আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা ইউনুসের বাংলা অনুবাদ | সূরা ইউনুস | Surah Yunus | سورة يونس‎


সূরা ইউনুসের বাংলা অনুবাদ


সূরা ইউনুস, মক্কায় অবতীর্ণ আয়াত ১০৯, রুকু ১১

সূরা ইউনুস


রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে


১. আলিফ-লা-ম-রা। এগুলো (হচ্ছে) একটি জ্ঞানগর্ভ গ্রন্থের আয়াত ।

২. মানুষের জন্যে এটা কি (আসলেই) একটা আশ্চর্যের বিষয় যে, আমি তাদের মধ্য থেকে (তাদেরই মতো) একজন মানুষের কাছে ওহী পাঠিয়েছি, যেন সে মানুষকে (তা দিয়ে জাহান্নাম সম্পর্কে) সাবধান করে দিতে পারে, আবার যারা (এ ওহীর ওপর) ঈমান আনে; তাদের (এ মর্মে) সুসংবাদও দিতে পারে যে, তাদের জন্যে তাদের মালিকের কাছে উঁচু মর্যাদা রয়েছে, কাফেরা (এমনি আশ্চর্যান্বিত হয়ে পড়লো যে, তারা) বললো, অবশ্যই এ ব্যক্তি একজন সুদক্ষ যাদুকর!

৩. (হে মানুষ,) তোমাদের মালিক হচ্ছেন আল্লাহ তায়ালা, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে ছয় দিনে পয়দা করেছেন, অতঃপর তিনি ‘আরশে সমাসীন হন, তিনি (তার) কাজ (স্বহস্তে) নিয়ন্ত্রণ করেন; কেউই তাঁর অনুমতি ছাড়া (কারো জন্যে) সুপারিশকারী হতে পারে না; এই হচ্ছেন তোমাদের মালিক আল্লাহ তায়ালা, অতএব তোমরা তাঁরই এবাদাত করো; তোমরা কি (সত্যি কথা) অনুধাবন করবে না?

৪. (মৃত্যুর পর) তোমাদের সবার ফিরে যাবার জায়গা হবে একমাত্র তাঁর কাছে; (সেখানে গিয়ে তোমরা) আল্লাহ তায়ালার (সকল) প্রতিশ্রুতিই সত্য (পাবে,) তিনিই এ সৃষ্টির অস্তিত্ব দান করেন, (মৃত্যুর পর) তিনিই আবার তাকে (তার জীবন) ফিরিয়ে দেবেন, যাতে করে যারা (তাঁর ওপর) ঈমান আনে, ভালো কাজ করে, (যথার্থ) ইনসাফের সাথে তিনি তাদের (কাজের) বিনিময় দান করতে পারেন এবং (এ কথাটাও পরিষ্কার করে দিতে পারেন,) যারা (আল্লাহ তায়ালাকে) অস্বীকার করে তাদের জন্যে উত্তপ্ত পানীয় ও কঠিন শাস্তি রয়েছে, কেননা তারা (পরকালের এ শাস্তি) অস্বীকার করতো |

৫. মহান আল্লাহ তায়ালা যিনি সুর্যকে (প্রখর) তেজোদ্দীপ্ত বানিয়েছেন এবং চাঁদকে (বানিয়েছেন) জ্যোতির্ময়, অতঃপর (আকাশে) তার জন্যে কিছু মনযিল তিনি নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, যাতে করে (এ নিয়ম দ্বারা) তোমরা বছরের গণনা এবং দিন-তারিখের হিসাবটা জানতে পারো; (আসলে) আল্লাহ তায়ালা যে এসব কিছু পয়দা করে রেখেছেন (তার) কোনোটাই তিনি অনর্থক করেননি; যারা (সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে) জানতে চায় তাদের জন্যে আল্লাহ তায়ালা তাঁর নিদর্শন খুলে খুলে বর্ণনা করেন ।

৬. অবশ্যই দিন ও রাতের পরিবর্তনে এবং আল্লাহ তায়ালা যা কিছু (এ) আসমানসমূহ ও যমীনের মাঝে পয়দা করেছেন, তার (প্রতিটি জিনিসের) মাঝে পরহেযগার লোকদের জন্যে (আল্লাহ তায়ালাকে চেনার) নিদর্শন রয়েছে।

৭. (মানুষের মাঝে) যারা (মৃত্যুর পর) আমার সাথে সাক্ষাতের প্রত্যাশা করেনা, যারা এ পার্থিব জীবন নিয়েই সন্তুষ্ট এবং (এখানকার) সবকিছু নিয়েই পরিতৃপ্ত, (সর্বোপরি ) যারা আমার (সৃষ্টি বৈচিত্রের) নিদর্শনসমূহ থেকে গাফেল থাকে,

৮. তারাই হচ্ছে সেসব লোক, যাদের (নিশ্চিত) ঠিকানা হবে (জাহান্নামের) আগুন; (এ হচ্ছে তাদের সে কর্মফল) যা তারা দুনিয়ার জীবনে অর্জন করেছে |

৯. (অপরদিকে) যারা (আল্লাহ তায়ালার ওপর) ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে, তাদের মালিক তাদের (এ) ঈমানের কারণেই তাদের সঠিক পথ দেখাবেন; তাদের তলদেশ দিয়ে (অসংখ্য) নেয়ামতে (পরিপুর্ণ) জান্নাতে (সুপেয়) ঝর্ণাধারা প্রবাহমান থাকবে |

১০. (এ সময়) তাদের (মুখে একটি মাত্র) ধ্বনিই (প্রতিধ্বনিত) হতে থাকবে, হে আল্লাহ তায়ালা, তুমি (কতো) মহান, (কতো) পবিত্র! (সেখানে) তাদের (পারস্পরিক) অভিবাদন হবে 'সালাম' (এবং) তাদের শেষ ডাক হবে, যাবতীয় তারীফ সৃষ্টিকূলের মালিক আল্লাহ তায়ালার জন্যে |

১১. (ভেবে দেখো,) আল্লাহ তায়ালা যদি মানুষের জন্যে তাদের (অন্যায় কাজকর্মের শাস্তি দিতে গিয়ে) অকল্যাণকে ত্বরান্বিত করতেন, যেভাবে মানুষ নিজেদের কল্যাণ ত্বরান্বিত করতে চায়, তাহলে তাদের অবকাশ (দেয়ার এ সুযোগ করেই) শেষ হয়ে যেতো (কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাদের ঢিল দিয়ে রেখেছেন); অতঃপর যারা আমার সাথে সাক্ষাতের আশা করে না, আমি তাদের না-ফরমানীর জন্যে তাদের উদ্ভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াতে দিই।

১২. মানুষকে যখন কোনো দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করে, তখন সে বসে, শুয়ে, দাঁড়িয়ে সর্বাবস্থায় আমাকেই ডাকে, অতঃপর আমি যখন তার দুঃখ-কষ্ট তার কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাই, তখন সে এমনি (বেপরোয়া হয়ে) চলতে শুরু করে, তাকে যে এক সময় দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করেছিলো, (মনে হয়) তা দুর করার জন্যে আমাকে সে কখনো ডাকেইনি; এভাবেই যারা (বার বার ) সীমালংঘন করে তাদের জন্যে তাদের কাজকর্ম শোভনীয় করে দেয়া হয়েছে |

১৩. তোমাদের আগে অনেক কয়টি মানবগোষ্ঠীকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি, যখন তারা যুলুম করেছিলো, (অথচ) তাদের কাছে (আমার) সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ তাদের রসুলরা এসেছিলো, (কিন্তু) তারা (কোনো রকমেই) ঈমান আনলো না; এভাবেই (ধ্বংসের মাধ্যমে) আমি না ফরমান জাতিদের (তাদের যুলুমের) প্রতিফল দিয়ে থাকি |

১৪. অতঃপর আমি এ যমীনে (তাদের জায়গায় ) তোমাদের খলীফা করে পাঠিয়েছি, আমি যেন দেখতে পাই তোমরা কি ধরনের আচরণ করো |

১৫. (হে নবী,) যখন আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ তাদের পড়ে শোনানো হয়, তখন (তাদের মধ্যে) যারা আমার সাথে (মৃত্যুর পর কোনো রকম) দেখা সাক্ষাতের আশা করে না, তারা (ঔদ্ধত্যের সাথে তোমাকে) বলে, এছাড়া অন্য কোনো কোরআন নিয়ে এসো, কিংবা একে বদলে দাও; তুমি (এদের) বলো, আমার নিজের এমন কোনো ক্ষমতাই নেই যে, আমি একে বদলে দেবো; আমি তো তাই অনুসরণ করি যা আমার ওপর ওহী আসে, আমি যদি আমার মালিকের কোনো রকম না-ফরমানী করি, তাহলে আমি একটি মহা দিবসের (কঠিন) শাস্তির ভয় করি ।

১৬. (তুমি বলো,) আল্লাহ তায়ালা না চাইলে আমি তোমাদের ওপর এ (কোরআন) তো পাঠই করতাম না, আমি তো এ (গ্রন্থ) সম্পর্কে তোমাদের কোনো কিছু জানাতামই না, আমি তো এর আগেও তোমাদের মাঝে অনেকগুলো বয়স কাটিয়েছি, (কখনো কি আমি এমন ধরণের কোনো গ্রন্থের কথা তোমাদের বলেছি?) তোমরা কি বুঝতে পারছো না?

১৭. অতঃপর (বলো), তার চাইতে বড়ো যালেম আর কে, যে আল্লাহ তায়ালার ওপর মিথ্যা আরোপ করে কিংবা তাঁর আয়াত অস্বীকার করে; (এ ধরনের) না-ফরমান লোকেরা কখনোই সফলকাম হয় না ।

১৮. এ (মূর্খ) লোকেরা আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে এমন কিছুর উপাসনা করে, যা তাদের কোনো রকম ক্ষতি করতে পারে না, (আবার) তা তাদের কোনো রকম উপকারও করতে পারে না, তারা বলে, এগুলো হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার কাছে আমাদের সুপারিশকারী; তুমি (মোশরেকদের) বলো, তোমরা কি আল্লাহ তায়ালাকে এমন কোনো কিছুর খবর দিতে চাও, যা তিনি আসমানসমুহের মাঝে অবহিত নন এবং যমীনের মাঝেও নন; তিনি পাক পবিত্র এবং মহান, তারা যে শেরেক করে তিনি তার চাইতে অনেক ঊর্ধ্বে |

১৯. (মূলত) মানুষ ছিলো একই জাতি, অতঃপর তারা (তাদের মাঝে) মতবিরোধ সৃষ্টি করেছে; তোমার মালিকের পক্ষ থেকে (তাদের মৃত্যু পরবর্তি শাস্তির মুহূর্তটির) ঘোষণা না থাকলে কবেই সে বিষয়ের ফয়সালা হয়ে যেতো, যে বিষয় নিয়ে তারা মতবিরোধ করে |

২০. তারা (আরো) বলে, তার মালিকের কাছ থেকে তার ওপর কোনো নিদর্শন অবতীর্ণ হয় না কেন? তুমি (তাদের) বলো, গায়ের সংক্রান্ত যাবতীয় জ্ঞান তো একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্যে, অতএব (আল্লাহ তায়ালার সে গায়বী ফয়সালার জন্যে) তোমরা অপেক্ষা করো, (আর) আমিও তোমাদের সাথে (সেদিনের) প্রতীক্ষা করছি।

২১. মানুষকে দুঃখ-মসিবত স্পর্শ করার পর যখন আমি তাদের কিছুটা করুণার স্বাদ ভোগ করাই, তখন সাথে সাথেই তারা আমার রহমতের (নিদর্শনসমূহের) সাথে চালাকি শুরু করে দেয় (হে নবী), তুমি বলো, কলা-কৌশলে আল্লাহ তায়ালা সবার চাইতে বেশী তৎপর; অবশ্যই আমার ফেরেশতারা তোমাদের যাবতীয় কলাকৌশলের কথা (তোমাদের আমলনামায়) লিখে রাখে।

২২. তিনিই মহান আল্লাহ তায়ালা, যিনি তোমাদের জলে-স্থলে ভ্রমণ করান; এমনকি তোমরা যখন নৌকায় আরোহণ করো এবং এ (নৌকা)-গুলো যখন তাদের নিয়ে অনুকূল আবহাওয়ায় চলতে থাকে, তখন (নৌকার) আরোহীরা এতে (ভীষণ) আনন্দিত হয়, (হঠাৎ এক সময়) এ (নৌকা)-গুলো ঝড়বাহী বাতাসের কবলে পড়ে এবং চারদিক থেকে তাদের ওপর ঢেউ আসতে থাকে এবং তারা মনে করে, (এবার সত্যিই) এ (বাতাস ও ঢেউ) দ্বারা তারা পরিবেষ্টিত হয়ে গেছে, তখন তারা একান্ত নিষ্ঠাবান বান্দা হয়ে আল্লাহ তায়ালাকে (এই বলে) ডাকতে শুরু করে (হে আল্লাহ), যদি তুমি আমাদের এ (মহাদুর্যোগ) থেকে বাঁচিয়ে দাও তাহলে অবশ্যই আমরা তোমার শোকরগোযার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো |

২৩. অতঃপর (সত্যি সত্যিই) যখন তিনি তাদের এ (বিপর্যয়) থেকে বাঁচিয়ে দেন, তখন তারা (ওয়াদার কথা ভুলে) সাথে সাথেই অন্যায়ভাবে যমীনে না-ফরমানী শুরু করে দেয়; হে মানুষ (তোমরা শুনে রাখো), তোমাদের এ নাফরমানী তোমাদের নিজেদের জন্যেই (ক্ষতিকারক) হবে, (মূলত এ হচ্ছে) দুনিয়ার (অস্থায়ী) সহায় সম্পদ, অতঃপর তোমাদের আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে, তখন আমি তোমাদের বলে দেবো, (দুনিয়ার জীবনে) তোমরা (কে) কি করতে।

২৪. এ পার্থিব জীবনের উদাহরণ (হচ্ছে), যেমন আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করলাম, যা দ্বারা অতঃপর যমীনের গাছপালা ঘন সন্নিবৃষ্টি হয়ে উদগত হলো, যা থেকে মানুষ ও জন্তু-জানোয়াররা (তাদের) আহার সংগ্রহ করলো; এরপর (একদিন) যখন যমীন তার সৌন্দর্যের রূপ ধারণ করলো এবং (আপন সৌন্দর্যে) সে শোভিত হয়ে উঠলো, তখন (এসব দেখে) তার (যমীনের) মালিক মনে করলো, তারা বুঝি এর (ফসল ভোগ করার) ওপর (এখন সম্পূর্ণ) ক্ষমতাবান (হয়ে গেছে, এ সময়) হঠাৎ করে রাতে কিংবা দিনে আমার (আযাবের) ফয়সালা তাদের ওপর আপতিত হলো, ফলে আমি তাদের এমনভাবে নির্মূল করে দিলাম যেন গতকাল ( পর্যন্ত এখানে) তার কোনো অস্তিত্বই ছিলো না; এভাবেই আমি আমার আয়াতসমূহ সেসব জাতির জন্যে খুলে খুলে বর্ণনা করি, যারা (এ সম্পর্কে) চিন্তা-ভাবনা করে।

২৫. (হে মানুষ, তোমরা এ পার্থিব জীবনের ধোকায় পড়ে আছো, অথচ) আল্লাহ তায়ালা তোমাদের (চিরস্থায়ী এক) শান্তির নিবাসের দিকে ডাকছেন; তিনি যাকে ইচ্ছা করেন তাকে সহজ-সরল পথে পরিচালিত করেন ।

২৬. যারা ভালো কাজ করেছে, (যাবতীয়) কল্যাণ তো (থাকবে) তাদের জন্যে এবং (থাকবে তার চাইতেও) বেশী; সেদিন তাদের চেহারা কোনো কালিমা ও হীনতা দ্বারা আচ্ছন্ন থাকবে না; তারাই হবে জান্নাতের অধিবাসী, তারা সেখানে থাকবে চিরদিন ।

২৭. (অপরদিকে) যারা মন্দ কাজ করেছে, (তাদের) মন্দের প্রতিফল মন্দের সাথেই হবে, অপমান তাদের আচ্ছন্ন করে ফেলবে; সেদিন আল্লাহর (আযাব) থেকে তাদের রক্ষাকারী কেউই থাকবে না, (তাদের চেহারা এমনি কালো হবে) যেন রাতের অন্ধকার ছিঁড়ে (তার) একটি টুকরো তাদের মুখের ওপর ছেয়ে দেয়া হয়েছে, এরা হচ্ছে জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরদিন থাকবে |

২৮. (হে নবী, তুমি তাদের সেদিনের ব্যাপারে সাবধান করো,) যেদিন আমি তাদের সবাইকে আমার সামনে একত্রিত করবো, অতঃপর যারা আমার সাথে শরীক করেছে তাদের আমি বলবো, তোমরা এবং যাদের তোমরা শরীক করেছো স্ব স্ব স্থানে অবস্থান করো, এরপর আমি তাদের (এক দলকে আরেক দল থেকে) আলাদা করে দেবো এবং যাদের তারা শরীক করেছিলো তারা বলবে, না, তোমরা তো কখনো আমাদের উপাসনা করতে না,

২৯. (আজ) আল্লাহ তায়ালাই আমাদের এবং তোমাদের মাঝে সাক্ষ্য প্রদানকারী হিসেবে যথেষ্ট হবেন, আমরা তোমাদের উপাসনার ব্যাপারে (আসলেই) গাফেল ছিলাম |

৩০. এভাবেই সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি (নিজের কর্মফল যা সে করে এসেছে, (পুরোপুরিই) জানতে পারবে এবং সবাইকে তাদের সত্যিকারের মালিক আল্লাহ তায়ালার কাছে ফিরিয়ে নেয়া হবে, দুনিয়ায় তারা যেসব মিথ্যা ও অলীক কথাবার্তা (আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে) উদ্ভাবন করতো, (নিমিষেই) তা তাদের কাছ থেকে হারিয়ে যাবে ।

৩১. (হে নবী,) তুমি বলো, তিনি কে যিনি তোমাদের আসমান ও যমীন থেকে জীবিকা সরবরাহ করেন, অথবা (তোমাদের) শোনা ও দেখার ক্ষমতা কে নিয়ন্ত্রণ করেন? কে (আছে এমন) যিনি জীবিতকে মৃত থেকে, আবার মৃতকে জীবিত থেকে বের করে আনেন! কে (আছে এমন), যিনি (এসব কিছুর) পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন; (তাদের জিজ্ঞেস করলে) তারা সাথে সাথেই বলে ওঠবে, (হ্যাঁ, অবশ্যই) আল্লাহ, তুমি (তাদের) বলো, (যদি তাই হয়) তাহলে (সত্য অস্বীকার করার পরিণামকে কি) তোমরা ভয় করবে না?

৩২. তিনিই আল্লাহ তায়ালা, তিনিই তোমাদের আসল মালিক, সত্য আসার পর (তাঁকে না মানা) গোমরাহী নয় তো আর কি? সুতরাং (তাঁকে বাদ দিয়ে বলো), কোন দিকে তোমাদের ধাবিত করা হচ্ছে?

৩৩. এভাবেই যারা নাফরমানী করেছে তাদের ওপর তোমার মালিকের সে কথাই সত্য বলে প্রমাণিত হলো যে, এরা কখনো ঈমান আনবে না |

৩৪. তুমি (তাদের আরো) বলো, তোমাদের (বানানো) এসব শরীকদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে, যে প্রথম বার বানাতে পেরেছিলো, অতঃপর (মৃত্যুর পর) আবারও তা সে তৈরী করতে পারবে! তুমি বলো, আল্লাহ তায়ালাই সৃষ্টিকে প্রথম অস্তিত্ব প্রদান করেন, অতঃপর দ্বিতীয়বার তিনিই তাতে জীবন দান করেন, (এরপরও) তোমাদের কেন (বার বার সত্য থেকে) বিচ্যুত করা হচ্ছে?

৩৫. (তাদের আরো) বলো, তোমাদের বানানো শরীকদের মধ্যে এমন কে আছে যে মানুষকে সঠিক পথ দেখাতে পারে, (তুমি) বলো, (হাঁ) আল্লাহ তায়ালাই সঠিক পথ দেখাতে পারেন; যিনি সঠিক পথ দেখান তিনি অনুসরণের বেশী যোগ্য, না সে ব্যক্তি যে নিজেই কোনো পথের সন্ধান পায় না যতোক্ষণ না তাকে (সে) পথের সন্ধান দেয়া হয়, তোমাদের এ কি হলো, কেমন ধরনের ফয়সালা করো তোমরা?

৩৬. তাদের অধিকাংশ ব্যক্তিই নিজেদের আন্দায অনুমানের অনুসরণ করে, আর সত্যের পরিবর্তে আন্দায অনুমান তো কোনো কাজে আসে না; আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই ওদের কর্মকান্ড সম্পর্কে পূর্ণাংগ ওয়াকেফহাল রয়েছেন |

৩৭. এ কোরআন এমন (কোনো গ্রন্থ) নয় যে, আল্লাহর (ওহী) ব্যতিরেকে (কারো ইচ্ছামাফিক একে) গড়ে দেয়া যাবে, বরং এ (গ্রন্থ) সেসব গ্রন্থের সত্যবাদিতার সাক্ষ্য প্রদান করে যা এর আগে নাযিল হয়েছিলো, এতে কোনোরকম সন্দেহ নেই যে, এটা (হচ্ছে) সৃষ্টিকূলের মালিক আল্লাহ তায়ালার সত্য বিধানসমূহের বিশদ ব্যাখ্যা ।

৩৮. তারা কি একথা বলে, এ ব্যক্তি (মোহাম্মদ) এ (গ্রন্থ)-টি রচনা করে নিয়েছে; (হে নবী) তুমি (এদের) বলো, তোমরা তোমাদের দাবীতে যদি সত্যবাদী হও, তাহলে তোমরাও এমনি ধরনের একটি সূরা বানিয়ে নিয়ে এসো এবং (এ ব্যাপারে) আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর যাদের যাদের তোমরা ডাকতে চাও ডেকে (তাদেরও সাহায্য) নাও |

৩৯. (আসল কথা হচ্ছে,) যে বিষয়টিকেই তারা তাদের জ্ঞান দিয়ে আয়ত্ত করতে পারলো না, কিংবা (মানবীয় জ্ঞান বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে) যার ব্যাখ্যা এখনো তাদের পর্যন্ত পৌঁছয়নি তারা তাকেই অস্বীকার করে বসলো; তাদের পূর্ববর্তী মানুষরাও এভাবে অস্বীকার করেছিলো, (আজ) দেখো, (এ অস্বীকারকারী) যালেমদের পরিণাম কি হয়েছে।

৪০. তাদের মধ্যে কিছু লোক এ (গ্রন্থের) ওপর ঈমান আনবে, আবার কিছু আছে যারা এতে ঈমান আনবে না; (জেনে রেখো,) তোমার মালিক (কিন্তু এ) বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের ভালো করেই জানেন |

৪১. (এতো বলা-কওয়া সত্ত্বেও) তারা যদি তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতেই থাকে, তাহলে তুমি (তাদের) বলে দাও (দেখো), আমার কাজকর্মের দায়িত্ব আমার ওপর, আর তোমাদের কাজকর্মের দায়িত্ব তোমাদের ওপর, আমি যা কিছু করছি তার জন্যে তোমরা দায়িত্বমুক্ত, আবার তোমরা যা করো তার জন্যেও আমি দায়িত্বমুক্ত |

৪২. (হে নবী,) এদের মধ্যে কিছু লোক এমন আছে, যারা তোমার দিকে কান পেতে রাখে; তুমি কি বধিরকে (আল্লাহর কালাম) শোনাবে? যদিও তারা এর কিছুই বুঝতে না পারে!

৪৩. (আবার) ওদের মধ্যে কেউ কেউ আছে যারা তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে; (কিন্তু) তুমি কি অন্ধকে পথ দেখাবে? যদিও তারা নিজেরা এর কিছুই দেখতে না পায় !

৪৪. নিসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা মানুষের ওপর কোনো রকম যুলুম করেন না, (বরং আল্লাহর অবাধ্য হয়ে) মানুষেরা নিজেরাই নিজেদের ওপর যুলুম করে |

৪৫. যেদিন তিনি তাদের সবাইকে একত্রিত করবেন (সেদিন তাদের মনে হবে), যেন তারা দুনিয়ায় দিনের একটি ক্ষণমাত্র কাটিয়ে এসেছে, (তখন) তারা একজন আরেকজনকে চিনতে পারবে; ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা, যারা আল্লাহর সামনা-সামনি হওয়াকে অস্বীকার করেছিলো, (আসলে) তারা কখনোই হেদায়াতপ্রাপ্ত ছিলো না ।

৪৬. আমি ওদের কাছে যে (বিষয়ের) ওয়াদা করেছি, তার কিছু কিছু (বিষয়) যদি আমি তোমাকে দেখিয়ে দেই, অথবা (এর আগেই) যদি আমি তোমাকে (দুনিয়া থেকে) উঠিয়ে নেই, (এ উভয় অবস্থায়) তাদের আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে, অতঃপর এরা যা কিছু (দুনিয়ায়) করতো তার ওপর আল্লাহ তায়ালাই (একক) সাক্ষী হবেন ।

৪৭. প্রত্যেক উম্মতের জন্যেই একজন রসুল আছে, অতঃপর যখনি তাদের কাছে তাদের রসুল এসে যায়, তখন (তাদের সাথে আল্লাহ তায়ালার) সিদ্ধান্ত করার কাজটি ইনসাফের সাথে সম্পন্ন হয়ে যায়, তাদের ওপর কখনো যুলুম করা হবে না |

৪৮. এরা (ঔদ্ধত্য দেখিয়ে) বলে (হে মুসলমানরা), তোমরা যদি সত্যবাদী হও তাহলে বলো, কবে তোমাদের (সে) আযাবের ওয়াদা ফলবে?

৪৯. তুমি বলো (এটা বলা আমার বিষয় নয়), আল্লাহ তায়ালা যা চান তা ব্যতিরেকে আমি তো আমার নিজস্ব ভালো-মন্দের অধিকারও রাখি না (আসল কথা হচ্ছে), প্রত্যেক জাতির জন্যে (আযাব ও ধ্বংসের) একটি দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করা আছে; তাদের সে ক্ষণটি যখন আসবে তখন (তাদের ব্যাপারে) এক মুহূর্তকাল সময়ও দেরী করা হবে না এবং তাদের দিনক্ষণ আগেও নিয়ে আসা হবে না |

৫০. তুমি (এদের আরো) বলো, তোমরা কি ভেবে দেখেছো, যদি তোমাদের ওপর (আল্লাহর) আযাব রাতে কিংবা দিনের বেলায় এসে পতিত হয়, তাহলে আর কোন বিষয় নিয়ে না-ফরমান লোকেরা তাড়াহুড়ো করবে (বলো)?

৫১. অতঃপর যখন (সত্যিই) একদিন এ বিষয়টি ঘটবে তখন কি তোমরা এটা বিশ্বাস করবে; তোমাদের বলা হবে (হাঁ), এখন (তো আযাব এসেই গেলো, অথচ) তোমরা এর জন্যেই তাড়াহুড়ো করছিলে।

৫২. অতঃপর যালেমদের বলা হবে, এবার চিরস্থায়ী (জাহান্নামের) আযাবের স্বাদ ভোগ করো, (দুনিয়ার জীবনে) তোমরা যা কিছু অর্জন করেছো, (এখন) তোমাদের শুধু তারই বিনিময় দেয়া হবে ।

৫৩. (হে নবী,) এরা তোমার কাছে জানতে চায়, (আযাব সম্পর্কিত) সে কথা আসলেই কি ঠিক? বলো, হাঁ, আমার মালিকের শপথ, এটা আমোঘ সত্য; (জেনো রেখো, প্রতিশোধ নেয়ার ব্যাপারে) তোমরা কোনোদিনই তাঁকে অক্ষম করে দিতে পারবে না |

৫৪. যদি প্রতিটি যালেম ব্যক্তির কাছে (সেদিন) যমীনের সমুদয় সম্পদ এসে জমা হয়, তাহলে সে তার সব কিছু মুক্তিপণ হিসাবে ব্যয় (করে আযাব থেকে বাঁচার চষ্টো) করবে; যখন এ (যালেম) মানুষরা (জাহান্নামের) আযাব দেখবে তখন তারা মনে মনে ভারী অনুতাপ করবে (কিন্তু তখন তা কোনোই কাজে আসবে না), সম্পূর্ণ ইনসাফের সাথেই তাদের বিচার মীমাংসা সম্পন্ন হবে এবং তাদের ওপর বিন্দুমাত্র যুলুমও করা হবে না |

৫৫. মনে রেখো, আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে তা সব আল্লাহ তায়ালার জন্যেই; জেনে রেখো অবশ্যই আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা সত্য, কিন্তু অধিকাংশ লোকই তা জানে না |

৫৬. তিনিই জীবন দান করেন, তিনিই মৃত্যু ঘটান এবং (মৃত্যুর পর) তোমাদের সবাইকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে |

৫৭. হে মানুষ, তোমাদের কাছে তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে নসীহত (বিশিষ্ট কেতাব) এসেছে, (এটা) মানুষের অন্তরে যেসব ব্যাধি রয়েছে তার নিরাময় এবং মোমেনদের জন্যে হেদায়াত ও রহমত ।

৫৮. (হে নবী,) তুমি বলো, মানুষের উচিত আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর রহমতের কারণে আনন্দ প্রকাশ করা, কারণ তারা যা কিছু (জ্ঞান ও সম্পদ) জমা করেছে, এটা তার চাইতে অনেক ভালো |

৫৯. তুমি (এদের) বলো, তোমরা কি কখনো (একথা) চিন্তা করে দেখেছো, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্যে যে রেযেক নাযিল করেছেন তার মধ্য থেকে কিছু অংশকে তোমরা হারাম আর কিছু অংশকে হালাল করে নিয়েছো; (তুমি এদের আরো) বলো, এসব হালাল-হারামের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা কি তোমাদের কোনো অনুমতি দিয়েছেন, না তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করছো!

৬০. যারা আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ করে, তাদের শেষ বিচারের দিন সম্পর্কে ধারণা কি এই (এটা কখনো আসবেই না); নিসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা বড়ো অনুগ্রহশীল (তাই তিনি তাদের অবকাশ দিয়ে রেখেছেন), কিন্তু অধিকাংশ মানুষই (এ জন্যে) আল্লাহর শোকর আদায় করে না |

৬১. (হে নবী,) তুমি যে কাজেই থাকো না কেন এবং সে (কাজ) সম্পর্কে কোরআন থেকে যা কিছু তেলাওয়াত করো না কেন (তা আমি জানি, হে মানুষেরা), তোমরা যে কোনো কাজ করো, কোনো কাজে তোমরা যখন প্রবৃত্ত হও, আমি তার ব্যাপারে তোমাদের ওপর সাক্ষী হয়ে থাকি, তোমার মালিকের (দৃষ্টি) থেকে একটি অণু পরিমাণ জিনিসও গোপন থাকে না, আসমানে ও যমীনে এর চাইতে ছোট কিংবা এর চাইতে বড়ো কোনো কিছুই নেই যা এ সুস্পষ্ট গ্রন্থে লিপিবদ্ধ নেই |

৬২. জেনে রেখো, (কেয়ামতের দিন) আল্লাহ তায়ালার বন্ধুদের জন্যে (কোনো) ভয় নেই, (সেদিন) তারা চিন্তিতও হবে না |

৬৩. এরা হচ্ছে সে সব লোক, যারা (আল্লাহর ওপর) ঈমান এনেছে এবং (তাঁকে ভয় করেছে ।

৬৪. এ (ধরনের) লোকদের জন্যে দুনিয়ার জীবনে ( যেমন) সুসংবাদ রয়েছে, (তেমনি) পরকালের জীবনেও (রয়েছে সুসংবাদ); আল্লাহ তায়ালার বাণীর কোনো রদবদল হয় না; আর (সত্যিকার অর্থে) এটাই হচ্ছে সে মহাসাফল্য ।

৬৫. (হে নবী,) তোমাকে তাদের কথা যেন কোনো দুঃখ না দেয়। নিশ্চয়ই মান-ইজ্জত সবই আল্লাহ তায়ালার করায়ত্তে, তিনি সবকিছু শোনেন, সবকিছু জানেন |

৬৬. জেনে রেখো, যা কিছু আসমানে আছে, (আবার) যা কিছু আছে যমীনে, সবই আল্লাহর (অনুগত); যারা আল্লাহ তায়ালা ছাড়া (কল্পিত) শরীকদের ডাকে তারা তো শুধু (কিছু আন্দায ) অনুমানেরই অনুসরণ করে মাত্র! তারা মুলত মিথ্যাবাদী ছাড়া আর কিছুই নয় |

৬৭. (হে মানুষ,) তিনিই মহান আল্লাহ তায়ালা, যিনি তোমাদের জন্যে রাত বানিয়েছেন, যাতে করে তোমরা তাতে বিশ্রাম গ্রহণ করতে পারো, আর দিনকে বানিয়েছেন আলোক (-উজ্জ্বল), অবশ্যই এতে (আল্লাহ তায়ালার মহত্ত্বের) অনেক নিদর্শন রয়েছে সে সম্প্রদায়ের জন্যে, যারা (নিষ্ঠার সাথে) শোনে ।

৬৮. তারা বলে, আল্লাহ তায়ালা (নিজের একটি) ছেলে গ্রহণ করেছেন, (অথচ) আল্লাহ তায়ালা মহাপবিত্র; তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ, অভাবমুক্ত; আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তাঁর; তোমাদের কাছে এ (দাবীর) পক্ষে কোনো দলিল-প্রমাণও নেই; তোমরা কি আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে এমন সব কথা বলে বেড়াচ্ছো, যে বিষয়ে তোমরা কিছুই জানো না |

৬৯. (হে নবী,) তুমি বলো, যারা আল্লাহ তায়ালার ওপর মিথ্যা আরোপ করে, তারা কখনোই সফলকাম হবে না |

৭০. (এ মিথ্যাচার হচ্ছে) পার্থিব (জীবনের একটা) সম্পদ, পরিশেষে তাদের আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে, অতঃপর আমি তাদের কুফরী করার জন্যে এক কঠোর আযাবের স্বাদ গ্রহণ করাবো |

৭১. (হে নবী,) ওদের কাছে তুমি নুহের কাহিনী শোনাও | যখন সে তার জাতিকে বলেছিলো, হে আমার জাতি, যদি তোমাদের ওপর আমার অবস্থিতি ও আল্লাহর আয়াতসমূহ দ্বারা আমার উপদেশ (প্রদান) খুব দুঃসহ মনে হয়, তবে (শোনে রাখো), আমি (সম্পূর্ণরূপে) আল্লাহর ওপর ভরসা করি, অতঃপর তোমরা যাদের আমার সাথে শরীক বানাচ্ছো, তাদের (সবাইকে) একত্রিত করে (আমার বিরুদ্ধে তোমাদের) পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে নাও (দেখে নাও), যেন সে পরিকল্পনা (-এর কোনো বিষয় তোমাদের দৃষ্টির) আড়ালে না থাকে, অতঃপর আমার সাথে (তোমাদের যা করার) তা করে ফেলো এবং আমাকে কোনো অবকাশও তোমরা দিয়ো না |

৭২. (হাঁ,) যদি তোমরা (আমার থেকে) মুখ ফিরিয়ে নাও (তাহলে আমার ক্ষতি হবে না), আমি তো তোমাদের কাছ থেকে (এ জন্যে) কোনো পারিশ্রমিক দাবী করিনি; আমার পারিশ্রমিক সে তো আমার আল্লাহ তায়ালার কাছে, (তাঁর পক্ষ থেকেই) আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে আমি যেন তাঁর অনুগত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাই।

৭৩. অতঃপর (এতো বলা-কওয়া সত্ত্বেও) লোকেরা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করলো, তখন আমি তাকে এবং তার সাথে যারা নৌকায় (আরোহী) ছিলো, তাদের (তুফান থেকে) উদ্ধার করেছি এবং (যাদের বাঁচিয়ে রেখেছিলাম) আমি তাদের (পূর্ববর্তী লোকদের) প্রতিনিধি বানিয়ে দিয়েছি, ( পরিশেষে) যারা আমার নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করেছে, তাদের আমি (মহাপ্লাবনে) ডুবিয়ে দিয়েছি, অতঃপর (হে নবী), তুমি (চেয়ে) দেখো, তাদের কী ভয়াবহ পরিণাম হয়েছে, যাদের (বার বার আল্লাহর আযাবের) ভয় দেখানো হয়েছে ।

৭৪. আমি তার পর অনেক (কয়জন) রসুলকে তাদের (নিজ নিজ) জাতির কাছে পাঠিয়েছি, তারা (সবাই) সুস্পষ্ট প্রমাণসমূহ নিয়ে নিজ জাতির কাছে এসেছে, কিন্তু এমনটি হয়নি যে, (আগের) লোকেরা ইতিপূর্বে যা অস্বীকার করেছিলো তার ওপর এরা ঈমান আনবে; এভাবে যারা (না-ফরমানীতে) সীমালংঘন করে, তাদের দিলে আমি মোহর মেরে দেই|

৭৫. তাদের পর আমি আমার সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে মুসা ও হারুনকে ফেরাউন এবং তার পারিষদবর্গের কাছে পাঠিয়েছি, কিন্তু তারা সবাই অহংকার করলো, (আসলে) তারা ছিলো বড়োই না-ফরমান জাতি |

৭৬. আমার পক্ষ থেকে সত্য যখন তাদের কাছে এলো, তখন ওরা বললো, নিশ্চয়ই এ হচ্ছে সুস্পষ্ট যাদু!

৭৭. মুসা বললো, তোমরা কি সত্য সম্পর্কে এসব (বাজে কথা বলছো, যখন তা তোমাদের কাছে (প্রমাণসহ) এসে গেছে! (তোমরা কি মনে করো) এটা আসলেই যাদু? অথচ যাদুকররা কখনোই সফলকাম হয় না |

৭৮. তারা বললো, তোমরা কি এ উদ্দেশেই আমাদের কাছে এসেছো যে, যা কিছুর ওপর আমরা আমাদের বাপ- দাদাদের পেয়েছি, তা থেকে তোমরা আমাদের বিচ্যুত করে দেবে এবং (আমাদের এ) ভূখন্ডে তোমাদের দু' (ভাই)-য়ের প্রতিপত্তি (প্রতিষ্ঠিত) হয়ে যাবে (না, তা কিছুতেই হবে না); আমরা তোমাদের দু'জনের ওপর কখনো ঈমান আনবো না ।

৭৯. (এবার) ফেরাউন (নিজের দলবলকে) বললো, তোমরা আমার কাছে (রাজ্যের) সব সুদক্ষ যাদুকরদের নিয়ে এসো |

৮০. অতঃপর (ফেরাউনের নির্দেশে) যাদুকররা যখন এসে হাযির হলো, তখন মুসা তাদের (লক্ষ্য করে) বললো, তোমাদের যা নিক্ষেপ করার তা তোমরা নিক্ষেপ করো ।

৮১. তারা যখন (তাদের যাদুর বাণ) নিক্ষেপ করলো, তখন মুসা বললো, তোমরা যা নিয়ে এসেছো তা (হচ্ছে আসলেই) যাদু; (দেখবে) অচিরেই আল্লাহ তায়ালা তা ব্যর্থ করে দেবেন; আল্লাহ তায়ালা কখনো ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের কাজকর্ম শুধরে দেন না।

৮২. আল্লাহ তায়ালা স্বীয় বাণী দ্বারা সত্যকে সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করেন, যদিও না-ফরমান মানুষরা একে খুবই অপ্রীতিকর মনে করে ।

৮৩. ফেরাউন ও তার পারিষদবর্গের ভয়ে মুসার ওপর তার জাতির কতিপয় কিশোর (যুবক) ছাড়া অন্য কোনো লোক ঈমান আনেনি, (অবশ্যই) ফেরাউন ছিলো যমীনের মাঝে অহংকারী (বাদশাহ) এবং (মারাত্মক) সীমালংঘনকারী |

৮৪. মুসা (তার ওপর যারা ঈমান এনেছে তাদের) বললো, হে আমার জাতি, তোমরা যদি সত্যিই মুসলমান হয়ে থাকো, তাহলে (অধৈর্য না হয়ে) যিনি তোমাদের মালিক তোমরা তাঁর ওপর ভরসা করো, যদি তোমরা আল্লাহতে আত্মসমর্পণকারী হও |

৮৫. (মুসার কথায়) অতঃপর তারা বললো (হাঁ), আমরা আল্লাহর ওপরই ভরসা করি (এবং আমরা বলি), হে আমাদের মালিক, তুমি আমাদের যালেম সম্প্রদায়ের অত্যাচারের শিকারে পরিণত করো না | 'না।

৮৬. এবং তোমার একান্ত রহমত দ্বারা তুমি আমাদের (ফেরাউন ও তার) কাফের সম্প্রদায়ের হাত থেকে মুক্তি দাও |

৮৭. আমি (এরপর) মুসা ও তার ভাই (হারুন)-এর কাছে ওহী পাঠালাম, তোমরা তোমাদের জাতির (লোকদের) জন্যে মিসরেই ঘরবাড়ি বানাও এবং তোমাদের ঘরগুলোকে কেবলা (-মুখী করে) বানাও এবং (তাতে) তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা করো; (সর্বোপরি ) ঈমানদারদের (মুক্তির সময় ঘনিয়ে এসেছে মর্মে তাদের) সুসংবাদ দাও ।

৮৮. মুসা (আল্লাহ তায়ালাকে) বললো, হে আমাদের মালিক, নিসন্দেহে তুমি ফেরাউন ও তার (মন্ত্রী) পরিষদকে দুনিয়ার জীবনে সৌন্দর্য (-মন্ডিত উপকরণ) এবং ধন-সম্পদ দান করে রেখেছো, (এটা কি এ জন্যে) হে আমাদের মালিক, তারা (এ দিয়ে জনপদের মানুষকে) তোমার পথ থেকে গোমরাহ করে দেবে? হে আমাদের মালিক, তাদের (সমুদয়) ধন-সম্পদ বিনষ্ট করে দাও, তাদের অন্তরসমূহকে (আরো) শক্ত করে দাও, (মূলত) তারা একটা কঠিন আযাব (নাযিল হতে) না দেখলে ঈমান আনবে না ।

৮৯. আল্লাহ তায়ালা বললেন, (হাঁ) তোমাদের উভয়ের দোয়াই কবুল করা হয়েছে, অতএব তোমরা (দ্বীনের ওপর ) সুদৃঢ় হয়ে (দাঁড়িয়ে) থাকো, তোমরা দু'জন কখনো সেসব লোকের (কথার) অনুসরণ করো না, যারা কিছুই জানে না।

৯০. অতঃপর (ঘটনা এমন হলো), আমি বনী ইসরাঈলদের সাগর পার করিয়ে দিলাম, এরপর ফেরাউন এবং তার সৈন্য-সামন্ত বিদ্বেষপরায়ণতা ও সীমালংঘন করার জন্যে তাদের পিছু নিলো; এমনকি যখন (দলবলসহ) তাকে সাগরের অথৈ ঢেউ ডুবিয়ে দিতে লাগলো, (তখন) সে বললো, (এখন) আমি ঈমান আনলাম, যে মাবুদের ওপর বনী ইসরাঈল ঈমান এনেছে, তিনি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মাবুদ নেই, আমিও (তাঁর) অনুগতদের একজন |

৯১. (আমি বললাম,) এখন (ঈমান আনছো ? অথচ (একটু) আগেই তুমি না-ফরমানী করছিলে এবং (যমীনে) তুমি ছিলে বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের অন্যতম (নেতা) |

৯২. আজ আমি তোমাকে (অর্থাৎ) তোমার দেহকেই বাঁচিয়ে রাখবো, যাতে করে তুমি (তোমার এ দেহ) পরবর্তী (প্রজন্মের লোকদের) জন্যে একটা নিদর্শন হয়ে থাকতে পারো; অবশ্য অধিকাংশ মানুষই আমার (এসব ) নিদর্শনসমূহ থেকে সম্পূর্ণ (অজ্ঞ ও) বেখবর |

৯৩. (ফেরাউনকে ডুবিয়ে মারার পর) আমি বনী ইসরাঈলের লোকদের (বরকতপূর্ণ ও) উৎকৃষ্ট আবাসভূমিতে বসবাস করালাম এবং তাদের জন্যে উত্তম জীবনোপকরণের ব্যবস্থা করলাম, অতঃপর তারা (নিজেদের মধ্যে) মতবিরোধ শুরু করে দিলো, এমনকি যখন (দ্বীনের সঠিক) জ্ঞান তাদের কাছে এসে পৌঁছুলো (তারপরও তারা মতবিরোধ থেকে ফিরে এলো না); অবশ্যই তোমার মালিক কেয়ামতের দিন তাদের সেসব বিষয়ের ফয়সালা করে দেবেন, যে বিষয়ে তারা (নিজেদের মাঝে) বিভেদ করতো।

৯৪. (হে নবী,) আমি তোমার ওপর যে কেতাব নাযিল করেছি, তাতে (বর্ণিত কোনো ঘটনার ব্যাপারে) যদি তোমার (মনে) কোনো সন্দেহ থাকে, তাহলে সেসব লোকের কাছে (এসব ঘটনা) জিজ্ঞেস করো, যারা তোমার আগে (তাদের ওপর নাযিল করা) কেতাব পড়ে আসছে, অবশ্যই তোমার কাছে তোমার মালিকের কাছ থেকে সত্য এসেছে, তাই তুমি কখনো সন্দেহবাদীদের (দলে) শামিল হয়ো না ।

৯৫. আর তুমি তাদের দলেও শামিল হয়ো না যারা আল্লাহর আয়াতসমূহ মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, (এরূপ করলে) তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে ।

৯৬. (হে নবী,) অবশ্যই তাদের ব্যাপারে তোমার মালিকের কথা (সত্য) প্রমাণিত হয়ে গেছে, তারা কখনো ঈমান আনবে না ।

৯৭. এমনকি তাদের কাছে আল্লাহর প্রত্যেকটি নিদর্শন এসে পৌঁছলেও (তারা ঈমান আনবে এমন) নয়, যতোক্ষণ না তারা কঠিন আযাব (নিজেদের চোখে) দেখতে পাবে |

৯৮. ইউনুস (নবীর) সম্প্রদায় ব্যতীত অন্য (কোনো) জনপদ এমন ছিলো না, যে (জনপদ আযাব দেখে) ঈমান এনেছে এবং তার এ ঈমান তার কোনো উপকার করতে পেরেছে; তারা যখন আল্লাহর ওপর ঈমান আনলো, তখন আমি তাদের এ পার্থিব জীবনের অপমানকর আযাব তাদের কাছ থেকে সরিয়ে নিলাম এবং তাদের আমি এক (বিশেষ) সময় পর্যন্ত জীবনের (উপায়) উপকরণও দান করলাম |

৯৯. (হে নবী,) তোমার মালিক চাইলে এ যমীনে যতো মানুষ আছে তারা সবাই ঈমান আনতো; (কিন্তু তিনি তা চাননি, তাছাড়া) তুমি কি মানুষদের জোরজবরদস্তি করবে যেন, তারা সবাই মোমেন হয়ে যায়!

১০০. কোনো মানুষেরই এ সাধ্য নেই যে, আল্লাহর অনুমতি ব্যতিরেকে সে ঈমান আনবে; যারা (ঈমানের রহगा ) বুঝতে পারে না, আল্লাহ তায়ালা এভাবেই তাদের ওপর (কুফর ও শেরেকের) কলুষ লাগিয়ে দেন ।

১০১. (হে নবী,) তুমি বলো, তোমরা দেখো, আসমানসমূহ ও যমীনে কি কি জিনিস রয়েছে; কিন্তু যারা ঈমানই আনবে না তাদের জন্যে (আল্লাহর এসব) নিদর্শন ও (পরকালের) সাবধানবাণী কোনোই উপকারে আসে না ।

১০২. তারাও কি সে ধরনের কোনো দিনের অপেক্ষা করছে, যে ধরনের (অপমানকর) দিন তাদের আগের লোকদের ওপর এসেছিলো; (যদি তাই হয় তাহলে) তুমি বলো, তোমরা (সেদিনের) অপেক্ষা করো, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করতে থাকবো |

১০৩. অতঃপর (যখন আযাবের সময় আসে তখন) আমি আমার রসুলদের এভাবেই (সে আযাব থেকে) বাঁচিয়ে দেই এবং তাদেরও (বাঁচিয়ে দেই, যারা) ঈমান আনে, আমি আমার ওপর এটা কর্তব্য করে নিয়েছি যে, আমি মোমেনদের (আযাব থেকে) উদ্ধার করবো |

১০৪. (হে নবী,) তুমি (লোকদের) বলো, হে মানুষরা, তোমরা যদি আমার (আনীত) দ্বীনে কোনো সন্দেহ করো (তাহলে শুনে রাখো), আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য যাদের তোমরা এবাদাত করো, আমি তাদের এবাদাত করি না, আমি তো বরং তাঁর (মহান সত্তার) এবাদাত করি, যিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটান, আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে আমি যেন মোমেনদের অন্তর্ভুক্ত থাকি |

১০৫. (আমাকে বলা হয়েছে) তুমি আল্লাহর দ্বীনের জন্যে একনিষ্ঠভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করো এবং কখনো তুমি মোশরেকদের দলে শামিল হয়ো না ।

১০৬. (আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে,) তুমি কখনো আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে এমন কাউকে ডেকো না, যে তোমার কোনো কল্যাণ (যেমন) করতে পারে না, (তেমনি) তোমার কোনো অকল্যাণও সে করতে পারে না, (এ সত্ত্বেও) যদি তুমি অন্যথা করো, তাহলে অবশ্যই তুমি যালেমদের মধ্যে গণ্য হবে ।

১০৭. যদি আল্লাহ তায়ালা তোমাদের কোনো দুঃখ-কষ্ট দেন তাহলে তিনি ছাড়া অন্য কেউই নেই তা দুরীভূত করার, (আবার) তিনি যদি (মেহেরবানী করে) তোমার কোনো কল্যাণ চান তাহলে তাঁর সে অনুগ্রহ রদ করারও কেউ নেই; তিনি তাঁর বান্দাদের যাকে চান তাকেই কল্যাণ পৌঁছান; আল্লাহ তায়ালা বড়োই ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।

১০৮. (হে নবী,) তুমি বলো, হে মানুষ, তোমাদের কাছে তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে সত্য (দ্বীন) এসেছে; অতএব যে হেদায়াতের পথ অবলম্বন করবে সে তো তার নিজের ভালোর জন্যেই হেদায়াতের পথে চলবে, আর যে গোমরাহ থেকে যাবে সে তো গোমরাহীর ওপর চলার কারণেই গোমরাহ হয়ে যাবে, আমি তো তোমাদের ওপর কর্মবিধায়ক নই (যে, জোর করে তোমাদের গোমরাহী থেকে বের করে আনবো) |

১০৯. (হে নবী,) তোমার ওপর যে হেদায়াত নাযিল করা হয়েছে তুমি তার অনুসরণ করো এবং ধৈর্য ধারণ করো, যে পর্যন্ত আল্লাহ কোনো ফয়সালা না করেন, (কেননা) তিনিই হচ্ছেন সর্বোত্তম ফয়সালাকারী ।


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url