আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা ইউসুফের বাংলা অনুবাদ | সূরা ইউসুফ | Surah Yusuf | يسوف



সূরা ইউসুফের বাংলা অনুবাদ


সূরা ইউসুফ, মক্কায় অবতীর্ণ আয়াত ১১১, রুকু ১২

সূরা ইউসুফ


রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে


১. আলিফ-লাম-রা-| এগুলো (হচ্ছে একটি) সুস্পষ্ট গ্রন্থের আয়াত 

২. নিঃসন্দেহে আমি একে আরবী কোরআন (হিসেবে) নাযিল করেছি, যেন তোমরা (তা) অনুধাবন করতে পারো 

৩. (হে নবী,) আমি তোমাকে এ কোরআনের মাধ্যমে একটি সুন্দর কাহিনী শোনাতে যাচ্ছি, যা আমি তোমার কাছে ওহী হিসেবে পাঠিয়েছি, অথচ তার আগ পর্যন্ত তুমি (এ কাহিনী সম্পর্কে) ছিলে সম্পূর্ণ বেখবর লোকদেরই একজন ।

৪. (এটা হচ্ছে সে সময়ের কথা,) যখন ইউসুফ তার পিতাকে বললো, হে আমার পিতা, আমি (স্বপ্নে) দেখেছি এগারোটি তারা, চাঁদ ও সুরুজ, আমি (এদের) আমার প্রতি সাজদাবনত অবস্থায় দেখেছি ।

৫. (এ কথা শুনে তার পিতা বললো,) হে আমার স্নেহের পুত্র, তুমি তোমার (এ) স্বপ্নের কথা (কিন্তু) তোমার ভাইদের কাছে বলে দিয়ো না, তারা তোমার বিরুদ্ধে অতঃপর ষড়যন্ত আঁটতে শুরু করবে; (কেননা) শয়তান অবশ্যই মানুষের খোলাখুলি দুশমন,

৬. এমনি করেই তোমার মালিক তোমাকে (নরওতের জন্যে) মনোনীত করবেন এবং তোমাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা (-সহ অন্যান্য জ্ঞান) শিক্ষা দেবেন এবং তাঁর নেয়ামত তোমার ওপর ও ইয়াকুবের সন্তানদের ওপর তেমনিভাবেই পূর্ণ করে দেবেন, যেমনিভাবে এর আগেও তিনি তোমার পূর্বপুরুষ ইবরাহীম ও ইসহাকের ওপর তা পূর্ণ করে দিয়েছিলেন; নিশ্চয়ই তোমার মালিক সর্বজ্ঞ ও প্রবল প্রজ্ঞাময় ।

৭. অবশ্যই ইউসুফ ও তার ভাইদের (এ কাহিনীর) মাঝে যারা সত্যানুসন্ধিৎসু, তাদের জন্যে প্রচুর নিদর্শন রয়েছে।

৮. (এ কাহিনীটি শুরু হয়েছিলো ইউসুফের ভাইদের দিয়ে,) যখন তারা (একজন আরেকজনকে) বললো, আমাদের পিতার কাছে নিসন্দেহে ইউসুফ ও তার ভাই আমাদের চাইতে বেশী প্রিয়, যদিও আমরাই হচ্ছি ভারী দল; আসলেই আমাদের পিতা স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে আছেন,

৯. (তাই শয়তান তাদের পরামর্শ দিলো,) ইউসুফকে মেরে ফেলো অথবা তাকে কোনো এক (অজানা) জায়গায় (নির্বাসনে) দিয়ে এসো, (এরপর দেখবে) তোমাদের পিতার দৃষ্টি তোমাদের দিকেই নিবিষ্ট হবে, অতঃপর তোমরা (আবার) সবাই ভালো মানুষ হয়ে যেয়ো ।


১০. (এ সময়) তাদের মধ্য থেকে একজন বললো, না, ইউসুফকে তোমরা হত্যা করো না, তোমরা যদি সত্যি সত্যিই কিছু একটা করতে চাও তাহলে তাকে হয় তো কোনো গভীর কূপে ফেলে দিয়ে এসো, (আসা যাওয়ার পথে) কোনো যাত্রীদল তাকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে ।

১১. (সিদ্ধান্ত মোতাবেক সবাই পিতার কাছে এলো এবং) তারা বললো, হে আমাদের পিতা, এ কি হলো তোমার, তুমি কি ইউসুফের ব্যাপারে (আমাদের ওপর ভরসা করতে পারছো না, অথচ আমরা নিসন্দেহে সবাই তার শুভাকাংখী!

১২. আগামীকাল তাকে তুমি আমাদের সাথে (জংগলে) যেতে দাও, সে (আমাদের সাথে) ফলমূল খাবে ও খেলাধুলা করবে, আমরা নিশ্চয়ই তার রক্ষণাবেক্ষণ করবো ।

১৩. সে বললো, এটা অবশ্যই আমাকে কষ্ট দেবে যে, তোমরা তাকে নিয়ে যাবে, (তদুপরি) আমি ভয় করছি (এমন তো হবে না যে), বাঘ তাকে এসে খেয়ে ফেলবে, অথচ তোমরা তার ব্যাপারে অমনোযোগী হয়ে পড়বে!

১৪. তারা বললো, আমরা একটি ভারী দল ( সংবদ্ধ শক্তি) হওয়া সত্তেও যদি তাকে বাঘ এসে খেয়ে ফেলে, তাহলে আমরা সত্যিই (অথর্ব ও) ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বো !

১৫. অতঃপর (অনেক বলে কয়ে) যখন তারা তাকে নিয়ে গেলো এবং তারা তাকে এক অন্ধ কূপে নিক্ষেপ করার ব্যাপারে সবাই সিদ্ধান্ত নিলো (এবং তারা তাকে কূপে নিক্ষেপ করেও ফেললো), তখন আমি তাকে ওহী পাঠিয়ে জানিয়ে দিলাম, (একদিন এমন আসবে যেদিন) তুমি অবশ্যই এসব কথা এদের (সবাইকে) বলে দেবে, এরা তো জানেই না (এ ঘটনা কার জন্যে কি পরিণাম বয়ে আনবে )।

১৬. (ইউসুফকে কুয়ায় ফেলে দিয়ে) রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হবার পর তারা কাঁদতে কাঁদতে তাদের পিতার কাছে এলো;

১৭. (অনুযোগের স্বরে) তারা বললো, হে আমাদের পিতা, আমরা (গিয়েছিলাম জংগলে, সেখানে আমরা দৌড়ের) প্রতিযোগিতা দিচ্ছিলাম, আমরা ইউসুফকে আমাদের মাল সামানার পাশে ছেড়ে গিয়েছিলাম, অতঃপর একটা নেকড়ে বাঘ এসে তাকে খেয়ে ফেলে, কিন্তু তুমি তো আমাদের কথা কিছুতেই বিশ্বাস করবে না, যতো সত্যবাদীই আমরা হই না কেন!

১৮. তারা তার জামার ওপর মিথ্যা রক্ত ( মেখে) নিয়ে এসেছিলো; (তাদের কথা শুনে) সে বললো, 'হ্যাঁ, তোমরা বরং (এটা বলো,) একটা কথা তোমরা মনে মনে ঠিক করে এনেছো (এবং ধরে নিয়েছো তা আমি বিশ্বাস করবো); অতঃপর (এ অবস্থায়) পূর্ণ ধৈর্য ধারণই (আমার জন্যে ভালো;) তোমরা যে মনগড়া কথা বলছো সে ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালাই (হচ্ছেন আমার) একমাত্র সাহায্যস্থল ।

১৯. অতঃপর (ঘটনা এমন হলো,) একটি (বাণিজ্যিক) কাফেলা (সেখানে) এলো, তারপর তারা একজন পানি সংগ্রাহককে (কুয়ার কাছে) পাঠালো, সে যখন তার বালতি (কয়ায়) নিক্ষেপ করলো, অতঃপর সে (যখন) বালতি টান দিলো (তখন দেখলো, একটি বালক তাতে বসা); সে তখন (চীৎকার দিয়ে) বললো, ওহে (তোমরা শোনো) সুখবর, এ তো (দেখছি) এক কিশোর বালক; (কাফেলার লোকেরা বাণিজ্যিক পণ্য মনে করে) একে লুকিয়ে নিলো; (আসলে) আল্লাহ তায়ালা ভালো করেই জানতেন যা কিছু এরা তখন করছিলো ।

২০. তারা তাকে স্বল্প মূল্যে নির্দিষ্ট কয়েক দেরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে দিলো, (বিনা পুঁজির পণ্য বিধায়) এ ব্যাপারে তারা বেশী প্রত্যাশীও ছিলোনা ।

২১. মিসরের যে ব্যক্তি তাকে ক্রয় করেছিলো সে (তাকে নিজ ঘরে এনে) তার স্ত্রীকে বললো, সম্মানজনকভাবে এর থাকার ব্যবস্থা করো, সম্ভবত (বড়ো হয়ে) সে (কোনোদিন) আমাদের উপকারে আসবে, অথবা (ইচ্ছা করলে) তাকে আমরা নিজেদের ছেলেও বানিয়ে নিতে পারি; এভাবেই (একদিন) আমি (মিসরের) যমীনে ইউসুফকে (সম্মানজনক) প্রতিষ্ঠা দান করলাম, যাতে করে আমি তাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা (-সহ অন্যান্য বিষয়-আশয়) সম্পর্কিত জ্ঞান শিক্ষা দিতে পারি; আল্লাহ তায়ালা (সব সময়ই) স্বীয় এরাদা বাস্তবায়নে ক্ষমতাবান, যদিও অধিকাংশ মানুষ (এ কথাটা) জানে না ।

২২. অতঃপর সে যখন পূর্ণ যৌবনে উপনীত হলো, তখন আমি তাকে নানারকম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দান করলাম; আর আমি এভাবেই নেককার লোকদের পুরস্কার দিয়ে থাকি ।

২৩. (একদিন এমন হলো,) সে যে মহিলার ঘরে থাকতো সে তাকে তার প্রতি (অসৎ উদ্দেশে) আকৃষ্ট করতে চাইলো এবং (এ উদ্দেশ চরিতার্থ করার জন্যে) সে তার ঘরের দরজাসমূহ বন্ধ করে দিয়ে (তাকে) বললো, এসো (আমার কাছে, এ অশ্লীল প্রস্তাব শুনে) সে বললো, আমি (এ থেকে বাঁচার জন্যে) আল্লাহ তায়ালার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি, তিনিই আমার মালিক, তিনিই আমার উৎকৃষ্ট আশ্রয়, (যে আল্লাহ তায়ালা আমাকে আশ্রয় দিয়ে এখানে থাকতে দিয়েছেন তার সাথে এ যুলুম আমি করবো কিভাবে); তিনি (অকৃতজ্ঞ) যালেমদের কখনো সাফল্য দেন না।

২৪. সে মহিলা তার প্রতি (অসৎ কাজের) এরাদা করে ফেলেছিলো এবং সেও তার প্রতি (একই উদ্দেশে) এরাদা (প্রায়) করেই ফেলেছিলো, যদি না সে (বিশেষ রহমত হিসেবে) তার মালিকের নিদর্শন প্রত্যক্ষ না করতো, এভাবেই (আমি ইউসুফকে নৈতিকতার উচ্চমানে প্রতিষ্ঠিত রাখলাম) যেন আমি তার থেকে অন্যায় ও অশ্লীলতাপূর্ণ কাজ দুরে সরিয়ে রাখতে পারি; অবশ্যই সে ছিলো আমার নিষ্ঠাবান বান্দাদের একজন ।

২৫. অতঃপর তারা উভয়েই (সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশে) দরজার দিকে দৌড়ে গেলো, মহিলা (তাকে ধরতে গিয়ে) পেছন দিক থেকে তার জামা (টেনে) ছিঁড়ে ফেললো, এমতাবস্থায় তারা (উভয়েই) তার স্বামীকে দরজার পাশে (দেখতে) পেলো, তখন মহিলাটি (স্বীয় অভিসন্ধি গোপন করার জন্যে ইউসুফকে অভিযুক্ত করে) বললো, কি শাস্তি হওয়া উচিত সে ব্যক্তির, যে ব্যক্তি তোমার স্ত্রীর সাথে অশ্লীল কাজের ইচ্ছা পোষণ করে? এ ছাড়া তার আর কি শাস্তি হতে পারে যে তাকে হয় জেলে পাঠাতে হবে নতুবা অন্য কোনো কঠিন শাস্তি হবে ।

২৬. সে বললো, সে (মহিলা)-ই আমাকে অশ্লীল কাজের প্রতি আকৃষ্ট করতে চেয়েছিলো, (এ সময়) সে মহিলার আপনজনদের মধ্য থেকে একজন এসে সাক্ষী হিসেবে (নিজের সাক্ষ্য পেশ করে) বললো (ইউসুফের জামা তদনত্ম করে দেখা যাক), যদি তার জামার সম্মুখভাগ ছেঁড়া হয়ে থাকে তাহলে (বুঝতে হবে, অভিযোগের ব্যাপারে) সে মহিলা সত্য বলেছে এবং সে (ইউসুফ) মিথ্যাবাদীদের একজন ।

২৭. আর যদি তার জামা পেছন দিক থেকে ছেঁড়া হয়ে থাকে তাহলে (বুঝতে হবে), সে (নারী) মিথ্যা কথা বলেছে এবং সে-ই সত্যবাদীদের একজন।

২৮. অতঃপর (এ মূলনীতির ভিত্তিতে) সে (গৃহস্বামী) যখন দেখলো, তার জামা পেছন দিক থেকে ছেঁড়া, তখন সে (আসল ঘটনা বুঝতে পেরে নিজের সঙ্গীকে) বললো, কোনো সন্দেহ নেই, এটা তোমাদের (নারীদের) ছলনা, আর সত্যিই তোমাদের (মতো নারীদের) ছলনা বড়ো জঘন্য!

২৯. হে ইউসুফ, তুমি (এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা) ছেড়ে দাও এবং (হে নারী,) তুমি তোমার অপরাধের জন্যে (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করো, কেননা তুমিই হচ্ছো (আসল) অপরাধী ।

৩০. (বিষয়টা জানাজানি হয়ে গেলে) শহরের নারীরা (নিজেদের মধ্যে) বলতে লাগলো, আযীযের স্ত্রী তার (যুবক) গোলামের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে, তাকে (তার গোলামের) প্রেম উন্মত্ত করে দিয়েছে, আমরা সত্যিই দেখতে পাচ্ছি সে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত হয়েছে ।

৩১. সে (মহিলা) যখন ওদের (কানাকানি ও ষড়যন্ত্রের কথা শুনলো, তখন সে ওদের (সবাইকে নিজের ঘরে) ডেকে পাঠালো এবং তাদের জন্যে একটি মাহফিলের আয়োজন করলো, (রীতি অনুযায়ী) প্রত্যেক মহিলাকে (খাবার গ্রহণের জন্যে) এক একটি ছুরি দিলো, অতঃপর (যখন তারা খাবার গ্রহণ করার জন্যে ছুরির ব্যবহার শুরু করলো তখন) সে (ইউসুফকে) বললো, (এবার) তুমি এদের সামনে বেরিয়ে এসো, যখন মহিলারা তাকে দেখলো তখন তারা তার (রূপ যৌবনের) মাহাত্মে অভিভূত হয়ে গেলো (এবং নিজেদের অজান্তেই ছুরি দিয়ে খাবার গ্রহণের পরিবর্তে) নিজেদের হাত কেটে ফেললো, তারা বললো, কি অদ্ভুত (সৃষ্টি!) এ তো কেনো মানুষ নয়; এ তো হচ্ছে এক সম্মানিত ফেরেশতা!

৩২. (এবার বিজয়িনীর ভংগিতে) সে (মহিলা) বললো, (তোমরা দেখলে; তো?) এ হচ্ছে সে ব্যক্তি, যার ব্যাপারে তোমরা আমাকে ভতর সেনা তিরস্কার করছিলে, (এটা ঠিক) আমি তার কাছ থেকে অসৎ কিছু কামনা করেছিলাম, অতঃপর সে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছে; (কিন্তু) আমি তাকে যা করতে আদেশ করি সে যদি তা না করে তাহলে অবশ্যই সে কারাগারে নিক্ষপ্তি হবে এবং অপমানিত হবে ।

৩৩. (মহিলার দম্ভোক্তি শুনে) সে দোয়া করলো, হে আমার মালিক, এরা আমাকে যে (পাপের) দিকে আহ্বান করছে তার চাইতে কারাগার আমার কাছে অধিক প্রিয়, যদি তুমি আমাকে এদের ছলনা থেকে রক্ষা না করো তাহলে হয়তো আমি ওদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যাবো এবং এভাবে আমিও জাহেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বো !

৩৪. অতঃপর তার মালিক তার ডাকে সাড়া দিলেন, তার কাছ থেকে তিনি মহিলাদের চক্রান্ত সরিয়ে নিলেন, নিশ্চয়ই তিনি (মানুষের সব ডাক) শোনেন এবং (তাদের ষড়যন্ত সম্পর্কেও) তিনি সম্যক অবগত।

৩৫. (আযীযসহ অন্যান্য) লোকদের কাছে অতঃপর এটাই (তখনকার মতো) সঠিক (সিদ্ধান্ত) মনে হলো যে, তাকে কিছু নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে (হলেও) কারাগারে নিক্ষেপ করতে হবে, অথচ তারা ইতিমধ্যে (তার সচ্চরিত্রতার) যাবতীয় নিদর্শন (ভালো করেই) দেখে নিয়েছে ।

৩৬. (ঘটনাক্রমে সে সময়) তার সাথে আরো দু'জন যুবকও (একই) কারাগারে প্রবেশ করলো, (একদিন) ওদের একজন (ইউসুফকে) বললো, অবশ্যই আমি (স্বপ্নে) দেখেছি, আমি আংগুর নিংড়ে (তার) রস বের করছি, অপর জন বললো, আমি দেখেছি আমি আমার মাথায় রুটি বহন করছি এবং (কিছু) পাখী তা (খুঁটে খুঁটে) খাচ্ছে (উভয়ই ইউসুফকে বললো); তুমি আমাদের এর ব্যাখ্যা বলে দাও, আমরা দেখতে পাচ্ছি তুমি (আসলেই) ভালো মানুষদের একজন ।

৩৭. সে বললো (তোমরা নিশ্চিত থাকো), এ বেলা তোমাদের যে খাবার দেয়া হবে তা তোমাদের কাছে আসার পূর্বেই আমি তোমাদের উভয়কে এর ব্যাখ্যা বলে দেবো (তবে জেনে রেখো); এ (যে স্বপ্নের ব্যাখ্যা তা) হচ্ছে সে জ্ঞানেরই অংশবিশেষ, যা আমার মালিক আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন; (আমি প্রথম থেকেই) আসলে তাদের মিল্লাত বর্জন করেছি যারা আল্লাহর ওপর ঈমান আনে না, (উপরন্তু) তারা আখেরাতেও বিশ্বাস করে না ।

৩৮. আমি তো আমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকুবের মিল্লাতেরই অনুসরণ করে আসছি; (ইবরাহীমের সন্তান ও তাঁর অনুসারী হিসেবে) এটা আমাদের শোভা পায় না যে, আমরা আল্লাহর সাথে অন্য কিছুকে শরীক করবো; (তাওহীদের) এ (উত্তরাধিকার) হচ্ছে আমাদের ওপর এবং সমস্ত মানুষের ওপর আল্লাহ তায়ালার এক (মহা) অনুগ্রহ, কিন্তু (আমাদের) অধিকাংশ মানুষই (এ জন্যে আল্লাহ তায়ালার) কৃতজ্ঞতা আদায় করে না।

৩৯. হে আমার জেলের সাথীরা (তোমরাই বলো), মানুষের জন্যে ভিন্ন ভিন্ন মালিক ভালো না এক আল্লাহ তায়ালা (ভালো), যিনি মহাপরাক্রমশালী;

৪০. তাকে ছেড়ে তোমরা যাদের এবাদাত করছো, তা তো কতিপয় নাম ছাড়া আর কিছুই নয়, (অজ্ঞতাবশত) যা তোমরা ও তোমাদের বাপদাদারা রেখে দিয়েছো, অথচ আল্লাহ তায়ালা এ ব্যাপারে (তাদের সাথে) কোনো দলিল প্রমাণ নাযিল করেননি, (মূলত) আইন বিধান জারি করার অধিকার একমাত্র আল্লাহ তায়ালারই; আর (এ বিধানের বলেই) তিনি আদেশ দিচ্ছেন, তোমরা আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কারো গোলামী করবে না; (কারণ) এটাই হচ্ছে সঠিক জীবনবিধান, কিন্তু মানুষদের অধিকাংশই (এটা) জানে না ।

৪১. হে আমার জেলের সাথীরা (এবার তোমরা স্বপ্নের ব্যাখ্যা শোনো), তোমাদের একজন সম্পর্কে কথা হচ্ছে, সে তার মালিককে শরাব পান করাবে, আর অপরজন, যার মাথা থেকে পাখী (খুঁটে খুঁটে) রুটি খাচ্ছিলো, তার সম্পর্কে কথা এই যে, (অচিরেই) সে শুলবিদ্ধ হবে (এটা হচ্ছে সে বিষয়টির ব্যাখ্যা), যা তোমরা উভয়ে জানতে চাচ্ছো (ইতিমধ্যেই কিন্তু) তার ফয়সালা করা হয়ে গেছে!

৪২. তাদের মধ্যে যার ব্যাপারে সে মনে করেছে, সে মুক্তি পেয়ে যাবে, তাকে (উদ্দেশ করে) সে বললো, (তুমি যখন মুক্তি পাবে তখন) তোমার মালিকের কাছে আমার সম্পর্কে বলো যে, (আমি স্বপ্নের ব্যাখ্যা বলতে পারি), কিন্তু (সে মুক্তি পাওয়ার পর) শয়তান তাকে তার মালিকের কাছে (ইউসুফের প্রসংগে বলার কথা) ভুলিয়ে দিলো, ফলে কয়েক বছর সময় ধরে সে কারাগারেই পড়ে থাকলো।

৪৩. (ঘটনা এমন হলো, একদিন) বাদশাহ (তার পারিষদদের) বললো, আমি (স্বপ্নে) দেখলাম, সাতটি পাতলা গাভী সাতটি মোটা গাভীকে খেয়ে ফেলছে, (আরো দেখলাম) সাতটি সবুজ (ফসলের) শীষ আর শেষের সাতটি (দেখলাম) শুকনো, হে (আমার দরবার) প্রধানরা, তোমরা আমাকে এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা বলে দাও যদি তোমরা (কেউ এ) স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানো!

৪৪. তারা বললো (হে রাজন), এ তো হচ্ছে কতিপয় অর্থহীন স্বপ্ন, আমরা (এ ধরনের) অর্থহীন স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানি না ।

৪৫. যে দু'জনের একজন (কারাগার থেকে) মুক্তি পেয়েছিলো, দীর্ঘ দিন পর তার (ইউসুফের কথা) স্মরণ হলো, সে (দরবারী লোকদের কথাবার্তা শুনে) বললো, আমি এক্ষুণি তোমাদের এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা বলে দিচ্ছি, তোমরা আমাকে (কারাগারে ইউসুফের কাছে) পাঠিয়ে দাও |

৪৬. (কারাগারে গিয়ে সে বললো,) হে ইউসুফ, হে সত্যবাদী, তুমি আমাদের 'সাতটি মোটা গাভী সাতটি পাতলা গাভীকে খেয়ে ফেলছে এবং সাতটি সবুজ শ্যামল ফসলের শীর্ষ অপর সাতটি শুকনো শীর্ষ এ স্বপ্নটির ব্যাখ্যা বলে দাও, যাতে করে এ ব্যাখ্যা নিয়ে আমি মানুষদের কাছে ফিরে যেতে পারি, হয়তো (এর ফলে) তারা (স্বপ্নের ব্যাখ্যার সাথে তোমার মর্যাদা সম্পর্কেও) জানতে পারবে ।

৪৭. সে বললো (এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা ও সে সম্পর্কে তোমাদের করণীয় হচ্ছে), তোমরা ক্রমাগত সাত বছর ফসল ফলাতে থাকবে (এ সময় প্রচুর ফসল হবে), অতঃপর ফসল তোলার সময় আসলে তোমরা যে পরিমাণ ফসল তুলতে চাও তার মধ্য থেকে সামান্য অংশ তোমরা খাবারের জন্যে রাখবে, তা বাদ দিয়ে বাকি অংশ শীর্ষ সমেত রেখে দেবে (এতে করে ফসল বিনষ্ট হবে না) ।

৪৮. এরপর আসবে সাতটি কঠিন (খরার) বছর, যা এর আগের কয় বছরের (গোঁটা সঞ্চয়ই) খেয়ে ফেলবে, তা ছাড়া যা তোমরা আগেই এ কয় বছরের জন্যে জমা করে থাকবে, সামান্য পরিমাণ, যা তোমরা (বীজের জন্যে) রেখে দেবে ।

৪৯. অতঃপর একটি বছর এমন আসবে, যখন মানুষের জন্যে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করা হবে, তাতে তারা (প্রচুর) আংগুরের রসও বের করবে ।

৫০. (সে ব্যক্তি যখন বাদশাহকে স্বপ্নের এ ব্যাখ্যা বললো, তখন) বাদশাহ (আগ্রহের সাথে) বললো, তাকে আমার সামনে নিয়ে এসো, যখন (শাহী) দূত তার কাছে (এ খবর নিয়ে কারাগারে) এলো, তখন সে বললো (আমি অনুকম্পায় মুক্তি চাই না, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ আগে প্রমাণিত হোক), তুমি বরং তোমার মালিকের কাছে ফিরে যাও এবং তাকে জিজ্ঞেস করো, সে নারীদের (সঠিক) ঘটনাটা কি ছিলো? যারা (প্রকাশ্য মজলিসে) নিজেদের হাত কেটে ফেলেছিলো, যদিও আমি জানি, আমার মালিক তাদের চক্রান্ত সম্পর্কে সম্যক অবগত ছিলেন (কিন্তু আমার মুক্তির আগেই আমার নির্দোষিতার ঘোষণা একান্ত প্রয়োজন) ।

৫১. (এরপর) বাদশাহ সে নারীদের (দরবারে তলব করলো এবং তাদের) জিজ্ঞেস করলো, (ঠিক ঠিক আমাকে বলো তো, সেদিন) তোমাদের কী হয়েছিলো যেদিন তোমরা ইউসুফের কাছ থেকে অসৎ কর্ম কামনা করেছিলে; তারা বললো, আশ্চর্য আল্লাহ তায়ালার মাহাত্ম্য! আমরা তো তার ওপর কোনো পাপ কিংবা এ ধরণের কোনো অভিযোগই দেখতে পাইনি; (একথা শুনে) আযীযের স্ত্রী বললো, এখন (যখন) সত্য প্রকাশিত হয়েই গেছে, (তখন আমাকেও বলতে হয়, আসলে) আমিই তার কাছে অসৎ কাজ কামনা করেছিলাম, অবশ্যই সে ছিলো সত্যবাদীদের একজন ।

৫২. (শাহী তদন্তের খবর শুনে ইউসুফ বললো,) এটি (আমি) এ জন্যে (করতে বলেছিলাম), যেন সে (বাদশাহ) জেনে নিতে পারে, আমি (আযীযের) অবর্তমানে (তার আমানতের) কোনো খেয়ানত করিনি, কেননা আল্লাহ তায়ালা কখনো খেয়ানতকারীদের সঠিক পথ দেখান না ।

৫৩. (তবে) আমি আমার ব্যক্তিসত্তাকেও নির্দোষ মনে করি না, কেননা (মানুষের) প্রবৃত্তি মন্দের সাথেই (ঝুকে থাকে বেশী), কিন্তু তার কথা আলাদা, যার প্রতি আমার মালিক দয়া করেন; অবশ্যই আমার মালিক ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।

৫৪. বাদশাহ বললো, তাকে আমার কাছে হাযির করো, আমি তাকে একান্তভাবে আমার নিজের করে রাখবো, (ইউসুফকে আনার পর) অতপর বাদশাহ তার সাথে কথা বললো, (কথা প্রসংগে) সে বললো, আজ সত্যিই তুমি আমাদের সবার কাছে একজন সম্মানী ও বিশ্বস্ত ব্যক্তি (বলে প্রমাণিত) হলে!

৫৫. সে (বাদশাহকে) বললো, (যদি তুমি আমাকে বিশ্বস্তই মনে করো তাহলে) রাজ্যের এ (বিশৃংখলা খাদ্য)- ভান্ডারের ওপর আমাকে নিযুক্ত করো, আমি অবশ্যই একজন বিশ্বস্ত রক্ষক ও (অর্থ পরিচালনায়) অভিজ্ঞ বটে ।

৫৬. (তাকে রাষ্ট্রীয় ভান্ডারের দায়িত্বশীল নিযুক্ত করার পর আল্লাহ তায়ালা বললেন) এবং এভাবেই আমি ইউসুফকে (মিসরের) ভূখন্ডে ক্ষমতা দান করলাম, সে দেশের যথা ইচ্ছা বসবাস করতে পারবে, আর আমি যাকে চাই তার কাছেই আমার রহমত পৌঁছে দিই, আমি কখনো নেককার লোকদের পাওনা বিনষ্ট করি না ।

৫৭. যারা আল্লাহর ওপর ঈমান আনে এবং তাঁকে ভয় করে, তাদের জন্যে তো আখেরাতের পাওনা রয়েছে, যা অনেক উত্তম ।

৫৮. ইউসুফের ভাইয়েরা (পরিবারের রসদ কেনার জন্যে মিসরে) এলো এবং (একদিন) তার সামনেও হাযির হলো, সে তাদের (দেখে) চিনতে পারলো, (কিন্তু) তারা তার জন্যে অচেনাই থাকলো ।

৫৯. যখন সে তাদের রসদের (যাবতীয়) ব্যবস্থা (সম্পন্ন) করে দিলো, তখন সে (তাদের) বললো, এরপর (যদি আবার আসো তাহলে তোমরা) তোমাদের পিতার কাছ থেকে তোমাদের (বৈমাত্রেয়) ভাইটিকে নিয়ে আমার কাছে আসবে, তোমরা কি দেখতে পাও না, আমি (মাথা হিসাব করে) পূর্ণ মাত্রায় মেপে মেপে রসদ দেই, (তা ছাড়া) আমি তো একজন উত্তম অতিথিপরায়ণ ব্যক্তিও বটে ।

৬০. যদি তোমরা (আগামীবার) তাকে নিয়ে আমার কাছে না আসো, তাহলে আমার কাছে তোমাদের জন্যে (আর) কোনো রসদ থাকবে না, (সে অবস্থায়) তোমরা আমার কাছেও ঘেঁষো না ।

৬১. তারা বললো, এ বিষয়ে আমরা তার পিতাকে অনুরোধ (করে সম্মত) করবো, আমরা অবশ্যই (এ চেষ্টা) করবো ।

৬২. সে তার (রসদ) কর্মচারীদের বললো, এ লোকদের মূলধন তাদের মালপত্রের ভেতর রেখে দাও, যাতে করে ওরা তাদের আপনজনদের কাছে ফিরে গেলে তা চিনতে পারে, হতে পারে (এ লোভে তারা (আবার) ফিরে আসবে ।

৬৩. যখন তারা তাদের পিতার কাছে ফিরে গেলো, তখন তারা বললো, হে আমাদের পিতা, আমাদের (ভবিষ্যতের) রসদ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, অতএব তুমি আমাদের ভাইকে আমাদের সাথে যেতে দাও, যাতে করে আমরা (তার ভাগসহ) ওযন করে রসদ আনতে পারি, অবশ্যই আমরা তার হেফাযত করবো ।

৬৪. (জবাবে) সে বললো, আমি কি তার ব্যাপারে তোমাদের ওপর সেভাবেই ভরসা করবো, যেভাবে ইতিপূর্বে তার ভাইয়ের ব্যাপারে আমি তোমাদের ওপর ভরসা করেছিলাম; (হাঁ,) অতপর আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন উত্তম রক্ষক এবং তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।

৬৫. অতপর তারা যখন মালপত্র খুললো তখন তারা তাদের মূলধন (যা দিয়ে রসদ খরিদ করেছিলো- দেখতে) পেলো, তা তাদের (পুরোপুরিই) ফেরত দেয়া হয়েছে; (এটা দেখে) তারা বললো, হে আমাদের পিতা, এর চাইতে বেশী (মহানুভবতা) আমরা আর কি চাইতে পারি; (দেখো) আমাদের মূলধনও আমাদের ফেরত দেয়া হয়েছে; (এবার অনুমতি দাও আমরা ভাইকে নিয়ে যাই এবং) আমরা আমাদের পরিবারের জন্যে রসদ নিয়ে আসি, আমরা আমাদের ভাইয়েরও হেফাযত করবো এবং (ভাইয়ের কারণে) আমরা অতিরিক্ত একটি উট (বোঝাই করে) রসদও আনতে পারবো; (এবার আমরা যা এনেছি) এটা তো (ছিলো) পরিমাণে নিতান্ত কম ।

৬৬. সে বললো, আমি কখনোই তাকে তোমাদের সাথে পাঠাবো না- যতোক্ষণ না তোমরা আল্লাহর নামে (আমাকে) অংগীকার দেবে যে, তোমরা অবশ্যই তাকে আমার কাছে (ফিরিয়ে আনবে, তবে হাঁ, কোথাও যদি তোমরা নিজেরাই (সমস্যায়) পরিবেষ্টিত হয়ে যাও, তাহলে তা হবে ভিন্ন কথা, অতপর যখন তারা তার কাছে তাদের অংগীকার নিয়ে হাযির হলো, তখন সে বললো (মনে রেখো), আমরা যা কিছু (এখানে) বললাম, আল্লাহ তায়ালাই তার ওপর চূড়ান্ত কর্মবিধায়ক (হয়ে থাকবেন) ।

৬৭. সে বললো, হে আমার ছেলেরা, তোমরা (মিসরে পৌঁছে কিন্তু) এক দরজা দিয়ে (নগরে) প্রবেশ করো না, বরং ভিন্ন ভিন্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে (তাহলে তোমাদের দেখে কারো মনে হিংসা সৃষ্টি হবে না, মনে রাখবে), আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমি তোমাদের কোনো কাজেই আসবো না; বিধান (জারি করার কাজ) শুধু আল্লাহ তায়ালার জন্যেই (নির্দিষ্ট); আমি (সর্বদা) তাঁরই ওপর নির্ভর করি, (প্রতিটি মানুষ) যারা ভরসা করে তাদের উচিত শুধু আল্লাহর ওপরই ভরসা করা।

৬৮. অতপর তারা মিসরে ঠিক সেভাবেই প্রবেশ করলো যেভাবে তাদের পিতা তাদের আদেশ করেছিলো; (মূলত) আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছার সামনে এটা কেনোই কাজে আসেনি, তবে হ্যাঁ,) এটা ছিলো ইয়াকুবের মনের একটি ধারণা, যা সে পূর্ণ করে নিয়েছিলো, অবশ্যই সে ছিলো অত্যন্ত জ্ঞানী ব্যক্তি, কেননা তাকে আমিই জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছিলাম, যদিও অধিকাংশ মানুষ তা জানে না |

৬৯. যখন তারা ইউসুফের কাছে হাযির হলো, তখন সে তার (নিজ) ভাইকে তার পাশে (বসার জায়গা দিলো এবং (একান্তে) তাকে বললো (দেখো), আমি (কিন্তু) তোমার ভাই (ইউসুফ), এরা (এ যাবত তোমার আমার সাথে) যা কিছু করে আসছে তার জন্যে তুমি মনে কোনো কষ্ট নিয়ো না ।

৭০. অতপর সে যখন তাদের রসদপত্রের ব্যবস্থা চূড়ান্ত করে দিলো, তখন (সবার অজান্তে) তার ভাইয়ের মালপত্রের মধ্যে সে একটি (রাজকীয়) পানপাত্র রেখে দিলো, (এরপর যখন তারা মালপত্র নিয়ে রওনা দিলো, তখন পেছন থেকে) একজন আহ্বানকারী ডাক দিয়ে বললো, হে কাফেলার যাত্রীদল (শাহী পানপাত্র চুরি হয়ে গেছে), আর নিসন্দেহে তোমরাই হচ্ছো চোর!

৭১. ওরা তাদের দিকে (একটু) এগিয়ে এলো এবং জিজ্ঞেস করলো, কি জিনিস যা তোমরা হারিয়েছো?

৭২. তারা বললো, আমরা রাজার পানপাত্র হারিয়েছি, যে ব্যক্তিই তা (খুঁজে) আনবে, (তার জন্যে) উট বোঝাই (রসদ দেয়ার ব্যবস্থা) থাকবে এবং আমিই তার যামিন থাকবো ।

৭৩. (একথা শুনে) তারা বললো, আল্লাহর শপথ, তোমরা ভালো করেই একথা জানো, আমরা (তোমাদের) দেশে কোনো রকম বিপর্যয় সৃষ্টি করতে আসিনি, (উপরন্তু) আমরা চোরও নই!

৭৪. লোকেরা বললো, যদি (তল্লাশি নেয়ার পর) তোমরা মিথ্যাবাদী (প্রমাণিত) হও তাহলে (যে চুরি করেছে) তার শাস্তি কি হবে?
৭৫. তারা বললো, তার শাস্তি! (হাঁ) যার মাল-সামানার ভেতরে সে (পানপাত্র) টি পাওয়া যাবে, সে নিজেই হবে নিজের শাস্তি; আমরা তো (আমাদের শরীয়তে) যালেমদের এভাবেই শাস্তি দিয়ে থাকি ।

৭৬. তারপর সে তার (নিজ) ভাইয়ের মালপত্রের (তল্লাশির) আগে ওদের মালপত্র দিয়েই (তল্লাশি) করতে শুরু করলো, অতপর তার ভাইয়ের মালপত্রের ভেতর থেকে সে (চুরি হয়ে যাওয়া রাজকীয় পানপাত্র)-টি বের করে আনলো; এভাবেই ইউসুফের জন্যে আমি (তার ভাইকে কাছে রাখার) একটা েেকৗশল শিক্ষা দিয়েছিলাম; নতুবা (মিসরের) রাজার আইন অনুযায়ী সে তার ভাইকে (চাইলেই) রেখে দিতে পারতো না, হ্যাঁ, আল্লাহ তায়ালা যদি চান তা ভিন্ন কথা; আমি যাকেই চাই তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেই; প্রত্যেক জ্ঞানবান ব্যক্তির ওপরেই রয়েছেন অধিকতর জ্ঞানী সত্তা (যা বৃহত্তর জ্ঞানকেই পরিবষ্টেন করে আছে)।

৭৭. (যখন বস্তুটি পাওয়া গেলো তখন) তারা বললো, যদি সে চুরি করেই থাকে (তাহলে এতে আশ্চর্যান্বিত হবার কিছুই নেই), এর আগে তার ভাইও তো চুরি করেছিলো, (নিজের সম্পর্কে এতো জঘন্য কথা শুনেও) কিন্তু ইউসুফ প্রকৃত ব্যাপার নিজের মনে গোপন করেই রাখলো, (আসল ঘটনা যা) তা কখনো তাদের কাছে প্রকাশ করলো না, (মনে মনে শুধু এটুকুই) সে বললো, তোমাদের অবস্থা তো আরো নিকৃষ্ট, তোমরা (আমাদের সম্পর্কে) যা বলছো সে ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন ।

৭৮. তারা বললো, হে আযীয, এ ব্যক্তি (যাকে তুমি ধরে রেখেছো), অবশ্যই তার পিতা (বেঁচে) আছে, সে অতিশয় বৃদ্ধ, সুতরাং এর জায়গায় তুমি আমাদের একজনকে রেখে দাও, আমরা দেখতে পাচ্ছি (আসলেই) তুমি মহানুভব ব্যক্তিদের একজন ।

৭৯. সে বললো, আল্লাহ তায়ালা আমাকে ক্ষমা করুন, যার কাছে আমরা আমাদের (হারানো) মাল পেয়েছি, তাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে রেখে দেবো কি করে? এমনটি করলে আমরা তো যালেমদের অন্তভুক্ত হয়ে যাবো!

৮০. অতপর তারা যখন তার কাছ থেকে (সম্পূর্ণ) নিরাশ হয়ে পড়লো, তখন তারা একাকী বসে নিজেদের মধ্যে সলাপরামর্শ করতে লাগলো, তাদের মধ্যে যে বয়সে বড়ো (ছিলো) সে বললো, (আচ্ছা) তোমরা কি এটা জানো না, তোমাদের (বৃদ্ধ) পিতা তোমাদের কাছ থেকে আল্লাহর নামে অংগীকার নিয়েছিলেন, তা ছাড়া এর আগে ইউসুফের ব্যাপারেও তোমরা (কতো) বড়ো অন্যায় করেছিলে! আমি তো কোনো অবস্থায়ই এদেশ থেকে নড়বো না, যতোক্ষণ না আমার পিতা আমাকে তেমন কিছু করতে অনুমতি দেন, কিংবা আল্লাহ তায়ালা আমার জন্যে (কোনো একটা) ব্যবস্থা করে না দেন, (মূলত) আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন সর্বোত্তম ফয়সালাকারী ।

৮১. (সে তাদের আরো বললো,) তোমরা বরং তোমাদের পিতার কাছেই ফিরে যাও এবং তাকে বলো, হে আমাদের পিতা, তোমার ছেলে (বাদশাহর পানপাত্র) চুরি করেছে, আমরা তো সেটুকুই বর্ণনা করি যা আমরা জানতে পেরেছি, আমরা তো গায়বের (খবর) সংরক্ষণ করতে পারি না ।

৮২. তোমার বিশ্বাস না হলে যে জনপদে আমরা অবস্থান করেছি তাদের কাছে জিজ্ঞেস করো এবং সে কাফেলাকেও (জিজ্ঞেস করো), , যাদের সাথে আমরা (একত্রে) এসেছি; আমরা আসলেই সত্য কথা বলছি ।

৮৩. (দেশে ফিরে পিতাকে তারা এভাবেই বললো, কথাগুলো শুনে) সে বললো, (আসলে) তোমাদের মন তোমাদের (সুবিধার) জন্যে একটা কথা বানিয়ে নিয়েছে (এবং তাই তোমরা আমাকে বলছো), অতপর উত্তম সবরই হচ্ছে (একমাত্র পন্থা); আল্লাহ তায়ালার (অনুগ্রহ) থেকে এটা খুব দূরে নয়, তিনি হয়তো ওদের সবাইকে একত্রেই (একদিন) আমার কাছে এনে হাযির করবেন; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা সর্বজ্ঞ ও (প্রজ্ঞাময়) কুশলী ।

৮৪. সে ওদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো এবং (নিজে নিজে) বললো, হায় ইউসুফ (তুমি এখন কোথায়)! শোকের কারণে (কাঁদতে কাঁদতে) তার চোখ সাদা হয়ে গেছে, সে নিজেও ছিলো মনোকষ্টে দারুণভাবে ক্লষ্টি!

৮৫. (পিতার এ অবস্থা দেখে) তারা বললো, আল্লাহর কসম, তুমি তো দেখছি শুধু ইউসুফের কথাই মনে করে যাবে, যতোক্ষণ পর্যন্ত না তার চিন্তায় তুমি মুমূর্ষু হয়ে পড়বে, কিংবা (তার চিন্তায়) তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে ।

৮৬. সে (আরো) বললো, আমি তো আমার (অসহনীয়) যন্ত্রণা, আমার দুশ্চিন্তা (-জনিত অভিযোগ) আল্লাহ তায়ালার কাছেই নিবেদন করি এবং আমি নিজে আল্লাহর কাছ থেকে (তার কথাবার্তা) যতোটুক জানি, তোমরা তা জানো না ।

৮৭. হে আমার ছেলেরা, তোমরা (মিসরে) যাও এবং ইউসুফ ও তার ভাইকে (আরেকবার) তালাশ করো, (তালাশ করার সময়) তোমরা আল্লাহ তায়ালার রহমত থেকে মোটেই নিরাশ হয়ো না; আল্লাহ তায়ালার রহমত থেকে তো শুধু কাফেররাই নিরাশ হতে পারে ।

৮৮. তারা যখন পুনরায় তার কাছে হাযির হলো, তখন তারা বললো, হে আযীয, দুর্ভিক্ষ আমাদের পরিবার- পরিজনকে বিপন্ন করে দিয়েছে, (এবার) আমরা সামান্য কিছু পুঁজি এনেছি, (এটা গ্রহণ করে) আমাদের (পূর্ণমাত্রায়) রসদ দান করার ব্যবস্থা করুন, (মুল্য হিসেবে নয়) বরং এটা আমাদের (বিপন্ন মনে করে) দান করুন; যারা দান খয়রাত করে আল্লাহ তায়ালা তাদের পুরস্কৃত করেন ।

৮৯. (ভাইদের এ আকুতি শুনে) সে বললো, তোমরা কি জানো, তোমরা ইউসুফ ও তার ভাইয়ের সাথে কি আচরণ করেছিলে, কতো মুখর ছিলে তোমরা তখন !

৯০. তারা বলে ওঠলো, তুমিই কি ইউসুফ! সে বললো, হাঁ, আমিই ইউসুফ, আর এ হচ্ছে আমার ভাই, আল্লাহ তায়ালা আমাদের ওপর অনেক মেহেরবানী করেছেন, (সত্যি কথা হচ্ছে) যে কোনো ব্যক্তিই তাকওয়া ও ধৈর্যের আচরণ করে (সে যেন জেনে রাখে), আল্লাহ তায়ালা কখনোই নেককার মানুষের পাওনা বিনষ্ট করেন না।

৯১. ওরা বললো, আল্লাহর কসম, (আজ) আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই তোমাকে আমাদের ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন, আমরা (আসলেই) অপরাধী!

৯২. (ভাইদের কথা শুনে) সে বললো, আজ তোমাদের ওপর (আমার) কোনো অভিযোগ নেই; আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ক্ষমা করে দিন, (কেননা) তিনি সব দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু!

৯৩. (এখন) তোমরা (বরং) আমার গায়ের এ জামাটি নিয়ে যাও এবং একে আমার পিতার মুখমন্ডলের ওপর রেখো, (দেখবে) তিনি তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন, অতপর তোমরা তোমাদের সমস্ত পরিবার পরিজনদের নিয়ে আমার কাছে চলে এসো।

৯৪. (এদিকে) এ কাফেলা যখন (মিসর থেকে) বেরিয়ে পড়লো, তখন তাদের পিতা (আপনজনদের উদ্দেশ করে) বলতে লাগলো, তোমরা যদি (সত্যিই) আমাকে অপ্রকৃতিস্থ মনে না করো তাহলে (আমি তোমাদের বলবো)- আমি যেন (চারদিকে) ইউসুফের গন্ধই পাচ্ছি।

৯৫. (ওখানে যারা হাযির ছিলো) তারা বললো, আল্লাহর কসম, তুমি তো (এখনো) তোমার (সে) পুরনো বিভ্রান্তিতেই পড়ে রয়েছো ।

৯৬. অতপর সত্যিই যখন (ইউসুফের জীবিত থাকার খবর নিয়ে) সুসংবাদবাহক তার কাছে উপস্থিত হলো এবং (ইউসুফের কথানুযায়ী তার) জামাটি তার মুখমন্ডলে রাখলো, তখন সাথে সাথেই সে দেখার মতো অবস্থায় ফিরে গেলো, (উৎফুল্ল হয়ে) সে বললো, আমি কি তোমাদের একথা বলিনি, আমি আল্লাহর কাছ থেকে (এমন) কিছু জানি যা তোমরা জানো না |

৯৭. তারা বললো, হে আমাদের পিতা (আমরা অপরাধ করেছি), তুমি (আল্লাহর কাছে) আমাদের গুনাহের ক্ষমা প্রার্থনা করো, সত্যিই আমরা বড়ো গুনাহগার!

৯৮. সে বললো, অচিরেই আমি তোমাদের (গুনাহ মার্জনার) জন্যে আমার মালিকের কাছে দোয়া করবো, অবশ্যই তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু ।

৯৯. অতপর যখন তারা (সবাই) ইউসুফের কাছে (মিসরে) চলে এলো, তখন সে তার পিতামাতাকে (সম্মানের সাথে) নিজের পাশে স্থান দিলো এবং (তাদের স্বাগত জানিয়ে) সে বললো, তোমরা সবাই (এবার) আল্লাহর ইচ্ছায় নিরাপদে মিসরে প্রবেশ করো ।

১০০. (সেখানে যাওয়ার পর) সে তার পিতামাতাকে (সম্মানের) উচ্চাসনে বসালো এবং ওরা সবাই (দরবারের নিয়ম অনুযায়ী) তার প্রতি (সম্মানের) সাজদা করলো (এ ইউসুফ তার স্বপ্নের কথা মনে করলো,) সে বললো, হে আমার পিতা, এ হচ্ছে আমার ইতিপূর্বেকার সে স্বপ্নের ব্যাখ্যা, (আজ) আমার মালিক যা সত্যে পরিণত করেছেন; তিনি আমাকে জেল থেকে বের করে আমার ওপর অনুগ্রহ করেছেন, তিনি তোমাদের মরুভূমির (আরেক প্রান্ত) থেকে (রাজদরবারে এনে) তোমাদের ওপরও মেহেরবানী করেছেন, (এমনকি) শয়তান আমার এবং আমার ভাইদের মধ্যেকার সম্পর্ক খারাপ করার (গভীর চক্রান্ত করার) পরও (তিনি দয়া করেছেন); অবশ্যই আমার মালিক যা ইচ্ছা করেন, তা (অত্যন্ত) নিপুণতার সাথে আঞ্জাম দেন; নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ ও প্রবল প্রজ্ঞাময় ।

১০১. হে (আমার) মালিক, তুমি আমাকে (যেমনি) রাষ্ট্র ক্ষমতা দান করেছো, (তেমনি) স্বপ্নের ব্যাখ্যা (-সহ দুনিয়ার আরো বহু বিষয় আসয়) শিক্ষা দিয়েছো, হে আসমানসমূহও যমীনের স্রষ্টা, দুনিয়া এবং আখেরাতে তুমিই আমার একমাত্র অভিভাবক, একজন অনুগত বান্দা হিসেবে তুমি আমার মৃত্যু দিয়ো এবং (পরকালে) আমাকে নেককার মানুষদের দলে শামিল করো ।

১০২. (হে নবী,) এ (যে ইউসুফের কাহিনী- যা আমি তোমাকে শোনালাম, তা) হচ্ছে (তোমার) গায়বের ঘটনাসমূহের একটি, এটা আমি তোমাকে ওহীর মাধ্যমেই জানিয়েছি, (নতুবা) তারা (যখন ইউসুফের বিরুদ্ধে) তাদের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করছিলো এবং তারা যখন তার বিরুদ্ধে যাবতীয় ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছিলো, তখন তুমি তো সেখানে হাযির ছিলে না!

১০৩. (এ সত্ত্বেও) অধিকাংশ মানুষের অবস্থা হচ্ছে যতোই তুমি অনুগ্রহই পোষণ করোনা, তারা কখনো ঈমান আনার মতো নয় ।

১০৪. (অথচ) তুমি তো তাদের কাছ থেকে এ (দাওয়াত ও তাবলীগের) জন্যে কোনো পারিশ্রমিক দাবী করছো না! তা ছাড়া এ (কোরআন) দুনিয়া জাহানের (অধিবাসীদের) জন্যে একটি নসীহত ছাড়া অন্য কিছু তো নয় ।

১০৫. এ আকাশমন্ডলী ও যমীনে (আল্লাহর কুদরতের) কতো (বিপুল) পরিমাণ নিদর্শন রয়েছে, যার ওপর তারা (প্রতিনিয়ত) অতিবাহন করে, কিন্তু তারা তার প্রতি (ক্ষমাহীন) উদাসীন থাকে ।

১০৬. তাদের অধিকাংশ মানুষই আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান আনে না, তারা তো (আল্লাহ তায়ালার সাথে) শেরেকও করতে থাকে ।

১০৭. তবে তারা কি এ বিষয়ে নির্ভয় হয়ে গেছে যে, (হঠাত্ করে একদিন) তাদের ওপর আল্লাহ তায়ালার (সর্বগ্রাসী) আযাবের শাস্তি কিংবা আকস্মিক কেয়ামত আপতিত হবে, অথচ তারা (তা) জানতেও পারবে না!

১০৮. (হে নবী, এদের) তুমি বলে দাও, এ হচ্ছে আমার পথ, আমি মানুষদের আল্লাহর দিকে আহ্বান করি; আমি ও আমার অনুসারীরা পূর্ণাংগ সচেতনতার সাথেই (এ পথে) আহ্বান জানাই; আল্লাহ তায়ালা মহান, পবিত্র এবং আমি কখনো মোশরেকদের অন্তভুক্ত নই।

১০৯. তোমার আগে বিভিন্ন জনপদে যতো নবী আমি পাঠিয়েছিলাম, তারা সবাই (তোমার মতো) মানুষই ছিলো, আমি তাদের ওপর ওহী নাযিল করতাম; এরা কি আমার যমীন পরিভ্রমণ করেনি, (করলে অবশ্যই) তারা দেখতে পেতো, এদের পূর্বেকার লোকদের কি (ভয়াবহ ) পরিণাম হয়েছিলো; (সত্য কথা হচ্ছে) আখেরাতের ঠিকানা তাদের জন্যেই কল্যাণময় যারা (নবীদের পথে চলে) তাকওয়া অবলম্বন করেছে; (পূর্ববর্তী মানুষদের পরিণাম দেখেও) তোমরা কি কিছু অনুধাবন করবে না?

১১০. (আগেও মানুষ নবীদের মিথ্যা সাব্যস্ত করতো,) এমনকি নবীরা (কখনো কখনো) নিরাশ হয়ে যেতো, তারা মনে করতো, তাদের (বুঝি সাহায্যের প্রতিশ্রুতিতে) মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা হবে, তখন (হঠাৎ করেই) তাদের কাছে আমার সাহায্য এসে হাযির হলো, (তখন) আমি যাকে চাইলাম তাকেই শুধু (আযাব থেকে) নাজাত দিলাম; আর না-ফরমান জাতির ওপর থেকে আমার আযাব কখনোই রোধ হবে না ।

১১১. অবশ্যই (অতীতের) জাতিসমূহের কাহিনীতে জ্ঞানবান মানুষদের জন্যে অনেক শিক্ষা রয়েছে; (কোরআনের) এসব কথা কোনো মনগড়া গল্প নয়, বরং এ হচ্ছে তারই স্পষ্ট সমর্থন যে আসমানী কেতাব তাদের কাছে আগে থেকেই মজুদ রয়েছে, বরং (তাতে রয়েছে) প্রতিটি (মৌলিক) বিষয়ের বিস্তারিত (ও সঠিক) ব্যাখ্যা, (সর্বোপরি এতে রয়েছে) ঈমানদার মানুষদের জন্যে হেদায়াত ও রহমত ।


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url