আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা আল কাহাফ’এর বাংলা অনুবাদ | সূরা আল কাহাফ | Surah Al-Kahf | الكهف



সূরা আল কাহাফের বাংলা অনুবাদ


সূরা আল কাহাফ, মক্কায় অবতীর্ণ আয়াত ১১০, রুকু ১২

সূরা আল কাহাফ



রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে

১. সব তারীফ আল্লাহ তায়ালার জন্যে, যিনি তাঁর (একজন বিশেষ) বান্দার প্রতি (এ) গ্রন্থ নাযিল করেছেন এবং তার কোথাও তিনি কোনোরকম বক্রতা রাখেননি;

২. (একে তিনি) প্রতিষ্ঠিত করেছেন (সহজ সরল একটি পথের ওপর), যাতে করে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে সে (নবী তাদের জাহান্নামের আযাবের ব্যাপারে) সতর্ক করে দিতে পারে এবং যারা ঈমানদার, যারা নেক কাজ করে, তাদের সে (এ মর্মে) সুসংবাদ দিতে পারে (যে), তাদের জন্যে আল্লাহর দরবারে উত্তম পুরস্কার রয়েছে,

৩. যেখানে তারা চিরকাল থাকবে,

৪. এবং সেসব লোকদেরও ভয় দেখাবে যারা (মূর্খের মতো) বলে, আল্লাহ তায়ালা সন্তান গ্রহণ করেছেন।

৫. (অথচ এ দাবীর পক্ষে) তাদের কাছে কোনো জ্ঞান (-সম্মত দলীল প্রমাণ) নেই, তাদের বাপ দাদাদের কাছেও (এ ব্যাপারে কোনো যুক্তি) ছিলো না; এ সত্যিই বড়ো একটি কঠিন কথা, যা তাদের মুখ থেকে বের হচ্ছে; (আসলে) তারা (জঘন্য) মিথ্যা ছাড়া কিছুই বলে না ।

৬. (হে নবী,)যদি এরা এ কথার ওপর ঈমান না আনে তাহলে মনে হয় দুঃখে-কষ্টে তুমি এদের পেছনে নিজেকেই বিনাশ করে দেবে |

৭. যা কিছু এ যমীনের বুকে আছে আমি তাকে তার জন্যে শোভা বর্ধনকারী (করে) পয়দা করেছি, যাতে করে তাদের আমি পরীক্ষা করতে পারি যে, তাদের মধ্যে (কাজকর্মের দিক থেকে) কে বেশী উত্তম |

৮. (আজ) যা কিছু এর ওপর আছে, (একদিন ধ্বংস করে দিয়ে একে) আমি উদ্ভিদশুন্য মাটিতে পরিণত করে দেবো |

৯. (হে নবী,) তুমি কি মনে করো যে, গুহা ও পাহাড়ের (উপত্যকার) অধিবাসীরা আমার নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি বিস্ময়কর নিদর্শন ছিলো?

১০. (ঘটনাটি এমন হয়েছিলো,) কতিপয় যুবক যখন গুহায় আশ্রয় নিলো, অতপর তারা (আল্লাহর দরবারে এই বলে) দোয়া করলো, হে আমাদের মালিক, একান্ত তোমার কাছ থেকে আমাদের ওপর তুমি অনুগ্রহ দান করো, আমাদের কাজকর্ম (আঞ্জাম দেয়ার জন্যে) তুমি আমাদের সঠিক পথ দেখাও |

১১. অতপর আমি গুহার ভেতরে তাদের কানে বহু বছর ধরে (ঘুমের) পর্দা লাগিয়ে রাখলাম |

১২. তারপর (এক পর্যায়ে) আমি তাদের (ঘুম থেকে) উঠিয়ে দিলাম, যাতে করে আমি একথা জেনে নিতে পারি (তাদের) দু'দলের মধ্যে কোন& দলটি ঠিক করে বলতে পারে যে, তারা কতোদিন সেখানে অবস্থান করেছিলো ।

১৩. (হে নবী,) আমিই তোমার কাছে তাদের বৃত্তান্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করছি; (মূলত) তারা ছিলো কতিপয় নওজোয়ান ব্যক্তি, যারা তাদের মালিকের ওপর ঈমান এনেছিলো, আমি তাদের হেদায়াতের পথে এগিয়েও দিয়েছিলাম |

১৪. আমি তাদের অন্তকরণকে (ধৈর্য দ্বারা) দৃঢ়তা দান করেছি, যখন তারা (আল্লাহর পথে) দাঁড়িয়ে গেলো এবং ঘোষণা করলো, আমাদের মালিক তো হচ্ছেন তিনি, যিনি আসমানসমূহ ও যমীনের মালিক, আমরা কখনো আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কাউকে ডাকবো না, যদি (আমরা) এমন (অযৌক্তিক) কথা বলি তাহলে (তা হবে মারাত্মক) দ্বীন বিরোধী কাজ |

১৫. এরা হচ্ছে আমাদের স্বজাতির (লোক, যারা) তাঁকে বাদ দিয়ে অসংখ্য মাবুদ (-এর গোলামী) গ্রহণ করেছে; (তারা যদি সত্যবাদীই হয় তাহলে) তারা স্পষ্ট দলীল নিয়ে আসে না কেন? তার চাইতে বড়ো যালেম আর কে, যে আল্লাহ তায়ালার ওপর মিথ্যা আরোপ করে!

১৬. (অতপর জোয়ানরা পরস্পরকে বললো,) আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্যদের যারা মাবুদ বানায় তাদের কাছ থেকে তোমরা যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে চলেই গেলে, তখন তোমরা (এখান থেকে বের হয়ে বিশেষ) একটি গুহায় গিয়ে আশ্রয় নাও, (সেখানে) তোমাদের মালিক তোমাদের ওপর তাঁর রহমতের (ছায়া) বিস্তার করে দেবেন এবং তোমাদের বিষয়গুলো তোমাদের জন্যে সহজ করে দেবেন |

১৭. (হে নবী,) তুমি যদি (সে গুহা দেখতে, তাহলে) দেখতে পেতে, তারা তার (মধ্যবর্তী) এক প্রশস্ত চতুরে অবস্থান করছে, সুর্য (তার) উদয়কালে তাদের গুহার দক্ষিণ পাশ দিয়ে হেলে যাচ্ছে, (আবার) যখন তা অস্ত যায় তখন তা গুহার বাম পাশ দিয়ে অতিক্রম করে ( সুর্যের প্রখরতা কখনো তাদের কষ্টের কারণ হয় না); আসলে এ সবই হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার (কুদরতের) নিদর্শন, (এ সব নিদর্শনের মাধ্যমে) আল্লাহ তায়ালা যাকে হেদায়াত দান করেন সে-ই একমাত্র হেদায়াতপ্রাপ্ত হয়, আর (যাকে) তিনি গোমরাহ করেন সে কখনো কোনো পথ প্রদর্শনকারী ও অভিভাবক পেতে পারে না ।

১৮. (হে নবী, তুমি যদি দেখতে তাহলে) তুমি তাদের ভাবতে, তারা বুঝি জেগেই রয়েছে, অথচ তারা কিন্তু ঘুমন্ত, আমি তাদের (কখনো) ডানে (কখনো) বামে পরিবর্তন করে দিতাম, তাদের কুকুরটি (গুহার সামনে তার হাত দুটি প্রসারিত করে (পাহারারত অবস্থায় বসে) ছিলো, তুমি যদি তাদের দিকে (সত্যি) উকি মেরে দেখতে, তাহলে তুমি অবশ্যই তাদের কাছ থেকে পেছনে ফিরে পালিয়ে যেতে এবং তাদের (এ আজব দৃশ্য) দেখে তুমি নিসন্দেহে ভয়ে (তাদের থেকে) আতংকিত হয়ে যেতে।

১৯. এ ভাবেই তাদের আমি (ঘুম থেকে) উঠিয়ে দিলাম, যাতে করে তারা (তাদের অবস্থান সম্পর্কে) নিজেরা পরস্পরে জিজ্ঞাসাবাদ করে; (কথা প্রসংগে) তাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি বললো (বলো তো), তোমরা এ গুহায় কতোকাল অবস্থান করেছো; তারা বললো, (বড়ো জোর) একদিন কিংবা একদিনের কিছু অংশ আমরা (এখানে) অবস্থান করেছি; অতপর (যখন তারা একমত হতে পারলো না তখন) তারা বললো, তোমাদের মালিকই এ কথা জানেন, তোমরা (এ গুহায়) কতো কাল অবস্থান করেছো; এখন (সে বিতর্ক রেখে বরং) তোমরা তোমাদের একজনকে তোমাদের এ মুদ্রাসহ শহরে পাঠাও, সে (বাজারে) গিয়ে দেখুক কোন খাবার উত্তম, অতপর সেখান থেকে কিছু খাবার তোমাদের কাছে নিয়ে আসুক, সে যেন বিচক্ষণতার সাথে কাজ করে এবং সে যেন কোনো অবস্থায় কাউকে তোমাদের ব্যাপারে কিছু জানতে না দেয় ।

২০. তারা হচ্ছে (এমন) সব লোক যদি তাদের কাছে তোমাদের (কথাটি) তারা প্রকাশ করে দেয়, তাহলে তারা তোমাদের প্রস্তরাঘাত করে হত্যা) করবে কিংবা তোমাদের (জোর করে) তারা তাদের দ্বীনে ফিরিয়ে নেবে, (আর একবার) তেমনটি হলে কখনোই তোমরা মুক্তি পাবে না।

২১. আর এভাবেই আমি (একদিন) তাদের ব্যাপার (শহরবাসীদের) জানিয়ে দিলাম, যাতে করে তারা (এ কথা) জানতে পারে, (মৃতকে জীবন দেয়ার ব্যাপারে) আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা (আসলেই) সত্য এবং কেয়ামতের (আসার) ব্যাপারেও কোনো রকম সন্দেহ নেই, যখন তারা নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে বিতর্ক করে যাচ্ছিলো, (তখন) কিছু লোক বললো, (তাদের সম্মানে) তাদের ওপর একটি (স্মৃতি-) সৌধ নির্মাণ করে দাও; (আসলে) তোমাদের মালিকই তাদের সম্পর্কে সর্বাধিক খবর রাখেন; (অপর দিকে) যেসব মানুষ তাদের কাজের ওপর বেশী প্রভাবশালী ছিলো তারা বললো (স্মৃতিসৌধ বানানোর বদলে চলো) আমরা তাদের ওপর একটি মাসজিদ বানিয়ে দেই |

২২. কিছু লোক বলে, (গুহার অধিবাসীরা ছিলো) তিন জন, ওদের মধ্যে চতুর্থটি (ছিলো) ওদের (পাহারাদার) কুকুর, (আবার) কিছু লোক বলে, (তারা ছিলো) পাঁচ জন, তাদের ষষ্ঠটি (ছিলো) ওদের কুকুর, (আসলে) অজানা অদেখা বিষয়সমূহের প্রতি এরা (খামাখা) অনুমান নিক্ষেপ করেই (এ সব কিছু) বলছে, তাদের কেউ বলে (ওরা ছিলো) সাত জন এবং অষ্টমটি ছিলো তাদের কুকুর; (হে নবী,) তুমি (এদের) বলো (হাঁ), আমার মালিক ভালো করেই জানেন ওদের (আসল) সংখ্যা কতো ছিলো, তাদের সংখ্যা খুব কমসংখ্যক লোকই বলতে পারে। তুমিও এদের ব্যাপারে সাধারণ আলোচনার বাইরে বেশী বিতর্ক করো না এবং তাদের সম্পর্কে (খামাখা অন্য) মানুষদের কাছেও জিজ্ঞাসাবাদ করো না |

২৩. (হে নবী,) কখনো কোনো কাজের ব্যাপারে এ কথা বলো না, (এ কাজটি) আমি আগামীকাল করবো,

২৪. (হাঁ,) বরং (এভাবে বলো,) আল্লাহ তায়ালা যদি চান (তাহলেই আমি আগামীকাল এ কাজটা করতে পারবো), যদি কখনো (কোনো কিছু) ভুলে যাও তাহলে তোমার মালিককে স্মরণ করো এবং বলো, সম্ভবত আমার মালিক এর (কাহিনীর) চাইতে নিকটতর কোনো কল্যাণ দিয়ে আমাকে পথ দেখাবেন |

২৫. তারা তাদের (এ) গুহায় কাটিয়েছে মোট তিনশ বছর, তারা (এর সাথে) যোগ করেছে আরো নয় (বছর)।

২৬. (হে নবী,) তুমি বলো, (বস্তুত) একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই সঠিক করে বলতে পারেন, ওরা (গুহায়) কতো বছর কাটিয়েছে, আসমানসমূহ ও যমীনের (যাবতীয়) গায়ব বিষয়ের জ্ঞান তো একমাত্র তাঁর (জন্যেই নির্দষ্টি রয়েছে); কতো সুন্দর দ্রষ্টা তিনি, কতো সুন্দর শ্রোতা তিনি! তিনি ছাড়া তাদের দ্বিতীয় কোনোই অভিভাবক নেই, আল্লাহ তায়ালা নিজের কতৃত্ব ও ক্ষমতায় অন্য কাউকে কখনো শরীক করেন না ।

২৭. (হে নবী,) তোমার ওপর তোমার মালিকের যে কেতাব নাযিল করা হয়েছে তা তুমি তেলাওয়াত করতে থাকো; তাঁর (কেতাবে বর্ণিত) কথাবার্তা রদবদল করার কেউই নেই, তিনি ছাড়া তুমি আর কোনোই আশ্রয়স্থল পাবে না |

২৮. (হে নবী,) তুমি নিজেকে সদা সে সব মানুষদের সাথে রেখে চলবে, যারা সকাল সন্ধ্যায় তাদের মালিককে ডাকে, তারা একমাত্র তাঁরই সনত্মষ্টি কামনা করে এবং কখনো তাদের কাছ থেকে তোমার ( স্নেহের) দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না, (তোমার অবস্থা দেখে এমন যেন মনে না হয় যে,) তুমি এই পার্থিব জগতের সৌন্দর্যই কামনা করো, কখনো এমন কোনো ব্যক্তির কথামতো চলো না, যার অন্তকরণকে আমি আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, আর যে ব্যক্তি নিজের প্রবৃত্তির গোলামী করতে শুরু করেছে এবং যার কার্যকলাপ (আল্লাহ তায়ালার) সীমানা লংঘন করেছে ।

২৯. (হে নবী,) তুমি বলো, এ সত্য (দ্বীন) তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে এসেছে | সুতরাং যার ইচ্ছা সে (এর ওপর) ঈমান আনুক আর যার ইচ্ছা সে (তা) অস্বীকার করুক, আমি তো এ (অস্বীকারকারী) যালেমদের জন্যে এমন এক আগুন প্রস্তুত করে রেখেছি, যার বষ্টেনী তাদের পুরোপুরিই পরিবষ্টেন করে রাখবে; যখন তারা (পানির জন্যে) ফরিয়াদ করতে থাকবে তখন এমন এক গলিত ধাতুর মতো পানীয় তাদের দেয়া হবে, যা তাদের সমগ্র মুখমন্ডল জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেবে, কী ভীষণ (হবে সে) পানীয়; আর কী নিকৃষ্ট হবে তাদের আশ্রয়ের স্থানটি!

৩০. আর যারাই আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান এনেছে এবং ভালো কাজ করেছে (তাদের কোনো আশংকা নেই), আমি কখনো তাদের বিনিময় বিনষ্ট করি না যারা নেক কাজ করে,

৩১. এদের জন্যে রয়েছে এমন এক স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হবে, তাদের সেখানে সোনার কাঁকন দ্বারা অলংকৃত করা হবে, তারা পরিধান করবে সুক্ষ ও পুরু রেশমের পোশাক, (উপরন্তু) তারা সমাসীন হবে (এক) সুসজ্জিত আসনে, কতো সুন্দর (তাদের এ) বিনিময়; কতো চমৎকার (তাদের) আশ্রয়ের (এ) স্থানটি!

৩২. (হে নবী,) তাদের জন্যে তুমি দু'জন লোকের উদাহরণ পেশ করো, যাদের একজনকে আমি দুটো আংগুরের বাগান দান করেছিলাম এবং তাকে দুটো (কতিপয় ) খেজুর গাছ দ্বারা পরিবেষ্টিত করে রেখেছিলাম, আবার এ দু'য়ের মধ্যবর্তী স্থানকে (পরিণত) করেছিলাম একটি সুফলা শস্যক্ষেত্রে।

৩৩. উভয় বাগানই (এক পর্যায়ে) যথষ্টে ফল দান করলো, (ফলদানে) বাগান দুটো কোনোরকম ত্রুটি করেনি, উভয় বাগানে আমি পানির ঝর্ণাধারাও প্রবাহিত করে রেখেছিলাম |

৩৪. (এক পর্যায়ে) তার অনেক ফল হয়ে গেলো, অতপর (একদিন) সে তার সাথীকে কথা প্রসংগে বললো, দেখো, আমি ধন-সম্পদের দিক থেকে তোমার চাইতে (যেমন) বড়ো, (তেমনি) জনবলেও আমি তোমার চাইতে বেশী শক্তিশালী।

৩৫. নিজের (শক্তি সামর্থের) ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতে করতে সে নিজের বাগানে গিয়ে প্রবেশ করলো এবং বললো, আমি ভাবতেই পাচ্ছি না, এ বাগান (-এর সৌন্দর্য কোনো দিন) নিশেষ হয়ে যাবে!

৩৬. আমি (এও) মনে করি না, একদিন (এসব ধ্বংস হয়ে) কেয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে এবং (কেয়ামতের পর) আমাকে যদি আমার মালিকের সামনে ফিরিয়ে নেয়াও হয়, তাহলে এর চাইতে উৎকৃষ্ট কোনো কিছু আমি (সেখানে) পাবো |

৩৭. (তার) সে (গরীব) সাথীটি যে তার সাথে কথা বলছিলো, বললো, (এ পার্থিব সম্পদ দেখে) তুমি কি সত্যিই সে মহান সত্তাকে অস্বীকার করছো, যিনি তোমাকে (প্রথমত) মাটি থেকে অতপর শুক্রকণা থেকে পয়দা করেছেন, পরিশেষে তিনি তোমাকে (একটি) মানুষের আকৃতিতে পূর্ণাংগ করেছেন;

৩৮. কিন্তু (আমি তো বিশ্বাস করি,) সেই সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন আমার মালিক এবং আমার মালিকের (কোনো কাজের) সাথে আমি কাউকে শরীক করি না।

৩৯. কতো ভালো হতো তুমি যখন তোমার (ফলবতী) বাগানে প্রবেশ করলে, তখন যদি তুমি (একথাটি) বলতে, আল্লাহ তায়ালা যা চেয়েছেন তাই হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা ব্যতিরেকে কারোই (কিছুই ঘটানোর) শক্তি নেই, যদিও তুমি আমাকে ধনে জনে তোমার চাইতে কম দেখলে (কিন্তু আমি আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান রাখি) |

৪০. সম্ভবত আমার মালিক আমাকে তোমার (এ পার্থিব) বাগানের চাইতে আখেরাতে উৎকৃষ্ট (কোনো বাগান) দান করবেন এবং (অকৃতজ্ঞতার জন্যে) তার ওপর আসমান থেকে এমন কোনো বিপর্যয় নাযিল করবেন, ফলে তা (উদ্ভিদ) শুন্য (এক বিরান) ভূমিতে পরিণত হয়ে যাবে ।

৪১. কিংবা তার পানি তার (যমীনের) নীচেই অন্তর্হিত হয়ে যাবে, (তেমন কিছু হলে) তুমি কখনো তা (আবার) খুঁজে আনতে পারবে না |

৪২. (অতপর তাই ঘটলো,) তার (বাগানের) ফলফলাদিকে বিপর্যয় এসে ঘিরে ফেললো, তখন সে ব্যক্তি সেই ব্যয়ের ওপর যা সে বাগানের (শোভাবর্ধনের পেছনে) করেছিলো, হাতের ওপর হাত রেখে আক্ষেপ করতে লাগলো (বাগানের অবস্থা এমন হলো যে), তা মুখ থুবড়ে পড়ে থাকলো এবং সে (নিজের ভুল বুঝতে পেরে) বলতে লাগলো, কতো ভালো হতো যদি আমি আমার মালিকের (ক্ষমতার সাথে) অন্য কাউকে শরীক না করতাম!

৪৩. (যারা বাহাদুরী করেছে তাদের) কোনো দলই (আজ) তাকে আল্লাহর (এ প্রতিশোধের) মোকাবেলায় সাহায্য করার জন্যে (অবশষ্টি) রইলো না না সে নিজে কোনো রকম প্রতিশোধ নিতে পারলো !

৪৪. (কেননা) এখানে রক্ষা করার যাবতীয় এখতিয়ার একমাত্র আল্লাহ তায়ালার, যিনি একমাত্র সত্য, পুরস্কারদানে ও পরিণাম নির্ধারণে তিনিই উত্তম |

৪৫. (হে নবী,) তুমি এদের কাছে দুনিয়ার জীবনের উদাহরণ পেশ করো (এ জীবনটা হচ্ছে) পানির মতো আমি তাকে আকাশ থেকে বর্ষণ করি, যার কারণে যমীনের উদ্ভিদ ঘন (সুশোভিত ) হয়ে ওঠে, অতপর এক সময় বাতাস তা উড়িয়ে নিয়ে ফিরে; (মূলত) আল্লাহ তায়ালা সব কিছুর ওপর প্রচন্ড ক্ষমতাবান |

৪৬. (আসলে) ধন সম্পদ ও সন্তান সন্তনি হচ্ছে (তোমাদের) পার্থিব জীবনের কতিপয় (অস্থায়ী) েেসৗন্দর্য মাত্র, চিরস্থায়ী বিষয় হচ্ছে (মানুষের) নেক কাজ, (আর তা হচ্ছে) তোমার মালিকের কাছে পুরস্কার পাওয়ার জন্যে অনেক ভালো, আর কোনো (কল্যাণময়) কিছু কামনা করতে গেলেও তা হচ্ছে উত্তম |

৪৭. যেদিন আমি পাহাড়সমূহকে চলমান করে (সরিয়ে) দেবো এবং তুমি পৃথিবীকে দেখবে, (তা) একটি শুন্য প্রান্তর, (সেদিন) আমি তাদের (মানবকূল)-কে এক জায়গায় জড়ো করবো, তাদের কোনো একজনকেও আমি বাদ দেবো না |

৪৮. তাদের (সবাই)-কে তোমার মালিকের সামনে সারিবদ্ধভাবে এনে হাযির করা হবে; (অতপর আমি বলবো, আজ তো) তোমরা সবাই আমার কাছে এসে গেছো (ঠিক যেমনি করে আমি তোমাদের প্রথম বার পয়দা করেছিলাম, কিন্তু তোমরা (অনেকেই) মনে করতে, আমি তোমাদের (দ্বিতীয় বার আমার কাছে হাযির করার) জন্যে কোনো সময় (- সুচী) নির্ধারণ করে রাখিনি!

৪৯. (অতপর তাদের সামনে) আমলনামা রাখা হবে, (তখন) নাফরমান ব্যক্তিদের তুমি দেখবে, সে আমলনামায় যা কিছু লিপিবদ্ধ আছে তার কারণে তারা (খুবই) আতংকগ্রস্ত থাকবে, তারা বলতে থাকবে, হায় দুর্ভাগ্য আমাদের, এ (আবার) কেমন গ্রন্থ! এ তো (দেখছি আমাদের জীবনের) ছোটো কিংবা বড়ো প্রত্যেক বিষয়েরই হিসাব রেখেছে, তারা যা কিছু করেছে তার প্রতিটি বস্তুই তারা (সে গ্রন্থে) মজুদ দেখবে, তোমার মালিক (সেদিন) কারো ওপর বিন্দুমাত্র যুলুমও করবেন না ।

৫০. (স্মরণ করো), যখন আমি ফেরেশতাদের বলেছিলাম, তোমরা সবাই আদমকে সাজদা করো, তখন তারা সবাই সাজদা করলো, কিন্তু ইবলীস ছাড়া, (সে সাজদা করলো না); সে ছিলো (আসলে) জ্বিনদেরই একজন, সে তার মালিকের আদেশের নাফরমানী করলো; (যে এতো বড়ো নাফরমানী করলো) তোমরা কি তাকে এবং তার বংশধরদের আমার বদলে তোমাদের অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করবে, অথচ (প্রথম দিন থেকেই) সে তোমাদের (প্রকাশ্য) দুশমন; (চেয়ে দেখো,) যালেমদের কি নিকৃষ্ট বিনিময় (দেয়া হয়েছে) ।

৫১. আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করার সময় আমি তাদের কাউকে ডাকিনি, এমনকি স্বয়ং তাদের নিজেদের বানানোর সময়ও (তো আমি তাদের ডাকিনি, আসলে আমি তো অক্ষম ছিলাম না যে, তাদের পরামর্শ আমার দরকার), অন্যদের যারা গোমরাহ করে আমি তাদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করি না ।

৫২. যেদিন তিনি (এদের) বলবেন, তোমরা তাদের ডাকো যাদের তোমরা (আমার শরীক) মনে করতে, অতপর ওরা তাদের ডাকবে (কিন্তু) তারা তাদের এ ডাকে কোনোই সাড়া দেবে না, আমি এদের উভয়ের মাঝখানে এক (মরণ) ফাঁদ রেখে দেবো |

৫৩. (এ) নাফরমান লোকেরা যখন (জাহান্নামের) আগুন দেখতে পাবে তখন তারা বুঝে যাবে, তারা (এক্ষুণি) সেখানে গিয়ে পতিত হচ্ছে, (আর একবার সেখানে পতিত হলে) ওরা তা থেকে কখনোই মুক্তির পথ পাবে না ।

৫৪. আমি মানুষের (বোঝার জন্যে এই কোরআনে সব ধরনের উপমা (ও উদাহরণ) বিশদভাবে বর্ণনা করেছি, কিন্তু মানুষরা অধিকাংশ বিষয় নিয়েই তর্ক করে ।

৫৫. হেদায়াত যখন মানুষের সামনে এসে গেলো তখন ঈমান আনা ও (গুনাহের জন্যে) তাদের মালিকের কাছে ক্ষমা চাওয়া থেকে তাদের কোন& জিনিস বিরত রাখছে, তারা (সম্ভবত) পূর্ববর্তী মানুষদের অবস্থা তাদের কাছে এসে পৌঁছানোর কিংবা (আমার) আযাব তাদের সামনে এসে হাযির হবার অপেক্ষা করছে।

৫৬. আমি তো রসুলদের পাঠাই যে, তারা (মানুষদের জন্যে জান্নাতের) সুসংবাদবাহী ও (জাহান্নামের) সতর্ককারী (হবে), কিন্তু যারা কুফরী করেছে তারা (ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে) ঝগড়া শুরু করে, যাতে তারা সত্যকে ব্যর্থ করে দিতে পারে, (মুলত) তারা আমার আয়াতসমূহকে এবং যেসব বিষয় দিয়ে তাদের (জাহান্নাম থেকে) সতর্ক করা হয়েছিলো তাকে বিদ্রূপের বিষয়ে পরিণত করে নিয়েছে।

৫৭. তার চাইতে বড়ো যালেম আর কে আছে যাকে তার মালিকের আয়াতসমূহ স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং সে এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, (সর্বোপরি) যা কিছু (গুনাহের বোঝা) তার হাত দুটো অর্জন করেছে সে (তা) ভুলে যায়; আমি তাদের অন্তরের ওপর (জাহেলিয়াতের) আবরণ লাগিয়ে দিয়েছি, যেন তারা (সত্য দ্বীন) বুঝতে না পারে, (এমনিভাবে) তাদের কানেও (এক ধরনের) কঠিন বস্তু ঢেলে দিয়েছি (এ কারণে তারা সত্য কথা শুনতে পায় না, অতএব হে নবী); তুমি ওদের যতোই হেদায়াতের পথে ডাকো না কেন, তারা কখনো হেদায়াত পাবে না ।

৫৮. (হে নবী,) তোমার মালিক বড়োই ক্ষমাশীল ও দয়াবান; তিনি যদি তাদের সবাইকে তাদের কৃতকর্মের জন্যে শাস্তি দিতে চাইতেন, তাহলে তিনি (সহজেই) শাস্তি ত্বরান্বিত করতে পারতেন; বরং (এর পরিবর্তে) তাদের জন্যে (শাস্তির) একটি প্রতিশ্রুত ক্ষণ (নির্ধারিত) আছে, যা থেকে ওদের কারোই পরিত্রাণ নেই!

৫৯. এ জনপদ (ও তাদের অধিবাসীরা) যখন (আল্লাহ তায়ালার) সীমা লংঘন করেছিলো তখন আমি তাদের নির্মল করে দিয়েছি, তাদের ধ্বংসের জন্যেও আমি একটি দিন ক্ষণ নির্দিষ্ট করে রেখেছি |

৬০. (হে নবী, তুমি এদের মুসার ঘটনা শোনাও,) যখন মুসা তার খাদেমকে বললো, যতোক্ষণ পর্যন্ত আমি দুটো সাগরের মিলনস্থলে না পৌঁছবো, ততোক্ষণ পর্যন্ত আমি (আমার পরিকল্পনা থেকে) ফিরে আসবো না, কিংবা (প্রয়োজনে এ জন্যে) দীর্ঘ সময় পর্যন্ত আমি চলা অব্যাহত রাখবো!

৬১. যখন তারা উভয়ে (সেই প্রত্যাশিত) দুটো সাগরের সংগমস্থলে এসে পৌঁছলো তখন তারা উভয়েই তাদের (খাবাবের জন্যে রাখা) মাছটির কথা ভুলে গেলো, অতপর সে মাছটি (ছুটে গিয়ে) সুড়ংয়ের মতো (একটি) পথ করে (সহজেই) সাগরে চলে গেলো।

৬২. যখন তারা আরো কিছু দুর এগিয়ে গেলো তখন সে তার খাদেমকে বললো, (এবার) আমাদের নাশতা নিয়ে এসো, আমরা আজকের এ সফরে সত্যিই ভারী ক্লান্ত হয়ে পড়েছি ।

৬৩. সে বললো, তুমি কি দেখোনি, আমরা যখন শিলাখন্ডের পাশে বিশ্রাম করছিলাম, সত্যিই আমি মাছের কথাটি ভুলেই গিয়েছিলাম, (আসলে) শয়তানই আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছে যে, আমি তার কথাটা স্মরণ রাখবো, আর সে (মাছটি)ও কি আশ্চর্যজনক পদ্ধতিতে নিজের পথ ধরে সাগরের দিকে নেমে গেলো |

৬৪. সে বললো (হাঁ), এই তো হচ্ছে সে (জায়গা,) যার আমরা সন্ধান করছিলাম (মাছটি চলে যাওয়ার জায়গাই হচ্ছে সাগরের সেই মিলনস্থল), অতপর তারা নিজেদের পথের চিহ্ন ধরে ফিরে চললো ।

৬৫. এরপর তারা (সেখানে পৌঁছলে) আমার বান্দাদের মাঝ থেকে একজন (পুণ্যবান) বান্দাকে (সেখানে) পেলো, যাকে আমি আমার অনুগ্রহ দান করেছি, (উপরন্তু) তাকে আমি আমার কাছ থেকে (বিশেষ) জ্ঞান শিখিয়েছি |

৬৬. মুসা তাকে বললো, আমি কি তোমার অনুসরণ করতে পারি, যাতে করে আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে যে জ্ঞান তোমাকে শেখানো হয়েছে তার কিছু অংশ তুমি আমাকে শেখাতে পারো |

৬৭. সে বললো (হাঁ পারো), তবে আমার সাথে থেকে (তো) তুমি কখনো ধৈর্য ধারণ করতে পারবে না |

৬৮. (অবশ্য এটাও ঠিক), যে বিষয় তুমি (জ্ঞান দিয়ে) আয়ত্ব করতে পারোনি তার ওপর তুমি ধৈর্য ধরবেই বা কি
করে?

৬৯. সে বললো, আল্লাহ তায়ালা যদি চান তাহলে তুমি আমাকে ধৈর্যশীল (হিসেবেই) পাবে, আমি তোমার কোনো আদেশেরই বরখেলাফ করবো না ।

৭০. সে বললো, আচ্ছা যদি তুমি আমাকে অনুসরণ করোই তাহলে (মনে রাখবে) কোনো বিষয় নিয়ে আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করবে না, যতোক্ষণ না সে কথা আমি (নিজেই) তোমাকে বলে দেবো!

৭১. অতপর তারা দু'জন পথ চলতে শুরু করলো। (নদীর পাড়ে এসে) উভয়েই একটি েেনৗকায় আরোহণ করলো, (নৌকায় ওঠেই) সে তাতে ছিদ্র করে দিলো; সে (মুসা) বললো, তুমি কি এজন্যে তাতে ছিদ্র করে দিলে যেন এর আরোহীদের তুমি ডুবিয়ে দিতে পারো, তুমি সত্যিই এক গুরুতর (অন্যায়) কাজ করেছো!

৭২. (মুসার কথা শুনে) সে বললো, আমি কি তোমাকে একথা বলিনি, আমার সাথে থেকে তুমি কখনো ধৈর্য ধারণ করতে পারবে না ।

৭৩. সে বললো, আমি যে ভুল করেছি সে ব্যাপারে তুমি আমাকে পাকড়াও করো না এবং (এ ব্যাপারে) আমার ওপর বেশী কঠোরতাও আরোপ করো না |

৭৪. আবার তারা পথ চলতে শুরু করলো । (কিছু দূর গিয়ে) তারা উভয়ে একটি (কিশোর) বালক পেলো, (সাথে সাথে) সে তাকে হত্যা করে ফেললো, (এ কাজ দেখে) সে বললো, তুমি তো কোনোরকম হত্যার অপরাধ ছাড়াই একটি নিস্পাপ জীবনকে বিনাশ করলে! তুমি (সত্যিই) একটা গুরুতর অন্যায় কাজ করে ফেলেছো!

৭৫. সে বললো, আমি কি তোমাকে একথা বলিনি যে, তুমি আমার সাথে (থেকে) কখনো ধৈর্য ধরতে পারবে না |

৭৬. সে বললো, যদি এরপর আর একটি কথাও আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করি, তাহলে তুমি আমাকে তোমার সাথে রেখো না, (অবশ্য এখন তো) তুমি আমার পক্ষ থেকে ওযর পেশ করার (প্রান্ত)-সীমায় পৌঁছে গেছো |

৭৭. আবার তারা চলতে শুরু করলো । (কিছুদুর এগিয়ে) তারা জনপদের অধিবাসীদের কাছে পৌঁছলো, (সেখানে পৌঁছে) তারা (সেই জনপদের) অধিবাসীদের কাছে কিছু খাবার চাইলো, কিন্তু তারা তাদের উভয়ের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করলো, অতপর সেখানে তারা একটি পতনোন্মুখ (পুরনো) প্রাচীর (দেখতে) পেলো, সে প্রাচীরটা সোজা করে দিলো, সে (মুসা) বললো, তুমি চাইলে তো (এদের কাছ থেকে) এর ওপর কিছু পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতে!

৭৮. সে বললো (বেশ), এখানেই তোমার আমার মধ্যে বিচ্ছেদ (হয়ে গেলো কিন্তু তার আগে) যেসব কথার ব্যাপারে তুমি আমার সাথে ধৈর্য ধরে থাকতে পারোনি তার ব্যাখ্যা আমি তোমাকে বলে দিতে চাই।

৭৯. (প্রথম ঘটনাটি হচ্ছে,) নৌকা সম্পর্কিত, (মূলত) তা ছিলো কয়েকজন গরীব মানুষের (মালিকানাধীন), তারা (এটা দিয়ে) সমুদ্রে (জীবিকা অন্বেষণের) কাজ করতো, কিন্তু আমি (নৌকাটিতে ছিদ্র করে) তাকে ত্রুটিযুক্ত করে দিতে চাইলাম, (কারণ) তাদের পেছনেই ছিলো (এমন) এক বাদশাহ্, যে (ত্রুটিবিহীন) যে নৌকাই পেতো, তা বল প্রয়োগে ছিনিয়ে নিতো।

৮০. (আর হাঁ, সে) কিশোরটি (-র ঘটনা!) তার পিতামাতা উভয়েই ছিলো মোমেন, আমি আশংকা করলাম, (বড়ো হয়ে) সে এদের দু'জনকেই (আল্লাহর) নাফরমানী ও কুফুর দ্বারা বিভ্রান্ত করে দেবে,

৮১. আমি চাইলাম তাদের মালিক তার বদলে তাদের (এমন) একটি সন্তান দান করবেন, যে দ্বীনদারী ও রক্তের সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারে তার চাইতে অনেক ভালো (প্রমাণিত) হবে |

৮২. (সর্বশেষ ওই যে) প্রাচীরটি (-র ব্যাপার! আসলে) তা ছিলো শহরের দুটি এতীম বালকের, এর নীচেই তাদের জন্যে (রক্ষিত) ছিলো গুপ্ত ধনভান্ডার, ওদের পিতা ছিলো একজন নেককার ব্যক্তি, (এ কারণেই) তোমার মালিক চাইলেন ওরা বয়োপ্রাপ্ত হোক এবং তাদের (সে ভান্ডার থেকে তারা) সম্পদ বের করে আনুক (এ প্রাচীরটাকেই আমি তাদের বড়ো হওয়া পর্যন্ত দাঁড় করিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম), এ ছিলো (মূলত) তোমার মালিকের অনুগ্রহ (দ্বারা সম্পাদিত কতিপয় কাজ), এর কোনোটাই (কিন্তু) আমি আমার নিজে থেকে করিনি; আর এ হচ্ছে সেসব কাজের ব্যাখ্যা, যে ব্যাপারে তুমি (আমার সাথে থেকে) ধৈর্য ধারণ করতে পারছিলে না!

৮৩. (হে নবী,) এরা তোমার কাছে যুলকারনায়ন সম্পর্কে জানতে চায়, তুমি (তাদের) বলো, (হাঁ) আমি (আল্লাহর কেতাবে যা আছে) তা থেকে (সে) বিবরণ তোমাদের কাছে এক্ষুণি (পড়ে) শোনাচ্ছি |

৮৪. (আল্লাহ তায়ালা বলছেন,) আমি যমীনের বুকে তাকে (বিপুল) ক্ষমতা দান করেছিলাম এবং আমি তাকে (এর জন্যে প্রয়োজনীয়) সব উপায় উপকরণও দান করেছিলাম,

৮৫. (একবার) সে অভিযানে বেরোবার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে লাগলো,

৮৬. (চলতে চলতে) এমনিভাবে সে সূর্যের অস্তগমনের জায়গায় গিয়ে পৌঁছলো, সেখানে গিয়ে সে সূর্যকে (সাগরের) কালো পানিতে ডুবতে দেখলো, তার পাশে সে একটি জাতিকেও (বাস করতে) দেখলো, আমি বললাম, হে যুলকারনায়ন (এরা তোমার অধীনস্থ), তুমি ইচ্ছা করলে (তাদের) শাস্তি দিতে পারো অথবা তাদের সাথে তুমি সদয় ভাবও গ্রহণ করতে পারো ।

৮৭. সে বললো (হাঁ), এদের মাঝে যে (আল্লাহর সাথে) বিদ্রোহ করবে তাকে আমি অবশ্যই শাস্তি দেবো, অতপর তাকে (যখন) তার মালিকের সামনে ফিরিয়ে নেয়া হবে (তখন) তিনি তাকে (আরো) কঠিন শাস্তি দেবেন ।

৮৮. (অপরদিকে) যে ব্যক্তি (আল্লাহর ওপর) ঈমান আনবে এবং নেক কাজ করবে, তার জন্যে (আখেরাতে) থাকবে উত্তম পুরস্কার, আর আমিও তার সাথে আমার কাজকর্ম সম্পাদনের সময় একান্ত বিনম্র ব্যবহার করবো;

৮৯. অতপর সে আরেক (অভিযানে) পথে বেরুলো |

৯০. এমনকি (চলতে চলতে) সে সুর্যোদয়ের স্থানে গিয়ে পৌঁছলো, তখন সে সুর্যকে এমন একটি জাতির ওপর (দিয়ে) উদয় হতে দেখলো; যাদের জন্যে তার (প্রখর তাপ) থেকে (আত্মরক্ষার) কোনো অন্তরাল আমি সৃষ্টি করে রাখিনি |

৯১. (যুলকারনায়নের ঘটনা ছিলো) এ রকমই; আমার কাছে সে সম্পর্কিত পুরোপুরি খবরই (মজুদ) আছে |

৯২. অতপর সে আরেক (অভিযানে) পথে বেরুলো |

৯৩. এমনকি (পথ চলতে চলতে) সে দুটো প্রাচীরের মধ্যবর্তী স্থানে গিয়ে পৌঁছলো, দুই পর্বতের মধ্যবর্তী স্থানে (পৌঁছে) সে এমন এক সম্প্রদায়ের লোকদের পেলো, যারা (যুলকারনায়নের) কোনো কথাই (তেমন) বুঝতে পারছিলো বলে মনে হলো না |

৯৪. তারা (বিভিন্নভাবে তাকে) বললো, হে (বাদশাহ) যুলকারনায়ন, নিসন্দেহে ইয়াজুজ মাজুজ হচ্ছে (নামক দুটো সম্প্রদায়) এ যমীনে (নানারকম) বিপর্যয় সৃষ্টিকারী, (এমতাবস্থায় তাদের থেকে বাঁচার জন্যে) আমরা কি তোমাকে (এ শর্তে কোনোরকম) একটা কর দেবো যে, তুমি আমাদের এবং তাদের মাঝে একটি প্রাচীর বানিয়ে দেবে |

৯৫. সে বললো (কোনো কর নেয়ার প্রয়োজন নেই, কেননা), আমার মালিক আমাকে যা কিছু দিয়ে রেখেছেন তাই (আমার জন্যে) উত্তম, হাঁ, (শারীরিক) শক্তি দ্বারা তোমরা আমাকে সাহায্য করতে পারো, আমি তোমাদের এবং তাদের মাঝে এক মযবুত প্রাচীর বানিয়ে দেবো |

৯৬. তোমরা আমার কাছে (এ কাজের জন্যে) লোহার পাতসমূহ নিয়ে এসো (অতপর সে অনুযায়ী তা আনা হলো এবং প্রাচীর তৈরীর কাজ শুরু হয়ে গেলো); যখন মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানটি (পূর্ণ হয়ে লৌহ স্তুপপগুলো দুটো পর্বতের) সমান হয়ে গেলো, তখন সে (তাদের) লক্ষ্য করে বললো, তোমরা (হাঁপরে) দম দিতে থাকো; অতপর যখন তা আগুনকে (উত্তপ্ত করলো, (তখন) সে বললো, (এখন) তোমরা আমার কাছে (কিছু) গলানো তামা নিয়ে এসো, আমি তা এর ওপর ঢেলে দেবো ।

৯৭. (এভাবেই এমন একটি মযরত প্রাচীর তৈরী হয়ে গেলো যে,) অতপর তারা তার ওপর উঠতে (আর) সক্ষম হলো না না তারা তা ভেদ করে (বাইরে) আসতে পারলো |

৯৮. (যুলকারনায়ন বললো,) এই যা কিছু হয়েছে তা সবই আমার মালিকের অনুগ্রহে (হয়েছে), কিন্তু যখন আমার মালিকের ওয়াদা (-মতো কেয়ামত) আসবে, তখন তিনি তা চূর্ণ বিচূর্ণ করে একাকার করে দেবেন, আর আমার মালিকের ওয়াদা হচ্ছে সত্য ওয়াদা;

৯৯. (কেয়ামতের আগে) আমি তাদের দলে দলে ছেড়ে দেবো, তারা (সমুদ্রের ঢেউয়ের আকারে একদল আরেক দলের মধ্যে প্রবষ্টি হবে, যখন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে তখন তাদের সবাইকে আমি (হাশরের ময়দানে) একত্রিত করবো,

১০০. (সেদিন) আমি জাহান্নামকে (তার) অবিশ্বাসীদের জন্যে (সামনে) এনে হাযির করবো,

১০১. যাদের চোখের মধ্যে আমার স্মরণ থেকে আবরণ পড়েছিলো, তারা (হেদায়াতের কথা) শুনতেই পেতো না |

১০২. কাফেররা কি এ কথা মনে করে নিয়েছে যে, তারা আমার বদলে আমারই (কতিপয়) গোলামকে অভিভাবক বানিয়ে নেবে; (আর আমি এ ব্যাপারে তাদের কোনো জিজ্ঞাসাবাদই করবো না!) আমি তো জাহান্নামকে কাফেরদের মেহমানদারীর জন্যে সাজিয়ে রেখেছি ।

১০৩. (হে নবী, এদের) তুমি বলো, আমি কি তোমাদের এমন লোকদের কথা বলবো, যারা আমলের দিক থেকে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত (হয়ে পড়েছে);

১০৪. (এরা হচ্ছে) সেসব লোক যাদের সমুদয় প্রচষ্টো এ দুনিয়ায় বিনষ্ট হয়ে গেছে, অথচ তারা মনে মনে ভাবছে, তারা (বুঝি) ভালো কাজই করে যাচ্ছে।

১০৫. এরাই হচ্ছে সেসব লোক, যারা তাদের মালিকের আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে এবং (অস্বীকার করে) তাঁর সাথে ওদের সাক্ষাতের বিষয়টিও, ফলে ওদের সব কর্মই নিষ্ফল হয়ে যায়, তাই কেয়ামতের দিন আমি তাদের (নাজাতের জন্যে) জন্যে ওযনের কোনো মানদন্ডই স্থাপন করবো না |

১০৬. এটাই জাহান্নাম! (এটাই হলো) তাদের (যথার্থ) পাওনা, কেননা তারা (স্বয়ং স্রষ্টাকেই) অস্বীকার করেছে, (উপরন্তু) তারা আমার আয়াতসমূহ ও (তার বাহক) রসুলদের বিদ্রূপের বিষয় হিসেবে গ্রহণ করেছে |

১০৭. (অপরদিকে) যারা আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান এনেছে এবং (সে অনুযায়ী) নেক আমল করেছে, তাদের মেহমানদারীর জন্যে জান্নাতুল ফেরদাউস' (সাজানো) রয়েছে।

১০৮. সেখানে তারা চিরদিন থাকবে, (সেদিন) তারা সেখান থেকে অন্য কোথাও যেতে চাইবে না |

১০৯. (হে নবী,) তুমি (এদের) বলো, আমার মালিকের (প্রশংসার) কথাগুলো (লিপিবদ্ধ করা)-এর জন্যে যদি সমুদ্র কালি হয়ে যায়, তাহলে আমার মালিকের কথা (লেখা) শেষ হওয়ার আগেই সমুদ্র শুকিয়ে যাবে, এমনকি যদি আমি তার মতো (আরো) সমুদ্রকে (লেখার কালি করে) সাহায্য করার জন্যে নিয়ে আসি (তবুও) |

১১০. (হে নবী,) তুমি (এদের) বলো, আমি তো তোমাদের মতোই একজন (রক্ত মাংসের) মানুষ, তবে আমার ওপর ওহী নাযিল হয় (আর সে ওহীর মূল কথা হচ্ছে), তোমাদের মাবুদ হচ্ছেন একজন, অতএব তোমাদের মাঝে যদি কেউ তার মালিকের সাক্ষাত্ কামনা করে, সে যেন (হামেশা) নেক আমল করে, সে যেন কখনো তার মালিকের এবাদাতে অন্য কাউকে শরীক না করে ।


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url