হতে হবে । আর একটা ব্যাপার হল, জীবিত অবস্থায় নিজের সকল সম্পদ ওয়ারিশদেব লিখে দিয়ে নিজে সম্পদহীন হয়ে যাওয়া, এটা ইসলাম অনুমোদন করে না। ইসলাম বলে, কিছু দান করেন, সন্তানদের দেন, মৃত্যুর পরে সন্তানরা যার যার পাওনা পাবে ।
আলট্রাসনোর মাধ্যমে সন্তানের লিঙ্গ জানা
প্রশ্ন-৭৪: ছেলে হবে না মেয়ে হবে, এখন আলট্রাসনোর মাধ্যমে আগেই জানা যায় । এটা জানায় গোনাহ হবে কি না?
উত্তর: না, কখনোই নয় । আসলে আমরা অনেক সময় মনে করি, মাতৃগর্ভে কী আছে আল্লাহ জানেন, কাজেই আমরা জানতে গেলে বোধ হয় গোনাহ হবে । না, আল্লাহর ইলম আমরা জানতে পারি না । আসলে একটা গর্ভে কী আছে-
إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ
গর্ভের ভেতর কী আছে তার পরিপূর্ণ পরিচয় কোনো যন্ত্রপাতি ছাড়া সব আল্লাহ জানেন । মানুষ জানে না। কিন্তু কেউ যদি পেট কেটে জানতে পারে, কোনো কারণে জানতে পারে, মেশিন দিয়ে জানতে পারে- এতে দোষের কিছু নেই । কাজেই আল্ট্রাসনোগ্রাম ব্যবহার করা চিকিৎসার জন্য যেমন বৈধ, তেমনি এর মাধ্যমে ছেলে বা মেয়ের পরিচয় জানাতে কোনো গোনাহ হবে না ।
* সহীহ ইবন হিব্বান ৬/১৮৫; সুনান দারাকুতনি ৪/৩৫৮; মুসতাদরাক হাকিম ১/৪৪৬; সুনান বাইহাকি ৩/৩১
ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ
প্রশ্ন-৭৫: আমি জানি ব্যাংকের সুদ হারাম । কিন্তু ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ কতটুকু জায়েয? সাধারণ ব্যাংক আর ইসলামী ব্যাংকের মধ্যে তফাৎ আসলে কতটুকু?
উত্তর: বিষয় হল, ইসলামে ব্যবসাকে হালাল করা হয়েছে । সুদ হারাম করা হয়েছে। সুদ আর ব্যবসার ভেতর পার্থক্য হল- সময় গড়ানোর সাথে সাথে টাকার বিনিময়ে টাকা বৃদ্ধি পাওয়া- এটা হল সুদ । আর পণ্যের বিনিময়ে টাকা বাড়লে কমলে এটা সুদ হবে না, এটা ব্যবসা। ব্যবসার ভেতর জুলুম হতে পারে তবে এটা সুদ নয় । বর্তমানের সাধারণ ব্যাংকগুলো শতভাগ সুদের উপর প্রতিষ্ঠিত। যেটা নিঃসন্দেহে ইসলামে হারাম । অনেকেই বলেন, সুদ মানে চক্রবৃদ্ধির সুদ । এটা মূর্খতাসুলভ কথা । ইসলামে চক্রবৃদ্ধি সুদ বলে কিছু নেই । যেমন, বেশি বেশি সুদ খেতে নিষেধ করা হয়েছে । সাধারণ সুদ খেতে নিষেধ করা হয়েছে । যেমন গোনাহের কথা বলা হয়েছে— তোমরা দারিদ্রের ভয়ে সন্তানদের হত্যা করো না । এর অর্থ এই নয় যে, অন্য কোনো ভয়ে সন্তান হত্যা করা যাবে । বা সন্তান ছাড়া আর কাউকে হত্যা করা যাবে- বিষয়টা এরকম নয় । বরং পাপের একটা বিশেষ পর্যায়কে হারাম করা হয়েছে। ঠিক তেমনি কখনো কখনো ছোট বড় সকল পাপকে হারাম করা হয়েছে । এজন্য সকল সুদই হারাম । তবে ইসলামি ব্যাংকিং যারা করেন, তারা গ্রাহককে টাকা না দিয়ে পণ্য দেয়ার চেষ্টা করেন । মূলনীতির দিক থেকে এটা শরীআতসম্মত । প্রয়োগের দিক থেকে অনেকেই ভুলভ্রান্তি করেন । তবে আশা করি কোনো গ্রাহক যদি এই ধরনের ব্যাংকের সাথে লেনদেন করেন, তিনি তার লেনদেনটা শরীআহ মতো রাখেন, ইনশাআল্লাহ কোনো সমস্যা নেই ।
শাওয়াল মাসের ছয়টা রোযা
প্রশ্ন-৭৬: রমাযানের পরে যে নফল রোযা আমরা রেখে থাকি এটা ঠিক কি না হাদীসের আলোকে জানতে চাই ।
উত্তর: মুসলিম শরীফের সহীহ হাদীস, রাসূল (*) বলেছেন:
مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتَّا مِنْ شَوَّالٍ، كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ
যদি কেউ রমাযানের রোযার পর শাওয়াল মাসের ছয়টা রোযা রাখে তাহলে তার পুরো বছরের রোযা রাখার ছওয়াব হবে” । এটা নফল, খুবই ভালো, না করলে গোনাহ নেই ।
* সহীহ মুসলিম-১১৬৪; সুনান তিরমিযি-৭৫৯
অফিসে ইবাদত করা যাবে কি
প্রশ্ন-৭৭: (একজন নারীর প্রশ্ন) আমি একটা ব্যাংকে সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত জব করি । অনেক সময় থাকতে হয় বিধায় আমি অফিসেই অর্থসহ কুরআন শরীফ, নফল নামায, চাশতের নামায, তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাযগুলো ফাঁকে ফাঁকে পড়ি। তো অফিসে সারাদিনের সময়টা থাকতে হচ্ছে। এই ইবাদতগুলো না করলে আমার ভালো লাগে না । অফিসের সময়ে এ রকম ইবাদত করা যাবে কি না?
উত্তর: জেনে ভালো লাগছে যে, বান্দার হকের চেতনা আমরা ফিরে পাচ্ছি । ইসলামে সবচে' বড় বিষয় হল মানুষের হক আদায় করা । সবচে' বড় পাপ হল মানুষের হক নষ্ট করা । সবচে' বড় বরকত হল কল্যাণ করা । সারারাত তাহাজ্জুদ পড়ার চেয়ে অনেক বেশি ছওয়াবের কাজ হল একটা মানুষের পাশে দাঁড়ানো । তেমনি পাপের ক্ষেত্রেও । আসলে আপনি যে চাকরি করেন এটার উপর নির্ভর করবে আপনার কর্ম । চাকরি যদি অনুমতি দেয়- যেমন, লাঞ্চ ব্রেক আছে, টয়লেটে যাওয়ার ব্যাপার আছে- এই সময় আপনি দুই-এক রাকআত নামায পড়েন, আপনার কর্মকর্তা যদি জানেন, তাহলে এটা বৈধ হবে । নইলে আপনি এটা করবেন না। আপনার যদি বসে থাকা দায়িত্ব হয়, আপনি বসে থাকবেন, যেন সেবাগ্রহীতারা সেবা নিতে পারে । কুরআন তিলাওয়াতেও একই বিধান । এতে সময় লাগে । তবে আপনি মুখে তাসবীহ পড়তে পারেন, যেটা কর্ম নষ্ট করে না । আপনি দুরুদ পড়ছেন, তাসবীহ পড়ছেন, এর ভেতরেই কাস্টমারের সাথে লেনদেন করতে পারেন । তবে সময় দিতে গেলে, হয় আপনাকে কর্মদাতার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে, অথবা সার্ভিস রুলের ভেতরে থেকে করতে হবে । মূলত কর্মটাই আপনার ইবাদত । আল্লাহ কবুল করুন ।
ব্যাংকে চাকরির বেতন কি হালাল
প্রশ্ন-৭৮: আমি প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করি। আমার প্রতিষ্ঠান সুদের সাথে জড়িত । আমার যে বেতন, এটা কি হলাল?
উত্তর: ব্যাংকে সুদ লেখা একটা কাজ। পাশাপাশি প্রশাসনিক অন্যান্য কাজ আছে। প্রশাসনিক কাজগুলো আশা করা যায় বৈধ। সুদ লেখা বা সুদের সাক্ষী হওয়া হারাম কাজ । আমরা আশা করি আপনার কিছু উপার্জন বৈধ, কিছু অবৈধ । আপনি মানুষের হক নষ্ট করার পাপ থেকে বেঁচে আছেন, আল্লাহর কাছে দুআ করেন কীভাবে আরো ভালো হালাল উপার্জনে যেতে পারেন। তবে আপনার উপার্জনের সাথে কিছু হারাম সংমিশ্রিত আছে ।
সন্তানের হক নষ্ট করা
প্রশ্ন-৭৯: আমরা ছয় বোন, দুই ভাই । আমার বাবা যখন মারা যান, হয়তো না জেনে করেছেন, আমার বাবা আমার দুই ভাইয়ের জন্য খুলনার বাড়িটা লিখে দেন । আমার বাবা অনেক নামাযি ছিলেন। হজ্জও করেছেন। আমি খুবই চিন্তিত যে আমার বাবাকে জবাব দিতে হবে কি না আল্লাহর কাছে । আমরা সকল ভাইবোন বলছি যে আমরা মাফ করে দিব । আমরা এটা নিব না । তো এর জন্য কি আমার বাবাকে শাস্তি পেতে হবে?
উত্তর: জি, আপনার আব্বা আপনাদের অর্থাৎ সন্তানের হক নষ্ট করেছেন । বান্দার হক নষ্ট করেছেন । সন্তান হিসাবে আপনারা যদি মাফ করে দেন তাহলে মাফ পেয়ে যাবেন ।
ওযীফার আমল
প্রশ্ন-৮০: কুরআন শরীফে অনেক দুআ আছে । আমি সূরা দুখান শুক্রবারে পড়ি । সূরা মুলক নিয়মিত পড়ি । সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত ফজর নামাযের পর পড়ি। সূরা ওয়াকিয়াহ পড়ি । এই আমলগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত বলবেন ।
উত্তর: আপনার ওযীফাগুলো কিছু সহীহ, কিছু জাল হাদীস নির্ভর । এখানে বিস্তারিত বলতে পারব না । আপনাকে একটু কষ্ট করতে হবে। আসলে ভালো জিনিস শিখতে গেলে কষ্ট করতে হয় । সমাজে, আলহামদুলিল্লাহ, সহীহ হাদীস নির্ভর বইপুস্তক আছে । যেমন “হিসনুল মুসলিম' নামে একটা বই আছে। ‘রাহে বেলায়াত’ ওযীফা নির্ভর একটা বই । এই জাতীয় সহীহ হাদীস নির্ভর বইগুলো পড়েন, তাহলে অনেক সহজে সহীহ দুআগুলো জানতে পারবেন ।
💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url