আল আকসার ইতিকথা-৮ | খুলাফা যুগে মসজিদে আকসা | উমাইয়া যুগে মসজিদে আকসা। হিত্তিনের যুদ্ধ


আল আকসা মসজিদের ইতিকথা শীর্ষক এই প্রবন্ধগুলো এ এন এম সিরাজুল ইসলামের লেখা “আল আকসা মসজিদের ইতিকথা” গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। সুন্দর তথ্যবহুল এই গ্রন্থটি বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে মসজিদে আকসা


আকাশে ওঠার জন্য সম্ভবতঃ মসজিদে আকসা ছাড়া আর কোন কেন্দ্র বা পথ নেই। তাই মে'রাজের রাত্রে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মসজিদে আকসার পথে উর্ধ্বজগত ভ্রমণ করেছেন। মক্কা কিংবা মদীনাহ অথবা অন্য কোন স্থান থেকে সরাসরি উর্ধ- জগত ভ্রমণ করেননি। পূর্বে বর্ণিত এক হাদীসে জানা গেছে, সেখান থেকে হাশর-নশর হবে এবং লোকেরা বেহেশত ও দোযখে যাবে। মে'রাজে গিয়ে তিনি এসব জিনিস স্বচক্ষে দেখে এসেছেন।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ৰাইতুল মাকদিসকে শিরকমুক্ত করার জন্য রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াসের কাছে ইসলামের দাওয়াত পাঠান। এরপর রোমান বাহিনীর মুকাবিলা করার জন্য তিন হাজার সাহাবী মুতা নামক স্থানে জড়ো হন। সেই যুদ্ধে তিনজন প্রখ্যাত সাহাবী শহীদ হন। তাঁরা হলেন, যায়েদ বিন হারিসা, জাফর বিন আবু তালিব ও আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা। দুইপক্ষের মধ্যে কঠিন যুদ্ধ হয়। শেষ পর্যন্ত খালিদ সাইফুল্লাহর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী নিরাপদে প্রত্যাবর্তন করে। এরপর রোম বাহিনী বাইতুল মাকদিসের উপর মুসলমানদের সাম্ভাব্য বিজয়ের আশংকায় মদীনার মুসলিম রাষ্ট্রটির উপর আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। কেননা, রোমান সম্রাট বাইতুল মাকদিস-কেন্দ্রিক খৃস্টান বিশ্বের নেতৃত্ব হাতছাড়া করতে রাজী ছিল না। ৯ম হিজরীতে মুসলমানগণ খৃস্টানদের উক্ত আক্রমণের খবর পেয়ে ৩০ হাজার সৈন্য নিয়ে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। মুসলিম বাহিনী তাবুক পর্যন্ত পৌঁছার পর খৃস্টানদের কোন যুদ্ধ তৎপরতা না দেখে পুনরায় মদীনায় ফিরে আসেন। আসলে, রোম বাহিনী মুসলমানদের খবর পেয়ে ভেগে পড়ে।

বিদায় হজ্জ থেকে মদীনায় ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সিরিয়ায় রোমান বাহিনীর মূল দুর্গে আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে মুসমানদেরকে প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেন। তিনি উসামা বিন যায়েদকে ঐ বাহিনীর সেনাপতি নিযুক্ত করেন। তখন উসামা ১৮ বছরের যুবক। উসামার নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী মদীনা থেকে বের হন এবং জোরাফে যাত্রাবিরতি করেন। সেই সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মৃত্যু- পীড়ায় আক্রান্ত হন ও মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়ার জন্য ইন্তিকাল করেন। মুসলিম বাহিনী সেখানে পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষা করতে থাকে ।

হযরত আবু বাকরের যুগে মসজিদে আকসা


রাসূলুল্লাৱ (সাঃ) ইন্তিকালের পর হযরত আবু বাকর (রাঃ) ইসলামের ১ম খলীফা নির্বাচিত হন। তিনি উসামা বাহিনীর অগ্রযাত্রার নির্দেশ দেন। তিনি মুরতাদ বা ধর্মত্যাগীদের বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালনা করেন এবং তাদের উপর বিজয় লাভ করেন। উসামা বাহিনী প্রেরণের লক্ষ্য অর্জিত হয়। তারপর তিনি সিরিয়া জয় করে তাকে ইসলামী রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ১২ হাজার মুসলিম সেনার এক বিরাট বাহিনী গঠন করে খালিদ বিন ওয়ালিদকে এর আমীর নিযুক্ত করেন। সিরিয়ায় রোমান বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ঐ বাহিনীতে বড় বড় সাহাবায়ে কেরাম শরীক ছিলেন। ঐ অভিযানের ফলে ফিলিস্তিনের কয়েকটি শহর মুসলমানদের দখলে আসে। মূলতঃ হযরত আবু বাকরের আমলেই জেরুজালেম জয়ের সূচনা হিসেবে ফিলিস্তিনের নিকটবর্তী শহরগুলো মুসলমানদের দখলে আসে। জেরুজালেম জয় করার আগেই হযরত আবু ৰারের (রাঃ) ইন্তিকাল হয় ।

হযরত উমার ফারুকের যুগে মসজিদে আকসা


সিরিয়া জয়ের পর হযরত উমার ফারুক (রাঃ) বাইতুল মাকদিস জয় করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। তিনি জেরুজালেম শহরে হযরত আবু ওবায়দাহ ইবন জাররাহর নেতৃত্বে ৫ হাজরে অশ্বারোহী সৈন্য পাঠান। তারপর ইয়াযিদ বিন আবী সুফিয়ানের নেতৃত্বে ৫ হাজার এবং শোরাহবিল বিন হাসানাহর নেতৃত্বে আরো ৫ হাজার সৈন্য পাঠান। সম্মিলিত বাহিনী জেরুজালেম শহর অবরোধ করে এবং তা দীর্ঘ ৪ মাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। শহরবাসী লোকেরা প্রথম দিকে মোকাবিলা করলেও পরে পরাজিত হয় এবং সন্ধির প্রস্তাব দেয়। তারা খলীফাতুল মুসলেমীন হযরত উমারের উপস্থিতি দাবী করে। আবু ওবায়দাহ হযরত উমারকে জেরুজালেম যাওয়ার জন্য আহ্বান জানান। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিনি ১৮ হিজরীর রজব মাসে জেরুজালেম পৌঁছেন। এটা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মে'রাজেরও মাস। তিনি মোকাব্বের পাহাড়ের পথ দিয়ে জেরুজালেম পৌঁছেন। তাকবীর থেকে মোকাব্বের শব্দের উৎপত্তি। হযরত উমার তাকবীর দিতে দিতে শহরে পৌঁছার কারণে ঐ পাহাড়কে ‘মোকাব্বের পাহাড়, বলা হয়। শহরে পৌছার পর পরই তিনি মসজিদে আকসা থেকে খৃস্টানদের সকল আবর্জনা ও অপবিত্রতা দূর করেন। তারা ইহুদীদের প্রতি বিদ্বেষের কারণে সাখরায় ময়লা-আবর্জনা নিক্ষেপ করত । তিনি সাখরার সামনে মসজিদ নির্মাণ করেন এবং সাখরাকে মসজিদের পেছনে রাখেন। মসজিদ তৈরির আগে তিনি কাব আহবারকে জিজ্ঞেস করেন, কোথায় মসজিদ তৈরি করা যায়? কাব বলেন, সাখরাকে সামনে রেখে পেছনে মসজিদ তৈরি করুন। উমার (রাঃ) বলেন, তা ইহুদীদের মতই হয়ে যায়। তাই তিনি সাখরার সামনেই মসজিদে তৈরি করেন। উল্লেখ্য যে, সেখানে মসজিদে আকসা নামে কোন মসজিদ ছিল না। বরং কুরআন 'মসজিদে আকসা' শব্দের উল্লেখ করায় একদিকে তা সেজদা ও ইবাদতের জায়গার প্রতি ইঙ্গিত এবং অন্যদিকে, অদূর ভবিষ্যতে নির্মিতব্য মসজিদের বিষয়ে ভষ্যিদ্বাণী করা হয়েছে। মসজিদে সাখরাকে মসজিদে উমারও বলা হয়।

উমাইয়া শাসনামলে মসজিদে আকসা


উমাইয়া খলীফাহ আবদুল মালেক বিন মারওয়ান দামেস্কের সাথে সাথে জেরুজালেমেও খেলাফতের বাইয়াত নেন এবং জেরুজালেম শহর পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন। তিনি ৬৮৫-৮৯ খৃঃ অর্থাৎ ৭৩ থেকে ৮৬ হিজরীর মধ্যে মসজিদে সাখরাকে সুন্দর করে পুনঃনির্মাণ করেন এবং নতুন করে মসজিদে আকসা তৈরির জন্য মসজিদে আকসার দেয়ালঘেরা সকল অংশ অন্তর্ভুক্ত করেন। আবদুল মালেক বিন মারওয়ান মসজিদে আকসার পুরো সীমানার উপর এই মসজিদ দুটি তৈরির উদ্যোগ নেন। তার ছেলে ওয়ালিদের আমলে মসজিদে আকসার নির্মাণ কাজ শেষ হয়। উমাইয়া আমলেই মসজিদের মেহরাব ও মিনারা তৈরির প্রথা শুরু হয় এবং তারা মসজিদে আকসার মেহরাব ও মিনারা তৈরি করেন। শেষ পর্যন্ত ওয়ালিদ মসজিদের দেয়ালঘেরা অংশবিশেষের উপর মসজিদ দুটি তৈরি করেন।
আবদুল মালেক মসজিদে আকসা ও মসজিদে সাখরার পুনঃনির্মাণের ব্যয় নির্বাহের উদ্দেশ্যে মিসরের ৭ বছরের খাজনা নির্দিষ্ট করেন। উমাইয়া খলীফা উমার বিন আবদুল আযীয সকল অঞ্চলের গভর্নরদের প্রতি মসজিদে আকসা যেয়ারত এবং আনুগত্য ও লোকদের মধ্যে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার শপথ গ্রহণের আহ্বান জানান ।

আব্বাসী শাসনামলে মসজিদে আকসা


১৩২ হিঃ থেকে ৬৫৬ পর্যন্ত আব্বাসী শাসকরা মসজিদে আকসার সংরক্ষণ ও সেবা আঞ্জাম দেন। একবার ভূমিকম্পে মসজিদের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আব্বাসীয় খলীফা আবু জাফর মনসুর তাঁর সাম্রাজ্যের সকল গভর্নরদের প্রতি মসজিদের একটি একটি অংশ নির্মাণ করার নির্দেশ দেন। ফলে, মসজিদকে আগের চাইতেও আরো বেশী মজবুত করে নির্মাণ করা হয়। ১৫৮ হিজরীতে খলীফা মাহদী মসজিদে আকসার সংস্কার করেন এবং মসজিদ সম্প্রসারণ পরে আব্বাসী খলীফা মামুনও মসজিদের অনুরূপ সংস্কারও সম্প্রসারণ করেন।

তুলুন, এখশিদিন ও ফাতেমী শাসনামলে মসজিদে আকসা

তুলুন ও এখশিদিন শাসনামলে মসজিদে আকসার প্রয়োজনীয় সেবা অব্যাহত থাকে। তারপর জেরুজালেম ফাতেমী শাসক মোয়েজ লি-দিনিল্লার সময় ওবায়দীর শাসনে আসে। ৯৬৯ হিঃ তাঁর প্রধান সেনাপতি জাওহার আস সাকাল্লি ফিলিস্তিন দখল করেন। ফাতেমী শাসকেরা বাহ্যতঃ শিয়া মাজহাবের অনুসারী ছিল। কিন্তু তারা ফিলিস্তিনে ইহুদী ও খৃস্টানদেরকে নিকটতর করার চেষ্টা চালায়। তারা ইহুদী-খৃস্টানদের সাথে বিয়ে-শাদীর সম্পর্ক স্থাপন করে এবং বাইজানটাইনের খৃস্টান শাসকের সাথে সন্ধিচুক্তি স্বাক্ষর করে। এর ফলে, জেরুজালেমে খৃস্টানদের বসবাস শুরু হয়।

সেলজুকী শাসনামলে মসজিদে আকসা

সেলজুকী শাসকরা কিছুদিন পর্যন্ত জেরুজালেম শহরের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। তারা তাদের শত্রু ফাতেমী শাসকদের কবজা থেকে ৪৬৫ হিজরী, মোতাবেক ১০৭১ খৃঃ জেরুজালেম শহর দখল করে। পরবর্তীতে ফাতেমী শাসকরা সেলজুকীদের কাছ থেকে জেরুজালেম শহর পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়। কিন্তু ফাতেমীদের খৃস্টান-প্রীতির কারণে শেষ পর্যন্ত খৃস্টানরা তাদের কাছ থেকে জেরুজালেম শহর দখল করে নেয়।

খৃস্টান ক্রুসেডারদের হাতে জেরুজালেমের পতন ও মুসলিম নিধন

জেরুজালেম শহর ১০৯৯ খৃঃ পর্যন্ত দীর্ঘ ৫শ' বছর মুসলমানদের শাসনাধীন ছিল। কিন্তু ফাতেমীদের বিরুদ্ধে জেরুজালেমের খৃস্টান পাদ্রী ২য় সোমআন খৃস্টান বিশ্বের প্রতি সাহায্যের আহ্বান জানান। ১০৯৫ খৃঃ পোপ খৃস্টান বিশ্বের প্রতি পবিত্র জেরুজালেম শহর উদ্ধারের উদ্দেশ্যে মুসলমানেরকে সেখান থেকে বের করে দেয়ার জন্য ধর্মযুদ্ধের (ক্রুসেডের ডাক) দেন। মধ্য ও পশ্চিম ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো পোপের আহ্বানে সাড়া দেয়। কেননা, মুসলমানদের হাতে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর খৃস্টান বিশ্ব পুনরায় প্রাচ্যে তাদের নতুন সাম্রাজ্য বিস্তারের স্বপ্ন দেখছিল ।

১০৯৯ খৃস্টাব্দের ১৫ই জুলাই, মোতাবেক ২৩শে শাবান ৪৯২ হিঃ, খৃস্টান সেনাপতি গডফ্রে ডিবো ইউনের নেতৃত্বে ক্রুসেড বাহিনী জেরুজালেমের বাব- আস সাহেরা দিয়ে শহরে প্রবেশ করে এবং ৪০ দিন পর্যন্ত শহর অবরোধ করে রাখে। শিয়া নেতা ইফতেখারুদ্দৌলা তার বাহিনীসহ পালিয়ে যায় এবং ফাতেমীয় খলীফা মোস্তালী বিল্লাহ ও মোসতাজহের বিল্লার শাসনামলে খৃস্টানদের হাতে জেরুজালেম শহরের পতন ঘটে। খৃস্টান ক্রুসেডারগণ প্রচণ্ড উন্মত্ততা সহকারে জেরুজালেমে প্রবেশ করে এবং জনগণের মধ্যে বিরাট ত্রাসের সৃষ্টি করে। তারা পাশবিক অত্যাচার-নির্যাতনে মেতে ওঠে এবং যাকে সামনে পায় তাকেই নির্বিচারে হত্যা করে। তাদের হাত থেকে বৃদ্ধ-যুবক এবং শিশু-নারী কেউ রক্ষা পায়নি। গোটা শহরে তারা পাইকারী মুসলিম হত্যা চালায় ও রক্তের বন্যা প্রবাহিত করে। পরের দিন সকালে তারা মসজিদে আকসায় প্রবেশ করে এবং মসজিদের মুসল্লী ও নেক লোদের রক্তে মসজিদের আঙিনা রঞ্জিত করে তোলে। ক্রুসেডারদের সেনাধ্যক্ষ রেমন্ড দুপুরের সূর্য হেলার আগে এক হাঁটু রক্ত ও লাশের উপর দিয়ে মসজিদে আকসায় প্রবেশ করে। তিনদিন ব্যাপী তারা মুসলিম হত্যাকাণ্ড চালায় এবং ৯০ হাজার মুসলমান হত্যা করে ।

তারা মসজিদে সাখরাকে গীর্জায় রূপান্তরিত করে। মসজিদের এক অংশকে ঘোড়ার আস্তাবল বানায় এবং অন্য অংশে নিজেদের থাকার ব্যবস্থা করে । ১৭ই জুলাই তারা রাস্তা থেকে মুসলমানদের লাশ সরানোর কাজ শুরু করে এবং মিসরের সম্ভাব্য পাল্টা আক্রমণের প্রহর গুনতে থাকে। এইভাবে খৃস্টান শাসকরা দীর্ঘ ৯১ বছর পর্যন্ত জেরুজালেম শহর শাসন করে এবং ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইতিহাসের জঘন্যতম অপরাধ সংঘটিত করে।

হিত্তিনের যুদ্ধে জেরুজালেম পুনরুদ্ধার

১১৭১ খৃঃ মোতাবেক ৫৬৭ হিজরীতে, মিসরের সুলতান সালাহউদ্দীন ইউসুফ বিন আইউব খৃস্টানদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেন এবং সিরিয়ার উদ্দেশ্যে ১১৭৭ খৃঃ মিসরের আরীস ত্যাগ করে। সিরিয়ার বিভিন্ন স্থানে খৃস্টানদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করার পর তিনি ১১৮৭ খৃস্টাব্দে জেরুজালেম দখলের লক্ষ্যে হিত্তিনের ময়দানে পৌঁছেন এবং খৃস্টান বাহিনীর ১ লাখ ৬৩ হাজার অশ্বারোহীকে পরাজিত করেন। মুসলমানদের পেছনে ছিল জর্দান নদী আর সামনে ছিল শত্রুবাহিনী। মুসলিম বাহিনী জেরুজালেমের খৃস্টান রাজাকে আটক করে এবং যুদ্ধে ৩০ হাজার খৃস্টান সৈন্যকে হত্যা ও অন্য ৩০ হাজারকে আটক করে। সালাহউদ্দীনের নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী ৫৮৩ হিজরীর ২৭শে রজব শুক্রবার মোতাবেক ১২ই অক্টোবর ১১৮৭ খৃঃ, জেরুজালেম শহরে বিজয়ীর বেশে প্রবেশ করে। রাসূলুল্লাহর (সাঃ) মে'রাজের দিবসের সাথে বিজয় দিবস একাকার হয়ে গেল। তিনি প্রথম শুক্রবার মসজিদে সাখরায় জুমার নামায পড়তে পারেননি। কেননা, তাতে খৃস্টানদের টয়লেট, ঘর ও ময়লা- আবর্জনা ছিল। তিনি নিজ হাতে সেগুলো ঝাড়ু দেন ও পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে। ৫৮৩ হিঃ ৪ঠা শাবান, ২য় শুক্রবার, তিনি তাতে জুমার নামায আদায় করেন।

সালাহউদ্দীন জেরুজালেমের খৃস্টান নাগরিকদের প্রতি ক্ষমা ও সহানুভূতি প্রদর্শন করেন এবং তাদের দুশমনীর কোন বিচার করেননি। খৃস্টানদের বিজয় ও মুসলমানদের বিজয়ের মধ্যে বিরাট পার্থক্য ফুটে ওঠে।

সালাহউদ্দীন জেরুজালেম শহর পুনঃনির্মাণ করেন। মসজিদে আকসায় একটা মিম্বার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মসজিদের সম্প্রসারণ করেন এবং মসজিদের কারুকার্য আরো বৃদ্ধি করেন। এছাড়াও তিনি মসজিদে কিতাব ও কুরআনের ব্যবস্থা করেন। তিনি মসজিদে আকসার বাইরে অবস্থিত মেহরাবে দাউদ এর জন্য ২ জন ইমাম, ২ জন মুয়ানি ও একজন মোতাওয়াল্লী নির্ধারণ করেন। এটি একটি উঁচু স্থানে সুরক্ষিত ছিল। মেহরাবে দাউদ শহরের প্রবেশ পথে বিদ্যমান ছিল।

তাতারী আক্রমণ ও দ্বিতীয় ক্রুসেড

৬৫৮ হিজরীর ৪ঠা সফর, তাতারের নেতা হালাকু খাঁর হাতে বাগদাদের ইসলামী খেলাফতের পতন ঘটে। তাতারীরা গোটা ইরাক ও সিরিয়া দখল করার পর মিসর অভিযানের উদ্যোগ নেয়। তাতারীরা দুর্ধর্ষ জালেম ও বর্বর। যে শহরেই তারা ঢুকেছে সে শহরের সকল কিছু ধ্বংস ও সেখানকার অধিবাসীদেরকে হত্যা করেছে। মিসরীয় বাহিনী তাতারীদের মোকাবিলার জন্য বেরিয়ে আসে এবং ফিলিস্তিনের নাবলুস ও সিরিয়ার বিসানের মাঝে অবস্থিত 'আইনে জালুত' নামক স্থানে ৬৫৮ হিজরীর ২৫শে রমজান, মোতাবেক ১২৬২ খৃঃ তাতারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ১৪ হাজার মিসরীয় মুসলিম সেনার হাতে ১ লাখ তাতারী সেনা পরাজিত হয়। মিসরের জাহের বাইবারসের বাহিনী সেদিন ইতিহাসের গতি পরিবর্তন করে দেয় এবং মিসরের সুলতান কোজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখে। জাহের বাইবারস জেরুজালেমের উপর তাতারী আক্রমণ প্রতিহত করে মসজিদে আকসার হেফাজত করেন এবং পরবর্তীতে মসজিদের প্রয়োজনীয় মেরামত কাজ করেন ।

মিসরের শাসকরা ছিলেন সুলতান সালাহউদ্দীনের বংশধর । পারিবারিক কোন্দলের কারণে তাদের শাসন দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই ৭২৫ হিজরী মোতাবেক ১৩২৯ খৃঃ খৃস্টান ক্রুসেডারদের হাতে পুনরায় জেরুজালেমের পতন হয়। ১৭শ খৃস্টাব্দ মোতাবেক হিজরী ১০ম শতাব্দীর মাঝামাঝি, তুরস্কের ওসমানী সুলতান ১ম সেলিমের হাতে জেরুজালেম পুনরুদ্ধার হয় এবং ১৯২২ খৃঃ প্রথম মহাযুদ্ধের পর বৃটেনের অসিগিরীতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তা মুসলমানদের শাসনাধীন থাকে ।

💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url