কুরআনের গল্পঃ হযরত ইদরিস (আঃ)-এর আবির্ভাব, তার ধর্ম প্রচার ও বেহেস্তে গমণের কাহিনী



হযরত ইদরিস (আঃ)

পাপীষ্ঠ ইবলীস মূর্তি পূজার প্রথা প্রচলন করে দেয়ার পর দীর্ঘকাল দুনিয়ার লোকজন তাতে লিপ্ত থাকে। মহান স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালার ইবাদাতের কথা মানুষ একেবারেই ভুলে যায়। এভাবে দীর্ঘদিন অতিবাহিত হবার পর আল্লাহ তায়ালা আবার তাদেরকে সৎপথ প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে হযরত ইদরিস (আঃ)-কে নবী রূপে পাঠালেন।

হযরত ইদরিস (আঃ)-এর আবির্ভাব


পাপীষ্ঠ ইবলীস মূর্তি পূজার প্রথা প্রচলন করে দেয়ার পর দীর্ঘকাল দুনিয়ার লোকজন তাতে লিপ্ত থাকে। মহান স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালার ইবাদাতের কথা মানুষ একেবারেই ভুলে যায়। এভাবে দীর্ঘদিন অতিবাহিত হবার পর আল্লাহ তায়ালা আবার তাদেরকে সৎপথ প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে হযরত ইদরিস (আঃ)-কে নবী রূপে পাঠালেন।

হযরত ইদরিস (আঃ) সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এভাবে উল্লেখিত হয়েছে-

 ১৯:৫৭ وَّ رَفَعۡنٰهُ مَکَانًا عَلِیًّا  ১৯:৫৬ وَ اذۡکُرۡ فِی الۡکِتٰبِ اِدۡرِیۡسَ ۫ اِنَّهٗ کَانَ صِدِّیۡقًا نَّبِیًّا  

অর্থঃ “(হে নবী!) স্মরণ করুন এ কিতাবে উল্লেখিত ইদ্রীসের কথা। সে ছিল সত্যনিষ্ঠ নবী এবং আমি তাকে উন্নীত করেছিলাম উচ্চ মর্যাদায়। (সূরা মারয়াম : ৫৬-৫৭)

উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহ তা'আলা হযরত ইদ্রীস (আঃ) কে নবী ও সিদ্দীক (সত্যবাদী) বলে প্রশংসা করেছেন। আর ইনিই হলেন উপরোল্লেখিত “খানুখ”। কতিপয় আলিমের বর্ণনা মতে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বংশ তালিকা এখানে গিয়ে মিলে যায়। হযরত আদম (আঃ) ও শীস (আঃ)-এর পরে তাঁকেই সর্ব প্রথম নবুওয়াত প্রদান করা হয়। আল্লামা ইসহাক (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, পৃথিবীতে যিনি সর্ব প্রথম কলম দ্বারা লেখা শুরু করেন, তিনিই হলেন হযরত ইদ্রীস (আঃ)। তিনি হযরত আদম (আঃ)-এর হায়াতের তিনশত আট বছর পেয়েছিলেন। কতিপয় লোকের বর্ণনা মতে, মুআবিয়া ইবনে হাকাম মুলামী এর হাদীছে যে নবীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তিনিই ছিলেন এই নবী। হাদীস খানা এই যে, একবার হযরত মু'আবিয়া ইবনে হাকাম রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে গণনার রেখা সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। (যা হচ্ছে, বালুর উপর কতকগুলো বিশেষ রেখা টেনে বিভিন্ন বিষয় গণনা করা হতো।) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জবাবে বললেন, একজন পয়গম্বর ছিলেন। যিনি এ গণনার রেখা (বালুর উপর) টানতেন। সুতরাং যে ব্যক্তির রেখা সেই (নবীর) রেখার মত হবে সেটা সঠিক।

অধিকাংশ তাফসীরকারগণের বক্তব্য এই যে, সর্ব প্রথম যিনি ওয়াজ নসীহতের মাধ্যমে দ্বীনের প্রচার কাজ শুরু করেন, তিনিই হলেন এই ব্যক্তি । এ কারণেই তাঁর প্রতি অনেক মিথ্যা ও মনগড়া কথা আরোপ করা হয়েছে, যেরূপ করা হয়েছিল অন্যান্য নবী, ওলী ও বিশিষ্ট আলিম ও পন্ডিতগণের প্রতি । আল্লাহ তা'আলা বলেন-

 ১৯:৫৭ وَّ رَفَعۡنٰهُ مَکَانًا عَلِیًّا 

অর্থঃ “এবং আমি তাকে উন্নীতকরেছিলাম উচ্চ মর্যাদায়” (সূরা মারয়ামঃ৫৭ ) 

এ প্রসঙ্গে বুখারী ও মুসলিম শরীফে মে'রাজের হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মে'রাজের রাতে চতুর্থ আকাশে তাঁর কাছ থেকে গমন করেছিলেন।

এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আওফী (রহঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর একটি উক্তি বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, হযরত ইদ্রীস (আঃ) কে ষষ্ট আকাশে তুলে নেয়া হয় এবং সেখানে বসেই তাঁর ওফাত হয়। হযরত যিহাক (রহঃ) এরও এই অভিমত। কিন্তু ইমাম বুখারী ও মুসলিম (রহঃ)-এর এই হাসীছে যে, “তিনি চতুর্থ আকাশে আছেন,” সেটিই অধিক বিশুদ্ধ। মুজাহিদ (রহঃ) এবং অনেক আলিমগণেরও এই অভিমত। হযরত হাসান বসরী (রহঃ) বলেন, এ আয়াত দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, তাঁকে জান্নাতে তুলে নেয়া হয়েছে। অনেকে বলেন যে, তাঁকে তার পিতা য়ারদ ইবনে মাহলাইলের বেঁচে থাকা অবস্থায়ই তুলে নেয়া হয়েছে।

অর্থাৎ কিতাবে উল্লিখিত ইদরিস (আঃ)-কে স্মরণ কর। নিশ্চয় সে সত্য নবী এবং আল্লাহ তায়ালা তাঁকে উচ্চতর জায়গায় উঠিয়ে নিয়েছিলেন।

ইতিহাসের প্রথম বক্তা হযরত ইদরিস (আঃ)


হযরত ইদরিস (আঃ)-এর মূল বা আসল নাম ছিল আখনুক। তবে তাঁর নাম ইদরিস হবার কারণ হল, তিনি দেশের জনসাধারণকে শিক্ষা-দীক্ষায় উপযুক্তরূপে গড়ে তুলেছিলেন।  শিক্ষা দেয়াকে দারস বা প্রশিক্ষণ বলা হয় । আর সে দারস শব্দ হতেই ইদরিস শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। সর্ব প্রথম যিনি ওয়াজ নসীহতের মাধ্যমে দ্বীনের প্রচার কাজ শুরু করেন, তিনিই হলেন হযরত ইদরিস (আঃ) । এ কারণেই তাঁর প্রতি অনেক মিথ্যা ও মনগড়া কথা আরোপ করা হয়েছে, যেরূপ করা হয়েছিল অন্যান্য নবী, ওলী ও বিশিষ্ট আলিম ও পন্ডিতগণের প্রতি ।

হযরত ইদরিস (আঃ) একদিকে যেমন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন, অন্যদিকে তিনি নানা গুণেও বিভূষিত ছিলেন। অধিকাংশ সময়ই তিনি মানুষকে শিক্ষা প্রদান করতেন এবং তাদের মাঝে ওয়াজ নসিহত করতেন এবং ইবাদাত-বন্দেগীতে লিপ্ত থাকতেন। তাঁর সম্পর্কে জানা যায় যে, তিনি নিজের জামা-কাপড় নিজেই সেলাই করে ব্যবহার করতেন। অন্যের জামা-কাপড়ও সেলাই করে দিতেন। অবশ্য সেজন্য তিনি কারও নিকট হতে কোন প্রকার মজুরী বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করতেন না।

তিনি এমনই ইবাদাতকারী ব্যক্তি ছিলেন যে, একদিকে তিনি কাজ করতেন, অন্যদিকে মনে মনে যিকির করতেন। শুনা যায়, জামাকাপড় সেলাই করাকালে সূচের প্রতিটি ফোড়ে ফোড়ে তিনি আল্লাহর নামের তাসবীহ পাঠ করতেন।

হযরত ইদরিস (আঃ) এর বেহেশতে গমন


হযরত ইদরিস (আঃ) জীবনে বহু মা'জেযা দেখাতেন। তন্মধ্যে একটি প্রধান মা'জেযা এই যে, তিনি যেসব ভবিষ্যত বাণী করতেন, তা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবে পরিণত হত। তাঁর অত্যধিক ইবাদাতে আনন্দিত হয়ে বিভিন্ন সময়ে ফেরেশতাগণ তাঁকে আসমানে নিয়ে যেতেন।

এ সম্পর্কিত একটি ঘটনা তাঁর জীবনের সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য ঘটনারূপে পরিচিত। একদিন তিনি তাসবীহ তাহলীল পাঠে রত ছিলেন। এমন সময়ে হঠাৎ ফেরেশতা আজরাইল (আঃ) জনৈক সাধারণ মানুষের বেশে এসে তাঁর সামনে দন্ডায়মান হলেন। তিনি তাকে জনৈক বিদেশী মেহমান মনে করে যথা উপযুক্ত অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করলেন।

হযরত ইদরিস (আঃ) সর্বদা রোযা রাখতেন এবং প্রত্যহ সন্ধ্যার পূর্বে তাঁর ইফতারের জন্য বেহেশত হতে খাবার আসত। তিনি সে বেহেশতী খাবার দ্বারা ইফতার করতেন। ইফতার করে যা অবশিষ্ট থাকত তা আবার বেহেশতে ফিরে যেত। সেদিনও বেহেশত হতে খাবার আসলে তিনি বেহেস্তি খাবার দ্বারা ইফতার করলেন এবং মেহমানকেও তা খেতে দিলেন। উক্ত মেহমানরূপী ফেরেশতা আজরাইল (আঃ) খানা খাইলেন না; বরং সারারাত্র ইবাদাতে অতিবাহিত করলেন।

মেহমান ব্যক্তির আচার-আচরণে আরও কতকগুলো বৈশিষ্ট্য দেখা গেল, যা দেখে হযরত ইদরিস (আঃ) বিস্ময়বোধ করলেন।

পরদিন ভোরবেলা হযরত ইদরিস (আঃ) মেহমানকে বললেন, ওহে আগন্তক মেহমান! চলুন আমরা একটু ভ্রমণ করে আল্লাহ তায়ালার কুদরতসমূহ দেখে আসি।

মেহমান তাতে সম্মত হয়ে দুজন একত্রে ভ্রমণে বের হলেন, কিছুদূর গিয়ে হঠাৎ মেহমান বললেন, চলুন, আমরা ঐ ক্ষেত হতে কিছু ফল তুলে এনে দুজনে ভক্ষণ করি। হযরত ইদরিস (আঃ) তাতে বেশ কিছুটা আশ্চর্য ও ক্ষোভ মিশ্রিত কণ্ঠে বললেন, আপনি তো ভারী আশ্চর্য মানুষ! রাতে আপনি হালাল খানা খেলেন না, অথচ এখন অপরের ক্ষেত হতে ফল তুলে খেতে চাইছেন। অন্যের মাল না বলে গ্রহণ করা আমাদের জন্য একেবারে নিষিদ্ধ।

মেহমান তাঁর কথার কোন জবাব না দিয়ে সামনে অগ্রসর হতে লাগলেন। কিছুদূর সামনে গমন করে একস্থানে কতকগুলো ছাগল চরিতে দেখে মেহমান হযরত ইদরিস (আঃ)-কে বললেন, চলুন ওখান হতে একটা ছাগল এনে আমরা যবেহ করি। তা বেশ করে খাওয়া যাবে। হযরত ইদরিস (আঃ) বললেন, অপরের ছাগল যবেহ করে খাওয়া যে পাপের কাজ, তা কি আপনার জানা নেই?

ইদরিস (আঃ)-এর স্বেচ্ছায় মরণবরণ


এভাবে আগন্তুক ব্যক্তি তিনদিন পর্যন্ত হযরত ইদরিস (আঃ)-এর সাথে থাকলেন। তার আচরণাদি লক্ষ্য করে হযরত ইদরিস (আঃ)-এর মনে সন্দেহের উদ্রেক হল যে, এ ব্যক্তি নিশ্চয় কোন মনুষ নহে। অতএব তিনি বললেন, আল্লাহর কসম আপনি আপনার প্রকৃত পরিচয়টা বলুন। মেহমান বললেন, আমি কোন মানুষ নয়। আমি একজন ফেরেশতা। আমার নাম মালাকুল মওত আজরাঈল (আঃ)। হযরত ইদরিস (আঃ) বললেন, আপনিই কি দুনিয়ার সকল প্রাণীর জান কবজ করে থাকেন? মালাকুল মওত বললেন- হাঁ। তখন হযরত ইদরিস (আঃ) বললেন, তবে মনে হয় আপনি আমার জান কবজ করতে এসেছেন। মালাকুল মওত বললেন, না, আপনার সাথে ভাই সম্পর্ক করতে এসেছি। আমার একান্ত আশা যে, আপনিও আমার এ প্রস্তাবে রাজী হবেন।

হযরত ইদরিস (আঃ) বললেন, আমি আপনার সাথে এ শর্তে ভাই সম্পর্ক করতে পারি যে, আপনি আমাকে একবার মৃত্যুর অবস্থাটা উপভোগ করাবেন। যদি আপনি আমাকে এখনই একবার মৃত্যুর অবস্থাটা উপভোগ করান, তা হলে আমার অনেকটা উপকার হত। মৃত্যুর ভয়ে আমি বেশি করে আল্লাহর ইবাদাত করতে পারতাম ।

মালাকুল মওত বললেন, আল্লাহর অনুমতি ছাড়া তো আমি পারি না । যেহেতু এখন তো আপনার মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয়নি ।

হযরত ইদরিস (আঃ) বললেন, আপনি আল্লাহর নিকট হতে অনুমতি গ্রহণ করে নিন। তখন মালাকুল মওত আল্লাহর দরবারে অনুমতির দোয়া করলেন। আল্লাহ তাঁকে অনুমতি প্রদান করলেন। অনুমতি পেয়ে আজরাঈল হযরত ইদরিস (আঃ)-এর জান কবজ করলেন। তাঁর মৃত্যু হওয়ার পরই মালাকুল মওত তাঁকে আবার জীবিত করে দেয়ার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন। আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করে হযরত ইদরিস (আঃ)-কে আবার জীবিত করে দিলেন।

এরপর ফেরেশতা জিব্রাঈল (আঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ভাই ইদরিস (আঃ)! বলুন তো জান কবজের অবস্থাটা আপনার নিকট কিরূপ মনে হয়েছিল? হযরত ইদরিস (আঃ) জবাবে বললেন, ভাই মালাকুল মওত! কোন জীবিত প্রাণীর শরীরের চামড়া মাথা হতে পা পর্যন্ত টেনে খসিয়ে ফেললে প্রাণীটির যেমন কষ্ট হয় আমার তদ্রূপ কষ্ট অনুভূত হয়েছিল।

ফেরেশতা আজরাঈল বললেন, ভাই ইদরিস (আঃ)! আমি আজ পর্যন্ত যত জান কবজ করেছি, এত সহজে কারও জান কবজ করিনি। আপনার যাতে অল্প কষ্ট হয়, আমি সেদিকে খুবই লক্ষ্য রেখেছিলাম ।

যা হোক এরপর ইদরিস (আঃ) বললেন, ভাই আজরাঈল! আমার মনে দোজখ দেখার খুবই সাধ জাগিয়াছে। যদি আপনি আমাকে দোজখ দেখাতেন, তবে দোজখের ভয়ে আমি ইবাদাত-বন্দেগীতে আরও বেশি মনোযোগী হতে পারতাম ।

তাঁর প্রস্তাব মঞ্জুর করে আজরাইল (আঃ) তাঁকে দোজখের দরজা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন । তিনি দোজখ দেখার পর বললেন, ভাই আজরাঈল (আঃ)! আমার মনে বেহেশত দেখারও অত্যন্ত আগ্রহ জেগেছে। যদি আপনি আমার এ সাধটি পূর্ণ করতেন, তবে আমি চিরকৃতজ্ঞ হয়ে থাকতাম ।

মালাকুল মওত বললেন, যদি আপনি আমার নিকট প্রতিশ্রুতি দেন যে, বেহেশত দেখেই আমার নিকট ফিরে আসবেন, তা হলে আপনাকে বেহেশত দেখাতে পারি।

হযরত ইদরিস (আঃ) তাতে রাজী হলে আজরাঈল (আঃ) তাঁকে বেহেশতের দরজায় পৌঁছে দিলেন। তিনি বেহেশতের দরজায় নিজের জুতা খুলে রেখে তার ভিতরে প্রবেশ করে কিছুক্ষণ ঘুরা ফিরা করলেন। তারপর ফিরে এসে নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলেন, কিন্তু আবার পরক্ষণেই জুতা পায় দিয়ে এক দৌড়ে বেহেশতের ভিতরে ঢুকে পড়লেন।

মালাকুল মওত তাঁকে ডেকে বললেন, ভাই ইদরিস (আঃ)! আপনি আবার বেহেশতে ঢুকলেন কেন? তাড়াতাড়ি চলে আসুন। আমি আপনাকে দুনিয়ায় পৌঁছে দিয়ে আমার অন্যান্য কাজে রত হব।

হযরত ইদরিস (আঃ) বেহশতের ভিতর হতে জবাব দিলেন, ভাই মালাকুল মওত ! আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন- প্রত্যেক প্রাণীই একবার মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে এবং একবার দোজখ না দেখে কেউই বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না। আমি তো একবার মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করলাম এবং দোজখও দেখলাম। তারপর বেহেশত হতে বের হয়ে আপনার সাথে আমার ওয়াদাও পালন করলাম। অতএব এখন আর আমি বেহেশত হতে বের হব না, আপনি এবার আপনার কাজে চলে যান।

ফেরেশতা আজরাঈল (আঃ) হযরত ইদরিস (আঃ)-এর কথা শুনে কর্তব্য স্থির করতে না পেরে দাঁড়িয়ে রইলেন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আজাঈলকে লক্ষ্য করে বললেন, 'আজরাঈল ! ইদরিসকে বেহেশতেই থাকতে দাও। তার অদৃষ্টে আমি এরূপ ঘটনাই লিপিবদ্ধ করে রেখেছিলাম।' এরপর হযরত ইদরিস (আঃ) মহা সুখে বসবাস করতে লাগলেন। এদিকে কিন্তু তাঁর পরিবারবর্গ তাঁর বিচ্ছেদে কেঁদে দিন কাটতে লাগল।

ইবলীসের ছলনা ও পূনরায় মূর্তি পূজার প্রচলন


কিছুদিন পর পাপীষ্ঠ ইবলীস একদিন হযরত ইদরিস (আঃ)-এর সন্তান-সন্ততির কাছে উপস্থিত হয়ে বলল, তোমাদের পিতার জন্য এভাবে দিনরাত ক্রন্দন করে কি লাভ হবে? আমি তোমাদের পিতার জনৈক ভক্ত উম্মত। তাঁর সমস্ত উম্মতের মধ্যে আমিই ছিলাম তাঁর সবচেয়ে প্রিয় ও স্নেহের পাত্র। তিনি জীবিত থাকাকালেই তাঁর অবিকল আকৃতির একটি পাথরের মূর্তি তৈরি করে আমার নিকট দিয়ে বলে গিয়াছেন যে, আমার বেহেশত গমনের পর তোমরা সকলে আমার এ মূর্তিকেই ভক্তি-শ্রদ্ধা করবে এবং এর চারদিকে ঘুরে একে তাওয়াফ করবে। অনবরত এর পূজা-অর্চনা করবে। তা হলে আমি তোমাদের প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট থাকব এবং তোমাদের প্রত্যেকের ভালোর জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করব।

পাপীষ্ঠ ইবলীসের ছলনায় হযরত ইদরিস (আঃ)-এর সন্তানগণ ভুলে গেল এবং তারা ঐ মূর্তিটিকে একটি পাহাড়ের উপর স্থাপন করে তার পূজা ও তাওয়াফ প্রভৃতি করতে শুরু করল। ঐ মূর্তিটা হুবহু ইদরিস (আঃ)-এর মতই ছিল। যে লোক তা দেখত, সে-ই মনে করত যে, হযরত ইদরিস (আঃ)-ই পাহাড়ের উপর উপবিষ্ট আছেন ।

ইবলীস হযরত ইদরিস (আঃ)-এর সন্তানদের হাতে মূর্তিটা দিয়েই তার কর্তব্য শেষ করল না। সে ঐ মূর্তি সম্পর্কে যে কথা হযরত ইদরিস (আঃ)-এর সস্তানদের কাছে বলেছিল সে কথা সারা দেশে ঘুরে ঘুরে প্রচার করতে লাগল। ফলে দেশের সকলেই এসে হযরত ইদরিস (আঃ)-এর মূর্তির পূজা করতে আরম্ভ করল।

ক্রমে অবস্থা এই দাঁড়াল যে, হযরত ইদরিস (আঃ)-এর প্রচারিত সত্য ধর্মের রীতিনীতি সম্পূর্ণ রূপে বিলুপ্ত হয়ে মূর্তি পূজার ব্যাপক প্রসার লাভ করল। সকলেই তাকে প্রকৃত ধর্মনীতি বলে মনে করতে লাগল ।

(এই লেখাটি আলহাজ্ব মাওলানা লুৎফুল আলম রচিত ও ছারছীনা প্রকাশনী হতে প্রকাশিত “কুরআনের শ্রেষ্ট কাহিনী” গ্রন্থ অবলম্বনে তৈরী করা হয়েছে)


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url