দ্বীনি জিজ্ঞাসা ও জবাব | ইসলামিক প্রশ্ন ও উত্তর (পর্ব - ১৩)


নিয়ত ছাড়া নামায রোযা


প্রশ্ন-১১১: এখনকার আলেমগণ বলে থাকেন, নামাযে নাকি নিয়তের দরকার নেই । তাহলে কি আমরা নিয়ত ছাড়াই নামায রোযা করতে পারব?

উত্তর: এখানে একটা ভুল আছে। নিয়ত করতেই হবে। নিয়ত করা ফরয । কিন্তু নিয়ত পড়তে হয় না। নিয়ত মানে মনের উদ্দেশ্য। আপনি সাহরির সময় ঘুম থেকে উঠেছেন অথবা রাত্রে ঘুমানোর সময় মনে মনে ভেবেছেন যে, সকালে রোযা রাখব- এটার নাম নিয়ত । এই যে রোযার সময় আমরা নিয়তটা পড়ি-

نويت أن أصوم غدا من شهر رمضان المبارك

এই নিয়তে কারো রোযা হয় না। কারণ হল, আমি নিয়ত করছি, আগামীকাল রোযা রাখব । তাহলে আজকের রোযার নিয়ত আপনি করেননি। আর রাতের ভেতরে রোযার নিয়ত না করলে সেই রোযা হয় না। আর আগামীকালের জন্য যে রোযার নিয়ত করলেন ওটাও কার্যকর হবে না, কারণ আগামীকাল রাত আসার আগেই আপনি নিয়ত করে ফেলেছেন। এ জন্য এই নিয়ত দ্বারা কারোরই রোযা হয় না । তবে আলহামদু লিল্লাহ, আপনার মনের ভেতরে যে নিয়তটা আছে যে, আজকে রোযা রাখব, ওতেই হবে। এ জন্য নিয়ত করতে হবে। মনের ভেতর আপনার উদ্দেশ্য থাকবে । আর নিয়ত করা না করার পার্থক্য- আপনি সাঁকো পার হতে গিয়ে যদি পানিতে পড়ে যান, তাহলে আপনি বিনা নিয়তে পানিতে পড়েছেন। বিনা নিয়তে গোসল করে ফেলেছেন । আর যদি গোসলের নিয়তে আপনি ঘাটে গিয়ে ঝাঁপ দেন, তাহলে আপনি নিয়তসহ গোসল করেছেন । এইটা হল পার্থক্য ।

মেয়েদের জন্য তারাবীহর জামাআত

প্রশ্ন-১১২: মেয়েদের জন্য তারাবীহর জামাআতে শরিক হওয়া বৈধ কি না জানতে চাই ।

উত্তর: প্রথমেই আপনাদের অবগতির জন্য জানাই তারাবীহর জামাআত শুরুই হয়েছে মহিলাদের দিয়ে । তারাবীহ মাসনুন নফল নামায । মূলত এই নামাযে জামাআত বৈধ না । শুধু জামাআত বৈধ হয়েছে কুরআন শোনার জন্য । আর কুরআন শোনার আবেগ, প্রয়োজন, আধিকার পুরুষদের মতো নারীদেরও একই। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তিনদিন জামাআতে তারাবীহ আদায় করেন । এটা হাদীসেই এসেছে স্পষ্ট- এবং তিনি তার স্ত্রী ও মেয়েরেকে জামাআতে শরিক হতে বলেন। অন্য একটা হাদীস, সনদগত কিছু বিতর্ক আছে, উবাই বিন কাব রা. বাড়িতে মেয়েদের নিয়ে জামাআতে তারাবীহ পড়েন। উমার (রাঃ) যখন তারাবীহর জামাআত শুরু করলেন মসজিদে, মেয়েদের জন্য আলাদা, পুরুষদের জন্য আলাদা জামাআতের ব্যবস্থা করলেন। মেয়েদের জন্য একজন ইমাম আলাদা, পুরুষদের জন্য ইমাম আলাদা করে দিলেন । পরবর্তীতে উসমান (রাঃ) এবং আলি (রাঃ) এর যুগে এক জামাআতে, পেছনে, মেয়েরা নামায পড়তেন । কাজেই জামাআতে তারাবীহ পড়ার অধিকার মেয়েদেরও সমান । এ জন্য মেয়েদের যদি সুযোগ থাকে, মসজিদে পর্দার সাথে পৃথকভাবে জামাআতে আসতে পারেন, আলহামদুলিল্লাহ। নইলে নিজেদের বাড়িতে, খানকায়, বৈঠকখানায় তারা জামাআতে তারাবীহ পড়তে পারেন। ইমাম সাহেব কয়েকজন পুরুষকে নিয়ে পর্দা দিয়ে সামনে দাঁড়াবেন- এটা খুবই ভালো। আপত্তি যারা করেন তারা বস্তুত হাদীসও জানেন না, ফিকহও জানেন না হয়তো। আল্লাহ সর্বজ্ঞ। কোনো মাযহাবে ও এটা আপত্তি করা হয় নি ।

তাযীমি বা সম্মানের সিজদা


প্রশ্ন-১১৩: তাযীমি বা সম্মানের সিজদা- এটা কুরআনে কি কোথাও আছে?

উত্তর: তাযীমি সিজদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কঠিনভাবে নিষেধ করেছেন । আল্লাহ কুরআনে নিষেধ করেছেন । তাযীমি সিজদা আগের যামানার উম্মতের ভেতর কিছু কিছু ছিল। আর তাযীমি সিজদাটা কী? মানুষ পীর, ওলিদেরকে যে সিজদা দেয়- এটা শিরক। এটা তাযীমি সিজদা না। এটা প্রভুত্বের সিজদা। যে ব্যক্তি মাকে সিজদা করছে না, বাবাকে করছে না, পীর সাহেবকে করছে- এটা পুরোটাই শিরক । এটা ইবাদতের সিজদা। ওই পীর সাহেবের ভেতর রুবুবিয়্যাত বা আল্লাহ তাআলার সাথে তার কোনো সম্পর্ক আছে মনে করেই ব্যক্তি বা কবরকে সিজদা করছে। পূর্ববর্তী উম্মতদের ভেতরে, যারা বাইবেল পড়বেন তারা ব্যাপকভাবে পাবেন, কুরআনেও আছে, ইউসুফ আ.এর বাবা-মা এবং ভাইয়েরা তাঁকে সম্মানের সিজদা করেন। এখানে কোনো রুবুবিয়্যাত উলুহিয়্যাত না, ভাইকে তারা সিজদা করেছে, ছেলেকে করেছেন- এটা সম্মানের সিজদা । আল্লাহ কুরআনে এটা নিষেধ করেছেন।

وَأَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللَّهِ أَحَدًا

কাজেই সিজদাটা, সিজদার কর্মটা, সিজদার স্থানটা আল্লাহর। আর কাউকে শরিক করো না* । প্রায় ১৭/১৮ জন সাহাবি থেকে বর্ণনা পাওয়া যায়, মুতাওয়াতির হাদীসে এসেছে, সাহাবিরা যখন সিরিয়ায় গেলন, দেখলেন, সিরিয়ার খ্রিস্টানেরা তাদের পাদ্রিদের সিজদা করছে। সম্মানের সিজদা। তাঁরা এসে রাসূল (সাঃ) কে সিজদা করতে গেলেন। তিনি বললেন, না, খবরদার! কোনো মাখলুককে সিজদা করা যাবে না! তোমরা আমাকে সিজদা কোরো না। তাহলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে যদি সিজদা করা না যায়, তাহলে পীর বা ওলিকে কীভাবে সিজদা করা যায়! এটা সত্যিই দুঃখজনক । 

সুরা জিন-১৮

মৃত মা-বাবার পক্ষ থেকে কুরবানি


প্রশ্ন-১১৪: আমার মা-বাবা ইন্তেকাল করেছেন। তাঁদের পক্ষ থেকে ছওয়াবের নিয়তে আমি কুরবানি করতে পারব কি না ?

উত্তর: জি, কুরবানি করা যাবে এটাই সহীহ কথা । এটার পক্ষে দুটো হাদীস আছে । একটা সহীহ। একটা দুর্বল। সহীহ হাদীসটা হল, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মদীনায় থাকতে প্রতি বছরেই একটা কুরবানি করতেন নিজের এবং নিজের পরিবারের পক্ষ থেকে। আরেকটা করতেন উম্মতের যারা কুরবানি দেয় নি তাদের পক্ষ থেকে । উম্মতের ভেতর যারা কুরবানি দেয় নি তাদের অনেকে মারা গেছেন, অনেকে জন্মগ্রহণ করেন নি । তাদের পক্ষ থেকে তিনি কুরবানি দিতেন। এতে বোঝা যায়, মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানি করা বৈধ। অন্য একটা হাদীস আছে, হাদীসটা দুর্বল, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ইন্তেকালের পরে আলি (রাঃ) তাঁর পক্ষ থেকে কুরবানি করতেন। তো সর্বাবস্থায় মৃত পিতামাতার পক্ষ থেকে কুরবানি করা বৈধ, ইনশাআল্লাহ। অধিকাংশ ফকীহ এই ব্যাপারে একমত । আপনি সোয়াব পাবেন। তারাও সোয়াব পাবেন ।

ছোট বাচ্চার পেশাব লাগা কাপড়ে নামায


প্রশ্ন-১১৫: ছোট বাচ্চার পেশাব লেগে যাওয়া কাপড় পরে নামায পড়া যাবে কি না?

উত্তর: যদি একেবারে দুগ্ধপোষ্য হয়, দুধ ছাড়া কিছুই না খায়, সেক্ষেত্রে ছেলে বাচ্চা মেয়ে বাচ্চার ব্যাপারে কিছুটা পার্থক্য হাদীসে পাওয়া যায়; মেয়ে বাচ্চা পেশাব করলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পুরাটা ধুতেন আর ছেলে বাচ্চা হলে শুধু একটু পানি ঢেলে দিতেন । এটার অন্যান্য কারণের ভেতর একটা কারণ হল, মেয়েদের পেশাবের সাথে অনেক সময় পায়খানা চলে যাওয়ার ভয় থাকে। ডাক্তররা ভালো জানেন এটা। ছেলেদের ক্ষেত্রে এটা হয় না। তো সর্বাবস্থায় উভয়েরই পানি ঢালার কথা আসছে। এ জন্য আমাদের সতর্ক থাকা দরকার। অন্তত সালাতের জন্য ভিন্ন কাপড় রাখা উচিত ।

ওযু করে বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করানো


প্রশ্ন-১১৬: ওযু করে বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করালে কি ওযু ভেঙে যাবে?

উত্তর: জি না। ওযু যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। আমাদের সমাজে ওযু বিষয়ে অনেক কুসংস্কার আছে- মাথার কাপড় পড়ে গেলে ওযু ভাঙে, সতর দেখলে ওযু ভাঙে, পরপুরুষ দেখলে ওযু ভাঙে, গালি দিলে ওযু ভাঙে। অনেক বিষয় আছে যেগুলোতে গোনাহ হতে পারে- যেমন কেউ যদি উলঙ্গ হয়, অন্য মানুষে দেখে, গোনাহ হবে । কিন্তু ওযু ভাঙবে না । ওযু ভাঙার নির্দিষ্ট কারণ আছে। দুধ খাওয়ালে কখনোই ওষু ভাঙবে না ।

প্রাইভেট কারের উপর যাকাত


প্রশ্ন-১১৭: আমার প্রাইভেট কারের উপর কি যাকাত দিতে হবে?

উত্তর: নিজের ব্যবহারের কোনো কিছুর জন্যই যাকাত দিতে হবে না। যে কারটা বিক্রয়ের জন্য আছে ওটার পুরো মূল্যের উপর যাকাত দিতে হবে। আর যে কারটা আমি ব্যবহার করি তার কোনো যাকাত দিতে হবে না। এমন অন্যান্য বিষয়েরও একই বিধান । যে ঘরে থাকি সেটার যাকাত দিতে হবে না। কিন্তু ফ্ল্যাট কিনে রেখেছি, দাম উঠলে বিক্রয় করব, ওটার পুরো দামের যাকাত দিতে হবে ।

বাচ্চাকে পরিপূর্ণভাবে দুধ পান করানোর জন্য রোযা ভাঙা


প্রশ্ন-১১৮: আমার দু'বছরের বাচ্চা আছে। তাকে পরিপূর্ণভাবে দুধ পান করানোর জন্য কি আমি রোযা ভাঙতে পারব?

উত্তর: শিশু যখন ছোট থাকে, অন্য খাবার খেতে পারে না, প্রথম ছ'মাস, এর ভেতরে মা যদি মনে করেন রোযা রাখলে দুধ কম পড়বে, উনি রোযা ভেঙে পরে কাযা করবেন। কিন্তু আপনার সন্তানের বয়স দুই বছর, প্রায় দেড় বছর যাবত সে অন্যান্য খাবার খাচ্ছে । দুধ এখন তার জন্য নফল, অপশনাল। এক্ষেত্রে মা রোযা ভাঙবেন না । রোযা রাখবেন ।

বিবাহবার্ষিকী পালন করা কি জায়েয?


প্রশ্ন-১১৯: বিবাহবার্ষিকী পালন করা জায়েয কি না জানতে চাই। এই দিনে ফকির খাওয়ানো যাবে কি না?

উত্তর: বিবাহের সময়ের আনন্দটা হল মূল আনন্দ। বিবাহবার্ষিকী পালন করার যে প্রচলন এটা সম্পূর্ণ অনৈসলামিক রীতি। বছর ঘুরে আসার অপেক্ষায় কেন আমরা থাকব! আমাদের জীবন তো প্রতিদিন নতুন হয় । প্রতিদিন আমরা বিবাহ পালন করব। প্রতিদিন দাম্পত্যের আনন্দ উপভোগ করব। এ জন্য বিবাহের সময় আনন্দ করবেন। কিন্তু বিবাহবার্ষিকী পালন করা এটা ইসলামি নির্দেশনা নয়। বরং ইসলামের বাইরের একটা কালচার আমাদের ভেতর ঢুকে গেছে। আপনারা মাঝে মাঝেই দরিদ্রদের খাওয়াবেন । বছরে একদিন কেন, প্রতি মাসে দুয়েকজনকে খাওয়াবেন যেন পারিবারিক জীবন সুখের হয় ।

মহিলাদের পিরিয়ড চলাকালীন সময়ের নামাজ রোযা


প্রশ্ন-১২০: পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে মহিলাদের নামায রোযা বন্ধ থাকে। পরবর্তীতে এই নামায রোযা কাযা করা লাগবে কি না জানতে চাই ।

উত্তর: এই জাতীয় অসুস্থতার কারণে যে নামায চলে যায় সেটা আর পড়তে হয় না। এই নামায একেবারেই মাফ। আর যে রোযা বাদ পড়ে যায়, এটা সুস্থ হওয়ার পরে সুযোগ মতো কাযা করতে হবে ।

💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url