আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা আত তাওবার বাংলা অনুবাদ | সূরা আত তাওবা | Surah At-Taubah | سورة التوبة


সূরা আত তাওবার বাংলা অনুবাদ


সূরা আত তাওবা, মদীনায় অবতীর্ণ আয়াত ১২৯, রুকু ১৬

সূরা আত তাওবা


(সূরা আত তাওবার শুরুতে বিসমিল্লাহ নাযিল হয়নি। তাই আল কুরআনের ধারাবাহিক পাঠের সময় সূরা আত তাওবার শুরুতে  বিসমিল্লাহ পড়া নিষেধ। তবে কেউ যদি কুরআন তেলাওয়াত শুরুই করেন সূরা আত তাওবা থেকে বা সূরা আত তাওবার মাঝখানের কোন আয়াত থেকে তাহলে তিনি বিসমিল্লাহ পাঠ করবেন, কেননা আর কুরআন তেলাওয়াতের শুরুতে বিসমিল্লাহ পাঠ করতে হবে )

১. (হে মুসলমানরা,) মোশরেকদের সাথে তোমরা যে (সন্ধি) চুক্তি সম্পাদন করে রেখেছিলে, আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসুলের পক্ষ থেকে তোমাদের (তা থেকে) অব্যাহতি রয়েছে।

২. অতঃপর (হে মোশরেকরা), তোমরা (আরো) চার মাস পর্যন্ত (এ পবিত্র) ভূখণ্ডে চলাফেরা করে নাও এবং জেনে রেখো, তোমরা কখনো আল্লাহ তায়ালার ফয়সালা থেকে পালাতে পারবে না এবং আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই কাফেরদের অপমানিত করবেন ।

৩. (আজ) মহান হজ্জের (এ) দিনে দুনিয়ার মানুষের প্রতি আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসুলের ঘোষণা (এই যে), আল্লাহ তায়ালা মোশরেকদের (সাথে চুক্তির বাধ্যবাধকতা) থেকে মুক্ত এবং (মুক্ত) তাঁর রসুলও; (হে মোশরেকরা,) যদি তোমরা (এখনো) তাওবা করো তাহলে তাই হবে তোমাদের জন্যে কল্যাণকর; আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে জেনে রাখো, তোমরা কখনো আল্লাহ তায়ালাকে হীনবল (ও অক্ষম) করতে পারবে না; (হে নবী,) যারা কুফরী করেছে তাদের তুমি এক কঠোর আযাবের সুসংবাদ দাও,

৪. তবে সেসব মোশরেকের কথা আলাদা, যাদের সাথে তোমরা চুক্তি করেছো, তারা (চুক্তি রক্ষার ব্যাপারে) এতোটুকুও ত্রুটি করেনি না তারা কখনো তোমাদের বিরুদ্ধে অন্য কাউকে সাহায্য করেছে, তাদের চুক্তি তাদের মেয়াদ (শেষ হওয়া) পর্যন্ত অবশ্যই তোমরা মেনে চলবে; আসলেই যারা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে তাদের অবশ্যই তিনি ভালোবাসেন।

৫. অতঃপর যখন (এ) নিষিদ্ধ চার মাস অতিবাহিত হয়ে যাবে, তখন মোশরেকদের তোমরা যেখানে পাবে সেখানেই তাদের হত্যা করবে, তাদের বন্দী করবে, তাদের অবরোধ করবে এবং তাদের (ধরার) জন্যে তোমরা প্রতিটি ঘাঁটিতে ওঁৎ পেতে বসে থাকবে, তবে এরপরও তারা যদি তাওবা করে (দ্বীনের পথে ফিরে আসে) এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত আদায় করে, তাহলে তোমরা তাদের পথ ছেড়ে দাও; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল ও বড়ো দয়াময় ।

৬. আর মোশরেকদের মধ্য থেকে যদি কোনো ব্যক্তি তোমার কাছে আশ্রয় চায় তবে অবশ্যই তাকে তুমি আশ্রয় দেবে, যাতে করে (তোমার আশ্রয়ে থেকে) সে আল্লাহ তায়ালার বাণী শুনতে পায়, অতঃপর তাকে তার (কোনো ) নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দেবে; (এটা) এ জন্যেই যে, এরা (আসলেই) এমন এক সম্প্রদায়ের লোক যারা কিছুই জানে না ।

৭. আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসুলের কাছে মোশরেকদের এ চুক্তি কিভাবে (বহাল) থাকবে? তবে যাদের সাথে মাসজিদুল হারামের পাশে (বসে) তোমরা চুক্তি সম্পাদন করেছিলে (তাদের কথা আলাদা), যতোক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদের সাথে (সম্পাদিত এ) চুক্তির ওপর বহাল থাকে, ততোক্ষণ পর্যন্ত তোমরাও তাদের জন্যে (সম্পাদিত চুক্তিতে) বহাল থেকো; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা (চুক্তি ও ওয়াদার ব্যাপারে) সাবধানী ব্যক্তিদের ভালোবাসেন ।

৮. কিভাবে (তোমরা তাদের বিশ্বাস করবে?) এরা যদি কখনো তোমাদের ওপর জয়লাভ করে, তাহলে তারা (যেমনি) আত্মীয়তার বন্ধনের তোয়াক্কা করবে না, (তেমনি) চুক্তির মর্যাদাও দেবে না; তারা (শুধু) মুখ দিয়ে তোমাদের খুশী রাখার চেষ্টা করে, কিন্তু তাদের অন্তরগুলো সেসব কথা ( কিছুতেই) মেনে নেয় না, (মূলত) এদের অধিকাংশ ব্যক্তিই হচ্ছে ফাসেক,

৯. এরা আল্লাহ তায়ালার আয়াতসমূহ সামান্য (কিছু বৈষয়িক) মূল্যের বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছে এবং (মানুষকে) আল্লাহ তায়ালার পথ থেকে দুরে রেখেছে; নিশ্চয়ই এটা খুব জঘন্য কাজ, যা তারা করছে ।

১০. (কোনো) ঈমানদার লোকের ব্যাপারে এরা (যেমন) আত্মীয়তার ধার ধারে না, (তেমনি) কোনো অংগীকারের মর্যাদাও এরা রক্ষা করে না; (মূলত) এরা হচ্ছে সীমালংঘনকারী।

১১. (এ সত্ত্বেও) যদি তারা তাওবা করে, নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত আদায় করে, (তাহলে) তারা হবে তোমাদেরই দ্বীনী ভাই; আমি সেসব মানুষের কাছে আমার আয়াতসমূহ স্পষ্ট করে বর্ণনা করি, যারা (সত্য-মিথ্যার তারতম্য) বুঝতে পারে |

১২. তারা যদি তাদের প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও তাদের চুক্তি ভংগ করে এবং (ক্রমাগত) তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে বিদ্রূপ করতে থাকে, তাহলে তোমরা কাফের সরদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা) করো, কেননা তাদের জন্যে (তখন) আর কোনো চুক্তিই (বহাল) নেই, (এর ফলে) আশা করা যায় তারা তাদের মন্দ কাজগুলো থেকে বিরত থাকবে |

১৩. তোমরা কি এমন একটি দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে না, যারা (বার বার) নিজেদের অংগীকার ভংগ করেছে! যারা রসুলকে (স্বদেশ থেকে) বের করার সংকল্প করেছে এবং তারাই তো প্রথম (তোমাদের ওপর হামলা) শুরু করেছে; তোমরা কি (সত্যিই) তাদের ভয় করো? অথচ যদি তোমরা মোমেন হও তাহলে তোমাদের আল্লাহ তায়ালাকেই বেশী ভয় করা উচিত |

১৪. তোমরা তাদের সাথে লড়াই করো, আল্লাহ তায়ালা (আসলে) তোমাদের হাত দিয়েই ওদের শাস্তি দেবেন, তিনি তাদের অপমানিত করবেন, তাদের ওপর (বিজয় দিয়ে) তিনি তোমাদের সাহায্য করবেন এবং (এভাবে) তিনি মোমেন সম্প্রদায়ের মনগুলোকেও নিরাময় করে দেবেন,

১৫. তিনি (এর দ্বারা) তাদের দিলের ক্ষোভ বিদুরিত করে দেবেন; তিনি যাকে চাইবেন তার প্রতি ক্ষমাপরবশ হবেন; আল্লাহ তায়ালা সব কিছুই জানেন এবং তিনি হচ্ছেন সুবিজ্ঞকুশলী |

১৬. তোমরা কি (একথা) মনে করে নিয়েছো, তোমাদের (এমনি এমনিই) ছেড়ে দেয়া হবে! অথচ (এখনো) আল্লাহ তায়ালা (ভালো করে) পরখ করে নেননি যে, তোমাদের মাঝে কারা (আল্লাহর পথে) জেহাদ করেছে, আর কারা আল্লাহ তায়ালা, তাঁর রসুল ও মোমেনদের ছাড়া অন্য কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছে, (বস্তুত) তোমরা যা কিছু করো না কেন, আল্লাহ তায়ালা সে সম্পর্কে সম্যক অবগত রয়েছেন |

১৭. মোশরেকরা যখন নিজেরাই নিজেদের ওপর কুফরীর সাক্ষ্য দিচ্ছে, তখন তারা আল্লাহ তায়ালার মাসজিদ আবাদ করবে এটা তো হতেই পারে না; মূলত এরা হচ্ছে সেসব লোক, যাদের যাবতীয় কর্মকান্ড বরবাদ হয়ে গেছে এবং চিরকাল এরা দোযখের আগুনেই কাটাবে |

১৮. আল্লাহ তায়ালার (ঘর) মাসজিদ তো আবাদ করবে তারা, যারা আল্লাহ তায়ালা ও পরকালের ওপর ঈমান আনে, নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত আদায় করে, আর আল্লাহ তায়ালা ছাড়া তারা কাউকে ভয় করে না। এদের ব্যাপারেই আশা করা যায়, এরা হেদায়াতপ্রাপ্ত মানুষের অন্তর্ভুক্ত হবে ।

১৯. তোমরা কি (হজ্জের মওসুমে) হাজীদের পানি পান করানো ও কাবা ঘরের খেদমত করাকে সে ব্যক্তির কাজের সমপর্যায়ের মনে করো, যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান এনেছে, পরকালের ওপর ঈমান এনেছে এবং আল্লাহ তায়ালার রাসত্মায় জেহাদ করেছে; এরা কখনো আল্লাহর কাছে সমান (মর্যাদার) নয়; আল্লাহ তায়ালা কখনো যালেমদের সঠিক পথ দেখান না |

২০. যারা আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান এনেছে, (তাঁর সন্তুষ্টির জন্যে) হিজরত করেছে এবং আল্লাহ তায়ালার পথে তাদের জান-মাল দিয়ে জেহাদ করেছে, তাদের মর্যাদা আল্লাহ তায়ালার কাছে সবার চাইতে বড়ো এবং এ ধরনের লোকেরাই (পরিণামে) সফলকাম হবে |

২১. তাদের মালিক তাদের জন্যে নিজ তরফ থেকে দয়া, সন্তুষ্টি ও এমন এক (সুরমা) জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন, যেখানে তাদের জন্যে চিরস্থায়ী নেয়ামতের সামগ্রীসমূহ ( সাজানো) রয়েছে,

২২. সেখানে তারা হবে চিরস্থায়ী, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালার কাছে (মোমেনদের জন্যে) মহাপুরস্কার (সংরক্ষিত) রয়েছে।

২৩. হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, যদি তোমাদের পিতা ও ভাইয়েরা কখনো ঈমানের ওপর কুফরীকেই বেশী ভালোবাসে, তাহলে তোমরা এমন লোকদের কখনো বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না; তোমাদের মধ্যে যারা এ (ধরনের) লোকদের (নিজেদের) বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে, তারা হচ্ছে (সুস্পষ্ট) যালেম |

২৪. (হে নবী,) বলো, যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের ভাই, তোমাদের পরিবার পরিজন ও তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য যা অচল হয়ে যাবে বলে তোমরা ভয় করো, তোমাদের বাড়ীঘরসমূহ, যা তোমরা (একান্তভাবে) কামনা করো, যদি তোমরা আল্লাহ তায়ালা, তাঁর রসুল ও তাঁর পথে জেহাদ করার চাইতে (এগুলোকে) বেশী ভালোবাসো, তাহলে তোমরা আল্লাহ তায়ালার (পক্ষ থেকে তাঁর আযাবের) ঘোষণা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো (জেনে রেখো); আল্লাহ তায়ালা কখনো ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না |

২৫. আল্লাহ তায়ালা তো বহু জায়গায়ই তোমাদের সাহায্য করেছেন, (বিশেষ করে) হোনায়নের দিনে (যে সাহায্য করেছিলেন তা স্মরণ করো, সেদিন) যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদের উৎফুল্ল করে দিয়েছিলো, অথচ সংখ্যার (এ) বিপুলতা তোমাদের কোনোই কাজে আসেনি, যমীন তার বিশালতা সত্ত্বেও (সেদিন) তোমাদের ওপর সংকুচিত হয়ে পড়েছিলো, অতঃপর তোমরা (এক সময়) ময়দান ছেড়ে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালিয়েও গেলে |

২৬. অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাঁর রসুল ও (ময়দানে অটল হয়ে থাকা) মোমেনদের ওপর তাঁর প্রশান্তি নাযিল করলেন, (ময়দানে) তিনি এমন এক লশকর (বাহিনী) পাঠালেন, যাদের তোমরা দেখতে পাওনি এবং (তাদের দিয়ে) তিনি কাফেরদের (এক চরম) শাস্তি দিলেন, যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে, এ হচ্ছে তাদের (যথাযথ ) পাওনা |

২৭. এর পরেও আল্লাহ তায়ালা যাকে ইচ্ছা তাকে ক্ষমা করে দেন, আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু |

২৮. ওহে (মানুষ), তোমরা যারা (আল্লাহ তায়ালার ওপর) ঈমান এনেছো (জেনে রেখো), মোশরেকরা হচ্ছে (চিন্তা ও আদর্শের দিক থেকে) অপবিত্র, অতএব (এ অপবিত্রতা নিয়ে) তারা যেন এ বছরের পর আর কখনো এ পবিত্র মাসজিদের কাছে না আসে, যদি (তাদের না আসার কারণে) তোমরা (আশু) দারিদ্রের আশংকা করো তাহলে (জেনে রেখো), অচিরেই আল্লাহ তায়ালা চাইলে নিজ অনুগ্রহ দিয়ে তোমাদের অভাবমুক্ত করে দিবেন; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা সর্বজ্ঞ ও কুশলী |

২৯. যাদের ইতিপূর্বে কেতাব দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে যারা আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান আনে না, পরকালের ওপর ঈমান আনে না, আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসুল যা কিছু হারাম করেছেন তা হারাম বলে স্বীকার করে না, (সর্বোপরি) সত্য দ্বীনকে (নিজেদের) জীবন ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করে না, তাদের বিরুদ্ধে তোমরা লড়াই চালিয়ে যাও, যে পর্যন্ত না তারা পদানত হয়ে স্বেচ্ছায় জিযিয়া (কর) দিতে শুরু করে |

৩০. ইহুদীরা বলে ওযায়র আল্লাহর পুত্র, (আবার) খৃস্টানরা বলে মাসীহ আল্লাহর পুত্র; (আসলে) এ সবই হচ্ছে তাদের মুখের কথা, তাদের আগে যারা (আল্লাহ তায়ালাকে) অস্বীকার করেছে, (এসব কথার মাধ্যমে) এরা তাদেরই অনুকরণ করছে মাত্র; আল্লাহ তায়ালা এদের (সবাইকে) ধ্বংস করুন, (তাকিয়ে দেখো) এদের কিভাবে (আজ দ্বারে দ্বারে) ঠোকর খাওয়ানো হচ্ছে!

৩১. এ লোকেরা আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে তাদের আলেম, তাদের পীর-দরবেশদের মাবুদ বানিয়ে নিয়েছে এবং মারইয়াম পুত্র মাসীহকেও (কেউ কেউ মাবুদ বানিয়ে রেখেছে), অথচ এদের এক আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কারোই বন্দেগী করতে আদেশ দেয়া হয়নি, তিনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই; তারা যাদের আল্লাহর সাথে শরীক করে, তিনি এসব (কথাবার্তা) থেকে অনেক পবিত্র |

৩২. এ (মূর্খ) লোকেরা তাদের মুখের (এক) ফুৎকার দিয়ে আল্লাহর (দ্বীনের) মশাল নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাঁর এ আলোর পূর্ণ বিকাশ ছাড়া অন্য কিছুই চান না, যদিও কাফেরদের কাছে এটা খুবই অপ্রীতিকর!

৩৩. তিনিই (মহান আল্লাহ), যিনি (তোমাদের কাছে) সুস্পষ্ট হেদায়াত ও সঠিক জীবনবিধান সহকারে তাঁর রসুলকে পাঠিয়েছেন, যেন সে এই বিধানকে (দুনিয়ার) সব কয়টি বিধানের ওপর বিজয়ী করে দিতে পারে, মোশরেকরা (এ বিজয়কে) যতো দুঃসহই মনে করুক না কেন!

৩৪. হে ঈমানদার লোকেরা, (আহলে কেতাবদের) বহু পন্ডিত ও ফকির-দরবেশ এমন আছে, যারা অন্যায়ভাবে সাধারণ মানুষের সম্পদ ভোগ করে, এরা (আল্লাহর বান্দাদের) আল্লাহর পথ থেকে ফিরিয়েও রাখে; (এদের মাঝে) যারা সোনা-রূপা পুঞ্জীভূত করে রাখে এবং (কখনো) তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তুমি তাদের কঠিন পীড়াদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও ।

৩৫. (এমন একদিন আসবে) যেদিন (পুঞ্জীভূত) সোনা-রূপা জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে, অতঃপর তা দিয়ে (যারা এগুলো জমা করে রেখেছিলো) তাদের কপালে, তাদের পার্শ্বে ও তাদের পিঠে চিহ্ন (এঁকে) দেয়া হবে (এবং তাদের উদ্দেশ করে বলা হবে), এ হচ্ছে তোমাদের সে সম্পদ যা তোমরা নিজেদের জন্যে জমা করে রেখেছিলে, অতএব যা কিছু সেদিন তোমরা জমা করেছিলে (আজ) তার স্বাদ গ্রহণ করো ।

৩৬. আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহ তায়ালার বিধানে মাসের সংখ্যা বারোটি, এ (বারোটি)-র মধ্যে চারটি হচ্ছে (যুদ্ধ-বিগ্রহের জন্যে) নিষিদ্ধ মাস; এটা (আল্লাহর প্রণীত) নির্ভুল ব্যবস্থা, অতএব তার ভেতরে (হানাহানি করে) তোমরা নিজেদের ওপর যুলুম করো না, তোমরা (যখন) মোশরেকদের সাথে যুদ্ধ করবে, (তখন সবাই) এক সাথে মিলিত হয়ে (তাদের) মোকাবেলা করবে, যেমনিভাবে তারাও এক সাথে তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে; জেনে রেখো, যারা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে, আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তাদের সাথে রয়েছেন |

৩৭. নিষিদ্ধ মাসকে হীন স্বার্থে মূলতবি করা কিংবা তা আগ পাছ করা তো কুফরীর মাত্রাই বৃদ্ধি করে, এর ফলে কাফেরদের (আরো বেশী) গোমরাহীতে নিমজ্জিত করে দেয়া হয়, এ লোকেরা এক বছর কোনো মাসকে (প্রয়োজনে) হালাল করে নেয়, আবার (পরবর্তী) কোনো বছরে সে মাসকেই তারা হারাম বানিয়ে নেয়, যেন এভাবে আল্লাহ তায়ালা যে মাসগুলো হারাম করেছেন তার সংখ্যাও পুরণ হয়ে যায়, আবার আল্লাহ তায়ালা যা হারাম করেছেন তাও (মাঝে মাঝে) হালাল হয়ে যায়; (বস্তুত) তাদের অন্যায় কাজগুলো (এভাবেই) তাদের কাছে শোভনীয় করে দেয়া হয়েছে; আর আল্লাহ তায়ালা কখনো কাফের সম্প্রদায়কে সঠিক পথের দিশা দেন না |

৩৮. হে মানুষ, তোমরা যারা (আল্লাহ তায়ালার ওপর) ঈমান এনেছো, এ কি হলো তোমাদের! যখন তোমাদের আল্লাহ তায়ালার পথে (কোনো অভিযানে) বের হতে বলা হয়, তখন তোমরা যমীন আঁকড়ে ধরো; তোমরা কি আখেরাতের (সমৃদ্ধির) তুলনায় (এ) দুনিয়ার জীবনকেই বেশী ভালোবাসো, (অথচ) পরকালে (হিসেবের মানদন্ডে) দুনিয়ার জীবনের এ ভোগের উপকরণ নিতান্তই কম |

৩৯. তোমরা যদি (কোনো অভিযানে) বের না হও, তাহলে (এ অবাধ্যতার জন্যে) তিনি তোমাদের কঠিন শাস্তি দেবেন এবং তোমাদের অন্য এক জাতি দ্বারা বদল করে দেবেন, তোমরা কিন্তু তাঁর কোনোই অনষ্টি সাধন করতে পারবে না, (কারণ) তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান |

৪০. (হে মোমেনরা,) তোমরা যদি তাঁকে (এ কাজে) সাহায্য না করো তাহলে (আল্লাহ তায়ালাই তাকে সাহায্য করবেন) আল্লাহ তায়ালা তখনো তাকে সাহায্য করেছিলেন যখন কাফেররা তাকে তার ভিটে-বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলো (বিশেষ করে) যখন সে (নবী) ছিলো মাত্র দু'জনের মধ্যে একজন, (তাও আবার) তারা দু'জন ছিলো (অন্ধকার এক) গুহার মধ্যে, সে (নবী) যখন তার সাথীকে বলছিলো, কোনো দুশ্চিন্তা করো না, আল্লাহ তায়ালা আমাদের সাথেই আছেন, অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তার ওপর তাঁর প্রশান্তি নাযিল (করে তাকে সাহায্য) করলেন এবং এমন এক বাহিনী দ্বারা তাকে শক্তি যোগালেন যাদের তোমরা (সেদিন) দেখতে পাওনি এবং যারা (আল্লাহ তায়ালাকে) অমান্য করেছে, আল্লাহ তায়ালা তাদের (ধৃষ্টতামূলক) বক্তব্য নীচু করে দিলেন এবং আল্লাহ তায়ালার কথাই ওপরে (থাকলো); আল্লাহ তায়ালা পরাক্রমশালী ও প্রবল প্রজ্ঞাময় |

৪১. তোমরা অভিযানে বের হয়ে পড়ো; কম হোক কিংবা বেশী (রণসম্ভারে) হোক এবং জেহাদ করো আল্লাহ তায়ালার পথে নিজেদের জান দিয়ে মাল দিয়ে; এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম, (কতো ভালো হতো) যদি তোমরা বুঝতে পারতে!

৪২. (হে নবী, এতে) যদি আশু কোনো লাভ থাকতো, হতো যদি (তাদের এ) সফর সহজ সুগম, তাহলে তারা অবশ্যই (এ অভিযানে) তোমার পেছনে পেছনে যেতো, কিন্তু তাদের জন্যে এ যাত্রাপথ অনেক দীর্ঘ (ও দুর্গম) ঠেকেছে; তারা অচিরেই আল্লাহর নামে (তোমার কাছে) কসম করে বলবে, আমরা যদি সক্ষম হতাম তাহলে অবশ্যই তোমার সাথে (অভিযানে) বের হতাম, (মিথ্যা অজুহাতে) তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করছে, আল্লাহ তায়ালা জানেন, এরা হচ্ছে মিথ্যাবাদী।

৪৩. (হে নবী,) আল্লাহ তায়ালা তোমাকে মাফ করুন, (ঈমানের দাবীতে) কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী; এ বিষয়টা তোমার কাছে স্পষ্ট হওয়ার আগে কেন তুমি তাদের (যুদ্ধে যাওয়া থেকে) অব্যাহতি দিলে?

৪৪. যারা আল্লাহ তায়ালা ও পরকালের ওপর ঈমান এনেছে, তারা নিজেদের মাল ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জেহাদে অবতীর্ণ না হওয়ার জন্যে তোমার কাছ থেকে অব্যাহতি চাইতে আসবে না; আল্লাহ তায়ালা (অবশ্যই) সেসব লোককে জানেন যারা (তাঁকে) ভয় করে |

৪৫. (যুদ্ধে না যাওয়ার জন্য) তোমার কাছে অব্যাহতি চাইতে তো আসবে তারা, যারা আল্লাহ তায়ালা ও পরকালের ওপর (কোনো রকম) ঈমান রাখে না, তাদের মন সংশয়যুক্ত, আর তারা নিজেরাও সংশয়ে দ্বিধাগ্রস্থ থাকে |

৪৬. যদি (সত্যি) এরা (তোমার সাথে) বের হতে চাইতো, তাহলে তারা সে জন্যে (কিছু না কিছু) প্রস্তুতি তো নিতো! কিন্তু ওদের যাত্রা করাটা আল্লাহ তায়ালার মনোপুত হয়নি; তাই তিনি তাদের (এ থেকে) বিরত রাখলেন, (তাদের যেন) বলে দেয়া হলো, যারা পেছনে বসে আছে তোমরাও তাদের সাথে বসে থাকো |

৪৭. ওরা তোমাদের মাঝে বের হলে তোমাদের মাঝে বিভ্রান্তিই শুধু বাড়িয়ে দিতো এবং তোমাদের সমাজে নানা রকম অশান্তি সৃষ্টির জন্যে (এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করতো, (তা ছাড়া) তোমাদের মধ্যেও তো তাদের কথা আগ্রহের সাথে শোনার মতো (গুপ্তচর কিংবা দুর্বল ঈমানের) লোক আছে, আল্লাহ তায়ালা (এসব) যালেমদের অবস্থা সম্পর্কে সম্যক অবগত রয়েছেন |

৪৮. এরা এর আগেও (তোমাদের মাঝে) বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলো এবং তোমার পরিকল্পনাগুলো পালটে দেয়ার চক্রান্ত করেছিলো, শেষ পর্যন্ত ন্যায় (ও ইনসাফ তাদের কাছে) এসে হাযির হলো এবং আল্লাহ তায়ালার ফয়সালাই (চূড়ান্তভাবে) বিজয়ী হলো, যদিও তারা (হচ্ছে এ বিজয়ের) অপছন্দকারী!

৪৯. তাদের ভেতর এমন কিছু মানুষও আছে, যারা বলে, (হে নবী, এ যুদ্ধে যাওয়া থেকে তুমি) আমাকে অব্যাহতি দাও এবং আমাকে তুমি (কোনো লোভনীয় বস্তুর) মসিবতে ফেলো না; তোমরা জেনে রেখো, এরা তো (আগে থেকেই নানা) মসিবতে পড়ে আছে; আর জাহান্নাম তো কাফেরদের (চারদিকে বড়ো মসিবতের মতোই) ঘিরে রেখেছে।

৫০. তোমাকে যদি কখনো কোনো কল্যাণ স্পর্শ করে তাহলে (এতে) তাদের দুঃখ হয়, আবার তোমার কোনো বিপদ ঘটলে তারা বলে, (হাঁ, আমরা এটা জানতাম, তাই) আমরা আগেই ভিন্ন পথ অবলম্বন করে নিয়েছিলাম, অতঃপর তারা উৎফুল্ল চিত্তে তোমার কাছ থেকে সরে পড়ে।

৫১. তুমি (তাদের) বলো, আসলে (কল্যাণ অকল্যাণের) কিছুই আমাদের (ওপর নাযিল) হবে না; হবে শুধু তাই যা আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্যে নির্দিষ্ট করে রেখেছেন, তিনিই আমাদের একমাত্র আশ্রয়, আর যারা মোমেন তাদের তো (ভালো মন্দ সব ব্যাপারে) শুধু আল্লাহ তায়ালার ওপরই ভরসা করা উচিত |

৫২. আমাদের (ব্যাপারে) তোমরা কি (বিজয় ও শাহাদাত এ) দুটো কল্যাণের যে কোনো একটির অপেক্ষা করছো? কিন্তু তোমাদের জন্যে আমরা যা কিছুর প্রতীক্ষা করছি তা হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা নিজে থেকে তোমাদের আযাব দেবেন, কিংবা আমাদের হাত দিয়ে (তোমাদের তিনি শাস্তি পৌঁছাবেন), অতএব তোমরা অপেক্ষা করো, আমরাও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করছি ।

৫৩. (হে নবী,) তুমি বলো, ধন-সম্পদ আগ্রহ সহকারে খরচ করো কিংবা অনিচ্ছায় খরচ করো, কোনো অবস্থায়ই তোমাদের কাছ থেকে তা কবুল করা হবে না; কেননা তোমরা হচ্ছো একটি নাফরমান জাতি |

৫৪. তাদের এ অর্থ-সম্পদ কবুল না হওয়াকে এ ছাড়া আর কোনো কিছুই বাধা দেয়নি যে, তারা (স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা) আল্লাহ তায়ালাকে ও তাঁর (পাঠানো) রসুলকে অমান্য করেছে, তারা নামাযের জন্যে আসে ঠিকই, কিন্তু তারা থাকে একান্ত অলস, আর তারা আল্লাহ তায়ালার পথে অর্থ ব্যয় করে বটে, তবে তা করে (একান্ত) অনিচ্ছার সাথে |

৫৫. সুতরাং (হে নবী), ওদের মাল-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাকে কখনো আশ্চর্যান্বিত না করে, আল্লাহ তায়ালা (মূলত) এসব কিছু দিয়ে তাদের এ দুনিয়ার জীবনে (এক ধরনের) আযাবেই ফেলে রাখতে চান; আর যখন তাদের (দেহ থেকে) জান বের হয়ে যাবে তখন তারা কাফের অবস্থায়ই থাকবে |

৫৬. এরা আল্লাহ তায়ালার নামে কসম করে বলে, এরা তোমাদের দলের লোক (অথচ আল্লাহ তায়ালা নিজেই বলছেন); এরা কখনোই তোমাদের (দলের) লোক নয়, এরা হচ্ছে (মূলত) একটি ভীত-সন্ত্রস্ত জাতি |

৫৭. (এতো ভীত যে,) তারা যদি এতোটুকু আশ্রয়স্থল (কোথাও) পেয়ে যায় কিংবা পায় (যদি মাথা লুকোবার মতো) কোনো গিরিগুহা অথবা (যমীনের ভেতর) ঢুকে পালাবার কোনো জায়গা, তাহলে অবশ্যই তারা (তোমাদের ভয়ে) এসব জায়গার দিকে দ্রুত পালিয়ে (হলেও) বাঁচার চেষ্টা করতো |

৫৮. এদের মাঝে এমন লোকও আছে, যারা (বিশেষ কিছু) অনুদানের (ভাগ-বন্টনের) ব্যাপারেও তোমার ওপর দোষারোপ করে, (কিন্তু) সে অংশ থেকে যদি তাদের দেয়া হয় তাহলে তারা খুবই সন্তুষ্ট হয়, আবার তাদের যদি তা থেকে দেয়া না হয় তাহলে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

৫৯. যদি তারা এর ওপর সন্তুষ্ট হতো যা আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসুল তাদের দিয়েছেন (তাহলে তা কতোই না ভালো হতো), সে অবস্থায় তারা বলতো, আল্লাহ তায়ালাই আমাদের জন্যে যথেষ্ট, অচিরেই আল্লাহ তায়ালা তাঁর অনন্ত ভান্ডার থেকে আমাদের অনেক দেবেন এবং তাঁর রসুলও আমাদের অনেক দান করবেন, আমরা তো আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকেই তাকিয়ে আছি।

৬০. (এসব) ‘সাদাকা' (যাকাত) হচ্ছে ফকীর-মেসকীনদের জন্যে, এর (ব্যবস্থাপনায় কর্মরত) কর্মচারীদের জন্যে, যাদের অন্তর (দ্বীনের প্রতি) অনুরাগী করা প্রয়োজন তাদের জন্যে, ( কোনো ব্যক্তিকে) গোলামীর (বন্ধন) থেকে আযাদ করার জন্যে, ঋণগ্রস্থ ব্যক্তিদের (ঋণমুক্তির) জন্যে, আল্লাহ তায়ালার পথে (সংগ্রামী) ও মোসাফেরদের জন্যে (এ সাদাকার অর্থ ব্যয় করা যাবে); এটা আল্লাহ তায়ালার নির্ধারিত ফরয; নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা (সব কিছু) জানেন এবং তিনিই হচ্ছেন বিজ্ঞ, কুশলী |

৬১. তাদের মধ্যে এমন কিছু লোকও আছে যারা আল্লাহর নবীকে কষ্ট দেয়; তারা বলে, এ ব্যক্তি কান (-কথায় বিশ্বাস করে, হে নবী), তুমি (তাদের) বলো, তার কান (তাই শোনে যা) তোমাদের জন্যে কল্যাণকর; সে আল্লাহ তায়ালাতে বিশ্বাস করে, মোমেনদের ওপর বিশ্বাস রাখে, তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে সে তাদের জন্যেও আল্লাহ তায়ালার রহমত; যারা আল্লাহর রসুলকে কষ্ট দেয় তাদের জন্যে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। 

৬২. এরা তোমাদের খুশী করার জন্যে আল্লাহ তায়ালার নামে শপথ করে, অথচ এরা যদি (সত্যিকার অর্থে) মোমেন হতো তাহলে (এরা বুঝতো), তাদের খুশী করার জন্যে আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসুলের অধিকার হচ্ছে (সবচাইতে ) বেশী।

৬৩. এ (মূর্খ) লোকেরা কি একথা জানে না, যদি কোনো ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসুলের বিদ্রোহ করে তবে তার জন্যে রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে সে চিরকাল থাকবে; আর তা (হবে তার জন্যে) চরম লাঞ্ছনা |

৬৪. (এ) মোনাফেকরা আশংকা করে, তোমাদের ওপর এমন কোনো সুরা নাযিল হয়ে পড়ে কিনা, যা তাদের মনের (ভেতরে লুকিয়ে থাকা) সব কিছু ফাঁস করে দেবে; (হে নবী,) তুমি (এদের) বলো, হাঁ (যদ্দুর পারো তোমরা) বিদ্রূপ করে নাও, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা (এমন কিছু নাযিল করবেন, যাতে তিনি সে) সব কিছু ফাঁস করে দেবেন, যার তোমরা আশংকা করছো |

৬৫. তুমি যদি তাদের (কিছু) জিজ্ঞেস করো তারা বলবে, (না,) আমরা তো একটু অযথা কথাবার্তা ও হাসি কৌতুক করছিলাম মাত্র, তুমি (তাদের) বলো, তোমরা কি আল্লাহ তায়ালা, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রসুলকে বিদ্রূপ করছিলে?

৬৬. (হে কাফেররা,) তোমরা দোষ ছাড়ানোর চেষ্টা করো না, একবার ঈমান আনার পর তোমরাই পুনরায় কাফের হয়ে গিয়েছিলে; আমি যদি তোমাদের একদলকে (তাদের ঈমানের কারণে) ক্ষমা করে দিতে পারি, তাহলে আরেক দলকে (পুনরায় কুফরীতে ফিরে যাবার জন্যে) ভয়াবহ শাস্তিও দিতে পারি, কারণ এ (শেষের দলের) লোকেরা ছিলো জঘন্য অপরাধী |

৬৭. মোনাফেক পুরুষ ও মোনাফেক নারী, এরা (স্বভাব-চরিত্রে) একে অপরের মতোই। তারা (উভয়েই মানুষদের) অসৎ কাজের আদেশ দেয় ও সৎকাজ থেকে বিরত রাখে এবং (আল্লাহ তায়ালার পথে খরচ করা থেকে) উভয়েই নিজেদের হাত বন্ধ করে রাখে; তারা (যেমনি এ দুনিয়ায়) আল্লাহ তায়ালাকে ভুলে গেছে, আল্লাহ তায়ালাও (তেমনি আখেরাতে) তাদের ভুলে যাবেন; নিঃসন্দেহে মোনাফেকরা সবাই পাপিষ্ঠ |

৬৮. আল্লাহ তায়ালা (এ) মোনাফেক পুরুষ ও মোনাফেক নারী এবং কাফেরদের জাহান্নামের ভয়াবহ আগুনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যেখানে তারা চিরকাল ধরে জ্বলতে) থাকবে; (জাহান্নামের) এ (আগুনই) হবে তাদের জন্যে যথেষ্ট, তাদের ওপর আল্লাহ তায়ালার গযব (নাযিল হোক), ওদের জন্যে রয়েছে এক চিরস্থায়ী আযাব |

৬৯. (তোমরা) ঠিক তাদেরই মতো, যারা তোমাদের আগে এখানে (প্রতিষ্ঠিত) ছিলো, তারা শক্তিতে ছিলো তোমাদের চাইতে প্রবল, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি তাদের তোমাদের চাইতে ছিলো বেশী; দুনিয়ার যে ভোগ- বিলাস তাদের ভাগে ছিলো তা তারা ভোগ করে গেছে, অতঃপর তোমাদের ভাগে যা আছে তোমরাও তা ভোগ করে (একদিন) চলে যাবে, যেমনি করে তোমাদের আগের লোকেরা তাদের যে পরিমাণ ভোগ করার ছিলো তা শেষ করে (চলে) গেছে, তারা যেমন অনর্থক কাজকর্মে ডুবে থাকতো, তোমরাও তেমনি অর্থহীন কথাবার্তায় ডুবে আছো; এরা হচ্ছে সেসব লোক, দুনিয়া আখেরাতে যাদের কর্মফল বিনষ্ট হয়ে গেছে, আর (সত্যিকার অর্থে) এরাই হচ্ছে নিদারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ।

৭০. এদের কাছে কি আগের লোকদের খবর পৌঁছেনি? নুহের জাতির, আদ জাতির, সামুদ জাতির (কীর্তিকলাপ?) ইবরাহীম, মাদইয়ানবাসী (নবী) ও সে বিধ্বংস জনবসতির কথা (কি এদের কাছে কেউ বলেনি ) ? এ সব কয়টি জাতির) মানুষের কাছে তাদের রসুলরা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট আয়াত নিয়ে এসেছিলো, (নবী না পাঠিয়ে কাউকে আযাব দেবেন, এমন) অবিচার তো আল্লাহ তায়ালা তাদের ওপর কখনো করতে পারেন না, বস্তুত তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর যুলুম করেছে ।

৭১. (অপরদিকে) মোমেন পুরুষ ও মোমেন নারীরা হচ্ছে একে অপরের বন্ধু। এরা (মানুষদের) ন্যায় কাজের আদেশ দেয়, অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে, তারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত আদায় করে, (জীবনের সব কাজে) আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসুলের (বিধানের) অনুসরণ করে, এরাই হচ্ছে সে সব মানুষ; যাদের ওপর আল্লাহ তায়ালা অচিরেই দয়া করবেন; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা পরাক্রমশালী, কুশলী ।

৭২. (এ ধরনের) মোমেন পুরুষ ও মোমেন নারীদের আল্লাহ তায়ালা এমন এক সুরম্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যার তলদেশ নিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহমান থাকবে, সেখানে তারা চিরদিন অবস্থান করবে, (চিরস্থায়ী) জান্নাতে তাদের জন্যে সুন্দর সুন্দর বাসস্থানের ব্যবস্থা থাকবে; (সেদিনের) সবচাইতে বড়ো (নেয়ামত) হবে (বান্দার প্রতি) আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি; এটাই হবে (সেদিনের) সবচেয়ে বড়ো সাফল্য |

৭৩. হে নবী, কাফের ও মোনাফেকদের বিরুদ্ধে জেহাদে অবতীর্ণ হও; ওদের প্রতি কঠোরতা অবলম্বন করো, (কেননা) এদের (চূড়ান্ত) আবাসস্থল হবে জাহান্নাম; এটি বড়োই নিকৃষ্ট স্থান |

৭৪. এরা আল্লাহর নামে কসম করে বলে, (কুফরী শব্দ) এরা বলেনি; (আসলে) এরা কুফরী শব্দ বলেছে এবং তাদের ইসলাম গ্রহণের পরই তারা তা অস্বীকার করেছে, এরা এমন এক কাজের সংকল্প করেছিলো যা তারা করতে পারেনি, (এরপরও) তাদের প্রতিশোধ নেয়ার এ ছাড়া আর কি কারণ থাকতে পারে, আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসুল নিজ অনুগ্রহ দিয়ে তাদের ধনশালী করে দিয়েছিলেন, এখনও যদি এ লোকেরা আল্লাহ তায়ালার কাছে তাওবা করে, তাহলে এটা তাদের জন্যেই ভালো হবে, আর যদি তারা (সত্য থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া-আখেরাত উভয় স্থানেই তাদের কঠিন আযাব দেবেন এবং (উপরনত্ম এ) যমীনে তাদের কোনো বন্ধু কিংবা সাহায্যকারী থাকবে না |

৭৫. ওদের মধ্যে এমন কিছু লোকও আছে যারা আল্লাহর সাথে ওয়াদা করেছিলো, যদি আল্লাহ তায়ালা নিজ অনুগ্রহে আমাদের সম্পদ দান করেন তাহলে আমরা অবশ্যই (তার একাংশ আল্লাহর পথে) দান করবো এবং অবশ্যই আমরা নেক লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো |

৭৬. অতঃপর যখন আল্লাহ তায়ালা নিজ অনুগ্রহ (-এর ভান্ডার) থেকে তাদের ধন-সম্পদ দান করলেন, তখন তারা (দানের বদলে) কার্পণ্য (করতে শুরু) করলো এবং (আল্লাহ তায়ালাকে দেয়া ওয়াদা থেকে) তারা (গোড়ামীর সাথেই) ফিরে এলো।

৭৭. অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাদের অন্তরে মোনাফেকী বদ্ধমুল করে দিলেন সেদিন পর্যন্ত, যেদিন তারা আল্লাহ তায়ালার সাথে সাক্ষাত করবে | এটা এ কারণে, এরা আল্লাহ তায়ালার কাছে যে ওয়াদা করেছিলো তা ভংগ করেছে এবং এরা মিথ্যা আচরণ করেছে ।

৭৮. এ লোকেরা কি একথা জানতো না, তাদের সব গোপন কথা ও সব সলাপরামর্শ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা জানেন এবং অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা গায়েব সম্পর্কেও বিশেষভাবে অবহিত,

৭৯. (আল্লাহ তায়ালা তাদের ব্যাপারেও সম্যক অবগত আছেন) যারা সেসব ঈমানদার ব্যক্তিদের দোষারোপ করে, যারা আন্তরিক নিষ্ঠা ও আগ্রহের সাথে আল্লাহ তায়ালার পথে দান করে (এবং যারা দান করার মতো) নিজেদের পরিশ্রম (-লব্ধ সামান্য কিছু সম্পদ) ছাড়া কিছুই পায় না, এসব মোমেনের সাথে মোনাফেকদের এ (দলের) লোকেরা হাসিঠাট্টা করে; এ (বিদ্রূপকারী)-দের স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাও বিদ্রূপ করতে থাকেন, (পরকালে) তাদের জন্যে রয়েছে কঠিন আযাব |

৮০. (হে নবী,) এমন লোকদের জন্যে তুমি (আল্লাহ তায়ালার কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করো আর না করো (দুটোই সমান); তুমি যদি সত্তর বারও তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও, আল্লাহ তায়ালা কখনো তাদের ক্ষমা করবেন না; কেননা, এরা (জেনে-বুঝে) আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসুলকে অস্বীকার করেছে; (আসলে) আল্লাহ তায়ালা কখনো না-ফরমান লোকদের হেদায়াত করেন না।

৮১. (যুদ্ধের বদলে) যাদের পেছনে ফেলে রাখা হলো, তারা (এভাবে) রসুলের (ইচ্ছার) বিরুদ্ধে নিজেদের ঘরে বসে থাকতে পেরে খুব খুশী হয়ে গেলো, (মূলত) তারা তাদের জান-মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জেহাদ করাটা পছন্দ করলো না, (বরং) বললো, (এ ভীষণ) গরমে তোমরা বাইরে যেও না; (হে নবী) তুমি তাদের বলো, জাহান্নামের আগুন তো এর চাইতেও বেশী গরম; (কতো ভাল হতো) লোকগুলো যদি (একথাটা) বুঝতে পারতো!

৮২. অতএব (এ দুনিয়ায়) তাদের কম হাসা উচিত, (অন্যথায় কেয়ামতের দিন) তাদের বেশী কাঁদতে হবে, তারা যা (গুনাহ এখানে) অর্জন করেছে তাই হবে তাদের (সেদিনের) যথার্থ বিনিময় |

৮৩. যদি আল্লাহ তায়ালা (এ অভিযানের পর) তোমাকে এদের কোনো একটি দলের কাছে ফেরত নিয়ে আসেন এবং তারা যদি তোমার কাছে (পুনরায় কোনো যুদ্ধে যাবার) অনুমতি চায়, (তাহলে) তুমি বলো (না) কখনো তোমরা আমার সাথে (আর কোনো অভিযানে) বের হবে না, তোমরা আমার সাথী হয়ে আর কখনো শত্রুর সাথে লড়বে না; কেননা তোমরা আগের বার (যুদ্ধের বদলে) পেছনে বসে থাকা পছন্দ করেছিলে, (আজ যাও,) যারা পেছনে থেকে গেছে তাদের সাথে তোমরাও (পেছনে) বসে থাকো ।

৮৪. ওদের মধ্যে কোনো লোকের মৃত্যু হলে তুমি কখনো তার (জানাযার) নামায পড়ো না, কখনো তার কবরের পাশে তুমি দাড়িয়ো না; কেননা এ ব্যক্তিরা নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসুলের সাথে কুফরী করেছে, এরা না-ফরমান অবস্থায় মরেছে |

৮৫. ওদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদের কখনো বিমুগ্ধ করতে না পারে; (মূলত) আল্লাহ তায়ালা এসব কিছু দিয়ে তাদের দুনিয়ার জীবনে (নানা ধরনের) শাস্তি দিতে চান এবং তাদের প্রাণ (বায়ু একদিন এমন এক অবস্থায়) বের হবে, যখন তারা (পুরোপুরিই) কাফের থাকবে |

৮৬. যখনি এমন ধরনের কোনো সুরা নাযিল হয়, (যাতে বলা হয়) তোমরা আল্লাহর ওপর ঈমান আনো এবং তাঁর রসুলের সাথে মিলে (কাফেরদের বিরুদ্ধে) জেহাদ করো, তখনি তাদের বিত্তশালী ব্যক্তিরা তোমার কাছে এসে (যুদ্ধে না যাওয়ার জন্যে) অব্যাহতি চায় এবং তারা বলে (হে নবী), আমাদের ছেড়ে দাও, যারা ঘরে বসে আছে আমরাও তাদের সাথে থাকি |

৮৭. তারা (মূলত) ঘরে বসে থাকা লোকদের সাথে অবস্থান করাই পছন্দ করে নিয়েছে, তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে, ফলে তারা কিছুই বুঝতে পারে না ।

৮৮. কিন্তু (আল্লাহর) রসুল এবং যারা তাঁর সাথে আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান এনেছে, তারা (সবাই) নিজেদের জান-মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জেহাদ করেছে; (অতএব) এদের জন্যেই যাবতীয় কল্যাণ (নির্দিষ্ট হয়ে) আছে, আর (সত্যিকার অর্থে) এরাই হচ্ছে সফলকাম |

৮৯. (এর বিনিময়ে) আল্লাহ তায়ালা এদের জন্যে এমন এক (সুরমা) জান্নাত প্রস্তুত করে রেখেছেন, যার পাদদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহমান, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে; (বস্তুত) এ হচ্ছে সর্বোত্তম সাফল্য ।

৯০. ওযরকামী কিছু সংখ্যক আরব বেদুঈনও (তোমার কাছে) এসে হাযির হয়েছে, যেন তাদেরও এ যুদ্ধে যাওয়া থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়, এভাবে সে লোকগুলোও ঘরে বসে থাকলো যারা আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসুলকে মিথ্যা সাব্যস্থ করেছিলো; এদের মধ্যে যারা (আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে) অস্বীকার করে (ঘরে বসে থেকেছে), অচিরেই তারা মর্মান্তিক আযাবে নিমজ্জিত হবে |

৯১. যারা দুর্বল (এ যুদ্ধে শরীক না হওয়ার জন্যে), তাদের ওপর কোনো দোষ নেই, (দোষ নেই তাদেরও) যারা অসুস্থ কিংবা যারা (যুদ্ধে) খরচ করার মতো কোনো সম্বল পায়নি, (অবশ্য) এরা যদি আল্লাহ তায়ালার নিষ্ঠাবান বান্দা হয় (তাহলেই তারা এ অব্যাহতির আওতায় পড়বে), সৎকর্ম শীল মানুষদের বিরুদ্ধেও কোনো অভিযোগের কারণ নেই; আল্লাহ তায়ালা একান্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু,

৯২. (তাদের ব্যাপারেও কোনো অভিযোগ নেই) যারা (যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে) তোমার কাছে (যাত্রার) বাহন সরবরাহ করার জন্যে এসেছিলো এবং তুমি (তাদের) বলেছিলে, তোমাদের জন্যে আমি এমন কিছু পাচ্ছি না, যার ওপর আমি তোমাদের আরোহণ করাতে পারি, (অতঃপর) তারা ফিরে গেলো, তারা (এমনভাবে) ফিরলো যে, তাদের চোখ থেকে অশ্রু বয়ে যাচ্ছিলো, (যুদ্ধে যাবার) খরচ যোগাড় করতে না পারায় তারা (ভীষণভাবে) দুঃখিত হলো ।

৯৩. (সব) অভিযোগ তো তাদের বিরুদ্ধে, যারা সামর্থবান হওয়া সত্ত্বেও তোমার কাছে অব্যাহতি চায়, যারা পেছনে পড়ে থাকলো তাদের সাথে (ঘরে বসে) থাকাই তারা পছন্দ করলো, আল্লাহ তায়ালা তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন, (এ কারণেই) তারা (তা) জানতে পারছে না (কোনটা তাদের জন্যে ভালো) |

৯৪. (যুদ্ধ শেষে) তোমরা যখন তাদের কাছে ফিরে আসবে; তখন এরা তোমাদের কাছে ওযর পেশ করবে, তুমি (তাদের) বলো, (আজ) তোমরা কোনো রকম ওযর আপত্তি পেশ করো না, আমরা আর কখনো তোমাদের বিশ্বাস করবো না, আল্লাহ তায়ালা (ইতিমধ্যেই) তোমাদের (অন্তরের) সব কথা আমাদের বলে দিয়েছেন; আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসুল অবশ্যই তোমাদের কার্যকলাপ দেখবেন, অতঃপর তোমাদের সেই মহান সত্তার কাছেই ফিরে যেতে হবে, যিনি (যেমন) জানেন তোমাদের গোপন করে রাখা সব কিছু, (তেমনি) জানেন প্রকাশ্য বিষয়সমূহ, অতঃপর তিনি (সে আলোকে) তোমাদের বলে দেবেন (দুনিয়ার জীবনে) তোমরা কি কাজ করছিলে |

৯৫. যখন তোমরা তাদের কাছে ফিরে আসবে, তখন তারা আল্লাহ তায়ালার নামে কসম করে তোমাদের বলবে, তোমরা যেন তাদের কাছ থেকে (এ) ব্যাপারটা উপেক্ষা করো; (আসলেই) তোমরা ওদের উপেক্ষা করো, কেননা ওরা হচ্ছে (চিন্তা ও আদর্শের দিক থেকে) নাপাক, তাদের ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম, (দুনিয়ার জীবনে) তারা যা কিছু করে এসেছে এটা হচ্ছে তার (যথার্থ) বিনিময় |

৯৬. এরা তোমাদের কাছে এ জন্যেই কসম করে যেন তোমরা (সব কথা ভুলে আবার) তাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যাও, কিন্তু তোমরা যদি (শত বারও) তাদের ওপর সন্তুষ্ট হও, আল্লাহ তায়ালা কখনো এ ফাসেক সম্প্রদায়ের ওপর সন্তুষ্ট হবেন না |

৯৭. (এ) বেদুইন (আরব) লোকগুলো কুফুর ও মোনাফেকীর ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর ( প্রকৃতির), আল্লাহ তায়ালা তাঁর রসুলের ওপর (স্বীয় দ্বীনের) সীমারেখার যে বিধানসমূহ নাযিল করেছেন, সে জ্ঞান লাভ না করার ক্ষমতাই মনে হয় এদের (মধ্যে) প্রবল; (মূলত) আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন সুবিজ্ঞ, কুশলী |

৯৮. (এ) বেদুঈন (আরব)-দের মধ্যে এমন কিছু লোকও আছে, যারা কখনো যদি (আল্লাহ তায়ালার পথে) কিছু ব্যয় করে, তাকে (নিজেদের ওপর) জরিমানাতুল্য মনে করে এবং তোমাদের ব্যাপারে কালের বিবর্তন (-মুলক কোনো বিপদ-মসিবত) আসুক তারা এ অপেক্ষায় থাকে; (আসলে) কালের মন্দচক্র তো তাদের (নিজেদের) ওপরই ছেয়ে আছে; (বস্তুত) আল্লাহ তায়ালা সব কিছু শোনেন, সব কিছু জানেন ।

৯৯. (আবার) এ বেদুঈন (আরব)-দের মাঝে এমন কিছু লোকও আছে, যারা আল্লাহ তায়ালা ও পরকালের ওপর ঈমান রাখে, (এরা) আল্লাহর পথে যা কিছু খরচ করে তাকে আল্লাহর নৈকট্যলাভ ও রসুলের দোয়া (পাওয়ার একটা অবলম্বন) মনে করে; সত্যি সত্যিই তা হচ্ছে তাদের জন্যে আল্লাহর নৈকট্যলাভের (একটা) উপায়; অচিরেই আল্লাহ তায়ালা তাদের স্বীয় রহমতে প্রবেশ করাবেন; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু |

১০০. মোহাজের ও আনসারদের মাঝে যারা প্রথম (দিকে ঈমান এনেছে) এবং পরে যারা একান্ত নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ তায়ালা তাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহ তায়ালার ওপর সন্তুষ্ট হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্যে এমন এক (সুরম্য) জান্নাত তৈরী করে রেখেছেন যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে; আর তাই (হবে) সর্বোত্তম সাফল্য |

১০১. (এ) বেদুঈন (আরব)-দের যারা তোমার আশেপাশে (বাস করে), তাদের মধ্যে কিছু কিছু মোনাফেক আছে; আবার (কিছু মোনাফেক) মদীনাবাসীদের মধ্যেও আছে। এরা সবাই কিন্তু মোনাফেকীতে সন্ধিহস্ত। তুমি এদের জানো না; কিন্তু আমি এদের জানি, অচিরেই আমি এদের (অপমান ও পরাজয়ের দ্বারা) দুবার শাস্তি দেবো, অতঃপর (ধীরে ধীরে) এদের সবাইকে এক বড়ো আযাবের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে ।

১০২. (তোমাদের মাঝে) আরো কিছু লোক আছে, যারা (অকপটে) নিজেদের গুনাহসমূহের কথা স্বীকার করে, (শয়তানের ফেরেবে) তারা তাদের নেক কাজকে গুনাহের কাজের সাথে মিশিয়ে ফেলেছে; আশা করা যায় আল্লাহ তায়ালা তাদের ওপর ক্ষমাপরবশ হবেন, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।

১০৩. তুমি তাদের ধন-সম্পদ থেকে (যাকাত ও) সাদকা গ্রহণ করো, সাদকা তাদের পাক-সাফ করে দেবে, তা দিয়ে তুমি তাদের পরিশোধিত করে দেবে, তুমি তাদের জন্যে দোয়া করবে; কেননা তোমার দোয়া তাদের জন্যে (হবে পরম) সান্ত্বনা; আল্লাহ তায়ালা সব কিছু শোনেন এবং সব কিছু জানেন।

১০৪. তারা কি একথাটা জানে না, আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং তিনি (যাকাত ও) সাদকা গ্রহণ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন তাওবা গ্রহণকারী ও পরম দয়ালু |

১০৫. (হে নবী, এদের) তুমি বলো, তোমরা (ভালো) কাজ করো, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা, তাঁর রসুল ও মোমেনরা তোমাদের (ভবিষ্যত) কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করবেন; অতঃপর মৃত্যুর পর তোমাদের সবাইকে এমন এক সত্তার দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে, যিনি দেখা-অদেখা সব কিছু সম্পর্কেই সম্যক অবগত, অতঃপর তিনি তোমাদের বলে দেবেন তোমরা (দুনিয়ার জীবনে) কোন ধরনের কাজ করছিলে,

১০৬. (তোমাদের মাঝে) আরো কিছু লোক রয়েছে, যাদের ব্যাপারে এখনো আল্লাহ তায়ালার সিদ্ধান্তের আশা করা হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা তাদের হয় শাস্তি দেবেন, না হয় তিনি তাদের ওপর দয়া পরবশ হবেন; (বস্তুত) আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন সুবিজ্ঞ, কুশলী |

১০৭. (মোনাফেকদের) যারা (তোমাদের ক্ষতি সাধন করার জন্যে) মাসজিদে যেরার বানিয়েছে, এর একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার বিরোধিতা করা, মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করা, (সর্বোপরি) আগে যেসব লোক আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর নবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তাদের জন্যে গোপন ঘাঁটি (সরবরাহ) করা; এরা তোমাদের কাছে শক্ত কসম খেয়ে বলবে, আমরা সৎ উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশে (এটা) করিনি; আল্লাহ তায়ালা (নিজে) সাক্ষ্য দিচ্ছেন, এরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী |

১০৮. তুমি (এবাদাতের উদ্দেশে কখনো) সেখানে দাঁড়াবে না তোমার তো দাঁড়ানো উচিত সেখানে, যে মাসজিদ প্রথম দিন থেকেই আল্লাহর ভয়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে এমন কিছু মানুষ আছে, যারা (ঈমান ও আমলের ক্ষেত্রে) নিজেরা সব সময় পাক-পবিত্র হওয়া পছন্দ করে; আর আল্লাহ তায়ালা তো পাক-সাফ লোকদেরই ভালোবাসেন |

১০৯. যে ব্যক্তি তার ঘরের ভিত্তি স্থাপন করেছে আল্লাহর ভয় ও আল্লাহর সন্তুষ্টির ওপর সে ব্যক্তি উত্তম, না যে ব্যক্তি তার ঘরের ভিত্তি দাঁড় করিয়েছে পতনোন্মুখ একটি গর্তের কিনারায় এবং যা তাকে সহ (অচিরেই) জাহান্নামের আগুনে গিয়ে পড়বে; আল্লাহ তায়ালা কখনো যালেম সম্প্রদায়কে হেদায়াত দেন না |

১১০. ওরা যা বানিয়েছে তা হামেশাই তাদের অন্তরে একটি সন্দেহের বীজ হয়ে (আটকে) থাকবে, যে পর্যন্ত না ওদের অন্তরসমূহ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে (তদ্দিন পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে); আল্লাহ তায়ালা সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময় |

১১১. অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা মোমেনদের কাছ থেকে জান্নাতের বিনিময়ে তাদের জান ও তাদের মাল খরিদ করে নিয়েছেন, এরা আল্লাহর পথে জেহাদ করে, অতঃপর (এ জেহাদে কখনো কাফেরদের) তারা হত্যা করে, (কখনো আবার শত্রুর হাতে) তারা নিজেরা নিহত হয়| তার ওপর (এ) খাঁটি ওয়াদা (এর আগে) তাওরাত এবং ইনজীলেও করা হয়েছিলো, আর (এখন তা) এ কোরআনে করা হচ্ছে, এই ওয়াদা পালন করা আল্লাহ তায়ালার নিজস্ব দায়িত্ব: আর আল্লাহর চাইতে কে বেশী ওয়াদা পূরণ করতে পারে? অতএব (হে মোমেনরা), তোমরা তাঁর সাথে যে কেনাবেচার কাজ (সম্পন্ন) করলে তাতে সুসংবাদ গ্রহণ করো (কেননা) এটিই হচ্ছে মহাসাফল্য ।

১১২. (যারা আল্লাহর দরবারে) তাওবা করে, (নিষ্ঠার সাথে তাঁর) এবাদাত করে, (তাঁর) প্রশংসা করে, (তাঁর জন্যে) রোযা রাখে, (তাঁর জন্যেই) রুকু-সাজদা করে, (যারা অন্যদের) ভালো কাজের আদেশ দেয় এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে, (সর্বোপরি যারা) আল্লাহ তায়ালার (নির্ধারিত হালাল-হারামের) সীমা রক্ষা করে চলে; (হে নবী,) তুমি (এ ধরনের সব) মোমেনদের (জান্নাতের) সুসংবাদ দাও |

১১৩. নবী ও তার ঈমানদার (সাথীদের) জন্যে এটা মানায় না যে, তারা মোশরেকদের জন্যে কখনো মাগফেরাতের দোয়া করবে, এমনকি যদি তারা তাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ও হয়, যখন এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, তারা (আসলেই) জাহান্নামের অধিবাসী!

১১৪. ইবরাহীমের স্বীয় পিতার জন্যে মাগফেরাতের ব্যাপারটি একটি ওয়াদা পালন ছাড়া আর কিছুই ছিলো না, যা সে তার পিতার কাছে (আগেই) করে রেখেছিলো, এ (ব্যতিক্রম)-টা ছিলো শুধু তার একার জন্যেই, কিন্তু যখন এ কথা তার সামনে পরিষ্কার হয়ে গেলো যে, সে অবশ্যই আল্লাহর দুশমন, তখন সে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেললো; অবশ্যই ইবরাহীম ছিলো একজন কোমল হৃদয় ও সহানুভূতিশীল মানুষ |

১১৫. আল্লাহ তায়ালা এমন নন যে, কোনো জাতিকে একবার হেদায়াতদানের পর পুনরায় তিনি তাদের গোমরাহ করে দেবেন, যতোক্ষণ না তাদের সুস্পষ্টভাবে (এ কথাটা) জানিয়ে দেয়া হয় যে, (কোন জিনিস থেকে) সাবধান থাকতে হবে, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা সব বিষয়ের জ্ঞান রাখেন |

১১৬. আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌম ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার হাতেই; তিনিই জীবন দেন, তিনিই মৃত্যু ঘটান; আল্লাহ তায়ালা ছাড়া তোমাদের কোনো অভিভাবক নেই, নেই কোনো সাহায্যকারীও |

১১৭. অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবীর ওপর অনুগ্রহ করেছেন, অনুগ্রহ করেছেন মোহাজেরদের ওপর, আনসারদের ওপর, যারা একান্ত কঠিন সময়ে তার অনুগমন করেছিলো তাদের (সবার) ওপর, এমনকি যখন তাদের একটি (ছোট্ট) দলের চিন্তা (একটু) বাঁকা পথে ঝুঁকে পড়ার উপক্রম হয়ে পড়েছিলো, অতঃপর আল্লাহ তায়ালা এদের সবার ওপর দয়া করলেন; নিশ্চয়ই তিনি ছিলেন তাদের প্রতি দয়ালু ও অনুগ্রহশীল,

১১৮. সে তিন ব্যক্তির ওপরও (আল্লাহ তায়ালা দয়া করলেন), যাদের ( ব্যাপারে) সিদ্ধান্ত মুলতবি করে রাখা হয়েছিলো; (তাদের অবস্থা) এমন এক পর্যায়ে (এসে পৌঁছুলো) যে, যমীন তার বিশালতা সত্ত্বেও তাদের ওপর সংকুচিত হয়ে গেলো, (এমনকি) তাদের নিজেদের জীবন নিজেদের কাছেই দুর্বিষহ হয়ে পড়লো, তারা (এ কথা ) উপলব্ধি করতে সক্ষম হলো যে, (আসলেই) আল্লাহ তায়ালা ছাড়া তাদের আর কোনো জায়গা নেই যেখানে কোনো আশ্রয় পাওয়া যাবে; অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাদের ওপর অনুগ্রহ করলেন যেন তারা (তাওবা করে) পুনরায় তাঁর কাছে ফিরে আসতে পারে; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু |

১১৯. হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো এবং (হামেশা) সত্যবাদীদের সাথে থেকো |

১২০. মদীনার (মূল) অধিবাসী ও তাদের আশেপাশের বেদুঈন (আরব)-দের জন্যে এটা সংগত ছিলো না যে, তারা রসুলের সহগামী না হয়ে পেছনে থেকে যাবে এবং তাঁর জীবন থেকে নিজেদের জীবনকে বেশী প্রিয় মনে করবে; (আসলে) এটা এ জন্যে, আল্লাহ তায়ালার পথে তাদের যে তৃষ্ণা, ক্লান্তি ও ক্ষুধায় কষ্ট পাওয়া (তা তাদের নেক আমলের মধ্যেই শামিল হবে, তাছাড়া) এমন কোনো স্থানে তারা যাবে, যেখানে যাওয়ায় কাফেরদের তাদের ওপর ক্রোধ আসবে এবং শত্রুদের কাছ থেকেও (মোকাবেলার সময়) তারা কিছু (সম্পদ) লাভ করবে, (মূলত) এর প্রতিটি কাজের বদলে তাদের জন্যে নেক আমল লেখা হবে; নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা নেক লোকদের কাজের প্রতিফল বিনষ্ট করেন না,

১২১. (এভাবেই) তারা আল্লাহর পথে যা খরচ করে (তা পরিমাণে) কম হোক কিংবা বেশী (তা বিনষ্ট হয় না) এবং যদি তারা আল্লাহর উদ্দেশে কোনো প্রান্তর অতিক্রম করে চলে, তাও তাদের জন্যে লিপিবদ্ধ হবে, যাতে করে তারা (দুনিয়ায়) যা কিছু করে এসেছে, (আখেরাতে) আল্লাহ তায়ালা তার চাইতে উত্তম পুরস্কার তাদের দিতে পারেন ।

১২২. মোমেনদের কখনো (কোনো অভিযানে) সবার একত্রে বের হওয়া ঠিক নয়; (তারা) এমন কেন করলো না যে, তাদের প্রত্যেক দল থেকে কিছু কিছু লোক বের হতো এবং দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞানানুশীলন করতো, অতঃপর যখন তারা (অভিযান শেষে) নিজ জাতির কাছে ফিরে আসতো, তখন তাদের জাতিকে তারা (আযাবের) ভয় দেখাতো, আশা করা যায় এতে তারা সতর্ক হয়ে চলবে |

১২৩. হে ঈমানদার লোকেরা, কাফেরদের মধ্যে যারা তোমাদের (সীমান্তের) কাছাকাছি রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে জেহাদ করো, (এমনভাবে জেহাদ করো) যেন তারা তোমাদের মধ্যে কঠোরতা (দেখতে) পায়; (জেনে রেখো,) আল্লাহ তায়ালা (হামেশাই) মোত্তাকী লোকদের সাথে রয়েছেন।

১২৪. যখন কোনো (নতুন) সুরা নাযিল হয় তখন এদের কিছু লোক এসে (বিদ্রূপের ভাষায়) জিজ্ঞেস করে, এ (সুরা) তোমাদের কার কার ঈমান বৃদ্ধি করেছে! (তোমরা বলো, হাঁ) যারা (সত্যি আল্লাহর ওপর) ঈমান এনেছে, এ সুরা (অবশ্যই) তাদের ঈমান বৃদ্ধি করেছে এবং (এর ফলে) তারা আনন্দিতও হয়েছে ।

১২৫. আর যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, এ (সুরা তাদের মধ্যে আগের জমে থাকা) নাপাকীর সাথে আরো কিছু নতুন) নাপাকী (যুক্ত করে) দিয়েছে এবং তারা (এ নাপাকী ও) কাফের অবস্থায় মারা যাবে |

১২৬. তারা কি দেখতে পায় না, প্রতিবছর তাদের কিভাবে (বিভিন্ন পরীক্ষায় ফেলে) একবার কিংবা দুবার বিপর্যস্থ করা হচ্ছে, এরপরও তারা তাওবা করে না এবং (এ বিপর্যয় থেকে) তারা কোনো শিক্ষাও গ্রহণ করে না ।

১২৭. আর যখনি কোনো নতুন সুরা নাযিল হয় তখন তারা পরস্পর চোখ চাওয়া-চাওয়ি করে (এবং ইশারায় একে অপরকে জিজ্ঞেস করে); ‘কেউ কি তোমাদের দেখতে পাচ্ছে?' অতঃপর তারা (হেদায়াত থেকে) ফিরে যায়; আর আল্লাহ তায়ালা তাদের অন্তরকে এভাবেই (সত্য থেকে) ফিরিয়ে দিয়েছেন, কেননা এরা হচ্ছে এমন সম্প্রদায়ের লোক, যারা কিছু অনুধাবন করে না ।

১২৮. (হে মানুষ,) তোমাদের কাছে তোমাদেরই মধ্য থেকে এক রসুল এসেছে, তোমাদের কোনোরকম কষ্ট ভোগ তার কাছে দুঃসহ, সে তোমাদের একান্ত কল্যাণকামী, ঈমানদারদের প্রতি সে হচ্ছে স্নেহপরায়ণ ও পরম দয়ালু |

১২৯. এরপরও যদি এরা (এমন কল্যাণকামী একজন রসুলের কাছ থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তুমি (তাদের খোলাখুলি) বলে দাও, আল্লাহ তায়ালাই আমার জন্যে যথেষ্ট, তিনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই; (সমস্যায় সংকটে) আমি তাঁর ওপরই ভরসা করি এবং তিনিই হচ্ছেন মহান আরশের একচ্ছত্র অধিপতি |


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url