আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা ইবরাহীম’এর বাংলা অনুবাদ | সূরা ইবরাহীম | Surah Ibrahim | إبراهيم


সূরা ইবরাহীম-এর বাংলা অনুবাদ


সূরা ইবরাহীম, মক্কায় অবতীর্ণ- আয়াত ৫২, রুকু ৭

সূরা ইবরাহীম


রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে


১. আলিফ, লা-ম, রা] (এ কোরআন) এমন এক গ্রন্থ, যা আমি তোমার ওপর নাযিল করেছি, যাতে করে তুমি (এর দ্বারা) এমন মানুষদের তাদের মালিকের আদেশক্রমে (জাহেলিয়াতের) যাবতীয় অন্ধকার থেকে (ঈমানের) আলোতে বের করে আনতে পারো, তাঁর পথে, যিনি মহাপরাক্রমশালী ও যাবতীয় প্রশংসা পাবার যোগ্য!

২. সে আল্লাহর (পথে), যাঁর জন্যে আকাশমন্ডলী ও যমীনে যা কিছু আছে সব কিছু (নিবেদিত), যারা (এ সত্ত্বেও আল্লাহকে) অস্বীকার করে তাদের জন্যে কঠিন শাস্তি (রয়েছে)।

৩. (এ শাস্তি তাদের জন্যে) যারা পার্থিব জীবনকে পরকালীন জীবনের ওপর প্রাধান্য দেয়, (মানুষদের) আল্লাহর (সহজ সরল) পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়, (সর্বোপরি) এ (পথ)-টাকে (নিজেদের খেয়াল খুশীমতো) বাঁকা করতে চায়, এরাই হচ্ছে সেসব লোক যারা মারাত্মক গোমরাহীতে নিমজ্জিত রয়েছে।

৪. আমি কোনো নবীই এমন পাঠাইনি, যে (নবী) তার জাতির (মাতৃ)-ভাষায় (আমার বাণী তাদের কাছে পৌঁছায়নি), যাতে করে সে তাদের কাছে (আমার আয়াত) পরিষ্কার করে বুঝিয়ে বলতে পারে; অতপর আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকে গোমরাহ করেন, আবার যাকে তিনি চান তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন; তিনি মহাপরাক্রমশালী ও মহাকুশলী।

৫. আমি মুসাকে অবশ্যই আমার নিদর্শনসমূহদিয়ে (তার জাতির কাছে) পাঠিয়েছি, তোমার জাতিকে জাহেলিয়াতের অন্ধকার থেকে (ঈমানের) আলোতে বের করে নিয়ে এসে এবং তুমি তাদের আল্লাহর (অনুগ্রহের বিশেষ) দিনগুলোর কথা স্মরণ করাও; যারা একান্ত ধৈর্যশীল ও পরম কৃতজ্ঞতাপরায়ণ, তাদের জন্যে এ (ঘটনার) মাঝে (অনেক) নিদর্শন রয়েছে।

৬. মুসা যখন তার জাতিকে বলেছিলো, তোমরা তোমাদের ওপর আল্লাহ তায়ালার নেয়ামতসমূহের কথা স্মরণ করো, (বিশেষ করে) যখন তিনি তোমাদের ফেরাউনের সম্প্রদায় থেকে মুক্তি দিলেন, যারা তোমাদের কঠোর শাস্তি দিতো, তোমাদের ছেলেদের হত্যা করতো, তোমাদের মেয়েদের জীবিত রাখতো; তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে তোমাদের জন্যে এতে বড়ো ধরনের একটি পরীক্ষা নিহিত ছিলো।

৭. (স্মরণ করো,) যখন তোমাদের মালিক ঘোষণা দিলেন, যদি তোমরা (আমার অনুগ্রহের) শোকর আদায় করো তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের জন্যে (এ অনুগ্রহ) আরো বাড়িয়ে দেবো, আর যদি তোমরা (একে) অস্বীকার করো (তাহলে জেনে রেখো), আমার আযাব বড়োই কঠিন!

৮. মুসা (তার জাতিকে আরো) বলেছিলো, তোমরা এবং পৃথিবীর অন্য সব মানুষ একত্রেও যদি (আল্লাহর নেয়ামত) অস্বীকার করো (তাতে আল্লাহর কিছুই ক্ষতি হবে না), কেননা আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন যাবতীয় অভাব অভিযোগ থেকে মুক্ত, প্রশংসার দাবীদার।

৯. তোমাদের কাছে কি তোমাদের আগেকার লোকদের সংবাদ এসে পৌঁছয়নি- নহ, আদ, সামুদ সম্প্রদায় ও তাদের পরবর্তী জাতিসমূহের; যাদের (বিবরণ) আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কেউই জানে না; (সবার কাছেই) তাদের নবীরা আমার আয়াতসমূহনিয়ে এসেছিলো, অতপর তারা তাদের নিজেদের হাত তাদের মুখে রেখে কথা বলতে তাদের) বাধা দিতো এবং বলতো, যা (কিছু পয়গাম) নিয়ে তুমি আমাদের কাছে প্রেরিত হয়েছো, তা আমরা (সষ্টিত) অস্বীকার করি, (তা ছাড়া) যে (দ্বীনের) দিকে তুমি আমাদের ডাকছো সে বিষয়েও আমরা সন্দেহে নিমজ্জিত আছি।

১০. তাদের রসুলরা (তাদের) বললো, তোমাদের কি আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে কোনো সন্দেহ রয়েছে- যিনি আসমানসমূহও যমীনের সৃষ্টিকর্তা; তিনি তোমাদের (তাঁর নিজের দিকে) ডাকছেন, যেন তিনি তোমাদের গুনাহসমূহমাফ করে দিতে পারেন এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদের অবকাশ (দিয়ে সংশোধনের সুযোগ) দিতে পারেন; (একথার ওপর) তারা বললো, তোমরা তো হচ্ছো আমাদের মতোই (কতিপয়) মানুষ; আমাদের বাপ-দাদারা যাদের এবাদাত করতো, তোমরা কি তা থেকে আমাদের বিরত রাখতে চাও? (তাহলে তোমাদের দাবীর পক্ষে) অতপর আমাদের কাছে কোনো সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণ নিয়ে এসো ।

১১. নবীরা তাদের বললো (এটা ঠিক), আমরা তোমাদের মতো কতিপয় মানুষ ছাড়া অন্য কিছু ন‍ই, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে চান (নবুওতের দায়িত্ব দিয়ে) তার ওপর তিনি অনুগ্রহ করেন; আর আল্লাহ তায়ালার অনুমতি ব্যতিরেকে দলীল উপস্থাপনের কোনো ক্ষমতাই আমাদের নেই; আর ঈমানদারদের তো (এসব ব্যাপারে) আল্লাহর (ফয়সালার) ওপরই নির্ভর করা উচিত।

১২. (তা ছাড়া) আমরা আল্লাহ তায়ালার ওপর নির্ভর করবোই না কেন? তিনিই আমাদের (জাহেলিয়াতের অন্ধকার থেকে আলোর) পথসমুহদেখিয়ে দিয়েছেন; (এ আলোর পথে) তোমরা আমাদের যে কষ্ট দিচ্ছো তাতে অবশ্যই আমরা ধৈর্য ধারণ করবো; (আর কারো ওপর) নির্ভর করতে হলে সবার আল্লাহর ওপরই নির্ভর করা উচিত।

১৩. কাফেররা তাদের রসুলদের বললো, আমাদের (ধর্মীয়) গোত্রে তোমাদের ফিরে আসতেই হবে, নতুবা আমরা তোমাদের আমাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করে দেবো; অতপর (ঘটনা চরমে পৌঁছলে) তাদের মালিক তাদের কাছে (এই বলে) ওহী পাঠালেন, আমি অবশ্যই যালেমদের বিনাশ করে দেবো,

১৪. আর তাদের (নিম্ন ল করে দেয়ার) পর তাদের জায়গায় আমি অবশ্যই তোমাদের প্রতিষ্ঠিত করবো; (আমার) এ (পুরস্কার) এমন প্রতিটি মানুষের জন্যে, যে ব্যক্তি আমার সামনে (জবাবদিহিতার জন্যে) দাঁড়ানোকে ভয় করে এবং (আমার) কঠোর শাস্তিকেও ভয় করে।

১৫. (এর মোকাবেলায়) ওরা (একটা চূড়ান্ত) ফয়সালা চাইলো- আর (সে ফয়সালা মোতাবেক) প্রত্যেক দুরাচার ও স্বৈরাচারী ব্যক্তিই ধ্বংস হয়ে গেলো।

১৬. তার একটু পেছনেই রয়েছে জাহান্নাম, (সেখানে) তাকে গলিত পুঁজ (জাতীয় পানি) পান করানো হবে,

১৭. সে অতি কষ্টে তা গলাধকরণ করতে চাইবে, কিন্তু গলাধকরণ করা তার পক্ষে কোনোমতেই সম্ভব হবে না, (উপরন্তু) চারদিক থেকেই তার ওপর মৃত্যু আসবে, কিন্তু সে কোনোমতেই মরবে না; বরং তার পেছনে থাকবে (আরো) কঠোর আযাব।

১৮. যারা তাদের মালিককে অস্বীকার করে তাদের (ভালো) কাজের (প্রতিফল পাওয়ার) উদাহরণ হচ্ছে ছাই ভস্মের (একটি সত্তুপের) মতো, ঝড়ের দিন প্রচন্ড বাতাস এসে যা উড়িয়ে নিয়ে যায়; এভাবে (ভালো কাজের দ্বারা) যা কিছু এরা অর্জন করেছে তা দ্বারা তারা কিছুই করতে সক্ষম হবে না; আর সেটা হচ্ছে এক মারাত্মক গোমরাহী।

১৯. (হে মানুষ,) তুমি কি দেখতে পাও না, আল্লাহ তায়ালা আসমানসমূহও যমীনকে যথাবিধি সৃষ্টি করেছেন, (তোমরা যদি এর ওপর না চলো তাহলে) তিনি ইচ্ছা করলে (এ যমীন থেকে) তোমাদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত করে নতুন (কোনো) সৃষ্টি (তোমাদের জায়গায়) আনয়ন করতে পারেন,

২০. আর এটা বিপুল ক্ষমতাবান আল্লাহর কাছে মোটেই কঠিন কিছু নয় |

২১. (মহাবিচারের দিন) তারা সবাই আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে, অতপর যারা দুনিয়ায় দুর্বল ছিলো তারা (তাদের উদ্দেশ করে)- যারা অহংকার করতো, বলবে, (দুনিয়ায়) আমরা তো তোমাদের অনুসারীই ছিলাম, (আজ কি) তোমরা আল্লাহর আযাব থেকে সামান্য কিছু হলেও আমাদের জন্যে কম করতে পারবে? তারা বলবে, আল্লাহ তায়ালা যদি আমাদের (আজ নাজাতের) কোনো পথ দেখিয়ে দিতেন, তাহলে আমরা তোমাদেরও (তা) দেখিয়ে দিতাম, (মূলত) আজ আমরা ধৈর্য ধরি কিংবা ধৈর্যহারা হই, উভয়টাই আমাদের জন্যে সমান কথা, (আল্লাহর আযাব থেকে আজ) আমাদের কোনোই নিষ্কৃতি নেই।

২২. যখন বিচার ফয়সালা হয়ে যাবে তখন শয়তান জাহান্নামীদের বলবে, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের সাথে (যে) ওয়াদা করেছেন তা (ছিলো) সত্য ওয়াদা, আমিও তোমাদের সাথে (একটি) ওয়াদা করেছিলাম, কিন্তু আমি তোমাদের সাথে ওয়াদার বরখেলাপ করেছি; (আসলে) তোমাদের ওপর আমার তো কোনো আধিপত্য ছিলো না, আমি তো শুধু এটুকুই করেছি, তোমাদের (আমার দিকে) ডেকেছি, অতপর আমার ডাকে তোমরা সাড়া দিয়েছো, তাই (আজ) আমার প্রতি তোমরা (কোনো রকম) দোষারোপ করো না, বরং তোমরা তোমাদের নিজেদের ওপরই দোষারোপ করো; (আজ) আমি (যেমন) তোমাদের উদ্ধারে (কোনো রকম) সাহায্য করতে পারবো না, (তেমনি) তোমরাও আমার উদ্ধারে কোনো সাহায্য করতে পারবে না; তোমরা যে (আগে) আমাকে আল্লাহর শরীক বানিয়েছো, আমি তাও আজ অস্বীকার করছি (এমন সময় আল্লাহর ঘোষণা আসবে); অবশ্যই যালেমদের জন্যে রয়েছে কঠিন আযাব।

২৩. (অপরদিকে) যারা আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান আনে এবং (সে অনুযায়ী) নেক কাজ করে, তাদের এমন এক জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, যার পাদদেশে প্রবাহিত হবে (রং বে-রংয়ের) ঝর্ণাধারা, সেখানে তারা তাদের মালিকের অনুমতিক্রমে অনন্তকাল অবস্থান করবে; সেখানে (চারদিক থেকে) 'সালাম সালাম' বলে তাদের অভিবাদন হবে।

২৪. তুমি কি লক্ষ্য করোনি, আল্লাহ তায়ালা কালেমায়ে তাইয়েবার কি (সুন্দর) উপমা পেশ করেছেন, (এ কালেমা) যেন একটি উৎকৃষ্ট (জাতের) গাছ, যার মূল (যমীনে) সুদৃঢ়, যার শাখা প্রশাখা আসমানে (বিসত্মত),

২৫. সেটি প্রতি েেমৗসুমে তার মালিকের আদেশে ফল দান করে; আল্লাহ তায়ালা মানুষদের জন্যে (এভাবেই) উপমা পেশ করেন, যাতে করে তারা (এসব উপমা থেকে) শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে ।

২৬. (আবার) খারাপ কালেমার তুলনা হচ্ছে একটি নিকৃষ্ট বৃক্ষের (মতো), যাকে (যমীনের) উপরিভাগ থেকেই মুলোৎপাটন করে ফেলা হয়েছে, এর কোনো রকম স্থায়িত্বও নেই।

২৭. আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদের তাঁর শাশ্বত কালেমা দ্বারা মযরত রাখেন, দুনিয়ার জীবনে এবং পরকালীন জীবনে, যালেমদের আল্লাহ তায়ালা (এমনি করেই) বিভ্রান্তিতে রাখেন, তিনি (যখন) যা চান তাই করেন।

২৮. (হে নবী,) তুমি কি তাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করোনি যারা আল্লাহ তায়ালার নেয়ামত অস্বীকার করার মাধ্যমে (তাকে) বদলে দিয়েছে, পরিণামে তারা নিজেদের জাতিকে ধ্বংসের (এক চরম) স্তরে নামিয়ে এনেছে।

২৯. জাহান্নামে (-র অতলে, যেখানে) তারা সবাই প্রবেশ করবে, কতো নিকৃষ্ট (সেই) বাসস্থান !

৩০. এরা আল্লাহ তায়ালার জন্যে তাঁর কিছু সমকক্ষ উদ্ভাবন করে নিয়েছে, যাতে করে তারা (সাধারণ মানুষদের) তাঁর পথ থেকে বিভ্রান্ত করতে পারে; (হে নবী, এদের) তুমি বলো, (সামান্য কিছুদিনের জন্যে) তোমরা ভোগ করে নাও, অতপর (অচিরেই জাহান্নামের) আগুনের দিকে তোমাদের ফিরে যেতে হবে ।

৩১. (হে নবী,) আমার যে বান্দা ঈমান এনেছে তুমি তাদের বলো, তারা যেন নামায প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদের যে রেযেক দিয়েছি তা থেকে যেন তারা (আমারই পথে) ব্যয় করে, গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে, (কেয়ামতের) সে দিনটি আসার আগে, যেদিন (মুক্তির জন্যে) কোনো রকম (সম্পদের) বেচাকেনা চলবে না- না (এ জন্যে কারো) কোনো রকমের বন্ধুত্ব (কাজে লাগবে)।

৩২. (তিনিই) মহান আল্লাহ তায়ালা, যিনি আসমানসমূহও যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, তা দিয়ে আবার যমীন থেকে তোমাদের জীবিকার জন্যে নানা প্রকারের ফলমূল উৎপাদন করেছেন, তিনি যাবতীয় জলযানকে তোমাদের অধীন করেছেন যেন তাঁরই ইচ্ছা অনুযায়ী তা সমুদ্রে বিচরণ করে বেড়ায় এবং (এ কাজের জন্যে) তিনি নদীনালাকেও তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন,

৩৩. তিনি চন্দ্র সুর্যকেও তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, এর উভয়টা (একই নিয়মের অধীনে) চলে আসছে, আবার তোমাদের (সুবিধার জন্যে রাতদিনকেও তিনি তোমাদের অধীন করেছেন ।

৩৪. তোমরা তাঁর কাছ থেকে (প্রয়োজনের) যতো কিছুই চেয়েছো তার সবই তিনি (তোমাদের সামনে) এনে হাযির করেছেন এবং তোমরা যদি (সত্য সত্যই) তাঁর সব নেয়ামত গণনা করতে চাও, তাহলে কখনোই তা গণনা করে শেষ করতে পারবে না; মানুষ (আসলেই) অতিমাত্রায় সীমালঘংনকারী ও (নেয়ামতের প্রতি) অকৃতজ্ঞ বটে।

৩৫. (স্মরণ করো), যখন ইবরাহীম (আল্লাহর কাছে) দোয়া করলো, হে আমার মালিক, এ (মক্কা) শহরকে (শান্তি ও) নিরাপত্তার শহরে পরিণত করো এবং আমাকে ও আমার সন্তান সন্ততিদের মূর্তিপূজা করা থেকে দূরে রেখো ।

৩৬. হে আমার মালিক, নিসন্দেহে এ (মূর্তি)-গুলো বহু মানুষকেই গোমরাহ করেছে, অতপর যে আমার আনুগত্য করবে সে আমার দলভুক্ত হবে, আর যে ব্যক্তি আমার নাফরমানী করবে (তার দায়িত্ব তোমার ওপর নয়), নিশ্চয়ই তুমি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।

৩৭. হে আমাদের মালিক, আমি আমার কিছু সন্তানকে তোমার পবিত্র ঘরের কাছে একটি অনুর্বর উপত্যকায় এনে আবাদ করলাম, যাতে করে- হে আমাদের মালিক, এরা নামায প্রতিষ্ঠা করতে পারে, তুমি (তোমার দয়ায়) এমন ব্যবস্থা করো যেন মানুষদের অন্তর এদের দিকে অনুরাগী হয়, তুমি ফলমূল দিয়ে তাদের রেযেকের ব্যবস্থা করো, যাতে ওরা তোমার (নেয়ামতের) শোকর আদায় করতে পারে ।

৩৮. হে আমাদের মালিক, আমরা যা কিছু গোপন করি এবং যা কিছু প্রকাশ করি, নিশ্চয়ই তুমি তা সব জানো; আসমানসম্ন হে কিংবা যমীনের (যেখানে যা কিছু ঘটে এর) কোনোটাই আল্লাহর কাছে গোপন থাকে না।

৩৯. সব প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্যে, যিনি আমাকে আমার (এ) বৃদ্ধ বয়সে ইসমাঈল ও ইসহাক (তুল্য দুটো নেক সন্তান) দান করেছেন; অবশ্যই আমার মালিক (তাঁর বান্দাদের) দোয়া শোনেন।

৪০. হে আমার মালিক, তুমি আমাকে নামায প্রতিষ্ঠাকারী বানাও, আমার সন্তানদের মাঝ থেকেও (নামাযী বান্দা বানাও), হে আমাদের মালিক, আমার দোয়া তুমি কবুল করো ।

৪১. হে আমাদের মালিক, যেদিন (চূড়ান্ত) হিসাব কিতাব হবে, সেদিন তুমি আমাকে, আমার পিতা মাতাকে এবং সকল ঈমানদার মানুষদের (তোমার অনুগ্রহ দ্বারা) ক্ষমা করে দিয়ো।

৪২. (হে নবী,) তুমি কখনো মনে করো না, এ যালেমরা যা কিছু করে যাচ্ছে তা থেকে আল্লাহ তায়ালা গাফেল রয়েছেন; (আসলে) তিনি তাদের সেদিন আসা পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে রাখছেন যেদিন (তাদের) চক্ষু স্থির হয়ে যাবে,

৪৩. তারা আকাশের দিকে চেয়ে ভীত সনস্ত অবস্থায় (েেদৗড়াতে) থাকবে, তাদের নিজেদের প্রতিই নিজেদের কোনো দৃষ্টি থাকবে না, (ভয়ে) তাদের অন্তর বিকল হয়ে যাবে।

৪৪. (হে নবী,) তুমি মানুষদের একটি (ভয়াবহ) দিনের আযাব (আসা) থেকে সাবধান করে দাও (এমন দিন সত্যিই যখন এসে হাযির হবে), তখন এ যালেম লোকেরা বলবে, হে আমাদের মালিক, আমাদের তুমি কিছুটা সময়ের জন্যে অবকাশ দাও; এবার আমরা তোমার ডাকে সাড়া দেবো এবং আমরা (তোমার) রসুলদের অনুসরণ করবো (জবাবে বলা হবে); তোমরা কি (সেসব লোক)- যারা ইতিপুর্বে শপথ করে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে, তোমাদের (এ জীবনের) কোনোই ক্ষয় নেই!

৪৫. অথচ তোমরা তাদের (পরিত্যক্ত) বাসভূমিতেই বাস করতে, যারা (তোমাদের আগে) নিজেদের ওপর নিজেরা যুলুম করেছিলো এবং (এ কারণে) আমি তাদের প্রতি কি ধরনের আচরণ করেছিলাম তাও তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট ছিলো, তোমাদের জন্যে আমি তাদের দৃষ্টান্তও উপস্থাপন করেছিলাম,

৪৬. (সোজা পথে) এরা (বিভিন্ন) চক্রান্তের পন্থা অবলম্বন করেছে, আল্লাহর কাছে তাদের সেসব চক্রান্ত লিপিবদ্ধ আছে; যদিও তাদের সে চক্রান্ত (দেখে মনে হচ্ছিলো তা বুঝি) পাহাড় টলিয়ে দিতে পারবে!

৪৭. (হে নবী,) তুমি কখনো আল্লাহ তায়ালাকে তাঁর নবীদের দেয়া প্রতিশ্রুতি ভংগকারী মনে করো না; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা মহাপরাক্রমশালী ও প্রতিশোধ গ্রহণকারী;

৪৮. (প্রতিশোধ হবে সেদিন) যেদিন এ পৃথিবী ভিন্ন (আরেক) পৃথিবী দ্বারা পরিবর্তিত হয়ে যাবে, (একইভাবে ) আসমানসম্ন হও (ভিন্ন আসমানসমুহদ্বারা বদলে যাবে) এবং মানুষরা সব (হিসাবের জন্যে) এক মহাক্ষমতাধর মালিকের সামনে গিয়ে হাযির।

৪৯. সেদিন তুমি অপরাধীদের সবাইকে শৃংখলিত অবস্থায় দেখতে পাবে,

৫০. ওদের পোশাক হবে আলকাতরার (মতো বীভৎস), তাদের মুখমন্ডল আগুন আচ্ছাদিত করে রাখবে।

৫১. (এটা এ কারণে,) আল্লাহ তায়ালা যেন প্রতিটি অপরাধী ব্যক্তিকেই তার কর্মের প্রতিফল দিতে পারেন; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত তৎপর।

৫২. এ (কোরআন) হচ্ছে মানুষের জন্যে এক (মহা) পয়গাম, যাতে করে এ (গ্রন্থ) দিয়ে (পরকালীন আযাবের ব্যাপারে) তাদের সতর্ক করে দেয়া যায়, তারা যেন (এর মাধ্যমে) এও জানতে পারে, তিনিই একমাত্র মাবুদ, (সর্বোপরি) বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিরা যাতে করে (এর দ্বারা) উপদেশ গ্রহণ করতে পারে ।

💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url