কুরআনের গল্পঃ আদম (আঃ)-এর সৃষ্টির ইতিহাস | জ্বিন জাতি ও ইবলিস শয়তানের ইতিহাস



হযরত আদম (আঃ)


بسم الله الرحمن الرحيم

আমরা এখানে  আল কুরআনের দৃষ্টিতে হযরত আদম (আঃ)-এর সৃষ্টি, আদম (আঃ)-এর সৃষ্টির প্রেক্ষাপট বা কারণ, আদম (আঃ)-এর সৃষ্টি উদ্দেশ্য, ফেরেস্তাগণের সরদার সম্মানিত ফেরেস্তা আজাজীলের ইবলিস শয়তান হওয়ার ইতিহাস এবং এ সম্পর্কিত আল কুরআনের আয়াত নিয়ে আলোচনা করবো।

জ্বিন জাতি ও ইবলিস শয়তানের ইতিহাস

 
আল্লাহ তা'য়ালা হযরত আদম (আঃ)-কে সৃষ্টির কয়েক লক্ষ বছর পূর্বে শয়তানকে ফেরেশতাগণের মোয়াল্লেম হিসেবে নিয়োগদান করেন। শয়তানের আসল নাম আজাজীল। সে জ্বিন জাতীয় প্রাণী । আল্লাহ তা'য়ালা পৃথিবী সৃষ্টির পরে জ্বিন জাতিকে সৃষ্টি করেন।

জ্বিনও আল্লাহর সৃষ্ট একটি স্বতন্ত্র জাতি। এ জাতির সৃষ্টি সম্বন্ধে মানব সমাজে পূর্ব ধারণা অনুপস্থিত। সাধারণ মানুষের বসতির ন্যায় জ্বিন জাতি আমাদের দৃষ্টিগোচরও হয় না। কিন্তু জ্বিন জাতিও মানুষের ন্যায় আল্লাহর এক স্বতন্ত্র সৃষ্টি এবং মানুষের মতই শরীয়তের বিধানে বিধিবদ্ধ। তাদের মধ্যে বংশ বৃদ্ধির প্রথাও প্রচলিত রয়েছে এবং পুণ্যবান এবং গুণাহগার রয়েছে। কুরআনুল কারীমে নিম্নোক্ত আয়াতগুলো সে তথ্যের প্রমাণ দেয় :

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلا لِيَعْبُدُونَ -

অর্থঃ আর আমি জ্বিন ও মানুষকে কেবল আমার ইবাদতের জন্যেই সৃষ্টি করেছি। (সূরা যারিয়াত : ৫৬)

إِنَّهُ يَرَاكُمْ هُوَ وَقَبِيلُهُ مِنْ حَيْثُ لَا تَرُونَهُمْ -

অর্থঃ নিঃসন্দেহে, সে (শয়তান) এবং তার দলবল তোমাদেরকে এমনভাবে দেখতে থাকে যে তোমরা তাদেরকে দেখতে পাও না। (সূরা আ'রাফ : ২৭)

كَانَ مِنَ الْجِنِّ فَفَسَقَ عَنْ أَمْرِ رَبِّهِ -

অর্থঃ আর (ইবলিশ) জ্বিনদের একজন ছিল। সে তার প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করল। (সূরা কাহফ : ৫0)

قُلْ أُوحِيَ إِلَى أَنَّهُ اسْتَمَعَ نَفَرٌ مِنَ الْجِنِ فَقَالُوا إِنَّا سَمِعْنَا قُرْآن عَجَبًا يَهْدِي إِلَى الرَّشْدِ فَامَنَّا بِهِ وَلَنْ نُّشْرِكَ بِرَبِّنَا أَحَدًا -

অর্থঃ (হে নবী!) সব মানুষকে আপনি বলে দিন যে, আমার নিকট (আল্লাহর পক্ষ থেকে) এ ওহী এসেছে যে, জ্বিনদের একটি দল মনযোগসহকারে কুরআন শ্রবণ করল, অতঃপর তারা (নিজেদের লোকদের নিকট গিয়ে) বলল, আমরা এক বিস্ময়কর কুরআন শ্রবণ করেছি, যা সৎপথ প্রদর্শন করে। অতএব, আমরা তার উপর ঈমান এনেছি। আর আমরা কখনও আমাদের প্রতিপালকের সাথে কোন শরীক সাব্যস্ত করব না। (সূরা জ্বিন : ১-২)

অতঃপর তাদের দ্বারা পৃথিবী আবাদ করেন। তাদেরকে পৃথিবীতে রাজত্ব করার অধিকার দান করেন। এক একজন জ্বিন রাষ্ট্র প্রদান হিসেবে হাজার হাজার বছর যাবত রাজত্ব করে পরিশেষে আল্লাহ তা'য়ালার সঙ্গে নাফরমানী আরম্ভ করে দিত। যে অপরাদের জন্য একজনকে অপসারণ করে আল্লাহ তা'য়ালা নতুন জ্বিন আর একজনকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দান করতেন। এভাবে কয়েক হাজার বছর পর পর রাষ্ট্র প্রধানগণ অপসারিত হত অথবা ধ্বংস হয়ে যেত। কেউ খোদায়ী দাবি করে বসত, কেউ দেশে জেনা ব্যভিচার অবাধ করে আনন্দ ভোগ করত। আবার কেউ আল্লাহ তা'য়ালার আইন কানুনকে সমূলে উৎখাত করে নিজ প্রবর্তিত আইন জাতির উপর চাপিয়ে দিত। এভাবে কয়েক লক্ষ বছর জীন জাতির রাজত্ব বহাল থাকে। এর মধ্যে ঈমানদার, এনছাবগার রাজার আবির্ভাব আদৌ ঘটেনি বললেই চলে । সকলেই আল্লাহ তা'য়ালার সাথে ইমানদারীর ওয়াদা করে পরে ওয়াদা ভঙ্গ করেছে। আল্লাহ তা'য়ালা জীনদের এ আচরণের খবর অবশ্যই পূর্ব থেকে অবগত ছিলেন। তবুও প্রকাশ্যে তাদের নাফরমানীর সাক্ষ্য ব্যবহার করার লক্ষ্যে তাদেরকে শাসন ক্ষমতা প্রদান করেছিলেন।

যখন তারা বেইমানী ও খোদাদ্রোহীতার চরমে গিয়ে পৌঁছল তখন তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য ফেরেশতাদিগকে হুকুম দিলেন। একদা কিছু সংখ্যক ফেরেশতা পৃথিবীতে এসে জীন জতিকে প্রায় সমূলে ধ্বংস করে দিলেন। মাত্র গুটি কতক বাচ্চা জীনকে জীবিত রেখে দিলেন। তার মধ্যে আজাজীলও রক্ষা পেল। আজাজীল দেখতে যেমন খুব সুন্দর ছিল তেমন বিদ্যাবুদ্ধিতে খুবই সূচতুর ছিল। ফেরেশতাগণ তার সাথে কিছু কথা বলে আনন্দ পেলেন। তখন তাকে পৃথিবী থেকে আসমানে তুলে নিলেন। সেখানে আল্লাহ তা'য়ালার দরবারে তাকে পেশ করে তার গুণের কথা বললেন। তখন আল্লাহ তা'য়ালা তাকে বেহেস্তে বসবাসের হুকুম দিলেন। পরবর্তী সময় তাকে বাইতুল মামুরে রক্ষিত অক্ষর জ্ঞান-বিজ্ঞানের লিপি অধ্যায়নের নির্দেশ দিলেন। আজাজীল আল্লাহ তা'য়ালার নির্দেশ অনুসারে দিবারাত্র উক্ত জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিদ্যা অর্জনের লক্ষ্যে অসাধারণ পরিশ্রম আরম্ভ করে দিল। কয়েক বছরের মধ্যে সে জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অসাধারণ বুৎপত্তি অর্জন করে ফেলল। যা ইতিপূর্বে কোন ফেরেশতা দ্বারা কখনই সম্ভব হয়নি।

তখন আল্লাহ তা'য়ালা তার উপর ফেরেশতাদের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব অর্পণ করলেন। সে এক এক বিষয় নিয়ে এক এক ধরনের ফেরেশতাদেরকে তালীম দিত। বিভিন্ন ধরনের দায়িত্ব পালনকারী ফেরেশতাগণকে তাদের দায়িত্বের বিষয় বিষদভাবে বুঝিয়ে সুষ্ঠু দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতো । কোন কোন ফেরেশতার উপর বহু রকম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকত। তাদেরকে সকল বিষয় সম্বন্ধে জ্ঞান দান করত।

আজাজীল বাইতুল মামুরে রক্ষিত বিদ্যা ভাণ্ডার থেকে যতখানি জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল ইতিপূর্বে ফেরেশতাদের মধ্যে কেউই তার সমকক্ষতা লাভ করতে সক্ষম হয়নি। আজাজীল এবাদত বন্দেগীর ক্ষেত্রেও যথেষ্ট অগ্রগামী হয়েছিল। যে কোন কাজ আরম্ভ করার পূর্বে ও পরে নফল নামায আদায় করতে ভুল হত না। দিবারাত্র মুখে আল্লাহ তা'য়ালার তাছবীহ আদায় করত। এক কথায় একজন শ্রেষ্ঠ আবেদ ও বিদ্বান হিসেবে চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে সে সক্ষম হয়েছিল। এজন্য বড় বড় ফেরেশতাগণও যেমন জিব্রাইল (আঃ), মিকাইল (আঃ), ইস্রাফিল (আঃ) ও আজরাঈল (আঃ) সকলে তার নিকট নিয়মিত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতেন। কোন বিষযয়ে কোন ফেরেশতার কোন প্রশ্ন থাকলে আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে আজাজীল তার সুষ্ঠু জবাব দিয়ে দিত।

এভাবে সে বেহেস্তের মধ্যে এক বিরাট সম্মানের অধিকারী হয়েছিল। কয়েক লক্ষ বছর এভাবে তার জীবন অতিবাহিত হয়। এর মধ্যে বেহেস্তে লক্ষ লক্ষ ফেরেশতাদের সমাবেশে সে বক্তব্য রেখেছে। লক্ষ লক্ষ তালীমগাহে প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং কোটি কোটি ফেরেশতার সংকট নিরসন কল্পে পরামর্শ দিয়েছে। যার সঠিক হিসেব নির্ণয় সম্ভব নয়। আজাজীল বাইতুল মামুরের বিদ্যা ভাণ্ডারের অধিকাংশ বিদ্যা আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়েছিল বটে কিন্তু আরশে আজীমের সাথে যে সব কালাম লটকানো ছিল তার সঠিক মর্ম আয়ত্ব করতে সক্ষম হয়নি। এ কালামসমূহের মর্ম আয়ত্ত করার অনুমতিও তার জন্য ছিল না। তাই অনেক সময় দূর থেকে এ সব কালাম পাঠ করে সে একাকী অস্বস্তি বোধ করত এবং মনে মনে চিন্তা করত কারা নূরে মোহাম্মদীর মালিক, কারা আল্লাহর খলিফা এবং কারা আল্লাহর হুকুম অমান্যকারী শয়তান। এ সব কালাম বুঝার ক্ষমতা আল্লাহ তা'য়ালা তাকে দান করেননি বলে সে আল্লাহ তা'য়ালার উপর কিছুটা অসন্তুষ্ট ছিল। আবার মাঝে মাঝে চিন্তা করত যে বিদ্যা আয়ত্ত করা বা যে কালাম বুঝা তার পক্ষে সম্ভব হল না সে বিদ্যা বুঝার মত আর কোন ব্যক্তি আছে, যার মান তার চেয়ে উপরে। এ বিষয় চিন্তা ভাবনা করতে গিয়ে তার মধ্যে অহংকারের সৃষ্টি হয়। এ অহংকার ধীরে ধীরে দানা বেঁধে একদিন আল্লাহ তা'য়ালার সঙ্গে সে মোকাবিলা তর্কে অবতীর্ণ হয় এবং তার জীবনের পরিসমাপ্তি ও ধ্বংস ডেকে আনে। 

হযরত আদম (আঃ) এর সৃষ্টির ইতিহাস


একদিন আল্লাহ তা'য়ালা ফেরেশতাদের মজলিশে মানব জাতির আদি মানব হযরত আদম (আঃ) এর সৃষ্টির ঘোষণা দিলেন।

- এই মর্মে কুরআন পাকের উদ্ধৃতি নিম্নরূপ-

وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَاقِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةٌ - قَالُوا أَتَجْعَلُ فِيْهَا مَنْ يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَا، وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ
وَنُقَدِّسُ لَكَ - قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ مَا لا تَعْلَمُونَ *

অর্থঃ “আমি পৃথিবীতে আমার খলিফা (প্রতিনিধি) তৈরি করতে যাচ্ছি।” ফেরেশতারা বলল, 'আপনি আবার কেন আর এক জাতীয় প্রাণী সৃষ্টি করতে চান। যারা পৃথিবীতে গিয়ে ঝগড়া, ফ্যাসাদ ও খুন খারাপীতে লিপ্ত হবে। তার চেয়ে আমরাইতো আপনার গুণ কীর্তন ও পবিত্রতা বর্ণনায় দিনরাত ব্যস্ত থাকি। এটি উত্তম নয় কি?” আল্লাহ তা'য়ালা তদুত্তরে বললেন, “আমি যা জানি তোমরা তা জান না।”

এরপরে আল্লাহ তা'য়ালা হযরত জিব্রাঈল (আঃ)-কে পৃথিবী থেকে এক মুষ্টি মাটি আনার জন্য হুকুম দিলেন। জিব্রাঈল (আঃ) পৃথিবীতে এসে যখন মাটি তুললেন তখন মাটি চিৎকার দিয়ে জিজ্ঞেস করল, হে জিব্রাইল (আঃ)! তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? জিব্রাঈল বললেন, তোমাকে আল্লাহ তা'য়ালার আদেশে বেহেস্তে নিয়ে যাচ্ছি। সেখানে তোমার দ্বারা আল্লাহ তা'য়ালা এক নতুন মাখলুক সৃষ্টি করবেন। তখন মাটি বলল, তুমি আমাকে নিও না, আমাকে রেখে দাও, কারণ যে জাতি আল্লাহ সৃষ্টি করবেন তারা আবার নাফরমানী করে আল্লাহ তা'য়ালার শাস্তি ভোগ করবে, আমি তাদের শরীরে থাকলে সে আজাব ভোগ করতে পারব না, অতএব তুমি এ বিষয় আল্লাহ তা'য়ালার নিকট আমার পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা কর। জিব্রাঈল (আঃ) মাটির কথা শুনে খালি হাতে আল্লাহর দরবারে ফিরে গেলেন এবং আল্লাহর নিকট মাটির আবেদনের কথা বললেন। তখন আল্লাহ তা'য়ালা হযরত মিকাঈল (আঃ) কে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। তিনিও মাটির কাকুতি মিনতির কারণে খালি হাতে আল্লাহর দরবারে ফিরে গেলেন। এভাবে ইস্রাফিল (আঃ) ও ফেরত গেলেন। সর্বশেষে হযরত আজরাইল (আঃ) কে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়। আজরাঈল (আঃ) মাটির কথা শুনে বললেন, আমি তোমার কথায় ফেরত যাবনা আল্লাহর আদেশ অবশ্যই পালন করব। তিনি মাটি নিয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হলেন। তখন আল্লাহ তা'য়ালা বললেন, হ্যাঁ! তোমার জন্য এতটুকু শক্ত প্রাণ বাঞ্ছনীয়, না হলে তুমি পৃথিবীর সকল প্রাণীর জান কবজ করতে সক্ষম হতে না। যাও আজ থেকে বনি আদম (আঃ)-এর জান কবজের ক্ষমতা তোমাকে অর্পণ করলাম ।

এরপরে মাটিটুকু মক্কার নিকটবর্তী এক পাহাড়ের উপর রেখে দিলেন। সেখানে মাটি বৃষ্টিতে ভিজল এবং রোধে শুকাল, এভাবে কয়েক বছর অতিবাহিত হবার পরে মাটি হযরত আদম (আঃ)-এর চেহারার রূপ নিল। তখন আল্লাহ তা'য়ালা আদম (আঃ)-এর শরীরটাকে বেহেস্তে নিয়ে গেলেন। সেখানে দীর্ঘদিন রুহবিহীন অবস্থায় পড়ে থাকে। এর মধ্যে ফেরেশতারা এসে মূর্তিরূপী আদম (আঃ) কে দেখে যেত। একদিন শয়তান এসে আদম (আঃ)-এর শরীরটা ভাল করে দেখল এবং বিদ্রূপের হাসি হাসল। পরে তার নাক দিয়ে পেটের মধ্যে গিয়ে সব নাড়ী নক্ষত্র তদারক করে আসল । পরক্ষণে ঘৃণা ভরে থু থু নিক্ষেপ করল।

আল্লাহ তা'য়ালা অত্যন্ত সখ করে এ প্রাণী সৃষ্টি করছেন এবং এর মর্যাদা সকলের উপরে দান করার কথা ঘোষণা করেছেন। তাতে শয়তান খুব ঈর্ষান্বিত হয় এবং মনে মনে আদম (আঃ)-এর প্রতি যথেষ্ট হিংসা পোষণ করতে থাকে। এমনকি ফেরেশতাদের নিকট কথা প্রসঙ্গে বলেছে যে, আল্লাহ তা'য়ালা তার সময়ে সৃষ্টি বনি আদম (আঃ)-কে পৃথিবীতে প্রেরণ করার পরে উপযুক্ত প্ৰতিদান পাবেন। এদের অধিকাংশ মানুষ তার সঙ্গে বে-ঈমানী করবে এবং তার প্রতি বিদ্রোহ ঘোষণা করবে। তখন আল্লাহ তা'য়ালা বুঝবেন তিনি কি ভুল করেছেন।' ফেরেশতারা আজাজীলের মন্তব্য বিশেষ করে আল্লাহ তা'য়ালার প্রতি তার অশ্রদ্ধার কথা শুনে বলে উঠল, আস্তাগ ফিরুল্লাহ”।

এক সময় আল্লাহ তা'য়ালা ফেরেশতাগণের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদাবান ফেরেশতা হযরত জিব্রাঈল (আঃ), হযরত মিকাঈল (আঃ), হযরত ইস্রাফিল (আঃ) ও হযরত আজরাঈল (আঃ) কে হুকুম দিলেন তোমরা আরশে আজীম থেকে আদম (আঃ)-এর রুহ এনে তার দেহের মধ্যে পুরে দাও। ফেরেশতাগণ আল্লাহ তা'য়ালার আদেশক্রমে নূরে মোহাম্মদী পরিপূর্ণ আদম (আঃ) এর রুহ মুল্যবান হীরা জহরতের পাত্রে করে দেহের নিকটে নিয়ে আসেন । আসমান জমিনের সব ফেরেশতা এসে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে গেল। আল্লাহ তা'য়ালার নিজস্ব এ অনুষ্ঠানে সকল ফেরেশতা অংশ গ্রহণ করল, কিন্তু আজাজীল সেখানে অনুপস্থিত ছিল। এ অনুপস্থিতি দ্বারা তার মনোভাবের অনেকটা প্রকাশ ঘটে। ফেরেশতারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছিল। আল্লাহ তা'য়ালা তাদেরকে বললেন, তাকে তার ভাগ্য নিজহাতে গড়ে নিতে দাও। আর তোমরা তোমাদের কর্তব্য সম্পাদন করে যাও ।

অতঃপর রুহকে আদম (আঃ)-এর শরীরে প্রবৃষ্ট হতে বলা হয়। সে বলল, হে রাব্বুল আলামীন, আমি আদম (আঃ)-এর রুহ নূরের তৈরি আর এ শরীরটা মাটির তৈরি! এর মধ্যে আমি কিভাবে থাকব? আল্লাহ বললেন, নূরে মোহাম্মদীর উজ্জ্বলতায় এ মাটির শরীর ও উহার রক্ত-মাংস সব কিছু নূরে পরিণত হবে। এরপরে রুহকে আদম (আঃ)-এর মাথার উপর রেখে দেয়া হল, তখন তার মস্তিষ্কেও জ্ঞানবুদ্ধির বিকাশ ঘটল। অতঃপর জিব্রাইলকে বলা হল তার শরীরের সব কার্যক্রমগুলোকে বিন্যাস করে দাও। তখন জিব্রাইল (আঃ) তার শিরা, উপশিরা, হৃদপিণ্ড, ফুসফুস ও ধমনীর কার্যগুলো এক এক করে পরিচালনা করে দিলেন। হযরত আদম (আঃ) তার শরীরের সব ক্রিয়া সঞ্চালিত ও অঙ্গের কার্যকারিতা পরিপূর্ণভাবে লাভ করতে পেরে সম্মুখে হাঁটার চেষ্টা করলেন, ফেরেশতারা তাঁকে বাধা দিলেন। তারা বললেন, তোমার শরীর এখন পর্যন্ত নরম । অতএব ক্ষণিক বিশ্রাম কর। শরীরটা ঠিক হলে যথা ইচ্ছা গমন করতে পারবে।

হযরত আদম (আঃ) এর প্রথম বাক্য


হযরত আদম (আঃ) শরীরের পরিপূর্ণতা লাভ করে প্রথমে একটি হাঁছি দিলেন এবং পাঠ করলেন, “আলহামদুলিল্লাহ”। এটিই হযরত আদম (আঃ)-এর জীবনের প্রথম বাক্য। আল্লাহ তা'য়ালা এ সময় বললেন “ইয়ার হামুকুমুল্লাহ।” পরবর্তী সময় মুসলমানদের জন্য হাঁচির পরে আলহামদুলিল্লাহ বলা এবং শ্রোতাদের ইয়ার হামুকুমুল্লাহ বলা সুন্নাত হিসেবে গণ্য হয়।

হযরত আদম (আঃ)-এর জীবন লাভ করার অনুষ্ঠানে জমিন ও আসমানের সকল ফেরেশতা হর্সৎফুল্ল মনে হাজির ছিলেন। আজাজীলকেও সেখানে ডাকা হল। হযরত আদম (আঃ) নিজ অস্তিত্ব লাভের শুকরিয়া হিসেবে দুই রাকাত নামায আদায় করলেন। ফেরেশতাগণের সকলেই আদম (আঃ)-এর সাথে নামায আদায় করলেন।

আদম (আঃ) কে সম্মান প্রদর্শন ও আজাজীলের অহংকার


হযরত আদম (আঃ)-এর নামায শেষ হবার পরে তার জন্য সেখানে মণিমুক্তা, স্বর্ণ-রৌপ্য দ্বারা আবৃত অতি সুন্দর একখানি সিংহাসন আনয়ন করা হল এবং সেখানে তাকে বসতে বলা হল। হযরত আদম (আঃ) সেখানে বসলেন। অতঃপর আল্লাহ তা'য়ালা উপস্থিত সব ফেরেশতাকে হুকুম দিলেন, তোমরা আদম (আঃ) কে সম্মান প্রদর্শনের লক্ষ্যে সেজদা কর।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক কুরআনে বর্ণনা করেন-

২:৩৪ وَ اِذۡ قُلۡنَا لِلۡمَلٰٓئِکَۃِ اسۡجُدُوۡا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوۡۤا اِلَّاۤ اِبۡلِیۡسَ ؕ اَبٰی وَ اسۡتَکۡبَرَ ٭۫ وَ کَانَ مِنَ الۡکٰفِرِیۡنَ  ২:৩৫ وَ قُلۡنَا یٰۤاٰدَمُ اسۡکُنۡ اَنۡتَ وَ زَوۡجُکَ الۡجَنَّۃَ وَ کُلَا مِنۡهَا رَغَدًا حَیۡثُ شِئۡتُمَا ۪ وَ لَا تَقۡرَبَا هٰذِهِ الشَّجَرَۃَ فَتَکُوۡنَا مِنَ الظّٰلِمِیۡنَ

অর্থঃ (২:৩৪) আর যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, ‘তোমরা আদমকে সিজদা কর’। তখন তারা সিজদা করল, ইবলীস ছাড়া। সে অস্বীকার করল এবং অহঙ্কার করল। আর সে হল কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত। (২:৩৫) আর আমি বললাম, ‘হে আদম, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর এবং তা থেকে আহার কর স্বাচ্ছন্দ্যে, তোমাদের ইচ্ছানুযায়ী এবং এই গাছটির নিকটবর্তী হয়ো না, তাহলে তোমরা যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৩৪-৩৫)

৭:১১ وَ لَقَدۡ خَلَقۡنٰکُمۡ ثُمَّ صَوَّرۡنٰکُمۡ ثُمَّ قُلۡنَا لِلۡمَلٰٓئِکَۃِ اسۡجُدُوۡا لِاٰدَمَ ٭ۖ فَسَجَدُوۡۤا اِلَّاۤ اِبۡلِیۡسَ ؕ لَمۡ یَکُنۡ مِّنَ السّٰجِدِیۡنَ

অর্থঃ আর অবশ্যই আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি। তারপর তোমাদের আকৃতি দিয়েছি। তারপর ফেরেশতাদেরকে বলেছি, ‘তোমরা আদমকে সিজদা কর’। অতঃপর তারা সিজদা করেছে, ইবলীস ছাড়া। সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। (সূরা আল-আ'রাফ, আয়াতঃ ১১)

১৫:২৬ وَ لَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ مِنۡ صَلۡصَالٍ مِّنۡ حَمَاٍ مَّسۡنُوۡنٍ  ১৫:২৭ وَ الۡجَآنَّ خَلَقۡنٰهُ مِنۡ قَبۡلُ مِنۡ نَّارِ السَّمُوۡمِ  ১৫:২৮ وَ اِذۡ قَالَ رَبُّکَ لِلۡمَلٰٓئِکَۃِ اِنِّیۡ خَالِقٌۢ بَشَرًا مِّنۡ صَلۡصَالٍ مِّنۡ حَمَاٍ مَّسۡنُوۡنٍ  ১৫:২৯ فَاِذَا سَوَّیۡتُهٗ وَ نَفَخۡتُ فِیۡهِ مِنۡ رُّوۡحِیۡ فَقَعُوۡا لَهٗ سٰجِدِیۡنَ  ১৫:৩০ فَسَجَدَ الۡمَلٰٓئِکَۃُ کُلُّهُمۡ اَجۡمَعُوۡنَ  ১৫:৩১ اِلَّاۤ اِبۡلِیۡسَ ؕ اَبٰۤی اَنۡ یَّکُوۡنَ مَعَ السّٰجِدِیۡنَ 

অর্থঃ আর অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুকনো ঠনঠনে, কালচে কাদামাটি থেকে। আর ইতঃপূর্বে জিনকে সৃষ্টি করেছি উত্তপ্ত অগ্নিশিখা থেকে। আর স্মরণ কর, যখন তোমার রব ফেরেশতাদের বললেন, ‘আমি একজন মানুষ সৃষ্টি করতে যাচ্ছি শুকনো ঠনঠনে কালচে মাটি থেকে’। ‘অতএব যখন আমি তাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেব এবং তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার জন্য সিজদাবনত হও’। অতঃপর, ফেরেশতারা সকলেই সিজদা করল। ইবলীস ছাড়া। সে সিজদাকারীদের সঙ্গী হতে অস্বীকার করল। (সূরা আল হিজর, আয়াতঃ ২৬-৩১)

আল্লাহ তা'য়ালার হুকুমের সাথে সাথে কোটি কোটি ফেরেশতা 'আল্লাহু আকবর' বলে বিরাট শব্দ করে সেজদায় পতিত হল। সেজদা থেকে মাথা তুলে দেখল আজাজীল ছাড়া সকলে সেজদা করেছে। সে এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সকল ফেরেশতা তখন দ্বিতীয়বার পুনঃ সেজদায় গেল। এবারের সেজদার উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহ তা'য়ালার শোকর আদায় করা। আর প্রথম বারের সেজদার উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর হুকুম পালন করা। দ্বিতীয় সেজদা থেকে উঠে ফেরেশতারা দেখল আজাজীল একই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।

আজাজীলের ইবলিস শয়তান হওয়ার ইতিহাস


আল্লাহ তা'য়ালা আজাজীলকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি করে আমার হুকুম অমান্য করলে। আজাজীল উত্তর দিল, প্রভু! আপনি আদম-কে সাধারণ মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন আর আমাকে সৃষ্টি করেছেন আগুন দিয়ে। অতএব আদম-কে সেজদা করা অপমানজনক ভেবে আমি সেজদা করিনি। তখন আল্লাহ তা'য়ালা বললেন, তুই নাফরমান, তুই এখান থেকে বেড়িয়ে যা। আল্লাহ তার প্রতি লানত বর্ষণ করলেন। সব ফেরেশতাগণ তার প্রতি অভিসম্পাদ বাণী উচ্চারণ করলেন।

আল্লাহ তা'য়ালা তখন আজাজীলকে ইবলিস বলে সম্বোধন করেন। তাকে বেহেস্তের বাইরে এক জায়গায় নির্বাসন দেয়া হয়। ইবলিস তখন আল্লাহ তা'য়ালার দরবারে হাত তুলে বলল, হে আল্লাহ আমি আপনার একজন খাছ বান্দা হিসেবে সম্মান লাভ করেছিলাম। ছয় লক্ষ বছর যাবত আপনার বন্দেগী করেছি এবং ফেরেশতাগণকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পালন করেছি। কোন দিন সামান্য একটি অন্যায়, অপরাধ করিনি। মান মর্যাদার ক্ষেত্রে আপনি আমাকে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদান করে ছিলেন। এমন একটি সামান্য আদেশ লঙ্ঘন করার দায়ে আপনি আমাকে চির অভিশপ্ত বলে ঘোষণা দিলেন। এটা কি আমার প্রতি ইনসাফ করেছেন? 'আল্লাহ তা'য়ালা বললেন, আমার আদেশ অমান্য করার দুঃসাহস যেমন তোমার মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তেমনি তুমি অহংকারীতে লিপ্ত হয়েছ। আর জেনে রাখ অহংকারী কোন দিন আমার রহমত লাভে সক্ষম হবে না। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা'আলা বলেন-

قال مَا مَنَعَكَ اَلا تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِنْهُ خَلَقْتَنِى مِـ نارٍ وَخَلَقْتَهُ مِنْ طِينٍ * قَالَ فَاهْبِطُ مِنْهَا فَمَا يَكُونُ لَكَ أَنْ تَتَكَبَّرَ فِيهَا فَاخْرُجْ إِنَّكَ مِنَ الصَّغِرِينَ * قَالَ انْظُرْنِي إِلَى يَوْمٍ يُبْعَعُونَ * قَالَ إِنَّكَ مِنَ الْمُنظَرِينَ * قَالَ فَبِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيمَ ثُمَّ لَاتِينَّهُمْ مِنْ بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَنْ شَمَائِلِهِمْ * ولا تجدُ اكْثَرَهُمْ شُكِرِينَ * قَالَ اخْرُجُ مِنْهَا مَذْمُومًا مَّدْحُورًا لَمَنْ تَبِعَكَ منهم لا ملئن جَهَنَّمَ مِنْكُمْ أَجْمَعِينَ *

অর্থঃ যখন আমি স্বয়ং তোমাকে আদেশ করলাম তখন কোন বিষয়টি তোমাকে সেজদা করা হতে বারণ করল? শয়তান বলল, আমি আদম হতে শ্রেষ্ঠ, আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি দ্বারা। আল্লাহ বললেন, জান্নাত হতে বের হয়ে যা, তোর এ অধিকার নেই যে, এখানে থেকে অহংকার করবে, এ হতে পারে না। অতএব, বের হয়ে যা, তুই অধমদের অন্তর্ভুক্ত। ইবলিস বলল, আমাকে সে সময় পর্যন্ত অবকাশ প্রদান করুন, যখন মানুষকে (মৃত্যুর পরে পুনর্জীবিত করে) উঠান হবে। আল্লাহ বললেন, যা তুই সুযোগপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত। এতে ইবলিস বলল, আপনি যেহেতু আমাকে শাস্তি প্রদান করলেন, সুতরাং আমিও আপনার সরল পথ থেকে আদম সন্তানদেরকে পথভ্রষ্ট করার জন্য ওঁৎ পেতে থাকব, অনন্তর সম্মুখ থেকে, পেছন থেকে, ডানদিক থেকে, বামদিক থেকে তাদের নিকট আসব এবং আপনি তাদের মধ্য হতে অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞ পাবেন না। আল্লাহ তা'আলা বললেন, তুই এখান থেকে ধিকৃতি ও বিতাড়িত অবস্থায় বের হয়ে যা, আদম সন্তানদের মধ্যে যারা তোর পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, সে তোর সাথীহবে এবং অবশ্যই এরূপ করব যে, কর্মের প্রতিফল স্বরূপ তোদের সকলের দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করব। (সূরা আল আ'রাফ, আয়াতঃ ১২-২৮)

১৫:৩২ قَالَ یٰۤـاِبۡلِیۡسُ مَا لَکَ اَلَّا تَکُوۡنَ مَعَ السّٰجِدِیۡنَ ১৫:৩৩ قَالَ لَمۡ اَکُنۡ لِّاَسۡجُدَ لِبَشَرٍ خَلَقۡتَهٗ مِنۡ صَلۡصَالٍ مِّنۡ حَمَاٍ مَّسۡنُوۡنٍ  ১৫:৩৪ قَالَ فَاخۡرُجۡ مِنۡهَا فَاِنَّکَ رَجِیۡمٌ ১৫:৩৫ وَّ اِنَّ عَلَیۡکَ اللَّعۡنَۃَ اِلٰی یَوۡمِ الدِّیۡنِ ১৫:৩৬ قَالَ رَبِّ فَاَنۡظِرۡنِیۡۤ اِلٰی یَوۡمِ یُبۡعَثُوۡنَ ১৫:৩৭ قَالَ فَاِنَّکَ مِنَ الۡمُنۡظَرِیۡنَ  ১৫:৩৮ اِلٰی یَوۡمِ الۡوَقۡتِ الۡمَعۡلُوۡمِ ১৫:৩৯ قَالَ رَبِّ بِمَاۤ اَغۡوَیۡتَنِیۡ لَاُزَیِّنَنَّ لَهُمۡ فِی الۡاَرۡضِ وَ لَاُغۡوِیَنَّهُمۡ اَجۡمَعِیۡنَ  ১৫:৪০ اِلَّا عِبَادَکَ مِنۡهُمُ الۡمُخۡلَصِیۡنَ ১৫:৪১ قَالَ هٰذَا صِرَاطٌ عَلَیَّ مُسۡتَقِیۡمٌ ১৫:৪২ اِنَّ عِبَادِیۡ لَیۡسَ لَکَ عَلَیۡهِمۡ سُلۡطٰنٌ اِلَّا مَنِ اتَّبَعَکَ مِنَ الۡغٰوِیۡنَ  ১৫:৪৩ وَ اِنَّ جَهَنَّمَ لَمَوۡعِدُهُمۡ اَجۡمَعِیۡنَ 

অর্থঃ আল্লাহ বললেন, হে ইবলিস! তোর কি হল যে, তুই সেজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হলে না? ইবলিস বলল, আমার দ্বারা এটা সম্ভব নয় যে, এমন একজন মানুষকে সেজদা করা যাকে আপনি ছাঁচে ডালা শুষ্ক ঠঠনে মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন। তিনি বললেন, ('যদি অবস্থা এরূপই হয়, তবে) এখান হতে বের হয়ে যা, কেননা, তুই অভিশপ্ত এবং প্রতিফল দিবস পর্যন্ত তোর প্রতি লা'নত। সে বলল, হে আমার রব! আমাকে সে দিবস পর্যন্ত সুযোগ প্রদান করুন, যেদিন মানুষদেরকে পুনরায় জীবিত করে কবর থেকে উঠান হবে। তিনি (আল্লাহ) বললেন, সেই নির্দিষ্ট সময়ের দিন পর্যন্ত যাদেরকে অবকাশ দেয়া হয়েছে তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হলে অবধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত। সে বলল, হে আমার রব! যেহেতু আমার (মুক্তি ও সৌভাগ্যের) পথ বন্ধ করে দিলেন, তাই এখন আমি অবশ্যই এরূপ করব যে, পৃথিবীতে মানুষের নিকট পাপকর্মকে শোভন করে তুলবো এবং তাদের সকলকে বিভ্রান্ত করে দেব। তবে তাদের মধ্য হতে যারা আপনার খাঁটি বান্দা হবে, (আমি জানি), তারা আমার ধোঁকায় পতিত হবে না। আল্লাহ তা'আলা বললেন, এটাই আমার সরল পথ, যা আমা পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। যারা আমার খাঁটি বান্দা তাদের উপর তোর কোন জোর চলবে না, শুধু ঐ সব লোকের উপর চলবে, যারা আর অনুসারী হয়েছে এবং তাদের সবার জন্য জাহান্নামের শাস্তির প্রতিশ্রুতি রয়েছে। (যার কখনও অন্যথা হবে না)। (সূরা হিজর, আয়াতঃ ৩২-৪৩)

তখন শয়তান বলল, হে মেহেরবান খোদা! আপনি অন্তত আমার জীবনের এবাদতের বিনিময়ে আমাকে কিয়ামত পর্যন্ত হায়াত দান করুন এবং বনী আদম-এর চোখের আড়াল থেকে তাদের শিরা উপশিরায় পরিভ্রমণের সুযোগটুকু দান করুন। আল্লাহ তা'য়ালা বললেন, তোমার আবেদন মঞ্জুর করা গেল। তুমি লানতের ডুরি নিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকবে। ওয়াছ ওয়াছা দানকারী হিসেবে মানুষের শরীরের সকল ধমনিতে ও হৃদয় মাঝে স্থান করে নিতে পারবে। এ সুযোগ তোমাকে দান করা গেল। তবে মনে রেখ আমার সাথী বান্দাদের সামান্য ক্ষতি কোন দিন করতে তুমি সক্ষম হবে না ।

(এই লেখাটি আলহাজ্ব মাওলানা লুৎফুল আলম রচিত ও ছারছীনা প্রকাশনী হতে প্রকাশিত “কুরআনের শ্রেষ্ট কাহিনী” গ্রন্থ অবলম্বনে তৈরী করা হয়েছে)


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url