কুরআনের গল্পঃ হযরত হাওয়া (আঃ)-এর সৃষ্টি এবং হযরত আদম (আঃ)-এর সাথে বিবাহের ইতিহাস
জান্নাতুল ফেরদাউসে আদম (আঃ) একাকীত্ব
হযরত আদম (আঃ)-এর সিংহাসনখানি আল্লাহ তা'য়ালার আদেশক্রমে জান্নাতুল ফেরদাউসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে হযরত আদম (আঃ)-কে পূর্ণ স্বাধীনভাবে চলা, থাকা ও উপভোগের অধিকার দেওয়া হল। হযরত আদম (আঃ) বেহেস্তের অফুরন্ত নেয়ামতের মধ্যে থেকে দিনরাত শুধু এবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে কাটাতেন। বেহেস্তের হুর-গেলমানেরা তাকে ভ্রমণের আনন্দ ভোগ উপভোগের জন্য অনেক নতুন নতনু পথ দেখালেন। কিন্তু আদম (আঃ) কোন কিছুর দিকে তেমন আকৃষ্ট হলেন না। শুধু এবাদাত বন্দেগী ও নিরবে বসে সময় কাটিয়ে দিতেন।
প্রাণী জগতের চিরাচরিত স্বভাব থেকে তিনি মুক্ত থাকতে পারলেন না। তিনি বেহেস্তের অফুরন্ত নেয়ামতের মধ্যে থেকেও সঙ্গী সাথীর অভাব বোধ করলেন। তাই তিনি নিরানন্দ জীবন-যাপন করে যেতে লাগলেন। আল্লাহ তা'য়ালা এ বিষয় অবগত ছিলেন। তাই একদিন তিনি জিব্রাইল (আঃ) কে আদম (আঃ)-এর নিকট প্রেরণ করেন। জিব্রাইল (আঃ) আদম (আঃ)-এর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ভাই আদম বেহেস্তে আপনার কি রকম লাগছে। উত্তরে হযরত আদম (আঃ) বললেন, সবই ভাল লাগে, চতুর্দিকে তৃপ্তিকর পরিবেশ, হুর-গেলমানের পরিচর্যা প্রশংসাযোগ্য, তবুও প্রাণে যেন কিসের এক অভাব অনুভব করছি, যা আমি আপনাকে বুঝিয়ে বলতে পারব না, আপনি আল্লাহ তা'য়ালার নিকট থেকে জেনে নিবেন আমি এটা কিসের অভাব অনুভব করছি। জিব্রাইল (আঃ) বললেন, হ্যাঁ আমি আপনার এ অভাবের খবর জানি, আল্লাহ তা'য়ালা আমাকে আপনার এ অভাব পূরণ করে দিবার পদ্ধতি বলে দিয়েছেন। আমি শীঘ্রই সে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। এ বলে জিব্রাইল (আঃ) সেদিনের মত চলে গেলেন ।
হযরত হাওয়া (আঃ)-এর সৃষ্টি এবং আদম (আঃ)-এর সাথে বিবাহ
পরের দিন ফজরের পূর্বে জিব্রাঈল (আঃ) আল্লাহ তায়ালার নির্দেশক্রমে হযরত আদম (আঃ) -এর ঘুমস্ত অবস্থায় তার নিকট এসে বিনা অস্ত্রপাচারে কুদরতী কায়দায় তার বাম পাঁজরের একখানি হাড় বের করে নিলেন। অতঃপর উহার উপর রক্ত, মাংস ও চামড়ার আবরণ দিয়ে সজোরে ফুঁক দিলেন, অমনি এক অপরূপা নারী আকৃতিতে পরিণত হল। অতঃপর তিনি দ্বিতীয় বার তার মুখে ফুঁক দিলেন অমনি তার রুহ শরীরে প্রবৃষ্ট হল। তৃতীয় বার তিনি যখন আর একটি ফুঁক দিলেন তখন সে নারী ওঠে বসলেন এবং নিজের মুখে পর্দা দিয়ে লজ্জার অনুভূতি প্রকাশ করলেন।
বুখারী ও মুসলিম শরীফের বর্ণনাসমূহে দেখা যায় যে, নারী পুরুষের পাঁজরের হাড় হতে সৃষ্টি হয়েছে। হাদীসে শরীফে আছে-
استوصوا بِالنِّسَاء فَإِنَّ المَرأَةَ خُلِقَتُ مِنَ ضلع -
অর্থঃ “নারীদের সাথে কোমল ও নম্র ব্যবহার কর। কেননা, নারী পাঁজরের হাড় হতে সৃষ্টি হয়েছে।” (হাদীস)
ইবনে ইসহাকের মতে- হযরত আদম (আঃ)-এর বাম পাঁজরের হাড় হতে বিবি হাওয়া সৃষ্ট হয়েছেন। আল্লামা কুরতবী (রহঃ)-এর মতে এখানে স্ত্রী জাতিকে পাঁজরের হাড়ের সাথে তুলনা করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, নারী জাতির সৃষ্টিকম প্রথমে পাঁজরের হাড় হতে শুরু করা হয়েছে। তাদের অবস্থা পাঁজরের হাড়ের মতোই বাঁকা, তাদের এ বক্রতাকে সোজা করতে চাইলে তা ভেঙ্গে যাবে। অতএব, পাঁজরের হাড়ের বক্রতা সত্ত্বেও তা হতে কাজ নেয়া হয়ে থাকে এবং এর বক্রতাকে সোজা করার চেষ্টা করা হয় না। তদ্রুপ নারী জাতির সাথে কোমল ও নম্র ব্যবহার করা উচিত। অন্যথায় কঠোর ব্যবহারে পারস্পরিক সম্পর্কের মধুরতার পরিবর্তে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
এ সময় জিব্রাঈল (আঃ) হযরত আদম (আঃ)-কে ঘুম থেকে জাগ্রত করলেন। হযরত আদম (আঃ) জাগ্রত হয়ে সম্মুখে অপরূপা সুন্দরী, চন্দ্রের ন্যায় উজ্জ্বল এক যুবতীকে দেখে তন্ময় হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকলেন। হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন, ইনি হলেন আপনার জীবন সঙ্গীনী বিবি হাওয়া। হযরত আদম (আঃ) তাঁর সঙ্গীনীর সুসংবাদ শুনে অত্যান্ত আনন্দিত হলেন। তার প্রাণের যে অতৃপ্তি ছিল তা যেন নিমিষে দূরীভূত হল। হৃদয়ের মাঝে অফুরন্ত প্রেমের বান ডেকে উন্নত তরঙ্গের ন্যায় চতুর্দিকে আছড়ে পড়তে লাগল। কি যে তৃপ্তি, কি যে আনন্দ, কি যে মায়া তখন তার অন্তরে বিরাজ করছিল তার বর্ণনা দেয়া কারো পক্ষে কোন দিন সম্ভব নয়।
কথিত আছে, পৃথিবীতে আল্লাহ তা'য়ালা কয়েকজন নারীকে অপরূপ সৌন্দর্য দান করেছিলেন। তন্মধ্যে হাওয়ার সৌন্দর্য ছিল অন্যতম। হযরত আদম (আঃ) দীর্ঘ সময় বিবি হাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে তার নিকটবর্তী হওয়ার উদ্দেশ্যে সম্মুখে অগ্রসর হলেন। তখন জিব্রাঈল (আঃ) বাধা দিয়ে বললেন, তাঁকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার পূর্বে তার নিকটবর্তী হওয়া আপনার জন্য জায়েজ নেই। অতএব প্রথমে আল্লাহর দরবারে বিবাহের জন্য আবেদন করুন। হযরত আদম (আঃ) জিব্রাঈলের শিখানো পদ্ধতিতে হাওয়াকে বিবাহ করার জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করলেন।
আল্লাহ তা'য়ালা হযরত আদম (আঃ)-এর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদম হাওয়ার বিবাহের মঞ্চ ঠিক করার জন্য ফেরেশতাগণকে হুকুম দিলেন। ফেরেশতাগণ অত্যন্ত আনন্দ সহকারে স্বর্ণ, রৌপ্য, হীরা, জহরত ও মনিমুক্তা দ্বারা এক বিরাট মঞ্চ তৈরি করলেন। এ মঞ্চটি তৈরি করা হল বেহেস্তের মধ্যকার সবচেয়ে আরামের জায়গায়। তুষা নামক ছায়াদানকারী এক বিশাল বৃক্ষের নিচে সকল ফেরেশতাগণকে দাওয়াত দেয়া হল এ বিবাহ মজলিসে।
আল্লাহ তা'য়ালা আরশ থেকে এ মঞ্চ পর্যন্ত সব পর্দা উঠিয়ে দিলেন। যাতে সব ফেরেশতা ও আদম-হাওয়া যেন বেহেস্তের মধ্যকার সবচেয়ে অধিক তৃপ্তিকর জিনিস আল্লাহ তা'য়ালার দীদার লাভ করে অশেষ আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। অতঃপর আল্লাহ তা'য়ালার স্বয়ং সংক্ষিপ্ত খোতবা দান করে বিবাহের কার্য সমাধা করে দিলেন। বিবাহের খোতবায় আল্লাহ তা'য়ালা যে কথাগুলো উচ্চারণ করেছেন তা হল সব প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তা'য়ালার, গৌরব ও অহংকার তাঁর ভূষণ। নবী ও রাসূলগণ তাঁর প্রেরিত বান্দা। তাদেরকে মানুষের মুক্তির দূত হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে। হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর একান্ত বন্ধু ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল। আল্লাহ তা'য়ালা সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। সবাইকে শেষ পর্যন্ত তার কাছেই ফিরে যেতে হবে। ফেরেশতাগণ তার আজ্ঞাবহ। তিনি ফেরেশতাগণকে স্বাক্ষী রেখে আদম ও হাওয়ার বিবাহ বন্ধন সম্পন্ন করেন। তিনি এদের দ্বারা সৃষ্টির আরেক অধ্যায়ের সূচনা করলেন। এ বিবাহের মহরানা হবে দরুদ ও তাছবীহ। আল্লাহ ছাড়া কেউ উপাস্য নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। অতঃপর হযরত আদম (আঃ)-কে বলা হল, হে আদম! তুমি ও তোমার বিবি বেহেস্তে পরম আনন্দে বসবাস কর। সেখানের ফলমূল ভক্ষণ কর । কিন্তু নির্দিষ্ট ঐ গাছটির কাছে যেয়ো না। যদি যাও তবে তা হবে অন্যায় ও পাপের অন্তর্ভুক্ত কাজ। অতএব তোমরা সাবধান থেক। শয়তান তোমাদের পরম শত্রু। তোমাদের উপর আল্লাহর রহমত ও বরকত নাজিল হোক। হযরত আদম ও বিবি হাওয়া বিবাহ অনুষ্ঠানের পরে পাঠ করলেন, হে মহান প্রভু! আমরা তোমার গুণগান করে জীবন কাটাতে চাই। তুমি মহান । তুমি ছাড়া আমাদের আর কোন উপাস্য নেই। তোমার সাহায্য ছাড়া কারো রক্ষার পথ নেই। তুমি আমাদেরকে তোমার রহমতি ছায়া দান কর। আমিন!
বিবাহের পরে হযরত আদম (আঃ) বিবি হাওয়াকে স্পর্শ করার জন্য যখন অগ্রসর হলেন, তখন তাকে বাধা দেওয়া হল এবং বলা হল প্রথমে বিবির মহরানা আদায় কর তার পরে তাকে স্পর্শ কর। তখন হযরত আদম (আঃ) বললেন, হে খোদা! আমি কি দিয়ে এ মহরানা আদায় করব। তখন তাকে বলে দেয়া হল, তুমি শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর অন্তত দশ বার দরুদ শরীফ পাঠ কর। তাহলে তোমার পক্ষ থেকে মহরানা আদায় হয়ে যাবে। তখন আদম (আঃ) দশ বার দরুদ শরীফ পাঠ করলেন এবং নবী মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কলেমা পাঠ করে তার দ্বীন গ্রহণ করলেন। মানব জাতির মধ্যে সর্বপ্রথম হযরত আদম (আঃ) নবী মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর ঈমান আনেন এবং তার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত হন। হযরত আদম (আঃ)-এর জীবনের একমাত্র সিদ্ধান্তহীনতা আল্লাহ তা'য়ালা হযরত আদম ও হাওয়াকে পরম আনন্দে বেহেস্তে বসবাসের হুকুম দেন এবং নির্দিষ্ট একটি গাছের নিকট যেতে ও তার ফল ভক্ষণ করতে নিষেধ করেন। গাছটির নাম ছিল গন্ধম গাছ। গাছটি ছিল স্বর্ণ ও রৌপ্যের তৈরি। ডালপালা ছিল মণিমুক্তায় সজ্জিত। ফলগুলো দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ছিল এবং খেতেও ছিল সুস্বাদু।
গন্ধম গাছ সম্পর্কে সতর্কতার হুকুম
হযরত আদম (আঃ) ও বিবি হাওয়া অতিব আনন্দে ও আরামে বেহেস্তে বসবাস করতে লাগলেন। মাঝে মাঝে হযরত আদম গন্ধম গাছ সম্বন্ধে আল্লাহ তা'য়ালার নির্দেশের রহস্য নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতেন। আল্লাহ তা'য়ালা তাদের জন্য বেহেস্তের সকল কিছু হালাল করে দিয়েছেন। সব কিছু ভোগের অনুমতি দিয়েছেন, এমন কি অনেক কিছুর মালিকানা পর্যন্ত তাদেরকে দান করেছেন। কিন্তু গন্ধম ফল সম্বন্ধে এত কঠিন নির্দেশ কেন দিলেন । এ ধরনের চিন্তা ভাবনার সময় আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলা হত হে আদম! শয়তানের প্ররোচনায় তোমরা কখনই আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে কোন কাজ কর না। শয়তান কিন্তু তোমাদের চির শত্রু। সে সর্বক্ষণ তোমাদেরকে বিপথগামী করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এভাবে হযরত আদম (আঃ) এ সব বাণী শুনে সতর্ক হতেন। তিনি গন্ধম গাছের দিকে ফিরেও তাকাতেন না। অধিকাংশ সময় এবাদাত বন্দেগীতে মশগুল থাকতেন এবং আরশে ঝুলন্ত লিপির কালামগুলো পাঠ করতেন। যদিও তিনি বারবার পাঠ করতেন কিন্তু সব কিছুর নিগূঢ় তথ্য তিনি আয়ত্ত করতে সক্ষম হননি। এজন্য মাঝে মাঝে হযরত জিব্রাইল (আঃ)-কে প্রশ্ন করতেন। জিব্রাইল বলতেন ঐ লিপির অর্থ যতটুকু আল্লাহ তাকে শিখার অনুমতি দিয়েছেন, ততটুকু তিনি অবগত আছেন। বাকি তথ্য তার জ্ঞানের বহির্ভূত।
বেহেস্তে শয়তানের প্রবেশ এবং আদম- হাওয়াকে প্রলুব্ধ করার ইতিহাস
ইতিপূর্বেই শয়তানকে আল্লাহ তা'য়ালা বেহেস্তের বাইরে বসবাসের নির্দেশ দেন । শয়তান সেখানে বসে হযরত আদম (আঃ)-এর সর্বনাশের চিন্তায় দিবারাত্র ফেকের করতে থাকে। একদা সে চিন্তা করল, যে কোন উপায়ে আদম-হাওয়ার সাথে একবার সাক্ষাৎ করতে হবে। তাই সে এক নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করল। বেহেস্তে থাকাকালীন সময়ে সে যে সব দোয়া দরুদ পাঠ করে কঠিন সমস্যাবলী উত্তীর্ণ হয়েছে, সে দোয়াসমূহ পাঠ করতে আরম্ভ করল। এক পর্যায়ে সে এছমে আজম পাঠ করে বেহেস্তের দরজার নিকটবর্তী হতে প্রার্থনা করল। তখন তার ভাগ্য প্রসন্ন হল এছমে আজমের বরকতে সে বাস্তবিকই বেহেস্তের দরজায় গিয়ে পৌঁছতে সক্ষম হল। সেখানে গিয়ে সে দেখল একটি ময়ূর প্রাচীরের উপর বসা, ময়ূর শয়তানকে দেখে চিনল না। সে জিজ্ঞেসা করল তুমি কে? শয়তান উত্তর দিল আমি একজন ফেরেশতা। ময়ূর জিজ্ঞেস করল, তুমি এখানে কি চাও? শয়তান বলল, আমি বেহেস্তের মধ্যে প্রবেশ করতে চাই। ময়ূর বলল, হযরত আদম সেখানে থাকাকালীন সময়ে সেখানে কারো প্রবেশের অনুমতি নেই ।
শয়তান বলল, ভাই ময়ূর তুমি আমাকে দয়া কর। তোমাকে আমি প্রতিদান হিসেবে এমন এক এছেম শিখিয়ে দেব যা পাঠ করলে তুমি কোন দিন বৃদ্ধ হবে না। দ্বিতীয়ত কোন দিন তোমার মৃত্যু হবে না। তুমি কিয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকবে। তৃতীয়ত এ সুখের বেহেস্ত হতে তোমাকে কোন দিন বের হতে হবে না । এ বলে শয়তান এছমে আজম পড়ে ময়ূরকে শুনাল। ময়ূর শয়তানের মন মোহনী বক্তৃতায় আকৃষ্ট হয়ে তাকে নিয়ে বেহেস্তের দরজায় পৌঁছল। সেখানে প্রহরী হিসেবে ছিল এক সাপ। ময়ুর সাপকে সব ঘটনা বলল। সাপ দরজার এক ছিদ্র দিয়ে শুধু মাথা বের করে ময়ুরের কথা শুনল এবং শয়তানকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কে? শয়তান পূর্বের ন্যায় উত্তর দিল আমি একজন ফেরেশতা, আমি আরশে আজীমের নিচে বসবাস করতাম। সেখানে বসে আমি এমন এক এছমে আজম শিখেছি যা পাঠ করলে সকল উদ্দেশ্য সাধিত হয়। সাপ বলল, দোয়াটি আমাকে শিখিয়ে দাও। শয়তান বলল, হ্যাঁ! তোমাকে শিখিয়ে দিতে পারি একটি শর্তে, সেটা হল আমাকে বেহেস্তের মধ্যে পৌঁছে দেবে। সাপ বলল, হযরত আদম (আঃ) বেহেস্তে থাকা অবস্থায় কাউকে বেহেস্তে প্রবেশ করার হুকুম নেই, অতএব এটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তখন শয়তান বলল, আমি তোমার মুখের মধ্যে থেকে বেহেস্ত দেখে আসব, বাইরে বের হব না। সাপ তখন শয়তানের এ প্রস্তাবে রাজী হল এবং হা করল। শয়তান সাপের মুখে প্রবৃষ্ট হল। অতঃপর শয়তান সাপকে বলল, আমাকে বিবি হাওয়ার নিকট নিয়ে চল। সাপ শয়তানকে মুখে নিয়ে বিবি হাওয়ার কাছে পৌঁছল। তখন শয়তান সজোরে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে আরম্ভ করল। সাপের মুখ থেকে কান্নার শব্দ শুনে বেহেস্তের সকল হুর গেলমান তার কাছে সমবেত হল, এমন কি বিবি হাওয়াও সেখানে পৌঁছলেন। অতঃপর সাপকে তার ক্রন্দনের কারণ জিজ্ঞেস করা হল। সে বলল, আমি তোমাদের পরিণামের কথা ভেবে কাঁদছি। আল্লাহ তা'য়ালা তোমাকে ও হযরত আদম (আঃ)-কে শীঘ্রই বেহেস্ত থেকে বের করে পৃথিবী নামক এক নিরস ও অশান্তিপূর্ণ স্থানে প্রেরণ করবেন। একথা আরশে আজীমের লিপিতে উল্লেখ রয়েছে। পৃথিবীতে প্রেরণের ব্যাপারটি দীপান্তরে শাস্তি ভোগের শামিল। সেখানে ক্ষুধা, দারিদ্রতা, পীড়া, দুঃখ, পরিশ্রম ও অশান্তি বিরাজমান। সেখানে পরিশ্রম করে খাদ্য জন্মাতে হবে। খাদ্য জন্মাতে ব্যর্থ হলে ক্ষুধার যন্ত্রণায় অস্থির হতে হবে। সেখানে তোমাদের অসংখ্য সন্তান-সন্ততি জন্ম নিবে। তাদের মধ্যে ঝগড়া কলহ লেগেই থাকবে। খুন খারাবী নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার বলে বিবেচিত হবে। রৌদ্র বৃষ্টির মধ্যে দিন গুজরান করতে হবে। আল্লাহ তা'য়ালাকে শত শত বার ডেকেও তার সাক্ষাৎ লাভ করতে পারবে না। তিনি সহজে বনী আদম (আঃ)-এর কোন দাবি দাওয়া পূরণ করবেন না। মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অবিরাম পরিশ্রম করেও নিজ পেটের আহার সংগ্রহ করতে সক্ষম হবে না। তখন অন্যায় অসৎ পথ গ্রহণ করতে বাধ্য হবে। এক কথায় দোজখের যন্ত্রণার চেয়ে সেখানে কোন অংশে নিপীড়ন কম নেই ।
সেই ভয়াবহ কষ্টকর পৃথিবীতে গিয়ে দিবারাত্র চোখের পানি ফেলে তোমরা শুধু কাঁদবে। কিন্তু তাতে তোমাদের দুঃখের কোন অবসান হবে না। আমি তোমাদের সে দুঃখময় জীবনের কথাভেবে কাঁদছি। বিবি হাওয়া শয়তানকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কথার সত্যতা কিভাবে যাচাই করব। শয়তান বলল, আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি আমি এক বিন্দু মিথ্যা কথা বলিনি । যদি আমি মিথ্যা বলি তবে যেন আমার উপর আল্লাহ তা'য়ালা ও ফেরেশতাদের লানত পতিত হয়।
বিবি হাওয়ার নারীসুলভ মন। শয়তানের উত্তপ্ত বক্তৃতায় তার মন কিছুটা আকৃষ্ট হল। তাই সে জিজ্ঞাসা করল, তবে পৃথিবীর এ নির্বাসন থেকে মুক্তির কি কোন পথ আছে? শয়তান বলল, উত্তম পথ আছে, তবে তোমরা তা গ্রহন করবে কিনা জানি না। বিবি হাওয়া বলল, আমরা সেটা গ্রহণ করব। শয়তান বলল, ঐ যে স্বর্ণ-রৌপ্য খচিত গাছটি দেখছ ওটার দু একটা ফল খেতে পারলে তোমরা বেহেস্তের স্থায়ী বাসিন্দা হতে সক্ষম হবে। কোন দিন পৃথিবীতে আর যেতে হবে না। বেহেস্তের আরাম আয়েশ তোমাদের জন্য সর্বক্ষণ বাধ্যতামূলক হয়ে থাকবে। বিবি হাওয়া বললেন, ঐ গাছের ফল খেতে আল্লাহ তা'য়ালা বারণ করেছেন। অতএব এটা কিভাবে সম্ভব। শয়তান বলল, আল্লাহ তা'য়ালা দয়ার সাগর, তিনি অপরাধীর অপরাধ ক্ষমা করে থাকেন, এজন্য তার এক নাম গফুর। তিনি তাঁর নামের মাহাত্ম্য বজায় রাখবেন বলে ওয়াদাও করেছেন। অতএব আল্লাহ তা'য়ালার করুণা প্রাপ্তির বিষয় কোন ভাবনার প্রয়োজন নেই। এখন আগের কাজ আগে করুন। তখন বিবি হাওয়া গাছের নিচে গিয়ে তিনটি ফল ছিঁড়ে হাতে নিলেন। অতঃপর তিনি একটি ফলের খোসা ছাড়িয়ে দেখলেন তাতে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত দেখা যাচ্ছে। এ রক্ত সম্বন্ধে হযরত মা'য়াজ (রাঃ) বলেছেন, বিবি হাওয়ার হাতে গন্ধমে রক্ত দেখার অন্তর্নিহিত কারণ ছিল, সকল নারীর প্রতি মাসে একবার রক্ত দেখার (হায়েজ) সময় বাধ্যতামূলক করে দেয়া। এটা ছিল তাদের অপরাদের শাস্তি স্বরূপ।
বিবি হাওয়া শয়তানের মায়াকান্নায় এতটা আকৃষ্ট হল যাতে তার স্বাভাবিক বিবেক বুদ্ধি পর্যন্ত কিছু বিগড়ে গেল এবং আল্লাহ তা'য়ালার নিষেধ বাণী বিস্মরণ হল। তিনি ফলগুলো নিয়ে হযরত আদম (আঃ)-এর সিংহাসনের নিকটে পৌঁছলেন। আদম (আঃ) তখন হাওয়াকে জিজ্ঞেস করলেন তোমাকে এতটা মলিন দেখাচ্ছে কেন এবং তোমার শরীরের সেই সুগন্ধিই বা কোথায় গেল? বিবি হাওয়া বললেন, আমি এক মহা বিপজ্জনক খবর নিয়ে তোমার নিকট এসেছি, আদম (আঃ) জিজ্ঞেস করলেন কি সেই বিপজ্জনক খবর? বিবি হাওয়া বললেন, আল্লাহ তায়ালা নাকি আমাদেরকে অচিরে বেহেস্ত থেকে বের করে পৃথিবীতে নির্বাসন দিবেন। এমতাবস্থায় পৃথিবীতে না গিয়ে বেহেস্তে চিরস্থায়ী বসবাসের এক পন্থা বেহেস্তের দারোয়ান সাপ আমাকে বলে দিয়েছে। সে বার বার কছম করে লওহে মাহফুজে রক্ষিত আল্লাহ তা'য়ালার ভবিষ্যৎ বাণী উল্লেখ করে বিস্তারিত আমাকে বলেছে। এমন কি পৃথিবীর দুর্গম ও কঠিন জীবন যাপনের খতিয়ান আমাকে স্ববিস্তারে বলেছে। আমি তখন এর প্রতিকার জানতে চাইলে সে এই ফলটি দেখিয়ে আমাকে বলেছে যদি এটা আমরা ভক্ষণ করি তাহলে বেহেস্তে চিরস্থায়ীভাবে থেকে যেতে পারব। হযরত আদম (আঃ) বিবি হাওয়ার কথা শুনে বললেন, এটা যে সে নিষিদ্ধ গাছের ফল যা ভক্ষণ করতে আল্লাহ তা'য়ালা বার বার নিষেধ করেছেন । অতএব এ বিষয় আমার নিকট দ্বিতীয় বার আর বলবে না, আমি কস্মিন কালেও আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে পথভ্রষ্ট হতে পারব না। তুমি ঐ ফল নিয়ে এখান থেকে চলে যাও।
হযরত আদম (আঃ) আল্লাহ তা'য়ালার আদেশ লঙ্ঘনের ভয়ে সিংহাসনকে হুকুম দিলেন এখান থেকে অন্যত্র চল। সিংহাসন অতিদ্রুত হাজার হাজার মাইল দূরত্বে চরে গেল বিবি হাওয়া এবং গন্দম ফল তার পিছনে ফিছনে সেখানে গেল । হযরত আদম (আঃ) বললেন। দেখ বিবি হাওয়া! তুমি আল্লাহর নির্দেশকে ভয় কর, এর খেলাফ করলে আমরা চির দিনের জন্য নাফরমান হিসেবে শাস্তি ভোগ করব। বিবি হাওয়া বললেন, তুমি সঠিক ঘটনা অনুধাবন করতে সক্ষম হওনি। বেহেস্তের প্রহরী মিথ্যাবাদী হতে পারে না, সে আল্লাহর তা'য়ালার নামে কছম করে যা কিছু বলেছে তা আদৌ ভূয়া হতে পারে না। অতএব তুমি আমার কথা বিশ্বাস কর এবং ফলটি ভক্ষণ কর। হযরত আদম বললেন, হ্যাঁ যদি আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের জন্য পৃথিবীতে নির্বাসন পছন্দ করেন তবে তাই সানন্দে মেনে নেব। তবুও তার আদেশের বিরোধিতা করতে পারব না ।
বিবি হাওয়া হযরত আদম (আঃ)-এর নিকট কোন রূপ প্রশ্রয় না পেয়ে, সাপের নিকট চলে গেলেন এবং সাপের নিকট আদম (আঃ)-এর মন্তব্য জানালেন। তখন সাপ বলল, আপনি নরম দেলের মানুষ। আপনি পৃথিবীতে গিয়ে আদম (আঃ)-এর ন্যায় কষ্ট সহ্য করতে পারবেন না। অতএব এ ব্যাপারে আপনার অধিক তৎপর হওয়া উচিৎ। না হয় আপনাকেই অধিক কষ্ট ভোগ করতে হবে। তাই আপনি বেহেস্তের মধ্যে রক্ষিত এক জায়গায় নেশাজাতীয় শরাব আছে, সেটা এনে প্রথমে আদম (আঃ)-কে পান করান। আদম এটা পান করার পরে যখন কিছুটা নেশাগ্রস্থ অচেতন হবেন, তখন আপনি তার মুখে ফল তুলে দিবেন। এটাই সহজ পথ এ পথে আপনার উদ্দেশ্য সফল হবে।
বিবি হাওয়া সাপের পরামর্শ অনুসারে বেহেস্তের সেই নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে শরাব সংগ্রহ করলেন এবং অতি গোপনে তা এনে হযরত আদম (আঃ)-এর অজান্তে তাঁকে পান করালেন। তিনি শরাব পান করার পরে যখন কিছুটা অচেতন হলেন তখন বিবি হাওয়া তাঁর মুখে ফল তুলে দিলেন এবং নিজেও একটি ফল ভক্ষণ করলেন। হযরত আদম (আঃ) যখন ফল দুটি গিলে ফেললেন, তখন তিনি সিংহাসন থেকে ছিটকে পড়লেন, মাথার তাজ ও শরীরের পরিচ্ছদ খুলে পড়ে গেল, বিবি হাওয়াও উলঙ্গ হয়ে গেলেন। তাঁরা উভয়ে দিশেহারা হয়ে গেলেন। তাড়াতাড়ি গাছের পাতা দ্বারা লজ্জাস্থান ঢেকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। এমনকি তাঁদের নূরানী চেহারা বিগড়ে গেল, শরীরের উজ্জ্বলতা ম্লান হয়ে গেল। হযরত আদম (আঃ) বিবি হাওয়াকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি আমাকে সেই নিষিদ্ধ গাছের ফল আমার অলক্ষে খাইয়ে দিয়েছ? বিবি হাওয়া বললেন, হ্যাঁ প্রাণপ্রিয় স্বামী, আমি সাপ রূপধারী ফেরেশতার পরামর্শ অনুসারে সুকৌশলে তোমাকে সে গন্ধম ফল খাইয়ে দিয়েছি। এখন আমাদের কি হবে? হযরত আদম (আঃ) বললেন, এখন আল্লাহর দরবারে কাঁদ আর এস্তেগফার পাঠ কর। কিছুক্ষণের মধ্যে হযরত জিব্রাইল (আঃ) সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আদম! আপনি ও আপনার স্ত্রী আল্লাহ তা'য়ালার নির্দেশ লঙ্ঘন করেছেন। এখন আপনারা বেহেস্তের বাইরে অবস্থান নিন। পরে আল্লাহ আপনাদের সম্পর্কে যে ফয়সালা দিবেন সে অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া হবে ।
হযরত আদম (আঃ) ও বিবি হাওয়া আল্লাহ তা'য়ালার আদেশ অমান্য করার পর পাগল প্রায় হয়ে চতুর্দিকে ছুটাছুটি আরম্ভ করলেন। হঠাৎ আল্লাহ তা'য়ালা হযরত আদম (আঃ) কে ডাকলেন। আদম (আঃ) কৃত অপরাদের কারণে এতই লজ্জিত হলেন যে, আল্লাহ তা'য়ালার ডাকে তিনি সাড়া দিলেন না। তখন জিব্রাইল (আঃ) তাঁর কাছে এসে বললেন, হে আদম! আল্লাহ তা'য়ালা আপনাকে ডেকেছেন । তখন আদম (আঃ) বললেন, হে মহান প্রভু! আমি আপনার কাছে বড় লজ্জিত, আপনার ডাকে সাড়া দিতে সাহস পাই না। তখন আল্লাহ তা'য়ালা বললেন, আমি কি তোমাদিগকে ঐ গাছ সম্বন্ধে নিষেধ প্রদান করি নাই? এবং বলি নাই যে শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? তখন আদম ও বিবি হাওয়া কেঁদে কেঁদে বললেন, হ্যাঁ প্রভু! আপনি বলেছেন। এ সত্ত্বেও আমরা নিজেরা নিজেদের উপর জুলুম করেছি। এখন যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন তবে আমরা বরবাদ হয়ে যাব। আল্লাহ তা'য়ালা হযরত আদম (আঃ)-এর ফরিয়াদের জবাবে বললেন, আপাতত তোমরা সকলে একে অপরের শত্রু হয়ে পৃথিবীতে নেমে যাও। সেখানে তোমাদের কিছুদিন জীবন কাটিয়ে আসতে হবে। যারা আমার খুশি অর্জন করে আসবে তাদের জন্য বেহেস্ত এবং যারা আমার অবাধ্য হবে তাদের জন্য কঠিন আজাব নির্ধারিত থাকবে। পৃথিবীতে তোমরা নির্দিষ্ট সময় বাঁচবে তারপর তোমাদেরকে নিয়ে আসা হবে।
এ ভাবেই মানবজাতির আদি পিতা এবং আল্লাহর খলিফা হযরত আদম (আঃ) স্বীয় সঙ্গিনীসহ যমীনে পদার্পণ করলেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন-
২:৩৫ وَ قُلۡنَا یٰۤاٰدَمُ اسۡکُنۡ اَنۡتَ وَ زَوۡجُکَ الۡجَنَّۃَ وَ کُلَا مِنۡهَا رَغَدًا حَیۡثُ شِئۡتُمَا ۪ وَ لَا تَقۡرَبَا هٰذِهِ الشَّجَرَۃَ فَتَکُوۡنَا مِنَ الظّٰلِمِیۡنَ ২:৩৬ فَاَزَلَّهُمَا الشَّیۡطٰنُ عَنۡهَا فَاَخۡرَجَهُمَا مِمَّا کَانَا فِیۡهِ ۪ وَ قُلۡنَا اهۡبِطُوۡا بَعۡضُکُمۡ لِبَعۡضٍ عَدُوٌّ ۚ وَ لَکُمۡ فِی الۡاَرۡضِ مُسۡتَقَرٌّ وَّ مَتَاعٌ اِلٰی حِیۡنٍ ২:৩৭ فَتَلَقّٰۤی اٰدَمُ مِنۡ رَّبِّهٖ کَلِمٰتٍ فَتَابَ عَلَیۡهِ ؕ اِنَّهٗ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِیۡمُ ২:৩৮ قُلۡنَا اهۡبِطُوۡا مِنۡهَا جَمِیۡعًا ۚ فَاِمَّا یَاۡتِیَنَّکُمۡ مِّنِّیۡ هُدًی فَمَنۡ تَبِعَ هُدَایَ فَلَا خَوۡفٌ عَلَیۡهِمۡ وَ لَا هُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ
অর্থঃ আর আমি (আদমকে) বললাম, হে আদম! তুমি এবং তোমার সঙ্গিনী জান্নাতে বসবাস কর, যা ইচ্ছা পানাহার কর। কিন্তু এ বৃক্ষের নিকটেও যেয়ো না। যদি এর নিকটে যাও, তবে অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। কিন্তু শয়তান তাদের পদস্খলন ঘটাল এবং তারা সেখানে ছিল সেখান থেকে তাদেরকে বহিষ্কৃত করল । আমি বললাম তোমরা প্রত্যেক প্রত্যেকের শত্রু রূপে নেমে যাও । পৃথিবীতে কিছু কালের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রইল। অতঃপর আদম (আঃ) তাঁর প্রতিপালক হতে ইল্হামকৃত কতিপয় কালেমা শিখে নেন । আল্লাহ তাঁর প্রতি ক্ষমা পরবশ হলেন। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। পরে যখন আমার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট সৎপথের কোন নির্দেশ যাবে তখন যারা আমার সৎপথের নির্দেশ অনুসরণ করবে তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না । (সূরা বাকারা : ৩৫-৩৮)
আল্লাহ তা'য়ালা হযরত আদম (আঃ) ও হাওয়াকে এ গাছের কাছে যেতে ও ফল খেতে কেন নিষেধ করেছিলেন তার সঠিক কোন জবাব পাওয়া যায় না। তবে তফসীরকারকগণ অনেকে অনেক কথা লিখেছেন। জনৈক প্রসিদ্ধ তাফসীরকার তার বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন যে, একদা হযরত মুছা (আঃ) আল্লাহ তা'য়ালার নিকট জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে মহান প্রভু! আপনি আদম (আঃ)-কে যে গাছের ফল খেতে নিষেধ করেছেন সে গাছটি ছিল এমন জায়গায় যেখানে হযরত আদম (আঃ) এর বাসস্থান ছিল। আদম (আঃ)-এর এত কাছে গাছটি কেন রাখা হল? দ্বিতীয়ত আদম (আঃ)-এর বাসস্থানের চারপাশে প্রাচীর ছিল, প্রহরী ছিল, দারোয়ান ছিল, এমতাবস্থায় শয়তান কি করে বেহেস্তে প্রবেশ করে আদম (আঃ)-কে পথভ্রষ্ট করল? ব্যাপারটা বিশ্লেষণ করলে প্রমাণ হয় যে, শয়তান আপনার উপর দিয়ে খোদকারী করে সফল হয়েছে। আল্লাহ তা'য়ালা হযরত মুছা (আঃ) এর জবাবে বললেন, এটা তকদীরের ব্যাপার এ সম্বন্ধে প্রশ্ন কর না, এ বিষয় তোমাদের চেয়ে আমি ভাল জানি ।
তাফসীরকারক এ বিষয়ের আলোচনা প্রসঙ্গে আরো বলেছেন, আল্লাহ তা'য়ালা হযরত আদম (আঃ) কে পৃথিবীতে প্রেরণের উদ্দেশ্যেই সৃষ্টি করে ছিলেন, তিনি কোন কারণ ছাড়াই তাঁকে পৃথিবীতে প্রেরণ করতেন। পৃথিবীতে প্রেরনের সাথে গন্ধম খাওয়ার কোন সুক্ষ্ম সম্পর্ক নেই। গন্ধম খাওয়া দ্বারা তিনি এটাই প্রমাণ করছেন যে, বনী আদম শয়তানের ফেরে পড়বে, ভুল করবে, অন্যায় করবে এবং অপরাধ করবে। আবার সে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। আল্লাহ প্রামাণ্য চিত্র হযরত আদম (আঃ)-এর গন্ধম খাওয়ার মধ্য দিয়ে প্রতিভাত করাই ছিল আল্লাহ তা'য়ালার মহান উদ্দেশ্য।
(এই লেখাটি আলহাজ্ব মাওলানা লুৎফুল আলম রচিত ও ছারছীনা প্রকাশনী হতে প্রকাশিত “কুরআনের শ্রেষ্ট কাহিনী” গ্রন্থ অবলম্বনে তৈরী করা হয়েছে)
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url