আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা হুদের বাংলা অনুবাদ | সূরা হুদ | Surah Hud | سورة هود



সূরা হুদের বাংলা অনুবাদ


সূরা হুদ, মক্কায় অবতীর্ণ আয়াত ১২৩, রুকু ১০

সূরা হুদ


রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে


১. আলিফ-লাম-রা 
এ (কোরআন হচ্ছে এমন একটি) কেতাব, যার আয়াতসমূহ অত্যন্ত সুস্পষ্ট (ও সুবিন্যস্ত) করে রাখা হয়েছে, অতঃপর (এর বর্ণনাসমূহও এখানে) বিশদভাবে বলে দেয়া হয়েছে, (এ কেতাব) এক প্রজ্ঞাময় সর্বজ্ঞ সত্তার কাছ থেকে (তোমার কাছে এসেছে ।)

২. (এর বক্তব্য হচ্ছে,) তোমরা আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কারো গোলামী করবে না, আর আমি তো তোমাদের জন্যে তাঁর কাছ থেকে (আযাবের) ভয় প্রদর্শনকারী ও (জান্নাতের) সুসংবাদদানকারী মাত্র 

৩. (এর উদ্দেশ্য হচ্ছে,) তোমরা যেন তোমাদের মালিকের (দরবারে তোমাদের গুনাহখাতার জন্য) ক্ষমা চাইতে পারো, অতঃপর (গুনাহ থেকে তাওবা করে) তাঁর দিকে ফিরে আসতে পারো, (তাহলে) তিনি তোমাদের একটি সুনির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত উত্তম (জীবন) সামগ্রী দান করবেন এবং প্রতিটি মর্যাদাবান ব্যক্তিকে তার মর্যাদা অনুযায়ী (পাওনা আদায় করে) দেবেন; আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের জন্যে একটি কঠিন দিনের আযাবের ভয় করছি ।

৪. (কেননা, এ জীবনের শেষে) তোমাদের সবাইকে আল্লাহ তায়ালার কাছেই ফিরে যেতে হবে এবং তিনি সর্ব- বিষয়ের ওপর একক ক্ষমতাবান 

৫. সাবধান, এ (নির্বোধ) লোকেরা (মনের কথা দিয়ে কিন্তু) নিজেদের অন্তরসমূহকে ঢেকে রাখে, যেন আল্লাহর কাছ থেকে তা লুকিয়ে রাখতে পারে; কিন্তু এরা কি জানে না, যখন তারা কোনো কাপড় দিয়ে (নিজেদের) ঢেকে দেয়, তখন আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই জানেন তারা (তার ভেতরে) কোন বিষয় লুকিয়ে রাখছে, আর কোন বিষয় তারা প্রকাশ করছে, অবশ্যই তিনি মনের ভেতরের সব কথা জানেন 

৬. যমীনের ওপর বিচরণশীল এমন কোনো জীব নেই, যার রেযেক (পৌঁছানোর দায়িত্ব) আল্লাহর ওপর নেই, তিনি (যেমন) তার আবাস সম্পর্কে অবহিত, (তেমনি তার মৃত্যুর পর) তাকে যেখানে সোপর্দ করা হবে তাও তিনি জানেন; এসব (কথা) একটি সুস্পষ্ট গ্রন্থে (লিপিবদ্ধ) আছে।

৭. আর তিনিই আল্লাহ তায়ালা, যিনি আসমানসমূহ ও যমীন ছয় দিনের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন, (সে সময়) তাঁর ‘আরশ” ছিলো পানির ওপর (এ সৃষ্টি কৌশলের লক্ষ্য), যেন তিনি এটা যাচাই করে নিতে পারেন, তোমাদের মধ্যে কে তার কাজে কর্মে উত্তম; (হে নবী,) আজ যদি তুমি এদের বলো, মৃত্যুর পর তোমাদের অবশ্যই পুনরুত্থিত করা হবে, তাহলে যেসব মানুষ কুফুরের রাসা গ্রহণ করেছে তারা সাথে সাথেই বলবে, এ (কেতাব) তো সুস্পষ্ট যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়।

৮. আমি যদি নির্দিষ্ট একটা মেয়াদের জন্যে তাদের (এ) আযাব তাদের কাছ থেকে সরিয়ে রাখি, তাহলে (তামাশাচ্ছলে) ওরা বলবে, কোন জিনিস এখন এ ( আযাব)-কে আটকে রেখেছে; (অথচ) যেদিন এ আযাব তাদের ওপর এসে পতিত হবে, সেদিন এ আযাব তাদের কাছ থেকে সরাবার কেউই থাকবে না, যে (আযাব) নিয়ে তারা হাসি-বিদ্রূপ করছিলো, তা তাদের পরিবেষ্টন করে ফেলবে ।

৯. আমি যদি মানুষকে (একবার) আমার রহমতের স্বাদ আস্বাদন করাই এবং পরে (কোনো কারণে) যদি তা তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিই, তাহলে সে নিরাশ ও অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়ে।

১০. আবার কোনো দুঃখ-দৈন্য তাকে স্পর্শ করার পর যদি তাকে আমি অনুগ্রহের স্বাদ ভোগ করাই, তখন সে বলতে শুরু করে (হ্যাঁ), এবার আমার থেকে সব বিপদ-মসিবত কেটে গেছে, (আসলে) সে (অল্পতেই যেমন ) উৎফুল্ল (হয়ে ওঠে, তেমনি সহজেই আবার) অহংকারী (হয়ে যায়),

১১. কিন্তু যারা পরম ধৈর্য ধারণ করে এবং নেক আমল করে, এরাই হচ্ছে সেসব লোক, যাদের জন্যে রয়েছে (আল্লাহর) ক্ষমা ও মহাপুরস্কার ।

১২. (হে নবী, কাফেররা মনে করে,) সম্ভবত তোমার কাছে যা ওহী নাযিল হয় তার কিয়দংশ তুমি ছেড়ে দাও এবং এ কারণে তোমার মনোকষ্ট হবে যখন তারা বলে বসবে, এ ব্যক্তির ওপর কোনো ধন-ভান্ডার অবতীর্ণ হলো না কেন, কিংবা তার সাথে (নবুওতের সাক্ষ্য দেয়ার জন্যে) কোনো ফেরেশতা এলো না কেন (তুমি এতে মনোক্ষুন হয়ো না); তুমি তো হচ্ছো (আযাবের) ভয় প্রদর্শনকারী (একজন রসুল মাত্র); যাবতীয় কাজকর্মের (আসল) কর্মবিধায়ক তো হচ্ছেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা।

১৩. অথবা এরা কি (একথা) বলে, (মোহাম্মদ নামের) সে (ব্যক্তি কোরআন) নিজে নিজে রচনা করে নিয়েছে! হে নবী,) তুমি (তাদের) বলো, তোমরা (যদি তাই মনে করো) তাহলে নিয়ে এসো এর অনুরূপ (মাত্র) দশটি (তোমাদের স্বরচিত) সুরা এবং আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য যাদের তোমরা সাহায্যের জন্যে ডাকতে পারো তাদের ডেকে নাও, যদি তোমরা তোমাদের (দাবীতে) সত্যবাদী হও 

১৪. আর যদি তারা তোমাদের (কথায়) সাড়া না দেয়, তাহলে জেনে রেখো, এটা আল্লাহর জ্ঞান ( ও কুদরত ) দ্বারাই নাযিল করা হয়েছে, তিনি ব্যতীত আর কোনো মাবুদ নেই, (বলো) তোমরা কি মুসলমান হবে?

১৫. যদি কোনো ব্যক্তি শুধু এ পার্থিব জীবন ও তার প্রাচুর্য ভোগ করতে চায়, তাহলে আমি তাদের সবাইকে তাদের কর্মসমূহ এ (দুনিয়ার) মধ্যেই যথাযথ আদায় করে দেই এবং সেখানে তাদের (বৈষয়িক পাওনা) কম করা হবে না ।

১৬. (আসলে) এরাই হচ্ছে সে সব (দুর্ভাগা) লোক, যাদের জন্যে পরকালে (জাহান্নামের) আগুন ছাড়া আর কিছুই থাকবে না, (দুনিয়ার) জীবনে সেখানে যা কিছু তারা বানিয়েছে তা সব হবে বেকার, যা কিছু তারা (দুনিয়ায়) করে এসেছে তা সবই হবে নিরর্থক।

১৭. অতঃপর যে ব্যক্তি তার মালিকের পক্ষ থেকে নাযিল করা সুস্পষ্ট (কোরআনের) প্রমাণের ওপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে এবং তা সে তেলাওয়াত করে, (যার ওপর স্বয়ং) তাঁর পক্ষ থেকে সে (মোহাম্মদ) সাক্ষী (হিসেবে মজুদ) রয়েছে, (তদুপরি রয়েছে) তার পূর্ববর্তী মুসার কেতাব, (যা তাদের জন্যে) পথপ্রদর্শক ও রহমত; এরা এর ওপর ঈমান আনে; (মানব) দলের মধ্যে যে অতঃপর একে অস্বীকার করবে তার প্রতিশ্রুত স্থান হচ্ছে (জাহান্নামের) আগুন, সুতরাং তুমি সে ব্যাপারে কোনো রকম সন্দিগ্ধ হয়ো না, এ সত্য হচ্ছে তোমার মালিকের পক্ষ থেকে নাযিল করা, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই ঈমান আনে না ।

১৮. আল্লাহ তায়ালা সম্বন্ধে যে মিথ্যা রচনা করে, তার চাইতে বড়ো যালেম আর কে হতে পারে? এ লোকদের যখন কেয়ামতের দিন তাদের মালিকের সামনে হাযির করা হবে এবং তাদের (বিপক্ষীয়) সাক্ষীরা যখন বলবে (হে আমাদের মালিক), এরাই হচ্ছে সে ব্যক্তি, যারা তাদের মালিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা রচনা করেছিলো, হ্যাঁ, আজ যালেমদের ওপর আল্লাহ তায়ালার অভিসম্পাত,

১৯. (সে যালেমদের ওপরও আল্লাহর লানত) যারা (অন্য মানুষদের) আল্লাহর পথ থেকে বিরত রাখে এবং আল্লাহর পথে দোষত্রটি খুঁজে বেড়ায় (সর্বোপরি) যারা শেষ বিচারের দিনকেও অস্বীকার করে ।

২০. এরা এ যমীনের বুকেও (আল্লাহ তায়ালাকে) কখনো ব্যর্থ করে দিতে পারেনি, না আল্লাহর মোকাবেলায় তাদের (সেখানে) কোনো অভিভাবক ছিলো, এদের জন্যে আযাব হবে দ্বিগুণ; এরা কখনো (দ্বীন ঈমানের কথা) শুনতে সক্ষম হতো না, না এরা (সত্য দ্বীন নিজেরা) দেখতে পেতো!

২১. এরাই হচ্ছে সেসব লোক, যারা নিজেদের দারুণ ক্ষতি সাধন করলো, (দুনিয়ায়) যতো মিথ্যা তারা রচনা করেছিলো, (আখেরাতে) তা সবই তাদের কাছ থেকে হারিয়ে যাবে ।

২২. অবশ্যই এরা হবে আখেরাতে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ।

২৩. (পক্ষান্তরে) যারা আল্লাহর ওপর নিশ্চিত ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, (উপরন্তু) নিজেদের মালিকের প্রতি সদা বিনয়াবনত থেকেছে, তারা হবে জান্নাতের বাসিন্দা, সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে।

২৪. (জাহান্নামী আর জান্নাতী এ) দুটো দলের উদাহরণ হচ্ছে এমন, যেমন (একদল হচ্ছে) অন্ধ ও বধির, (আরেক দল হচ্ছে) চক্ষুষ্মান ও শ্রবণশক্তিসম্পন্ন; এ দুটো দল কি সমান? তোমরা কি এখনো শিক্ষা গ্রহণ করবে না?

২৫. আমি অবশ্যই নুহকে তার জাতির কাছে পাঠিয়েছি (সে তাদের বললো), আমি হচ্ছি তোমাদের জন্যে একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী,

২৬. (আমার দাওয়াত হচ্ছে,) যেন তোমরা আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কারো এবাদাত না করো, (অন্যথায়) আমি আশংকা করছি তোমাদের ওপর এক ভয়াবহ দিনের আযাব এসে পড়বে ।

২৭. অতঃপর তার জাতির নেতৃস্থানীয় লোকেরা যারা কুফরী করছিলো, বললো, আমরা তো তোমার মধ্যে এর বাইরে কিছুই দেখতে পাচ্ছি না যে, তুমি আমাদের মতোই একজন মানুষ, আমরা এও দেখতে পাচ্ছি না যে, আমাদের মধ্যেকার কিছু নিম্নসারির লোক ছাড়া কেউ তোমার অনুসরণ করছে এবং তারাও তা করছে (কিছু না বুঝে) শুধু ভাসা ভাসা দৃষ্টি দিয়ে, (আসলে) আমরা আমাদের ওপর তোমাদের জন্যে তেমন কোনো মর্যাদাই দেখতে পাচ্ছি না, (মূলত) আমরা তোমাদের মনে করি (তোমরা হচ্ছো) মিথ্যাবাদী।

২৮. সে বললো, হে আমার জাতি! তোমরা কি (একথা) ভেবে দেখেছো, আমি যদি আমার মালিকের (পাঠানো ) একটি সুস্পষ্ট প্রমাণের ওপর (প্রতিষ্ঠিত) থাকি, অতঃপর তিনি যদি আমাকে তাঁর (নরওতের) বিশেষ রহমত দিয়ে (ধন্য করে) থাকেন, যাকে তোমাদের দৃষ্টির বাইরে রাখা হয়েছে, তাহলে সে (বিষয়টার) ব্যাপারে আমি কি তোমাদের বাধ্য করতে পারি, অথচ তোমরা তা অপছন্দও করো 

২৯. হে আমার জাতি, আমি (যা কিছু তোমাদের বলছি) এর ওপর তোমাদের কাছ থেকে কোনো অর্থ-সম্পদ চাই না, আমার বিনিময় তো আল্লাহ তায়ালার কাছেই আছে এবং যারাই আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছে, (গরীব হওয়ার কারণে) তাদের তাড়িয়ে দেয়ার (মানুষ) আমি নই; (কেননা) তাদেরও (একদিন) তাদের মালিকের সাথে সাক্ষাত করতে হবে, বরং আমি তো তোমাদেরই দেখতে পাচ্ছি তোমরা সবাই হচ্ছো এক (নিরেট) অজ্ঞ সম্প্রদায়।

৩০. হে আমার জাতি, আমি যদি তোমাদের কথায় গরীবদের তাড়িয়ে দেই, তাহলে (এ জন্যে) আল্লাহ তায়ালা (-র শাস্তি) থেকে আমাকে কে বাঁচিয়ে দেবে; তোমরা কি অনুধাবন করতে পাচ্ছো না?

৩১. আমি তো তোমাদের (কখনো) একথা বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ধন-ভান্ডার আছে, না আমি গায়ব জানি, না আমি একজন ফেরেশতা, না আমি সেসব লোকের ব্যাপারে যাদের তোমাদের দৃষ্টি হেয় করে দেখে, এটা বলতে পারি যে, আল্লাহ তায়ালা কখনো তাদের কোনো কল্যাণ দান করবেন না; আল্লাহ তায়ালা নিজেই তা ভালো জানেন, তাদের মনে যা কিছু লুকিয়ে আছে। (আমি যদি এমন কিছু বলি), তাহলে সত্যি সত্যিই আমি যালেমদের দলে শামিল হয়ে যাবো।

৩২. লোকেরা বললো, হে নুহ (এ বিষয়টা নিয়ে) তুমি আমাদের সাথে বাকবিতন্ডা করছো এবং বিতন্ডা তুমি একটু বেশীই করেছো, তুমি যদি সত্যবাদী হও তাহলে সে (আযাবের) জিনিসটাই আমাদের জন্যে নিয়ে এসো, যার ভয় তুমি আমাদের দেখাচ্ছো।

৩৩. সে বললো, তা তো আল্লাহ তায়ালাই তোমাদের কাছে আনবেন যদি তিনি চান, আর (তেমন কিছু হলে) তোমরা কখনো তাঁকে ব্যর্থ করে দিতে পারবে না ।

৩৪. (আসলে) তোমাদের জন্যে আমার (এ) শুভ কামনা কোনো কাজেই আসবে না, আমি তোমাদের ভালো কামনা করলে (তাও কার্যকর হবে না) যদি আল্লাহ তায়ালা তোমাদের গোমরাহ করে দিতে চান; (কারণ) তিনিই হচ্ছেন তোমাদের মালিক এবং তাঁর কাছেই তোমাদের সবাইকে ফিরে যেতে হবে;

৩৫. (হে নবী,) এরা কি বলছে, এ (গ্রন্থ)-টা সে (ব্যক্তি নিজেই) রচনা করে নিয়েছে? তুমি বলো, যদি আমি তা রচনা করে থাকি তাহলে এ অপরাধের দায়িত্ব আমার ওপর, (তবে এ মিথ্যা অভিযোগ আরোপ করে) যে অপরাধ তোমরা করছো তা থেকে আমি সম্পূর্ণ মুক্ত।

৩৬. নুহের ওপর ওহী পাঠানো হলো, তোমার জাতির লোকদের মধ্য থেকে যারা ঈমান এনেছে, তারা ছাড়া আর কেউই (নতুন করে) ঈমান আনবে না, সুতরাং এরা যা কিছু করছে (হে নবী), তুমি তার জন্যে দুঃখ করো না,

৩৭. তুমি আমারই তত্ত্বাবধানে আমারই ওহীর (আদেশ) দিয়ে একটি নৌকা বানাও এবং যারা যুলুম করেছে তাদের ব্যাপারে তুমি আমার কাছে (কোনো আবেদন নিয়ে) কিছু বলোনা, নিশ্চয়ই তারা নিমজ্জিত হবে।

৩৮. (পরিকল্পনা মোতাবেক) সে নৌকা বানাতে শুরু করলো । যখনই তার জাতির নেতৃস্থানীয় লোকেরা তার পাশ দিয়ে আসা-যাওয়া করতো, তখন (নৌকা বানাতে দেখে) তাকে নিয়ে হাসাহাসি শুরু করে দিতো; সে বললো, (আজ) তোমরা যদি আমাদের উপহাস করো (তাহলে মনে রেখো), যেভাবে (আজ) তোমরা আমাদের নিয়ে হাসছো (একদিন) আমরাও তোমাদের নিয়ে হাসবো;

৩৯. অচিরেই তোমরা জানতে পারবে, কার ওপর (এমন) আযাব আসবে যা তাকে (দুনিয়াতে) অপমানিত করবে এবং পরকালে (কঠিন ও) স্থায়ী আযাব কার জন্যে (নির্দিষ্ট) ।

৪০. অবশেষে (তাদের কাছে আযাব সম্পর্কিত) আমার আদেশ এসে পৌঁছলো এবং চলো (থেকে একদিন পানি) উথলে ওঠলো, আমি (নুহকে) বললাম, (সম্ভাব্য) প্রত্যেক জীবের (পুরুষ-স্ত্রীর) এক এক জোড়া এতে উঠিয়ে নাও, (সাথে) তোমার পরিবার-পরিজনদেরও (ওঠাও) তাদের বাদ দিয়ে, যাদের ব্যাপারে আগেই সিদ্ধান্ত (ঘোষিত ) হয়েছে এবং (তাদেরও নৌকায় ওঠিয়ে নাও) যারা ঈমান এনেছে; (মূলত) তার সাথে (আল্লাহর ওপর) খুব কম সংখ্যক মানুষই ঈমান এনেছিলো ।

৪১. সে (তার সাথীদের) বললো, তোমরা এতে ওঠে পড়ো, আল্লাহর নামে এর গতি ও স্থিতি (নির্ধারিত হবে); নিশ্চয়ই আমার মালিক ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।

৪২. অতঃপর সে (নৌকা) পাহাড়সম বড়ো বড়ো ঢেউয়ের মধ্যে তাদের বয়ে নিয়ে চলতে থাকলো| নূহ তার ছেলেকে (নৌকায় আরোহণ করার জন্যে) ডাকলো, সে (আগে থেকেই) দুরবর্তী এক জায়গায় (দাঁড়িয়ে) ছিলো; হে আমার ছেলে, আমাদের সাথে (নৌকায়) ওঠো, (আজ এমনি এক কঠিন দিনে) তুমি কাফেরদের সাথী হয়ো না ।

৪৩. সে বললো, (পানি বেশী দেখলে) আমি কোনো পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নেবো (এবং) তা আমাকে পানি থেকে বাঁচিয়ে দেবে; নুহ বললো, (কিন্তু) আজ তো কেউই আল্লাহর (গযবের) হুকুম থেকে (কাউকে) বাঁচাতে পারবে না, তবে যার ওপর আল্লাহ তায়ালা দয়া করবেন (সে-ই শুধু আজ রক্ষা পাবে, পিতা-পুত্র যখন কথা বলছিল তখন) হঠাৎ করে একটা (বিশাল) ঢেউ তাদের উভয়কে বিচ্ছিন্ন করে দিলো, (মুহূর্তের মধ্যেই) সে নিমজ্জিত লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলো 

৪৪. (অতঃপর) বলা হলো, হে যমীন, তুমি (এবার) তোমার পানি গিলে নাও, হে আসমান, তুমিও (পানি বর্ষণ থেকে) ক্ষান্ত হও, অতএব, পানি (-র প্রচন্ডতা) প্রশমিত হলো এবং (আল্লাহর) কাজও সম্পন্ন হলো, (নুহের) নৌকা গিয়ে স্থির হলো জ্বদী (পাহাড়)-এর ওপর, (আল্লাহর ঘোষণা) ধ্বনিত হলো, যালেম সম্প্রদায়ের লোকেরা (নিশেষিত হয়ে) বহুদুর চলে গেছে ।

৪৫. নুহ (তার ছেলেকে ডুবতে দেখে) তার মালিককে ডেকে বললো, হে আমার মালিক, আমার ছেলে তো আমারই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত | (আমার আপনজনদের ব্যাপারে) তোমার ওয়াদা অবশ্যই সত্য, আর তুমিই হচ্ছো সর্বোচ্চ বিচারক 

৪৬. আল্লাহ বললেন, হে নুহ, সে তোমার পরিবারের অন্তর্ভুক্ত নয়, সে তো হলো এক অসৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তি, অতএব তোমার যে বিষয়ের জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে আমার কাছে তুমি কিছু চেয়ো না; আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, নিজেকে কোনো অবস্থায় জাহেলদের দলে শামিল করো না।

৪৭. সে বললো, হে আমার মালিক, যে বিষয় সম্পর্কে আমার কোনো জ্ঞান নেই, সে ব্যাপারে কিছু চাওয়া থেকে আমি তোমার কাছে পানাহ চাই; তুমি যদি আমাকে মাফ না করো এবং আমার ওপর দয়া না করো, তাহলে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো।

৪৮. তাকে বলা হলো, হে নূহ (বন্যার পানি নেমে গেছে), এবার তুমি (নৌকা থেকে) নেমে পড়ো, তোমার ওপর, তোমার সাথে যারা আছে তাদের ওপর আমার দেয়া সালাম ও বরকতের সাথে এবং (অন্য) সম্প্রদায়সমূহ! (হাঁ) আমি (আবার) তাদের জীবনের (যাবতীয়) উপকরণ প্রদান করবো, (তবে নাফরমানীর জন্যে) আমার কাছ থেকে মর্মান্তিক শাস্তিও তাদের ভোগ করতে হবে।

৪৯. (হে নবী,) এগুলো হচ্ছে অদৃশ্য জগতের (কিছু) খবর, যা আমি তোমাকে ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছি, এর আগে না তুমি এগুলো জানতে, না তোমার জাতি এগুলো জানতো; অতএব, তুমি ধৈর্য ধারণ করো, কারণ (ভালো) পরিণাম ফল সব সময় পরহেযগার লোকদের জন্যেই (নির্দিষ্ট থাকে।

৫০. আমি আ'দ জাতির কাছে তাদেরই (এক) ভাই হৃদকে পাঠিয়েছিলাম; সে তাদের বললো, হে আমার জাতি, তোমরা এবাদাত করো একমাত্র আল্লাহ তায়ালার, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো মাবুদ নেই; (আসলে আল্লাহ তায়ালার ব্যাপারে) তোমরা তো মিথ্যা রচনাকারী ছাড়া আর কিছুই নও।

৫১. হে (আমার) জাতি, (আল্লাহর দিকে ডেকে) তার ওপর আমি তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক দাবী করছি না; আমার (যাবতীয়) পাওনা তো আল্লাহ তায়ালার কাছেই, যিনি আমাকে পয়দা করেছেন; তোমরা কি বুঝতে পারো না?

৫২. হে (আমার) জাতি, তোমরা তোমাদের মালিকের কাছে গুনাহখাতা মাফ চাও, অতঃপর তোমরা তাঁর দিকেই ফিরে আসো, তিনি তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণকারী মেঘমালা পাঠাবেন এবং তোমাদের (আরো) শক্তি যুগিয়ে তোমাদের (বর্তমান) শক্তি আরো বাড়িয়ে দেবেন, অতএব তোমরা অপরাধী হয়ে (তাঁর এবাদাত থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না।

৫৩. তারা বললো, হে হৃদ, তুমি তো আমাদের কাছে (ধরা-ছোঁয়ার মতো) কোনো স্পষ্ট দলীল-প্রমাণ নিয়ে আসোনি, শুধু তোমার (মুখের) কথায় আমরা (কিন্তু) আমাদের দেবতাদের ছেড়ে দেয়ার (লোক) নই, আমরা তোমার ওপর (বিশ্বাস করে) মোমেনও হয়ে যাবো না!

৫৪. আমরা তো বরং বলি, (আসলে) আমাদের কোনো দেবতা অশুভ কিছু দ্বারা তোমাকে আবিষ্ট করে ফেলেছে; (এ উদ্ভট কথা শুনে) সে বললো, আমি আল্লাহকে সাক্ষী করছি এবং তোমরাও (আমার এ কথায়) সাক্ষী হও, তোমরা যে (-ভাবে আল্লাহর সাথে) শেরেক করো, আমি তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত,

৫৫. (যাও,) তোমরা সবাই মিলে আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে আমার বিরুদ্ধে যতো রকম ষড়যন্ত (করতে চাও) করো, অতঃপর আমাকে কোনো রকম (প্রস্তুতির অবকাশও দিয়ো না।

৫৬. আমি অবশ্যই আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করি, (যিনি) আমার মালিক, তোমাদেরও মালিক; বিচরণশীল এমন কোনো প্রাণী নেই যার নিয়ন্ত্রণ তাঁর হাতের মুঠোয় নয়; অবশ্যই আমার মালিক সঠিক পথের ওপর রয়েছেন।

৫৭. (এ সত্ত্বেও) যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে (জেনে রেখো), আমি যে (পয়গাম) তোমাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্যে প্রেরিত হয়েছিলাম, তা আমি তোমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি; (সে অবস্থায় অচিরেই) আমার মালিক অন্য কোনো জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন, তোমরা তাঁর কোনোই ক্ষতি সাধন করতে পারবে না; অবশ্যই আমার মালিক প্রত্যেকটি বস্তুরই ওপর একক রক্ষক (ও অভিভাবক)।

৫৮. অতঃপর যখন আমার (আযাব সম্পর্কিত) হুকুম এলো, তখন আমি হুদকে এবং তার সাথে যতো ঈমানদার ছিলো, তাদের আমার রহমত দ্বারা (আযাব থেকে) বাঁচিয়ে দিয়েছি, (এভাবেই) আমি তাদের এক কঠিন আযাব থেকে রক্ষা করেছি।

৫৯. এ হচ্ছে আদ জাতি (ও তাদের কাহিনী), তারা তাদের মালিকের আয়াতসমূহ অস্বীকার করেছিলো, তারা তাঁর রসুলদের নাফরমানী করেছিলো, (সর্বোপরি) তারা প্রত্যেক উদ্ধত স্বৈরাচারীর নির্দেশই মেনে নিয়েছিলো ।

৬০. পরিশেষে এ দুনিয়ায় (আল্লাহর) অভিশাপ তাদের পিছু নিলো, কেয়ামতের দিনও (এ অভিশাপ তাদের পিছু নেবে); ভালো করে শুনে রেখো, আদ (জাতি) তাদের মালিককে অস্বীকার করেছিলো; এও জেনে রেখো, ধ্বংসই ছিলো হূদের জাতি আ'দের (একমাত্র) পরিণতি।

৬১. সামুদ (জাতির) কাছে (নবী) ছিলো তাদেরই (এক) ভাই সালেহ। সে (তাদের) বললো, হে (আমার) জাতি, তোমরা সবাই (একান্তভাবে) আল্লাহর এবাদাত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো মাবুদ নেই, তিনি তোমাদের (এ) যমীন থেকেই পয়দা করেছেন এবং তাতেই তিনি তোমাদের বসবাস করিয়েছেন, অতঃপর (কৃতজ্ঞতাস্বরূপ) তোমরা তাঁর কাছে গুনাহের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করো, অতঃপর (তাওবা করে) তাঁর দিকেই ফিরে এসো, অবশ্যই আমার মালিক (প্রত্যেকের) একান্ত নিকটবর্তী এবং (প্রত্যেক ব্যক্তির) ডাকের তিনি জবাব দেন।

৬২. তারা বললো, হে সালেহ, এর আগে তুমি এমন (একজন মানুষ) ছিলে, (যার) ব্যাপারে আমাদের মধ্যে (বড়ো) আশা করা হতো, (আর এখন) কি তুমি আমাদের সে সব মারদের এবাদাত থেকে বিরত রাখতে চাও যাদের এবাদাত আমাদের পিতা-মাতারা (যুগ যুগ থেকে) করে আসছে, (আসলে) তুমি যে (দ্বীনের) দিকে আমাদের ডাকছো, সে ব্যাপারে আমরা সন্দেহে নিমজ্জিত আছি, (এ ব্যাপারে) আমরা খুব দ্বিধাগ্রস্তও বটে!

৬৩. সে বললো, হে আমার জাতি, তোমরা কি এ বিষয়টি নিয়ে একটুও চিনত্মা করে দেখোনি যে, যদি আমি আমার মালিকের পক্ষ থেকে একটি সুস্পষ্ট দলীলের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকি এবং তিনি যদি আমাকে তাঁর অনুগ্রহ দিয়ে ( ধন্য করে) থাকেন, (তা সত্ত্বেও) যদি আমি কোনো গুনাহ করি তাহলে কে এমন আছে, যে আল্লাহর মোকাবেলায় আমাকে সাহায্য করবে? (আসলে অন্যায় আবদার করে) তোমরা আমার ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই তো বাড়াচ্ছো না?

৬৪. হে আমার সম্প্রদায়, এ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার (পাঠানো) উটনী, (তোমরা যে নিদর্শন চাচ্ছিলে) এটা হচ্ছে তোমাদের জন্যে (সে) নিদর্শন । অতঃপর (আল্লাহর) এ (নিদর্শন)-কে ছেড়ে দাও, সে আল্লাহর যমীনে চরে খাক, তাকে কোনো রকম কষ্ট দেয়ার নিয়তে ছুঁয়ো না, (তেমনটি করলে) অতিসত্তর (বড়ো ধরনের) আযাব তোমাদের পাকড়াও করবে।

৬৫. অতঃপর তারা সেটিকে বধ করে ফেললো, সে তারপর (তাদের) বললো (চলে যাও), তোমরা তোমাদের নিজ নিজ ঘরে তিন দিন জীবন উপভোগ করে নাও; (আযাবের ব্যাপারে আল্লাহর) এ ওয়াদা কখনো মিথ্যা হবার নয়।

৬৬. এর পর (ওয়াদামতো যখন আমার আযাবের) নির্দেশ এলো (এবং তা তাদের ভীষণভাবে পাকড়াও করলো), তখন আমি সালেহকে এবং তার সাথে আরো যারা ঈমান এনেছিলো তাদের সবাইকে আমার রহমত দিয়ে সে দিনের অপমান (-কর আযাব) থেকে বাঁচিয়ে দিলাম; অবশ্যই (হে নবী,) তোমার মালিক শক্তিমান ও পরাক্রমশালী।

৬৭. অতঃপর যারা (আল্লাহর দ্বীনের সাথে) যুলুম করেছে, এক মহানাদ (তাদের ওপর মরণ) আঘাত করলো, ফলে তারা তাদের ঘরসমূহে মুখ থুবড়ে পড়ে রইলো,

৬৮. (অবস্থা দেখে মনে হলো) যেন তারা কোনোদিন সেখানে বসবাসই করেনি । শুনে রাখো, সামুদ জাতি তাদের মালিককে অস্বীকার করেছিলো; আরো জেনে রেখো, (নির্মম) এক ধ্বংসই ছিলো সামুদ জাতির জন্যে (নির্দিষ্ট পরিণাম)!

৬৯. (একদিন) আমার পাঠানো ফেরেশতারা (বিশেষ একটি) সুসংবাদ নিয়ে ইবরাহীমের কাছে এলো, তারা (তার কাছে এসে) বললো, (তোমার ওপর) শান্তি (বর্ষিত হোক); সেও (জবাবে) বললো, (তোমাদের ওপরও) শান্তি (বর্ষিত হোক), অতঃপর সে (তাড়াহুড়ো করে এদের মেহমানদারীর জন্যে) একটি ভুনা গো-বৎস নিয়ে এলো।

৭০. (কিন্তু) সে যখন দেখলো, তারা তার (খাবারের) দিকে হাত বাড়াচ্ছে না, তখন তাদের (এ বিষয়টি) তার (কাছে) খারাপ লাগলো এবং তাদের সম্পর্কে তার মনে একটা (প্রচ্ছন্ন) ভয়ের সৃষ্টি হলো; তারা (ইবরাহীমকে) বললো, (আমাদের ব্যাপারে) তুমি কোনো রকম ভয় করো না, আমরা প্রেরিত হয়েছি লুতের জাতির প্রতি;

৭১. তার স্ত্রী (সেখানে) দাঁড়িয়ে ছিলো, (এদের কথাবার্তা শুনে) সে হাসলো, অতঃপর আমি তাকে (তার ছেলে) ইসহাক ও তার পরবর্তী (পৌত্র) ইয়াকুবের (জন্মের) সুসংবাদ দিলাম।

৭২. সে (এটা শুনে) বললো, কি আশ্চর্য! আমি সন্তান জন্ম দেবো, আমি তো (এখন) বৃদ্ধা (হয়ে গেছি,) আর এই (যে) আমার স্বামী, (সেও তো) বৃদ্ধ হয়ে গেছে; (এমন কিছু হলে) এটা (আসলেই হবে) একটা আশ্চর্যজনক ব্যাপার ।

৭৩. তারা বললো, তুমি কি আল্লাহর কোনো কাজে বিস্ময়বোধ করছো, (নবীর) পরিবার-পরিজন (হিসেবে) তোমাদের ওপর আল্লাহর (বিশেষ) রহমত ও তাঁর অনুগ্রহ রয়েছে; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা প্রচুর প্রশংসা ও বিপুল সম্মানের মালিক।

৭৪. অতঃপর যখন ইবরাহীমের (মন থেকে) ভীতি দুরীভূত হয়ে গেলো এবং (ইতিমধ্যে) তার কাছে (সন্তানের ব্যাপারেও) সুসংবাদ পৌঁছে গেলো, তখন সে লুতের সম্প্রদায়ের (কাছে আযাব না পাঠানোর) ব্যাপারে আমার সাথে যুক্তি তর্ক করলো;

৭৫. (আসলে স্বভাবের দিক থেকে) ইবরাহীম ছিলো (ভীষণ) সহনশীল, কোমল হৃদয় ও আল্লাহর প্রতি নিবেদিত |

৭৬. (আমি তাকে বললাম, হে ইবরাহীম, এ (যুক্তিতর্ক) থেকে তুমি বিরত হও, (এদের ব্যাপারে) তোমার মালিকের সিদ্ধান্ত এসে গেছে, (এখন) এদের ওপর এমন এক ভয়ানক শাস্তি আসবে, যেটা (কারো পক্ষেই) রোধ করা সম্ভব হবে না ।

৭৭. যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতারা লুতের কাছে এলো, নে (এদের অকস্মাৎ আগমনে কিছুটা) বিষণ্ন হলো, তাদের কারণে তার মনও (কিছুটা) খারাপ হয়ে গেলো এবং সে (নিজে নিজে) বললো, আজকের দিন (দেখছি) সত্যিই বড়ো (কঠিন) বিপদের (দিন)।

৭৮. (এই অপরিচিত লোকদের দেখে) তার জাতির লোকেরা তার কাছে দৌড়ে আসতে লাগলো; আর তারা তো আগে থেকেই কুকর্মে লিপ্ত ছিলো; (তাদের কুমতলব বুঝতে পেরে) সে বললো, হে আমার সম্প্রদায়, এরা হচ্ছে আমার (জাতির) মেয়ে, (বিয়ে ও দৈহিক সম্পর্কের জন্যে) এরাই হচ্ছে তোমাদের জন্যে বেশী পবিত্র, সুতরাং (তোমরা) আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো এবং আমার (এ) মেহমানদের মধ্যে আমাকে তোমরা অপমানিত করো না; তোমাদের মধ্যে (এ কথাগুলো শোনার মতো) একজন ভালো মানুষও কি (অবশিষ্ট) নেই?

৭৯. তারা বললো, তুমি ভালো করেই (একথাটা) জানো, তোমার (জাতির) মেয়েদের আমাদের কোনোই প্রয়োজন নেই, তুমি জানো, আমরা সত্যিকার অর্থে কি চাই!

৮০. সে (এদের অশালীন কথাবার্তা শুনে) বললো, (কতো ভালো হতো) যদি আজ তোমাদের ওপর আমার কোনো ক্ষমতা চলতো, কিংবা যদি (তোমাদের মোকাবেলায়) আমি কোনো একটি শক্তিশালী সম্ভের আশ্রয় গ্রহণ করতে পারতাম!

৮১. (অবস্থা দেখে) তারা বললো, হে লুত (তুমি ভেবো না), আমরা তো হচ্ছি তোমার মালিকের (পাঠানো ) ফেরেশতা, (আমাদের কথা দূরে থাক) এরা তো তোমার কাছেও পৌঁছতে পারবে না, তুমি (বরং এক কাজ করো,) রাতের কোনো এক প্রহরে তোমার পরিবার-পরিজনসহ (ঘর থেকে) বেরিয়ে পড়ো, তবে তোমাদের কোনো ব্যক্তিই যেন (যাবার সময়) পেছনে ফিরে না তাকায়, কিন্তু তোমার স্ত্রী ব্যতীত; (কেননা) যা কিছু (আযাবের তান্ডব) তাদের (ওপর) ঘটবে, তা তার (ওপর)-ও ঘটবে; তাদের (ওপর আযাব আসার) ক্ষণ নির্ধারিত হয়েছে সকাল বেলা; সকাল হতে আর কতোই বা দেরী!

৮২. অতঃপর যখন (সত্যিই) আমার (আযাবের নির্ধারিত) হুকুম এলো, তখন আমি সেই জনপদগুলো উল্টিয়ে দিলাম এবং তার ওপর ক্রমাগত পাকা মাটির পাথর নিক্ষেপ করতে শুরু করলাম,

৮৩. যা (অপরাধী ব্যক্তিদের নাম-ধামসহ) তোমার মালিকের কাছে চিহ্নিত ছিলো, আর (গযবের) এ স্থান তো এ যালেমদের কাছ থেকে দুরেও নয়!

৮৪. মাদইয়ান (বাসী) এর কাছে (ছিলো) তাদেরই (এক) ভাই শোয়ায়ব; সে (তাদের) বলেছিলো, হে আমার জাতি, তোমরা আল্লাহর এবাদাত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো মাবুদ নেই; (আর সে মাবুদেরই নির্দেশ হচ্ছে,) তোমরা মাপ ও ওযন কখনো কম করো না, আমি তো তোমাদের (অর্থনৈতিকভাবে খুব) ভালো অবস্থায়ই দেখতে পাচ্ছি, (এ সত্ত্বেও এমনটি করলে) আমি কিন্তু তোমাদের জন্যে এক সর্বগ্রাসী দিনের আযাবের আশংকা করছি।

৮৫. হে আমার জাতি, তোমরা মাপ ও ওযনের কাজ ইনসাফের সাথে আঞ্জাম দেবে, লোকদের তাদের জিনিসপত্রে (কম দিয়ে তাদের) ক্ষতি করো না, আর যমীনে বিশৃংখলা সৃষ্টি করো না।

৮৬. যদি তোমরা সঠিক অর্থে আল্লাহর ওপর ঈমান এনে থাকো, তাহলে (জেনে রেখো,) আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত যে সম্পদ তোমাদের কাছে অবশিষ্ট থাকবে, তাই তোমাদের জন্যে উত্তম (আমার কাজ শুধু তোমাদের বলা) আমি তো তোমাদের ওপর পাহারাদার নই।

৮৭. তারা বললো, হে শোয়ায়ব, তোমার নামায কি তোমাকে এই আদেশ দেয় যে, আমরা আমাদের দেবতাদের এবাদাত ছেড়ে দেবো (বিশেষ করে এমন সব দেবতাদের) যাদের এবাদাত আমাদের পিতৃপুরুষরা করতো, (তোমার নামায কি তোমাকে এ আদেশ দেয় যে,) আমরা আমাদের ধন-সম্পদ নিয়ে যা করতে চাই তা (আর) করতে পারবো না? (আমরা জানি) নিশ্চয়ই তুমি একজন ধৈর্যশীল নেককার মানুষ!

৮৮. সে বললো, হে আমার জাতি, তোমরা কি কখনো (একথা) ভেবে দেখেছো, যদি আমি আমার মালিকের পাঠানো একটি সুস্পষ্ট দলীলের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকি, অতঃপর তিনি যদি আমাকে তাঁর কাছ থেকে উত্তম রেযেকের ব্যবস্থা করেন; (তাহলে কি আমি তোমাদের তাঁর পথে ডাকবো না?) আমি (কখনো) এটা এরাদা করি না, যে (কথা) থেকে আমি তোমাদের বারণ করি, নিজে (তার বিরুদ্ধে চলে) তোমাদের বিরোধিতা করবো; (আসলে) আমি তো এর বাইরে আর কিছুই চাই না যে, যদ্দুর আমার পক্ষে সম্ভব আমি তোমাদের সংশোধন করে যাবো; আমার পক্ষে যতোটুকু কাজ আঞ্জাম দেয়া সম্ভব তা তো একান্তভাবে আল্লাহ তায়ালার (সাহায্য) দ্বারাই (সম্ভব); আমি তো সম্পূর্ণত তাঁর ওপরই নির্ভর করি এবং (সব ব্যাপারে) আমি তাঁরই দিকে ধাবিত হই।

৮৯. হে আমার জাতি, আমার বিরুদ্ধে (তোমাদের) জেদ (এবং শত্রুতা) যেন তোমাদের জন্যে এমন এক (আযাবজনিত) বিষয়ের কারণ না হয়ে দাঁড়ায় যে, তোমাদের ওপরও সে ধরনের কিছু আপতিত হবে, যেমনটি নুহ কিংবা হুদ অথবা সালেহের জাতির ওপর আপতিত হয়েছিলো; আর লুতের সম্প্রদায়ের (পাথর বর্ষণের সে) স্থানটি তো তোমাদের থেকে খুব বেশী দুরেও নয়।

৯০. তোমরা তোমাদের মালিকের কাছে (নিজেদের গুনাহের জন্যে) ক্ষমা প্রার্থনা করো, অতঃপর (তাওবা করে) তাঁর দিকেই ফিরে এসো; অবশ্যই আমার মালিক পরম দয়ালু ও স্নেহময় ।

৯১. তারা বললো, হে শোয়ায়ব, তুমি যা (ভালো ভালো কথাবার্তা) বলো তার অধিকাংশ কথাই আমাদের (ঠিকমতো) বুঝে আসে না (আসল কথা হচ্ছে), আমরা তোমাকে দেখতে পাচ্ছি, তুমি আমাদের মাঝে খুবই দুর্বল, (আমাদের মাঝে) তোমার (আপন) গোত্রের লোকজন না থাকলে আমরা (অবশ্যই) তোমাকে পাথর নিক্ষেপ (করে হত্যা) করতাম, (তা ছাড়া) তুমি তো আমাদের ওপর খুব শক্তিশালীও নও (যে, অতঃপর আমাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতে পারবে) ।

৯২. সে বললো, হে আমার জাতি, তোমাদের কাছে আমার গোত্রীয় ভাই-বন্ধু কি আল্লাহ তায়ালার চাইতে বেশী প্রভাবশালী (যে, তোমরা ওদের দোহাই দিচ্ছো)? আল্লাহ তায়ালাকে কি তোমরা তোমাদের পেছনে ফেলে রাখলে? (জেনে রেখো,) তোমরা (এখন) যা কিছু করছো, আমার মালিকের জ্ঞানের পরিধি দ্বারা তা পরিবেষ্টিত হয়ে আছে।

৯৩. হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা তোমাদের জায়গায় যা কিছু করতে চাও করে যাও; আমিও (আমার জায়গায় যা করার) করে যাবো; অচিরেই তোমরা (একথা) জানতে পারবে, কার ওপর এমন আযাব আসবে যা তাকে অপমানিত করে ছাড়বে, আর কে মিথ্যাবাদী (তাও তখন জানা যাবে); অতএব তোমরা (সেদিনের) প্রতীক্ষা করো, আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষা করবো।

৯৪. পরিশেষে যখন আমার (আযাবের) সিদ্ধান্ত এলো, তখন আমি শোয়ায়বকে এবং তার সাথে যে কয়জন (মানুষ) ঈমান এনেছিলো তাদের সবাইকে আমার নিজস্ব রহমত দ্বারা (প্রলয়ংকরী আযাব থেকে) বাঁচিয়ে দিলাম, অতঃপর যারা (আল্লাহর সাথে) যুলুম করেছে, সেদিন তাদের ওপর মহানাদ আঘাত হানলো, ফলে মুহূর্তের মাঝেই তারা নিজেদের ঘরসমূহেই (এদিকে সেদিকে) উপুড় হয়ে পড়ে রইলো,

৯৫. (অবস্থা এমন হলো) যেন সে জনপদে কখনো তারা কোনো প্রাচুর্যই অর্জন করেনি, শুনে রাখো, এ ধ্বংসই ছিলো মাদইয়ান (বাসী)-এর চূড়ান্ত পরিণাম, (ঠিক) যেমন (ধ্বংসকর) পরিণাম হয়েছিলো (তার পুর্ববর্তী সম্প্রদায়) সামুদের!

৯৬. আমি মুসাকে তার জাতির কাছে আমার নিদর্শনসমূহ ও (নবুওতের) সুস্পষ্ট দলীলসহ পাঠিয়েছিলাম,

৯৭. (তাকে আমি পাঠিয়েছিলাম) ফেরাউন ও তার পারিষদবর্গের কাছে, (কিন্তু) তারা (সর্বদা) ফেরাউনের কথাই মেনে চলতো, (অথচ) ফেরাউনের কোনো কাজ (ও কথাই তো) সঠিক ছিলো না ।

৯৮. কেয়ামতের দিন সে তার (দন্ডপ্রাপ্ত) জাতির আগে আগে থাকবে, অতঃপর সে তাদের (জাহান্নামের) আগুন পর্যন্ত নেতৃত্ব দিয়ে নিয়ে যাবে; কতো নিকৃষ্ট সে জায়গা, যেখানে তাদের নেতৃত্ব দিয়ে নিয়ে যাবে!

৯৯. এ দুনিয়াতে আল্লাহর অভিশাপ তাদের পেছনে ধাবিত করা হলো, আবার কেয়ামতের দিনও (তারা কঠিন আযাবে নিমজ্জিত হবে); কতো নিকৃষ্ট (এ) পুরস্কার, যা (তাদের) সেদিন দেয়া হবে ।

১০০. (হে নবী,) এ হচ্ছে (ধ্বংসপ্রাপ্ত) কতিপয় জনপদের কাহিনী, যা আমি তোমার কাছে বর্ণনা করছি, এদের (ধ্বংসাবশেষের) কিছু তো (এখানে সেখানে এখনো) বিদ্যমান আছে, আবার (তার অনেক কিছু কালের গর্ভে ) বিলীনও (হয়ে গেছে)।

১০১. (এ আযাব পাঠিয়ে) আমি (কিন্তু) তাদের ওপর যুলুম করিনি, যুলুম তো বরং তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর করেছে, যখন (সত্যি সত্যিই) তোমার মালিকের আযাব তাদের ওপর নাযিল হয়েছে, তখন তাদের সে সব দেবতা তাদের কোনো কাজেই আসেনি, যাদের তারা আল্লাহর বদলে ডাকতো, বরং তারা তাদের ধ্বংস ছাড়া অন্য কিছুই বৃদ্ধি করতে পারেনি।

১০২. (হে নবী,) তোমার মালিক যখন কোনো জনপদকে তাদের অধিবাসীদের যুলুমের কারণে পাকড়াও করেন, তখন তাঁর পাকড়াও এমনিই হয়; আল্লাহ তায়ালার পাকড়াও অত্যন্ত কঠোর (অত্যন্ত ভয়ংকর)।

১০৩. এ (কাহিনীগুলো)-র মাঝে তার জন্যে (সত্য জানার প্রচুর) নিদর্শন (মজুদ) রয়েছে, যে ব্যক্তি পরকালের আযাবকে ভয় করে, সেদিন হবে সমস্ত মানুষদের একত্রিত করার দিন, (উপরন্তু) সেটা সবাইকে উপস্থিত করার দিনও বটে।

১০৪. আমি সে (দিন)-টি একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্যে মুলতবি করে রেখে দিয়েছি;

১০৫. সেদিন যখন (আসবে তখন) কেউ আল্লাহর অনুমতি ব্যতিরেকে কোনো কথা বলবে না, অতঃপর (মানুষরা দু'দলে বিভক্ত হয়ে যাবে,) তাদের মধ্যে কিছু থাকবে হতভাগ্য আর কিছু (থাকবে) ভাগ্যবান।

১০৬. অতঃপর যারা হবে হতভাগ্য পাপী, তারা থাকবে (জাহান্নামের) আগুনে, সেখানে তাদের জন্যে থাকবে (আযাবের ভয়াবহ) চীৎকার ও (যন্ত্রণার ভয়াল) আর্তনাদ,

১০৭. তারা সেখানে থাকবে চিরকাল যতোক্ষণ পর্যন্ত আসমানসমূহ ও যমীন বিদ্যমান থাকবে, তবে হ্যাঁ, তাদের কথা আলাদা যাদের ব্যাপারে তোমার মালিক ভিন্ন কিছু চান; তোমার মালিক যখন যা চান তার বাস্তবায়নে তিনি একক ক্ষমতাবান।

১০৮. (অপরদিকে সেদিন) যাদের ভাগ্যবান বানানো হবে তারা থাকবে জান্নাতে, সেখানে তারা চিরদিন থাকবে, যতোদিন পর্যন্ত আসমানসমূহ ও যমীন বিদ্যমান থাকবে, তবে তার কথা আলাদা যা তোমার মালিক ইচ্ছা করেন; আর এ (জান্নাত) হবে এক নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার, যা কোনোদিনই শেষ হবে না ।

১০৯. সুতরাং (হে নবী), যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা ছাড়া এসব কিছুর গোলামী করে, তাদের (শাস্তির) ব্যাপারে তুমি কখনো সন্দিগ্ধ হয়ো না; (আসলে) ওদের পিতৃপুরুষরা আগে যাদের বন্দেগী করতো, এরাও তাদেরই বন্দেগী করে; আমি এদের (এ জঘন্য অপরাধের) পাওনা পুরোপুরিই আদায় করে দেবো, বিন্দুমাত্রও কম করা হবে না ।

১১০. (হে নবী,) আমি মুসাকেও কেতাব দিয়েছিলাম, অতঃপর (বনী ইসরাঈলের তরফ থেকে) তাতেও নানা রকম মতবিরোধ সৃষ্টি করা হয়েছিলো; (আসলে) তোমার মালিকের পক্ষ থেকে এ (বিদ্রোহী)-দের ব্যাপারে যদি আগে থেকেই এ কথার ঘোষণা না করে রাখা হতো (যে, এদের বিচার পরকালেই হবে), তাহলে কবেই এদের ব্যাপারে (দুনিয়ায় গযবের) সিদ্ধান্ত এসে যেতো; (অবশ্যই) এরা এ (গ্রন্থের) ব্যাপারে বিভ্রান্তিকর সন্দেহে নিমজ্জিত আছে ।

১১১. আর তখন তোমার মালিক এদের (সবাইকে) নিজেদের কর্মফলের পুরোপুরি বিনিময় আদায় করে দেবেন; কেননা, এরা যা কিছু করছে তিনি তার সব কিছুই জানেন ।

১১২. অতএব (হে নবী), তোমাকে যেমনি করে (সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার) আদেশ দেয়া হয়েছে তুমি তাতেই দৃঢ় থাকো, তোমার সাথে আরো যারা (কুফরী থেকে) ফিরে এসেছে তারাও (যেন ঈমানের ওপর দৃঢ় থাকে), তোমরা কখনো সীমালংঘন করো না; এরা যা কিছু করছে, আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তার সব কিছু দেখছেন।

১১৩. (হে মুসলমানরা,) তোমরা কখনো তাদের দিকে ঝুঁকে পড়ো না যারা (ন্যায়ের) সীমালংঘন করেছে, (তেমনটি করলে অবশ্যই) অতঃপর জাহান্নামের আগুন তোমাদের স্পর্শ করবে, (আর তেমন অবস্থায়) আল্লাহ তায়ালা ছাড়া তোমাদের কোনো অভিভাবক থাকবে না, এবং (সে সময়) তোমাদের কোনো রকম সাহায্যও করা হবে না ।

১১৪. (হে নবী,) নামায প্রতিষ্ঠা করো দিনের দুপ্রান্তভাগে ও রাতের একভাগে; অবশ্যই (মানুষের) ভালো কাজসমূহ (তাদের) মন্দ কাজসমূহ মিটিয়ে দেয়; এটা হচ্ছে (এক ধরনের) উপদেশ তাদের জন্যে, যারা (আল্লাহর) স্মরণ করে ।

১১৫. তুমি ধৈর্য ধারণ করো, অতঃপর নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা নেককারদের পাওনা কখনো বিনষ্ট করেন না |

১১৬. তারপর এমনটি কেন হয়নি যে, যেসব উম্মতের লোকেরা তোমাদের আগে অতিবাহিত হয়ে গেছে, (তাদের মধ্যে) অবশিষ্ট (যারা) রয়ে গেছে, তারা (মানুষকে) যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করা থেকে নিষেধ করতো, এদের সংখ্যা ছিলো নিতান্ত কম, আমি যাদের আযাব থেকে বাঁচিয়ে রেখেছিলাম, আর যালেমরা তো যে (বৈষয়িক) প্রাচুর্য ছিলো তার পেছনেই পড়ে থেকেছে, তারা ছিলো (আসলেই) অপরাধী।

১১৭. এটা কখনো তোমার মালিকের কাজ নয় যে, কোনো জনপদকে অন্যায়ভাবে ধ্বংস করে দেবেন, (বিশেষ করে) যখন সে জনপদের অধিবাসীরা সংশোধনে নিয়োজিত থাকে ।

১১৮. (হে নবী,) তোমার মালিক চাইলে দুনিয়ার সব মানুষকে তিনি একই উম্মত বানিয়ে দিতে পারতেন ( কিন্তু আল্লাহ তায়ালা কারো ওপর তার ইচ্ছা চাপিয়ে দিতে চাননি), এ কারণে তারা হামেশাই নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ করতে থাকবে,

১১৯. তবে তোমার মালিক যার ওপর দয়া করেন তার কথা আলাদা; তাদের তো এ জন্যেই আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন (যে, তারা সত্য দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে, আর তা যখন লংঘিত হবে তখন) তাদের ব্যাপারে তোমার মালিকের ওয়াদাই সত্য হবে, (আর সে ওয়াদা হচ্ছে); অবশ্যই আমি জাহান্নামকে জ্বিন ও মানুষ দিয়ে পূর্ণ করবো।

১২০. (হে নবী,) আগের নবীদের কাহিনীগুলো আমি তোমাকে শোনাচ্ছি, তার উদ্দেশ্য হচ্ছে, আমি এর দ্বারা তোমার মনকে দৃঢ়তা দান করবো, এই সত্যের মাঝে যে শিক্ষা তা এখন তোমার কাছে এসে গেছে; (তা ছাড়া) ঈমানদারদের জন্যে কিছু শিক্ষণীয় উপদেশ ও সাবধানবাণী (এখানে দেয়া রয়েছে) ।

১২১. (এতো কিছু সত্ত্বেও) যারা ঈমান আনে না, তাদের বলো, তোমরা তোমাদের জায়গায় যা (কুফরী কাজ) করার করে যাও, আর আমরাও আমাদের কাজ করে যাবো,

১২২. তোমরা (তোমাদের জাহান্নামের) অপেক্ষা করো, আমরাও (আমাদের জান্নাতের) অপেক্ষা করছি।

১২৩. আসমানসমূহ ও যমীনের যাবতীয় গায়ব বিষয় আল্লাহ তায়ালার জন্যেই (নিবেদিত) এবং এর সব কয়টি বিষয় তাঁর দিকেই ধাবিত হবে, অতএব (হে নবী), তুমি তাঁরই এবাদাত করো এবং (বিপদে-আপদে) একান্তভাবে তাঁর ওপরই ভরসা করো; (হে মানুষ,) তোমরা যা কিছু করছো সে সম্পর্কে তোমার মালিক কিন্তু মোটেই বে-খবর নন।


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url