কুরআনের গল্পঃ হযরত আদম (আঃ) ও বিবি হাওয়া (আঃ)-এর পৃথিবীতে অবতরণ



হযরত আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ)-এর পৃথিবীতে অবতরণ


আল্লাহ তা'য়ালা হযরত আদম (আঃ)-কে সৃষ্টির কয়েক লক্ষ বছর পূর্বে লওহে মাহফুজে লিখে রেখেছিলেন, পৃথিবীতে তিনি তাঁর খলিফা হিসেবে হযরত আদম (আঃ)-কে প্রেরণ করবেন। অতএব পৃথিবীতে হযরত আদম (আঃ)-এর আগমন অনিবার্য ঘটনা। তবে যে মান-সম্মান নিয়ে হযরত আদম (আঃ)-এর পৃথিবীতে আগমন করা উচিৎ ছিল একটি ভুল সিদ্ধান্তের জন্য তার বিরাট ব্যাতিক্রম ঘটেছে।

হযরত আদম (আঃ)-এর পক্ষে নিষিদ্ধ গাছের ফল ভক্ষণ করা ছিল একটি অন্যায় কাজ। এ অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে আল্লাহ তা'য়ালা তাঁকে অনাড়ম্বর বসন্তে বিরাট ভোগ দুর্ভোগের মাঝে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। প্রথমেই তার অপরাদের জন্য বেহেস্তী পোশাক-পরিচ্ছদ খুলে নেয়া হয় এবং তাদেরকে উলঙ্গ অবস্থায় ফেরেশতাদের মাঝে দাঁড়া করান হয়, সে লজ্জায় তারা সেখানে চরম ভাবে অপদস্ত হন। অতঃপর গাছের পাতা দ্বারা লজ্জা নিবারণ করার চেষ্টা করছিল। এটা ছিল দ্বিতীয় দফার বে-ইজ্জতী। তৃতীয় দফায় শয়তান, সাপ ও ময়ূরকে তাদের সমমানের করে একত্রে পৃথিবীতে প্রেরন করা হয়। চতুর্থ দফায় তাঁর জীবন সঙ্গীনী বিবি হাওয়াকে এবং তাঁকে বিরাট দূরত্বে নিক্ষেপ করা হয় । যার ফলে পৃথিবীতে অনেক বিলম্বে তাঁদের সাক্ষাৎ ঘটে। পঞ্চমত, পৃথিবীতে রোদ বৃষ্টির মধ্যে পরিশ্রম করে তাঁদের রুজি যোগাতে হয়। ষষ্ঠত, পৃথিবীর সকল ধরনের কাজ-কারবার পরিশ্রম করে শিখতে হয়। সপ্তমত হল, নিজ সন্তানদের মধ্যে অবর্গ বিবাদ সৃষ্টি হওয়া। সর্বশেষে প্রতি মুহূর্তে শয়তানের ওছওয়াছা থেকে মুক্তিলাভের জন্য সদা সতর্ক থাকা ।

হযরত আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ)-এর সাক্ষাৎ এবং ক্ষমা লাভ


এহেন কঠিন পরীক্ষার পরে দীর্ঘ তিনশত বছর বিচ্ছিন্নভাবে তাঁদেরকে কেঁদে কাটাতে হয়েছে। হযরত আদম (আঃ) কে নামিয়ে দেয়া হয় সিংহলে। বিবি হাওয়াকে নামিয়ে দেয়া হয় খোরাসানে। একে অন্যের সন্ধানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হেঁটে হেঁটে পথ অতিক্রম করতেন। এভাবে একাধারে তিনশত বছর উভয়ে পথে পথে কেঁদে কাটালেন। অবশেষে একদা আরাফার ময়দানের জাবালে রহমতের উপর বসে হযরত আদম (আঃ) আল্লাহর তাছবীহ পাঠ করছিলেন। এমন সময় তিনি দেখলেন বিবি হাওয়া জেদ্দার দিক থেকে আসছে। তৎক্ষণাৎ তিনি দৌড়ে গিয়ে তাকে কোলে তুলে নিলেন। তখন উভয়ে একত্রে এমন জোরে কাঁদলেন যে, আসমানের ফেরেশতারাও দেখে তাঁদের কান্না সংবরণ করতে পারলেন না এবং সাথে তাঁরাও জার জার হয়ে কাঁদলেন।

এরপরে তারা আল্লাহর দরবারে নফল নামায আদায় করে আকাশের দিকে তাকাতেই দেখলেন আল্লাহ তা'য়ালার আরশ পর্যন্ত যত পর্দা ছিল সব উঠে গেছে। আল্লাহ তা'য়ালার আরশ তাদের চোখের সম্মুখে সমুজ্জ্বল হয়ে উঠে। হযরত আদম (আঃ) আল্লাহ তা'য়ালার আরশের উপর লেখা দেখলেন লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। তখন হযরত আদম (আঃ) ভাবলেন আল্লাহ তা'য়ালার নামের সাথে যে নামটি লেখা রয়েছে সে নামের ব্যক্তি অবশ্যই আল্লাহ তা'য়ালার অধিক প্রিয় হবেন, তাই তিনি দুহাত তুলে বললেন, হে প্রভু! তোমার নামের সাথে মোহাম্মদ রাসূলুল্লাহ লেখা যে নামটি দেখছি, সে নামের বরকতে তুমি আমার অপরাধ ক্ষমা কর। একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে হযরত জিব্রাঈল (আঃ) সেখানে হাজির হয়ে হযরত আদম (আঃ)-কে বললেন, এবার আপনি যে নামের বরাত দিয়ে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন তাতে আপনার জীবনের গুনাহ আল্লাহ তা'য়ালা মাফ করে দিয়েছেন। বেহেস্তে বসে যদি এ নামের উছিলা ধরে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন তাহলে আপনাকে আর পৃথিবীতে আসতে হত না। যদি একান্ত আসতে হত তাহলে রাজার বেশে আসতেন ভিখারীর বেশে নয়। 

কাবাঘরের সংস্কার ও আদম (আঃ) এর হজ্জ আদায়


হযরত জিব্রাঈল (আঃ) আদম (আঃ)-কে বললেন, এখন আল্লাহর দরবারে শোকর আদায়ের উদ্দেশ্যে কাবাঘর জিয়ারত ও হজ্জ সমাধান করুন। এখানে কতদিন আপনি থাকবেন তা কেউ জানে না। এতএব এখানের সর্ব বৃহৎ নেয়ামত হল বায়তুল্লাহ জিয়ারত ও হজ্জ আদায়। হযরত আদম (আঃ) জিব্রাঈল (আঃ)-এর কথায় তখনই বায়তুল্লাহ জিয়ারতের নিয়ত করলেন। বায়তুল্লাহর অবস্থা ছিল খুবই নাজুক। তাই আল্লাহ তা'য়ালার নির্দেশ ক্রমে প্রথমে জিব্রাঈল (আঃ) কে নিয়ে কাবাঘর সংস্কারের কাজে হাত দিলেন । অল্প দিনের মধ্যে কাবাঘরের সংস্কার সম্পন্ন হলে হযরত আদম (আঃ) জিব্রাঈল (আঃ)-এর সহায়তায় হজ্জ সমাধা করেন।

আদম (আঃ) এর বংশধরদের প্রত্যক্ষ করা


হজ্জ সমাধানের পরে আল্লাহ তা'য়ালা জিব্রাঈলকে বললেন তুমি আদম (আঃ)-কে নিয়ে আরাফাতের নিকটবর্তী ‘ওয়াদীয়ে নোমান' নামক স্থানে চলে যাও। সেখানে পৌঁছে তোমার পাখা হযরত আদম (আঃ)-এর পৃষ্ঠে ঘসে দাও। হযরত জিব্রাঈল (আঃ) যখন আদম (আঃ)-কে নিয়ে যথাস্থানে পৌঁছলেন এবং নিজ পাখা দিয়ে তাঁর পিঠ স্পর্শ করলেন তখন পিপিলিকার ন্যায় অসংখ্যা বনি আদম (আঃ)-এর রুহ পিঠ থেকে বের হয়ে ময়দান পরিপূর্ণ হতে আরম্ভ করে । অল্প সময়ের মধ্যে পৃথিবীর সর্বত্র রুহুগুলো ছড়িয়ে যেতে আরম্ভ করে। তখন হযরত আদম (আঃ) জিজ্ঞেস করেন এরা কোন জাতের প্রাণী। আল্লাহ তা'য়ালা তার উত্তরে বলেন, এরা সকলে বনি আদম, তোমার নছল থেকে পৃথিবীতে যে সব মানুষ আসবে তার রুহগুলো একত্রিত করে তোমাকে দেখান হচ্ছে। হযরত আদম (আঃ) বললেন, আমার এত সন্তান হবে? এরা থাকবে কোথায়? পৃথিবীতে এদের সংকুলান আদৌ সম্ভব নয়। আল্লাহ তা'য়ালা বললেন, সে ব্যবস্থা আমি পূর্বেই করে রেখেছি। কতক থাকবে পিতার পৃষ্ঠে, কতক থাকবে মাতৃগর্ভে। কতক থাকবে মাটির উপরে আর কতক থাকবে মাটির নিচে।

অতএব হযরত আদম (আঃ) আল্লাহ তা'য়ালার নিকট জিজ্ঞেস করলেন, এদের মধ্যে প্রকারভেদ থাকবে কেমন? আল্লাহ তা'য়ালা বললেন, এদের মধ্যে অনেক প্রকারভেদ থাকবে। কেউ ধনী মোমেন, কেউ ধনী কাফের, কেউ গরীব মোমেন, কেউ গরীব কাফের। কেউ প্রথম জীবনে মোমেন শেষ জীবনে কাফের আবার কেউ প্রথম জীবনে কাফের শেষ জীবনে মোমেন। এছাড়া কতক দোজখের আজাব ভোগ করার পরে বেহেস্ত লাভ করবে। হযরত আদম (আঃ) আল্লাহ তা'য়ালার নিকট তাঁর সন্তানদের মধ্যে মোমেন ও কাফেরের সংখ্যা দেখার আবেদন জানালেন। তখন আল্লাহ আদম (আঃ)-কে দাঁড় করিয়ে তার ডান পাশে ও বাম পাশে আদম (আঃ)-এর সন্তানদেরকে বিভক্ত করার জন্য জিব্রাঈল (আঃ) কে হুকুম দিলেন। জিব্রাঈল (আঃ) বনী আদম-কে দুভাগে ভাগ করলেন। তখন আল্লাহ তা'য়ালা বললেন, তোমার ডান পাশের সন্তানেরা মোমেন এবং বাম পাশের সন্তানেরা কাফের। হযরত আদম (আঃ) তাঁর সন্তানদের মধ্যে অধিক সংখ্যক কাফের দেখে কেঁদে দিলেন এবং আল্লাহ তা'য়ালার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। আল্লাহ তা'য়ালা বললেন, তোমার সন্তানদের মধ্য থেকে অধিক সংখ্যক যাতে ঈমানদার হতে পারে সেজন্য আমি তোমার আওলাদের মধ্য থেকে অধিক নবী পয়দা করব।

অতঃপর আল্লাহ তা'য়ালা সকল বনী আদম-এর নিকট জিজ্ঞেস করে ছিলেন, হে বনী আদম! আমি কি তোমাদের প্রভু নই? সেদিন সকলে সমস্বরে উত্তর দিয়ে ছিল হ্যাঁ, আপনি আমাদের মহান প্রভু। আমরা আপনারই তাবেদারী করব। কাউকে শরীক করব না। বনী আদম (আঃ)-এর এ স্বীকৃতির ভাষা সেদিন রেকর্ড করা হয় এবং নির্মিত আকারে একজন ফেরেশতার নিকট জমা রাখা হয়। কিয়ামতের দিন সে ফেরেশতা বনী আদম-এর রেকর্ড শুনাবেন এবং নির্মিত অঙ্গীকারপত্র প্রকাশ করবেন। যারা আল্লাহ তা'য়ালার সঙ্গে ওয়াদা ঠিক রাখবে তাদেরকে বেহেস্ত প্রদান করা হবে। আর যারা ওয়াদা খেলাপকারী হবে তাদেরকে দোজখে নিক্ষেপ করা হবে।


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url