আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা আর রা'দ-এর বাংলা অনুবাদ | সূরা আর রা'দ | Surah Ar Ra`d | الرعد


সূরা আর রা'দ-এর বাংলা অনুবাদ


সূরা আর রা'দ, মদীনায় অবতীর্ণ, আয়াত ৪৩, রুকু ৬

সূরা আর রা'দ


রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে-


১. আলিফ-লা-ম-মী-ম-রা। এগুলো হচ্ছে (আল্লাহর) কেতাবের আয়াত এবং যা কিছু তোমার মালিকের পক্ষ থেকে তোমার ওপর নাযিল করা হয়েছে তা (সবই) সত্য, যদিও অধিকাংশ মানুষই এর ওপর ঈমান আনে না ।

২. (তিনিই আল্লাহ তায়ালা) যিনি আসমানসমূ হকে কোনোরকম স্তম্ভ ছাড়াই উঁচু করে রেখেছেন, অতপর তিনি আরশে সমাসীন হলেন এবং তিনি সুরুজ ও চাঁদকে (একটি নিয়মের) অধীন করে রেখেছেন; (গ্রহ তারকার) সব কিছুই একটি সুনির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত আবর্তন করতে থাকবে; তিনিই সব কাজের (পরিকল্পনা ও) নিয়ন্ত্রণ করেন, তিনি (তাঁর কুদরতের) সব নিদর্শন (তোমাদের কাছে) খুলে খুলে বর্ণনা করেন, যাতে করে তোমরা (কেয়ামতের দিন) তোমাদের মালিকের সাথে দেখা করার বিষয়টি নিশ্চিতভাবে মেনে নিতে পারো ।

৩. তিনিই (তোমাদের জন্য) এ যমীন বিসত্ত্বত করে দিয়েছেন এবং তাতে পাহাড় ও নদী বানিয়ে দিয়েছেন; (সেখানে) আরো রয়েছে রং বেরংয়ের ফল ফুল- তাও তিনি বানিয়েছেন (আবার) জোড়ায় জোড়ায়, তিনি দিনকে রাত (-এর পোশাক) দ্বারা আচ্ছাদিত করেন; অবশ্যই এসব কিছুর মাঝে তাদের জন্যে প্রচুর নিদর্শন রয়েছে যারা (সৃষ্টি প্রক্রিয়া সম্পর্কে) চিন্তা ভাবনা করে ।

৪. যমীনে (আবার) রয়েছে বিভিন্ন অংশ, কোথাও (রয়েছে) আংগুরের বাগান, (কোথাও আবার) শস্যক্ষেত্র, কোথাও (আছে) খেজুর, তাও (কিছু হয়তো) এক শির বিশষ্টি (একটার সাথে আরেকটা জড়ানো), আবার (কোনোটি আছে) একাধিক শির বিশষ্টি, (অথচ এর সব কয়টিতে) একই পানি পান করানো হয়। তা সত্ত্বেও আমি স্বাদে (গন্ধে) এক ফলকে আরেক ফলের ওপর প্রাধান্য দিয়ে থাকি, (আসলে) এসব কিছুর মধ্যে সে সম্প্রদায়ের জন্যে বহু নিদর্শন রয়েছে যারা বোধশক্তিসম্পন্ন।

৫. (হে নবী,) যদি (কোনো কথার ওপর) তোমার আশ্বর্যান্বিত হতে হয়, তাহলে আশ্চর্য (হবার মতো বিষয়) হচ্ছে তাদের সে কথা (যখন তারা বলে), একবার মাটিতে পরিণত হবার পরও কি আমরা আবার নতুন জীবন লাভ করবো? এরা হচ্ছে সেসব লোক যারা তাদের মালিককে অস্বীকার করে, এরা হচ্ছে সেসব লোক যাদের গলদেশে (কেয়ামতের দিন) লৌহ শৃংখল থাকবে, এরাই হচ্ছে জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে ।

৬. এরা তোমার কাছে (হেদায়াতের) কল্যাণের আগে (আযাবের) অকল্যাণই ত্বরান্বিত করতে চায়, অথচ এদের আগে (আযাব নাযিলের) বহু দৃষ্টান্ত গত হয়ে গেছে; এতে সন্দেহ নেই, তোমার মালিক মানুষের ওপর তাদের (বহুবিধ) যুলুম সত্ত্বেও তাদের প্রতি ক্ষমাশীল, কিন্তু তোমার মালিক শাস্তিদানের বেলায়ও কঠোর ।

৭. যারা (তোমার নবুওত) অস্বীকার করে তারা বলে, তার মালিকের পক্ষ থেকে কোনো (দৃশ্যমান) নিদর্শন কেন নাযিল হয় না? (তুমি তাদের বলো,) তুমি তো হচ্ছো (আযাবের) একজন সতর্ককারী (রসুলমাত্র)! আর প্রত্যেক জাতির জন্যেই (এমনি) একজন পথপ্রদর্শক আছে ।

৮. প্রতিটি গর্ভবর্তী নারী (তার ভেতরে) যা কিছু বহন করে চলেছে এবং (তার) জরায় (সন্তানের) যা কিছু বাড়ায় কমায়, তার সবই আল্লাহ তায়ালা জানেন; তাঁর কাছে প্রতিটি বস্তুরই একটি পরিমাণ নির্দিষ্ট করা আছে।

৯. তিনি দেখা অদেখা সব কিছুই জানেন, তিনি মহান, তিনি সর্বোচ্চ মর্যাদাবান ।

১০. তোমাদের মাঝে কোনো লোক আসেত্ম কথা বলুক কিংবা জোরে বলুক, কেউ রাতের (অন্ধকারে) আত্মগোপন করে থাকুক কিংবা দিনে (আলোর মাঝে) বিচরণ করুক, এগুলো সবই তাঁর কাছে সমান ।

১১. (মানুষ যে অবস্থায়ই থাকুক না কেন,) তার জন্যে আগে পেছনে একের পর এক (আসা ফেরেশতার) দল নিয়োজিত থাকে, তারা আল্লাহর আদেশে তাকে হেফাযত করে; আল্লাহ তায়ালা কখনো কোনো জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যতোক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে; আল্লাহ তায়ালা যখন কোনো জাতির জন্যে কোনো দুঃসময়ের এরাদা করেন তখন তা রদ করার কেউই থাকে না- না তিনি ব্যতীত ওদের কোনো অভিভাবক থাকতে পারে!

১২. তিনিই তোমাদের বিদ্যুতের (চমক) দেখান, তা (মানুষের মনে যেমন) ভয়ের (সঞ্চার করে), তেমনি বহু আশারও (সঞ্চার করে) এবং তিনিই (পানি) সঞ্চয়িনী মেঘমালা সৃষ্টি করেন।

১৩. আর (মেঘের নিষ্প্রাণ) গর্জন (যেমন) তাঁর সপ্রশংস মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করে, তেমনি (সপ্রাণ) ফেরেশতারাও তাঁর ভয়ে তাঁর মাহাত্ম্য ঘোষণা করে, তিনি (আকাশ থেকে) বজ্রপাত করান, অতপর যার ওপর চান তার ওপরই তিনি তা পাঠান, অথচ এ (না-ফরমান) ব্যক্তিরা (এতো কিছু সত্ত্বেও) আল্লাহ তায়ালার (অস্তিত্বের) প্রশ্নে বিতর্কে লপ্তি হয়, তিনি তাঁর েেকৗশলে (ও মাহাত্ম্যে) অনেক বড়ো ;

১৪. (তাই) তাঁকে ডাকাই হচ্ছে সঠিক (পন্থা); যারা তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যদের ডাকে, তারা (জানে, তাদের ডাকে এরা) কখনোই সাড়া দেবে না, (এদের উদাহরণ হচ্ছে) যেমন একজন মানুষ, (যে পিপাসায় কাতর হয়ে) নিজের উভয় হাত পানির দিকে প্রসারিত করে এ আশায় যে, পানি (তার মুখে) এসে পৌঁছবে, অথচ তা (কোনো অবস্থায়ই) তার কাছে পৌঁছুবার নয়, কাফেরদের দোয়া (এমনিভাবে) নিষ্ফল (ঘুরতে থাকে ) ।

১৫. আসমানসমূহও যমীনে যা কিছু আছে তারা সবাই ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক, আল্লাহ তায়ালাকে সাজদা করে চলেছে, (এমনকি) সকাল সন্ধ্যায় তাদের ছায়াগুলোও (তাদের মালিককে সাজদা করছে)।

১৬. (হে নবী, এদের) তুমি জিজ্ঞেস করো, আসমানসমূহ ও যমীনের মালিক কে? তুমি (তাদের) বলো, একমাত্র আল্লাহ তায়ালা, (আরো) বলো, তোমরা কেন আল্লাহকে বাদ দিয়ে অপরকে নিজেদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করছো, যারা নিজেদের কোনো লাভ লোকসান করতে সক্ষম নয়; তুমি (এদের) জিজ্ঞেস করো, কখনো অন্ধ ও চক্ষুষ্মান ব্যক্তি কি সমান হয়, কিংবা অন্ধকার ও আলো কি কখনো সমান হয়? অথবা এরা আল্লাহর সাথে এমন কিছুকে শরীক করে নিয়েছে যে, তারা আল্লাহর সৃষ্টির মতো (কিছু) বানিয়ে দিয়েছে, যার কারণে সৃষ্টির ব্যাপারটি তাদের কাছে সন্দেহের বিষয়ে পরিণত হয়ে গেছে; তুমি তাদের বলো, যাবতীয় সৃষ্টির স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ তায়ালা, তিনি একক ও মহাপরাক্রমশালী!

১৭. আল্লাহ তায়ালা আসমান থেকে পানি বর্ষণ করলেন, এরপর (নদী নালা ও তার) উপত্যকাসমূহতাদের নিজ নিজ পরিমাণ অনুযায়ী প্লাবিত হলো, অতপর এ প্লাবন (আবর্জনার) ফেনা বহন করে (ওপরে) নিয়ে এলো; (আবার) যারা অলংকার ও যন্ত্রপাতি বানানোর জন্যে (ধাতুকে) আগুনে উত্তপ্ত করে, (তখনো) কিন্তু তাতে এক ধরনের আবর্জনা ফেনা (হয়ে) ওপরে ওঠে আসে; এভাবেই আল্লাহ তায়ালা হক ও বাতিলের উদাহরণ দিয়ে থাকেন, অতপর (আবর্জনার) ফেনা এমনিই বিফলে চলে যায় এবং (পানি-) যা মানুষের (প্রচুর) উপকারে আসে তা যমীনেই থেকে যায়; আল্লাহ তায়ালা (মানুষদের জন্যে) এভাবেই (সুন্দর) দৃষ্টান্তসমূহপেশ করে থাকেন;

১৮. যারা তাদের মালিকের এ আহ্বানে সাড়া দেয় তাদের জন্যে মহা কল্যাণ রয়েছে; আর যারা তাঁর জন্যে সাড়া দেয় না (কেয়ামতের দিন তাদের অবস্থা হবে), তাদের পৃথিবীতে যা কিছু (সম্পদ) আছে তা সমস্ত যদি তাদের নিজেদের (অধিকারে) থাকতো, তার সাথে যদি থাকতে আরো সমপরিমাণ (ধন সম্পদ), তাহলেও (আযাব থেকে বাঁচার জন্যে) তারা তা (নির্দ্বিধায় ) মুক্তিপণ হিসেবে আদায় করে দিতো; এরাই হবে সেসব (হতভাগ্য) মানুষ যাদের হিসাব হবে (খুব কঠিন, জাহান্নামই হবে ওদের নিবাস; কতো নিকৃষ্ট সে নিবাস !

১৯. সে ব্যক্তি কি জানে যে, তোমার মালিকের পক্ষ থেকে যা কিছু তোমার ওপর নাযিল করা হয়েছে তা একান্তই সত্য, সে কি করে এমন ব্যক্তির মতো হবে যে (এসব কিছু দেখেও) অন্ধ (হয়ে থাকে); একমাত্র বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিরাই শুধু উপদেশ গ্রহণ করতে পারে,

২০. (এরা সেসব লোক) যারা আল্লাহর সাথে (আনুগত্যের) চুক্তি মেনে চলে এবং কখনো প্রতিশ্রুতি ভংগ করে না,

২১. এবং আল্লাহ তায়ালা যেসব (মানবীয়) সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখতে আদেশ করেছেন যারা তা অক্ষুণ্ন রেখে চলে, যারা নিজেদের মালিককে ভয় করে, আরো যারা ভয় করে (কেয়ামতের) কঠোর হিসাবকে;

২২. যারা তাদের মালিকের সন্তুষ্টি লাভের জন্যে (বিপদ মসিবতে) ধৈর্য ধারণ করে, যথারীতি নামায কায়েম করে, আমি তাদের যে রেযেক দিয়েছি তা থেকে তারা (আমারই পথে) খরচ করে গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে, যারা (নিজেদের) ভালো (কাজ) দ্বারা মন্দ (কাজ) দূরীভূত করে, তাদের জন্যেই রয়েছে আখেরাতের শুভ পরিণাম,

২৩. (সে তো হচ্ছে) এক চিরস্থায়ী জান্নাত, সেখানে তারা নিজেরা (যেমনি) প্রবেশ করবে, (তেমনি) তাদের পিতামাতা, তাদের স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান সন্ততিদের মধ্যে যারা নেক কাজ করেছে তারাও (প্রবেশ করবে), জান্নাতের প্রতিটি দরজা দিয়ে (তাদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্যে) ফেরেশতারাও তাদের সাথে ভেতরে প্রবেশ করবে,

২৪. (তারা বলবে, আজ) তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক, (দুনিয়ার জীবনে) তোমরা যে পরিমাণ ধৈর্য ধারণ করেছো (এটা হচ্ছে তার বিনিময়), আখেরাতের ঘরটি কতো উৎকৃষ্ট!

২৫. (অপরদিকে) যারা আল্লাহর সাথে (এবাদাতের) প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভংগ করে, যেসব সম্পর্ক আল্লাহ তায়ালা অক্ষুন্ন রাখতে বলেছেন তা ছিন্ন করে, (সর্বোপরি আল্লাহর) যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের জন্যে রয়েছে (আল্লাহ তায়ালার) অভিশাপ এবং তাদের জন্যেই রয়েছে (আখেরাতে) নিকৃষ্ট আবাস।

২৬. আল্লাহ তায়ালা যার জীবনোপকরণে প্রশস্ততা দিতে চান তাই করেন, আবার যাকে তিনি চান তার রেযেক সংকীর্ণ করে দেন; আর এরা এ বৈষয়িক জীবনের ধন সম্পদের ব্যাপারেই বেশী উল্লসিত হয়, অথচ আখেরাতের তুলনায় এ পার্থিব জীবন (কিছু ক্ষণস্থায়ী) জিনিস ছাড়া আর কিছুই হবে না ।

২৭. (হে নবী,) যারা (তোমার নবুওত) অস্বীকার করে তারা বলে, তার মালিকের কাছ থেকে তার ওপর কোনো (অলৌকিক) নিদর্শন পাঠানো হলো না কেন; তুমি (এদের) বলো, আল্লাহ তায়ালা যাকে ইচ্ছা তাকে বিভ্রান্ত করেন এবং তাঁর কাছে পৌঁছার পথ তিনি তাকেই দেখান যে (নিষ্ঠার সাথে তাঁর) অভিমুখী হয়,

২৮. যারা আল্লাহর ওপর ঈমান আনে এবং আল্লাহর যেকেরে তাদের অন্তকরণ প্রশান্ত হয়, জেনে রেখো, আল্লাহর যেকেরই অন্তরসম হকে প্রশান্ত করে;


২৯. যারা ঈমান আনে এবং নেক কাজ করে, তাদের জন্যে রয়েছে যাবতীয় সুখবর ও শুভ পরিণাম ।

৩০. (অতীতে যেমন আমি নবী রসুল পাঠিয়েছি) তেমনি করে আমি তোমাকেও একটি জাতির কাছে (নবী করে) পাঠিয়েছি, এর আগে অনেক কয়টি জাতি অতিবাহিত হয়ে গেছে, (নবী পাঠিয়েছি) যাতে করে তোমরা তাদের কাছে সে (কেতাব) পড়ে শোনাতে পারো, যা আমি তোমার ওপর ওহী করে পাঠিয়েছি, (এ সত্ত্বেও) তারা অনন্ত করুণাময় আল্লাহ তায়ালাকে অস্বীকার করে; তুমি তাদের বলো, তিনিই আমার মালিক, তিনি ছাড়া আর দ্বিতীয় কোনো মাবুদ নেই, (সর্বাবস্থায়) আমি তাঁর ওপরই ভরসা করি, তাঁর দিকেই (আমার) প্রত্যাবর্তন।

৩১. যদি পাহাড়সম হকে কোরআন (-এর অলৌকিক ক্ষমতা) দিয়ে গতিশীল করে দেয়া হতো, কিংবা যমীন বিদীর্ণ করে দেয়া হতো, অথবা তার মাধ্যমে যদি মরা মানুষকে দিয়ে কথা বলানো যেতো (তবুও এ না-ফরমান মানুষগুলো ঈমান আনতো না), কিন্তু আসমান যমীনের সমস্ত ক্ষমতা একমাত্র তাঁরই (হাতে); অতপর ঈমানদাররা কি (একথা জেনে) নিরাশ হয়ে পড়লো যে, আল্লাহ তায়ালা চাইলে সমগ্র মানব সন্তানকেই হেদায়াত দিতে পারতেন; এভাবে যারা কুফুরের পথ অবলম্বন করেছে তাদের কোনো না কোনো বিপর্যয় ঘটতেই থাকবে, কিংবা তাদের (নিজেদের ওপর না হলেও) আশপাশে তা আপতিত হতে থাকবে, যে পর্যন্ত না (তাদের জন্য) আল্লাহ তায়ালার চূড়ান্ত (আযাবের) ওয়াদা সমাগত হয়; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা কখনোই প্রতিশ্রুতি ভংগ করেন না ।

৩২. (হে নবী,) তোমার আগেও নবী রসুলদের ঠাট্টা বিদ্রূপ করা হয়েছে, অতপর আমি (প্রথমে) তাদের (কিছু) অবকাশ দিয়েছি যারা কুফরী করেছে, এরপর আমি তাদের কঠোর শাস্তি দিয়েছি; কতো কঠোর ছিলো আমার আযাব!

৩৩. যিনি প্রত্যেকটি মানুষের ওপর তাঁর দৃষ্টি প্রতিষ্ঠিত রাখেন যে, সে মানুষটি কি পরিমাণ অর্জন করেছে (তিনি কি করে অন্যদের মতো হবেন)? ওরা আল্লাহর সাথে শরীক করে রেখেছে; (হে নবী, এদের) তুমি বলো, ওদের নাম তো তোমরা বলো, অথবা তোমরা কি আল্লাহ তায়ালাকে এমন (শরীকদের) সম্পর্কে খবর দিতে চাচ্ছো, এ যমীনে যাকে তিনি জানেনই না অথবা এটা কি তাদের কোনো মুখের কথা মাত্র? (আসল কথা হচ্ছে,) যারা কুফরী করেছে তাদের চোখে তাদের এই প্রতারণাকে শোভন করে দেয়া হয়েছে, আল্লাহ তায়ালার পথ (পাওয়া) থেকে তাদের অবরোধ করে রাখা হয়েছে; আল্লাহ তায়ালা যাকে গোমরাহ করেন তার জন্যে পথের দিশা দেখানোর (আসলেই) কেউ নেই ।

৩৪. এদের জন্যে দুনিয়ার জীবনেও অনেক শাস্তি আছে, তবে আখেরাতে যে আযাব রয়েছে তা তো নিসন্দেহে বেশী কঠোর, (মূলত) আল্লাহ (-এর ক্রোধ) থেকে তাদের বাঁচাবার মতো কেউ নেই।

৩৫. পরহেযগার লোকদের সাথে যে জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছে তার উদাহরণ হচ্ছে (যেমন একটি বাগান), তার নীচে দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হচ্ছে; তার ফলফলারি এবং সে বাগানের (গাছসমু হের) ছায়াসম হও চিরস্থায়ী; এসবই হচ্ছে তাদের পরিণাম, যারা (দুনিয়ায়) তাকওয়ার জীবন অতিবাহিত করেছে, কাফেরদের পরিণাম হচ্ছে (জাহান্নামের) আগুন ।

৩৬. (হে নবী,) যাদের আমি (ইতিপুর্বে) কেতাব দান করেছিলাম তারা তোমার ওপর যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তাতে বেশী আনন্দ অনুভব করে, এই দলে কিছু লোক এমনও আছে যারা এর কিছু অংশ অস্বীকার করে; তুমি (এদের) বলো, আমাকে তো আল্লাহর এবাদাত করার আদেশ দেয়া হয়েছে, আমি (আরো) আদিষ্ট হয়েছি যেন আমি তাঁর সাথে কোনো রকম শরীক না করি; আমি তোমাদের সবাইকে তাঁর দিকেই আহবান করছি, তাঁর দিকেই (আমার) প্রত্যাবর্তন ।

৩৭. (হে নবী,) আমি এভাবেই এ বিধান (তোমার ওপর) আরবী ভাষায় নাযিল করেছি (যেন তুমি সহজেই বুঝতে পারো); তোমার কাছে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) যে জ্ঞান এসেছে তা সত্ত্বেও যদি তুমি তাদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করো, তাহলে আল্লাহর সামনে তোমার কোনোই সাহায্যকারী থাকবে না- না থাকবে (তোমাকে) বাঁ চাবার মতো কেউ!

৩৮. (হে নবী,) তোমার আগেও আমি (অনেক) রসুল পাঠিয়েছি এবং তাদের জন্যে আমি স্ত্রী এবং সন্তান সন্ততিও বানিয়েছিলাম; কোনো রসুলের কাজ এটা নয় যে, আল্লাহর অনুমতি ছাড়া একটি আয়াতও সে পেশ করবে; (মূলত) প্রতিটি যুগের জন্যেই (ছিলো এক) একটি কেতাব ।

৩৯. আর (সেসব কিছুর মাঝে থেকে) আল্লাহ তায়ালা যা কিছু চান তা বাতিল করে দেন এবং যা কিছু ইচ্ছা করেন তা (পরবর্তী যুগের জন্যে) বহাল রেখে দেন, মূল গ্রন্থ তো তাঁর কাছেই (মজুদ) থাকে ।

৪০. (হে নবী,) যে (আযাবের) ওয়াদা আমি এদের সাথে করি তার কিছু অংশ যদি আমি তোমাকে দেখিয়ে দেই, কিংবা (তার আগেই) যদি আমি তোমাকে মৃত্যু দেই, তাহলে (তুমি উদ্বিগ্ন হয়ো না, কেননা,) তোমার কাজ হচ্ছে (আমার কথা) পৌঁছে দেয়া, আর আমার কাজ হচ্ছে (তাদের কাছ থেকে তার যথাযথ) হিসাব (বুঝে) নেয়া ।

৪১. এরা কি দেখতে পায় না যে, আমি (তাদের) যমীন চার দিক থেকে (আসেত্ম আসেত্ম) সংকুচিত করে আনছি; আল্লাহ তায়ালা (যা চান সে) আদেশ জারি করেন, তাঁর সে আদেশ উল্টে দেয়ার কেউই নেই, তিনি হিসাব গ্রহণে খুবই তৎপর ।

৪২. যারা এদের আগে অতিবাহিত হয়ে গেছে তারা (বড়ো বড়ো) ধোকা প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলো, কিন্তু যাবতীয় কলা-কৌশল তো আল্লাহ তায়ালার জন্যেই; (কেননা) তিনিই জানেন প্রতিটি ব্যক্তি (কখন) কি অর্জন করে; অচিরেই কাফেররা জানতে পারবে আখেরাতের (সুখ) নিবাস কাদের জন্যে (তৈরী করে রাখা হয়েছে)।

৪৩. (হে নবী,) যারা আল্লাহ তায়ালাকে অস্বীকার করে, (তারা) বলে, তুমি নবী নও, তুমি ওদের বলে দাও, আমার এবং তোমাদের মাঝে (আমার নবুওতের সাক্ষ্যের ব্যাপারে) আল্লাহর সাক্ষ্যই যথষ্টে, উপরন্তু যার কাছে (পূর্ববর্তী) কেতাবের জ্ঞান আছে (সেও এ ব্যাপারে সচেতন)।


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url